খুন,পর্বঃ-০২

0
460

খুন,পর্বঃ-০২
(ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ)
যাবেদ খাঁন আবু বকর

মিস অলিনের কথা শুনে বেশ অবাক কণ্ঠে বললেন তাবিব;
-“কি বলেন! এই শহরে আবার খুন! বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?”
এক রাশ বিরক্তি ভাব চেহারায় ফুটিয়ে বললেন অলিন;
-“কেবল খুন নয় ভয়ংকর খুন!”
-“এটা কিভাবে সম্ভব।”

দু’জনের কথা শুনে বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“এই নিষ্ঠুরতম মানুষদের ভুবনে সব করাই সম্ভব। মার্ডার করা আজকাল ট্রেন্ড বলা যায়। যে যাকে খুন করতে পারে আর যে যতো বেশি খুন করতে পারে সেই টপ লিডার থাকে। আজকাল কেউ কাউকে খুন করে নিজের ক্ষমতা দেখানোর উদ্দেশ্য করে। আবার কেউ টাকার জন্য করে খুন, আবার কেউ কেউ তীব্র প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে খুন করে। আবার কেউ নিজের নেশা চুকানোর জন্য খুন করে।”
মাথা চুলকিয়ে একটা মৃদু হাসি ঠোঁটের কোণে ভাসি বলে উঠলেন তাবিব;
-“ভাই কবে থেকে ইতিহাসবিদ হয়ে গেলে তুমি?”
তাবিবের কথার তোয়াক্কা না করে পুনরায় বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“সে-সকল কথার দিকে আমরা এখন না আগাই। মিস অলিন! আমরা কি খুন হওয়া স্থান’টা একটু ঘেটে দেখতে পারি? তবে ধারণা করা যেত এই আরকি।”
-“অফকোর্স! কেনো নয়! চলো।”

চলো বলেই নিজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন মিস অলিন। দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছেন সামনের দিকে। তার দেখাদেখি নিজেরাও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তাবিব ও যাবেদ। মিস অলিনের পিছু হাঁটতে লাগলেন তারা দু’জন। তিনজন রুম ত্যাগ করে উপস্থিত হলেন পার্কিং প্লেসে। পার্কিং করা গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসলেন মিস অলিন। গাড়ির পেছনের আসনে অবস্থান নিলেন তাবিব। গাড়ি পরিচালকের পাশের আসন গ্রহণ করলেন যাবেদ। গাড়ি চালু করে ছুট দিলেন খুন হওয়া স্থানের উদ্দেশ্য করে। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই পৌঁছে গেলেন তাদের গন্তব্য স্থানে। বাসার সামনে গাড়ি পার্কিং করতেই গাড়ি হতে নেমে গেলেন তিনজন। বাড়ির সামনে একটি এম্বুল্যান্স আছে আর তার পাশে একটি পুলিশের জীপ রয়েছে। দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে বাসার ভেতরের দিকে ছুটছেন অলিন। তাকে অনুসরণ করে পা চালিয়ে যাচ্ছেন যাবেদ ও তাবিব। মার্ডার স্পটে কিছু সংখ্যক পুলিশ দেখা যাচ্ছে।

যদি-ও বাহির থেকে দেখে বুঝা যায়নি বাসার ভেতরে পুলিশ রয়েছে,তবে ভেতরে এসে তাদের উপস্থিতি বুঝতে পারলেন তাবিব ও যাবেদ। মেঝেতে উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে একটি ক্ষতবিক্ষত দেহ। রক্তে মেঝে লাল হয়ে আছে। দেহটির চারদিক ঘেরাও করে ফিতা দিয়ে এরিয়া তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেন কেউ প্রবেশ না করেন যার জন্য উক্ত ব্যবস্থাটি করা হয়েছে। দেহটির চারপাশে মেঝেতে চক দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। দেহ হতে নিম্নাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ একেবারেই আলাদা হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অসংখ্য ধারালো ব্লেডের পোচ এবং ছুরির ফলার চিহ্ন রয়েছে দেহেতে। মেঝেতে পড়ে থাকা মিস্টার সাদিকের দেহের উপর বিশাল এক নির্যাতনের তাণ্ডব চালিয়েছে খুনি। তা মেঝেতে পড়ে থাকা তার দেহটির দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাচ্ছে। মিস অলিন রুমের মধ্যে উপস্থিত হতেই সেখানে উপস্থিত থাকা সকল পুলিশগুলো হাত উঁচু করে স্যালুট জানালেন। সেদিকে ধ্যান দিলেন না মিস অলিন। তাবিব এবং যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন তিনি,
-‘যায়গাটি ভালো করে দেখে নাও। আর সন্দেহজনক প্রতিটি স্থান ক্যামেরা দিয়ে ক্যাপচার করে নাও।”
মিস অলিনের কথার প্রতিত্তোরে বললেন তাবিব,
-“জ্বী ম্যাম! সকল কিছু ভালো করে দেখতেছি।”

মিস অলিন হেঁটে হেঁটে বাড়ির চারদিক ঘুরে-ঘুরে দেখতে লাগলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুমের প্রত্যেকটি কর্ণার ও প্রতিটি স্থান সূক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন যাবেদ। তাবিব কেবল যাবেদের চিহ্নিত করে দেওয়া স্থানগুলোর ছবি তুলে নিচ্ছেন। পুরো – বাড়ি ঘুরে এসে যাবেদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন মিস অলিন;
-“কিছু পেলে! খুনিটা কে তা নির্বাচিত করার মতো?”
মিস অলিনের কথা শুনে তার দিকে না তাকিয়ে বেশ কঠিন কণ্ঠে বলে উঠলেন যাবেদ,
-“হ্যাঁ! অনেক কিছুই খুঁজে পেলাম। এখন কেবল থ্রিডি-আইস দ্বারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”
-“এখানে তোমার আর কোনো কাজ আছে কি?”
-“নাহ নেই! যাওয়া যেতে পারে। তবে একটু বিষয় জানার আছে উক্ত কাজটি সেরে নেই।”

আর কিছু বললেন না মিস অলিন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বেশখানিক সময় অতিবাহিত হবার পর তাবিবে’র উদ্দেশ্য করে চওড়া কণ্ঠে বলে উঠলেন অলিন;
-” চলো তাবিব! যাওয়া যাক। আমরা গাড়িতে অপেক্ষা করছি যাবেদ। তুমি তোমার কাজটা সেরে তাড়াতাড়ি চলে এসো।”

আর একটি কথা না বলে হনহন করে বাহিরে চলে গেলেন মিস অলিন। তার পিছুপিছু হেঁটে চলেছেন তাবিব মাহমুদ। যাবেদ উক্ত স্থান ছেড়ে এক পুলিশ অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির মানুষজনদের খোঁজ করতে লাগলেন। কাউকে না পেয়ে বেশ জোর আওয়াজে বলে উঠলেন যাবেদ;
-“বাসার লোকজন কোথায়? একটা মার্ডার হয়ে গেছে অথচ তারপরেও কারো দেখা মিলছে না কেন?”

কিছু সময় বাদে ৩৫-৪০ বছর বয়সী এক মহিলা ক্রন্দন ভাব নিয়ে উপস্থিত হলেন তার সামনে। বিরক্তি মাখা কণ্ঠে আগত মহিলার উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন যাবেদ;
-“কে আপনি! আর যিনি মারা গেছে তার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”
-“আমি তানিয়া। আর সাদিক আমার স্বামী।”
-“কাল কোথায় ছিলেন! এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল আর আপনি তার কিছুই জানেন না।”
-“কাল এ বাসায় ছিলাম না। আপনি জানলেন কিভাবে আমি ঘটনার তেমন কিছুই জানি না?”
-“আপনার উন্মাদনা যুক্ত চেহারায় ফুটে উঠেছে সব। তা আপনি এ বাসায় ছিলেন না তো কোথায় ছিলেন?”
-“আমাদের আরেকটি বাসা আছে সেখানে ছিলাম গতকাল রাতে। আজ সকালে যখন ফোন দিচ্ছিলাম তাকে কিন্তু ফোন তুলছিলেন না। যার ফলে বাসায় আসতে বাধ্য হয়েছি। আর এসেই দেখতে পেলাম এইরকম অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে তার লাশ।”

কথাটি বলেই মহিলাটি কান্না করতে লাগলেন। তবে মহিলাটির ক্রন্দন ভাব চেহারায় ফুটে আসছে না তারপরও জোর করে কান্না করছে তা চেহারার ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিছুটা বিচলিত হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করলেন যাবেদ;
-“আচ্ছা আপনাদের কি কোনো ছেলে-মেয়ে নেই? আপনাকে বাদে আর কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না। আর আপনাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই?”
-” আসলে আমাদের এখনো ছেলে-মেয়ে হয়নি। আর আত্মীয়-স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই।”
-” আপনি কি বলতে পাড়েন! মিস্টার সাদিকের সাথে কি কারো কোনো রকম ঝামেলা ছিলো? যেমন টাকা-পয়সা,ধন-সম্পদ অথবা এফেয়ার ইত্যাদি কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা?”
-“জানিনা! কোন অমানুষ এসে আমার এতো বড় সর্বনাশ করে দিয়ে গেল।”

এই বলেই তানিয়া নামের মহিলাটি হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল। বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তানিয়ার কান্নার দিকে লক্ষ্য করলেন যাবেদ। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। মেয়েটি লোকদেখানো কান্না করছে কেবল কিন্তু কিছু বলতেও পারছেন না তিনি। কারণ তার কাছে যে প্রমাণপত্র নেই। মেয়েটির লোকদেখানো কান্না থামানোর উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন যাবেদ;
-“আচ্ছা আপনি একদম কান্নাকাটি করবেন না। যা হবার ছিলো তাই হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রচেষ্টা করব খুনি কে তা ধরার জন্য। আর তাকে সর্বচ্চ শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাব। ভালো থাকবেন আর আমাদের কোনো প্রয়োজন হলে আবার আসব।”

এই বলে যাবেদ সোজা হেঁটে চললেন বাড়ির বাহিরের দিকে। পেছন দিকে তাকাবার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা করলেন না তিনি। সন্দেহের তালিকায় প্রথম নাম রইল মিসেস তানিয়ার। মিসেস তানিয়ার ব্যবহারগুলো বেশ সন্দেহ জনক। নিজ স্বামীর মৃত্যুতে কেউ অভিনয় করতে পারে না, যদি না সে এই মৃত্যুর সাথে জড়িত না হয়। এ সকল কথা মাথায় ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বেরিয়ে পার্কিং প্লেসে চলে এসেছেন তিনি।

পার্কিং প্লেসে আসতেই লক্ষ্য করলেন যাবেদ। গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে কারো আসার অধির আক্ষেপ নিয়ে বসে আছে মিস অলিন। বেশ চমকিত হলেন যাবেদ,অলিনের পাশে তাবিবের বিন্দু পরিমাণ উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।
তাই গভীর চিন্তিত হয়ে মিস অলিনের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন তিনি;
-“তাবিব কোথায়? ও তো আপনার সাথেই ছিলো তবে এখন কোথায়?”
-“বি কুল। ডোন্ট বি প্যানিক। একটি কাজের জন্য তাবিবকে অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। চলো।”

আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলেন না যাবেদ। যার ফলে গাড়িতে উঠে পুরনো আসন গ্রহণ করলেন তিনি। পরিচালক আসনে বসে গাড়ি চালু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন অলিন।
মোড়ের ডান দিকে অফিসের রাস্তা হলেও গাড়ি উক্ত দিকে নিলেন না অলিন। তার মর্জি মতো পাশের রাস্তা দিয়ে পথ চলতে লাগলেন।
তা দেখে বেশ রাগী কণ্ঠে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“হেই! কোথায় যাচ্ছেন আপনি। অফিসে যাবার রাস্তা তো ঐদিকে ছিলো কিন্তু পাশের মোড় নিলেন কেন?”

যাবেদের রাগ নিজের কাছে কিছু মনে না করে উল্টো দিগুণ রেগে বলে উঠলেন অলিন;
-“চুপ! ভিতুর ডিম। চুপ করে গাড়িতে বসে থাক। একটা সাউন্ড যেনো আর না আসে আমার কানে।”

বড্ড ভয় পেলেন যাবেদ। কখনো এতটা রাগতে দেখেননি অলিনকে। যতবার দেখেছে ততবারই নম্র-ভদ্র ও শালীনতা বজায় রাখা একটি মেয়ে হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু ইদানীং মিস অলিনের আচরণ গুলো বেশ ভাবায় যাবেদকে। দ্বিতীয় কোনো শব্দ না করে চুপ করে গাড়িতে বসে রইলেন তিনি। তবে তার মস্তিষ্ককে অলস থাকতে দেননি। মস্তিষ্কের কার্য সচল রাখতে একটু আগে দেখা দৃশ্যগুলো স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর গাড়ি ব্রেক করার ফলে স্মৃতিচারণের ঘোর ভেঙে গেল যাবেদের। হকচকিয়ে উঠলেন তিনি। গাড়ির জানলা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখতে পেলেন তারা উপস্থিত হয়েছেন একটি ফাইভ স্টার রেস্তরাঁর কাছে। পার্কিং প্লেসে গাড়ি পার্ক করে গাড়ি হতে নেমে গেলেন মিস অলিন। যাবেদের উদ্দেশ্য করে বেশ জোরেশোরে তাগিদ দিতে লাগলেন গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। উপায় না পেয়ে গাড়ির ভেতর হতে বেরিয়ে এলেন তিনি।

হুট করে একটি হাত যাবেদের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিলেন মিস অলিন। রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন যাবেদ কিন্তু তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন মিস অলিন। তা দেখে ভীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলেন যাবেদ। কিছু না বলে যাবেদ পথ চলতে লাগলেন অলিনের সঙ্গে। হাতের মাঝে হাত আবদ্ধ করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করলেন দু’জন। অতঃপর একটি নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশযুক্ত একটি স্থান নির্বাচন করে উক্ত স্থানে উপস্থিত হলেন দু’জন। দু’দিকে দু’টি চেয়ার রয়েছে মধ্য স্থানে একটি সুন্দর ডিজাইনের টেবিল। হীম বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবশে। নেই কোনো কোলাহল কেবল মৃদু বাতাসের ঝাপটা এসে লাগছে দেহে। বেশ কিছুক্ষণ যাবত কোনো কথা বলছেন না দু’জন। তা দেখে মৃন্ময়ী মাখা কণ্ঠে বলতে লাগলেন অলিন,
-” কি খাবে?”
কোনো প্রকার উত্তর দেননি যাবেদ। তা দেখে রেগে গিয়ে বললেন অলিন;
-“অই সমস্যা কি তোমার! কথা বলছ না কেন?”
হকচকিয়ে উঠলেন যাবেদ। এতোক্ষণ একটি ঘোরের মাঝে আঁটকে গিয়েছিলেন তিনি। বেশ ক্ষীণ কণ্ঠে বলতে লাগলেন;
-“কি হয়েছে! এভাবে চিৎকার চেচামেচি করছেন কেন?”
-“কি খাবা বল!”
-“আপনার যেটা ইচ্ছে হয় তাই অর্ডার করুন।”

ওয়েটারকে ডেকে চারটি চিকেন ফ্রাই তার সাথে দুই প্লেট ফ্রাইড রাইস দিতে বললেন অলিন। আর তার সাথে রয়েছে কোমল পানিয়।
ওয়েটার সেখান থেকে যেতেই যাবেদের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু মলিনতা মাখা কণ্ঠে বলতে লাগলেন অলিন;
-“রাগ করেছ?”
-“নাহ! রাগ করিনি।”
-“তাহলে চুপ করে আছো কেন?”
-“আজকাল আপনাকে বড্ড বেশি ভয় লাগে।”
-“আমাকে ভয় লাগার কারন?”
-” হুটহাট কখন কি করে ফেলেন বলা যায় না কিছু। তাই ভয় লাগে।”
-“যাক সারাজীবন এই ভাবে ভয় পেলেই চলবে।”
-“কি বললেন বুঝলাম না।”
-“নাহ কিছু না। এই নাও খাবার এসে গেছে। আগে খেয়ে নেই।”

আর কিছু বললেন না অলিন। চুপচাপ খেতে লাগলেন দু’জন। হুট করেই উদ্ভট একটি প্রশ্ন করলেন অলিন;
-“আচ্ছা আমাকে তোমার কাছে কেমন লাগে?”

কথাটি শুনেই হিচকি উঠে যায় যাবেদের। পানি বাড়িয়ে দিলেন অলিন। পানি পান করতেই হিচকি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তার। পুনরায় যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন অলিন;
-“বললে না তো আমাকে দেখতে কেমন লাগে।”
-“বেশ ভালো।”

যাবেদের মুখে বেশ ভালো কথাটি শুনে লজ্জায় দুই গাল গোলাপি হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে একবার তাকিয়ে কিছু বললেন না যাবেদ। নীরবে খেতে লাগলেন দু’জন। হুট করেই খাওয়া অবস্থায় মায়া মাখা কণ্ঠে বলে উঠলেন যাবেদ,
-“লজ্জিত অবস্থায় আপনাকে আরো ভালো লাগে।”

এবার অলিনের সম্পূর্ণ চেহারা গোলাপি রঙ ধারণ করল। এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে আছেন যাবেদ। আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে দেখার প্রয়োজন বোধ করছেন না। হঠাৎ করেই অলিন মুখ তুলে যাবেদের দিকে নজর ফেরাতেই চোখ নামিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলেন যাবেদ। চুপচাপ খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে কোক নিয়ে বসলেন তিনি। আনমনে কিছু একটা ভেবে চলেছেন যাবেদ। হুট করেই উদ্ভট প্রশ্ন করে উঠলেন অলিন;
-“আচ্ছা! তোমাকে যদি কেউ বিয়ে করতে চায়। তবে কি করবে তুমি?”
বিরক্ত মনোভাব নিয়ে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“এ-ই পাগলের আবার বিয়ে। তা বড্ড দূরে। চেষ্টায় আছি চিরকুমার হয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার।”
-“তা হচ্ছে না। তা আমি হতে দিচ্ছি না।”
-“কেন!”
-“সে সকল প্রশ্ন বুঝার এখনো বয়স হয়নি তোমার।”
-“তো চলুন। যাওয়া যাক।”
-“তা যাবে। কিন্তু মাত্র আসলাম। আরেকটু বসি।”
-“কি আর করার। পণ যখন করেছেন বসতে তো হবেই।”

নীরবে কেটে গেল কিছু সময়। কারো মুখেই কথার বুলি নেই। হঠাৎ করে প্রশ্ন করলেন অলিন;
-“আমাকে আর কতকাল আপনি – আপনি বলে যাবে?”
-“বেঁচে আছি যতদিন,বলে যাবো ততদিন।”
চেহারায় বেশ রাগী ভাব ফুটিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন অলিন,
-“আমি এতকিছু শুনতে নারাজ। আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলবে। এটাই আমার শেষ বলা।”
অলিনের রাগ দেখে কিছুটা ভয় পেলেন যাবেদ। ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিলেন তিনি;
-“আচ্ছা!”
চেহারায় একরাশ হাসির রেখা টেনে বলতে লাগলেন অলিন;
-“এইতো ভদ্র ছেলে। চলো এবার অফিসে যাওয়া যাক।”
মনে মনে বিরক্ত হলেও চেহারায় তা প্রকাশিত না করে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“হ্যাঁ! বড্ড দেরি হয়ে গেল।”

বিল পরিশোধ করার সময় ঝামেলা বাঁধিয়ে ছিলেন যাবেদ। বিল তিনি দেবেন কিন্তু অলিন তার কথার উপর অটল। শেষে অলিনের কাছে হার স্বীকার করতে হয় যাবেদের। বিল পরিশোধ করে দ্রুত পায়ে রেস্টুরেন্টে ত্যাগ করলেন দু’জন। গাড়ির পরিচালক আসনে বসলেন যাবেদ তার পাশের আসনে অলিন। অলিন বার-বার বলছিলেন গাড়ি তিনি চালাবেন কিন্তু যাবেদের তার কথার উপর অটল। অতঃপর জীত হয় যাবেদের। পরিচালক আসনে বসে যাবেদ অফিসের উদ্দেশ্য করে গাড়ি নিয়ে ছুটতে লাগলেন। রাস্তায় বেশ যানযটের মধ্য দিয়েও ঘন্টায় ৯৩ কিলোমিটার বেগে গাড়ি নিয়ে ছুটলেন। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতেই অফিসের সামনে গাড়ি এসে হাজির। গাড়িতে দু’জনের মধ্যে কোনো কথা-ই হয়নি। অফিসের পার্কিং প্লেসে গাড়ি পার্ক করে দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় যাবেদ। এবং দ্রুত হেঁটে অফিসের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। ধীর-স্থীর ভাবে গাড়ি থেকে নেমে অফিসের দিকে আনমনে হাঁটতে থাকে অলিন। যাবেদ দ্রুত অফিসে ঢুকে তাবিবের খোঁজ চালান। তাবিব তার ডেস্কে বসে আছেন দেখে ভেতরে প্রবেশ করলেন যাবেদ।
যাবেদ কে দেখে কিছুটা অবাক হলেন তাবিব। উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি,
-“কিরে! তুই কখন উপস্থিত হলি এখানে?”
চেহারায় কিছুটা বিরক্ততার ছাপ ফুটিয়ে ধীর কণ্ঠে জবাব দেয় যাবেদ;
-“এইতো। মাত্র আসলাম।”
-“এভাবে কেন! আর ম্যাম কোথায়?”
-“কিভাবে আবার এলাম। তোর ম্যাম আসতেছে। পার্কিং প্লেসে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে আসছি। ওহ্! যার জন্য দ্রুত আসা সেটাই তো বলা হলো না।”
-“হ্যাঁ বল! কি দরকার এ-তো।”
চেহারায় গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“তুই যেই ফটো গুলো ক্যাপচার করেছিস সেগুলোর প্রিন্ট আউট করে ছবি গুলো নিয়ে দ্রুত সিক্রেট রুমে আয়। তাড়াতাড়ি আসিস আমি সেখানেই আছি। আর তোর ম্যাম কে-ও সাথে করে নিয়ে আসিস।”
-“আরেহ! আচ্ছা যা আসছি।”
,
,
,
——– ” ক্রাইম থ্রিলার ” ——–
——– ” খুন ” ——–
—- ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —-

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here