খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,অন্তিম পর্ব

0
371

গল্প:- খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,অন্তিম পর্ব
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর

যাবেদের শেষ বলা কথাগুলো শুনে, ফারহান তৎক্ষণাৎ সেখানেই চুপ হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই তার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও এই মুহূর্তে তার কী বলার উচিত? তা তার মাথায় আসছে না। যাবেদের পকেট কাঁপিয়ে বাজতে লাগল তার ফোন। পকেটে দ্রুত হাত নিয়ে ফোনটি বের করে হাতে তুলে নেয়। তৎক্ষণাৎ নজরে এলো, তার ফোনে প্রফেসর নিয়াক কল করেছে। যদিও বা ল্যান্ডলাইন থেকে কল করা হয়েছে। তবে তার কাছে ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন আসা মানেই, প্রফেসর নিয়াক স্যার লাইনে থাকা। কল গ্রহণ করতে বিন্দু পরিমাণ বিলম্ব না করে কানে থাকা ব্লুটুথে সংযোগ করে নেয়। ওপাশ থেকে ভেসে এলো প্রফেসর নিয়াকের হতাশাগ্রস্ত কণ্ঠস্বর।
‘ কাজ কতদূর হলো তোমাদের? ‘
‘ শেষ স্টেজে বলা যায় স্যার। আমিও একটু পর আপনাকে কল করব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সুখবর শুনতে আপনিই আমার আগে কল দিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি আপনার কণ্ঠস্বর শুনে। হতাশায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠস্বর কেন তা কি জানতে পারি? ‘ কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল যাবেদ।
কিঞ্চিৎ পরিমাণ নৈরাশ্য কণ্ঠে বললেন প্রফেসর নিয়াক,
‘ আসলে তেমন কিছু না! আবার তেমন কিছুও বটে।আজ সকালেও রাস্তার কিনারা থেকে এবং ময়লার স্তূপ থেকে ৯টি মেয়ের মৃত এবং নগ্ন দেহ উদ্ধার করা হয়েছে! রাষ্ট্রপতি ফোনের পর ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু জবাবে তার আশানুরূপ কোনো কিছু বলতে পারিনি আমি। আশা করছি আমার হতাশার কারণ বুঝতে পেরেছ!’
‘ রাষ্ট্রপতিকে তার আশানুরূপ সাফল্যময় জবাবটা দিয়ে দেন। আমরা মূল হত্যাকারীর নাম এবং তার অবস্থান ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ রূপে জেনে গেছি। আর আশা রাখছি আজকের মাঝেই ধরা পরবে। তবে তার জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। ‘
কিঞ্চিৎ অবাক স্বরে জানতে জ্ঞাপন করলেন প্রফেসর,
‘ তোমার বলা মানে বিজয় অর্জন করা। তো বলো তোমাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’
বাম হাত কিছুটা উঁচু করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল যাবেদ,
‘ এখন বাজে দুপুর একটা উনচল্লিশ। সন্ধ্যা সাতটার সময় আমার দুটি হেলিকপ্টার প্রয়োজন। সাথে স্পেশাল ট্রেনিং প্রাপ্ত বিশজন এজেন্ট।’
‘ দুটো হেলিকপ্টার এবং স্পেশাল ট্রেনিং প্রাপ্ত এজেন্ট! কিন্তু কেনো? কী করতে যাচ্ছ তুমি?’ এবার অবাকতার সীমা পেরিয়ে গেছে তার। এরকম একটি কথা শুনে যে কেউ ভড়কে যাবে, এমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। তবে যাবেদ তার বলার ধরণ না বদল করেই পুনরায় বলতে আরম্ভ করল,
‘ হ্যাঁ। আর সাথে তাদের সুরক্ষার জন্য যাবতীয় সকল কিছু দিয়ে দেবেন।’
এবার কিঞ্চিৎ পরিমাণ রাগ নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করলেন প্রফেসর,
‘ কিন্তু কী করতে চাচ্ছ তুমি? আর এগুলো নিয়ে কোথায় যাবা?’
‘ নকল ইলুমিনাতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে যাব। আর তাদের চ্যাপ্টার সেখানেই ক্লোজ করব। এছাড়াও তাদের প্লানিং অনুসারে এখনো তাদের কাছে বেশ কিছু মেয়ে আটকে আছে। অন্তত তাদেরকে বাঁচাতে হবে।’
‘ তুমি কী বলতেছ তা বুঝতে পারছো? এমনিতেই তারা কতটা ভয়ানক! তার মাঝে তুমি তাদের আস্তানায় যাবে!’!যাবেদের থেকে এরকম কথা শুনে কিছুটা থ হয়ে গেছেন প্রফেসর।
‘ আমি যা করছি, তা ভেবেচিন্তেই করতেছি। লেজ গুটিয়ে বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মাত্র এক সপ্তাহে দেশের নকশা বদল করে দিয়েছে! আমি চাই না, তাদের প্রকোপ জনগণের উপর আরও চড়াও হোক। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
সন্ধ্যা সাতটার সময় হেলিকপ্টারসহ বিশ জন সশস্ত্র এজেন্টের অপেক্ষা করব আমার বাড়ির পাশে জঙ্গলের ধারে। ‘

লাইনের ওপাশে থাকা প্রফেসর নিয়াককে আর কিছু বলার মত সুযোগ না দিয়ে, কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইসে হাত রেখে কল কেটে দেয় যাবেদ। তবে তার চেহারায় ফুটে উঠেছে রাগের আভা। চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। ইতোমধ্যেই চোয়াল দুটি ফুলে উঠছে। অবস্থা বেগতিক দেখে পরিস্থিতি সামলাবার জন্য যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলল ফারহান,
‘ আপনি টেনশন নেবেন না। প্রফেসর নিয়াক স্যার যথাসময়ে যাবতীয় সকল কিছু পাঠিয়ে দেবেন।’

ফারহানের কথা শুনে প্রতিত্তোরে কিছু বলল না যাবেদ। তবে তার চেহারা দেখে বুঝা গেল, রাগের পরিমাণটা আগের চাইতে কমেছে। ফারহানকে হাতের ইশারায় তার পিছু আসতে বলে হাঁটার জন্য পা বাড়াল সামনের দিকে। পাশেই থাকা গাড়িতে চড়ে বসলো দুজন। ড্রাইভিং সিটে ফারহান এবং তার পাশের সিটে যাবেদ। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে তারা ছুটতে লাগল সামনের দিকে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা অনির্দিষ্ট।

চারদিকে দিকে কোলাহল মুক্ত গম্ভীর নিস্তব্ধতা। যানবাহনের আওয়াজ তেমন নেই বললেই চলে। প্রাকৃতি নিজেও যেন থম ধরে আছে। বাড়ির কাছেই জঙ্গলের ধারে ফাঁকা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে যাবেদ ও ফারহান। একটু পরপর যাবেদ নজর দিচ্ছে তার হাতে থাকা ঘড়িটির দিকে। সাতটা বাজতে আর মাত্র দুই মিনিট সময় বাকি আছে। জঙ্গলের মাঝেও একটি ফাঁকা মাঠ! বড্ড চিন্তার বিষয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে চিন্তা করার মত সময় আপাতত যাবেদের কাছে নেই। এছাড়া ইতোমধ্যেই তার মুখমণ্ডলে বিরক্তির আভা ফুটে উঠেছে। আচমকাই দূর থেকে ভেসে আসছে দুটি হেলিকপ্টারের চলিত ইঞ্জিনের শব্দ। যা কানের পর্দায় উৎপন্ন করছে কম্পাংক। শব্দ দুটো আর জোড়ালো আকার ধারণ করতে আরম্ভ করেছে। তবে এখন আর যাবেদের মুখমণ্ডলে তেমন বিরক্তির আভা ফুটে নেই। ফুটে আছে ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি। ফুটে উঠেছে। তাদের কাছ দিয়ে বেশ গতিতে একটি হেলিকপ্টার উড়ে চলে গেল। তবে পেছনে আরেকটা হেলিকপ্টার এসেই উপর থেকে ফেলে দিল সিঁড়ি। হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসের চাপে ফাঁকা মাঠের চারপাশে থাকা গাছপালাগুলোতে ঝড় তুলে দিচ্ছে। কোনোরকম দেরি না করে, হাতের নাগালে সিঁড়ি পাওয়া মাত্রই দ্রুত পায়ে বেয়ে উপরে উঠতে লাগল যাবেদ। অবিলম্বেই তার পিছুপিছু আসছে ফারহান। সিড়ির মধ্যবর্তী স্থানে তারা দুজন উঠতেই চলতে আরম্ভ করল হেলিকপ্টার। তবে সেদিকে ধ্যান না দিয়ে, নিজেদের কাজে নিজেরা অব্যাহত রইল যাবেদ ও ফারহান। দুটো হেলিকপ্টার পাশাপাশি আকাশ চিঁড়ে উড়ে চলেছে সামনের দিকে। উদ্দেশ্য তাদের ঢাকা থেকে সিলেট পাহাড়। সিঁড়ি বেয়ে ইতোমধ্যেই যাবেদ ও ফারহান দুজন হেলিকপ্টারের ভেতরে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ যুদ্ধবিমানগুলো চল্লিশ মিনিটের মত চলতেই অতিক্রম করেছে সিলেটের নিকটবর্তী স্থান। কালা পাহাড়টা খুব সন্নিকটে। আর কিছুদূর আগালেই পৌঁছে যাবে নিজেদের গন্তব্যে। এমতাবস্থায় সকলের সাথে কন্টাক্ট করার জন্য মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে আরম্ভ করল যাবেদ,
‘ সামনেই আমাদের গন্তব্য তথা মিশন শুরু। তাই সবাই তৈরি হয়ে নাও। বন্দুক ও বন্দুকের গুলি চেক করে নিও। নিজেদের দেহ রক্ষার্থে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিধান করে নেবে। বাকিটা হেলিকপ্টার থেকে নিচে নামার পর বলে দেবো। ‘

আর কিছু না বলে মাইক্রোফোনে থাকা বাটন প্রেস করে কল কেটে দেয় যাবেদ। কালা পাহাড়ের নিকটবর্তী স্থানে এসেই হেলিকপ্টার দুটো থামিয়ে দেয়। আকাশেই হেলিকপ্টারের পাখা ঘুরছে, তবে স্থান থেকে এক বিন্দু অনড় বলা যায়। সিঁড়ি নামিয়ে সর্বপ্রথম নিচে অবতারণ করল যাবেদ। দুই হেলিকপ্টার থেকে এক এক করে নামতে আরম্ভ করল সবাই। যাবেদ নিজেও ইতোমধ্যেই একটি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে নিয়েছে। মৃদু আলোর সাথে সবাইকে নিয়ে কালা পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠতে লাগল যাবেদ।

বেশ কিছু পথ চলার পর পাহাড়ের গায়ে সল্প আলোর দেখা মিলছে। তা দেখে তার দুই ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে। দূরেই কয়েকটি তাবু দেখা যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে সেদিকে যেতে লাগল সে। এমতাবস্থায় তাকে দেখা মাত্রই দুজন লোক বন্দুক তাক করে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের এগিয়ে আসা দেখে যাবেদ তার নিজের হাত দুটো উপর দিকে তুলে সারেন্ডার করে দেয়। দ্রুত লোক দুটি তার কাছে এসে তার দেহ হাতড়ে তাকে চেক করে নেয়। তবে লোক দুটো তার দেহে তেমন কিছু পেতে অসক্ষম। লোক দুটোর সাথে দুই হাত উঁচু করে তাবুর দিকে হাঁটতে লাগল যাবেদ। তাবুর গোল এরিয়ায় ঢুকতেই দুটি চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার। চারদিকেই মেয়েদের সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। তবে কেউই উন্মুক্ত নয়। সকলের হাত রশি দিয়ে বাঁধা। এছাড়াও তাবুর গোল এরিয়ার চারদিকে কড়া নিরাপত্তার জন্য রয়েছে বেশ কিছু বন্দুকধারী লোক। চারদিকে মশালে আগুন জ্বালিয়ে আলোকিত করে রেখেছে। যাবেদকে দেখা মাত্রই তারা বন্দুক তাক করে নেয়। এমতাবস্থায় বুটের ঠকঠক আওয়াজ তুলে পয়ত্রিশ থেকে আটত্রিশ বছরের একজন লোক বন্দুক হাতে নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল। লোকটাকে দেখতে কিছুটা ইংরেজদের মত মনে হচ্ছে। ধবধবে ফর্সা দেহ। সকলের ড্রেস কোড সাধারণ হলেও তার ড্রেস কোড কিছুটা ভিন্ন। ইতোমধ্যেই যাবেদের নজরে এসেছে বেশ কিছু উলঙ্গ মেয়ের দেহ। যা কিছু লোক ভোগ করায় মত্ত। এ দেখে তার বেশ রাগ লাগলেও, আপাতত নীরবে সহ্য করে গেল। কেন না তীরে এসে তরি ডোবানোর কোনো ইচ্ছেই যে তার নেই। তৎক্ষণাৎ তার উদ্দেশ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বলে উঠল,
‘ ডাউন। আই সেইড ডাউন।’

হাত উপর দিকে তুলে সেখানেই বসে গেল যাবেদ। এ দেখে উপস্থিত সকলে মত্ত হয়ে গেল হাসি-ঠাট্টায়। সকলের দিকে একবার করে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। আকস্মিকভাবে লোকটি তৎক্ষনাৎ যাবেদের উদ্দেশ্য করে পুনরায় বলতে আরম্ভ করল,
‘ তোকে মারার জন্য কতটা কষ্ট করতে হয়েছে আমার। কিন্তু প্রতিবারেই ব্যর্থ হচ্ছিলাম। কিন্তু আজ তুই নিজেই আমার ডেরায় এসেছিস! আমার তো খুশিতে পাগলপারা হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।’
‘ বেশি পাগল হতে নেই। আর বেশি খুশিও হতে নেই। এখানে এসেছি তোকে মারতে। আর মেরেই যাব। তুই আমার কাছ থেকে আমার সহধর্মিণীকে কেড়ে নিয়েছিস। এর শাস্তি আমি নিজ হাতে তোকে দেবো।’ গম্ভীর স্বরে উক্তিটি পেশ করল যাবেদ।

যাবেদের বলা কথা শুনে পুনরায় অট্টহাসিতে মেতে উঠল সবাই। তবে অসহায় বন্ধি মেয়েগুলো যাবেদের দিকে অসহায় দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তারা। তৎক্ষণাৎ হাসতে হাসতে যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল অজ্ঞাত লোক,
‘ সিংহের গর্তে ঢুকে সিংহকেই মেরে ফেলার হুমকি! বলতে হবে তোর দম আছে, নয়তো আমাকে মারার জন্য একা-একা এপর্যন্ত চলে এসেছিস!’
‘ নিজের হাতে তোকে হত্যা করার পণ নিয়েছি ডেভিড। আর সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এ পর্যন্ত আসা। তুই পাপ করতে করতে এতটাই করে ফেলেছিস যে, পাপও এখন রাখবার মত থলি নেই। রোজ রোজ মেয়েগুলোকে ধর্ষণ করে, তাদেরকে ভয়ানক মৃত্যু দিয়ে লাশগুলোর বাজে অবস্থা করে ফেলে দিস। এর জন্য কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে তোর। ‘ কিছুটা হাসি নিয়ে বলল যাবেদ।

তৎক্ষণাৎ ডেভিড তার দেহের সর্বশক্তি দিয়ে যাবেদের মুখ বরাবর ঘুসি মেরে দেয়। যার হেতু যাবেদের মুখ ভেতরে দাঁতের সাথে গালের সংস্পর্শ পাওয়ায় কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। মুখেত ভেতর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। রক্তাক্ত লালাগুলো থু মেরে পাশে ফেলল সে। তৎক্ষণাৎ তার উদ্দেশ্য করে পুনরায় বলতে লাগল ডেভিড,
‘ তোকে কেমন মৃত্যু দেওয়া যায় তাই ভাবছি! ভয়ানক না-কি সাধারণ? যেহেতু প্রিয় মানুষটাকেই হারিয়েছিস। তবে এর চেয়ে বেদনাদায়ক যন্ত্রণা আর নেই। তবে সাধারণ মৃত্যুটাই তোর কাম্য। এছাড়াও প্রিয় মানুষ ব্যতীত তোরও এই পৃথিবীতে থাকার দরকার নেই। ‘

এই বলে ডেভিড তার হাতে থাকা .9mm বন্দুকটি যাবেদের কপাল বরাবর তাক করে নেয়। ট্রিগারে হাত রেখে চাপ দেবে সে। এমতাবস্থায় কিছুটা শব্দ করে ” Plane B” বলে উঠে যাবেদ। আকস্মিকভাবে চারদিক থেকে বন্দুকের ছড়া গুলির শব্দ আসতে লাগল। এরকম আকস্মিকভাবে বন্দুকের গুলিতে ধরাশায়ী হয়ে গেল বেশ কিছু বন্দুকধারী লোক। এছাড়াও ইতোমধ্যেই সবাই ভড়কে গেছে। মোক্ষম সুযোগ হাত ছাড়া না করে ডেভিডের হাত থেকে ছোঁ মেরে বন্দুকটি নিজ হাতে তুলে নেয় যাবেদ। কোনো কিছু না বলেই একের পর এক গুলি ছুঁড়তে লাগে সামনে থাকা বন্দুকধারী লোকগুলোর দিকে। নিচ দিকে কিছুটা ঝুঁকে জুতার নিচ থেকে টান দিয়ে আরও একটি .9mm বন্দুক হাতে তুলে নেয়। দুই হাতে দুটি বন্দুক তুলে নিয়ে অনবরত গুলি ছুঁড়তে লাগে ডেভিডের লোকগুলোর দিকে। ইতোমধ্যেই দুই দলেত মাঝে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। চারদিকে কেবল বন্দুকের গুলি চলার শব্দ। দু পক্ষই সমানতালে গুলি করে যাচ্ছে। তবে এজেন্টদের মাঝে এখনো কেউ আহত অথবা নিহত হয়নি। কিন্তু অপর পক্ষের অবস্থা বেশ শোচনীয়। বহু বন্দুক ধরাশায়ী লোল মাটিতে লুটিয়ে পরলোকে গমন করেছে। আবার কিছু লোক আহত হয়ে মাটিতে শুয়ে বা বসে আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করে ডেভিড। তবে বিষয়টি যাবেদের নজরে পড়ে যায়। দ্রুত ডেভিডের পিছু নিতে আরম্ভ করে। লুকাবার জন্য একটি বড় তাবুর ভেতরে প্রবেশ করে ডেভিড। কিন্তু তার পিছুপিছু যাবেদও তাবুতে প্রবেশ করে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করেই থমকে যায় সে। গোটা ত্রিশের মত মেয়ে উলঙ্গ হয়ে মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছে। তাদের দুজনের পিছুপিছু কয়েকজন লোক এসে তাবুতে উপস্থিত হয়। আকস্মিকভাবে যাবেদের দিকে আক্রমণ আরম্ভ করে। আঘাতের ধরণ জানা থাকার ফলে প্রতিটি আঘাত সতর্কতার সহিত ফিরিয়ে দিচ্ছিল। প্রতিজনের ঘাড়ের পেছন দিকে আঘাত করে সে। ঘারে আঘাত লাগা মাত্রই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিল লোকগুলো। উপস্থিত সকলকে একে একে আঘাত করে সেখানেই ধরাশায়ী করে ফেলল যাবেদ। বাঁচার রক্ষে না দেখে ডেভিড কাতরাতে থাকা মেয়েগুলোর মাঝে একটি মেয়েকে তুলে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বন্দুক তাক করে। তৎক্ষণাৎ তাবুর ভেতরে বন্দুক হাতে নিয়ে প্রবেশ করল কয়েকজন এজেন্ট। ভেতরে অবস্থা দেখে সবাই চমকে যাওয়ার উপক্রম। নিজেদেরকে সামাল দিতেও কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেদের সামাল দিয়ে ডেভিডের দিকে তাকাল সবাই। মেয়েটির মাথা বরাবর বন্দুক তাক করে আছে ডেভিড। উপস্থিত সকল এজেন্টগণ তার দিকে বন্দুক তাক করে আছে। কিন্তু যাবেদ বন্দুক তাক করে আছে মেয়েটির কপাল বরাবর। কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে সবার উদ্দেশ্য করে বলল ডেভিড,
‘ সবাই বন্দুক নিচে রাখো। আর আমার দিকে দাও। আর এখান থেকে আমাকে যেতে দাও। নয়তো একে গুলি করে দেবো।’

এরপর আর কিছু বলতে পারেনি ডেভিড। তার পূর্বেই মেয়েটির ডান পায়ে হাঁটুর নিচ বরাবর গুলি ছুঁড়ল যাবেদ। তৎক্ষণাৎ মেয়েটি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে গেল। একটুও সময় ব্যয় করেনি যাবেদ। বন্দুকটা উপর দিকে তুলেই ডেভিডের বাম পাশের বুক বরাবর বন্দুক তাক করে ট্রিগার চাপ দিল। সাথে সাথেই আবার কপাল তাক করে ট্রিগার চাপ দেয়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে বন্দুকের ভেতর থেকে দুটো গুলি ছোটে। লক্ষ্যবস্তুর দিকে সাঁই করে ছুটে চলল গুলি দুটো। অব্যর্থ নিশানা। একটি গুলি ডেভিডের বাম পাশের বুক বরাবর। অপর গুলিটি আঘাত হাতে তার কপালের মধ্যভাগে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এর মাঝেই কী থেকে কী হয়ে গেল। অবিলম্বেই পুনরায় ডেভিডের কপাল তাক করে গুলি ছুঁড়ল যাবেদ। আগের গুলিটির পাশ দিয়ে সোজা তার লক্ষ্যবস্তু তথা ডেভিডের কপালে মধ্যভাগের পাশে আঘাত হানল। ডেভিডের দেহটা মৃদু একটি কাঁপুনি দিয়ে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। ডেভিডের দেহটি দুটি বড়-বড় শ্বাস নিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই সকলের মুখে খুশির জোয়ার বইছে।

বেশ কিছুক্ষণ পরই একটি হেলিকপ্টার এসে, উপর থেকে গোটা পঞ্চাশের মত মেয়েদের জামা-কাপড় দিয়ে গেছে। অবশ্য এর পেছনে অবদান রয়েছে প্রফেসর নিয়াকের। তবে তাকে জামাকাপড়গুলো পাঠানোর কথা জানিয়েছে ফারহান। অবশ্য সেও যাবেদের আদেশেই ফোন করেছিল। প্রায় সকল এজেন্টারাই অনাহত রয়েছে,কেবল একজন বাদে। তবে সেও গুরুতর আহত নয়। শুধু একটি গুলি তার বাম হাতের দিক দিয়ে ঘেষে গেছে। এতে চামড়ার সাথে কিছুটা গোশত চলে গেছে। কিন্তু সুস্থ আছে। এজেন্টদের সকলকে আদেশ অনুসাতে যাবেদ বলল, ‘ বাহিরে বন্ধি করে রাখা মেয়েগুলোকে ছেড়ে দাও। আর তাদের হাতে পাঠানো জামা-কাপড়গুলো দিয়ে উক্ত তাবুর ভেতরে পাঠিয়ে দাও। যাতে তারা মেয়েরাই তাদের জাতিকে সেবা করে। এছাড়াও এই কাজগুলো মেয়েদের।’
যাবেদের আদেশ মানতে বাধ্য সবাই। তাই তার বলা কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন এজেন্টগণ। সকাল হতেই শুরু হয় গণমাধ্যমগুলোতে তোলপাড়। প্রতিটি চ্যানেলে কেবল একটাই নিউজ।

আপনারা সকলেই অবগত আছেন, দেশে খুনের তোলপাড় চলছে। গতকাল রাতে খুনীদের আস্তানায় যাবেদের নির্দেশনা মোতাবেক হামলা চালানো হয়। যে গত কয়েকদিন আগেও সিরিয়াল কিলিংয়ের একটি কেসে নিজের সাহসিকতা দেখিয়েছিল। এবারেও তার নেতৃত্বতেই হামলা চালানো হয়। খুনীদের আস্তানা ছিল সিলেট পাহাড়ের ধারে। সেখানে হামলা চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ৫৪টি যুবতি নারী। এবং ধরাশায়ী করা হয় ৪০ জন। যাদের মধ্যে ছয়জন সুস্থ। এছাড়া সবাইকে আহত অবস্থায় ধরা হয়। হামলার সময় কেবল একজন অফিসার আহত হয়, তবে ততটাও গুরুতর আহত হননি। এছাড়াও হামলাকারী তথা খুনীদের প্রধান নামক লিডারকে ইনকাউন্টার দিয়ে মারা হয়। হামলার সময় খুনীদের দলের নিহত সংখ্যা ৮৩ জন। এই ছিল সর্বশেষ আপডেট নিউজ।

দুদিন পর,
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কফি হাতে নিয়ে পান করছিল। এমতাবস্থায় একটি মেইল এলো,

” প্রথম টাস্ক পূর্ণ করার জন্য তোমাকে স্বাগতম এজেন্ট যাবেফ। তবে দ্বিতীয় টাস্ক নেবার জন্য তৈরি থেকো। খুব শীঘ্রই তোমার সাথে আমার মোলাকাত হতে যাচ্ছে। ”

ইতি
ডেভিড

সাজ-সকালে এমন একটি মেসেজের জন্য মোটেও তৈরি ছিল না যাবেদ। তবে ততটাও আমলে নিল না সে। কেননা ডেভিডকে সে নিজ হাতে মেরেছে। তবে পুনরায় জীবিত কী করে হলো? আর এরকমটি হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই এটিকে একটি ফেইক মেসেজ ভেবে ভুলে গিয়ে নিজের কাজে মনোযোগী হলো।

— সমাপ্তি —

* গল্পটা আপনার কতটুকু ভালো লেগেছে?
* কী কী বিষয় ভালো লেগেছে?
* কোন কোন বিষয়গুলো ভালো লাগেনি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here