খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,তৃতীয় পর্ব

0
410

খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,তৃতীয় পর্ব
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর

আট.
পড়ে থাকা লাশ দুটোর আশেপাশে চারজন ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার ঘুরঘুর করছে। হাতে গ্লাভস পরে পাউডার জাতীয় দ্রব্যাদি দিয়ে কিছু একটা করছেন তারা। দুজন সিভিল পুলিশ অফিসার ক্যামেরা দিয়ে লাশের চারপাশের ছবি তুলছে। যেগুলো পরবর্তীতে স্বল্প হলেও ক্লু খুঁজতে সাহায্য করবে। কিন্তু সবচেয়ে অবাককর বিষয় হচ্ছে, গতকাল রাতে এত পরিমাণে বৃষ্টি হলেও সকাল থেকে পূর্বাকাশ থেকে সূর্য উদয় হয়ে পশ্চিমাকাশের দিকে ছুটছে। পরিবেশ দেখলে বুঝার ক্ষমতা নেই, গতকাল রাতে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে।
তাদের আশপাশে হাঁটছে ইন্সপেক্টর ফারহান আহমেদ। আচমকা একটা জুতার ছাপের দিকে নজর পড়ে তার। দ্রুত জুতার ছাপের দিকে এগিয়ে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়েন। পকেট থেকে অ্যাপেল কোম্পানির লাস্ট মডেলের ফোনটা বের করে ক্যামেরা অন করেন। জুতার ছাপটা স্পষ্ট আকারে খুব কাছ থেকে ছবি তুললেন। বসা থেকে দাঁড়িয়ে ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে লক করে পুনরায় পকেটে রেখে দিলেন। এগিয়ে গেলেন সাইমুনের কাছে। বেশ কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব চলল। এটা যেন পুলিশের কর্মের সাথে মিশে আছে। সবকাজে তাদের একটু না একটু দেরি হবেই। কিন্তু এই বিষয় বিন্দু পরিমাণ তাড়া দেননি ইন্সপেক্টর। নো এন্ট্রি এড়িয়া থেকে বেরিয়ে পড়লেন। গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে ফেললেন। ড্রাইভিং সিটে বসে পা দুটো বাহিরে রেখে বসে পড়লেন। চোখ দুটো দুবার আলতো করে পলক ফেলেন। পাশাপাশি দুটো বড় বড় শ্বাস নিয়ে চেষ্টা করলেন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার। মাথা ঠান্ডা করে ক্লু খুঁজতে চেষ্টা করছেন তিনি। বাহ্যিক দিকে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান নেই। কল্পনায় একের পর এক সূত্র এবং প্রশ্ন তৈরি করছে। প্রত্যেকটা মার্ডার কেসের সময় মার্ডার স্পটে এসে একই কাজ করেন তিনি।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্ব শেষ হলে একটা মৃত দেহ অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো। এমতাবস্থায় সাংবাদিকরা দৃশ্যটা দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে ইতোমধ্যে হুলুস্থুলে কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছে। সামাল দিচ্ছে পুলিশ অফিসারগণ। কিন্তু তাদের এত বড় বাহিনির কাছে গোটা পনেরো পুলিশ কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যেন তাদের ঠেলেই অ্যাম্বুলের ভেতরের দৃশ্য তুলবে। এমতাবস্থায় অনেকটা হন্তদন্ত হয়ে সাইমুন এসে উপস্থিত হয় ইন্সপেক্টরের সামনে। অপরদিকে সে এখনো তার ভাবনার ঘোরে ব্যস্ত। কী হচ্ছে আশেপাশে সেদিকে ধ্যান নেই! অনেকটা চিৎকার স্বরে হেঁকে উঠল সাইমুন,
‘ স্যার….! ‘
হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। দ্রুত ঘোর ভেঙে সামনের দিকে তাকালেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাইমুন। চোখমুখে ক্লান্তির ছাপ। চোখের ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলেন তার কাছে,
‘ কী হয়েছে? ‘
উত্তরে সাইমুন বলল,
‘ স্যার, একটু ওইদিকে দেখুন। ‘
অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ডান হাত দিয়ে ইশারা করল। নজর ঘুরাল সেদিকে। অবস্থা দেখে নিজেই ভড়কে গেলেন।
‘ স্যার, কিছু একটা করুন। ‘ একটু তাড়া প্রদান করে বলল সাইমুন।
‘ নেক্সট স্টেপে যাবার ওয়ার্ন করো। না মানলে স্টেপ পালন করো। ‘ স্বাভাবিক স্বরে বললেন তিনি।
‘ ঠিক আছে স্যার। ‘

সাইমুন ছুটে গেল তাদের ভ্যানে। সাথে আরেকজন অফিসারকে ডেকে নিল সাথে। কিছুক্ষণ পরই ফিরে এলো; কিন্তু তারা দুজন খালি হাতে গেলেও খালি হাতে ফেরেনি। সাথে করে নিয়ে এসেছে লাঠি। দুজনের হাতে প্রায় গোটা পনেরোর বেশি লাঠি হবে। ভিড়ের কাছে যেয়ে প্রত্যেক অফিসের হাতে একটি করে লাঠি তুলে দিল। সকল সাংবাদিক এবং মিডিয়ার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল সে।
‘ উপর মহল থেকে আপনাদের শেষবারের মতো ওয়ার্ন করতে বলা হয়েছে এবং না মানলে নেক্সট স্টেপ তথা লাঠি চার্জ করার অর্ডার এসেছে। আপনারা যদি আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে না দেন; তবে আমরা অর্ডার ফলো করতে বাধ্য হবো। এটাই আপনাদের জন্য লাস্ট ওয়ার্নিং। এরপর কেবল অর্ডার ফলো করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো অপশন থাকবে না। তাই আবারও বলছি, আমাদেরকে আমাদের মতো কাজ করতে দেন। ‘

কথা শেষ করতে নজর করে দেখল, অধিকাংশ লোক পেছনে হটেছে। সবার মনেই আঘাতের ভয় বিরাজ করছে। চ্যানেলের টিআরপি বাড়াতে যেয়ে জখম হতে কেউই চাইবে না। কিন্তু একজন এগিয়ে গেলে আরও দশজন প্রতিযোগিতা করার জন্য এগিয়ে যাবার প্রবণতা আছে তাদের মাঝে। কিন্তু এই মুহূর্তে সকল প্রবণতাকেই দমিয়ে দিয়েছে তারা। নয়তো হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে স্ট্রেচে করে পরবর্তী মৃত দেহটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেয়। এবার আর পূর্বের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। দূর থেকে দাঁড়িয়েই সবাই রিপোর্ট করছে। কিন্তু তবুও পুলিশগণ হাতে লাঠি নিয়ে তাদেরকে ভেতরে আসতে বাধা প্রদান করছে। মৃত দেহ দুটো অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিতেই দুজন ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চলে যায়; এবং বাকি দুজন সামনে, ড্রাইভারের পাশের সিটে চলে যায়। বড় অ্যাম্বুলেন্স হওয়াতে কোনো ভোগান্তি নেই তাদের। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ড্রাইভার গাড়ি চালু করে ছুটে চলে হাসপাতালের মর্গের উদ্দেশ্যে।

লাঠি হাতে পুলিশ অফিসারগণ ফিরে আসে তাদের ভ্যানে। লাঠি হাতে ভ্যানে সবাই উঠে পড়ে। চালক গাড়ি চালু করে দিল। সাইমুন পা বাড়িয়ে তাদের গাড়ির কাছে চলে আসে। নজরে আসে তার, এখনো ফারহান আহমেদ গভীর মনোযোগে কিছু একটা ভাবছেন। মৃদু স্বরে ডেকে উঠে সে। হতচকিত হয়ে সারা দেন তিনি।
তা দেখে বলতে লাগল সাইমুন,
‘ স্যার… যাবেন না? তাছাড়া এত কী ভাবছেন? ‘
জবাব দিলেন না তিনি। গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে গিয়ে অপর পাশের গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়েন। জবাব না দেয়াতে অবাক বা মন খারাপ করল না সাইমুন। বিষয়টা তার কাছে খুব স্বাভাবিক। অধিকাংশ সময়ে তার থেকে উত্তর পায় না সে। বেশি ভাবাভাবি না করে গাড়িতে চড়ে বসে। এক্ষণে সাংবাদিকদের নজরে এসেছে তারা। প্রত্যেকে লাইভ নিউজ করায় ব্যস্ত ছিল। তাই তাদের দিকে খেয়াল করেনি। একজন রিপোর্টারের নজরে পড়তেই তাদের দিকে ছুট দিয়েছে। তা দেখে বাকিরাও ছুটে এসেছে; কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি স্টার্ট করে ফেলেছে সাইমুন। গাড়ি চালিয়ে দিলেও একটু সামনে আগাতেই বিশাল মিডিয়ার লোকেদের ভিড়ের মাঝে পড়তে হলো। হর্ন বাজাতে থাকল সে। সাথে গাড়ি অল্প অল্প করে আগাতে লাগল। কিন্তু সাংবাদিকরাও তাদের যেন না ছাড়ার পণ নিয়েছে। এ দেখে ফারহান আহমেদ আদেশ করে বললেন,
‘ তুমি হর্ন দিয়ে গাড়ি চালাও। যে চাপা পড়ার পড়ুক। ‘
আদেশ শুনল সে। বাহির থেকে রিপোর্টাররা স্যার স্যার করে মুখের ফেনা তুলে ফেলছে। গাড়ির থাই প্রথম থেকেই লাগানো। তাই বাহিরের আওয়াজ ভেতরে খুব একটা পৌঁছাচ্ছে না। কিন্তু যা আসছে সেদিকে ধ্যান না দিয়ে হর্ন দিয়ে গাড়ি স্বল্প গতিতে চালাতে ব্যস্ত সাইমুন। বাধ্য হয়ে গাড়িকে সাইট দিয়েছ তারা। সাইট পেয়ে গাড়ি যেন জোরে একবার কেশে উঠল। এরপর ছুটলো বাতাসের বেগে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ভিড়কে দূরে ঠেলে উঠে এলো মেইন রোডে।
মুখ খুলে বলতে লাগলেন ফারহান আহমেদ,
‘ আজ-কাল সাংবাদিকগুলো বড্ড উগ্র হয়ে উঠেছে। তাদের আচরণগুলো মোটেও ভালো বার্তা বহন করে না। ‘
কোনোকিছুই বলল না সাইমুন। গাড়ি চালানোতে সম্পূর্ণ ধ্যান তার। বেশ কিছু সময় তাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি। আচমকা সাইমুনকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন ফারহান,
‘ আচ্ছা তোমার কী মনে হচ্ছে? এমপি সাহেব আর ইন্সপেক্টর রবিনের মৃত্যুর পেছনের কারণ কী? তাদের দুজনকে কি কেউ খুন করেছে? নাকি দুজনেই নিজেদের মাঝে নিজেরাই বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে? আর যদি তা না হয় তবে তাদের খুন করল কে? বিপরীত দলের লোকজন? ‘ শেষের প্রশ্নটা একটু সন্দের দৃষ্টি নিয়ে করলেন। কেন না আমাদের দেশে এই ঘটনাটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। ক্ষমতার জন্য বিপরীত দলের লোকটাকে খুন বা গুম করা খুবই কমন ব্যাপার।
উত্তরে সাইমুন কিছুটা সংকোচিত মনে বলল,
‘ আমার মনে হচ্ছে তাদের দুজনের মাঝে বন্দুক যুদ্ধ হয়েছিল। এবং হাতে ধরে রাখা বন্দুক এটাই প্রমাণ করছে। হয়তো কোনো একটা বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আর এতে করে ক্ষেপে গিয়ে দুজনেই বন্দুক তুলে ফায়ারিং করে। এবং আমাদের মাঝে একত্রে ফায়ার করার প্রবণতা খুব বেশি। তাছাড়া ভিন্ন কিছুও হতে পারে। ‘ একটু সন্দেহ রেখে কথাটি বলল সে।
‘ কী? ‘ মুহূর্তের মাঝে প্রশ্ন করে বসলেন ফারহান।
তার প্রশ্নের গতি দেহে একটু সংকোচিত হল সাইমুন। তবু উত্তর দিল,
‘ অথবা তাদের মাঝে যে কেউ একজন আগে গুলি ছুড়েছে। এবং যাকে প্রথম গুলি করা হয়েছে, সে হয়তো গুলিবিদ্ধ হতে তার বন্দুকের ট্রিগার চাপ দিয়েছে। এতে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ‘
‘ হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি…..’ পুরো কথা শেষ করতে পারেননি। তার আগেই প্রশ্ন করে বসল,
‘ কী? ‘
প্রত্যুত্তরে হাসতে হাসতে বললেন,
‘ আমি কী ভাবছি তা আমিই জানি না। ‘ একটা হাসি দিলেন। পুনরায় বললেন, ‘ যাক, তুমি এবার গাড়ি চালানোর দিকে ধ্যান দাও। ‘

মিনিট পঁয়তাল্লিশ কিংবা তারচেয়ে কিছু স্বল্প সময় গাড়ি চলতে থানার দোরগোড়ায় পৌঁছে তারা। কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলেন ফারহান আহমেদ। কদম বাড়ালেন থানার ভেতরে। আপন কক্ষে ফিরে গেলেন। অপরদিকে সাইমুন গাড়িটা পার্কিং লটে পার্ক করে ফিরল। প্রবেশ করল থানার ভেতরে। তাকে দেখে পাশ থেকে একজন পুলিশ অফিসার বলে উঠল,
‘ স্যার, আপনাকে বড় স্যার তার রুমে যেতে বলেছে। ‘
প্রত্যুত্তরে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। ‘

পা বাড়াল ইন্সপেক্টরের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজার কাছে গিয়ে নক করল। ভেতর থেকে আসার অনুমতি দিলেন তিনি। অনুমতি পেয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। প্রিন্টিং মেশিন চলার আওয়াজ তার কানে ভেসে এলো। নজর করে দেখল, চেয়ারে বসে ডেস্কের উপর রাখা কম্পিউটারে কিছু একটা করছেন ফারহান আহমেদ। পেছনে রাখা প্রিন্টিং মেশিন থেকে ছবি বেরিয়ে আসছে। তার সামনে গিয়ে সে উপস্থিত হতে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
‘ বসো.. ‘

কিছু বলল না সে। ভালো করেই তার জানা আছে, কাজের সময় অযথা আলাপ মোটেও পছন্দ করেন না তিনি। তাই তাকে কাজ করতে দেখে কিছু না বলে চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়ে। কিছু সময় পর প্রিন্টিং মেশিনটা তার আওয়াজ বন্ধ করে দেয়। এবং প্রমাণ করে, সে এখন আর কাজ করছে না। ফারহান আহমেদ চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন। প্রিন্ট করা ছবিগুলো হাতে নিয়ে বাম পাশে রাখা বোর্ডের দিকে এগোন। অত্যাধুনিক প্রলেপ দিয়ে বানানো হয়ে এই বোর্ডটি। পেছনে কাচ হলেও তা বেশ মজবুত। তাছাড়া বোর্ডে একধরণের আস্তরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যার হেতু কোনো ছবি টাঙাতে হলে কেবল রাখলেই লেগে থাকে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলো বোর্ডে ঝুলালেন। এবং বাকিগুলো বোর্ডের নিচের অংশে রেখে দিলেন।
সবার উপরে ঝোলালেন দুজনের মৃত দেহ দুটো। এবং মাঝে একটি দাগ দিয়ে নিচে ছোট্ট করে লিখে দিলেন ফাইভ মিটার। অর্থাৎ মার্ডার স্পটে মৃত দেহ দুটোর মাঝে পাঁচ মিটারের দূরত্ব ছিল। দুজনের ধরে রাখা বন্দুকের ছবি দুটো ঝোলালেন। সাথে ঝোলালেন উভয়ের গুলিবিদ্ধ স্থান। এবং প্রত্যেকটি ছবির নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে নামের প্রথম অক্ষর লিখে দিচ্ছেন। যাতে আগামীতে বুঝতে অসুবিধা না হয়, কোনটি কার ছবি। আরও দুটো ছবি ঝুলালেন। তবে মাঝে বেশ কিছু স্থান রাখলেন। ছবি দুটো মৃত দুজনের জুতোর তলা। ছবির নিচ অংশে নামের প্রথম অক্ষরও লিখে দিলেন। সবশেষে ঝোলালেন তার মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিটা। একটা বুট জুতার ছাপের ছবি। ছবিটি রাখলেন আগের ছবি দুটোর ফাঁকা স্থানে। তবে আগের ছবিগুলোর চেয়ে একটু নিচ দিকে। শেষে ঝোলানো ছবিটির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা সিনিয়র অফিসারের কাজ দেখছিল সাইমুন। কিন্তু সিনিয়রের শেষ ঝোলানো ছবিটা দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠে। নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করল,
‘ স্যার… এই ছবি এখানে কেন? এটা কার জুতার ছাপ? আর এটা কোথায় পেলেন? ‘ উদ্বিগ্নতা কণ্ঠে ছাপ পাচ্ছে।
‘ স্পটেই পেয়েছি। এবং এটাও জানি, এই জুতার ছাপটা আমাদের কারও নয়। এত সূক্ষ্ম ছাপ পড়েছে যে, কারও নজরেই আসেনি। আমি যখন কিছু একটা দেখার জন্য মাটিতে একধ্যানে তাকিয়ে থাকি, তখন এটা দেখেছিলাম। সাথে সাথে ক্যাপচার করে নিয়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে আমাদের অনেকগুলো ক্লু লোপাট হয়ে গেছে। নয়তো কিছু ক্লু পাওয়া যেত। ‘ একটু থামলেন। চেয়ারে ফিরে বোর্ডের দিকে মুখ করে বসে কিছু একটা ভাবছিলেন। আচমকা তার মাথায় প্রশ্ন এসে ভর করে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নটা সাইমুনকে করে বসেন।
‘ আচ্ছা.. তারা দুজন এই বৃষ্টির রাতে ওই জঙ্গলে কী করছিল? ‘
‘ আমিও তো তাই ভাবছি। এই বৃষ্টির মাঝেও তাদের সেখানে কী কাজ ছিল? ‘ অজানা ভাব করে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ এক কাজ করো তো…। তাদের দুজনের বিগত সাত দিনের কল লিস্ট বের করো। এবং সিম কোম্পানির কাছে বলো, এই সাত দিনের মাঝে তাদের দুজনের মাঝে যা যা কথা হয়েছে তার একটা কল রেকর্ড ফাইল যেন তাদের ডেটাবেস থেকে পাঠায়। দ্রুত। ‘ ঘড়ির দিকে তাকালেন।
‘ এখন বাজে বারোটা চল্লিশ। একটা বাজার আগে যেন দুটো ফাইল আমার টেবিলে পাই। মনে থাকে যেন। ‘ কাজের প্রতি প্রচন্ড রকম ঐকান্তিক হয়ে আদেশ করলেন।
‘ ঠিক আছে স্যার। ‘ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে কথাটি বলল। দ্রুত ইন্সপেক্টরের রুম থেকে প্রস্থান করে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। এখনো যে অনেক কাজ বাকি।

নয়.
চারদিকের অন্ধকার এবং নিস্তব্ধতা প্রমাণ করছে এখন গভীর রাত। আলখাল্লা পরিহিত লোকটি পুনরায় বোর্ডের কাছে উপস্থিত হলেন। হাতে আবারও একটি রেড মার্কার। প্রথম দুটো ছবিতে ক্রস চিহ্ন এবং পরের ছবিটাতে আছে এমপি রজবানের ছেলে সাইদের। রেড মার্কারের ক্যাপ খুলে ছবির ডান কর্ণারের উপর রাখেন। ডান কর্ণার থেকে নিচের বাম কর্ণার অবধি একটা দাগ টানলেন। এবং মার্কারটা সরিয়ে পুনরায় উপরের বাম কর্ণার থেকে নিচের ডান কর্ণার অবধি একটা দাগ টানলেন। আচমকা অট্ট হাসিতে মেতে উঠলেন। যেন কিছু একটা মনে পড়ে তার প্রচুর পরিমাণে হাসি আসছে। হাসি থামিয়ে দুই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি তুললেন। কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন পরবর্তী ছবিটির দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় মুচকি হাসি দিলেন। কিন্তু হাসিতে লেগে রয়েছে অসম্ভব রকমের ধূর্ততা।

— চলবে —

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here