খুন,পর্বঃ- ০৮
ক্রাইম থ্রিলার
যাবেদ খাঁন আবু বকর
পঁচা গন্ধে ছেয়ে আছে সম্পূর্ণ রুম। রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই বমি করে দেওয়ার পর্যায় চলে এসেছে উপস্থিত সবার। এতটা বাজে গন্ধ যা সহ্য ক্ষমতা কারোই যে নেই। দ্রুত রুম ত্যাগ করলেন সকলেই। পকেট থেকে টিস্যুর প্যাকেট বের করলেন যাবেদ। এটা তার একটি ভালো অভ্যাস বলা যায় অথবা বদভ্যাস। যেখানেই যাক না কেন তার পকেটে থাকবে টিস্যুর প্যাকেট।
প্যাকেট থেকে একটি টিস্যু দ্রুত বের করে নাকের সামনে ধরলেন এবং পুরোপুরি প্যাকেটটি অলিনের হাতে তুলে দিলেন। নাকে টিস্যু দিয়ে রুমের ভেতরে পুনরায় প্রবেশ করলেন যাবেদ। উদ্দেশ্য তার কোথা হতে এতটা বিশ্রী গন্ধ আসছে। যাবেদ ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতে থাকা প্যাকেট থেকে একটি টিস্যু নিয়ে নাকে তুলে পকেটে টিস্যুর প্যাকেটটি পকেটে পুরে নিলেন অলিন। দ্রুত পায়ে হেঁটে যাবেদের পিছু ধরলেন। উপস্থিত সবাই উৎসুক হয়ে আছেন জানার জন্য। কোথা হতে এতটা বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছে তা জানার জন্য মুটামুটি ছোটখাটো একটি ভীড় লেগে গেছে লোকজনের। ভেতরে প্রবেশ করে যাবেদ ড্রয়িং রুমে সন্দেহ করার মতো তেমন কিছু-ই পেলেন না।
তবে ইতিমধ্যেই যাবেদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির মাধ্যমে মনের গোপন কোঠরে একটি সন্দেহের আঁচড় কাঁটতে লাগলো তার। ফ্ল্যাটে আরো দু’টি রুম অবস্থিত আছে। অবশ্য এখনো উক্ত রুমগুলোতে তারা প্রদর্শন করেন নি তারা। ড্রয়িং রুমের দুই পাশে দু’টি রুমের দরজা দেখা যাচ্ছে। তা দেখে যাবেদ ঠিক করলেন দু’জন দুই রুমে প্রবেশ করবেন। যাবেদ ঠিক করলেন ডান দিকে রুমটি তিনি দেখবেন। ধীর পায়ে যাবেদ এগিয়ে চলেছেন ডান দিকে অবস্থিত রুমটির দিকে এগিয়ে। অপর দিকে অলিন বাম দিকে অবস্থিত রুমটির দিকে তার গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলেছেন। রুমে ঢোকার সাথে সাথেই দুজনে হাতে নতুন গ্লাভস পরিধান করে নিয়েছিলেন। অবশ্য এর একটি বড় কারণ রয়েছে। বলা যায়না বাসার মধ্যে কখন কি ঘটে যায়। যার ফলে প্রথম সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে গ্লাভস।
দরজার কাছে গিয়ে যাবের লকারে একটু জোরে চাপ প্রয়োগ করতেই “টক” করে আওয়াজ তুলে লক খুলে গেল এবং ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে খুলে গেল সম্পূর্ণ কাঠের দরজা। ভেতরে প্রবেশ করে সন্দেহ করার মতো এমন কোনো কিছুই নজরে এলো না যাবেদের। পুনরায় সম্পূর্ণ রুমে আরো একবার চোখ বোলান তিনি। এবারের ফলাফলও শূন্য। সন্দেহ করার মতো তেমন কিছু না মেলার ফলে দ্রুত পায়ে হেঁটে অলিনের অবস্থান নেওয়া বাম দিকের রুমটির দিকে এগিয়ে চললেন।
অপর দিকে অলিন বাম দিকে অবস্থিত দরজায় থাকা লকারে চাপ প্রয়োগ করলেন। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। পুনরায় লকারে চাপ দিলেন তাতেও ফলাফল শূন্য। বাধ্য হয়ে যাবেদের উদ্দেশ্য করে হাঁক দিলেন তিনি,
-“যাবেদ,এদিকে এসো তো।”
অলিনের হাঁক পেয়ে তৎক্ষনাৎ উক্ত রুমের দরজার কাছে উপস্থিত হলেন যাবেদ। উৎসুক হয়ে বলে উঠলেন তিনি,
-“হ্যাঁ বলো।”
-“দরজাটা ভেতর থেকে আঁটকে দেওয়া আছে। ভাঙতে হবে মনে হচ্ছে।”
-“আচ্ছা! ঠিক আছে। তুমি একটু পাশে যাও আমি দেখছি।”
যাবেদ দরজা বরাবর দাঁড়াতেই পাশে চেপে গেলেন অলিন। ডান হাত বাড়িয়ে লকারে চাপ প্রয়োগ করলেন যাবেদ। পূর্বের মতো এবারের ফলাফলও শূন্য। পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাবেদের কাণ্ড দেখে যেতে লাগলেন অলিন। পুনরায় দরজাটা প্রাথমিক ভাবে খোলার চেষ্টা করলেন যাবেদ। কিন্তু কিছুতেই সফল হলেন না। ভাঙার উদ্যোগ নিলেন তিনি। তৎক্ষনাৎ চাবির কথা মনে হলো তার। দ্রুত রুমের বাহিরে চলে গেলেন। উপস্থিত হলেন মধ্যবয়সী লোকটির সামনে। ফ্ল্যাটের মূল দরজা খোলার সাথে সাথেই চাবির গোছাটি বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে পুনরায় চাবির গোছা চাইতেই তৎক্ষনাৎ পকেট থেকে বের করে যাবেদের হাতে তুলে দিলেন মধ্যবয়সী লোকটি। লোকটির হাত থেকে চাবির গোছাটা নিয়ে পুনরায় রুমের ভেতরে ছুটে এলেন যাবেদ। এ ঘটনায় বেশ হতভম্ব হয়ে গেলেন মধ্যবয়সী লোকটি। ইতিমধ্যেই বাহিরে বেশ কিছু মানুষের ভীড় জমে গেছে। তবে কেউ ভতরে প্রবেশ করছে না।
এর জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মধ্যবয়সী লোকটিকে যাবেদ কড়া ভাবে বলে এসেছে কেউ যেনো ভেতরে প্রবেশ না করে। যার ফলে ভেতরে প্রবেশ করার মতো অত্যাধিক সাহস দেখাচ্ছে না কেউ। দ্রুত পায়ে হেঁটে চাবির গোছা হাতে নিয়ে উপস্থিত হলেন দরজার কাছে। যাবেদে’র হাতে চাবির গোছা দেখে বেশ লজ্জিত হয়ে গেলেন অলিন। লজ্জায় তার নাকের ডগায় লাল আভা ফুটে উঠেছে। বিন্দু পরিমাণ চাবির কথা মনে ছিলো না তার। যার ফলে দরজা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে চাবি প্রবেশের ছিদ্রপথে দ্রুত চাবি প্রবেশ ঘটালেন যাবেদ। অতঃপর চাবিটি একটি মোচড় দিতেই “টক” করে আওয়াজ তুললো দরজাটি। পুনরায় লকারে হাত দিয়ে একটু ধাক্কা দিতেই দরজাটি ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে খুলে গেল। দরজা খুলে যাওয়া মাত্রই দ্রুত পা চালিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলেন যাবেদ ও অলিন। ভেতরে প্রবেশ করে মেঝের দিকে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন অলিন। এবং অধিক ভয় পেয়ে যাওয়ার ফলে জড়িয়ে ধরলেন যাবেদকে। হ্যাঁ যাবেদের মনের কোণে বেড়ে ওঠা সন্দেহটাই সঠিক হয়েছে।
মেঝেতে পরে আছে বিভৎস একটি লাশ। মৃত দেহের উপরে পোকামাকড় কিলবিল করছে। দেহেটির উপরে “ভ্যানভ্যান” শব্দ তুলে উড়ে চলেছে কিছু মাছি। আবার কিছু মাছি বিভৎস দেহটির উপরে বসে আছে। এবং অত্যাধিক পরিমাণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে মৃত দেহ থেকেই।
ভেতরে প্রবেশ করেতেই দুর্গন্ধ যখন নাকে এলো যাবেদের। ঠিক তখনই তার গোয়েন্দা মস্তিষ্ক তাকে জানান দিয়েছিলেন সন্দেহের ব্যাপারটি। চিৎকার দিয়ে অলিন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যাবেদকে। যাবেদের দেহের সাথে নিজ দেহটি লেপ্টে দিয়েছে। ভয়ে কাঁপছে অলিনের দেহ। বহু বিভৎস লাশের ইনভেস্টিগেট করেছেন তিনি কিন্তু এরকম বিভৎস লাশ কখনোই চোখে পড়েনি তার। যার ফলে ঘাবড়ে যান এবং অত্যাধিক ভয় পেয়ে যান তিনি।
পকেট থেকে ফোনটি বের করে অফিসের উদ্দেশ্য করে কল দিলেন যাবেদ। কলটি গ্রহণ করে অপর পাশ থেকে কেউ একজনকে বলতে শোনা গেল,
-“হ্যালো! রাফিক স্পিকিং। কে বলছেন?”
-“রাফিক! আমি যাবেদ বলছি। দ্রুত আমার বাসার কাছে ৪ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ে চলে এসো। একটি বিভৎস মৃত দেহ পাওয়া গেলে এখানে। আর আসার সময় ফরেনসিক টিমের কিছু লোকদের নিয়ে এসো।”
-“ওকে স্যার! ৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা উপস্থিত হবো উক্ত স্থানে। আপনি কেবল একটু অপেক্ষা করুন।”
পুনরায় কিছু না বলেই কলটি কেটে দিলেন যাবেদ। অতঃপর ফোনটি পকেটে পুরে নিলেন। ইতিমধ্যেই রুমের ভেতরে প্রবেশ করেছে অনেকেই। অলিনের চিৎকার শুনে ছুটে এসেছেন তারা। মিহি কণ্ঠে অলিনের উদ্দেশ্য করে হাঁক দিতে লাগলেন যাবেদ,
-“অলিন! অলিন! কি হয়েছে? এর আগেও তো বহু লাশ দেখেছ। তখন তো এমন হয়নি তবে এবার কি হলো তোমার! এতো ভয় পাবার কিছু হয়নি। আমি আছি তো!”
চোখ খুলে লজ্জায় পড়ে গেলেন অলিন। তা দেখে কিছু বললেন না যাবেদ। একটি ঝটকা মেরে যাবেদের বুক থেকে নিজেকে উন্মুক্ত করে নিলেন অলিন। যাবেদ সেখানে এক মুহূর্ত আর অপেক্ষা না করে ড্রয়িং রুমে চলে এলেন। এবং রুমের ভেতরে প্রবেশ করা সকল লোকজনদের দ্রুত রুম ত্যাগ করার আদেশ দিলেন। পুনরায় সকলেকে বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো সেফটির জন্য। কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই রুমে প্রবেশ করলেন কয়েকজন পুলিশ ও তাদের সাথে রয়েছেন কিছু ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার। এবং এদের মাঝে উপস্থিত রয়েছেন রাফিক ও অর্নব।
পুলিশদের মাঝে কয়েকজন প্রতিটি রুমের সকল কিছু তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন। কোনো ক্লু পাওয়া যায় কি-না! সেই উদ্দেশ্য করে। সকলে যখন তন্নতন্ন করে খোঁজায় ব্যস্ত তখন হঠাৎ করে দরজার নিচের স্থানে চোখ আটকে যায় যাবেদের। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উক্ত স্থানে তাকিয়ে রইলেন তিনি। হঠাৎ দরজার কোণার দিকে হেঁটে চলতে লাগলেন তিনি। উপুড় হয়ে দেখতে চাইলেন জিনিসটি কি! দরজার নিচে এক কর্ণারে একটুকরো সেন্টার ফ্রেশের খাওয়ার অবিশিষ্ট অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে, সেই সাথে রয়েছে অমূল্য এক রহস্যময় সম্পদ। অমূল্য রহস্যময় সম্পদটি হাতে তুলতেই যাবেদের ঠোঁটের কোণে ফুটে এলো এক রহস্যময় হাসি। সেন্টার ফ্রেসের খাওয়া অংশটুকু দ্রুত হাতে উঠিয়ে নেন এবং প্যাকেট বন্ধি করে ফেললেন। তবে অমূল্য সম্পদটি এমনিতেই পকেটের কোণায় লুকিয়ে নেন। দরজাটি সম্পূর্ণ খুলতেই রুমের সংলগ্নে একটি বেলকনির দেখা মিললো তার। দ্রুত পায়ে বেলকনিতে অবস্থান নিলেন যাবেদ। তবে অবস্থান নেওয়া মাত্রই রীতিমতো ছোটখাটো একটি ধাক্কা খেলেন তিনি।
বেলকনি থেকে তার বাসার দৃশ্যটি সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট ভাবে। হঠাৎ তার বাসায় রুমের ভেতরে কিছু একটা লক্ষ্য করে থমকে যান তিনি। কোমড়ে গোছা বন্দুকটি হাতে তুলে নিলেন। অতঃপর নিজ বাসার রুমের দিকে তাক করলেন। কিন্তু কিছু একটা ভেবে পুনরায় বন্দুকটি গুটিয়ে নিলেন তিনি। তবে হাতেই মুঠোয় রেখে দিলেন বন্দুকটি। তীক্ষ্ণ নজরে তার বাসায় রুমের ভেতরে ঘটে যাওয়া কাণ্ডের দিকে তাকিয়ে রইলেন যাবেদ। রুমের ভেতর দৃশ্য দেখা বন্ধ করে বাড়ির বাহিরে তাকালেন। সেদিকে তাকাতেই পুনরায় হাতে থাকা বন্দুকটি উপরে উঠালেন। পকেট থেকে সাইলেন্সার বের করে বন্দুকের মাথায় লাগিয়ে নিলেন। অতঃপর তাক করলেন কিছু একটা লক্ষ্য করে। লক্ষ্য ঠিক করেই ট্রিগারে চাপ প্রয়োগ করলেন। ট্রিগারে চাপ প্রয়োগ করতেই ” টুস ” করে হালকা শব্দ তুলে গুলিটা বেরিয়ে গেল বন্দুকের ভেতর থেকে। অব্যর্থ নিশানা। লক্ষ্য বস্তুটিতে বন্দুকের গুলিটি আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
তার বাসার সামনে একটি গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়েছে। অবশ্য বাড়ির সামনে নয় বাড়ির উঠোনে বলা চলে। একটু আগে বন্দুক তাক করে গাড়ির পেছন থাকা নাম্বার প্লেট আটকে রাখা নাটের দিকে গুলি ছুড়েছিলেন গাড়িটির নাম্বার প্লেট আটকে রাখা নাটের উপর। নাটের উপর গুলিটি আঘাত হানতেই নাটটি ভেঙে গিয়ে নাম্বার প্লেটটি তৎক্ষনাৎ গাড়ির থেকে খুলে মাটিতে পড়ে যায়। বন্দুকটি পুনরায় কোমড়ে লুফে নিলেন তিনি। পুনরায় নিজের বাড়ির ভেতরে রুমের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ করে একটি কালো হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোক বাসা থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে গাড়ির ভেতরে চড়ে বসলেন। চারদিকে ধ্যান না দিয়ে গাড়ি চালু দিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগলেন। এ দেখে বেলকনি থেকে চলে আসার জন্য পেছন দিকে ঘুরতেই ধাক্কা লেগে যায় অলিনের সাথে। নিচে পড়ে যেতে নিয়েও যেনো হাওয়ায় ভেসে আছেন অলিন। এ ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রয়েছে যাবেদের। একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে আছেন অলিনের। পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলেন অলিন, কিন্তু হাওয়ায় ভাসা অনুভূতি অনুভব হওয়ার ফলে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালেন। চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলেন তিনি, এক হাত দিয়ে তার কোমড় আবদ্ধ করে আঁকড়ে ধরে আছেন যাবেদ। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন অলিনের মায়াবী মুখ পানে। হঠাৎ একটি হেঁচকা টান দিয়ে অলিনকে বুকে আবদ্ধ করে নিলেন যাবেদ।
চিন্তিত মাথায় কিছু একটা ভেবে চলেছেন যাবেদ। তবুও অলিনের কপালে চুমু খেয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি,
-“হঠাৎ এখানে? যে-ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলে আমি না ধরলে হয়তো এতক্ষণে তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতো।”
-“তা আমি জানি। আমি এটাও জানি আমার উড বি হাসবেন্ড আমাকে নিচের দিকে পতিত হওয়ার পূর্বেই আঁকড়ে নেবেন।”
– “প্রবাদ বাক্য আছে, ‘ কনফিডেন্স ভালো কিন্তু ওভার কনফিডেন্স ভালো নয়’ আমি যদি এই মুহূর্তে আমার হাত ফসকে যেতো অথবা কোনো ভাবে ধরতে ব্যর্থ হতাম! তবে এখন তোমার কতবড় একটি ক্ষতি হয়ে যেতো সেদিকে একটিবারও ভেবে দেখেছ! আগামীবার থেকে এগুলো মোটে-ও করবে না। মনে থাকবে?”
-“আচ্ছা করে মনে থাকবে আমার।”
-“আর এখানে কেনো এসেছিলেন আপনি?”
-“আসলে অন্যান্য রুমের ভেতরে অনেকক্ষণ যাবত খুঁজে চলেছি আপনাকে। কিন্তু খুঁজে পাইনি জনাব। অতঃপর এদিকে একটি দরজা খোলা দেখতে পেলাম। ভাবলাম একটু উঁকি দিয়ে দেখি। তা-ই এখানে এলাম। যার ফলে এ-তো সুন্দর একটি রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হলো।”
-“বেশি বকে যাওয়াটা, থাক! বাকিটা বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।”
-“কোথায়ও যাওয়া হচ্ছে কি!”
-“হ্যাঁ! আমি এখন বাসায় যাবো। তোমার পকেটে থাকা ব্লুটুথটি ফোনের সাথে সংযুক্ত করে নাও। আমি বাসায় গিয়েই কল করছি তোমায়।”
-“কিন্তু কি জন্য যাচ্ছ সেটা তো বলে যাও?
-“তা বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। যেটা বললাম সেটা করো।”
-” কি আর করার! আচ্ছা তুমি যাও আমি সব তৈরি করতেছি।”
দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলেন যাবেদ। লিফটে উঠে গ্রাউন্ড ফ্লরে যাবার জন্য “0” বাটন প্রেস করলেন। একটি ঝাঁকুনি খেয়ে উঠলো সম্পূর্ণ লিফটটি। কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতে পুনরায় আরেকটি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো লিফটটি। অতঃপর “টিং” করে শব্দ তুলে লিফটের দরজাটি খুলে গেল। দৌঁড়াতে লাগলেন যাবেদ,উদ্দেশ্য তার দ্রুত বাসায় পৌঁছানো। কয়েক মিনিট দৌঁড়ানোর পরেই উপস্থিত হলেন নিজ বাসার গেটের কাছে। দৌঁড়ানো থেকে থেমে গেলেন। বড়বড় শ্বাস নিতে লাগলেন। সুস্থ হয়ে গেলেও এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেননি তিনি। এখনো অসুস্থতার রেশ লেগে আছে তার দেহে। একটু জিড়িয়ে পুনরায় পথ চলতে লাগলেন যাবেদ। বাড়ির উঠোনে আসতেই দেখতে পেলেন একটি নাম্বার প্লেট পড়ে আছে। দ্রুত গতিতে হাতে উঠিয়ে নিলেন। নাম্বার প্লেট হাতে নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে লাগলেন বাড়ির ভেতরে। বাড়ির ভেতরে সকল জিনিসপত্রই ঠিকঠাক রয়েছে। কোনো বস্তুর বিন্দু পরিমাণ কোনো স্থান পরিবর্তন হয়নি। তবে কি করতে এলো অজ্ঞাত লোকটি! নিজ রুমে প্রবেশ করলেন যাবেদ। একটি স্থানে চোখ আটকে যায় তার। দরজার কর্ণারে একটুকরো সেন্টার ফ্রেশের খাওয়া অংশের অবিশিষ্ট রয়েছে। দ্রুত গতিতে হাতে নিয়ে তা প্যাকেট বন্ধি করে নিলেন তিনি। রুমের মাঝে খুঁজতে লাগলেন কোথাও কোনো জিনিস নড়চড় হয়েছে কি-না!
নাহ সন্দেহ যুক্ত তেমন কিছুই চোখে পড়েনি তার। কোনো ভাবেই বুঝতে পারছেন না রুমের মাঝে কি ঘটেছে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় কি কাজের জন্য তিনি এসেছিলেন। ড্রয়ার থেকে লেজার লাইট বের করে হতে তুলে নিলেন তিনি। দ্রুত পায়ে হেঁটে গুলিবিদ্ধ থাই গ্লাসের সামনে চলে এলেন। নিজ ফোনটি হাতে নিয়ে ব্লুটুথ চালু করলেন। পকেট হতে ব্লুটুথ ডিভাইসটি বের করে আনলেন এবং সুইচ চাপ দিয়ে তা চালু করলেন। অতঃপর ব্লুটুথ ডিভাইসটি ফোনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দিলেন। ফোন থেকে নাম্বার লিস্টে গিয়ে অলিনের নাম্বারে কল প্রদান দিয়ে ব্লুটুথ ডিভাইসটি কানে তুলে নিলেন।
অপর পাশ থেকে থেকে কল গ্রহন করে বলে উঠলেন অলিন,
-“হ্যাঁ বলো শুনছি।”
-“একটি লেজার রশ্মি আমার রুম থেকে বের হবে। দেখিও তো কোথায় যায় সেটি।”
-” তা দেখলাম। কিন্তু তুমি কি করতে চাচ্ছ?”
-“আপাতত যেটা বলেছি সেটাই করো!”
-“আচ্ছা!”
লেজার লাইটটি হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন গুলিবিদ্ধ থাই গ্লাসের সামনে। এঙ্গেল থেকে গুলি এসে থাই গ্লাসে আঘাত হানার ফলে ছিদ্র হয়ে আছে থাই গ্লাসটি। ছিদ্রপথ দিয়ে সেম এঙ্গেলে লেজার রশ্মি ছুড়লেন। ওপাশ থেকে বলে উঠলেন অলিন,
-“হেই! তোমার বাসা থেকে একটি লেজার রশ্মি আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে এসে পড়ছে।”
-“আমি তো এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা সেদিন আমার পিঠ থেকে যে গুলি উদ্ধার করেছিলে তা কত এঙ্গেলে বিঁধে ছিলো?”
-” এইতো ৩৭° অথবা ৩৮° কোণ এঙ্গেলে হবে।”
-“লেজার রশ্মিটাও কি ৩৭° বা ৩৮° কোণ এঙ্গেলে আছে!”
-“হ্যাঁ! এরকম টাই হবে।”
-“ইয়েস। সেদিন এই বেলকনি হতে আমার উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়েছিলো। যে-দিন আমি গুলিবিদ্ধ হই একই দিনে নাজমুল হোসাইনকে খুন করা হয়। প্রথমে তাকে খুন করা হয় অতঃপর তার লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে আঘাত হানা হয় আমার উপর। তাবিব যে প্লান করেছিলো আমাকে মারার জন্য উক্ত প্লান সম্পর্কে অবগত হন এ-ই মাস্টার প্লানার। ছক এঁকেছিলেন আমার জন্য। তাবিবের ভাড়া করা খুনিকেও হয়তো এতদিনে মেরে ফেলা হয়েছে। কেনো না এই ছকটাই যে এঁকেছিলেন মাস্টার প্লানার। আমাকে খুঁন করলেও দোষ হ’য়ে যাবে তাবিবের। তার দিকে কেউ আঙুল তুলে তাকাবে না এবং সে নিশ্চিন্ত মনে ঘুড়ে বেড়াবেন খোলামেলা।”
-“মাথার উপর দিয়ে গেলো সব। কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। তোমার সাথে তার কিসের শত্রুতা!”
থাই গ্লাসের একদম কর্নারে আসলেন পর্যবেক্ষণ করার জন্য হঠাৎ পাশের দেয়ালে চোখ যায় তার। কাঠে খোদাই করা আলমিরার সাথে সংযুক্ত দেয়ালে কালো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। ধীর পায়ে কর্নার ঘেসে সেখানে উপস্থিত হলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতেই বুঝে গেলেন এটি একটি ছোট্ট ক্যামেরা। অজ্ঞাত ব্যক্তির রুমে উপস্থিত হবার কারণটাও বুঝে গেলেন তিনি।
গভীর রাত সেই সাথে নির্জনতায় ঘেরাও করা পরিবেশ। পায়ের পদদলিতর ফলে খটখট আওয়াজ তুলে এক হাতে ছুরি ও অপর হাত পকেটে পুরে কালো কাপড়ে আবৃত করে গা ঢাকা দিয়ে মাথায় হুডি পরিধেয় করে এগিয়ে চলেছেন যাবেদ। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সাদা ধোঁয়া আবদ্ধ হয়ে গেল স্থানটি। নিশ্বাস নিতে পারছেন না যাবেদ। ধীরে ধীরে নিচের দিকে ঢলে পড়তে লাগলো তার দেহটি। হাজার চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারছেন না তিনি। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো চোখ তার। পরবর্তীতে কি হতে চলেছে সে সম্পর্কে অবগত নন তিনি।
,
,
,
— ” ক্রাইম থ্রিলার ” —
— ” খুন ” —
— যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —
চলবে
কি হতে চলেছে? তবে কি এতদিনের রক্ষক ই ছিলো ভক্ষক? অজ্ঞাত রাতে খুন করা অজ্ঞাত লোকটি ই কি যাবেদ নিজে? এতবড় ধোঁকার কারণ কি?
সকলের কাছে একটি গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। কি হতে চলেছে আগামীতে তা নেক্সট নাইস না করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন।