খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,ত্রয়োদশ পর্ব
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর
একত্রিশ.
দ্রুত কন্ট্রোল রুমে কল করলেন অ্যাজেন্ট যাবেদ। গাড়ির নাম্বারটি বলে নির্দেশ দিলেন, দ্রুত এই গাড়িটির সমস্ত ডিটেইলস বের করে দিতে। তিনি যেন সময়ের সাথে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছেন। রাগ ঝড়ে পড়ছে চোখ-মুখে। কিন্তু তার এত রাগের কারণ ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না ফারহান। ভাবনায় মগ্ন না হয়ে ফুটেজ সংরক্ষণ করলেন আলাদা করেন। যেন হাতের কাছে রাখতে পারেন পরবর্তীতে এই অংশটুকু। তার সিনিয়র ততক্ষণে স্টোর রুম ত্যাগ করেছেন। তিনিও বসে থাকার থাকার বিশেষ কারণ খুঁজে পেলেন না। চেয়ার ছেড়ে উঠে বাহিরে বেরিয়ে এলেন। শুনতে পেলেন দরজার কাছে এসে তার সিনিয়রের কথোপকথন।
পরিত্যক্ত ঘর ছেড়ে বারিয়ে যেতেই সামনে পড়েছে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান। অ্যাজেন্ট নিজের সানগ্লাসটি চোখে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেলেন তার দিকে। সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ আপনি? ‘
প্রত্যুত্তরে লোকটি ভিন্ন নজরে দেখতে লাগল তাকে। প্রথম দেখায় মনে হবে, পরখ করছে দেখছে সে তার সামনে উপস্থিত মানুষটাকে। কিন্তু একটু পাশ থেকে দেখা চেষ্টা করলেই বুঝা যাবে, সামনের মানুষটির উপস্থিতিতে সে ভীষণ বিরক্ত। কাজের সময় ব্যাঘাত দেওয়া লোক তার একদমই পছন্দ নয়। তার এহেন ভঙ্গি দেখে পর্যালোচনা করে বুঝতে পারলেন অ্যাজেন্ট, লোকটি তার উপর ভীষণ রকমের বিরক্ত হয়েছে। এও বুঝতে পারলেন, সে তার কাজ নিয়ে প্রচণ্ড অকপট। নিজের কাজের প্রতি এরকম ভাব বিরক্তির ভাব দেখেই বুঝা যায়। এভাবে তাকে থামিয়ে রাখার বিষয়টা ভালো দেখাচ্ছে না। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান লোকটি বিরক্তি নিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল। কিন্তু তাকে থেমে যেতে হয়। তার ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার আগেই তার সামনে দাঁড়ানো লোকটি বলে ফেলল,
‘ আমি যাবেদ। তদন্তের নতুন অফিসার। ‘
সে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। সেও প্রথমেই ধরতে পেরেছিল, যখন লোকটাকে ফারহান স্যারের সাথে আসতে দেখেছে। এমনকি সামনে দাঁড়া করানো এবং চালচলন দেখে খুব সহজেই পর্যালোচনা করে বুঝা সম্ভব, তিনি কোনো বড়ো অফিসার হবেন। কিছু বলা দরকার তার। বিরক্তি সরিয়ে হাসিমুখে নিজের পরিচয় দিলো।
‘ আমি রাবি, ফরেনসিক বিভাগের প্রধান। ‘
প্রত্যুত্তরে তাকে যাবেদ নামের লোকটি যা বললেন, তা শুনে তিনি একটু ভড়কে গেল।
‘ জানি, আপনি যে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান তা এখানে পা রেখেই ধরতে পেরেছিলাম। কেবল নামটা জানা ছিল না। ‘
রাবি লোকটাকে এভাবে তাক লাগিয়ে দিতে পেরে একটু ভালোই লাগে। দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞতায় এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। গেট দিয়ে যখন তিনি ভেতরে প্রবেশ করছিলেন, তখন আরও একজন ছেলেকে রাবি নামের ছেলেটার দিকে ছুটে যেতে দেখেছেন। ছুটে গিয়ে কথা বলার ধরন, দেহভঙ্গিমা দেখে বুঝা যাচ্ছিল, ছেলেটি নতুন। এবং সে যেই লোকটির দিকে ছুটে গেছে তার দেহ এবং কথা বলার ভঙ্গি দেখেই বুঝে গেছিলেন, এই লোকটা সিনিয়র কেউ। হতে পারে সম্পূর্ণ টিমেরই প্রধান। ছেলেটাকে আর দাঁড় করিয়ে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে পোষণ করলেন না অ্যাজেন্ট। তাকে দাঁড় করানোর মূল পয়েন্টে চলে গেলেন।
‘ কোনোকিছু পেলেন? ‘
প্রত্যুত্তরে ছেলেটি বলল, ‘ না স্যার, এখনও তেমন কিছু পাইনি। ‘
হতাশ হলেন তার জবাব শুনে। কিন্তু নিরাশ না হয়ে বললেন,
‘ ঠিক আছে। আপনি আপনার মতো খোঁজ করতে থাকুন। পেলে জানাবেন। ‘
রাবি নামের ছেলেটি চলে গেল তার কাজে। তিনি কিঞ্চিৎ উচ্চস্বরে ডেকে উঠলেন ফারহান বলে। মুহূর্তের মাঝে তিনি এসে তার সিনিয়রের সামনে উপস্থিত। তাকে আদেশ করলেন,
‘ স্টোর রুম লক করে চলো, হসপিটাল থেকেই কেসের মূল সুরহা বের করতে হবে। ‘
আদেশ মোতাবেক কাজ করলেন ফারহান। পরিত্যক্ত ঘরটি আগের মতো বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লেন সিনিয়রের সাথে। তিনি জানেন না, সিনিয়রের মাথায় কী চলছে! কিন্তু তার মাথায় যা চলছে তার চেয়ে কয়েকশত গুণ ভালো কিছু ভাবছেন তার সিনিয়র তা সে নিশ্চিত। তিনি এখন নিজ ভাবনায় ব্যস্ত। কেসের দিকে মোটেও ফোকাস দিতে পারছেন না। এরকম দুটো ঘটনায় তাকে ভাবনার রাজ্য থেকে সংযোগ সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গাড়িতে চড়ে বসলেন দুজনে। গাড়ি স্টার্ট দিলেন তিনি। সিনিয়র তার পাশেই বসে আছেন। কিন্তু দুজনের মাঝে কোনোরকমে কথা হচ্ছে না। নীরবতার আগ্রাসনে কথা বলা হয়ে উঠছে না। অবশ্য বলার মতো তেমন কিছুই নেই। ফারহান তার মতো করে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। আচমকা তার সিনিয়রের ফোনে কল আসার শব্দ ভেসে উঠল। পকেট থেকে ফোনটি বের করে আনলেন অ্যাজেন্ট। নাম্বারটা তার পরিচিত। ফোনটা কানে তুলে নিলেন রিসিভ করে। কোনোকিছু বলার প্রয়াস করলেন না। ওপাশ থেকে ভেসে আসতে লাগল,
‘ স্যার, গাড়িটি একজন বিজনেসম্যানের। সপ্তাহখানেক আগে গাড়িটি তার চুরি হয়ে যায়। থানায় জিডিও করেছেন এ নিয়ে। ‘
কোনোকিছু বললেন না যাবেদ। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কেটে দিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন, খুনিরা কোনো সাধারণ মানুষ না। ক্রিমিনাল মাইন্ডের লোকজন। লোপ হোলগুলো খুব ভালো করেই ফিলাপ করে নিয়েছে। গাড়িটার খোঁজ যাতে না করা যায়, এরজন্য গাড়িটি চুরি করেছে তারা। সিসিটিভি ফুটেজ যাতে কিছু না আসে, তার জন্য প্রত্যেকটা ক্যামেরাকেই হ্যাক করে নিয়েছে। তবে এতটুকু তদন্তের ফলে এতটুকু বুঝতে পেরেছেন তিনি, খুনিরা একজন নয়। মোটেই একজন নয়। গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছেন তারা। পূর্বের মতো এখনও ভীড় জমেই আছে। কিন্তু এবার কেন যেন তাদের আর তেমন আগ্রহ নেই। মূলত আগ্রহ নেই নয়, কমবেশি সবাই সাময়িক বিরতি নিয়েছে। কেউ খাবার খাচ্ছে তো কেউ একে অপরের সাথে কথা বলছেন। হুট করে গাড়ি নিয়ে গেটের কাছে আসতে তেমনভাবে খেয়াল করেনি। যার কারণে ভীড়টা তাদের দিকে ঝুঁকেনি। গেট খুলে দিতেই গাড়ি নিয়ে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলেন। কয়েকজন এগিয়ে এলেন তাদের দিকে। কিন্তু তার আগেই গেট বন্ধ করে দিয়েছে সিকিউরিটি গার্ড। বিরক্ত হলো তারা। এরকম করে কতক্ষণ সহ্য করা যায়! গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত দুজনে ভেতরে ঢুকে গেলেন। তাদের ভেতরে যেতে দেখে ডিআইজি উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে এলেন তাদের দিকে। জিজ্ঞেস করলেন,
‘ আমার নাতিনের কী হয়েছে? ও কোথায়? তোমরা দুজনে কেন? ওকে কি পাওনি তোমরা?’
প্রত্যুত্তরে দুজনের কেউ কিছু বললেন না। ডিআইজি তার জবাব পেয়ে গেছেন। ভেঙে পড়লেন তিনি। কিন্তু সেদিকে ধ্যান দিলেন না অ্যাজেন্ট যাবেদ। তিনি এখানে যার জন্য এসেছেন সেই লক্ষ্যে কাজ করতে লাগলেন। পা বাড়ালেন ওটির দিকে। ডাক দিলেন ভেতরে থাকা ডাক্তারদের। তার ডাক শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন তারা। তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ আমার সাথে আসুন। ‘
তার কথা শুনে ভীষণ বিরক্ত সবাই। আর তা তাদের চেহারা দেখেই বুঝতে পেরছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই আর তাদের হাত থেকে।
‘ আমাদেরও কিছু করার নেই। কো-অপারেট করা ছাড়া কারও হাতেই কোনো অপশন নেই। ‘
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো আগত ডাক্তারটি। তা দেখে যাবেদ পুনরায় বললেন,
‘ আপনাদের সাথে যে কয়জন ডাক্তার আছেন, সবাই আসলে ভালো হয়। ‘
অনুভ করতে পারলেন, পেছনে ফারহান এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পাত্তা দিলেন না তিনি। ডাক্তারগণ তার সাথে একটা প্রাইভেট রুমের দিকে যেতে লাগলেন। অ্যাজেন্ট ছাড়াও ফারহান তাদের সাথে যাচ্ছেন। উপস্থিত সবাই কিছুই বুঝতে পারছে না, কী হচ্ছে আর কী করতে চাচ্ছেন অ্যাজেন্ট। তাদের দিকে পাত্তা দেওয়ার মতো সময় অবশ্য তার নেই। কাজেই নিজের কাজ করতে লাগলেন তিনি। ডাক্তারদের নিয়ে একটা সম্পূর্ণ ফাঁকা রুমে গেলেন। এখানে অবশ্য নিয়ে এসেছে ডাক্তাররাই। চারপাশটা বেশ নির্জন। তেমন কোনো কোলাহল আসছে না। এসি অন করে দেওয়া হয়েছে। চারিদিক আলোয় আলোকিত একটি কক্ষ। টেবিলের উপরে একটা ত্রিকোণ আকৃতির ছোট্টো বক্সের মাঝে ডা. নয়ন লেখা। বুঝতে পারলেন, কক্ষটি একজন ডাক্তারের কক্ষ কিংবা চেম্বারও বলা যায়। কিন্তু তার গবেষণা সেদিকে দীর্ঘ না করে সরাসরি পাঁচজন ডাক্তারের দিকে ছুঁড়ে দিলেন।
‘ আপনারা প্রথমে অপারেশনে হেলামি দিলেন কেন? কী সমস্যা হয়েছিল? কেউ বাধা দিয়েছিল অপারেশন করতে?’
প্রশ্ন শুনে উপস্থিত ডাক্তারগণ চমকে উঠল। এই ভয়টাই যেন এতক্ষণ মনের মাঝে বাজছিল। তাদের চোখ-মুখ দেখে বুঝতে পারলেন অ্যাজেন্ট যাবেদ, বড়োসড়ো কোনোকিছু অবশ্যই হয়েছে। নতুবা প্রত্যেকের চেহারায় একটা ভয়ার্ত ভাব ফুটে উঠত না। তবে সবচেয়ে ভয়ার্ত চেহারা একজনের বেশি। চারজনের চেয়েও বেশি। এও বুঝতে পারলেন, এদের সবার থেকে এই ডাক্তারের অবস্থা খারাপ বেশি। অর্থাৎ প্রধান সমস্যা হয়েছে তারই। প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তাকে উদ্দেশ্য করে।
‘ আপনার নাম?’
জবাবে লোকটি কম্পিত কণ্ঠে বললেন,
‘ নয়ন ‘
অ্যাজেন্ট বুঝতে পারলেন, এই চেম্বারের মালিক এবং হেড সার্জন তিনিই। প্রশ্ন রাখলেন তার কাছে।
‘ কী হয়েছে? খুলে বলুন আমাদের কাছে। এভাবে চুপ করে থাকলে সমাধান কি আসবে? ‘
ফারহান চুপচাপ শুনছে এবং দেখছে তার সিনিয়রের কাজকর্ম। তার সিনিয়রকে এতটা নরম হতে আগে কখনোই দেখিনি। ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি, এই তিন বছরে কি এমন হয়ে গেছেন? নাকি এখনও আগের মতোই আছেন কেবল এখন নরম হয়েছেন! অনেক্ষণ থেমে থাকার পর ডা. নয়ন তার সহযোগিদের সহসায় বলতে শুরু করলেন,
‘ গতকাল রাতে আমার একটা অপারেশন ছিল। তাই দুইটার বেশি বেজে যায়। আচমকা দুইটার দিকে আমার ফোনে কল আসে। প্রাইভেট নাম্বার নামে নাম্বারটি শো করছিল। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে কল রিসিভ করি। ‘
থেমে যান তিনি। ঢোক গিলেন। নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার বলতে আরম্ভ করেন, ‘ কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আমার ছেলের কথা শুনতে পাই। অনেকটা চিৎকার স্বরে। খানিকটা খটকা লাগে। তখনই একটা কেমন রোবটিক কণ্ঠে কেউ একজন বলতে থাকে, তোর ছেলে আমাদের কাছে। যদি আমাদের কথা না শুনিস, তবে তোর ছেলেকে হারাবি। প্রথমে ঘাবড়ে গেছিলাম। পরে জানতে চাই, কী করতে হবে! তখন যা বলে, শুনে নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে!’
পানির বোতক বারিয়ে দিলেন ফারহান। ডেস্কের নিচেই একটা পানির বোতল নজর আসছিল তার। বোতলটা তুলে দিয়ে দেন ডাক্তারের দিকে। নয়ন পানি দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করেন,
‘ বলে, কিছুক্ষণ পর তোদের থানার ইন্সপেক্টর একটা মেয়েকে নিয়ে যদি হাসপাতালে আসে, তবে সেই মেয়েটাকে ট্রিটমেন্ট করবি না। তবে ভাবমূর্তি রাখবি, চিকিৎসা চলছে। কী বলেছি, বুঝতে পেরেছি? যদি একটু নড়চড় হয়, তবে তোর ছেলের মরা লাশ তোর বাড়ির সামনে মিলবে। এর কিছুক্ষণ পরেই ফারহান স্যার তার স্ত্রীর রক্তাক্ত শরীর নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু নিরুপায় থাকার কারণে প্রথমে অমন নাটক সাজাতে হয়। ‘
ফারহানের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কিন্তু তাকে থামার কোনো সময় না দিয়ে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
‘ তো আবার কেন সঠিক চিৎসার কার্য চালু করলেন? ‘
প্রশ্নটি শুনে নয়ন এবার মোটেও ঘাবড়াননি। যেন এই প্রশ্নটি শ্রবণের জন্য তার মন এবং মস্তিষ্ক প্রস্তুত ছিল। জবাবে খুব সংক্ষিপ্তাকারে বললেন,
‘ ডিআইজি আর ডিসি স্যারকে দেখার পর আর হেলামি করা সাহস পাইনি। এমনিতেই একজন ডাক্তার আমি। তার উপরে একজন মানুষের জীবন-মরণ খেলা চলছে। সেখানে শুধু নিজ স্বার্থটা দেখলেই তো আর হয় না। এগুলো চিন্তা করেই ছেলের কথা, ব্যথা ভুলে অপারেশনের কাজ শুরু করি। ‘
যাবেদ তার জবাব পেয়ে গেছেন। ডাক্তারের ফোন নাম্বার নিয়ে তাদের সবাইকে বিদায় জানালেন। এবং এও জানালেন, খুব শীঘ্রই ডা. নয়নের ছেলেকে ফিরিয়ে আনবেন।
বত্রিশ.
হাসপাতালের মূল গেইট খুলে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকগণ হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ গেইটের থেকে স্বল্প নেমে ছাউনির নিচে কান্নারত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন ফারহান। তারপাশে কাঁদছেন ডিআইজি মারুফ হোসেন। তাদের কান্নার কারণ জানতেই এতটা ভীড়! সবাই যেন মাইক তুলে দিচ্ছে তাদের সামনে। ফারহান বেশ কিছুক্ষণ কান্নার পর কিছুটা আস্বস্ত হলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করলেন। তাদের প্রধান প্রশ্নই হলো, তার কান্না করার কারণ কী! প্রত্যুত্তরে বলতে আরম্ভ করেন,
‘ আমার স্ত্রী রাহেলা একটু আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আপনারা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করবেন। ‘ আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি। তার শ্বশুরের কাঁধে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শ্বশুরও তার জামাইকে ধরে কেঁদে দিলেন। উপস্থিত পুলিশগণ তাদের দুজনকে ভীড় থেকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়। ততক্ষণে উপস্থিত সকল মিডিয়া কর্মী তাদের কর্মে লিপ্ত হয়ে গেছেন।
‘ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন ইন্সপেক্টর ফারহানের স্ত্রী রাহেলা। ’ এরকম টাইটেল দিয়ে খবর প্রচার শুরু হয়ে গেল। মুহূর্তের মাঝে একটা সরব শুরু হয়ে গেল। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সবাই যেন নতুন একটা খবর পেলেন। পাশাপাশি নিজেদের টিআরপি বাড়ানোরও বিশেষ মোক্ষম সুযোগ এটি। ঘণ্টাখানেকের মাঝে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ল খবরটি। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটে আড্ডার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠল এটি।
‘ চলবে ‘