#কেনা_বউ
#পর্ব_৫ শেষ
#সুরাইয়া_সাত্তার(apis_indica)
এক ধ্যায়ানে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার মুখের দিকে আরিশ। কি মায়া এই চেহেরাতে..!এই মুখ দেখেই পাগল হয়েছিল আরিশ সেই তিন বছর অাগে..!সেদিন ছিল শীতের সকাল। চারিদিক তখন মিষ্টি রোদ উঁকি দিচ্ছিল।হালকা হলুদ আভায় চিকচিক করছিল চারদিক।কিছু স্কুল কলেজের স্টুডেন্ট রাস্তার কাছ ঘেসে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে নানা রকম গল্প করতে, করতে। গায়ে তার স্কুল,কলেজ ড্রেস। সেখানের একটি মেয়ে হুট করেই মাটিতে পরে যায়।সাথের মেয়ে গুলো কি করবে বুঝতে না পেরে এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগে। আশে পাশের মানুষ জড় হয়ে গেল।কেউ কেউ সে মেয়ে টির হাত পা ঘসচ্ছে তো কেউ মুখে পানি দিচ্ছে কিন্তু জ্ঞান ফিরছেই না তার।তার সহপাঠীরা রিকশা, অটো কিছু পাচ্ছে না আর যা পাচ্ছে তারা আলাদা বিপদ ভেবে পাশ কেঁটে চলে যাচ্ছে। মেয়েটি কে হাসপাতাল নিতে কিছুই পাচ্ছিল না।সেই পথ ধরেই যাচ্ছিল আরিশের গাড়ি..! একটি মেয়ে হুট করেই গাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে পরে। তখনি ড্রাইভার জোড়ে ব্রেক কসে। সাথে সাথে সামনের দিক হেলে পরে আরিশ।এমন হওয়াতে সে কিছুটা বাড়ি খায় মাথা। তখন গম্ভীর কন্ঠে, ভ্রু কুচকে বলে,
—-কি হয়েছে ড্রাইভার এমন কেন করলে? দেখে ড্রাইভ করবে না??
ড্রাইভার ভয়ে ভয়ে বলল,
—স্যার একটি মেয়ে হুট করেই সামনে চলে এসেছে..!
আরিশ আরো কিছুটা ভ্রু কুচকে বিরক্তি সুরে বলল,
—–যাও দেখ কি হয়েছে? আর তাড়াতাড়ি আমার লেট হচ্ছে…!
ড্রাইভার মাথা নাড়িয়ে বের হয়..!
কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলে,
—-স্যার একটি মেয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছে!
আরিশ আবার ভ্রু কুচকে বলে,
—-তো?
ড্রাইভার আমতা আমতা করে বলল,
—-স্যার তারা লিফট চাইছে..!সামনের হাসপাতাল পর্যন্ত..!
—এটা কিভাবে সম্ভব? আমার লেট হচ্ছে..!
তখনি পিছন থেকে একটি মেয়ে কান্না করতে করতে বলল,
—স্যার প্লীজ হেল্প করুন! আমার ফ্রেন্ডের জ্ঞান ফিরছে না..! আমাদের সামনে হাসপাতাল পর্যন্ত একটু লিফট দিন।
আরিশ কিছু বলবে তার আগেই কিছু লোক আরিশের গাড়িতে মেয়েটিকে তুলে দেয়। মেয়েটি মাথা তখন ছিল আরিশের কোলে। আরিশ এসবে হতভম্ব।এত মানুষ দেখে নাও করতেও পারলো না সে।
গাড়ি চলতে শুরু করলো,মেয়েটির মাথা তার কোলে দেখে তার কেমন অস্থি হচ্ছে। হুট করেই গাড়ি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো, তখনি মেয়েটির মাথা নিচে পরে যেতে নিল আরিশের কোল থেকে। সাথে সাথে তখন ধরে ফেলে আরিশ।তখন মেয়েটির মুখে চুল গুলো এলে মেলে হয়ে লেপ্টে ছিল। আরিশের কেন যেন মনে হলো, চুল গুলো সরিয়ে দিতে, সাথে সাথে তাই করে বসল। আলতো হাতে চুল সরিয়ে দিতেই থমকে গেল সে। হুট করেই তার হার্ট বিট করতে লাগলো। কেমন একটা ভাল লাগার অনুভূতি কাজ করতে লাগলো তার। সূর্যের আলো গাড়ির কাঁচ ভেদ করে এসে পরছিল মেয়েটির মুখে। দুধে আলতা গায়ের রং হলুদ হলুদ লাগচ্ছিল।মনে হচ্ছিল কোনো হলুদ পরি তার কোলে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটির মায়াবী চেহারায় হারিয়ে যাচ্ছিল আরিশ। মনের মাঝে অনুভতি গুলো রঙ্গিন হয়েছিল তার।কই এত এত মেয়েদের সংস্পর্শে সে ছিল কখনো এমন ফিলিংস তো হয় নি? তাহলে আজ কেন তার কোলে থাকা ছোট হলুদ পরির জন্য হচ্ছে? হে ছোটোই তো দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটি বয়স বড় জোড় ১৮,১৯ হবে।এসব ভাবতেই গাড়ি এসে থামে হাসপাতালের সামনে।
তার গাড়িতে করে আসা তার সহপাঠীরা নেমে আসে। আর আরিশকে রিকুয়েস্ট করে মেয়েটিকে কোলে করে নিয়ে ভিতরে দিয়ে আসতে। আরিশ এতে ইতস্তত করে তাদের পিড়াপিড়িতে কোলে নিয়ে ভিতরে গেল হাসপাতালের। সেখানেই ইমারজেন্সিতে ভর্তি করা হয় মেয়েটিকে। আরিশ নিজেই সব করে দিয়ে আসে ফরম ফিলাপ করার সময় জানতে পারে মেয়েটির নাম শ্রেয়া। নামটি শুনে মনের অজান্তে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুঁটে উঠে। বিড়বিড় করে বার কয়েক আওড়ায় নামটি। নামটি যতবার সে নিয়ে ছিল, ততবার যেন মনে ভাল লাগার সৃষ্টি হয়েছে তার।
শ্রেয়া আড়মোড়া দিতেই ধ্যায়ানে ভাঙ্গে আরিশের। সে যে ডুবে ছিল তার প্রথম দেখা হলুদ পরিতে?
শ্রেয়ার ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে বসে থাকা আরিশের দিকে চোখে পরে।যে কিনা তার দিকে ঘোর লাগা চাহনীতে চেয়ে। শ্রেয়ার কাছে আরিশকে ভয় লাগে, খুব ভয়! তাই সে পিছিয়ে যেতেই হাত ধরে ফেলে আরিশ।শ্রেয়ার মুখে ভয়ের এমন ছাপ তার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। কেন তার হলুদ পরি ভয় পায়? উত্তর অবশ্য তার জানাই। ছোট শ্বাস ফেলে আরিশ। শ্রেয়ার হাত তার দু হাতের মুঠে নিয়ে চুমু খায় হাতে। এতে কেঁপে উঠে শ্রেয়া। কিন্তু তার নজর নিচের দিকে। শ্রেয়াকে এমন কেঁপে উঠতে দেখে মুচকি হাসে আরিশ। শ্রেয়ার হাতটা কোলের মাঝে নিয়ে বলতে লাগে,
—-আমি তোমাকে কিছু ক্লিয়ার করতে চাই! তুমি ভয় পেয় না আমি কিছু করবো না। সত্যিটা বলব শুধু তারপর কি করবে তোমার ইচ্ছা।
শ্রেয়া মাথা তুলে একবার তাকায় আরিশের দিক। সাথে সাথে আবার নিচে তাকিয়ে ফেলে।এই চোখে তাকানোর স্বার্থ নেই তার। আরিশের চোখ দুটো যে অনেক গভীর। সে চোখের ভাষা অন্য কিছু বলে সব সময়! যা শ্রেয়ার ছোট মাথা ধরতে অক্ষম। কিন্তু এতটুকু একদিনে বুঝে গেছে, আরিশ যে তাতে পাগল।একদিন কতটা না যত্নবান ছিল তার প্রতি। লোকটি শ্রেয়ার পাগল মনে হয়। খুব পাগল। কারণ লোকটি যতবার তাকে মারে, বকে! ততবার কান্না করে? কি অদ্ভুত। অথচ শ্রেয়া বা সবার সামনেই কত না শক্ত, গম্ভীর, রগচটা, বদরাগী লোক?আসলেই কারো বাহির দেখে বিবেচনা করা ঠিক না। কারণ মানুষের বাহির দেখে ভিতরে প্রকাশ হয় না।তার জন্য মানুষের সাথে মিশতে হয়।
কিন্তু শ্রেয়ার ভয় করে, ভয়ানক রকমের ভয়।আরিশের কথায় শ্রেয়ার ভাবনার ছেদ পরে,
—কোথায় হারিয়ে গেলে?
শ্রেয়ার মাথা নাড়ায়। মানে কোথাও নয়।
আরিশ শ্রেয়ার গাল হাত রেখে বলে,
—-আই নো, তুমি আমাকে খুব ভয় পায়। প্লীজ ডোন্ট! আসো আমার সাথে বলে,
শ্রেয়ার সাথে করে নিয়ে গেল বেলকনিতে। শেষ রাতের দিক সময়টি। চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু দূর আকাশের একটি চাঁদ আর কিছু তারার মেলার দেখা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর কথা বলল আরিশ,
—-তোমাকে দেখি তিন বছর আগে। তোমার মনে আছে কি না জানি না! তিন বছর আগে রাস্তায় তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে। তখন আমার গাড়িতে তোমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে ছিলাম।
শ্রেয়া অবাক হয়ে তাকালো আরিশের দিক।সেদিনের লোকটাকে কতনা খিঁজা ট্রায় করেছিল একটি ধন্যবাদ দেয়ার জন্য।কিন্তু পায় নি। আর সে লোকটি ভাগ্যক্রমে তার স্বামী?? এটাকেই হয়তো ভাগ্যচক্র বলে..!
আরিশ আবার বলল,
—-তোমার সব খবর নেই সেদিনের পর। বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই। কিন্তু তোমার মা নাকোচ করে। আর কারন বলে, তোমার পছন্দ আছে।বলে ছোট শ্বাস নেয় আরিশ।
আর শ্রেয়া সেই অবাক চোখে তাকিয়েই থাকে আরিশের দিক..!
আরিশ আবার বলে,
—-আরিয়ানের সাথে তোমার সম্পর্কের কথা শুনে কষ্ট হয় তাই আর তোমাকে পাবার আসা ছেড়ে দেই। আমি কে? যে কারো ভালবাসা কেড়ে নিব?
কিন্তু ভাগ্য বলতে কিছু আছে। তোমাকে আবার দেখতে পাই ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে।পালিয়ে বিয়ে করতে এসেছো। আমার কোনো মাথা ব্যথা ছিল না এতে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল তখন, যখন আরিয়ানকে আমি দেখলাম তোমার সাথে। আরিয়ান নামের সেই ছেলেটি ছিল মেয়েদের দালাল। তাকে আমি অনেক বার জেলের ভাত খাইয়েছি।তাই আরিয়ানকে তখন দেখে সন্দেহ হয় তাই তার কাছে যাই। সে আমাকে দেখে হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,,
—- স্যার আপনি?
—-তুমি এখানে?
—-বিয়ে করতে আসচ্ছি স্যার..!
শ্রেয়াকে দেখিয়ে,
—-ওই মেয়েটি কে?
আরিয়ান হাসার চেস্টা করে বলে,
—-আমার হবু বউ!
আরিশের কপালে তখন চিন্তার ছাপ,
সে তখন আরিয়ানকে পরিক্ষা করার জন্য বলে,
—-তুমি তাকে বিয়ে করো না। আমি তাকে কিনতে চাই।
আরিয়ানের চোখ চকচক করে উঠে। কারণ আরিয়ান লোভি ছিল।সে সাথে সাথে বলল,
—-স্যার কত দিবেন? ৫ লাক্ষ টাকার কম কিন্তু নিব না..”
আরিশের ঠোঁটে তখন বাঁকা রহস্যময় হাসি। কারণ তার ফাদে পা দেয় আরিয়ান। এবংসতার কথা অনুযায়ী সব করে।
বিয়ের রেজিস্ট্রির সময় শ্রেয়া দুটা পেপারে সাইন করে আর আরিয়ান একটিতে।আরিয়ান আর শ্রেয়া দুজন যেই পেপারে সাইন করে তা উকিল ফেলে দেয়। আর আরিয়ান শ্রেয়া কে নিয়ে চলে যাওয়ার পর আরিশ তাতে সাইন করে দেয়। এবং আইনগত ভাবে শ্রেয়ার আর আরিশের বিয়ে হয়ে যায়।
আরিশ যেহেতু অনেক বড় বিজনেসম্যান তাই তার জন্য কোনো কিছু টাফ না।তার আরিশ আরিয়ানের
কনফেশন করা অডিও, ভিডিও ক্লিপ দেখালো।
সেদিন আরিয়ানকেও সে এ দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। কোনো জানোয়ারের মাফ নেই আরিমটের কাছে। তােও আবার তার কলিজাতে হাত দিয়েছে।
আরিশের কথায় বাকরুদ্ধ শ্রেয়া অনর্গল পানি পরছে চোখ বেয়ে তার। সে সবার কাছে ধোকা পেয়ে গেল লাইফে।
আরিশ এবার শ্রেয়ার গা ঘেসে বসে।চোখ মুছে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে আমি জানি তোমার লাইফের অর্ধেকটা সময় খুব কষ্টে কেঁটেছে। আমি কম দেই নি। আমাকে ক্ষমা করা যায় না? আমাকে কি আপন করা যায় না..!
শ্রেয়া কিছু বলল না। উঠে চলে গেল ওয়াশরুমে দরজা বন্ধ করে কল ছেড়ে দিয়ে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো। কি পেল সে? মা মরে যাওয়ার পর থেকে সবাই তার সাথে ছলনা করেই চলছে! বাবা, সৎ মা, আর আরিয়ান। এখন আরিশকে কিভাবে সে আপন করে নিবে? আরিশ সে ও তাকে আটকে রেখেছে। দুবার গায় হাত তোলেছে? তার সাথে আবার ভালও বেসেছে। কি করবে সে দিবে একটা সুযোগ? দেয়া উটচিত কারন সে আরিয়ান নামক পশু থেকে তাকে বাঁচিয়ে ছে…!
এভাবে কেঁটে যায় কদিন।
আজ শ্রেয়া আর আরিশের বিয়ে, আল্লাহ নাম নিয়ে তিন কবুল পরে বিয়ে করবে তারা।এ কদিনে
শ্রেয়া স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করছে আরিশের সাথে। আরিশও তাকে ভাল রাখার ট্রাই করছে।কিন্তু মাঝে মাঝে রাগে বাট এখন আর গায়ে হাত তুলে না।কিছুক্ষণের মাঝে তিন কবুল পরে বিয়ে হয়ে যায় তাদের।
বাসর ঘরে বসে আছে শ্রেয়া। আ্িমটের রুমটা পুরো সাদা অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।কিছুক্ষণ পর আরিয়ান এসে ডুকে ঘরে।শ্রেয়ার আজ কেমন জানি লাগতেসে। ভয় ভয় করতেসে।
আরিশ কাছে এসে দাড়ালো। শ্রেয়া সালাম করতে নিতেই। ধরে ফেলে সে আর বুকের সাথে লাগিয়ে বলল,
—-আমার হলুদ পরি। তোমার জায়গা এ বুকে সব সময়।
শ্রেয়া লজ্জা পেলে এমন কথায়। তখন আরিশ শ্রেয়াকে কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দেয়। এবং সেো তার পাশে শুয়ে বুকে সাথে চেপে ধরে বলতে লাগে,
—-আজ আমি অনেক খুশি অনেক!
—-শ্রেয়া হাসলো শুধু।
আরিশ সেই হাসিতে আরো পাগল হয়ে গেল। এবং টুপ করে চুমি দিয়ে দিল শ্রেয়ার ঠোঁটে। শ্রেয়া লজ্জায় মুখ লুকায় আরিশের বুকে। আরিশের ঠোঁটে ফুঁটে উঠে প্রশান্তির হাসি। সে আজ জ্বয় করতে পেরেছে তার #কেনা_বউয়ের মন❤।
?সমাপ্ত ?