খুন,পর্বঃ- ০৫

0
287

খুন,পর্বঃ- ০৫
ক্রাইম থ্রিলার
যাবেদ খাঁন আবু বকর

অতঃপর ডাক্তারগুলো আর বাঁধা প্রদান করেননি। যাবেদ তাদের দিকে তাকিয়ে বিনয়ী স্বরে বলতে লাগলেন;
-“আমি বুঝতে পারছি আপনাদের সমস্যাটি। আমি কিছু মনে করিনি।
আপনারা কেবল লাশটির উপরে দেওয়া কাপড়টি বুক পর্যন্ত উন্মুক্ত করুন। বুকের উপর কিছু একটা লেখা আছে যেটা আমাদের তদন্তের একটি অংশ হতে পাড়ে।”

একজন ফরেনসিক বিভাগ ডাক্তার দেখা এসে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢেকে রাখা তামান্না খাঁনের লাশটির বুক পর্যন্ত কাপড় টা নামিয়ে উন্মুক্ত করলেন। তবে যথা সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। কেবল লেখা স্থানটুকু উন্মুক্ত করলেন। এছাড়া দেহের বাকি অংশগুলো কাপড় দিয়ে সুন্দর ভাবে ঢেকে রেখেছেন। লেখা স্থানটুকু উন্মুক্ত করতেই একটি অক্ষর বেরিয়ে এলো। ঠিক অক্ষর কি না তা বুঝা বড় দায়। হাজারো পোঁচের উপরে একটি অক্ষর লেখা আছে। দ্রুত পকেট থেকে ফোনটি বের করে উক্ত আঁকিবুঁকি অক্ষরটির কিছু এঙ্গেলের ছবি তুলে নিলেন। অতঃপর ফোনটি অফ করে পুনরায় পকেটে পুরে নিলেন। দ্রুত উক্ত রুমটি ত্যাগ করলেন যাবেদ ও তাবিব। রুম থেকে তারা দু’জন বেরিয়ে যেতেই তাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন অলিন। বেশ গম্ভীর কণ্ঠে তাবিবের উদ্দেশ্য করে বললেন;
-“তাবিব! তুমি রুমের ভেতরে থাকা সন্দেহজনক স্থানগুলো ক্যামেরা বন্ধি করে অফিসে চলে যেও। আর ছবিগুলো প্রিন্ট আউট করে রেখে দিও। আমি আর যাবেদ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি। ফিরতে একিটু দেরি হতে পারে।”

কেবল এতটুকু বলে তাবিবকে পুনরায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে যাবেদের হাতের মাঝে নিজের হাত জাপ্টে ধরে দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। যাবেদ নিজেও ফাঁদে বন্ধি হওয়ার ফলে আর কিছু বললেন না। চুপচাপ অলিনের সাথে হাঁটতে লাগলেন তিনি। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি খুন হওয়া বাড়িটি ত্যাগ করে গাড়ির কাছে চলে এলেন দু’জন। পুরোনো দিনের মতো আজকেও ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন অলিন। গম্ভীর স্বরে তার উদ্দেশ্য করে বললেন যাবেদ;
-“তুমি পাশের সিটে বসো। আমি ড্রাইভ করব।”
-“তা বললে তো আর হচ্ছে না। গতদিন তুমি যা করেছিলে এখনো আমার মনে ভয় লেগে আছে। এখন কোনো কথা নয়।”
আকুতি স্বরে অলিনের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“দাও না প্লিজ। আজকে আর গতদিনের মতো অতটা গতিতে গাড়ি চালাব না। প্লিজ দাও।”
সেদিক ধ্যান না দিয়ে নিজের কথার উপর অটল থেকে বললেন অলিন;
-“আমি একবার না বলেছি তার মানে হলো না। দ্রুত গাড়িতে উঠে আসো। নয়তো খবর আছে।”

করুণ দৃষ্টিতে অলিনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন যাবেদ। কিন্তু সেদিকে বিন্দু পরিমান পাত্তা দিলেন না তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে পাশের সিটেই বসে পড়লেন যাবেদ। মধ্যমমানের গতিতে গাড়ি ছুটে চলেছে অজানা কোনো দিকে। কিছু সময় বাদেই গাড়ি থামালেন অলিন একটি নির্জন স্থানে। চারদিকে সবুজ শ্যামল শস্যে ভরা। তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি ছোট্ট নদী। নদীটি বড্ড শান্তপ্রকৃতির। নেই তেমন স্রোত,জোয়ার-ভাটার বিচরণ এখানে হয়নি। নদীতে কিছু সময় পরপর মাছেদের চাক নিশ্বাস নিতে উপরে উঠে আসছে। তা থেকে কম্পিত হচ্ছে পানি। নদীর পানির রঙটাও বড্ড সুন্দর। চকচকে সচ্ছ পানি বলা যায়, নেই কোথাও কোনো ঘোলাটে পানি। নদীটির গভীরতা তেমন নয় বললেই চলে। উপর থেকে ভালো করে লক্ষ্য করলে সচ্ছ পানির নিচ থেকে নদীর তলদেশ দেখা যায়। নদীর তীরে সুন্দর একটি বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। রোদের তাপ ততটা প্রখর নয়। সূর্যের মিটমিটে আলো যা এরূপ একটি পরিবেশকে মুখরিত করে তুলছে। নদীর তীরে অবস্থিত বেঞ্চে বসলেন অলিন। হাতের ইশারায় পাশে বসতে বললেন যাবেদকে। যাবেদ তেমন কিছু না ভেবেই পাশে বসে গেলেন তার। দু’জনে মিলে প্রকৃতির ডাক ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলেন। যাবেদের হাতের মাঝে নিজের হাত দিয়ে আবদ্ধ করলেন অলিন।
নদীর পানির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভেবে চলেছেন যাবেদ। তা দেখে বেশ কিছুটা রাগী স্বরে বলে উঠলেন অলিন;
-এতো কি ভাবছ তুমি? এমন একটা রোমান্টিক পরিবেশে বসেও কি এমন ভেবে চলেছ?”
-“তেমন কিছু নয়। তবে কিছুক্ষণ আগে দেখে আসা কেসটা নিয়ে একটু মাথায় ঘামাচ্ছিলাম। এ আরকি।”
-“এরকম একটা পরিবেশে একটি মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে এই সময়ে কি অনুভূতি আসা প্রয়োজন তা-ও তোমার জানা নেই। কেবল কেস নিয়ে ভেবনা। এ-তোটাই যখন ভালো লাগে তবে লিগ্যাল ভাবে যোগদান করো গোয়েন্দা পেশায়।”

একটি বড় নিশ্বাস নিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন যাবেদ;
-“এরকম পরিবেশে কি অনুভূতি হয় তা আমার অজানা নয়। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি না তা নয়। আমিও বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়। তোমার রাগী ভাবটা আমার মনে গোপন কোঠরিতে আবদ্ধ করে রেখেছি।
আসলে কেস নিয়ে ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে। আমারও ইচ্ছা জাগে ক্রিমিনালদের মতো ভাবতে। দেখতে ইচ্ছা হয় তারা কিভাবে ভেবে পরিকল্পনা সাজায়।
আমি চাইলে বহু আগেই লিগ্যাল ভাবে গোয়েন্দা সংস্থায় যোগদান করতে পারতাম। তবে আমার ভালো লাগে না কারো হুকুম মেনে কাজ করার। পুলিশ,গোয়েন্দা,অথবা র‍্যাব ও আর্মি ইত্যাদি যাদেরকেই বলো না কেন। তারা কেবল হুকুমের গোলাম। এরা নিজ ইচ্ছায় কিছুই করতে পারবে না। যতক্ষণ না উপর মহল তাদের থেকে অনুমতি না দিচ্ছে ততদিনে তাদের পরিবারের লোকজন খুন হয়ে গেলেও নিজে থেকে কিছুই করতে পারবে না।
তাই আমি কারো আন্ডারে কাজ করাটা পছন্দ করি না। আমার যেটা মনে হবে আমি সেটাই করব কারো থেকে অনুমতি নেওয়াটা আমি সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হই। আর আমি ছোটবেলা থেকে এভাবে বড় হয়েছি। আর আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কাউকে নিজের দাম্ভিকতার পরিচয় দেওয়া নিয়ে। যদি আমি কোনো সংস্থার হয়ে কাজ করি তবে আমার মাঝে সংস্থানের একটি ভাব ফুটে আসবে। ফুটে আসবে এক দাম্ভিকতা। যেটা আমি বরাবরই অপছন্দ করি। আশা করি তোমার সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেছ।”

বেশ রাগী কণ্ঠে বলে উঠলেন অলিন;
-“হ্যাঁ সব বুঝলাম। আর আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তা জেনেও এতদিন চুপ ছিলে কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন যাবেদ;
-“আমার আরো একটি সমস্যা হলো আমি কোনো কিছু জেনেও কারো কাছে প্রকাশ করিনা। আর আমি কোনো কবি অথবা ফিল্মের অভিনেতা নই যে সেভাবে উথলে পরে ভালোবাসার কথা জানাবো। আমাকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ বলতে পারো বটে। আমি আমার মতো, কাউকে অনুলিপি অথবা নকল করা আমি মোটেও পছন্দ করি না।”
-“তা আর বলতে। তুমি যে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ তা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললো। আজকের জন্য উঠি?”
-“চলো। তোমার মর্জিতেই তো এখন আমাকে চলতে হবে না চলে যে আর উপায় নেই।”

আর কিছু বললেন না অলিন। বেঞ্চ বসে থাকা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর যাবেদের হাতের মাঝে নিজের হাতটি আবদ্ধ করে নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলেন সামনের দিকে। কিছু দূর আগাতেই নিজেদের গাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হলেন দু’জন। গাড়ি পরিচালনা আসনে গ্রহণ করলেন অলিন তার পাশের আসন গ্রহণ করলেন যাবেদ। সামনের দিকে ছুটে চলেছে গাড়ি। উদ্দেশ্য এখন, কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া। কয়েক মিনিট গাড়ি চলতেই একটি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামালেন অলিন। গাড়ি পার্কিং করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে যাওয়ার উদ্দেশ্য করে রওনা দিলেন দু’জন। একটি সুন্দর মনোরম পরিবেশ দেখে স্থান বেছে আসন গ্রহণ করলেন তারা দু’জন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিল পে করে রেস্টুরেন্টের থেকে বের হয়ে গেলেন তারা। এবার আর গাড়ি পরিচালনা আসন গ্রহণ করতে পারেননি অলিন। গ্রহণ করেছেন যাবেদ। উদ্দেশ্য নিজের বাড়ি। মিনিট দশেক গাড়ি চলতেই গাড়ি এসে পৌঁছে গেল যাবেদের বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়তমাকে বিদায় জানিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলেন যাবেদ। অপর দিকে গাড়ি নিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্য করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন অলিন।

আনুমানিক রাত দুইটা ছুঁইছুঁই। রুমের ভেতর থেকে প্রচণ্ড চিৎকারের ও মৃত্যুর আর্তনদের আওয়াজ ভেসে আসছে। চারদিক নির্জনতায় ঘেরা। রুমের ভেতরে চিৎকারের আওয়াজের ফলে কান ঝালাপালা হয়ে যাবার উপক্রম। তবে বেশ অবাক করা কাণ্ড হলো রুমের ভেতরে এ-তো উচ্চ স্বরে শব্দ হওয়ার পরেও বাহিরে বিন্দু পরিমাণে কোনো আওয়াজ ভেসে আসছে না। হয়তো রুমটি সাউণ্ড প্রুফ।

কিছু কিছু সময় সাউণ্ড প্রুফ যুক্ত রুমগুলো বড্ড উপকারে আসে আবার কিছু সময় মৃত্যু ডেকে আনে। পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের দু’টি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে ভালো দিক এবং অপর দিকটি হচ্ছে খারাপ। পৃথিবীটা সৃষ্টিকর্তা তৈরি করেছন-ই ভালো-খারাপের সমন্বয় করে। এটা সৃষ্টিকর্তার একটি বড় দান বলা যায় আবার অভিশাপও বলা যায়।

রুমের ভেতরে নগ্ন অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে আছেন এক যুবক। দেহ থেকে রক্ত নির্গত হয়ে তলিয়ে গেছে মেঝে। কালো হুডি পরিধেয় লোকটি মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর স্বরে রুম কম্পিত করে হাসতে লাগলেন। মেঝেতে পরে থাকা যুবকের পাশেই দু’টি চেয়ার দেখা যাচ্ছে।
আর উক্ত চেয়ার দু’টোতে অচেতন অবস্থায় বেঁধা রাখা অবস্থায় আছেন আর-ও দু’জন যুবক। মেঝেতে পড়ে থাকা যুবকটির দেহ থেকে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রুমের মেঝে জুড়ে। রক্তে মেখে গেছে দেহটি সেই সাথে রুমের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্তের তরল ছিটা। কিছুক্ষণ আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে যুবক। তবে দেহের ভেতরে কিছু পেশি হয়তো এখনো নড়ছে তবে তা একান্তই দেহের ভিতরে। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে যদি মেরে ফেলা হয় তবে মানুষটির তৎক্ষনাৎ মৃত্যু ঘটলেও দেহের ভেতরের কিছু পেশি তৎক্ষনাৎ মারা যায় না। বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন হয় তাদের স্তব্ধ হতে। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে যুবকটির ক্ষেত্রে। উক্ত পেশিগুলোর কম্পন বাহির থেকে দেখা না গেলেও স্ক্যান করলে হয়তো ধরা পড়ত বিষয়গুলো।

হুডি পরিধেয় লোকটির হাতে গতদিনের মতো আজ-ও রয়েছে ধারালো চকচকে ছুরি। আজ আর রুমে হালকা আলো নয় অথবা রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলো নয়। বরং আজ লাইটের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে রুমের চারদিক। হুডি পরিধেয় লোকটির কেবল তার ড্রেস দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আর কিছুই নয়। মাথায় বিশাল এক হুডি দেওয়া তবে অবাক করা বিষয় হলো এই হুডি পেরিয়ে সামনে দেখতে তার বিন্দু পরিমাণ সমস্যা হয় না তার। ধীর পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন তিনি। রুমের ভেতরে একটি টেবিল দেখা যাচ্ছে যার উপরে রয়েছে একটি কাঁচের জগ। জগটি হাতে তুলে নিলেন অজ্ঞাত লোকটি। জগ হাতে নিয়ে ধীরে পায়ে হেঁটে উপস্থিত হলেন চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা যুবকগুলোর সামনে। হাতের তালুতে কিছু পরিমাণ পানি নিয়ে ঝাপটা মারলেন যুবকগুলোর মুখে। দু’জনের মুখে পানির ঝাপটা লাগতেই ধীরে – ধীরে পিটপিট করে চোখ জোরা খুলতে লাগলেন তারা। তাদের সামনে পড়ে থাকা বিভৎস দেহটি দেখে পুনরায় চিৎকার দিয়ে উঠলেন দু’জন। দু’জন এক সঙ্গে চিৎকার দিলেও সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে যায় একটি যুবক। সাধারণ মস্তিষ্কের মানুষ এতটা কাছ থেকে এরকম একটি বিভৎস ভাবে হত্যা করা লাশ দেখলে সেখানেই অচেতন হতে বাধ্য হবে। সেদিকে পরোয়া না করে পুনোরায় হাতের তালুতে পানি ঢেলে অচেতন হয়ে যাওয়া যুবকটির মুখে পানির ঝাপটা দিলেন। পুনরায় পানির ঝাপটা পেয়ে হকচকিয়ে উঠলেন যুবকটি। মনে করতে লাগলেন অচেতন হয়ে যাবার পূর্ব মুহূর্তের ঘটনা। অচেতন হওয়া যুবকটি পুনরায় চেতনা শক্তি ফিরে পেয়ে চিৎকার দিলেন কিন্তু এবার আর অচেতন হয়ে যায় নি। বেশ ধাক্কা খেয়েছেন মনের গহীনে। পাশে বেঁধে রাখা অপর যুবকটি রীতিমত রোবটে পরিনত হয়েছেন। তার সামনে কি হচ্ছে আর কি হয়েছে তা হিতাহিত জ্ঞান নেই বললেই চলে।

যুবক দু’টির সামনে হাতের তালুতে ছুরি ঘোরাতে লাগলেন হুডি পরিধেয় লোকটি। তা দেখে চেতনা ফিরে পাওয়া যুবকটি পুনরায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। ডানহাতে শক্ত করে ছুরির হাতল ধরলেন অজ্ঞাত লোকটি। চেতনা ফিরে পাওয়া যুবকটি হা করে চিৎকার দেওয়া মাত্রই যুবকের মুখের ভেতরে ছুরির মাথা দিয়ে আঘাত করলেন তিনি। মুখের ভেতরে আঘাত করার ফলে সম্পূর্ণ ছুরিটির মাথাটি গলা ভেদ করে অপর পৃষ্ঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। মুহূর্তের মাঝে এইরূপ আচমকা আঘাতের কথা কেউ ভাবতে পাড়েননি। চিৎকার করতে পারছেন না আঘাত প্রাপ্ত যুবকটি। যুবকের দেহটি একটু পর পর কাঁপ খেয়ে চলেছে। আঘাত প্রাপ্ত যুবকটি চিৎকার করতে না পাড়লেও পাশে থাকা যুবকটি এবার আর থেমে নেই। একজনের চিৎকার বন্ধ হলে-ও অপরজন চিৎকার জারী রেখেছে। আঘাত প্রাপ্ত যুবকটির কণ্ঠনালি ও খাদ্যনালি এবং শ্বাসনালির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আঘাতের ফলে। চোখের সামনে এরূপ নৃশংস ভাবে কাউকে খুন হতে দেখলে সে যে আর নিজের মাঝে থাকেনা। হঠাৎ করে হুডি পরিধেয় লোকটি আঘাত প্রাপ্ত যুবকটির দেহের সমস্ত জামা-কাপড় খুলে উলঙ্গ করে ফেললেন। অতঃপর ছুরি দিয়ে গলার নিচ হতে শুরু করে পেট পর্যন্ত একের পর এক আঘাত করেই চলেছেন হুডি তিনি।

পাশে থাকা যুবকটি পুনরায় অচেতন হয়ে গেছেন এইরূপ ঘটনা দেখে। এরকম ঘটনা দেখে মনোবল ঠিক রাখাটা বড় কঠিন কর্ম বলা যায়। পেটের দিকে অধিক পরিমাণে ছুরি দিয়ে আঘাত করার ফলে আঘাত প্রাপ্ত যুবকটি কিছুক্ষণ পূর্বেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তবুও ক্ষান্ত হননি হুডি পরিধেয় লোকটি। যুবকটির ক্ষতবিক্ষত দেহটি চেয়ার থেকে বাঁধ ছাড়িয়েছে দিয়েছেন প্রথম আঘাতের পরেই। একটি মানুষের আত্মার মৃত্যুর পরে দেহটি তার কোনো প্রয়োজনের নেই অথবা কাজের নয়। ছুরি দিয়ে আঘাত করে মেঝেতে ফেলে দিলেন যুবকটির দেহটি। থেমে গেলেন হুডি পরিধেয় লোকটি। হঠাৎ যুবকটির নিম্নাঙ্গের দিকে চোখ যায় তার। অক্ষত অবস্থায় দেখে পুনরায় ছুরিটি হাতে নিয়ে যুবকটির নিম্নাঙ্গের উপর একের পর এক আঘাত চালাতে লাগলেন। ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাতের ফলে যুবকটির নিম্নাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ কিছুই অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। মেঝেতে একেকটি টুকরো একেক স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

হুডি পরিধেয় লোকটি হঠাৎ করে ছুরিটি হাতের মুঠোয় শক্ত করে আবদ্ধ করে নিলেন। অতঃপর যুবকটির পেটের উপর ছুরিটি বসিয়ে ধিরে ধিরে পেটের চামড়া কেটে ফেলতে লাগলেন। একটি চারকোণা বক্স আকারে যুবকটির পেটটি কেটে ফেললেন তিনি। পেটের ভেতরে তেমন কোনো কিছুই ভালো অবস্থায় নেই। ছুরির আঘাতের ফলে ভেতরের সকল কিছু নড়েচড়ে গেছে। দুই হাত বারিয়ে দিলেন পেটের ভেতরে। অতঃপর হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করলেন যুবকটি পেটের ভেতরে থাকা কলিজাটি। একটি টান দিয়ে সম্পূর্ণ ছিড়ে ফেললেন অবস্থিত স্থান থেকে। পুনোরায় দুই হাত পেটের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে কিডনি দু’টো হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করলেন। অতঃপর পুনরায় একটি হেঁচকা টান দিয়ে তা ছিড়ে ফেললেন। পুনরায় ডান হাতে ছুরিটি শক্ত করে ধরে হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে নিলেন। অতঃপর মেঝেতে পরে থাকা যুবকটির নগ্ন বুকের বাম পাশে কাটতে শুরু করলেন। কিছু সময় বাদে পুনরায় বুকের উপর চৌকোনা একটি বক্স আকারে কেটে ফেললেন বুকের চামড়া ও হাড়। বুকের উপর চৌকোনা বক্স আকারে কেটে ফেলা স্থানটিতে দুই হাত প্রসারিত করে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে হৃদপিণ্ডটি হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করলেন। অতঃপর হৃদপিণ্ডটি একটি টান দিয় ছিড়ে বের করে আনলেন তিনি। পুনরায় হাতের মুঠোয় ছুরিটি আবদ্ধ করে যুবকটির কপালে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভাস্কর্যের ফলকের মতো কিছু লিখে দিলেন।

বসে না থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। পুনরায় হাতে নিলেন কাঁচের জগটি। পুনরায় হাতের তালুতে পানি নিয়ে ঝাপটা দিলেন অচেতন হয়ে যাওয়া যুবকের চেহারায়। পানির ঝাপটায় অচেতন থেকে চেতনায় ফিরলেন যুবক কিন্তু তাকানোর শক্তি নেই তার কাছে। কিছু সময় বাদে পিটপিট করে চোখ খুলে পাশে তাকালেন কিন্তু কারো দেখা পায়নি কেবল রক্ত ছাড়া। পায়ের দিকে চোখ ফেরাতেই পুনরায় চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
,
,
,
—- ” ক্রাইম থ্রিলার ” —-
—- ” খুন ” —-
—- ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —-

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here