কেনা_বউ #পর্ব-৩

0
980

#কেনা_বউ
#পর্ব-৩
#apis_indica(suraiya_satther)

মাঝ রাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় শ্রেয়ার।পায়ে তখন অনেক যন্ত্রণা। ফোসকাও পরে গেছে অনেক জায়গায়।কিন্তু কান্না কে করতে সে তা জানার জন্য মন কেমন করতেসে।মনে মনে ভাবতেসে জিন ভূত নয় তো? ছোট থাকতে দাদির কাছে অনেক গল্প শুনেছে জিন ভুত নিয়ে। শুকনো ঢোক গিললো শ্রেয়া। কান্নার বেগ বাড়তেসে। কোনো পুরুষ মানুষ কান্না করতেছে। শ্রেয়া আর শইতে না পেরে উঠলো খাট থেকে। পায়ের মোড়ায ভর দিয়ে কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে একটি রুমের সামনে এসে দাড়ায়। রুমের দরজা টা ভিড়ানো। শ্রেয়া হালকা একটু ফাক করে দেখে। সাদা পাঞ্জাবি পরা কেউ একজন জায়নামাজে বসে কান্না করতেসে।শ্রেয়া ভয় দু কদম পিছিয়ে গেল। এ কি জ্বিন সত্যি। ভেবে ঘেমে একাকার।যখন সেজদা থেকে মাথা তুললো তখন শ্রেয়া অবাক হয়ে চেয়ে রইল। মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো,
—আরিশ…!
শ্রেয়া সেখানেই পাথরের মত দাড়িয়ে রইলো।
—যে ছেলে কিছুক্ষণ আগে আমার পা পুরে দিছে, আমাকে এখানে আটকে রাখছে, মুখের মাঝে রগচটা ভাব ধরে রাখে, সে ছেলে নামজে বসে কাঁদছে? কিভাবে?
ব্যাপার টা হজম করতে পারছে না শ্রেয়া।
কে এই আরিশ! কি চায় তার কাছে? সকালে এক রাতে আরেক? মানে কি এসবের? কোনটা আসল রূপ তার?? বুঝতে পারছেনা সে।মানুষের এত রূপ কিভাবে থাকে? সব কি তার নাটক??উফ আর ভাবতে পারছেনা শ্রেয়া…!!
?
সকাল বেলা, পায়ে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভাঙ্গে যায় শ্রেয়া। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে। দেখে আরিশ তার পায়ের কাছে বসে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।এমন ভাবে দিচ্ছে যেন ব্যথা সে পাইছে।
আচ্ছা মানুষ এত বহুরূপী কেন?
তখনি আরিশ বলে উঠে,
—-এত রাতে কারো ঘরে গিয়ে তাক ঝাক করা আমার পছন্দ না।
নামাজ শেষে তখন আরিশ শ্রেয়াকে বাহিরে থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায়।কিন্তু শ্রেয়া খেয়াল করেনি।কারণ শ্রেয়া তখন আকাশ কুসুম ভাবনায় ব্যস্ত ছিল।
বিষম খেয়ে উঠলো শ্রেয়া।শ্রেয়া বলল,
—-কান্নার আওয়াজ আসচ্ছিল তাই ভাবলাম…!
—–তোমাকে ভাবতে হবে না..! ভাবার জন্য আমি আছি।
শ্রেয়া কিছু বলল না।আরিশ খাট থেকে উঠে দাড়িয়ে একটি কাগজ এগিয়ে বলে,
—-সাইন ইট।
শ্রেয়া বলল,
—-এটা কিসের কাগজ?
আরিশ বলল,
—-বেশি কথা আমার পছন্দ না। সাইন কর।
শ্রেয়া বেঁকে বসল। সে সাইন করবে না। আরিশের আবার রাগ উঠছে। ইশ! মেয়ে শুধু তার রাগ উঠিয়ে দেয়…!!

আরিশ ঠান্ডা মাথায় বলল,
—-লিসেন, আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। সো রাগিও না আমাকে। আমার কথা শুনলে সুখে থাকবে আর ভাল থাকবে। আমার কথার খেলাপ হলে নরকে পরিণত করে দিব তোমার জীবন।
শ্রেয়া শুকনো ঢোক গিললো। সত্যি যদি আবার কালকের মতো হাত পা পুরে দেয়। তাই কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দিল।
আরিশ তখন মুচকি আসলো। শ্রেয়ার কাছে এসে কঁপালে ঠোঁট ছুয়ালো। শ্রেয়া কেঁপে উঠলো।সাথে ধাক্কা মেরে দিল আরিশ কে। আরিশ টাস করে এক চড় বসিয়ে দিল গালে।শ্রেয়ার যেন পুরো দুনিয়াটা ঘুরে গেল। আরিশ আবার কাছে এসে গাল টিপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—- ডোন্ট ড্যার!তুই আমার #কেনা_বউ। যখন ইচ্ছা তোকে আদর করার রাইট আমার আছে। হোক কেনা, বাট বউতো??
বলে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে চলে গেল। শ্রেয়া বসে কাঁদতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর মাঝ বয়সি এক মহিলা আসে, পরনে তার সাদা শাড়ি।এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—-মা তোমার নামই শ্রেয়া?
শ্রেয়া চোখের পানি মুছে বলল,
—-জ্বী।
—-আমি আরিশের মা রেশমি খান।
শ্রেয়া কি বলবে বুঝতে পারলো না। চুপ করে রইল।রেশমি আবার বলল,
—-তোমার এখানে কষ্ট হচ্ছে না তো? কোনো সমস্যা হলে আমাকে বল। আমি বাহিরে ছিলাম এত দিন আজ ফিরলাম।
শ্রেয়া কিছু একটা ভাবলো। তারপর হু হু করে কেঁদে রেশমির পায়ে ধরলো।রেশমি হতবাক হয়ে চেয়ে রইল।
শ্রেয়া বলল,
—-আন্টি আপনি আমার মার মতো..!প্লিজ আমাকে এখান থেকে যেতে দিন..!
রেশমি অবাক হয়ে বলল,
—মা তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?
—-আন্টি আপনার ছেলে আমাকে আটকে রেখেছব। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
রেশমি ছোট শ্বাস ফেললো আর বলল,
—-মা আমি এ বিষয়ে কিছু করতে পারছি না। আরিশ তোমাকে ভালবাসে মা। আর মা হয়ে ছেলের খুশি কিভাবে কেরে নেই..!
রেশমির কথা শুনে কান্না বন্ধ হয়ে গেল শ্রেয়ার। ভালবাসে মানে কি? তার সাথে কালই তো দেখা হয়েছে। এক দেখাতেই কেউ কাউকে ভাল বাসে?
?
রাতে রুমে আসে আরিশ শ্রেয়া গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আরিশ তার কাছে গিয়ে বসল।আর বলল,
—-খেয়েছো?
শ্রেয়া চুপ..!!
—-তুমি তো এইচএসসি পরিক্ষা দেও নি…! পড়াশুনো করতে চাও আগে?
শ্রেয়া আবার চুপ…!!
—-কথা বলছো না কেন?কথা কানে যাচ্ছে না?
শ্রেয়া এবার ঘৃণা চোখে তাকালো আরিশের দিকে।আর বলল,
—-এত আধিখ্যেতা দেখাতে হবে না আপনার..!!
আরিশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
তারপর বলল,
—-শ্রেয়া আমি তোমার সাথে অনেক রুড ব্যবহার করেছি তার জন্য সরি। বাট আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। তাই তোমাকে হার্ট করে ফেলেছি। সরি..!!
বলে চলে গেল। শ্রেয়া আরো অবাক হয়ে রইলো। ও তো ভেবে ছিল। গালে আবার পরবে। কিন্তু এই লোক কিছুই বললনা। উল্টো সরি বলে চলে গেল..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here