খুন,পর্বঃ-০৭

0
397

খুন,পর্বঃ-০৭
যাবেদ খাঁন আবু বকর

পিটপিট করে চোখ খুললেন যাবেদ। ভাবতে লাগলেন তিনি,মারা গেছেন নাকি আদৌ জীবিত আছেন। ভাবনা কার্য শেষ না হতেই রুমের ভেতরে প্রবেশ করল অলিন। বেশ চমকে গেলেন তিনি। এটা তার রুম কিন্তু তিনি তো মারা গেছেন। ভাবতে লাগলেন তিনি, তবে কি অলিন-ও মারা গেছেন। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব! আর মারা যাবার কারণ কি? আমার জন্যই কি কেবল মারা গেছে। এ ধরণের হাজারো প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে যাবেদের মন। অনুভব করলেন যাবেদ, বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। পাশে এসে বসলেন অলিন। বুঝতে বাকি রইলো না যাবেদের তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু বেশ অবাক হয়েছেন নিজেকে জীবিত দেখে। যাবেদের পাশে বসে যাবেদের উদ্দেশ্য করে মায়া মাখা কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন অলিন;
-“এখন কেমন অনুভব করছ?”
কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং মন খারাপ করে বলতে লাগলেন তিনি;
-“বেশ ভালো বলা যায়। কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে? আর আমি-ই বা বেঁচে আছি কিভাবে? আর তাবিব কোথায়?আর আমি এখন কোথায় আছি?”
-“এক সাথে এতোগুলা প্রশ্ন! হাইপার হবার কিছু নেই তুমি এখন আশংকা মুক্ত আছো। আর শয়তান তাবিবের লাশ এখন মর্গে আছে। এবং তুমি এখন নিজের বাসাতেই আছো।”
-“কারো ব্যপারে সম্পূর্ণ না জেনে কথা বলতে হয় না। আর অনেক সময় চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিষয়টিও রহস্যময় হয়। তোমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছ এক এবং ঘটছে আরেক। তাই ভালো ভাবে কোনো জিনিস না জেনে বলিও না। যাইহোক তবে তুমি এখানে কিভাবে এলে! আর আমাকেই বা বাঁচালে কি করে?”
বেশ কাঁপা কাঁপা গলায় কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলেন অলিন;
-“ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। স্ক্রিনে তোমার নাম্বার থেকে কল এসেছে। দ্রুত কল গ্রহণ করতেই লাগাতার তোমাদের দু’জনের কথা শুনে যাই। বেশ অবাক সেই সাথে বড় ভয় পাই। অতঃপর রাফিক ও অর্নব কে ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে কল দিয়ে তাদের নিয়ে দ্রুত তোমার বাসার দিকে রওনা হই। এক মুহূর্তের জন্য কান থেকে তোমার ফোন নামাইনি। যখন গুলি ছোড়ার শব্দ পেলাম তখন বুকের ভেতর মুচড়ে উঠেছিলো। ভেবেছিলাম হয়ত তোমাকে হারিয়ে ফেলব।”

কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দেন অলিন। যাবেদের বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন তিনি। যাবেদ তার ডান হাতটি দিয়ে মাথার চুলগুলো নেড়ে দিচ্ছেন অলিনের। আবেশে চোখ বুঝে আছেন অলিন। ভেবেছিলেন যাবেদ,হয়তো তিনি এখন কোনো হাসপাতালে আছেন কিন্তু নিজেকে বাসায় দেখে বেশ অবাক হচ্ছেন। তা-ও নিজের রুমে। কিভাবে আছেন এখানে কিছুই মাথায় আসছে না তার। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে লাগলেন তিনি। তবে কোনো ভাবেই নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারছেন না এখানে তিনি কিভাবে আছেন এটি ভেবে। কৌতুহল বশত প্রশ্ন করেই ফেললেন তিনি;
-“আচ্ছা পরবর্তী তে কি হয়েছিলো? আর আমি বাসায় কীভাবে!”
-“দ্রুত রুমে এসে প্রবেশ করলাম। যা দেখতে পাই তাতে আমার গায়ের রক্ত হীম হয়ে যায়। রুমের দু’দিকে দু’জন শুয়ে আছো? রক্তে লাল হয়ে গেছে মেঝে। তোমার শরীর থেকে অধিক পরিমানে রক্ত নির্গত হচ্ছিলো। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তখনও থেমে থেমে তোমার হার্টবিট চলছিলো। হৃদপিণ্ড ধীর গতিতে তার কার্য চালিয়ে যাচ্ছিলো প্রতিনিয়ত। তোমার হয়তো জানা নেই আমি একজন ডাক্তার ছিলাম। পড়াশোনা ডাক্তারের করলে-ও শখের বশে পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মটি করছি। তোমার বাসার নিচ তলায় স্টোর রুমে অক্সিজেন সিলেন্ডার আছে বলেছিলে একদিন। সেখান থেকে রফিক ও অর্নবের সাহায্যে বের করে এনে তোমার রুমে সেট করে নেই। এবং তোমার ফার্স্ট-এইড বক্সে যাবতীয় সকল কিছুই ছিলো। যার জন্য তেমন একটি বেগ পেতে হয়নি। তবে জরুরি কিছু ঔষধের প্রয়োজন ছিলো যা রফিক এনে দিয়েছে।”
-“আচ্ছা তা বুঝলাম। কিন্তু আমাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে বসিয়ে ট্রিটমেন্ট করানোর কারণটি কি?”
-“ইতিমধ্যেই তোমার উপর এট্যাক হয়েছে। হাসপাতালে নিলে যে এট্যাক হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এখন প্রশ্ন করতে পারো যে তবে বাসায় কি এট্যাক করা যাবে না! হ্যাঁ বাসায় ও করা যাবে তবে আমি বেঁচে থাকা অব্দি তোমার দেহে একটা আঘাত পড়তে দেবো না।”
-“সব বুঝলাম। তবে তাবিবের কি হলো? ওকে বাঁচাবার চেষ্টা করোনি?”
-” শয়তানটা মারা গেছে এটাই ভালো হয়েছে। শয়তানটা আমার কলিজায় আঘাত করেছে। ওর কপালের মধ্যভাগ গুলিবিদ্ধ হওয়াতে গুলিটি মস্তিষ্কে আঘাত হেনেছে। যার ফলে মৃত্যু ঘটেছে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন আমার মাথায় প্রথম থেকেই ঘুরঘুর করছেন। যদি অনুমতি দাও তবে করি!”
-“একবার বলেছি অলিন! কারো ব্যাপারে অথবা কোনো ব্যপারে সম্পূর্ণ না জেনে কোনো কিছুই বলতে নেই। তুমি আমি চোখের সামনে যা ঘটে যেতে দেখছি ১৮০° কোণ এঙ্গেল থেকে দেখলে সেটি ভিন্ন ঘটনা হতে পারে। তাই আন্দাজে কথা না বলাটাই ভালো। আর আগামীতে এগুলো যেনো বলতে না শুনি।”
-“ওহ্। এখন তোমার অই শয়তান ভাইটার উপর মায়া উথলায় পড়ছে। তোমাকে মারার জন্য লোক ভাড়া করলো এরপর যখন সে তাতে ব্যর্থ হলো তখন তোমাকে মারার জন্য বন্দুক থেকে গুলি করলো। এখনো ভাইয়ের প্রশংসাই করে যাবে এখনো ভালোই বেস যাবে। আর আমার ভালোবাসা কি ফেলনা তবে? আর রাখো তোমার ১৮০° আর ৩৬০° দৃষ্টিকোণ। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিষয়টি কি তবে ভুল? তোমাকে মারার জন্য এগুলো করেছে এটাকি তবে ভুল?”
-“আহ্। রেগে যাচ্ছো কেনো? আচ্ছা আমার দেহ থেকে বুকের উপর থেকে যে গুলিটি পেয়েছ সেটা কতটা ক্ষত সৃষ্টি করেছিলো দেখেছিলে?”
-“তেমন নয় সামান্য। সে যাইহোক,তোমাকে মারার জন্যইতো গুলি চালিয়ে ছিলো।”
-“তোমাকে বুঝানো আমার শ্রাদ্ধের বাহিরে। যাইহোক তুমি বলেছিলে কি যেনো প্রশ্ন করবে। বলো!”
-“আমি এখনো বুঝতে পারছি না তোমার পিঠে এসে গুলি লাগলো কীভাবে? তাবিবের হাতে বন্দুক ছিলো। আর তোমার হাতেও। যদি তুমি তাবিবকে লক্ষ্য করে গুলি করেছ যার ফলে তাবিবের কপালে গুলিটি লেগেছে। তবে তাবিব যদি তোমার উদ্দেশ্য করে গুলি চালায় তবে তোমার ও সামনের দিকে গুলি লাগবে। আর তোমার ডান বুক থেকে একটি গুলি পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তোমার পেছন দিকে মানে পিঠে এসে গুলি কিভাবে লাগলো? পিঠে গুলি লাগার তো কোনো প্রশ্ন-ই আসে না।”
কিছুটা হেসে জবাব দেয় যাবেদ,
-“গুলিটা পেছন দিক থেকে করেছিলো অন্য কেউ। কিন্তু যে-ই করে থাকুক না কেন সে তাবিবের ভাড়া করা লোক ছিলো না।”
-“আচ্ছা বাদ দাও সে-সব কথা। এখন তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন। তুমি এখন ঘুমাও আর আমি এ বাসাতেই আছি যতদিন না তুমি সুস্থ হচ্ছো। মানা করলে-ও শুনব না আমি। তাই আগে থেকেই বলে রাখছি।”

এই বলে অলিন যাবেদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে নিচে চলে গেল। মনে – মনে ‘পাগলী একটা’ বললেন যাবেদ। পুনরায় চিন্তা জগতে অনুপ্রবেশ করলেন। পেছন থেকে কে গুলি করল সেটা নিয়েই ভেবে চলেছেন তিনি। তাবিব যাকে ভাড়া করছিলেন সে চলে গিয়েছিলো আর তিনি পরিধান করেছিলেন লাল শার্ট অথবা গেঞ্জি। কিন্তু পেছন থেকে যে গুলি করছিলো তিনি কালো হুডি পরিধান করে ছিলেন। যদিও চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয় নি। ব্যপার গুলো বড্ড ভাবিয়ে তুলছেন যাবেদকে। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হতেই হাতে একটি পেয়ালায় সুপ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন অলিন। যাবেদে’র পাশে বিছানায় বসলেন তিনি। যাবেদের উদ্দেশ্য করে বেশ কিছুটা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলতে লাগলেন,
-‘বহু চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। এখন আর নয়। গত ৪ দিন পর্যন্ত অজ্ঞান ছিলেন আপনি। কেবল স্যালাইনের দ্বারায় আপনার খাওয়া-দাওয়ার কার্য শেষ করা হয়েছে। এখন উঠুন আর সুপগুলো খেয়ে নিন নয়তো শরীর খারাপ করবে।’

অমত করেননি আর যাবেদ। একা-একা ওঠার চেষ্টা করলেন কিন্তু শরীর দুর্বলতা এবং ব্যথার কারণে পারলেন না তিনি। উঠে বসতে সাহায্য করলেন অলিন। পেছনে বালিশ দিয়ে খাটিয়ার সাথে হেলান দিয়ে শোয়ালেন যাবেদকে। অতঃপর অলিন নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন তাকে। অপর দিকে খেয়ে যাচ্ছেন যাবেদ সেই সাথে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার প্রেয়সীর দিকে। মায়াবী চেহারার মলিনতা ছাপ ফুটে উঠেছে। হয়তো হারিয়ে ফেলার ভয়টা বড্ড বেশি। যদি হারিয়ে ফেলতেন তবে হয়তো নিজেকে বড্ড অপরাধী অথবা অলক্ষুণে ভাবতেন তিনি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেঁচে গেছে তার প্রিয় মানুষটা। খাইয়ে দেওয়ার সময় একগোছা চুল বড্ড সমস্যার সৃষ্টি করছে অলিনের। কিছু সময় পর পর-ই সেটিকে কানের ওপাশে রাখতে হচ্ছে কিন্তু চুলের গোছাটাও পণ করেছে অলিনকে ডিস্টার্ব করার। চুলগুলো আজ যেনো অলিনের সাথে খেলতে চাইছে। যাবেদ নিজ হাতটি কষ্ট করে উঁচিয়ে কানের পৃষ্ঠে সুন্দর ভাবে চুলের গোছাগুলো রেখে দিলেন। পুনরায় আবেশে চোখ বুজে নিলেন অলিন। কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হতে লাগলো।

অতঃপর এভাবেই ভালোবাসায় কেটে যাচ্ছিলো সময়। দীর্ঘ নয়দিন পর আজ ঠিকভাবে হাঁটতে পারছেন যাবেদ। শরীরের ক্ষতস্থানগুলো ঠিক হয়ে গেছে অনেকটাই। শরীরে এখন আর তেমন ব্যথা নেই বললেই চলে।
জানালায় থাকা থাইগ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছেন তিনি। কত এঙ্গেলে এসেছিলো গুলিটি? আর কোন স্থান থেকে গুলিটি করা হয়েছিলো? থাই গ্লাসটি দু’টি ছিদ্র হয়ে আছে। আর তা দেখে হঠাৎ কিছু কথা মনে করে নিজ পিঠে হাত দেন যাবেদ। পিঠে হাত দিয়ে একটি স্থান ক্ষত হয়ে আছে অনুভব করলেন।চিন্তিত হয়ে পুরোনো ঘটনা স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন।

দু’জন দু’জনের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। একে অপরকে নিশানা করতে ব্যস্ত। দু’জনের হাতের আঙুল ট্রিগারের উপর। একটা চাপ যে কারো মৃত্যু ঘটতে পারে। হঠাৎ করে দু’জন এক সঙ্গে ট্রিগার চালায়। তাবিবের কপালকে লক্ষ্য রেখে ট্রিগার চাপ দিলেন যাবেদ। অব্যর্থ নিশানা। গুলিটি সোজা আঘাত হানে তাবিবের কপালের মধ্যভাগে। কিন্তু তার পূর্বেই ট্রিগার চাপ দেন তাবিব। লক্ষ্য তার যাবেদের হৃদপিণ্ড বরাবর। ডান দিকে যায়গা না থাকায় হিতাহিত জ্ঞান ক্ষুন্ন হয়ে বাম দিকে সরে যান যাবেদ। কিন্তু অব্যর্থ হয়না তাবিবের চালানো গুলি। হৃদপিণ্ডে আঘাত হানতে না পারলেও যাবেদের ডান বুকটি গুলিবিদ্ধ হয়। ইতিমধ্যেই তাবিব শেষ নিশ্বাস গুনছে। হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছেন তার আর এ ভুবনে থাকা হবে না। ডান বুকে গুলিবিদ্ধ হবার পরেও সজ্ঞানে দাঁড়িয়ে ছিলেন যাবেদ কিন্তু হঠাৎ করে পেছন দিক থেকে থাই গ্লাস ভেদ করে দু’টি গুলি এসে আঘাত করলেন তার পিঠে।
ঝংকার দিয়ে উঠল তার দেহ। অতঃপর ধীরে ধীরে মেঝেতে ঢলে পড়লো যাবেদের দেহটি।

স্মৃতিচারণ থেকে ফিরে এলেন তিনি। স্পষ্ট মনে আছে তার। দু’টি গুলো চালানো হয়েছিলো পেছনের দিক থেকে কিন্তু তার পিঠে আঘাত হেনেছে একটি গুলি। পুনরায় স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন তিনি।
পিঠে একটি গুলি লাগার ফলে যাবেদের শরীর একদিকে ঝুঁকে যায়। যার ফলে কয়েক সেকেন্ড পরে চালিত গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আঘাত হানতে পারে না যাবেদের পিঠে।

স্মৃতিচারণ থেকে ফিরেই ভাবতে লাগলেন তিনি, তবে আরেকটি গুলি কোথায়। গুলিটি যেহেতু তার শরীরে আঘাত করেনি তবে গুলিটি রুমের মাঝে থাকার কথা। দ্রুত গতিতে রুমের সকল বস্তু ওলট-পালট করে হন্ন হয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন। এমতাবস্থায় রুমে প্রবেশ করলেন অলিন। জানতে চাইলেন কি খুঁজতেছেন,
-‘ এরকম হন্য হয়ে কি খুঁজে চলেছ? আমাকে বলো আমিও সাহায্য করি।”
-‘ দু’টি গ্লাভস নিয়ে এসো। একটি আমার জন্য অপরটি তোমার জন্য।’
-‘ আচ্ছা তা আনব। কিন্তু কি খুঁজতেছ সেটা তো বলো আমায়।’
-‘ সেদিন আমার উদ্দেশ্য করে পেছন থেকে দু’টি গুলি ছোড়া হয় কিন্তু আমি আঘাত প্রাপ্ত হই একটির দ্বারা। তবে অপর গুলিটি কোথায়। উক্ত গুলিটাই খুঁজে চলেছি। যদি পেয়ে যাই তবে আমার উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে সাহায্য হবে।”

কোনো কথা বললেন না অলিন। দ্রুত পায়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করলেন তিনি। রুমে থাকা কাঠের তৈরি আলমারির কাভার্ড খুলে ফেললেন। ভেতরে একটি বক্স থেকে দুইজোড়া গ্লাভস বের করে হাতে নিয়ে পুনরায় আটকে দিলেন কাভার্ডটি। একজোড়া গ্লাভস অলিন নিজে পরিধান করে নিলেন হাতে অপর গ্লাভস জোড়া যাবেদের উদ্দেশ্য করে বারিয়ে দিলেন। যাবেদ গ্লাভস জোড়া হাতে পেতেই দ্রুত গতিতে হাতে পরিধান করে পুনরায় খুঁজতে লাগলেন। অলিন নিজেও খুঁজতে লাগলেন। হঠাৎ অলিনের চোখ আটকে যায় খাটের তলায়। সোনালী কালারের কিছু একটি দেখা যাচ্ছে নিচে। দ্রুত হাতে নিলেন জিনিস টি। তা দেখে ছুটে এলেন যাবেদ। হ্যাঁ এটি একটি সোনালী কালারের গুলি। এরকম একটি গুলি যাবেদের দেহ থেকে উদ্ধার করেছিলেন তার নিশ্চয়তা দিলেন অলিন। এবং এটাই সেই ধাঁচের গুলি এটি বলে আশ্বাস দিলেন। গুলিটি একটি প্যাকেট বন্ধি করে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছে সামনের দিকে। তার পিছুপিছু ছুটে এলেন অলিন। বাড়ির বাহিরে এসে গাড়ি পরিচালনা আসনে যাবেদ বসতেই গাড়ির অপর পাশের দরজা খুলে তার পাশের আসনে বসে গেলেন অলিন। কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলেন না যাবেদ। কেনো না একবার তিনি যেটা ভেবে নিয়েছেন সেটাই করতে হবে। তাই প্রশ্ন না করে গন্তব্যের দিকে ছুটে চললেন তিনি। দীর্ঘ ১১ মিনিট গাড়ি পরিচালনা করার পরে উপস্থিত হলেন গন্তব্য স্থানে।

গাড়ি থেকে নেমে গেলেন যাবেদ, তা দেখে নেমে গেলেন অলিন। দু’জন এক সঙ্গে একটি ভবনে প্রবেশ করলেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই হাজার রকমের বন্দুকের দেখা মিললো তাদের। তবে বন্ধুকগুলো অতি যত্নসহকারে হাই সিকিউরিটি দিয়ে রাখা হয়েছে। কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন দু’জন। কোনো কিছু না বলে কেবল পকেট থেকে প্যাকেট বন্ধি গুলিটি এগিয়ে দিলেন যাবেদ। কাউন্টারে উপস্থিত ছিলেন একটি যুবক। দ্রুত গুলির প্যাকেটটি হাত নিয়ে নিলেন। গুলির পেছনে কিছু একটা দেখে কম্পিউটারে টাইপিং করতে লাগলেন। অতঃপর কিছু সময় অতিবাহিত হতেই একটি কাগজ প্রিন্টিং মেশিন থেকে বেরিয়ে এলো। যুবকটি কাগজটা হাতে তুলে নিলেন এবং হস্তান্তর করলেন যাবেদের কাছে। কাগজে চোখ বুলাতে লাগলেন যাবেদ। একটি লোকের সম্পূর্ণ পরিচয় দেওয়া আছে। কিছুটা উঁকি দিয়ে দেখে জানতে চাইলেন অলিন,
-“এটা কি!”
উত্তরে বললেন যাবেদ,
-“বন্দুক এবং গুলিটি যার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা ছিলো তার সম্পূর্ণ বায়ো ডেটা এখানে দেওয়া আছে। লোকটির নাম নাজমুল হাসান। বাসা আমার বাসার কাছেই। মানে আমার বাসার পরে ৪ তলা বিল্ডিং যেটা সেখানেই অবস্থান করেছেন তিনি।”
-“তবে দেরি করাটা বোকামী। চলো যাওয়া যাক।”

দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমটি ত্যাগ করলেন দু’জন। গাড়িতে উঠে পরিচালকের আসন গ্রহণ করলেন যাবেদ। অপর আসন গ্রহণ করলেন অলিন। সামনের দিকে ছুটে চলেছেন অধিক জোর গতিতে। কোনো দিকেই হুশ নেই তার। ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার বেগে ছুটতে লাগলো গাড়ি। হিতাহিত জ্ঞান নেই তার কেবল তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই নাজমুল হোসেনের বাড়ির সামনে উপস্থিত হলেন তারা দু’জন। গাড়িটি বাড়ির সামনে পার্ক করে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন তারা। উপরে যাবার জন্য সিড়ি ও লিফট দু’টোই আছে। লিফট খালি পেয়ে তাতে অবস্থান নিলেন দু’জন। লিফটে প্রবেশ করে পাশে থাকা বাটনগুলোর মধ্য হতে “4” বাটন প্রেস করলেন যাবেদ। একটি ঝাঁকুনি দিয়ে উপর দিকে উঠে কিছু সময় অতিবাহিত হতেই থেমে যায় লিফট। মাত্র সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে তারা এখন গ্রাউন্ড থেকে চার তলায় অবস্থান করেছেন। চার তলায় পৌঁছে গেলেই লিফট সাথে সাথে একটি “টুং” শব্দ তুলে খুলে যায় দরজা। দ্রুত বেরিয়ে পড়েন লিফট থেকে দু’জন। বারান্দা দিয়ে হেঁটে চলেছেন তারা। পরপর দু’টি রুম অতিবাহিত করতেই একটি রুমের সামনে এসে দাঁড়ালেন দু’জন। বহুক্ষণ যাবত কলিং বেল বাজিয়ে চলছেন যাবেদ। কিন্তু খোলার যেন নাম গন্ধটাই নেই। বেশ বিরক্তবোধ করছেন যাবেদ। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজানোটা তার কাছে অস্বস্তিকর লাগছে। উপায় না পেয়ে মূল বাড়িওয়ালাকে ফোন দিলেন যাবেদ। পাশে বাসা হওয়ার দরুন একে-অপরের কাছে নাম্বার থাকাটা স্বাভাবিক। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি কিছুটা পাঁক ধরছে। বয়স চল্লিশের উর্ধ্বে হবে তবে পঞ্চাশের নিম্নে হবে। হাতে একটি চাবির গোছা নিয়ে যাবেদ ও অলিনের দিকে এগিয়ে আসছেন তিনি। মধ্যবয়সী লোকটি তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে যাবেদের দিকে এগিয়ে দিলেন চাবির গোছা। দ্রুত হাতে নিয়ে নিলেন যাবেদ। উক্ত দরজায় থাকা চাবির ছিদ্রে একটি চাবি প্রবেশ করিয়ে মোচড় দিতেই টক করে আওয়াজ তুলে লক খুলে গেল দরজাটি। দ্রুত রুমে প্রবেশ করলেন যাবেদ অলিন। ভেতরে প্রবেশ করতে-ই থমকে গেলেন তারা দু’জন।
,
,
,
— ” ক্রাইম থ্রিলার ” —
— ” খুন ” —
— ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —

চলবে

সকলের কাছে একটি গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। কি দেখেছেন তারা দু’জন! এবং কেমন লেগেছে তা নিয়ে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করুন।

বিঃদ্রঃ গল্প পড়ে কোনো রকম ভয়ভীতি পেলে অথবা খুন করার প্রস্তুতি নিলে বা ক্রাইম করলে এর মধ্যে কোনো ভাবেই দায়ী গল্পকার যাবেদ হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here