খুন সিরজ তৃতীয় সিজন,১ম পর্ব

0
463

খুন সিরজ তৃতীয় সিজন,১ম পর্ব
মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর

এক.
জঙ্গলে নির্জন একটি স্থানের অর্ধ ভাঙা ঘরের দরজায় বেশ জোরেশোরে পদাঘাত করেন ইন্সপেক্টর ফারহান। বহুদিনের পুরোনো দরজা হওয়ায় অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা। বুটের লাথি খেয়ে দরজাটার স্থায়িত্বকাল আর দীর্ঘ হয়নি। হাতে 9mm ডেজার্ট ইগল বন্দুকটা হাতে নিয়ে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলেন। আচমকা ভেতর থেকে একটি চাকু উড়ে এলো তার দিকে। সামনে তাকিয়ে ছুটে আসা ছুরি দেখে কিছুটা হতভম্ব হলেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে মাথটা বাম দিকে হেলিয়ে দেন। ডান কাঁধের উপর দিয়ে উড়ে যায় ছুরিটি। ফলে ছুরির ফলার আঘাত থেকে বেঁচে যায় তার কপাল। কিন্তু থামলেন না তিনি, অনেকটা দৌড়ে পা চালালেন সামনের দিকে।

নজরে আসে, রুম জুড়ে মৃদু অন্ধকারের ছড়াছড়ি। কেবল রুমের মধ্যখান আলোকিত করে রেখেছে একটি পঁচিশ ভোল্টের একটি বাতি। তবে আলোর বিচ্ছুরণ চারদিকে পড়ায় অন্ধকারের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। বাতির আলোর নিচে রয়েছে একটি কাঠের টেবিল। তার উপরে রয়েছে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। ডাক্তারী ব্লেড হতে শুরু করে আরও বেশকিছু নির্যাতন করার মতো অস্ত্র। টেবিলের পাশেই একটি চেয়ার রয়েছে। আদিবার নগ্ন দেহটা চেয়ারেই বেঁধে রাখা আছে। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আছে। তবে অস্পষ্ট হলেও বুঝা যাচ্ছে নগ্ন গা থেকে রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। রক্তাক্ত নগ্ন পেটের দিকে তাকিয়ে তিনি নিশ্চিত হলেন, আদিবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। ফারহান যখন লাইভ দেখছিল, তখনও আদিবার মাথায় চুল ছিল। কিন্তু এখন নেই। অর্থাৎ কেটে ফেলা হয়েছে চুলগুলো। মাথার চুলগুলো না থাকায় তার নগ্ন দেহটা যেন আরও প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে। লজ্জা স্থানগুলোতে ইতোমধ্যে রক্তে লাল হয়েছে গেছে। একটি সাদা টেপ দিয়ে মুখটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চোখগুলো বড়ো বড়ো করে রাখা। সহজেই অনুধাবন করা যায়, ভীষণ কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে মেয়েটাকে। দেহের অসংখ্য স্থান থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। রক্তের একটা আস্তরণ ইতোমধ্যে মেয়েটির নগ্ন দেহের উপর জমাটবদ্ধ হয়ে গেছে। টেবিলের উপর আধো বসে দুই হাত দিয়ে একটি ছুরির মাথা থেকে হাতল হাতের মাঝেই ঘোরাচ্ছে একজন যুবক। তার দিকে একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ইন্সপেক্টর ফারহান। নিজ ধারণা অনুযায়ী যুবকটির বয়সের সমীকরণ মেলালেন। বয়স খুব একটা না। সাতাশ থেকে আটাশের মাঝে সীমাবদ্ধ।

হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছেন ফারহান। তখনও তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছেন। তার তাকানো দেখে যুবকটি মুখ খুলল,
‘ ইন্সপেক্টর ফারহান সাহেব, ইকটু লেট কইরা হালাইলেন। ওহ সরি, ইকটু না, অনেক দেরি করে হাইছেন। এতক্ষণে হের আত্মা যেহানে থাকার কথা, সেহানে চইলে গেছে। ‘
যুবকটি এটুকু বলে থামল। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না ফারহান। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মেয়েটির দিকে তাকালেন। কিন্তু তা ক্ষণিকের মাঝেই ফিরিয়ে আনলেন যুবকটির দিকে। তা দেখে যুবকটি আবার বলে উঠল,
‘ স্যার, আমার এক্টিং কেমন? অস্কার পাব তো? ‘
ফারহাব ছেলেটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নজর বোলালেন। নিজের পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ড্রেস কোড দেখে বুঝতে পারলেন, ছেলেটা মোটামুটি পর্যায়ের শিক্ষিত। এক্টিং করতে বলার কথা বলে প্রকাশ করতে চাইছে, তার এক্টিংয়ের প্রতি ঝোঁক আছে।
‘ স্যার, দেখেন না, আফরান নিশু খুন করেও কী সুন্দর এক্টিং করে! আমারটা কি তার মতো হয়েছে? ‘
ফারহান তখনও কিছু বললেন না। তিনি কেবল শুনে যাচ্ছেন ছেলেটার সব কথা। বুঝার চেষ্টা করছেন, তার হাবভাব। এতটুকু নিশ্চিত আছেন, এই ঘটনার পেছনে এই ছেলের একার হাত নয়। পেছনে আরও অসংখ্য লোকের হাত রয়েছে। আর তাদের ক্লু-ই ধরতে চেষ্টা করছেন তিনি।
‘ কিছু বলতাছেন না যে স্যার? এমন চুপ কইরা কী ভাবতাছেন? আমার খুনের ভিডিওটা কেমন হইছে? একটু রেটিং দিবেন না? থাক, আপনার রেটিং দিতে হইব না। আমি নিজেই জানি, ভিডিওটা একদম অস্থির হইছে। ইতোমধ্যে তো আমার সোনার ভায়েরা ভিডিও ভাইরাল করতেই ব্যস্ত হইয়া গেছে। তাছাড়া এখনও লাইভে এরকম খাসা মালের নগ্ন শইরলডারে দেখার লইগগা উৎসুক হয়ে আছে বহুত মানুষ।
সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে আছেন ইন্সপেক্টর ফারহান। অনেকটা যেন ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবে ঠান্ডা ও শীতল পরিবেশ। তার হাবভাব না বুঝার চেষ্টা করেই ছেলেটা বলল,
‘ খাসা মালটাকে না-হয় ফেসবুক লাইভে আইসা মারলাম। তইলে এবার লাইভে একজন ইন্সপেক্টরকে হত্যা করার একটা দৃশ্য হয়ে যাক? কী বলেন স্যার?’
কথাটি বলে যুবকটি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না।

টেবিলের উপর বসে থাকা অবস্থা থেকে অনেকটা উড়ে এসে হাতে থাকা ছুরিটা দিয়ে আক্রমণ চালাল। আঘাতের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বুদ্ধি খাটালেন ফারহান। ডাইভ দিয়ে ছেলেটির পেছনে চলে যাওয়ায় ছুরির আঘাত থেকে রেহাই পেয়ে যান। মেঝে থেকে উঠেই যুবকটির কাছে উপস্থিত হন। কিন্তু ততক্ষণে তার হাতে আরও একটা ছুরির মতো দেখতে পাতলা ধারালো অস্ত্র চলে এসেছে। পেছন ঘুরেই দুই হাতে থাকা ছুরি ও পাতলা ব্লেড জাতীয় অস্ত্রটি দিয়ে আক্রমণ চালায় ফারহানের দুই ঘাড়ে। বন্দুকটা আনলক করে মুহূর্তের মাঝে হোলস্টারে রেখে দুই হাত দিয়ে আগত আক্রমণ রোধ করেন। দুই হাত দিয়ে অনেকটা ক্রস আকৃতির বানিয়ে সেখানে আটকে ফেলেন যুবকটির অস্ত্র ধরা দুই হাত। যেন একটি ক্রস প্যাচে তার দুটি হাত আটকে গেছে। কিন্তু ফারহান তাকে দ্বিতীয় আক্রমণ করার সুযোগ দিলেন না। চোখের পলকে বুট পরা ডান পা দিয়ে আঘাত করেন যুবকটির বাম পায়ের হাঁটুর কার্নিশে। টাস করে একটা আওয়াজ হয়। যেন শব্দটা দুটো সমন্বিত হাড়ের মাঝে ভাঙন সৃষ্টির শব্দ। ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। পা বাঁকিয়ে অর্ধ বসা অবস্থায় বসে পড়ে।

তখনও ফারহানের দুই হাতের মাঝে যুবকটির দুই হাত আটকে রেখেছেন। ব্যথায় অনেকটা ছটফট করতে লাগল ছেলেড়া। কিন্তু তিনি ছাড়লেন না তার হাত। এভাবে কিছু মুহূর্ত চলতেই সেখানে টিম নিয়ে উপস্থিত হয় সাব-ইন্সপেক্টর সাইমুন। দ্রুত ঘরটির ভেতরে প্রবেশ করে তারা। নজরে আসে, ফারহান সাহেব আধবসা একটি যুবকের দুই হাত তার দুই হাতের মাঝে নিয়ে আটকে রেখেছেন। যুবকটির চেহারা আধো আধো দেখা যাচ্ছে। ব্যথায় ফরসা নাক-মুখ লাল হয়ে গেছে। দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয় তারা। দুজন হাবিলদার যুবকটিকে যেয়ে আকড়ে ধরে। ছেড়ে দেন ফারহান। তার হাতের মাঝে চাপা খেয়ে যুবকটি অনেক আগেই হাত থেকে অস্ত্র দুটো ছেড়ে দিয়েছে। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে তিনি তাকালেন টেবিলের কর্ণারে স্ট্যান্ডে ঝুলানো মোবাইলে। এখনও ফেসবুক লাইভ চলছে সেখানে। দূর থেকেই ভিউয়ের দিকে নজর যায়। প্রায় ষাট হাজারেরও অধিক লোক এই মুহূর্তে এই লাইভটি দেখছে। তার লুক দেখামাত্রই পুরো স্ক্রিনে লাভ রিয়েক্টের ছড়াছড়ি দেখতে পান। সাথে কমেন্টের বন্য। দ্রুত পা বাড়িয়ে স্ট্যান্ডে ঝুলন্ত অবস্থাতেই লাইভ অফ করে দিলেন। লাইভটা ডিলিট করতে যেয়েও কেন যেন লাইভটা ডিলিট না করে সেভাবেই রেখে দিলেন। তবে তার আগে প্রাইভেসি অনলি মি করে দিলেন। ফোনটা স্ট্যান্ড থেকে খুলে পকেট থেকে একটি এভিডেন্স প্যাকেট বের করেন। ইতোমধ্যে দুই হাতে গ্লাভসও পরে নিয়েছেন। ফোনটি বন্ধ করে এভিডেন্স প্যাকেটে পুড়ে রাখলেন। চারপাশে পাওয়া যাবতীয় সরঞ্জামাদি এভিডেন্স প্যাকেট বন্ধি করছে অন্যান্য পুলিশ সদস্য। সাব-ইন্সপেক্টরের দিকে নজর ঘোরালেন তিনি। আদেশ করলেন,
‘ সাইমুন, নিয়ে চলো। ‘ তার আদেশে সম্মতি দিলো সাইমুন।
‘ জি স্যার। ‘
ইন্সপেক্টর ফারহান আহমেদের কঠিন স্বরের কথা শুনে সে সম্মতি বিহীন পালটা প্রশ্ন ছোড়ার মতো দুঃসাহস দেখাল না। কিছুক্ষণ পূর্বেই তার এই পালটা প্রশ্নের কারণে ধমক খেয়েছে। এই মুহূর্তে আর খেতে চাচ্ছে না। তাই ছেলেটিকে গাড়িতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সাব-ইন্সপেক্টর এবং পুলিশ অফিসারগণ। তাদের পিছুপিছু নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ছুটলেন থানার উদ্দেশ্যে। তবে ছয়জন পুলিশ অফিসার সেখানে রেখে এসেছেন। তাছাড়া মৃত দেহটির জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও ফরেনসিক বিভাগের কয়েকজনকে সেখানে উপস্থিত হবার জন্য বলা হয়েছে। সাধারণের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে গাড়ি চালিয়ে দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট পর থানার সামনে এসে তারা থামল। থানা থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে অবস্থিত স্থান থেকে মূল ক্রিমিনালকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তারা। কিন্তু কেন যেন সন্তুষ্ট হতে পারলেন না ফারহান। তার বারবার মনে হচ্ছে, এখানে আরও কিছু ঘটনা আছে। আরও লোক যুক্ত আছে। কিংবা আরও বেশ কিছু ঘটনা আছে। যা তিনি জানেন না বা খেয়াল করেননি।

থানায় আসার আগেই মিডিয়ার কর্মীরা জড়ো হয়ে গেছে সেখানে। প্রত্যেকে লাইভ রিপোর্ট করায় ব্যস্ত। আসামি আটক করা পুলিশের গাড়িটি মিডিয়ার লোকেরা না আটকালেও ইন্সপেক্টর ফারহান আহমেদের গাড়ি ঠিকই আটকেছেন। বেশ কিছুক্ষণ হর্ন বাজালেন। কিন্তু হর্ণকে পাত্তা দেয়নি তারা। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নামলেন তিনি। থানার গ্রাউন্ডের ভেতরে নজর করলেন। সাব-ইন্সপেক্টর তার দিকে জিজ্ঞাসাসূচক চেহারার ভঙ্গি করে রেখেছে। ইশারায় আসামিকে থানার ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ দিলেন। আদেশ পেয়ে সবাই দ্রুত আসামিকে নিয়ে থানার ভেতরে চলে যায়।

ততক্ষণে তার আশেপাশে মিডিয়ায় প্রতিনিধিগণ ক্যামেরা এবং মাইক নিয়ে সবাই তার সামনে উপস্থিত। জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল হতে শুরু করে সদ্য শুরু করা নিউজ চ্যানেলের মাইক অবধি তার মুখ বরাবর তুলে ধরেছে। এরকম তরতাজা ব্রেকিং নিউজ প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলই চায়। প্রত্যেকেই চায় তাদের নিজস্ব টিআরপি বাড়িয়ে অন্যের থেকে এগিয়ে থাকতে। এরজন্য অনেক সময় দেখা যায়, ঘটনা যদি ঘটে এক ছটাক। তাতে রঙচঙ লাগিয়ে উপস্থাপন করা হয় পাঁচ-ছয় কেজি। মাইক সামনে রেখে একেকজন একেক প্রশ্ন করতে লাগলেন। কিন্তু বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়ে বললেন ফারহান আহমেদ,
‘ সবাই যদি একত্রে প্রশ্ন করেন, তবে এভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সক্ষমতা আমার নেই। তাছাড়া আমার হাতেও অধিক সময় নেই। এখন রাত বাজে…’ বাম হাত উঁচু করে ঘড়ির দিকে তাকালেন। পুনরায় বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ এগারোটা চল্লিশ মিনিট। প্রায় বারোটার কাছাকাছি। কাজেই অযথা সময় নষ্ট করবেন না। ‘
তটস্থ হলেও কিঞ্চিৎ শৃঙ্খলা মেনে চুপ হয়ে যায় সকল চ্যানেল কতৃপক্ষের প্রতিনিধিগণ।
প্রথম প্রশ্ন করে, ‘ স্যার, আপনি সেখানে উপস্থিত হলেন কীভাবে? ‘
অনেকটা চটে গিয়ে প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘ বলতে পারেন হলিউড মুভিতে দেখানো সুপারম্যানের মতো উড়ে উড়ে। আমি আবারও বলছি, অযথা অযাচিত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আমি কারও প্রশ্নের জবাব দেব না। ‘
তার কথা শেষ না হতেই আরেকটি প্রশ্ন করে বসে আরেক প্রতিনিধি,
‘ স্যার, লাইভে এসে খুন করার কারণটা কী? কেন সংঘটিত হলো এই খুন? ‘
প্রশ্ন শুনে রেগে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রশ্নের জবাব দিলেন,
‘ এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আসামির বয়ান ব্যতীত কিছু বলতে ব্যর্থ। ‘ এই বলে দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির উঠে পড়েন। পেছন থেকে অন্যান্য প্রতিনিধিদের ডাক শোনা গেলেও অগ্রাহ্য করে গাড়িতে উঠেন। গাড়ির আশপাশ ঘেরাও করলেও গাড়ির গ্লাস লাগানো থাকায় এই প্রচেষ্টা তাদের ব্যর্থ হয়। গাড়ির হর্ন বাজাতে বাজাতে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। এবার আর চ্যানেল প্রতিনিধিগণ আগের মতো অতটা ঘেরাও করে ধরেননি।পার্কিং লটে তিনিগাড়ি পার্ক করে রেখে চাবি হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন। দ্রুত পা চালিয়ে প্রবেশ করলেন থানার ভেতরে। একজন পুলিশ সদস্যকে প্রশ্ন করলেন,
‘ নিয়ে আসা আসামিকে কোথায় নিয়ে রেখেছ? আর সাইমুন কোথায়? ‘
প্রত্যুত্তরে পুলিস অফিসার জবাব দেয়,
‘ স্যার, বি ব্লক ৩ নাম্বার সেল। সাইমুন স্যারও সেখানেই আছেন। ‘

দুই.
পা বাড়ান পুলিশ অফিরের বলা নির্দিষ্ট স্থানে। এমতাবস্থায় পকেটে থাকা ফোন বেজে ওঠে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন হাতে তুলে নিলেন। স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘ wife ‘ নামে সেভ করা নাম্বার থেকে কল এসেছে। দ্রুত রিসিভ করে কানে তুলে নেন। বি ব্লক-৩ নাম্বার সেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ওপাশের মানুষের কথা শুনতে লাগলেন। ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
‘ পাপা, ইউ আর মাই সুপারম্যান ডেডি। ‘
একটু অবাক হন।
‘ মামুনি, তুমি এখনো ঘুমাওনি! বারোটা বেজে গেছে অলরেডি। কাল না তোমার স্কুল আছে? ‘
‘ তোমাকে টিভিতে দেখতেছিলাম পাপা। তাই এখনো ঘুমাইনি। ‘ মুগ্ধ করা এক টুকরো হাসির শব্দ শোনা গেল।
‘ মামুনি, তোমার আম্মুকে একটু ফোনটা দাও তো। ‘
‘ আচ্ছা পাপা। ‘
ওপাশ থেকে শোনা গেল, ‘ নাও, পাপা তোমার সাথে কথা বলবে। ‘
ভেসে এলো,
‘ হ্যাঁ বলেন। ‘
‘ রাহেলা, একটু সাবধানে থেকো। বাড়ির সব দরজা-জানালা আটকে রাখো। আর আমি সিকিউরিটি গার্ডকে বলে দিব, যেন একটু ভালোভাবে নিরাপত্তা দেয়। ‘ কথাগুলো অনেকটা চিন্তিত গলায় বললেন।
‘ আপনি এভাবে ভয় পাচ্ছেন কেন? কী হয়েছে?’
” তেমন কিছু না। আমার বসায় আসতে একটু দেরি হবে। এখনো অনেক কাজ বাকি। ঘর লক করে রেখো। আমার কাছে যেই চাবি আছে ওটা দিয়ে ভেতরে আসব। আর হ্যাঁ, কেউ দরজা খুলতে বললেও খুলবা না। ‘
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। এত চিন্তা করবেন না। ‘
‘ একটু সাবধানে থেকো। ‘

কল কেটে দিলেন। কিন্তু নিজের মনে শান্তি পেলেন না। মনে হচ্ছে, কিছু একটা ঘটবে। দুজন পুলিশ অফিসারকে ডেকলেন,
‘ দিলিপ,রনি ‘
পাশ দিয়েই যাচ্ছিল তারা। তার ডাক শুনে ইয়েস স্যার দ্রুত দাঁড়ায়।
‘ তোমরা আমার বাড়িতে যাও তো। আজকে রাতটা পাহারা দাও। আমার কেন যেন সবকিছু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিছু একটা ঘটবে বলে মন বলছে। এদিকে ধরে আনা আসামী অপর দিকে এই চিন্তা!’
স্যারের আদেশ অমান্য করল না তারা। প্রত্যুত্তরে বলল,
‘ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। আপনার বাড়ির সবকিছুর জিম্মা আমরা দুজনে নিলাম। ‘

বেরিয়ে পড়ে দুজন। অপর দিকে বি ব্লক ৩ নাম্বার সেলের উদ্দেশ্যে তিনি পুনরায় পা বাড়ান। কয়েকটা মোড় ঘুরতেই কাঙ্ক্ষিত সেলের সামনে চলে আসেন। জেলের ভেতরে আছে সাইমুন এবং আরও কয়েকজন অফিসার। তাকে দেখে সবাই স্যালুট জানায়। চেয়ার টেনে যুবকটির সামনে বসে পড়লেন। ছেলেটির দুই হাতে হাতকড়া পরা এবং দুটো হাতই টেবিলের উপর রাখা। মাথার উপর জ্বলছে একটি লাল আলোর বাতি। যা দিয়ে পুরো সেলকে কিছুটা অন্ধকার মুক্ত করতে সক্ষম।
‘ ঘটনার সত্যতা শুরু কি তুই করবি নাকি আমরা ভিন্নভাবে শুরু করব। ‘
চড়াও গলায় কথাটি বললেন ফারহান আহমেদ। চোখ থেকে যেন তার লাভা গলিতে হয়ে পড়ছে। টগবগে লাল চোখ দেখলে যে কেউ ভয় পেতে বাধ্য।

— চলবে —

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here