কেনা বউ #পর্ব_১,২

0
1734

#কেনা বউ
#পর্ব_১,২
#Apis_Indica?(suraiya_satther)
পর্ব_১

সময়টি মাঝরাতে। চারিদিক ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনা যাচ্ছে।ঠিক সেই সময় গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে উঠানে এসে দাড়ায় শ্রেয়া।আবার পিছনে ফিরে আরেক দফা চোখ বুলিয়ে নেয় সে পুরো বাড়িটুকুতে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। এই বাড়ির উঠানে কেঁটেছে তার ছোট বেলা।কত না আছড়ে পড়েছে হাঁটতে গিয়ে, বার বার মা সামলে নিত তাকে। আজ মা নেই তার পাশে থাকলে হয়তো এভাবে চুপি চুপি পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নেই আসতো না..!! কথায় আছে” মা মরলে বাপ তালই”। কথাটি আগে হেসে উড়িয়ে দিলেও আজ তা সত্য বলে মনে হচ্ছে শ্রেয়ার। কি কপাল তার মা যখন ছিল, বাপের আদরে ঠিকানা ছিল না।মা কবরে শুতেই বাবা পর হয়ে গেল। ছোট শ্বাস ছাড়লো শ্রেয়া।বাড়ির পিছনের দিক আছে একটি বট গাছ।সেই গাছের শক্ত ডালে দুটো মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল দোলনা।যা এখন বাতাসে হালকা নড়ছে।কতবার বাবা-মায়ের সাথে রাগ করে গাল ফুলিয়ে এখানে বসে কাঁদত সে। মা-বাবা রাগ ভাঙ্গানোর জন্য কত কিছুই না করত?
বাবা তখন আদর করে বলত,,
—-কান্দিস না মা!! তোরে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিব না..!!সত্যিই দেব না..!!
শ্রেয়া তখন তার ফোকলা দাঁত বের করে খিল খিল করে হেসে দিত..!!
মা তখন পরম আনন্দে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিত।খাওয়া শেষ প্লেট উল্টিয়ে দেখিয়ে বলত,,
—-দেখ মা দেখ,, তুই সব খেয়েছিস!!এখন আমার মা এত বড় হয়ে যাবে..!!
কতই না আদরের ছিল সে..!! আর আজ আদর করার মতো কেউ নেই…!!

ফোনের ভাইব্রেট হওয়ায় ধেন ভাঙ্গে শ্রেয়ার।ফোনটা উঁচু করতেই ভেসে উঠে আরিয়ানের নাম।এই একটি ব্যক্তি গত তিনটি বছর তাকে আগলে রেখেছে।কতটা না ভালই বাসে তাকে।একটি বার ফোন রিসিভ না করলে পাগল পাগল হয়ে যায়।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অস্থিরতার সাথে বলল আরিয়ান,,
—-কই তুমি কতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মোড়ে। তাড়াতাড়ি আসো কেউ দেখে ফেললে আর আস্ত রাখবে না।
শ্রেয়া তার চোখের পানি মুছে বলতে লাগে,,
—-আসচ্ছি আমি।
ফোন কেঁটে সামনের দিক হাটা দেয় শ্রেয়া।আর পিছনে ফিরে তাকায় না সে,, তাকালেই আবেগ বাড়বে, আবেগ যে বড্ড খারাপ জিনিস। তাই সে আর ফিরবেনা পিছনে।

কিছুক্ষণ হাটার পর রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ায় শ্রেয়া। কিছু সামনেই দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।যে এখন তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হতে চলেছে। আরিয়ান দূর থেকে শ্রেয়াকে দেখতে পায়। আজ প্রায় ৬ মাস পর তাকে দেখছে।শ্রেয়াকে দেখে তার মনে ধক করে উঠে। কি হাল করেছে মেয়াটা তার চোখের নিচে কালি পরে গেছে।মুখ টা শুকনো হয়ে ছোট হয়ে গেছে।তার গলুমলু শ্রেয়াটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আরিয়ান শ্রেয়ার কাছে গিয়ে আফসোসের ভঙ্গিতে বলতে লাগে,,
—-শ্রেয়া কি হাল করেছো নিজের?? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?? সাথে সাথে কপালে হাত দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে উঠে,,
—-তোমার শরীরে তো অনেক জ্বর গা পুরে যাচ্ছে।কি হয়েছে জান?
শ্রেয়া হাসল! আর বলল,
—-অস্থির হয়ো না তেমন কিছু না শুধু হালকা জ্বর..!
—–এটাকে তুমি হালকা বলছো?
—–উফ এতো হাইপার হয়েও না চল তাড়াতাড়ি।।
—–হুম চল! আজকের পর তোমাকে কোনো কষ্ট ছুতে পারবেনা আমার জান পাখিটার।।
শ্রেয়া হাসল শুধু।কিছু বলার নেই তার। কারণ এই পাগলটা এমনি কতটা ভালবাসে শ্রেয়া জানে।

গাড়ি ছুটে চলল শহরের দিক, গন্তব্য ঢাকা। সেখানেই বিয়ে করে এক হয় যাবে তারা। শ্রেয়ার জ্বরটা বাড়চ্ছে আরিয়ানের বুকে বিড়ালছানার মতো লেপ্টে আছে।শ্রেয়া আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে বাহিরের দৃশ্য দেখে যাচ্ছে আর ভাবচ্ছে কিছু ঘন্টা আগের কথা…!!

বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে পুতুলের মত সাজিয়ে বসি রাখা হয়েছে শ্রেয়াকে। এ নিয়ে তিনবার।যেটি শ্রেয়ার মোটেও পছন্দ নয়।এটা কেমন কথা মেয়েদের দেখতে আসবে ছেলারা তার সামনে মমির পুতুলের মত সেঁজে গুজে বসে থাকতে হবে মেয়েদের।তার উপর ছেলের পছন্দ হলে বিয়ের কথা আগাবে, নয়তো রিজেক্ট করে দিব?এতে ওই মেয়েটির মনে কি প্রভাব পরে তা কি কখনো তারা ভেবে দেখেছে? হয়ত না। দেখলে কোনো মা তার মেয়েকে এভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে আসনে বসাতো না।আর শ্রেয়ার ফুট কপাল তারতো মা নেই। আছে সৎ মা। যে কিছু দূর দাড়িয়ে পান চিবুচ্ছে।

ছেলে পক্ষ নানান রকম প্রশ্ন করে চলছেন শ্রেয়াকে। শ্রেয়া চুপ করে বসে।কি আর করবে সে? বাবার বয়সি লোককে তার সৎ মা ঠিক করে দিয়েছেন।সব কথা পাকা করে ফেললেন তার সৎ মা রেহেনা।বাবা মতিন চুপটি করে এক কোনে বসে চা খাচ্ছেন। শ্রেয়ার দিক যেন কার খেয়ালি নেই। আর এই দেখতে আসা লোকটি দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। কি নির্লজ্জ মানুষ।চক্ষু লজ্জা বলতে কিছু নেই? নিজের মেয়ের বয়সি মেয়েকে বউ করতে এসেছে! শ্রেয়ার রাগে দুঃখ বুক ফেঁটে কান্না আসচ্ছে আর সইতে না পরে ছুটে রুমে চলে যায় আর কাঁদতে লাগে।কি পোড়া কপাল তার।নিজের বাপ ও আজ মেয়ের মতামত জানতে চাইলো না? যেখানে সব কিছু শ্রেয়ার পছন্দের ছিল আর আজ..!! ভাতে পারছেনা আর। তখনি ফোন আসে আরিয়ানের।তখন শুধু শ্রেয়া বলছিল,,
—-বিয়ে করবে আমায়?
আরিয়ান যেন তাই চাইছিল..!! তার মন নেচে উঠলো।এতো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।কবে থেকে শ্রেয়াকে বিয়ের কথা তারা দিচ্ছিল। কিন্তু শ্রেয়া রাজি হতো না। আজতো চমৎকার হয়ে গেল।সর সাথে সাথে বলল,
—-হে তা আবার বলতে? বল কবে কখন?
—–কাল বিয়ে করবো আমরা। আজ আমাকে নিয়ে যাবে?
—-ঠিক আছে রাতে তৈরি থেকো।।
আরিয়ান তার কথা রেখেছে বন্দী খাঁচা থেকে তাকে মুক্ত করেছে।

আরিয়ান শ্রেয়াকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে। শ্রেয়ার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। হয়ত বিয়ের আগে প্রতিটি মেয়েরি করে? আরিয়ান আর শ্রেয়া ভিতরে ঢুকলো।
উকিলের কাছে সব ডকুমেন্ট দিয়ে দিলো।শ্রেয়ার দিক একটি কাগজ এগিয়ে দিল সাইন করার জন্য, শ্রেয়া সাইন করতে গিয়ে বার বার হাত কাপঁচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হয়ত এমনি হয় সবার। কতো অদ্ভুত ব্যাপার! এই একটি কাগজে সাইন করার সাথে সাথে তার পুরো টা জীবন হয়ে যাবে আরিয়ানের নামে..!! মেয়েদের ভাগ্য বিয়ের আগে বাবার নাম বিয়ের পর বরের নাম।আচ্ছা আরিয়ান কি বিয়ের পর ঠিক এমনি ভালবাসবে? মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন এসে জমা হচ্ছে শ্রেয়ার মনে..!!তখনি আরিয়ান হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,,
—-কি হলো শ্রেয়া! তাড়াতাড়ি কর? আরো মানুষ দাড়িয়ে আছে বিয়ের জন্য।।
শ্রেয়া চোখের পানি মুছে মাথা নাড়িয়ে সাইন করে দেয়। আজ থেকে সে হয়ে যায়। মিসেস শ্রেয়া আরিয়ান শেখ…!ছোট শ্বাস ফেলে শ্রেয়া। জানানেই কেন মনের মাঝে খচখচ করছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই। অথচ যা যে ভাবে ভেবেছিল সব ঠিক হচ্ছে।হয়তো সব তার মনে ভুল..!

আরিয়ান শ্রেয়াকে একটি বাংলো বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ি দেখে শ্রেয়া শক্ড। এত বড় বাড়ি। তখন সে প্রশ্ন করে,
—-এটা তোমার বাড়ি?
আরিয়ান আমতা আমতা করে বলে না একটি বড় ভাইয়ের বাসা। তিনি আপাদত আউট অফ টাউন। আর চাবি আমার কাছে তাই নিয়ে আসলাম তোমাকে।
শ্রেয়া উত্তর দিল,
—ও..!
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে,
—-তোমার বাসায় কবে যাবো?
আরিয়ান কিছুটা ভড়কে গেল।তারপর নিহেকে সামলিয়ে বলল,,
—–বাসায় জানায় নি। সব ঠিক ঠাক হক নিয়ে যাবো।
শ্রেয়া আর কিছু বলল না।
আরিয়ান শ্রেয়াকে একটি ঘরে নিয়ে বসালো আর বলল,
—-তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি বাহির থেকে খাবার আর তোমার মেডিসিন নিয়ে আসছি। দেখি(শ্রেয়ার কপালে হাত দিয়ে) জ্বরটা এখনো আছে দেখচ্ছি।
শ্রেয়া আরিয়ানের হাত সরিয়ে তার দু হাতের মাঝে রেখে বলতে লাগে,,
—-আমি ঠিক আছি চিন্তা করো না তুমি পাশে থাকলে আমি সুস্থ্য হয়ে যাবো।
—-এতটা ভালবাসো আমায়? যদি কখনো তোমাকে ধোকা দেই তখন কি করবে?
এমন কথায় শ্রেয়ার চোখে মুহুর্তেই পানি চলে আসে।সে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
—এমন কখনো করো না আমি নিজেকে শেষ করে দিব।
আরিয়ানের খারাপ লাগলো।শ্রেয়ার চোখের পানি মুখে দিয়ে, কপালে ঠোঁট ছোট চুমু এঁকে দেয়।আর বলতে লাগে,
—-ধূর পাগলি কাঁদে না। আমি আছি তোমার পাশে। এখন রেস্ট নাও আমি খাবার নিয়ে আসচ্ছি।
বলে আরিয়ান চলে গেল।
কেন জানি আরিয়ান চলে যাওয়াতে, শ্রেয়ার খারাপ লাগচ্ছে। মনে হচ্ছে ও আর ফিরবেই না…!! আবার বাঁজে চিন্তা ভেবে এ সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওয়াশরুমের দিক পা বারায় শ্রেয়া। ফ্রেস হয়ে এসে খাটে বসে।ঘরটির চারিদিক চোখ বুলায় সে, মনে হচ্ছে যার বাসা এটি, সে লোকটি অতি রুচিশীল সম্পন্ন, তার সাথে পরিষ্কার ও গোছানো। শরীর আর চলছে না। আজ কত দিন শান্তির ঘুম হয়নি। এখন যেন চোখে সারা রাজ্যের ঘুম এসে জড় হচ্ছে।তাকিয়ে থাকা দায়। শ্রেয়া বসে থাকতে না পরে এবার গা এলিয়ে দিল বিছানায়।মুহুর্তেই ঘুমের রাজ্য পারি দেয় সে…!!

ঘুমের মাঝে হঠাৎ কারোও ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় শ্রেয়ার।।চোখ খুলতেই অন্য কাউকে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখা অবস্থায় পেয়ে স্বজোরে ধাক্কা মারে।লোকটি বিছানা থেকে ছিটকে নিচে পরে যায়।।শ্রেয়া ততক্ষণে নিজের শরীরের কাপড় ঠিক করে চেচাতে লাগে,,
—–আপনি কে?? এখানে, এই মুহুর্তে আমার স্বামীর থাকার কথা…!! আপনি কে??? আর আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে ছোঁয়ার…!!
লোকটিকে ধাক্কা দেয়ায় রাগ উঠে যায় তার কিন্তু নিজেকে সংযোগ রেখে উঠে বসে।। শ্রেয়ার কাছে এসে দু গাল চেপে ধরে বলতে লাগে,,
—-আরিশ খানকে থাক্কা দেয়ার সাহস কোথায় পেলে হে…!! আর আমি তোমার স্বামী…!! এমন আর কখনো করলে তোমার জন্য খুব একটা ভাল হবে না বুঝে নিও…!!

শ্রেয়া আরিশের কাছ থেকে। নিজেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগে,,
—-মিথ্যা বলছেন আপনি…!! আমার আরিয়ান কই..!! ও আমার স্বামী,, ভালবেসে বিয়ে করেছি আমরা।। আর আপনি বলছেন আমার স্বামী…!! ফালতু লোক বলে শ্রেয়া আরিশের কর্লার টেনে ধরে বলতে লাগে,,
—- কি করেছেন আমার স্বামীর সাথে বলুন,, বলুন বলছি,, বলে ঠাস করে চর বসিয়ে দেয় আরিশের গালে,, আরিশের সাথে সাথে কপালের রগ দাড়িয়ে যায়,, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।।সেও শ্রেয়ার গালে ঠাস করে চর মারে।।তার চুলের মুঠি ধরে তার বারবর দাড় করিয়ে হিসহিস করে বলতে লাগে,,,
—–তোর সেই স্বামী বিক্রি করে দিয়েছে তোকে আমার কাছে,, তুই হচ্ছিস আমার #কেনা_বউ বুঝলি…!!
আজ থেকে আমি তোর স্বামী তুই…!! মাথায় ঢুকিয়ে নে..!! বলে খাটের উপর ফেলে বের হয়ে যায় আরিশ..!! রাগে গা জ্বলছে তার…জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে সব তার…!!যেখানে তার বাপ-মা ফুলের টোকাটা পর্যন্ত দেয় না সেখানে এই মেয়ে তাকে চড় মেরে দিয়েছে…!! হজম করতে পারছে না সে…!! রাগে মাথা ব্যাথা করছে তার..!!

এদিকে শ্রেয়া বিছানায় বসে কেঁদে যাচ্ছে।।কি হয়ে গেল তার…!! তিন বছরের ভালবাসার জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিল সে…!! আর সেই মানুষটি তাকে বিক্রি করে দিল…!!এ জিবন সে আর রাখবেনা..!! অন্যের কেনা বউ হয়ে থাকার চেয়ে, মরে যাওয়া ভাল।।সে চোখ মুছে দাড়িয়ে ফেনের দিক তাকালো।।এক টানে শাড়িটা শরীর থেকে খুলে ফেনের সাথে বাজিয়ে নিজের গলায় বেঁধে ঝুলে পড়লো…!! কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর সব শান্ত হয়ে গেল…!! তবে কি এখানেই শেষ হয়ে গেল শ্রেয়ার জীবন…??নাকি নতুন কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য……..!!

চলবে..!!
#কেনা_বউ
#পর্ব_২
#Apis_indica
পিটপিট করে চোখ খুলল শ্রেয়া।চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।শ্রেয়া ভাবচ্ছে,,
—-আমি কি মারা গেছি? এখন কি আমি কবরে?হয়ত কবরে তাই এত অন্ধকার।কিছুক্ষণ পর হয়ত মুনকার নাকির এখনি আসবে তিনটি প্রশ্ন নিয়ে।আচ্ছা আমিতো আত্মহত্যা করেছি।আত্মহত্যা মহাপাপ। তাহলে আল্লাহ কি আমাকে জান্নাত দিবেন না জাহান্নাম?নাকি আমার রূহ পৃথিবীতে ফেলে আসবে?
তখনি হুঠ করে লাইট জ্বলে উঠে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় শ্রেয়া। আলো সরাসরি তার চোখে পরছে।ধীরে ধীরে চোখ মেলে নিজেকে একটি খাটে শুয়ে থাকতে দেখে।ঘার ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই গলায় টান লাগে।টান লাগাতে “আহ” করে ছোট একটি আর্তনাদ বের হয়ে আসে।গলায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে সে ব্যান্ডেজ করা। গলা ধরে উঠে বসে ডান পাশে চোখে পরতেই দেখতে পায় শ্রেয়া কালকে সেই ছেলেটি যে তাকে তার স্বামী হিসেবে দাবি করে ছিল।ছেলেটির চোখে চোখ পরতেই।ছেলেটি কেমন ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে রাগ করে আছে না স্বাভাবিক ।শ্রেয়া এক শুকনো ঢোক গিললো।তারপর অন্য দিকে তাকালো। তখনি আরিশ উঠে এসে দাড়ায় তার কাছে। অতি গম্ভীর কন্ঠে জিগেস করে,
—-এখন কেমন লাগচ্ছে?
শ্রেয়া আড় চোখে তাকালো।কিন্তু কিছু বলল না।
আরিশ এতে অপমানিত বোধ করলো।তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—এ কেমন অভদ্রতা? কেউ কথা জিগেস করলে তার উত্তর দিতে হয় তা কি জানো না?
শ্রেয়া কাটকাট জবাব দিল,
—-আমি বাধ্য নই..!
আরিশের গা জ্বলে যাচ্ছে। এতটুকুন মেয়ে তার সাথে ঘের দেখাচ্ছে। অসুস্থ না থাকলে দু ঘা বসিয়েই দম নিত। মাথা ঠান্ডা করল আরিশ। যা করার কাল করবে সে।আজ অত্যন্ত ছাড় দেয়া যাক । আরিশ বলল,
—-ঘুমিয়ে পর সকালে দেখা হবে।
বলে গট গট করে চলে গেল সে।নিজের ঘরে এসে সজোরে আছাড় মেরে ফুলদানি ভেঙে ফেলল। রাগ লাগচ্ছে তার।
পাশের রুম থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দে কেঁপে উঠে শ্রেয়া আর বিড়বিড় করে বলতে লাগে,
—-পাগল নাকি?

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে শ্রেয়ার।ধীরে ধীরে উঠে আয়নার সামনে যায় সে। ব্যান্ডেজ খুলে দেখে গলা ছিলে দাগ পরে গেছে। কিন্তু সেদিকে এখন তার মাথা ব্যথা নেই। সে জানালার পর্দা সরিয়ে উঁকি দেয় বাহিরে। ও মাই গড? এত গার্ডস। কিভাবে পালাবে সে? তার যে এখন থেকে বের হতে হবে! আরিয়ানকে খুঁজে বের করতে হবে এবং করায় গন্ডায় সব হিসেব নিকেশ নেবে সে। সামনে পেলেই নাক বরাবর ঘুশি দিবে সে…!!তারপর চুল গুলো কেঁটে কুচি কুচি করে, সেটা দিয়ে শাক রান্না করে খাওয়াবে তাকে। কত বড় সাহস তার! সে শ্রেয়াকে বেঁচে দিল!হুহ! যখন পাবে তখন ভাববে। এ ভেবে শ্রেয়া ব্যাগ থেকে বড় চাদর বের করে গায় মুরি দিয়ে বের হলো। আশেপাশে খুব লক্ষ করে ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল সামনে। কি আশ্চর্য এ কোন বাসা? এটা তো আগের বাসা নই! হায় হায় কি করবে সে এখন…!! তাও মনে সাহস যুগিয়ে এগিয়ে চলল শ্রেয়া। পুরো বাড়িটা ভুলভুলাইয়া মনে হচ্ছে তার কাছে। শ্রেয়া অনেক কষ্ট বাসার মেন দরজা খুঁজে পায়। এক দৌড়ে বের হয়ে আসে সে। তারপর বাগানের সাইট দিয়ে দেয়াল টপকে বাহিরে চলে আসে সে। ভাগ্যিস তখন উপর থেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছিল সে। ওপারে গিয়ে জোরে শ্বাস নিল শ্রেয়া। আহ মুক্ত বাতাস। প্রাণ খুলে হওয়া নিয়ে এগিয়ে চলল সামনে। কিন্তু আবার থেমে গেল। ও যাবে কোন দিকে? ওতো চেনে না কিছু?
তাই চোখ বন্ধ করে গুনতে লাগে।রাস্তা দুটো ডান পাশে একটি বাম পাশে একটি।ডান পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগে সে। অনেকখানি হাঁটার পর কোনো কিছু পেল না সে শুধু চারপাশে পাহাড়ের মত। তারপর মাঠের মত। কিন্তু জনমানব শূন্য।
আরিশ সকালে উঠে শ্রেয়ার রুমে যায়। শ্রেয়া নেই। ভাবে ওয়াশরুমে আছে, নাহ নেই।পুরো বাড়ি খুঁজার পর বুঝতে পারল শ্রেয়া পালিয়েছে। আবার কপালের রগ দাড়িয়ে যায় তার। মেয়েটিকে সে হালকা ভাবে নিয়ে ঠিক করে নি সে..! এতই কি সহজ তার খাঁচা থেকে পালানো?
বেরিয়ে যায় আরিশ গাড়ি নিয়ে।

কিছু দূর থেকে গাড়ির ওয়াজ শুনতে পেয়ে শ্রেয়ার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। আহ কি আনন্দ। এখন সে লিফ্ট নিয়ে এখান থেকে অনেক দূর চলে যাবে।ভাবতেই খুশি খুশি লাগচ্ছে তার।

গাড়ি দেখতে পেয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে সে। গাড়ি থেমে যায়। শ্রেয়া দৌড়ে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বলতে লাগে,
—-এক্সকিউজ মি! আমাকে একটু বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেড়ে দিবেন!
লোকটি মাথা নারায় আর পিছনে বসতে বলে। শ্রেয়া খুশিতে গদ গদ হয়ে উঠে পরে পিছনের সিটে। উঠে গেট লাগিয়ে তার পাশে তাকাতেই।এক চিৎকার মারে। গাড়ির ড্রাইভার কান ধরে ফেলে। শ্রেয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে নেয়। কিন্তু দরজা লক করা। শ্রেয়া গাড়ির ড্রাইভারকে বলতে লাগে,,
—প্লিজ ওপেন দা ডোর?
কিন্তু গাড়ি চলতে শুরু করল। শ্রেয়া ভয়ে ভয়ে পাশে তাকালো পাশেই আরিশ মাথা হেলিয়ে চোখ বুঝে রহস্যময় হাসি হেসে যাচ্ছে। শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—-প্লিজ যেতে দিন আমাকে!
আরিশ সেই একি ভাবে থেকে বলতে লাগে,
—-এটা আমার রাজ্য এখানে কে আসবে কে যাবে তা আমি ডিসাইড করি। আর তুমি আমার রাজ্য থেকে পালাবে তা কি হয়। আর (শ্রেয়ার দিক ঘুরে বসে)সেখানে তুমি আমার #কেনা_বউ তোমাকে কিভাবে যেতে দেই?
আরিশের কথায় গলা শুকিয়ে আসে শ্রেয়ার। শুকনো ঢুক গিলে প্রশ্ন করে সে,
—-আমার সাথে কেন এমন করছেন? প্লিজ আমাকে যেতে দিন। কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?
—-সব চেয়ে বড় ক্ষতি তুমি আমার করেছো বউ..!!
—-মানে?
—-এখন না জানলেও চলবে। শুধু এত টুকু জেনে রাখো! আরিশ তার কেনা জিনিসকে কখনো হাত ছাড়া করে না। কেউ তার জিনিসে হাত দিলে তার হাত আস্ত থাকে না।তা জালিয়ে দেয়। সে যে কেউ হোক।
শ্রেয়া এবার ভয় পেতে লাগলো। শ্রেয়াকে ভয় পেতে দেখে আরিশ হাসলো। শ্রেয়া তাকালো তার দিক। লোকটির হাসি খুব সুন্দর। শব্দহীন হাসি। তার সাথে লোকটি অত্যন্ত সুন্দর। এমন লোক তার পিছনে পরেছে ভেবেই পাচ্ছে না কেন? তার মতো একটি আনস্মার্ট মেয়েকে সে বউ বলছে। কত আজিব লাগচ্ছে সব।নাকি এই সব কিছুর পিছনে কোনো কারণ আছে??

শ্রেয়াকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে আরিশ। তার সামনেই একটি বোলে রাখা জলন্ত কয়লা। তা দেখে পিলে চমকে গেল তার।
আরিশ অদ্ভুদ রকমের হাসি দিয়ে বলতে লাগে,
—-আমার কাছে অন্যায় কারীর কোন মাফ নেই। তুমি অন্যায় নয় পাপ করেছ, পাপ! এখন থেকে পালানো তোমার উচিৎ হয়নি। তার উপর আমার কাছ থেকে বাচার জন্য তুমি গলায় ফাঁসী দিয়েছো। আমাকে অপমান করেছো, গায়ে হাত তুলেছে। সব কিছু জমিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু পালিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি তোমার। তাই শাস্তিস্বরূপ এই ব্যবস্থা। যেন ভবিষ্যতে আর পালাতে না পারো। বলে শ্রেয়ার পা দুটোয় কয়লার বোলে চেঁপে ধরলো।

শ্রেয়া জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলো গলা ফাটিয়ে। কিন্তু তার চিৎকার শুনার মতো কেউ নেই। তার চিৎকারের আওয়াজ এই চার দেয়ালের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে।শ্রেয়া ভাবচ্ছে, তার মতো অভাগী কমি আছে। যার না বাবার বাড়িতে সুখ হলো। আর না স্বামীর। কতটা অভাগা সে…!!ইশ কাল যদি মরে যেত সে। কেন বেঁচে গেল সে?এমন সুন্দর চেহারা রূপী পশুর হাতেই কেন পরলো সে??আদ কি এ সব প্রশ্নের উত্তর পাবে সে??

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here