খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,পর্ব-০৪,০৫
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর
চতুর্থ পর্ব
দশ.
দুপুর দুটো বাজার আগেই ফাইল নিয়ে ফিরেছে সাইমুন। একটি ফাইলের মাঝে দুটি কাগজ। হাতে ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইন্সপেক্টর ফারহান আহমেদের সামনে। তিনি এখন ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।
‘ তোমার আর কতক্ষণ লাগবে? ‘ ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন। কথা বলছিলেন ফরেনসিক বিভাগের হেড রাবির সাথে।
‘ স্যার, দুটো বডি। পোস্টমর্টেম করার পর আরও কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ থাকে। তা তো আপনার জানাই আছে। আনুমানিক সময় দিতে গেলে রিপোর্ট কাল পাবেন। ‘ একটু ভেবে উত্তর দিল লোকটি।
‘ আচ্ছা কাল বলেছ, কালই যেন হয়। তুমি আজকে রাতের মাঝে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে ফাইল রেডি করে রাখবা। আমি আগামীকাল অফিসে আসার সময় তোমার থেকে ফাইল নিয়ে আসব। আর তোমাকে যেই কাজটা করতে বলছিলাম, তা তুমি করেছ? ‘
প্রত্যুত্তরে বলল,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার। আমি সবকিছু প্রস্তুত করেই রাখবনে। ‘ একটু থেমে পুনরায় বলতে লাগল,
‘ আপনি যেটা করতে বলেছেন, আমি তা দুটো থেকেই সংগ্রহ করে নিয়েছি। আপনাকে আগামীকাল ফাইলের সাথে তাও দিয়ে দেবনে। ‘ পুনরায় একটু থামে।
‘ কিন্তু স্যার….’ অর্ধ কথা বলে থেমে গেল সে।
‘ কিন্তু কী? ‘ ভ্রু-জোড়া কুঁচকে স্বরে একটু চাপ প্রয়োগ করে বললেন।
‘ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এই কেসটা নিয়ে অনেক ভোগান্তি আছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সম্পূর্ণ ক্রিয়েট না হলেও আংশিক থেকে ধারণা করা যাচ্ছে। ‘ একটু বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কথাগুলো বলল। কিন্তু কথাগুলো সম্পূর্ণ শুনতে পারেনি। টেবিলের উপর রাখা ল্যান্ড লাইনটা বেজে উঠেছে তখনই। সেদিকে নজর করতে দেখতে পায়, ফাইল হাতে টেবিলের সঙ্গে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সাইমুন। একটু অবাক হলেও চোখের ইশারায় তাকে পাশের চেয়ারে বসার আদেশ দিলেন।
‘ আচ্ছা রাবিন, আমি এখন কলটা রাখি। একটু ব্যস্ত আছি। তোমার সম্পূর্ণ কথা আমি কাল ফাইল নিয়ে আসার সময় এসব বিষয় বিস্তর আলোচনা করবনে। ‘ কলটা কেটে দিলেন।
‘ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার। ‘ এতটুকু বলতেও কানে ভেসে আসে কল ইন্ডের আওয়াজ। কিছু না ভেবে ফোনটা পাশে রেখে নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
দশ.
হাত থেকে আইফোন এক্স রেখে ল্যান্ড লাইনে হাত দিলেন ফারহান আহমেদ। তুলে নিলেন কানে। ওপাশ থেকে লাইনে আছেন ডিআইজি মারুফ হোসেন।
‘ স্যার আসসালামুয়ালাইকুম ‘
‘ অলাইকুম সালাম। তা কী অবস্থা? কী খবর কেসের? ‘
‘ স্যার, সবে সকল তথ্যগুলো একত্র করতেছি। কিন্তু যতটুকু একত্র করতে সম্ভব হয়েছি এই মুহূর্তে তা থেকে ভয়ানক দিক ইঙ্গিত করছে। ‘ একটু গাম্ভীর্য ভাব কণ্ঠে ফুটিয়ে বললেন ফারহান আহমেদ।
‘ কেন? কী খুঁজে পেয়েছ? ‘ চটজলদি প্রশ্ন ছুড়লেন।
‘ ডেথ স্পট এবং মৃত লাশের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি খুন। ‘ ভেবেচিন্তে প্রশ্নের জবাবটা দিলেন তিনি।
‘ কী বলো!’ একটু চমকালেন লোকটি। আস্বস্ত করার চেষ্টা করলেন তাকে। বললেন,
‘ জি স্যার। ‘
‘ কিন্তু নিউজ পোর্টালগুলো তো প্রকাশ করছে, তাদের মাঝে ফায়ারিং করে দুজনই ডেথ। ‘ চমকিত ভাব এখনো লোকটির কণ্ঠে প্রকাশ পাচ্ছে।
‘ জি স্যার, প্রথমে আমারও এমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ক্যাপচার করা ছবি এবং কিছু ক্লু দেখে এ বিষয় নিশ্চিত হতে পেরেছি, এটা নিজদের মাঝে ফায়ারিং করে মৃত্যু নয়, বরং তাদেরকে সেখানে খুন করা হয়েছিল। এবং খুনি খুব ধূর্ততার সাথে বিষয়টি সামলেছে। বুঝাই যাচ্ছে প্রপার প্ল্যানিং করে কাজটা সম্পাদনা করা হয়েছে। ‘ চেহারার ভঙ্গি কিঞ্চিৎ পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আকৃতিটা কীসের তা ধারণা করা যাচ্ছে না। না রাগ না চিন্তিত আর না সাধারণ। সকল অনুভূতির সংমিশ্রণ বলা চলে।
‘ আচ্ছা যেটাই হোক, দ্রুত কেসটা সমাধান করে ক্লোজ করো। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ আইজি স্যারকে প্রেশার দিচ্ছেন। আর আইজি স্যার তা আমার উপর ঝাড়তেছেন। আর নিউজ পোর্টালের লোকজন তো আছেই। নতুন একটা ইস্যু পেয়েছে তারা। নেতা-কর্মীরা মরলে এই একটা জ্বালা। যাই হোক, কাজের আপডেট রিপোর্ট জানিয়ো। এবং দ্রুত কেস সমাধান করার চেষ্টা করো। ‘ একটু বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বললেন তিনি।
‘ জি স্যার। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ‘ পুনরায় তাকে আস্বস্ত করলেন ফারহান আহমেদ।
ল্যান্ডলাইন নিজস্ব অবস্থানে রেখে নজর ফেরালেন সাইমুনের দিকে। হাতে থাকা ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিল সে। ফাইলটা হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
‘ তোমাকে কতদিন বলছি, আমার রুমে ঢুকে যদি দেখ, আমি ব্যস্ত বা ফোনে কথা বলতেছি, তবে আওয়াজ না করে বসে পড়তে? এরপরেও প্রত্যেকটাবার একই কাজ করো। এসে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘
‘ সরি স্যার। আসলে স্যার….!’ সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করতে পারেনি সে। তার আগেই বলে উঠেন তিনি,
‘ থাক, অজুহাত দেখাতে হবে না আর। তুমি কী অজুহাত যে দেবে তাও আমার জানা আছে। এখন বলবে, স্যার, আসলে আমার মনে থাকে না। তাছাড়া কেমন যেন লাগে। শুনো, এই অজুহাত শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। ‘ একনাগাড়ে পুরো কথা বলে গেলেন তিনি। কিন্তু প্রত্যুত্তরে কিছুই বলল না সে। কারণ তার জানা হয়ে গেছে, এই মুহূর্তে তার কোনো কথাই খাটবে না। তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয়।
ফাইলটা খুলে প্রথমেই কল লিস্টটা বের করলেন। ডেস্কের উপর রাখা কলমদানি থেকে হাইলাইটার কলমটা হাতে তুলে নেন। লিস্টটা চেক দিতে লাগলেন। বিগত সাতদিনের মাঝে আগত এবং গমন করা প্রতিটা কলের লিস্ট এখানে অবস্থিত।
এমপি রজবানের নাম্বার লিস্ট চেক করে পাওয়া যায় বিগত সাতদিনের মাঝে ইন্সপেক্টর রবিনের নাম্বার থেকে একটা কল আসেওনি এমন কি যায়ওনি। কিন্তু গতকাল রাতের শেষ কল এসেছিল রবিনের নাম্বার থেকেই। এবং তার লাস্ট লোকেশন বাড়িতে হলেও রবিনের লোকেশন ছিল জঙ্গলের ধারে। যেখান থেকে তাদের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাইলাইটার কলম দিয়ে লোকেশন এবং সকল কিছু আবৃত্ত করে নিলেন। এবং একটু নিচে নামতেই দেখা যায় তার নাম্বার থেকে যাওয়া কলের মাঝে লাস্ট কলটা ছিল রবিনকে করা। এবং সেখানে তার লোকেশন ছিল তাদের দুজনের মৃত দেহ উদ্ধারের স্থান। বিষয়টা বড্ড তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ভ্রু-জোড়া কুঁচকে আরেকটু ভালো করে বুঝার চেষ্টা করলেন। দুজনের কল লিস্ট পাশাপাশি রাখলেন।
এবং দুজনের নাম্বারেই আগত শেষ কলটা হাইলাইটার দিয়ে মার্ক করে নিলেন। সাথে দুজনের লোকেশন এবং কল টাইমটাও। এবার তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে বিষয়টা। একটা মুচকি হাসি দিলেন। তার হাসি দেখে প্রশ্ন করল সাইমুন,
‘ স্যার, কী হয়েছে? হাসছেন কেন? কী পেলেন? একটু বলেন না। ‘ একটু অধৈর্য্য হয়ে বলল।
‘ রাঘববোয়াল ধরতে যাচ্ছি সাইমুন। ‘ তার কথাগুলো সাইমুনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
‘ স্যার, এত রহস্য করে কথা না বলে একটু খোলামেলা করে বলেন না!’ অনুরোধ স্বরে বলল।
‘ এদিকে আসো। ‘ ইশারায় তার পাশে এসে দাঁড়াতে বললেন। সাইমুন পারলে উড়ে গিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। চেয়ার ছেড়ে অনেকটা উড়াল পাখির মতো ছুটে এলো। তা দেখে হেসে দিলেন তিনি। বললেন,
‘ সাইমুন, মাঝে মাঝে তোমার কর্মকাণ্ড আমাকে একঘেয়েমি থেকে বের করতে সাহায্য করে। ‘ থামলেন।
‘ আচ্ছা যাক। যার জন্য ডেকেছি, তা দেখো। ‘
‘ জি….!’
‘ এইযে দেখো ‘ এমপি রজবানের কল লিস্টের উপর ইঙ্গিত করে বললেন,
‘ এমপি রজবান স্যারের নাম্বারে লাস্ট কল এসেছে রবিনের নাম্বার থেকে। টাইম এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। এবং তাদের মাঝে লাগাতার কথা চলে দুই মিনিট তেরো সেকেন্ড। এরপর কল ইন্ড হয়ে যায়। এবার এটা দেখো ‘ ইন্সপেক্টর রবিনেট কল লিস্টের দিকে ইশারা করে বললেন,
‘ ইন্সপেক্টর রবিনের নাম্বারে লাস্ট কল এসেছে এমপি রজবানের নাম্বার থেকে। এবং টাইম ছিল এগারোটা চুয়াল্লিশ মিনিট। এতটুকু বুঝেছ?’ শেষে প্রশ্ন রাখলেন।
‘ জি স্যার। ‘
‘ তাইলে এবার এদিকে দেখো ‘ পুনরায় এমপি রজবানের কল লিস্টের দিকে ইশারা করে বললেন,
‘ রবিন যখন রজবান স্যারকে কল দেয় তখন তার লোকেশন ছিল সেই জঙ্গল। যেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এবং রজবান স্যারের লোকেশন ছিল, তার নিজ বাড়িতে। এবার এটা দেখো…’ পুনরায় ইন্সপেক্টর রবিনের কল লিস্টের দিকে ইশারা করলেন,
‘ রবিন যখন কল দেয়, তখন তার লোকেশন ছিল জঙ্গল এবং রজবানের লোকেশন ছিল বাড়ি। কিন্তু যখনই রজবান স্যার রবিনকে কল দেয়, তখন লোকেশন পরিবর্তন হয়ে যায়। এইযে দেখো….’ রবিনের কল লিস্টে লোকেশন স্থানে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন,
‘ যখন রজবান কল দেন, তখন তার লোকেশন বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে তার লোকেশন দেখায়। এবং রবিনের লোকেশন তার বাড়ি দেখায়। এবং তাদের দুজনের নাম্বারে কল টাইমের দূরত্ব মাত্র চার মিনিট। তুমি বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাচ্ছি? ‘ দ্বিতীয় প্রশ্ন রাখলেন।
‘ সবই তো বুঝলাম; কিন্তু এখানে রাঘববোয়াল কোথায় পেলেন?’ সেও প্রশ্ন রাখল।
‘ দ্যাটস দ্যা পয়েন্ট। মাত্র চার মিনিটে অভ্যন্তরীণ কীভাবে একজন পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেললেন? এ-তো স্বয়ং সুপারম্যানের পক্ষেও সম্ভব না। ‘
‘ তবে? ‘ পাংশুটে মুখ করে প্রশ্ন করল সে।
‘ এখানে তৃতীয় পক্ষ তাদের দুজনকে কল দিয়েছে। তাদের দুজন কেউই একে অপরকে কল দেয়নি। দুজনই ছিল তাদের বাড়িতে। এবং তৃতীয় পক্ষ দুজনকে কল দিয়েছে একই লোকেশন ব্যবহার করে। যার হেতু দুটো নাম্বার দুইবার কলের সময় স্থান এত দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। এবং এটা সম্ভব হয়েছে নাম্বার হ্যাকের মাধ্যমে। যা সচারাচর অসম্ভব। এক্সপার্ট লোকজন ছাড়া এই হ্যাক কোনোভাবেই সম্ভব না। এবং যে হ্যাক করে তাদের দুজনের সাথে কথা বলেছে, সেই ছিল মূল খুনি। এবং লোকেশনটা ছিল তার বিছানো জালের স্থান। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা….! ‘ কথার মাঝে রহস্য রাখলেন।
‘ কী স্যার? ‘ প্রশ্ন রাখল।
‘ খুনি চাইলে দুজনের লোকেশন তাদের নিজস্ব অবস্থানেই রাখতে পারত। জঙ্গলকে লোকেশন দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কেন দিল? ইন্ডাইরেক্টলি সে আমাদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে না তো! ‘ একটু আওয়াজ করেই প্রশ্ন করলেন।
সম্মতি দিয়ে বলল,
‘ স্যার, অনেকটা তেমনই মনে হচ্ছে। নয়তো এরকমভাবে প্রকাশ করার কী দরকার ছিল? চাইলেই খুব সহজে খুন করতে পারত। এবং লোকেশনকে পরিবর্তন করারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবে আর কী কারণ হতে পারে এই একটা কারণ ছাড়া? ‘
‘ যদি তাই হয়, তবে কপালে দুর্ভোগ টেনে নিচ্ছে খোদ নিজেই। অনেকটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো। ‘
— চলবে —
‘ খুন সিরিজ ‘
তৃতীয় সিকুয়েন্স
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর
পঞ্চম পর্ব
এগারো.
ফারহান আহমেদের ঘুম ভাঙে তীব্র রোদের ঝলকানিতে। চোখের সামনে রোদের তীব্র ঝলকানি সহ্য করতে না পারায় ঘুম ঘুম চোখেই নিজের বাঁ হাত চোখের সামনে তুলে ধরলেন। আধোঘুমে একটি নারী অবয়কে দেখতে পান তিনি। ভেজা চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়ছে পানি। চোখের সামনে থেকে হাতটা সরিয়ে নিলেন। দৃষ্টি রাখলেন সামনে ঘুরে থাকা রমণীর দিকে। শাড়ি পরা অবস্থায় আধখোলা কোমর উন্মুক্ত হয়ে আছে। লোভনীয় সেই কোমরের দিকে নজর করে দুনিয়া ভুলে যাবার উপক্রম। ঘুম চোখেই নিঃশব্দে উঠে বসেন। আলতো করে রমণীর কোমর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। একটা টান দিয়ে সাথে সাথে বিছানায় শুইয়ে দেন। পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ঘাড়ে মাথা রাখেন। নিঃশ্বাসের ওঠানামার সাথে এক প্রশান্তি অনুভব করেন।তার দিকে ঘুরে চোখে চোখ রাখেন রমণী। ঠোঁটদ্বয়ের উপর একটি আলতো চুমু দিয়ে বলতে শুরু করে,
‘ আজ হঠাৎ ইন্সপেক্টর সাহেব এত রোমান্টিক যে? অন্যান্যদিন তো বউয়ের খবরই থাকে না। ‘
জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু এক ধমকে থামিয়ে দিল তার স্ত্রী রাহেলা। একটু শব্দ করে বলতে লাগল সে,
‘ একদম চুপ। কোনো কথা বলবা না। এখন তুমি কী উত্তর দেবে তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। শহরে কি তুমি একাই ইন্সপেক্টর? সকল কাজের প্রেশার তোমারই কেন নিতে হবে?’
উত্তর দেওয়াতে বারণ থাকলেও জোর করে কথার মাঝে প্রত্যুত্তর করেন ফারহান,
‘ শহরে শত ইন্সপেক্টর থাকলেও তাতে কাবিল অফিসারের বড্ড অভাব। আর আমার শ্বশুর আব্বাজান তো আছেনই। যত প্রকার কেস আছে, সব যেন আমার উপরেই ঢালেন। ‘
ফোস করে উঠল রাহেলা। রাগী কণ্ঠে বলতে লাগল,
‘ একদম আমার বাবার নামে উলটাপালটা বলবা না। নিজে যে কেসের পেছনে ছুটো সেটা বলো না কেন? আর আমার বাবা তোমাকে কেস দিলেই তোমার নিতে হবে? মানা করতে পার না? ‘
‘ মানা তো করতে পারি; কিন্তু আমাকে কেস ছাড়তে চায় না। এটাই হলো সমস্যা। ‘
থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল সে,
‘ এটাই হলো আসল কথা। ছাড়ো আমাকে। ধরে রাখছ কেন? সারাদিনে খবর থাকে না। রাতে কখনো কাছে পাই কখনো কাছে পাই না। আজ যেন আদর উথলে পড়তেছে। ছাড়ো বলতেছি। ‘
মাঝে উত্তর দিলেন ফারহান,
‘ না ছাড়ব না। ‘
‘ তুমি ছাড়বে নাকি আমি কামড় দেব? ‘ অনেকটা রেগেই বলল। ফারহানকে তবুও ছাড়তে না দেখে ডান হাতটা টেনে এনে চোখের পলকে কামড় বসিয়ে দেয়। চমকিত হয়ে ডান হাতটা সরিয়ে নেন। রাহেলা তৎক্ষণাৎ উঠে যেতে নিলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও জাপটে ধরে জড়িয়ে নেয় বুকের মাঝে। মৃদু স্বরে বলতে লাগেন ফারহান,
‘ ২২৪টা। ‘
বিস্ময় ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে রাহেলা,
‘ কী ২২৪টা? ‘
প্রত্যুত্তরে জবাব দেন,
‘ এ অবধি আমাকে ২২৪টা কামড় দিয়েছ। ‘
ফারহান সাহেবের প্রত্যুত্তর শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে। ধবধবে সাদা গালগুলোতে রক্তিমা ভর করেছে। তৎক্ষণাৎ তার বুকে মুখ গুজে দেয়। আরেকটু ক্ষ্যাপাতে বলতে লাগেন তিনি,
‘ আচ্ছা, তোমার বাবা কি কিছু খাওয়ায়নি? ভ্যাম্পায়ারদের মতো আমাকে কামড়ে খেয়ে শেষ করে দিলে। ‘
বুকে মুখ গুজে রাখা অবস্থাতেই আলতো করে জবাব দেয় রাহেলা ,
‘ না খাওয়ায়নি। এখন তোমাকে কামড়ে কামড়ে খাব। তোমার কোনো সমস্যা আছে? আর থাকলেও আমি কামড়াব। ‘
রাহেলার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। কিছুক্ষণ প্রশান্তির সুখময় মুহূর্ত পার করতে ব্যগ্রতা দিয়ে বলে ওঠে রাহেলা,
‘ আজ অফিসে যাবা না? ‘
‘ হ্যাঁ, যাব তো। ‘
‘ তাহলে এবার উঠো। অনেক হয়েছে শুয়ে থাকা। এখন না উঠলে শেষে তাড়াহুড়ো শুরু করে দেবে। শেষ পর্যন্ত না খেয়েই বেড়িয়ে পড়বে। এবার উঠো। ‘
মুখ খুলে কিছু বলতে চাইলেন ফারহান। কিন্তু রাহেলার চোখ রাঙানিতে আর শব্দ করে কিছু বলা হয়ে উঠেনি। নিঃশব্দে তাকে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ত্যাগ করেন। রুমের সাথেই ওয়াশরুম হবার কারণে দেরি না করে সাথে সাথে ওয়াশরুমে ঢুকে যান। ঘরের বাহিরে হাজারো অপরাধীর ভয়ের কারণ হলেও ঘরের মাঝে সে ভীতু। মূলত এই ভীতিটা সেই ভীতি নয়। এটা ভালোবাসার ভীতি। ভালোবাসার মানুষটাকে সম্মানের ভীতি।
ফারহান ওয়াশরুমে যেতেই বিছানা ছেড়ে রুম ত্যাগ করল রাহেলা। দুজনের পরিচয়টা ঠিক বারো বছরের পুরোনো। ছয় বছর প্রেম জীবন এবং ছয় বছর বৈবাহিক জীবন। ফারহান যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে রাহেলা তখন অনার্সের প্রথম বর্ষে পড়ে। একই ভার্সিটিতে হওয়ায় তখন থেকেই তাদের দুজনের মাঝে প্রথমে সখ্যতা তৈরি হয়। এরপর সেই সম্পর্ক মোড় নিয়ে ভালোবাসার সম্পর্কে পরিণত হয়। এরপর ফারহান মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে যোগদান করেন। তার কয়েকমাস পরেই উদযাপিত হয় ভালোবাসার ছয় বছর অনুষ্ঠান। সেদিনই রাহেলার বাবা-মায়ের সম্মতিতে শুরু হয় বৈবাহিক জীবন। বিয়ের কয়েক মাস পরেই রাহেলা কনসিভ করে। বছর ঘুরে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয় একটি কন্যা সন্তান। সময় গড়াতে গড়াতে বৈবাহিক জীবন ছয় বছরে উপনীত হয়েছে। তবে ভালোবাসার মাত্রাটা এখনো কমেনি। বরং পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোসল সেরে জামা-কাপড় পরিধান করে অফিসে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে রুম ত্যাগ করেন ফারহান। হলরুমে প্রবেশ করতেই খাওয়ার টেবিল থেকে চিকন স্বরে আওয়াজ আসে, ‘ পাপা ‘
দ্রুত সেদিকে নজর করে বলে ওঠেন, ‘ মামুনি। ‘
দ্রুত পায়ে খাবার টেবিলে উপস্থিত হন। চেয়ার টেনে বসে পড়েন।
‘ আমার মামুনি কী খাচ্ছে? ‘
‘ স্যুপ নুডলস। তুমি খাবে পাপা?’
‘ আমার মেয়ে আমাকে খাইয়ে দিলে মানা করতে পারি?’
‘ তাহলে হা করো। ‘
বাবা-মেয়ের খুনসুটি দেখে হেসে উঠল রাহেলা। পরোটা, ডিম ভাজি এবং সাথে গরুর গোশত উপস্থাপন করল টেবলে। একটু ভাব নিয়ে বাবা-মেয়ের উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘ বাহ, আমাকে রেখে বাবা-মেয়ের মাঝে ভালোই খুনসুটি হচ্ছে। ‘
রাহেলার দিকে একবার তাকান ফারহান। পাশ থেকে মেয়ে বলে ওঠে,
‘ মাম্মাম, আর ইউ জেলাস?’ প্রশ্নটি করে হাসতে শুরু করে সে।
খেতে খেতে আচমকা রাহেলার উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন ফারহান,
‘ রাহেলা, সাফাকে নিয়ে স্কুলে গেলে একটু সাবধানে থেকো। ‘
তার এরকম কথায় একটু চমকায় সে। পরক্ষণেই তুমিটা আপনিতে পরিণত করে চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে রাহেলা,
‘ কী হয়েছে? এভাবে বলছেন যে? কোনো সমস্যা? ‘
ফারহান আহমেদ কিছু সময় থেমে বলতে আরম্ভ করেন, ‘ এই কেসটা নেওয়ার পর থেকে আমার মস্তিষ্ক কেন যেন বারবার বিপদ সংকেত দিচ্ছে। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে, এই কেসটা নেওয়ার পর থেকেই আমাদের উপর কারা যেন নজর রাখছে। যাইহোক, একটু সাবধানে থেকো। ‘
খাবার সময় আর কোনো কথা হয়নি। খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে ছুটে আসেন ফারহান। পার্কিং লটে দুটো গাড়ি দেখা যায়। একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের গাড়ি। যা রাহেলার বাবা তথা ডিআইজির পক্ষ থেকে গিফট করা হয়েছে। আরেকটি সুজুকি কোম্পানির লেটেস্ট মডেলের গাড়ি। যা অফিস থেকে তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। অফিসের গাড়িতে পেছনের সিটে উঠে বসেন। গাড়ির ড্রাইভার গাড়ির পাশেই ছিল। তাকে আসতে দেখে দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসেছে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পার্কিং লট থেকে গেটের কাছে চলে আসে। দুজন গার্ড গেট খুলে দেয়। গাড়ি নিয়ে মেন রোডে যেতেই ফারহান নির্দেশ দেন, ‘ মিরপুর ২-এ নিয়ে চলো। রাবির চেম্বারে। ‘ ড্রাইভার গাড়ি নির্দেশনা মোতাবেক চালাতে লাগল। গাড়ির পেছনে বসে ইন্টারনেট ঘাটতে লাগলেন তিনি। দেশব্যাপী খবরগুলোতে নজর বুলাচ্ছেন।
বারো.
ফরেনসিক বিভাগের হেড রাবি রহমান সবে চেম্বারে এসে বসেছে। টেবিলের উপর এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা কাগজপত্রগুলো গোছাচ্ছিল। এমতাবস্থায় কানে আসে গাড়ির শব্দ। বুঝতে পারে কে এসেছে! মিনিটখানেক সময়ের অভ্যন্তরীণ রুমের দোরগোড়ায় একজোড়া পা দেখা যায়। চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে পা বাড়াল সে। ইন্সপেক্টর ফারহান আহমেদ রুমে প্রবেশ করতেই করমর্দনে ব্যস্ত হলো সে। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল একটু সময়। পরমুহূর্তে ফারহান কাজের জন্য মৃদু ব্যগ্রতা দিতে মাল্টিমিডিয়া চালু করল। হাতে একটি গ্রিন লেজার লাইট নিয়ে প্রথম শো করা ছবিটির দিকে ইঙ্গিত করল।
অপরদিকে চেয়ারের মুখ ঘুরিয়ে পর্দায় প্রথম শো করা ছবিটির দিকে নজর করলেন ফারহান আহমেদ। এই ছবিটি তিনি বোর্ডে টাঙিয়েছিলেন। দুজনের হাতে ধরে রাখা বন্দুক দুটোর ছবি। এমপি রজবান ও ইন্সপেক্টর রবিনের ধরে রাখা বন্দুকের ছবি পাশাপাশি একত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। লেজার রশ্মি প্রথমে এমপি রজবানের হাতে ধরে রাখা বন্দুকের দিকে ফেলল সে। বলতে লাগল,
‘ স্যার, বন্দুক ধরে রাখার ধরণটা লক্ষ্য করুন। আমার চেয়ে আপনি এ বিষয়ে বেশি অভিজ্ঞ। দুজনের হাতে ধরে রাখা বন্দুক দুটো একটু গভীর পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালে বুঝা যায়, কেউ তাদের হাতে বন্দুক দুটো ধরিয়ে দিয়েছে। ‘
ফারহান আহমেদ ছবি দেখেই তখন এই রহস্যটি বুঝতে পেরেছিলেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা বলে কথা। ছবিটি চেঞ্জ করে পর্দায় নতুন আরেকটি ছবি উপস্থাপন করল রাবি। একটি ছবির মাঝেই এমপি রজবান ও ইন্সপেক্টর রবিনের গুলিবিদ্ধ কপালের ছবি। তাদের দুজনের মাথায় গুলিবিদ্ধ ছবি দুটো উপস্থাপন করার আগে থেকেই এই রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন ফারহান। তবু রাবির বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। মুখ খুলে রাবি বলতে লাগল,
‘ স্যার দেখুন, এমপি ও রবিন স্যারের গুলিতে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান দুটো একই। এমপি স্যারেরও ঠিক কপালের মধ্যভাগে, রবিন স্যারেরটাও ঠিক কপালের মধ্যভাগেই। তারা যদি একে অপরকে গুলি করে, তবে রবিন স্যারে গুলি এমপি স্যারের কপালে লাগার সম্ভাবনা থাকলেও এমপি স্যারের গুলি মোটেও রবিন স্যারের কপালের মধ্যভাগে লাগার কথা নয়। এমপি স্যার বন্দুক চালানোয় এক্সপার্ট নন। তার গুলি ঠিক কপালের মধ্যখানে লাগা মোটেও সম্ভব নয়। তারচেয়ে বড় কথা দুজনের একই স্থানে গুলি লাগা সম্ভব নয়।’
একটু থামল সে। পর্দায় শো করা ছবিটি বদল করে এমপি রজবান ও ইন্সপেক্টর রবিনের বুকে গুলিবিদ্ধ স্থান পাশাপাশি উপস্থাপন করল। পুনরায় বলতে আরম্ভ করল,
‘ দেখুন স্যার, ফের একই ঘটনা। এমপি স্যারের বুকের যেই ব্যাসার্ধে বন্দুকের গুলি আঘাত হেনেছে, ঠিক একই স্থানে রবিন স্যারের বুকে বন্দুকের গুলি আঘাত হেনেছে। আর এটা অসম্ভব ব্যাপার। এ দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায়, বন্দুকের গুলি তাদের দুজনের মাঝে নয়, বরং তৃতীয় পক্ষের কেউ একজন ছিল। এবং যে ছিল বন্দুক চালানোয় মারাত্মক এক্সপার্ট। লক্ষভ্রষ্ট হবার চিন্তা তার মাথায় বিন্দু পরিমাণ খেলে না। ‘
রাবিকে থামিয়ে দিলেন ফারহান। বলতে লাগলেন,
‘ অনেক হয়েছে তৃতীয় পক্ষের প্রশংসা। নিশ্চিত হবার জন্য তোমার কাছে কি এই দুটো সূত্রই আছে? ‘ প্রশ্ন রাখলেন তিনি। প্রত্যুত্তরে রাবি জবাব দেয়,
‘ স্যার, আমার কাছে আপনার হুশ উড়িয়ে দেওয়ার মতো আরও একটি সূত্র আছে। ‘
তৎক্ষণাৎ জানতে চাইলেন ফারহান,
‘ কী সেই সূত্র? ‘
বলতে আরম্ভ করল,
‘ হয়রান করা সূত্র তাদের দুজনের বন্দুক থেকে একটা গুলিও চলেনি। ‘
হেসে উঠলেন ফারহান। তার হাসি দেখে রাবি ভ্রু জোড়া কুচকে ফেলল। তা দেখে বলতে লাগলেন তিনি,
‘ তুমি যে এটা বলবা তা আমি আগে থেকেই জানি। আর খুনগুলো যে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হয়েছে তাও গতকালই ধরতে পেরেছি। ‘
তার এরকম কথায় রাবি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়। তার হা হয়ে যাওয়া মুখকে বন্ধ করতে বলে উঠলেন,
‘ বাকিটা বলো। ‘
বিস্ময় কাটিয়ে দ্রুত বলতে আরম্ভ করল রাবি,
‘ তাদের দুজনের দেহ থেকে যে চারটি বন্দুকের গুলি বের করেছি, তা একটি বন্দুকেরই। একই কোয়ালিটি এবং একই ডিজাইনের। কিন্তু এমপি ও রবিন স্যারের দুজনের বন্দুকের মডেল ও গুলির মডেল ছিল ভিন্ন। যে খুনি সে খুব ধূর্ত। তাদের দুজনকে একই সমান দূরত্ব থেকে গুলি করেছে। পাকা হাতের খিলাড়ি মনে হচ্ছে তাকে। ‘
তেরো.
রাবি তার বর্ণনা দিচ্ছিল আচমকা ফারহান আহমেদের ফোনের রিংটোন ভেসে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে নজর দিতে দেখতে পায়, সাইমুনের নাম্বার থেকে কল এসেছে। দ্রুত কল রিসিভ করে কানে তুলতে ওপাশ থেকে ভীতগ্রস্ত, আতঙ্কিত স্বরে ভেসে আসে, ‘ স্যার। ‘
সাইমুনের এরকম কণ্ঠ শুনে একটু ঘাবড়ে যান তিনি। ঝটপট প্রশ্ন করেন,
‘ কী হয়েছে সাইমুন? এভাবে ঘাবড়াচ্ছ কেন? ‘
কম্পিত গলায় বলতে লাগে সে,
‘ স্যা স্যা স্যার…! এ এএ একটা দু দু দুঃসংবাদ আ আ আছে….!’
সাইমুনের কণ্ঠে স্পষ্ট ভয় অনুভব করতে পারছেন তিনি। আশ্বস্ত করে বলতে লাগলেন,
‘ কী হয়েছে সাইমুন? এত ভয় পাচ্ছ কেন? বি কুল। আমাকে বলো, কী হয়েছে? ‘
‘ স্যা স্যা স্যার, এ এমপি স্যারের পো পোলা ফা ফায়াজের মৃ মৃত দেহ পা পাওয়া গেছে থা থানার পে পেছনে….! ‘
সাইমুনের মুখে এ খবর শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। কান দুটোকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবু সাইমুনকে আশ্বস্ত করে বললেন,
‘ আচ্ছা ভয় পেয়ো না। তুমি থাকো আমি আসতেছি। ‘
দ্রুত কল কেটে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান। পেছন থেকে ডেকে রাবি প্রশ্ন করেন,
‘ কী হয়েছে স্যার? এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? ‘
তার প্রশ্ন শুনে একটা মুচকি হাসি দিলেন। তার হাসি দেখে রাবি ভড়কে গেল। তা দেখে বলে উঠলেন,
‘ তোমার জন্য আরেকটি মৃত দেহ চলে এসেছে। প্রস্তুত থেকো। ‘
বিস্ময়ে চমকিত হয়ে গেল রাবি। আকর্ষণ দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে,
‘ কার মরদেহ স্যার? ‘
প্রত্যুত্তরে জবাব দেন,
‘ এমপি রজবানের ছেলে ফায়াজের। ‘
তার কথা শুনে রাবির হা হয়ে যাবার উপক্রম। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে ফের বলতে লাগলেন,
‘ তোমার টিমের দুজন সদস্যকে আমার সাথে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসতে বলো। ‘
এই বলে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়েন। গাড়িতে চড়ে ড্রাইভারকে থানার পেছনে যাবার কথা বলে দেন। মাথা হেলিয়ে চোখ দুটো বুজে নেন। ভাবতে লাগেন, কী হচ্ছে এসব? কেন হচ্ছে? কী উদ্দেশ্যে?
— চলবে —