#ক্যানভাস-পর্ব : (৪)
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
যত মন থেকে মুছতে চায় ততই সব চোখের সামনে ভেসে উঠে। মেঘের মা মেঘের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। মেঘ মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে।মেঘের মা মেঘকে রেখে উঠতে চাইলেও পারছেন না উঠতে। কাজের মেয়েটাকে ডেকে চুপিচুপি বললেন মেঘের জন্য বালিশ আনতে। একটুপর মেয়েটা একটা বালিশ নিয়ে আসলে মেঘের মাথা নিচে বালিশটা রেখে উঠে আসেন।তারপর রান্নাঘরের কাজ সামলাতে থাকেন। মেঘ যখন ঘুম থেকে উঠে তখন রাত নয়টা। মেঘ সোজা হয়ে বসে দেখে মা রান্নাঘরে আর মেঘ সোফায়। মেঘ চোখ কচলাতে কচলাতে মাকে ডাকলো,
_মা কোথায় তুমি?
_এইতো আমি, কী হয়েছে?
_আমাকে ডাকোনি যে!
_সারাদিন তুই কত আপসেট ছিলি সেটা তোর চেহারা দেখেই বুঝেছি, তার উপর পায়ে ব্যথা। ডাকলে কি তুই রুমে যেতে পারতি? তোর বাবা আসুক একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারপর রুমে যাবি, যেন আর বারবার নিচে নামতে না হয়।
_বুঝলাম, ডাকতে পারতে! মাগরিবের নামাজ তো আদায় হলো না।
_খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে গিয়ে কাযা আদায় করে নিস। বসে বসে পড়বি কেমন?
_হুম
রাতে শ্রাবণ খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমোতে গেছে ঠিকই কিন্তু আজকের ঘটনার কথা মনে পড়তেই চোখের ঘুম হাওয়া হয়ে গেছে। রুমের ভেতর পায়চারি করছে আর আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভুলার চেষ্টা করছে। ফোন বাজতেই শ্রাবণের ভাবনা থামে। শ্রাবণ ফোন তুলতেই ওপাশের মানুষটা বলল,
_আজ একবারও ফোন দিলে না যে? কখন বাসায় পৌঁছেছো সেটাও জানাও নি? কী হয়েছে তোমার?
_সরি আনু,
_কী হয়েছে শ্রাবণ? মন খারাপ?
_হ্যাঁ!
_কেন?
_মেয়েটাকে সরি বলা উচিৎ ছিল।
_কাম-অন শ্রাবণ কোথাকার কোন মেয়ের জন্য তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডকে কল না করে এতটা সময় ওই বোরিং মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছ। আই জাস্ট কান্ট বিলিভ ইট! তুমি আমাকে ফোন করতে ভুলে গেছ? হাউ ইজ ইট পসিবল শ্রাবণ?
_বললাম তো সরি।
_সরি বললেই দায়িত্ব শেষ।
_আমরা তো মেয়েটার প্রতি অন্যায় করেছি।
_ওই ফালতু মেয়েটাকে নিয়ে একদম মাথা ঘামাবে না।
_জাস্ট শাট-আপ।
_হোয়াট ডিড ইউ সে?
_প্লিজ আনু বুঝার চেষ্টা করো, ও একটা মানুষ,। ওর তো মনও আছে। তাহলে কেন শুধু শুধু একজনকে কষ্ট দিয়ে অপরাধের খাতায় নিজের নাম লেখাবো?
_ওহ! খুব দরদ না তোমার মেয়েটার প্রতি। ঠিক আছে আমিও এর শেষ দেখে ছাড়ব।
_কী বলতে চাইছো তুমি?
_থাকো তুমি ওই মেয়েটাকে নিয়ে। আমাকে আর একবারও ফোন করবা না। কোনো টেক্সট করবা না। যদি ফোন কল, টেক্সট করো তাহলে তোমার নাম্বার চিরদিনের জন্য ব্ল্যাকলিস্টে চলে যাবে।
_আনু এটা তুমি কী বলছো? তুমি পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে?
_তুমি যদি মাত্র কয়েকটা ঘন্টায় আমাকে ভুলতে পারো। তাহলে আমিও পারি কয়েকদিনে তোমাকে ভুলতে।
_আনু, এই আনু, প্লিজ আমার কথা শোণ।
_গুড বাই মি. শ্রাবণ মাহমুদ।
আনু কল কেটে দিলে শ্রাবণ আবারও আনুর নাম্বারে ডায়াল করে। বারবার কল করে আর টেক্সট পাঠায়, কিন্তু আনু ফোন উঠায় না। একটু পর শ্রাবণ আবার ডায়াল করে, ওপাশ থেকে মহিলা কন্ঠে বলে উঠে, দ্যা নাম্বার ইজ বিজি নাউ! শ্রাবণের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আনু শ্রাবণকে অলরেডি ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিয়েছে।
সারারাত শ্রাবণ আনিকার চিন্তায় ঘুমোতে পারেনি। সকালে রেডি হয়ে অফিসের যাওয়ার আগে আনিকাদের বাসায় যায়। আনিকার মায়ের সাথে দেখা করে শ্রাবণ। শ্রাবণ আনিকার মাকে বলল,
_আন্টি আনু কোথায়? প্লিজ একটু ডেকে দিন না।
_আনু তো বাসায় নেই।
_বাসায় নেই মানে! এতো সকালে কোথায় গেছে?
_আনু এখন প্লেনে। সাতটার ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর চলে গেছে ওর বাবার কাছে।
_আমাকে না জানিয়ে?
_আমি নিজেও জানি না। হুট করে ওর বাবাকে বলে ইমিডিয়েট একটা প্লেনের টিকেট বুক করতে, কয়েকঘন্টার ভেতরে দেশ ছাড়তে চায়। মেয়েটা এতো জেদী যে ওর বাবা ওর কোনো কথাই ফেলতে পারেন না। তাই তিনি টিকেটের ব্যবস্থা করে আনুকে তাঁর কাছে নিয়ে যান। এখন বুঝতে পারছি মেয়েটা তোমার উপর রাগ করে দেশ ছেড়েছে।
_আসছি আন্টি। আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আনুদের বাসা থেকে বেরিয়ে শ্রাবণ সোজা অফিসে যায়। অফিসে গিয়ে কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না। না এদিক দেখছে, না ওদিক।সব ফাইলগুলো সামনে রাখা। একটা ফাইলও চেক করে দেখেনি। একমনে জানালার কাচের দিকে তাকিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। শ্রাবণের বাবা শ্রাবণকে ডাক পাঠালে শ্রাবণ ওনার ডেস্কে যায়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রাবণ বলল,
_বাবা আসব?
_হ্যাঁ বাবা আয়,
_ডাকছিলে?
_কিছু জরুরি ফাইল তোর ডেস্কে রাখা আছে,
সেগুলো চেক করে দিতে পারবি?
_এখন?
_হ্যাঁ,
_আচ্ছা, আমি নিয়ে আসছি।
শ্রাবণ চেয়ার থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই শ্রাবণের বাবা পিছন থেকে শ্রাবণকে বললেন,
_তোর মন ভালো না থাকলে রেখে দে, কালকে চেক করলেও হবে।
_তুমি!
_তোর মুখভার লাগছে, বাসায় চলে যা।
_কিন্তু অফিস!
_আমি আছি তো, টেনশন করতে হবে না।
_বাবা থেংক ইউ সো মাচ্।
শ্রাবণ দৌঁড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। শ্রাবণের বাবা শ্রাবণকে কাছে বসিয়ে অনেক কিছু বুঝান।মন ভালো না থাকলে কি করতে হয়? কি করলে মন ভালো হয়? আরো নানারকম টিপস দিয়ে শ্রাবণকে বাসায় চলে আসতে বলেন। শ্রাবণ বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে।
৯!!
আজ মেঘ সারাদিন বাসা থেকে বের হয়নি। নিজের রুমের মাঝে বসে বসেই শ্রাবণের জন্য কিছু ক্যানভাস রেডি করল। এখনও সব কমপ্লিট হয়নি, তবে আরো দুদিন সময়ের মধ্যে করে নিতে পারবে। মেঘ বসেবসে ক্যানভাসে ছবি আঁকছে। তখনই মেঘের ফোনটা বেজে উঠে। মেঘ ফোন রিসিভ করতেই নওরিন ঝারি দিতে থাকে। নওরিনের ঝারি শুনে মেঘ চুপ করে রইল। নওরিন মেঘকে বলল,
_কী রে কথা বল?
_কী বলব?
_এক থাপ্পড় দিব, আজকে আর্ট ক্লাসে আসলি না যে।
_আমি খুব অসুস্থ রে।
_অসুস্থ! কী হয়েছে তোর?
_বিরাট অসুখ, তুই এসে দেখে যা না প্লিজ।
_ঠিক আছে আসবো।
নওরিন কল কেটে মেঘকে নিয়ে ভাবতে থাকে। পরশুও তো মেয়েটা ঠিক ছিলো, তাহলে আজ হঠাৎ কী রোগ হলো সে ক্লাসে যেতে পারলো না? মেঘের এই অদ্ভুত কথাবার্তা নওরিনের কাছে আরো অদ্ভুত লাগে। ভাবতে ভাবতেই নওরিন পুরো রাত পাড় করে দেয়।
পরেরদিন সকাল সকাল রেডি হয়ে মাকে বলে বের হয় মেঘদের বাসায় যাবে। নওরিনের মা নওরিনকে বললেন, বাবাকে ফোন করে বলে গাড়িটা পাঠাতে তারপর নিজেদের গাড়িতে করে যাবে, কিন্তু নওরিন মানা করে দেয়। সে একাই যেতে পারবে, কোনো গাড়ি লাগবে না।
অনেকক্ষণ ধরে নওরিন রাস্তায় অপেক্ষা করছে কিন্তু কোনো গাড়িই থামছে না। নওরিন একবার এইদিকে হাঁটে তো আরেকবার ওইদিকে। এইভাবে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাড় করে দেয় এক ঘন্টা। রাগে নওরিনের নিজের চুল টানতে ইচ্ছে করে। কি করবে, কিভাবে যাবে?এটাই ভাবছে নওরিন। নওরিন একটা কার আসতে দেখে আঙুল তুলে লিফট চায়। হঠাৎ করেই সেই কার নওরিনের সামনে এসে থামে।নওরিন দু’পা পিছিয়ে যায় ভয়ে। গাড়ির দরজা খুলে নওরিনকে ডাক দিয়ে আদনান বলল,
_কোথাও যাবে?
_হ্যাঁ।
_উঠে পড়, আমি নামিয়ে দিব।
_আপনি যদি কিডন্যাপার হন।
_আমি কিডন্যাপার নই তবে মেয়েধরা।
_বুঝেছি, আপনার নামে একটা কেইস থানায় লিখাতে হবে।
_আচ্ছা, তাই বুঝি।
_হ্যাঁ, একজন কিডন্যাপারকে এইভাবে ছেড়ে দেওয়া ভালো না।
_বন্দি করে রাখতে পারো সারাজীবনের জন্য।
_এতো কারাগারে থাকার শখ নাকি?
_হ্যাঁ, তবে সেটা কারো মনের কারাগারে, জেলখানায় না।
_ইশ! আসছেন। রোদে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছি,
কোথায় একটু হেল্প করবেন তা না আসছেন ওনি কারাগারে বন্দি হতে।
_যাবে কোথায়?
_মেঘের বাসায়।
নওরিন আদনানের গাড়িতে উঠে, সামনের সিটে বসে। সিট বেল্টটা বাধতে বাধতে নওরিন বলল,
_কাল রাতে বলল অসুস্থ, তাই ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
_তোমাদের বন্ধুত্বটা খুব সুন্দর।
_একদম নজর দিবেন না।
_নজর অলরেডি লেগে গেছে।
_কার?
_জানি না ম্যাডাম।
আদনান আর কিছু না বলে চুপচাপ ড্রাইভ করতে ব্যস্ত। দশ মিনিট এর মধ্যেই ওরা মেঘদের বাড়িতে পৌঁছায়। নওরিন গাড়ি থেকে নেমে আদনানকে বলল,
_থেংক ইউ,আসছি।
_আবার কবে দেখা হবে?
_আল্লাহ যেদিন চাইবে সেদিন।
_সেইদিন কবে সেটা জানতে চাইছি?
_সেটা আমি জানি না।
_ওকে, অপেক্ষায় থাকব।
_ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়।
_জানি। তবে বেশি মিষ্টি ডায়বেটিস এর জন্য ভালো না।
_আচ্ছা বাই, ভালো থাকবেন।
নওরিন গেটের ভেতর দিয়ে মেঘদের বাসায় ঢুকার আগ পর্যন্ত আদনান তাকিয়ে থাকে নওরিনের যাবার পথে। নওরিন মেঘদের বাসার ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে সামি চলে যায়। নওরিন মেঘের মায়ের সাথে কথা বলে মেঘকে দেখতে মেঘের রুমে এসে দেখে মেঘ বিছানায় বসে বসে স্কেচ আঁকতে ব্যস্ত। নওরিন মেঘের পাশে বসে মেঘকে বলল,
_এই যে মহারানী কী অসুখ তোমার? তুই দেখি দিব্যি সুস্থ আছিস।
_সুস্থ থাকলে কি ক্লাসে যেতাম না?
_বল কী হয়েছে?
মেঘ সব ঘটনা নওরিনকে খুলে বলে। নওরিন মেঘের এসব কথা শুনে হাসতে হাসতে মেঘকে বলল,
_ওরে বাবা এতো পুরো সিনেমা।
_ফাজলামি করিস না তো। এই সিনেমার প্যাঁচে পড়েই পায়ের বারোটা বাজিয়েছি। ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছি না।
_রেস্ট নে ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর দুজনে মিলে ইচ্ছেমতো আড্ডা খুঁনসুটিতে মেতে উঠে। মেতে উঠে দুষ্টামির চেনা রাজ্যে।
শ্রাবণ অফিসে মন খারাপ করে বসে আছে। আজ দুদিন হয়ে গেলো অথচ আনু একবারের জন্যও শ্রাবণের খোঁজ করল না। দুজন দুজনকে এত ভালোবাসার পরেও আজ শ্রাবণের মনে হচ্ছে এই ভালোবাসার কোনো জোর নেই, নেই কোনো আশ্রয়, নেই কোনো ভরসার হাত। ভাবতে ভাবতেই কয়েকফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে শ্রাবণের মায়াজড়ানো সেই চোখ থেকে। যা মেঘের কাছে অনেক দামী। আজ সেই দামী চোখ থেকে আরো দামী অশ্রু ঝরছে অথচ শ্রাবণ তাতে বিন্দুমাত্র মূল্য দিচ্ছে না।
বিকেল হতেই নওরিন চলে আসে নিজেদের বাসায়। বাসায় এসে আর্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মাঝেমাঝে ঘুরাঘুরি করা ভালো, কিন্তু নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে নয়। আর্ট করতে করতেই মনে পড়ে আদনানের কথা, ভাবতেই ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠে। এই হাসির কারণ নওরিন জানেনা, আর জানার চেষ্টাও করছে না। সে একমনে এখন ক্যানভাস সাজাতে ব্যস্ত।
১০!!
অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে শ্রাবণ বাবা-মায়ের সাথে বসে ডিনার করছে। ডিনারের এক পর্যায়ে শ্রাবণের বাবা-মা দুজনেই শ্রাবণকে বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু শ্রাবণ কোনো উত্তর দেয় না। শ্রাবণের মা শ্রাবণকে বললেন,
_দেখ বাবা আমি আর কতদিন বাঁচব জানি না, তবে পরপারে চলে যাওয়ার আমি আমার বউমার মুখ দেখতে চাই, নাতি-নাতনিদের দেখে মরতে চাই, তুই বিয়েতে রাজী হয়ে যা না।
_মা আমি এখন বিয়ে করব না।
_তুই চাইলে দু’দিন সময় নিয়ে ভেবে দেখ। আমরা মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। মেয়েটা খুব ভালো, রূপে, গুণে সবদিক থেকে মেয়েটা পারফেক্ট। তুই শুধু হ্যাঁ বল আমরা ওনাদের সাথে আলাপ করে নিব।
_আমি দুদিন পর তোমাকে জানাচ্ছি।
খাওয়া দাওয়া শেষে শ্রাবণ নিজের রুমে এসে ভাবছে কীভাবে আনুর কথা বাবা-মাকে জানাবে। এখনই সময় যদি না জানায় তাহলে আনুকে চিরদিনের জন্য হারাতে হবে। শ্রাবণ চায়না আনু ওর জীবন থেকে হারিয়ে যাক। কিন্তু আনু এখনও কেনো এখনও যোগাযোগ করছে না? এসব চিন্তা শ্রাবণকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ঘুমোতে গেলে ঘুম আসেনা শ্রাবণের চোখে।সারাক্ষণ শুধু আনুকে নিয়ে ভাবনা। ঘুম না আসায় ফোনটা হাতে নিল। রাত তখন বারোটা। না চাইতেও ফেইসবুকে ডু মেরে অনেক বড় একটা শকড্ খেল শ্রাবণ। ভাবতেই পারছে না এটা কিভাবে সম্ভব? চোখ যেন আজ শুধু মিথ্যে মায়াজাল দেখছে। চোখের প্রতিটা অশ্রু বারবার তাঁর গাল বেয়ে অবিরাম ঝরে পড়ছে। সে জল মুছার কোনো ইচ্ছে নেই শ্রাবণের। কি জবাব দিবে মাকে? কেন এমন হলো শ্রাবণের সাথে? শ্রাবণ তো কাউকে ঠকায়নি! কাউকে মিথ্যে ভালোবাসি বলে নাটক করেনি! তাহলে আজ আনু কেন এমন করল? শ্রাবণ আনুর পোস্টের সবগুলো কমেন্ট দেখল। কমেন্টের সব রিপ্লে দেখে শ্রাবণের ভেতর কেটে কান্না আসতে শুরু করে।
চিৎকার দিয়ে কাঁদতে চায় শ্রাবণ কিন্তু ভেতরের চাপা আর্তনাদ শ্রাবণকে কাঁদতে দেয়না। চোখের জল যেন এক জায়গায় থমকে গেছে। চোখের জল মুছে শ্রাবণ আনুকে নক করে। ম্যাসেঞ্জারে কল করে, কিন্তু আনু কোনো রেসপন্স করে না।আনুর ম্যাসেঞ্জার থেকে চলে যাওয়া শ্রাবণের কষ্টটা আরো বাড়ায়। দুদিনেই আনু কেমন বদলে গেল? এতো সে আনু নয়, যে আনু শ্রাবণকে খুব ভালোবাসতো? আজ কোথায় হারাল সে আনু, যার ভেতরে শ্রাবণের জন্য অনেক ভালোবাসা জমা ছিল। কীভাবে হলো এটা? কীভাবে মানুষ দু’দিনে এতো বদলায়?
শ্রাবণের ভাবনা থামছে না। এত ভাবছে এত ভাবছে তবুও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছে না। ব্যর্থতা আর হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে শ্রাবণ অফলাইনে চলে আসে।
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।