খড়কুটোর_বাসা #পর্বঃ৪

0
947

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৪
# Jhorna_Islam

“কিছু মানুষের জীবন যায় অন্যের জন্য ত্যা’গ করতে করতেই” ইরহান ও তাদের মধ্যে একজন।

যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মেজাজ তার প্রচুর খারাপ।ভিতরে দুই রকম অনুভূতি হচ্ছে। একে তো ইরহানের উপর প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে লোকটা এদের কে কিছুই বলল না। এমন মানুষ আছে দুনিয়ায়? নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে যেই সংসার চলে সেই সংসারে তার খাওয়া জোটে পাতিলের ঝোল।লোকটা এতো বোকা কেন। নিজে বলেছেনা কিছু ঠিক আছে।

যুথি বলতো।তাকে কেনো কিছু বলতে দিলো না।ইরহান খাওয়ার প্লেটের দিকে তাকিয়ে ছিল যখন তখন তার মুখ টা দেখে যুথির ই কান্না পেয়ে গেছে।

আবার দেখো খু’দা পেটে নিয়ে কি সুন্দর বলল খিদে নেই। আবার নিজের প্লেটের মাংস ওর প্লেটে তুলে দিয়ে গেছে খাওয়ার জন্য।

লোকটা কি বুঝতে পারলো না যেই খাবার তার মুখে ঢুকলোনা সেই খাবার যুথির মুখে ও জোটবে না।

ইমন ইশান আর তার বউদের দিকে তাকালো যুথি কি সুন্দর একমনে খেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওদের একমাত্র কাজই হচ্ছে খাওয়া। দুনিয়ার অন্য কিছুতে ওদের মন নেই।

তাছলিমা বানু আবার দুই ছেলেকে জিজ্ঞেস করছে কিছু লাগবে কিনা। লাগলে যেনো বলে।

বাহ্ মানুষ কতো অদ্ভুত। আজ ইরহান নিজের ছেলে না বলে সে যে খাবার রেখে চলে গেছে একটাবার বললও না খেয়ে যেতে।অথচ মায়েরা নাকি তাদের পেটের সন্তান না হলেও মুখ দেখে কিছু টা হলেও আন্দাজ করতে পারে সত্যি নাকি মিথ্যা বলছে। অথচ এই মহিলা ইরহান যে সারাদিন ও ভালো করে খায় নাই সেটা জেনেও চুপ রইলো।

যুথি রা’গে দাঁত কিরমির করতে করতে সকলের দিকে তাকায়। এই রা”ক্ষস গুলোর এখনো অর্ধেক খাওয়া ও হয়নি।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীই এরা খেয়ে ফেলতে পারবে। তাছলিমা বানু ও ততক্ষণে নিজের জন্য খাবার নিয়ে বসেছে।পাতিলের সব গুলো মুরগির মাংস নিজের প্লেটে ঢেলে নিয়ে বসেছে। কোন লেভেলের খাদক হলে এতো পরিমাণ খাবার একা নিয়েই বসে খেতে। একটার থেকে একটা কম যায় না।

যুথির এদের খাওয়া দেখে সহ্য হলো না।এমনিতেই তার শরীর জ্বলতে আছে কিছু বলতে পারলোনা এদের।তার উপর এদের খাওয়া।নিজেদের জন্য সব রেখে তার আর তার স্বামীর ভাগ্যে কিনা জুটলো আলু, ঝুল আর দুই টুকরো মাংস?

ওরা দুইজন যখন না খেয়ে থাকবে ওরা কেন পেট পুরে খাবে? এটাতো যুথি হতে দিবে না কখনো হতে দিবে না।তার স্বামী মহান হতে পারে সে একদম না।

এতো রা’গ আর কষ্টের মাঝে যুথির মাথা কাজ করে না।এখন যেমন ভেবেও পাচ্ছে না কি করে ওদের খাওয়া প’ন্ড করবে। মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে লাগলো যুথি।

আশেপাশে তাকিয়ে ভাবনার মাঝেই কিছু একটা দেখে মাথায় বুদ্ধি এসে গেছে কি করবে।মুখে হাসি ফোটে উঠে। পেয়ে গেছে এদের খাওয়া বন্ধ করার উপায়। তোদের জন্মের মতো খাওয়া সাধ মিটাচ্ছি আমি দাড়া বলেই, আগে ইরহানের প্লেট থেকে মাছের লেজ টা ও নিজের প্লেট এ তুলে নেয়।তারপর কাঙখিত বস্তু টা পাটির কিনারা থেকে বাম হাত দিয়ে ধরে নেয়। তারপর কৌশলে নিজের খাওয়ার প্লেট টা পাশে রাখা একটা মোড়ার উপর রাখে।

নিজের সামনে ইরহানের প্লেট টা রাখে তারপর ভাত মেখে এমন ভাব করছে সে যেনো খাচ্ছে। ওদের যুথির দিকে মনোযোগ ও নেই ওরাতো খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।

যুথি বাম হাতে রাখা কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা এবার নিজের প্লেটে রাখে তারপর আবার ভাত নাড়াচাড়া করতে থাকে যেনো মনে হয় এটা তরকারিতে ছিলো প্লেটে ঝুল থাকায় যুথির আরো সুবিধা হয়েছে।

সবার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার করে বলে ওওওও নকল শ্বাশুড়ি আম্মা গোওওও এইডা আমি কি দেখলাম গো।

হায় হায় এইটা কি আমারতো কেমন যেনো লাগতাছে।

সকলে যুথির চিৎকার শুনে নিজেদের খাওয়া রেখে যুথির দিকে তাকায়।

তাছলিমা বানু বলে উঠে কি হয়েছে এমন চেচাচ্ছ কেন মেয়ে?

আজকের খাবার কে রান্না করছে নকল শ্বাশুড়ি আম্মা?

ইমন আর ইশানের বউ দুই জন একটু ভাব নিয়ে বলে,,আমরা রান্না করেছি।খুব ভালো হয়েছে রান্না তাই না? দেখতে হবে না কে রান্না করেছে।

এরকম রান্না জীবনে খেয়েছো কখনো?

নাহ আর জীবনে খেতেও চাই না।

চাইবা কিভাবে কু’কু’রের পেটে ঘি হজম হয় নাকি! সারাজীবন যার শাক পাতা খেয়ে অভ্যাস সে কি বুঝবে মাংসের স্বাদ।

তাছলিমা বানু কটমট করে তার বৌমাদের দিকে তাকায়। তাছলিমা বানুর তাকানো দেখে দুইজন ই চুপ হয়ে যায়। এবার তাছলিমা বানু যুথিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

কি হয়েছে বলোতো? খাওয়ার টাইমে কেউ এমন চিৎকার চেচামেচি করে? শান্তিতে খেতে বসেছিলাম তো নাকি?

আর শান্তি নকল শ্বাশুড়ি আম্মা! এখন আপনারে একটা গুপ্তধন বের করে দেখাবো।

গুপ্তধন মানে?

যুথি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তার প্লেট থেকে একটা তেলাপোকা বের করে নিয়ে আসে। তারপর সেটা সকলের সামনে ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে দেখেন এইটা কি।মুরগির মাংসের ঝোল থেকে পেয়েছি।

এইটাকি আপনারা মাংসের স্বাদ বাড়ানোর জন্য দিয়েছেন নাকি গো? ছিঃ ছিঃ এর থেকে তো আমাদের ছোটলোকদের ঘাস পাতা অনেক ভালো দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা ইমন ও ইশানের বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

ইমন আর ইশানের বউ তেলাপোকা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে । কিন্তু যুথি কোনো ভ’য় না পেয়ে কি সুন্দর তাদের সামনে ঘুরাচেছ।

তাদের ভ’য় পেতে দেখে যুথি ইচ্ছে করে আরো এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের সামনে তেলাপোকা টা। তারা আরো চিৎকার করে। যুথি আর না ঘে’টে ফেলে দেয় তেলাপোকা।

আমার না কেমন ব’মি ব’মি পাচ্ছে বলেই ওয়াক ওয়াক করে ব’মির ভান করে যুথি। বসা থেকে উঠে গিয়ে সকলের প্লেটের সামনে গিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে ওয়াক ওয়াক করে বলে আল্লাহ আপনারা এগুলো কি করে খেলেন।

একেইতো মুরগির মাংসে তেলাপোকা পেয়েছে এটা শুনেই সকলের গা গোলাচ্ছে তার উপর যুথি আবার তাদের সামনে গিয়ে ওয়াক ওয়াক করায় তাদের ও গা গুলিয়ে ব’মি এসে পরবে এমন অবস্থা। ইমনের বউ লিমা তো সত্যি ব’মি করে দিবে। তাই দৌড়ে তারাতাড়ি বসার ঘরের ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে পরে লিমা।

ইমন আর ইশান হাত ধুয়ে উঠে যায়। ঠিকঠাক ভাবে খেতে পারলোনা। তাছলিমা বানুর তো একেবারেই খাওয়া হলো না।প্লেটে হাত দিতে নিয়েছিলো মাত্র খাওয়ার জন্য। ভাগ্যিস
খায়নি। ভেবেই হাফ ছাড়ে তাছলিমা বানু। তারপর দুইজন কে এগুলো পরিষ্কার করার জন্য বলে।

ইচ্ছে মতো বকতে থাকে দুই বউকে রান্নার সময় মন কই থাকে।দেখেশুনে রান্না করতে পারেনা। বউদের এমন কান্ড জ্ঞানহীন হলে চলে না।নানান ধরনের কথা শুনাতে থাকেন।

লিমা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে শোনে তার শ্বাশুড়ি তাদের বকে উদ্ধার করছে।যুথির দিকে চোখ যায়। যুথি মিটমিট করে হাসছে।রা’গ হলেও চুপ থাকে।তারপর বলে কিছু সময় পর এসে সব করবে এখন এগুলো পরিষ্কার করতে গেলে দেখে আরো ব’মি পাবে।

তারপর একে একে সবাই খাওয়ার জায়গা থেকে চলে যায়। যুথি ভিতরে ভিতরে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সবাই চলে যাওয়ার পর যুথি ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসে।

তারপর ঐসময়ের মোড়ার উপর রেখে দেওয়া প্লেট টা হাতে নিয়ে ইরহানের রুমের দিকে যেতে থাকে।

———————————————–👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র

তখন যুথি তেলাপোকা টা পেয়েছিলো পাটির পাশ থেকে। মনে হয় কারো পারা লেগে মরে গেছে। কেউ দেখেও নি।তেলাপোকা টা দেখেই যুথির মাথায় বুদ্ধি আসে এদের খাওয়া নষ্ট করার।যুথি আবার অন্যান্য মেয়েদের মতো এসব তেলাপোকা, টিকটিকিতে ভ’য় পায় না।তার সাহস বরাবরই একটু বেশি।

———————————————

খাবার নিয়ে ইরহানের রুমে এসে দেখে ইরহান বিছানায় আধশোয়া হয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।

যুথি রুমের দরজাটা লাগিয়ে ইরহানের পাশে প্লেট টা নিয়ে এসে বসে।খাটের পাশের টেবিল টা তে আগে থেকেই পানি রাখা আছে।

যুথি ভাত মাখাতে মাখাতে বলে,,এই বোকা পুরুষ উঠে বসে হা করুন তো।

ইরহান চোখ থেকে হাত সরিয়ে যুথির দিকে তাকায় তারপর বলে, আমি খাবোনা যুথি তুমি আবার এগুলো নিয়ে এসেছো কেনো? তুমি গিয়ে খেয়ে নেও।আমার একদম খিদে নেই।

আপনি না খেলে আমিও একদম খাবো না।আমার কিন্তু প্রচুর খিদে পেয়েছে। এখন আপনি যদি চান আমি না খাই তাহলে আপনিও খেয়েন না।

ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে হা করে। যুথি হাসি মুখে ইরহানের মুখে খাবার তুলে দেয়।

কিসের চিৎকার শুনেছিলাম যুথি তখন?

আমার দাদি একটা প্রবাদ বলতো জানেন ” এ’ছ’ড়ার সাথে তে’ছ’ড়া মিলে বেগুনের সাথে শুটকি মিলে।”

আপনার মা যেমন তার বউমা হিসেবে আমিও ঠিক তেমন।দুইজন ই নিজের স্বার্থটা বুঝে বুঝলেন?

শ’য়’তা’নের সাথে শ’য়’তানি না করলে হয় না। যারা ভালোবাসার মর্ম বুঝে না তার প্রতি কিসের ভালোবাসা?

আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আপনার এই ভালোমানুষির না কোনো দাম নেই। আপনার ভালোবাসার সুযোগ নিবে।ভালোবাসা ফিরতি দিবে না। আজ কাল নিজের বাপ মা ই আপন না। এরাতো আপনার পর। কথায় আছে নিচ দিক দিয়েই সব সময় পানি যায়।আপনি ওদের যতো মাথায় তুলবেন ওরা ততো আপনার মাথায় চড়ে বসবে। দুনিয়ায় ভালো মানুষ রা ভালো থাকে না খারাপরাই ভালো থাকে।

পুরুষ মানুষ কে এমন মানায় না।আপনি কেন ওদের জন্য নিজের হ’ক ছাড়বেন? এই যে না খেয়ে এসে পরলেন আপনার কথা কি ভেবেছে? একবার মুখের কথাটা বলেছে? আপনি পারতেন এমন করতে ওদের মধ্যে থেকে কেউ না খেলে? নিজের মধ্যে রাগ আনুন প্রতিবাদ করতে শিখুন।যে যেটার যোগ্য না তাকে সেটা দিবেন না।

কিছু মানুষের স্বভাব খুবই খারাপ এদের বসতে দিলে খেতে চায়।আপনি যতো দিবেন আরো চাইবে।আপনার কথা আর ভাববে না।

আরে বোকা পুরুষ আপনি কার থেকে কি আশা করেন? যেখানে নিজের আপন ই এই দুনিয়ায় আপন না আর এরাতো সৎ ই। আপনি এদের ক’লিজা কেটে ভুনা করে দিলেও বলবে লবণে কম পরেছে।

#চলবে,,,,,,

বিঃদ্রঃ গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তব্য আমাকে উৎসাহ যোগায়।
নতুন পর্ব পেতে হলে পেজে ফলো করে রাখেন👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র

গ্রুপঃ 👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র (গল্প,গল্পের লিংক,রিভিউ, আলোচনা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here