কেঁও_আছে পর্ব – ৩

0
2705

কেঁও_আছে
পর্ব – ৩
লেখকঃ #Sanvi_Ahmed_Shakib
.
ঘুম ভাঙতেই আকাশ সাহেবের মাথায় একটাই চিন্তা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটা কি কোনোভাবে জড়িত এই মৃত্যুর জন্য নাকি অন্যকেউ৷ তবে মেয়েটার চেহারাটা ঝাপসা।
বুঝা যাচ্ছেনা কিছুই।
.
মামাকে ডেকে তুলে আকাশ সাহেব,
– মামা উঠো তো।(আকাশ)
– কি হইছে? এতো সকালে ডাকছো কেনো?(মামা)
– মামা একটা স্বপ্ন দেখলাম।(আকাশ)
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

– কি স্বপ্ন?(মামা)
.
আকাশ সাহেব সবকিছু খুলে বলেন তার মামাকে।
তার মামা অনেকক্ষণ চিন্তা করে। ভাবতে থাকেন কী করা যায়। অনেক ভাবার পর সে বলেন,
– তোমাকে নিয়ে একটা গ্রামে যাবো। একটা বড় হুজুর থাকে সেখানে। সেই পারবে এই স্বপ্নের ব্যাখা দিতে।(মামা)
– মামা তুমি কি এসব ভুতুড়ে কান্ড ভাবছো?(আকাশ)
– হতেই পারে। দেখো এর যদি কোনো সমাধান করতে চাও তবে তোমাকে যেতেই হবে। পুলিশ তো কিছুই করতে পারলোনা উল্টা ১০ টা খুন হয়ে গেলো।(মামা)
– ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে নাও, আজকেই যাবো।
.
মামার রুম থেকে বাইরে এসে আকাশ সাহেব ভাবতে থাকেন,
এটা কি সত্তিই মানুষের কাজ নাকি ভুতের।
যদি মানুষই করবে তাহলে স্বপ্ন কেনো দেখলাম??
কোনো না কোনো গন্ডগোল তো আছেই।

খাওয়া দাওয়া করে রেডি হয়ে রাজিবকে ফোন দিলো
তাকেও সবকিছু খুলে বললো,
সেও ইন্টারেস্টেড৷ সেও যাবে সবার সাথে।
বাসার সামনে থেকে তাকেও তুলে নিলো,
তিনজনে মিলে রওনা দিলো।। আকাশ এমনিতে ভুতে বিশ্বাসি না। তারপরও কেনো জানি আজ বারবার মনে হচ্ছে তার সাথে যা হচ্ছে তা কোনো ভুতই করছে। কোনো মানুষই যদি করবে তাহলে কোনো প্রমান তো পাওয়া যাবে?
১০ টা খুন একেবারে নিখুতভাবে। কোনো প্রমান নেই।
পিঠে কাটা দাগ আছে অথচ হাতের ছাপ নেই।
এক অসম্ভব রকমের খুন যা মানুষ কোনোভাবেই করতে পারবেনা। মানুষ ভুল করবেই, কোনো না কোনো জায়গায় প্রমান রাখবেই।
.
অনেকবার মাথায় একটা কথা ঘুরেছে, মামা কি কিছু করছে?
নিজেকে প্রশ্ন করতেও দ্বিধা কাজ করে আকাশের৷ যেই মামা সেই ছোটবেলা থেকে তাকে লালন পালন করেছে। তার জন্য বিয়ে পর্যন্ত করেনি। সে কেনো এরকম করবে। তাই এসব ভাবাও ছেড়ে দিয়েছে সে।
সে নিজেই চাইছে এটা যেনো কোনো ভুতুড়ে কান্ড হয়।
আজ এর ফয়সালা হয়ে যাক তবুও।
.
চার ঘন্টা পর গাড়ি গিয়ে থামে একটা ঘরের সামনে,
ছোট্ট একটা ঘর। উপরে ছাদ আছে, না থাকার মতোই।
মামা এখানে কেনো নিয়ে আসলো?
এখন সব মামার হাতে, তাকে শুধু দেখতে হবে।
আমি দেখার কাজটাই করি।
সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলো আকাশ,
বৃদ্ধ দাড়িওয়ালা একটা লোক দেখলাম,
তিনি বললো,
– সবাই অজু করে আসেন। অপবিত্র অবস্থায় এখানে আসা উচিত না।
আমরা বাইরে থেকে অজু করে তারপর ভিতরে ঢুকলাম।
ভিতরে ঢুকতেই তিনি টুল এগিয়ে দিলেন। আমরা বসলাম,
তিনি সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলেন,
– আমি যেই মেয়েকেই বিয়ের জন্য পছন্দ করি সেই মেয়েই দুদিন পর মারা যায়।
– তো আপনারা পুলিশের কাছে না গিয়ে আমার কাছে কেনো?
– পুলিশ কিছুই করতে পারছেনা তাই আপনার কাছে আসা।(মামা)
– আপনারা যখন এসেই পড়েছেন তবে খালি হাতে ফিরবেন না, যদি এটা কোনো আত্মার কাজ হয় তো।
– ধন্যবাদ।
.
তিনি আকাশকে সামনে বসিয়ে কি কি যেনো সুরা পাঠ করতে লাগলেন। সবকিছু কেমন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো কিছুই হচ্ছেনা। সবাই বিরক্ত। আকাশ সাহেবেরও কেমন জানি অবিশ্বাস হচ্ছে, সন্দেহ হচ্ছে ব্যাটা ভন্ড নয়তো?
হঠাৎ রুমটা আলোকিত হয়ে উঠলো,
দাড়িওয়ালা লোকটা কেমন যেনো হয়ে গেলো।
রুক্ষভাষী কন্ঠে সুরা পড়লে লাগলেন। আকাশ সাহেব একটু ভয় পেয়ে গেলেন। হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনতে পেলো, সেই কন্ঠ যেটা আকাশ স্বপ্নে শুনেছে। হাত পা কাপতে শুরু করছে অলরেডি। ঘাম ছুটে গেছে সবারই। সবাই কৌতুহল নিয়ে দেখছে কি হয়।।

দাড়িওয়ালা লোকটা বললো,
– তুই এদের পিছনে কেনো লাগছিস?
ঘরের কোন থেকে আওয়াজ এলো,
– আমি কারো পিছনে লাগিনি। শুধু সাথে থাকতে চাই, সারাজিবন।
– তুই তো মৃত। তুই কিভাবে সাথে থাকবি? তুই ওদের জিবনটা নষ্ট করে দিছিস জানিস?
– আকাশের সাথে যারই বিয়ের কথা হবে তাকেই আমি মেরে ফেলবো।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
– কেনো? শুধু শুধু এই নিষ্পাপ মেয়েগুলাকে কেনো মারছিস? তারা কি ক্ষতি করছে তোর??
– আমার আকাশকে আমার কাছ থেকে কেড়ে দিবে আর আমি কিছু বলবোনা তা কি করে হয়?
আকাশ বোকার মতো তাদের কথাবার্তা শুনতে থাকে।
দুজনই রুক্ষভাষী হয়ে গেছে। একজনকে দেখতে পাচ্ছে আরেকজনের শুধু কন্ঠ শুনতে পাচ্ছে, খুচ চেনা কন্ঠ।
অনেক কথা হইছে মনে হয় তার সাথে, কিন্তু মনে পড়ছে না আকাশের। কে এই মেয়ে।

দাড়িওয়ালা লোকটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– তোমার কোনো প্রেমিকা ছিলো?
– হ্যা কিন্তু তার বিয়ে হয়ে গেছে, আর সে বেচে আছে।
সে আবার মেয়েটার সাথে কথা বলায় মন দিলো,
– তুই কে, তোর পরিচয় দে।
– আমি জান্নাত।
আকাশ সাহেব নামটা শোনা মাত্র উঠে দাড়ালো।
এসব তাহলে জান্নাতের কাজ? কিন্তু সে কেনো করবে?
তার সাথে তো বন্ধুত্বের বাইরে কিছু ছিলোনা তার।
হ্যা মেয়েটাকে আকাশও পছন্দ করতো কিন্তু বলা হয়নি কখনো তার আগেই মেয়েটা সুইসাইড করে মারা যায়।
কেনো সুইসাইড করে তার কারন জানা যায়নি।
আজ কি জেনে নিবে আকাশ?
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যায় আকাশ। নিজেই প্রশ্ন করে বসে,
– জান্নাত তুমি কেনো করছো এমন?
– কারন আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, আর ভালোবাসি এখনো। আমি চাইনা তুমি অন্য কারো হও। সেজন্যই আমি এসব করেছি আর ক্রস চিহ্ন দিয়ে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি আর মেয়ে দেখোনা। তুমি শুধু আমার।
– জান্নাত তুমি মারা গেছো। সুইসাইড কেনো করছিলে তাহলে? যদি এতোটাই ভালোবাসতে তাহলে তখন কেনো বলোনি?
– আমি তো বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু আমার পরিবার সেদিনই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে ঠিক করে। তখন আর আমার হাতে কোনো অপশন ছিলোনা। আমি পারবো না কখনো তোমাকে অন্যের হতে দেখতে। না তখন, না এখন।
তাই প্লিজ মেয়ে দেখা বন্ধ করো।
.
আকাশ সাহেব নিশ্চুপ হয়ে যায়।কি বলবে? কিই বা বলার আছে তার। একটা মেয়ে তাকে এতো ভালোবাসতো আর সে জানতেই পারলো না? সবাই চুপ।
ওদিকে দাড়িওয়ালা লোকটা কথা চালিয়েই যাচ্ছে।
এদিকে আকাশের মামা আর রাজিব সাহেব থ মেরে গেছে এসব শুনে। নিরব শ্রোতার মতো শুধু শুনছে।
আকাশের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে জান্নাতের কথা ভেবে।
মরার পরও সে ভালোবেসে যাচ্ছে। আর সে জানতেই পারলো না মেয়েটার কথা। আজ যখন সে জানলো কোনো উপায় নেই তাকে ভালোবাসার। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার নিজের ওপর।

তার মানে এটাই সত্তি যে কোনো মানুষ এই খুন করেনি।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

কেমন যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে সবকিছু। একটা মেয়ে তাকে ভালোবাসতো আর মরার পর সে অন্য মেয়েদেরকে মারছে।সবকিছুর জন্য দায়ি আকাশ সাহেব।

দাড়িওয়ালা লোকটা মেয়েটাকে অনেক বুৃঝায় চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটা যাবেনা। তবে একটা শর্ত দেয় আকাশকে। যদি সে পারে সেটা পুরন করতে তবে সে চলে যাবে।
তার ছোট বোনকে বিয়ে করতে বলে।
আকাশ কোনো কথা না বলেই মেনে নেয়।
কারন সে জানে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এটা না মেনে নিলে হয়তো সে আবার আরেকটা মেয়েকে মেরে ফেলবে।
.
সেখান থেকে বের হয়ে এসে মেয়েটার বাড়ির দিকে রওনা দেয় সবাই।
সবার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রাজিব সাহেব কোনোদিন ভুতে বিশ্বাস করেনি। আজ তার চোখের সামনেই এসব ঘটে গেলো। সেও একটা মৃত্যুর জন্য দায়ি। তারও নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।

মেয়েটার বাড়িতে গিয়ে আরো একটা ঝটকা খায় আকাশ।
যেই মেয়েটাকে দেখতে এসেছে সেটা আর কেও না স্বয়ং জান্নাত। সেই চোখ, সেই নাক সেই ঠোট। সবকিছু সেম।
একি দেখতে পুরো ক্লোন। কিন্তু সে তো বললো তার ছোট বোন। জমজ হতে পারে। তবে কেনো জানি এটা জান্নাতই মনে হচ্ছে আকাশের কাছে। মেয়েটি দেখতে ভালোই। আর অপছন্দ করার কোনো অপশন ও নেই। একেই বিয়ে করতে হবে। তবে যে কয়টা মেয়ে সে দেখছে তার মধ্যে এটাই সুন্দর বেশি। তাই তারও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।।
মামারও পছন্দ হয়েছে।

জান্নাতের কথামতো বিয়েটা করেই ফেলে আকাশ।
মেয়েটার নামও সে জান্নাতই দিয়েছে। কারন তার মধ্যে তো জান্নাতেরই অস্বিত্ব। চোখ বন্ধ করতেই আকাশ দেখতে পায় জান্নাত হাসিমুখে ধোয়া হয়ে যাচ্ছে। তবে কি জান্নাত চলে গেলো তার জিবন থেকে? তবে কি শেষ হয়ে গেলো এই মরন খেলা?
হয়তোবা।

বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো আজ।
এরমধ্যে আর জান্নাত আসেনি। তবে জান্নাতকে আকাশ রোজই দেখে। তার ঘরের জান্নাত কে । তবুও তার বারবার মনে হয়, আশেপাশে কেঁও আছে।
কেঁও আছেই।

সমাপ্ত…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here