ক্যানভাস_পর্ব : (১৫)

0
516

#ক্যানভাস_পর্ব : (১৫)
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু

চোখ বন্ধ করতেই সব ভেসে উঠে সামির চোখের সামনে। সামি বলতে লাগল,

_আমি সাধারনত একজন চিত্রশিল্পী। যে নিজের হাতের ছোঁয়াতে মানুষের মনে একটু ভালোবাসা জাগানোর চেষ্টা করি। চেষ্টা করি মানুষের মাঝে আমার সামান্য প্রতিভাটাকে তুলে সাহসের সাথে জিততে। জিত আমার প্রধান লক্ষ্য না হলেও আমার মাধ্যমে কাউকে সুখী রাখা, কাউকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। কাউকে কষ্ট দিয়ে তাঁর মনে নিজের প্রতি ঘৃণা তৈরী করা আমার বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য নয়। আমি চাই না কেউ আমার দ্বারা কষ্টের স্বীকার হোক। সেজন্য সর্বদা নিজের কষ্টকে আড়াল করে তাঁর মুখের হাসি দেখার চেষ্টা করবো আমি। প্রয়োজনে তাঁর বেঁচে থাকার প্রধান মাধ্যম হবো আমি, যাতে সে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বলতে পারে, তুমিই আমার স্বপ্ন, তুমি আমার সাধনা। হ্যাঁ প্রথম দেখায় কেউ আমার মন কেঁড়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু ভালোবাসার মতো সাধ্য হয়নি। কাউকে একতরফা মন দেয়ার আগে তাঁর সম্পর্কে সবটা জেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু আমি জানার চেষ্টা করিনি। তবে এখন বেশ বুঝেছি সবকিছু সবার জন্য নয়। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হাহাকার থাকতেই পারে তাই বলে সর্বদা নিজের চাওয়া পাওয়াকেই প্রায়োরিটি দিবো এমন বোকা আমি নই। আগে চাইতাম আমি যেন কাউকে ভালোবাসতে পারি। কিন্তু এখন চাই, কেউ আমাকে ভালোবাসুক যাতে তাঁর ভালোবাসায় ভরসার হাত রেখে অতল সাগরের তলায় ডুব দিতেও মনে কোনো সংকোচ থাকবে না। থাকবে শুধু বিশ্বাস। হ্যাঁ, সে আছে তোমার। শুধুই তোমার।

ইরা মুগ্ধ হয়ে সামির কথাগুলো শুনছিল। সামির কথাগুলো যেন ইরার মনের ভেতরে গিয়ে গেঁথে গেল। ইরা অজান্তেই হেসে ফেলে। ইরার হাসি দেখে সামিও মুচকি হাসলো। সামি ইরাকে জিজ্ঞেস করল,

_কী ব্যাপার বলুন তো? আপনি এইভাবে হাসছেন কেন?
_আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আপনি একজন নামকরা দার্শনিক হলে ভালো করতেন। এত নিখুঁত কারো গভীরের চিন্তা আমার জানা ছিল না।
_আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
_হ্যাঁ অবশ্যই।
_আপনার মাস্কটা কি খোলা যায়? কার সাথে নিজের মনের কথা শেয়ার করলাম তাতে কি একবার দেখতে পারব না?
_আসলে সেটা নয়। চারিদিকে এত ধুলোবালি যে এসবে আমার খুব প্রবলেম হয়৷ এইজন্য বাইরে বের হলেই মুখে মাস্ক ইউজ করি।
_ওহ। আপনার কি এলার্জির সমস্যা আছে?
_শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এইজন্য বাইরে খুব একটা বের হই না। শুধু ডিউটির খাতিরে হাসপাতালে আসি।
_ওহ। তাহলে থাক আপনার অসুবিধা হোক আমি তা চাই না।
_থেংক ইউ।

দুজনে জমিয়ে গল্প করে। সামির মনটা এখন একটু হাল্কা লাগছে। ভেতরে আকুতিটাকে বাইরে প্রকাশ করাটা খুব দরকার ছিলো। একজায়গায় থাকতে থাকতে কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার তৈরী হয়ে ছিল। যখন নিজের একান্ত কষ্ট কিংবা ইচ্ছা কেবল নিজের মাঝেই চাপা থাকে তখন একটা সময় সেটা বিলুপ্ত হওয়ার চান্সই বেশি থাকে। কারো সাথে সেই বিষয় নিয়ে খানিকটা শেয়ার করলে মনে একটু তৃপ্তি পাওয়া যায়, যার ফলে মনটাও ফুরফুরে হয়ে যায়। ইরা আর সামি দুজনেই গল্প করছে। এটা ওটা অনেক কথা শেয়ার করছে।

৩৭!!
মেঘ ইরাকে সুযোগ দিয়ে খানিকটা দূরেই একা একা এমন সুন্দর মনমাতানো পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়। নওরিনকে একটু আগেই এই ব্যাপারে সব জানিয়েছে মেঘ। হেঁটে হেঁটে চারিপাশটা যখন মনযোগ দিয়ে দেখছিল তখনই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে মেঘের ফোনে। মেঘ অচেনা নাম্বার দেখে একটু সময় কী যেন ভাবে? তারপর আবার ফোন কানে তুলে।

_আসসালামু আলাইকুম।
_
_হ্যালো কে বলছেন।
_
_আজব কে আপনি? কথা বলছেন না কেন?
_আমি তোমার অতীত।
_আমার অতীত! আজব তো কে আপনি? কেন ফোন করেছেন আমাকে?
_ভুলে গেছো আমাকে।
_কে আপনি? আমি আপনাকে চিনি না।
_সত্যি কি চেনো না। না কি চিনেও না চেনার অভিনয় করছো।
_দেখুন ফাজলামি করবেন না। আপনি কে আমি সত্যি চিনতে পারছি না।
_একটু অতীতে ব্যাক করতে পারবে।
_কোন অতীতে?
_২০১৪ সালের স্কুল জীবনের শেষ বছরে।
_২০১৪!
_হ্যাঁ, ২০১৪। মনে পড়েছে।

মেঘ থমকে যায় হঠাৎ করে আসা মানুষটার কথায়। এত বছর পর কেন ফিরে এসেছে? মেঘ ভাবনাতে হারিয়ে যায়। ওপারের কণ্ঠস্বর শুনে মেঘ বাস্তবে ফিরে।

_হ্যাঁ পড়েছে। আর তোমার মতো জঘন্য মানুষটাকে মনে পড়াটাই স্বাভাবিক। কী জানো তো? আমি না এতো মন ভুলা নই যে এমন একজনকে মন থেকে মুছে ফেলবো মি. আবির চৌধুরী।
_ওয়াও! শুনে খুব খুশি হলাম।
_এত ডান্স দেওয়ার মতো কিছু হয়নি। যদি সেদিনের কথা মনে থাকে তাহলে কেন বেহায়ার মতো আমাকে ফোন করেছ তুমি? আর তুমি তো!
_ঘাবড়ে যেও না। আমি আর হাজতে নেই। আমাকে আটকে রাখবে এমন কোনো আইন এই দেশে তৈরী হয়নি।
_তাই না কি? একবার শাস্তি পেয়েও স্বাদ মিটেনি তোমার। সমস্যা না, এই মেঘের হাতে এখনও সত্য লুকানো আছে। প্রয়োজনে আমি আবারও আইনের আশ্রয় নিব।
_লাভ নেই মেঘ লাভ নেই। তুমি যতবার আমাকে জেলে ঢুকাবে। আমি ততবারই আইনের হাত থেকে পালিয়ে আসবো।
_তার মানে এবারও তুমি জেল থেকে পালিয়েছো।
_বললাম তো আমাকে আটকে রাখার মতো আইন এই দেশে নেই।
_তাহলে আবারও প্রস্তুত হও জেলে যাওয়ার জন্য।
_হুমকি দিচ্ছো।
_ধরে নাও সেটাই।
_তাহলে ধরো কীভাবে ধরবে? আমি তোমার হাতের নাগালেই তো থাকি।
_অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আবারও জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বো।

মেঘ রাগে ফোন কেটে দেয়। কী করবে ভেবে পায় না। এতগুলো বছর পর শয়তানটা আবার ফিরবে এটা মেঘের জানাও ছিলো না। মেঘও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না। মেঘ ভালো করেই জানে যত গর্জে তত বর্ষে না। আর এই ছেলেটার দৌঁড় মেঘের ভালো করেই জানা আছে। মেঘ ইরাকে দূর থেকে ইশারার বুঝায় বাসায় যেতে হবে। ইরা সামিকে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
হাসপাতালে সামিকে পৌঁছে দিয়ে ইরা কেবিনের বাইরে বেরিয়ে আসে। মেঘ সামির পাশে বসে অনেকটা সময়। মেঘ সামিকে বলল,

_এখন কেমন লাগছে সামি?
_অনেকটা বেটার ফিল করছি। আচ্ছা আমি বাসায় যাবো কবে?
_আমার বিয়ের আগের দিন তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। সোজা আমাদের বাসায় যাবে।
_বিয়ে কী ঠিক হয়েছে?
_হ্যাঁ আর চার-পাঁচ দিন পর।
_কংগ্রেচুলেশন।
_থেংক ইউ। সামি এবার আমাকে যেতে হবে। আমি আন্টিকে ফোন করে দিয়েছি। ওনি এক্ষুনি হয়তো চলে আসবেন।
_ঠিক আছে যাও।

৩৮!!
মেঘ কেবিনের বাইরে বেরিয়ে নিচে এসে ইরার কাছে যায়। নিচে নামতেই সামির মায়ের সাথে দেখা হয়। ওখানে সব বুঝিয়ে দু’জনে বাড়ির পথে রওনা দেয়। গাড়িতে মেঘের চিন্তিত মুখটা ইরাকে ভীষণ ভাবালো। ইরা মেঘের চিন্তার কারণ বুঝে উঠতে পারলো না। গাড়িতে কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো তাই চুপ থেকে যায়। বাসায় ঢুকতেই মেঘ শকড খায়। বাসা শ্রাবণ বাবা-মায়ের সাথে কথা বলছে দেখে। মেঘ সোজা উপরে চলে যায়। ইরা দৌঁড়ে গিয়ে শ্রাবণের পাশে বসে। শ্রাবণকে কথায় ঝুরি দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে। মেঘ উপর থেকে নিচে নামছে না দেখে শ্রাবণ বাবা-মাকে বলে মেঘের রুমে যাওয়ার পারমিশন নেয়। ওনারা অনুমতি দিলে শ্রাবণ মেঘের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।

দরজার ঠোকা দিতেই মেঘ বিমর্ষ চেহারা নিয়ে দরজা খুলে। মেঘের মুখে কেমন যেন আজ চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। মেঘ চিরুনি দিয়ে চুল আছড়াতে আছড়াতে শ্রাবণকে ভেতরে ঢুকতে বলে। মেঘের মুখটা দেখে খুব শুকনো লাগছে। শ্রাবণ আসলে অন্যদিন মেঘের মুখে প্রাণখোলা হাসি থাকে আর আজ শুধু চিন্তার দাগ চেহারায়। শ্রাবণ ভেতরে না ঢুকেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। দরজাটা সামান্য ফাঁক তাই শ্রাবণ মেঘের রুমের ভেতরটা চেক করতে পারে নি। ভালোভাবে কখনও মেঘের রুমে প্রবেশ করা হয়নি। শ্রাবণ হুটহাট রুমে ঢুকলেই সমস্যা। কারণ মেঘের সারারুম শুধু ক্যানভাস দিয়ে সাজানো। ঢুকলেই শ্রাবণ হয়তো বুঝতে পেরে যাবে। শ্রাবণকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ বলল,

_ভেতরে আসবে না।
_না, যেদিন পুরোপুরি পাবে অধিকার পাবো সেদিনই এই ঘরে ঢুকবো।
_তুমি না চাইলে জোর করবো না।
_যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা কি আজ একটু কেনাকাটা করতে পারি?

মেঘ ভাবনাতে বিভোর থাকায় শ্রাবণের কথা পুরোপুরি শুনতে পায়নি। শ্রাবণ মেঘের দু’কাঁধে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল,

_রাত্রি কী ভাবছো? যাবে না আমার সাথে?
_হ হ্যাঁ যাব।
_তাহলে এসো।
_তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসছি।
_ওকে।

শ্রাবণ নিচে নেমে ইরার পাশে বসে। ইরাকে মেঘের মন খারাপের কথা বললে ইরা কিছু জানে না জবাব দিল। শ্রাবণ ইরাকে রেডি হয়ে আসতে বলে কিছু সময় বসে মেঘের বাবা-মায়ের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আধাঘন্টা পর মেঘ ইরা দু’জনেই রেডি হয়ে নিচে আসে। শ্রাবণ দু’জনকে নিয়েই বেরিয়ে পড়ে। মেঘ শ্রাবণের পাশের সিটে বসে আর ইরা পিছনে। ইরা পিছনে বসেও শ্রাবণকে জ্বালাচ্ছে। মেঘ বার বার ধমক দিয়ে ইরাকে চুপ করিয়ে রাখছে। যতই মেঘ ওদের সামনে বসে ফাজলামি করুক না কেন? ভেতরে একটা টেনশন মেঘকে এমনভাবে চেপে ধরেছে যে মেঘ চাইলেও পারছে না সেটা সরাতে।

আগে সবসময় শ্রাবণের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চটপট করতো আর আজ কেবল শ্রাবণকে হারানোর ভয়ের সাথে শ্রাবণকে ঠকানোর চিন্তা বেশি আসছে। এমনিতেও মেঘ একটা মিথ্যে বলেছে শ্রাবণকে আর এখন যদি আবির কোনোভাবে শ্রাবণকে খুঁজে পায় তাহলে তো মেঘের বড় ক্ষতি হতে বেশি সময় লাগবে না। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মেঘ কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। গাড়ি থেকে শ্রাবণ নেমে ইরাকে শপিংমলের ভেতরে যেতে বলে মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেঘ এখনও অন্যমনস্ক। শ্রাবণ যে মেঘকে হাত বাড়িয়ে সঙ্গে যেতে বলছে মেঘ সেটা কানেই তুলছে না। মেঘের ভাবনার মাঝে এখন শুধু শ্রাবণকে নিয়ে চিন্তা। মেঘের মনমরা ভাব, টেনশন ভর্তি চেহারা দেখে শ্রাবণ হাতটা মেঘের কাঁধে রাখে। মেঘ ঘাড় ফিরিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকায়৷ শ্রাবণ তখন বলল,

_কী হয়েছে তোমার? মন খারাপ থাকলে আজকে ফিরে যাই অন্যদিন শপিং করে নিবো।
_না শ্রাবণ। আমি ঠিক আছি।
_তুমি ঠিক আছো সেটা আমি জানি। কিন্তু কিছু একটা নিয়ে তুমি যে খুব বেশি চিন্তা করছো সেটাও আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি। কী হয়েছে আমাকে বলো? শেয়ার করো আমার সাথে।
_একটা কথা বলবো।
_বলো না কী বলবে।
_কখনও যদি কোনো কারণে আমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয় তখন কি তুমি আমায় ছেড়ে দিবে?
_আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি আর তুমি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন তুলছো! কী হয়েছে রাত্রি? হুটহাট এমন প্রশ্ন কেন করছো তুমি?
_কেন জানি না জানতে খুব ইচ্ছে করলো? যদি কখনও আনিকা ফিরে আসে।
_আনিকা আসবে না রাত্রি।
_যদি আসে তখন?
_একটা মানুষ যখন নিজের স্বার্থ আর সুখের খুঁজে নিজের সবচাইতে দামী সম্পদটাকে বিসর্জন দিয়ে দেয়, তখন সেই সম্পদটা একটু হলেও তাঁর রক্ষাকারীর স্পর্শ চায়। মায়া থেকে যায় তাঁর উপর সেজন্য তাকে প্রতি পদে পদে মনে পড়ে। কিন্তু যখন সেই সম্পদটা ধীরে ধীরে অন্যকারো মালিকানাধীন হয়ে যায় তখন ফেলে যাওয়া রক্ষাকারীর কোনো দায়িত্ব থাকে না তাঁর সম্পদের প্রতি। যদি কখনও সে তার দায়িত্বের টানে ফিরে আসে তাহলে বুঝবে সে দায়িত্বের অযুহাতে সেই সম্পদটা ধ্বংস করার জন্য এসেছে। ফেলে যাওয়া সম্পদের উপর কোনো দায়িত্ব, মায়া, মোহ তার থাকে না। যদি কিছু অন্তত থাকতো তাহলে এইভাবে অন্যের ভরসায় ছেড়ে যেত না আমাকে।
_আনিকাকে খুব ভালোবাসো তুমি!
_এখনও ভালোবাসি কি না জানি না, তবে ভুলার চেষ্টা করছি।
_মনের উপর জোর করো না শ্রাবণ, খুব কষ্ট হবে।
_যে আমাকে ছেড়ে যেতে দু’বার ভাবলো না তাঁর জন্য মিছেমিছি চোখের জল ফেলাটা বোকামি। প্লিজ এসব আর বলো না। দু’দিন পর আমি আনিকাকে সারাজীবনের জন্য পর করতে যাচ্ছি। এইভাবে ওকে মনে করিয়ে সেখানে তোমার জন্য অবহেলার দেয়াল তৈরী করো না রাত্রি। নয়তো দিনকেদিন এই আমি শুধু আনিকার জন্য তোমায় অবহেলা করবো।

মেঘ কিছু বলতে যাবে তখনই ইরা এসে শ্রাবণকে ডেকে বলল,

_ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো।
_আসছি, তুমি ভেতরে যাও।

শ্রাবণ ইরাকে ভেতরে যেতে বলে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় মেঘের দিকে। তারপর মেঘকে বলল,

_এসো।

মেঘ শ্রাবণের হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে নামলো। দু’জনে একসাথেই শপিংমলে প্রবেশ করলো। মেঘ শ্রাবণের মাঝে কেবল অন্যরকম একটা ভালোলাগা দেখতে পেয়েছিলো। শ্রাবণ চোখে মুখে কেবল এখন মেঘকে আপন করে পাবার চিন্তা। মরীচিকার শত আহাজারি পিছনে ফেলে নতুন অঙ্গীকার নিয়ে একসাথে বাঁচার আগ্রহ, ইচ্ছা। যে চোখে কেবল এখন মেঘই একমাত্র ভরসা। মেঘই একমাত্র আশ্রয়।

ভেতরে ঢুকে ইরা একপাশের কালেকশন গুলো পছন্দ করছে আর শ্রাবণ মেঘ অন্যপাশে। অনেক কেনাকাটা করলো তিনজনে মিলে। কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওদের সন্ধ্যে হয়ে যায়। ইরা আর মেঘকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে শ্রাবণ নিজের বাসায় চলে যায়।

৩৯!!
মেঘ ইরা শ্রাবণকে বিদায় দিয়ে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে ভেতরে আসে। বিছানায় উপর রেখেই মেঘ বেহুঁশ হয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। মেঘের এই অবস্থা দেখে ইরা হকচকিয়ে উঠে।

চলবে…

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here