খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,দ্বিতীয় পর্ব

0
513

খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,দ্বিতীয় পর্ব
যাবেদ খাঁন আবু বকর

বাম হাতটি উঁচু করে চোখের সামনে ধরল যাবেদ। নয়টা বেজে তেরো মিনিট। ইতোমধ্যেই রুমে এসে ডেকে গেছে তাবিব। খাবারের জন্য দ্রুত নিচে যেতে বলেছে সে। বেশি ভাবনায় বিভোর না হয়ে, ল্যাপটপটি বন্ধ করে একটি ব্যাগের ভেতরে পুরে নিল। অবশ্য ব্যাগটা কাঁধে নেওয়ার মত। অতঃপর ব্যাগটি হাতে দ্রুত নিচে নেমে এলো। তাকে নিচে আসতে দেখেই বলে উঠল তাবিব,
-” এসো, তাড়াতাড়ি এসে বসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম। ”

তাবিবের কথায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাল না সে। চুপচাপ টেবিলের পাশে থাকা চেয়ারটি টান দিয়ে, তাতে বসে পড়ল। রুটিতে জেলি লাগানো আছে। এবং তা একটি কাচের প্লেটে সুন্দরভাবে পরিবেশন করা রয়েছে। হাত বাড়িয়ে একটি জেলি মাখানো রুটি মুখে তুলে খেতে আরম্ভ করল। তৎক্ষণাৎ তার উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখল তাবিব,
-” শুনলাম, অলিনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না-কি তোমার কাছে হস্তান্তর করেছে! তা কী পেলে?”
-” হ্যাঁ, তবে তেমন কিছুই পাইনি। এছাড়াও সন্দেহের বীজ বপন করার মত এখনো কিছুই পাওয়া যায়নি। ” হতাশায় নিমজ্জিত কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-” তো, এখন কী করবে ভাবলে?” পুনরায় উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল তাবিব।
-” হেডকোয়ার্টারে যাবার জন্য বলা হয়েছে। এখন সেখানেই যেতে হবে। এছাড়া আপাতত আর কিছুই ভাবার নেই। ” রাশভারী কণ্ঠে পুনরায় বলে উঠল যাবেদ।
-” ওহ আচ্ছা! এছাড়া আমারও আজকে অফিসে যেতে হবে। দেখি কী হয়! ”

পুনরায় নেমে এলো তাদের মধ্যে নিস্তব্ধতা। যেন বাড়িতে কারোই উপস্থিতি নেই। কেবল খাবার চাবানোর ফলে চিবুনির শব্দটুকু আসছে। দ্রুত খাবার খেয়ে টেবেলিরে উপরে রাখা বক্স টিস্যু পেপার থেকে একটি হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে তৎক্ষনাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল যাবেদ। হাতে কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটি নিয়ে দ্রুত পায়ে বাসা ত্যাগ করল। বাসা থেকে বেরিয়েই গ্রেজে প্রবেশ করল। অতঃপর গ্রেজে থাকা গাড়িতে চড়ে ছুটতে লাগল সামনের দিকে। উদ্দেশ্য এখন তার হেডকোয়ার্টার। গড়ি যেন আপন মনে চলতে শুরু করেছে। এক রকম স্পীডে গাড়ি চলতে চলতে শহর পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে চলতে লাগল। ইতোমধ্যে জঙ্গলের প্রথম সীমানা পাড় করে মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করেছে। সামনে কেবল কয়েকটি মোটা এবং বিশাল লম্বা গাছ নজরে আসছে। কিন্তু এ দেখে মোটেও বিচলিত হলো না যাবেদ। গাড়িতে বসেই প্যান্টের পকেট থেকে ডান হাত দিয়ে ফোনটি বের করল সে। অতঃপর স্ক্রিনে কয়েকটি চাপ প্রয়োগ করে একটি ফ্যাংশনে প্রবেশ করল। তৎক্ষণাৎ স্ক্রিনে ভেসে উঠল দু’টি লেখা। এবং তা সুইচ আকারে। সুইচের উপরের অংশটুকু লাল রঙের। এবং মধ্যবর্তী অবস্থানে লেখা রয়েছে অফ। এবং তার নিচেই সবুজ রঙের বাটনটির মধ্যবর্তী স্থানে লেখা রয়েছে অন।

দ্রুত অন বাটটিতে চাপ প্রয়োগ করল সে। আকস্মিকভাবে তৎক্ষণাৎ তার গাড়িটি নিচের দিকে দেবে যেতে লাগল। তবে এ দেখে একটুও চমকায়নি যাবেদ। যেন সে আগে থেকেই জানত এমনটাই ঘটবে। পুনরায় আকস্মিকভাবেই গাড়ি নিচের দিকে দেবে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ উপর দিকে তাকাল যাবেদ। নজরে এলো তার, প্রায় সাত থেকে আট ফিট্ উপরে ফাঁক হয়ে থাকা দু’দিকের মাটি একত্রে মিশে যাচ্ছে।

উপরের মাটি মিশে যেতেই যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। এখন কোনো ভাবেই বুঝার উপায় নেই, এখানে একটু আগে এতবড় একটি টানেলের মুখ ছিল। গাড়িটাই যে এরকম নিঃশব্দে নিচে নেমে গেল কী করে সেটাও একটা রহস্য। উপরে টানেলের মুখ বন্ধ হয়ে যেতেই লাইট জ্বলে উঠল টানেলের। বিশাল লম্বা এবং সরু একটি টানেল। তবে বিভিন্ন রঙের লাইটের আলোতে জ্বলজ্বল করছে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনের দিকে আগাতে লাগল যাবেদ। তবে এর পূর্বে একটি সবুজ রশ্মি এসে গাড়ির সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত স্ক্যান করল। সবুজ রশ্মিটা আচমাকাই নিস্ক্রিয় হয়ে গেল। পাশেই একটি বোর্ডে গ্রিন সিগ্ন্যাল লেখা উঠল। অতঃপর নিশ্চিত হয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগল সে।

কিছুদূর আগাতেই লক্ষ্য করল যাবেদ, অদূরেই একটি শূণ্য মাঠ রয়েছে। আকারে খুব একটা বড় না হলেও, মোটামুটি বেশ বড় বলা যায়। তবে মাঠে ঢুকতে হলে একটি গেট রয়েছে। যদিও গেট রয়েছে সচ্ছ কাচের দেয়াল। কিন্তু এটি যে পলি কার্বনেট গ্লাসের চাইতেও অত্যাধিক মজবুত, তা যাবেদের ভালো করেই জানা আছে। অতঃপর উক্ত থাই গ্লাসের তৈরি দেয়ালের কাছে এসে গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলো সে। পকেট থেকে ফোনটি পুনরায় বের করে স্ক্রিনে কিছুক্ষণ চেপে একটি ফাংশনে প্রবেশ করল। অতঃপর উক্ত ফাংশনে প্রবেশ করা মাত্রই স্ক্রিনের মধ্যস্থানে ভেসে উঠেছে ফিঙ্গার প্রিণ্ট দেওয়ার ভেরিফাই কোড অপশন। দ্রুততার সাথে সেখানে হাত রাখল যাবেদ। হাত রাখা মাত্রই ফোন থেকে নিম্নমানের একটি সবুজ রশ্মি এসে ঘিরে ফেলে তার হাতের আঙুলটুকু। কিছু সময় বাদে আপনা-আপনি ভাবে সকল কিছু অফ হয়ে যায়। নিম্ন আলো ভেসে আসাটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। তৎক্ষণাৎ আকস্মিকভাবে সামনে থাকা সচ্ছ কাচের দেয়ালটি দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এ দেখে যে কেউ অবাক হয়ে হা করে যেতে বাধ্য। কিন্তু যাবেদ যেন এগুলো দেখে মোটেও অবাক হয়নি। দ্রুত গাড়ি চালু করে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।

দূর থেকেই বুঝা যাচ্ছে এটি একটি ছোটোখাটো গ্যারেজ। আগে কোনো গাড়ি নজরে না আসলেও এখন বেশ কিছু গাড়ি নজরে এসেছে তার। নিজ গাড়িটি মাঠের এক কর্ণারে পার্ক করে দ্রুত গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে এলো সে। অতঃপর মাঠের ডান দিকে অবস্থিত দুই তলা বিশাল একটি ভবনের দিকে তাকাল। ভবনের দিকে তাকিয়ে কোনো কিছু ভাবনা বাদ দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে ভবনের কাছে এসে দাঁড়ায়। সামনেই একটি লিফট রয়েছে। অবশ্য এটি যেই সেই লিফট নয়। কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির পক্ষে কখনো এটি নির্বাচন করা সম্ভব নয় যে এটি একটি লিফট। ভবনের একটি দেয়ালে হাত রাখলো যাবেদ। তৎক্ষণাৎ টুট করে শব্দ হলো। অতঃপর দেয়ালটি মধ্যভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দেয়ালটির পূর্বের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা দেখলে যে কেউ চমকাতেই বাধ্য। তবে সেদিকে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান দিল না সে। দেয়াল দুদিকে বিভক্ত হওয়া মাত্রই একটি দরজা নজরে এলো তার। তবে দরজাটি খুলবার মত কোনো কিছুই নেই। দরজাটির ডান দিকে তাকাতেই একটি বাটন নজরে এলো তার। অতি দ্রুততার সাথে বাটনটি প্রেস করে সে। তৎক্ষণাৎ দরজাটির মধ্যভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দ্রুত হেটে লিফটের ভেতরে প্রবেশ করে যাবেদ। তবে অবাক ব্যাপার হলো যাবেদ লিফটে পবেশ করা মাত্রই দেয়ালের মধ্যভাগে বিভক্ত হওয়াটাও একত্রে মিলে যায়। এবং লিফটের দরজা দুটিও পরস্পরে মিলিত হয়ে যায়। একটি সুইচ বোর্ড নজরে আসছে তার। তবে সেখানে পিন কোড দেওয়া রয়েছে। অতঃপর বোর্ডে থাকা দশটি নম্বরের মাঝে চার ডিজিটের একটি কোড প্রদান করল। তৎক্ষণাৎ লিফট চলতে আরম্ভ করল। কয়েক সেকেন্ড লিফট চলতেই আচমকাই একটি মৃদু ঝাঁকুনি খেয়ে দরজাটি পুনরায় মধ্যভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। অতঃপর দ্রুত হেঁটে লিফট থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসে। দোতলা ভবনটি দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবার উপক্রম। ভবনের পেইন্টিং নিয়ে মন্তব্য না করলে বোধহয় কিছুটা অপূর্ণ থেকে যায়। সম্পূর্ণ ভবনের রঙ ক্রিম এবং সাদা রঙয়ের সংমিশ্রণ। এবং ভবনের ঠিক মধ্যস্থানে একটি বড়সড় স্থান নিয়ে গোলাকার পাড় নিয়ে এরিয়ায় কালো চিহ্ন দিয়ে ঘেরা। এবং তার ভেতরে রয়েছে সাদা রঙ। গোলাকার এরিয়ার মাঝে দুই কার্নিশ দিয়ে কিছুটা ১৮০° এঙ্গেল গাছের লতার মত দুটি নীল রঙয়ের পাতার নক্সা খোদাই করা। দুই পাতার একেবারে উপর দিক রয়েছে একটি গার্ড শিলড। গার্ড শিলডের মধ্যস্থানে রয়েছে একটি স্টার। এবং নিচ দিকে রয়েছে পাতা আকৃতির খোদাইকৃত চিহ্ন। এবং শিলডের উপর দিকে কিছুটা প্যাচিয়ে লেখা রয়েছে ” DIDO “। গার্ড শিলডের একটু নিচের দিকেই কিছুটা বড়বড় অক্ষরে খোদাই করে লেখা রয়েছে ” Defence Investigate AND Detective Organisation “। তার একটু নিচেই “M” প্রকৃতির দুটি বক্স রয়েছে। এবং সে দুটি বক্সের নিচ দিকেই সুন্দর করে খোদাই করা হয়েছে একটি চারকোণা আকৃতির বক্স। এবং উক্ত বক্সের মধ্যস্থানে কালো রঙয়ের কালি দিয়ে খোদাই করে লেখা হয়েছ ” DIDO “।

ইতোমধ্যেই কয়েকটি রোবটিক্স গার্ড নজরে এসেছে তার। তবে তারা শুধু হাতে বন্দুক নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে কেবল মাথাটা নড়াচড়া করে চারদিক নজরে রাখছে। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। বারান্দা দিয়ে হেঁটে একেবারে শেষে মাথায় একটি রুমের কাছে এসে দাঁড়াল সে। তৎক্ষণাৎ একটি সবুজ রশ্মি এসে যাবেদের মাথা থেক পা পর্যন্ত স্ক্যান করল। অতঃপর আচমকাই অদৃশ্য হয়ে গেল সেই সবুজ আলো। তৎক্ষণাৎ টক করে একটি আওয়াজ তুলে তার সামনে থাকা দরজাটি খুলে যায়। দ্রুত পায়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে যাবেদ। ভেতরে প্রবেশ করতেই বেশ কিছু লোক কম্পিউটারে কাজে ব্যস্ত আছে তা নজরে আসে তার। একটু দূরেই সবার কাজ দেখতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু যাবেদকে দেখামাত্রই দ্রুত পায়ে হেঁটে তার সামনে এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর বিনয়ী কণ্ঠে তার উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল সে,
-‘ হেই ইয়াং ম্যান। কী খবর তোমার? বহুদিন পর দেখা পেলাম তোমার!’
-‘ হ্যাঁ তা বলাই যায়। এতদিন আমার প্রয়োজন ছিল না তাই আমার দেখা পাওনি। এখন আমার প্রয়োজন পড়েছে। তাই আমার দেখা পেয়েছ। তার আগে বলো, প্রফেসর নিয়াক স্যার কোথায়?’ কিছুটা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল যাবেদ।
-‘ তিনি তো একটু আগে কনফারেন্স রুমে গেলেন। তুমি কনফারেন্স রুমে যেতে পারো। কেননা একটু আগে আমাকে তিনি বার্তা দিয়ে গেছিলেন তোমাকেও কনফারেন্স রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার।’ ধীর কণ্ঠে জবাব দিল মার্ক।
-‘ ধন্যবাদ। আসছি তবে। পরে কথা হবে।’

সেখানে আর এক মুহূর্তে দেরি না করে দ্রুত পায়ে উক্ত রুম ত্যাগ করল সে। তৎক্ষণাৎ কনফারেন্স রুমের দিকে যেতে লাগল। মার্ক যেদিকে হেঁটে যাচ্ছিল, সেদিকেই যেতে আরম্ভ করল। অবশ্য এরও কারণ আছে। ইশারায় তাকে অনুসরণ করতে বলেছে মার্ক। তাই তার পেছনে পেছনে যাচ্ছে সে। মার্কের দেহের উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট হবে। গায়ের রঙ শ্যামলা। ভবনের দোতলা এখন গার্ডদের ছড়াছড়ি। দুকদম না হাঁটতেই একটি করে রোবটিক্স গার্ড এবং মানুষ গার্ড দেখা যাচ্ছে। একটি রুমের কাছে এসে থামলো তারা। ইশারায় এই রুমটাই উক্ত রুম বলে সেখান থেকে চলে গেল মার্ক। দরজার কাছে দাঁড়াতেই তৎক্ষণাৎ পূর্বের ন্যায় একটি সবুজ রশ্মি এসে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করে নেয়। আচমকাই পূর্বের মত সবুজ রশ্মিটি উধাও হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ দরজাটি টক করে আওয়াজ তুলে খুলে যায়।দ্রুত হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করে যাবেদ। তৎক্ষণাৎ তার উদ্দেশ্য করে একটি আওয়াজ ভেসে এলো, ” এসো “।

একটি রুম তন্মধ্যে উপস্থিত রয়েছে একটি লম্বাটে ডেক্স। ডেক্সের দুই ধারে রয়েছে মোট ১৮টি চেয়ার। এবং সামনে রয়েছে একটি মনিটর। উক্ত মনিটরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুঠাম দেহের একজন সুন্দর পুরুষ। রুমে উক্ত ব্যক্তি সহ আরো ছয়জন উপস্থিত আছে। যাবেদ দ্রুত হেঁটে ডেক্সের ডান দিকের প্রথম চেয়ার অবস্থান করে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মনিটরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
-‘ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম যাবেদ। তবে এখন আমাদের আলোচনা শুরু করা যাক!’ ধীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ জি স্যার। ‘ সকলে সম্মতি প্রদান করল।

অতঃপর তৎক্ষণাৎ মনিটরে একটি ছবি ভেসে উঠল। অবশ্য ছবিটি গতদিন হওয়া খুনের ছবি। সমুদ্রে তীরে পাওয়া ভয়ানকভাবে ক্ষত হওয়া তিনটি মেয়ের দেহ। তা দেখিয়ে বলতে লাগলেন প্রফেসর নিয়াক,
-‘ গতদিন সমুদ্র তীরে পাওয়া যায় এই তিনটি লাশ। আর খুনগুলো খুব বাজেভাবে করা হয়েছে। এরকমভাবে করা খুন, খুব কম সংখ্যক দেখা যায়। ‘

পুনরায় নতুন একটি ছবি মনিটরে ভেসে উঠল। তা দেখিয়ে পুনরায় বলতে আরম্ভ করলেন প্রফেসর নিয়াক,
-‘ প্রতিটি মৃত দেহ ছিল মেয়েদের। এবং সবগুলাই উদ্ধার করা হয় নগ্ন ভাবে। তবে সবচেয়ে বড় অবাক বিষয় হচ্ছে, মেয়ে তিনটির বুকের উপর এই সাইন পাওয়া গেছে। আমরা সবাই অবগত আছি এই সাইন কাদের! ‘ পুনরায় সুস্থ এবং ধীর কণ্ঠে কথাগুলো বললেন প্রফেসর।
-‘ কিন্তু বাংলাদেশে ইলুমিনাতি? ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। এছাড়াও ইলুমিনাতির সাইনটা এক হলেও কাজগুলো ভিন্ন বলা যায়। ইলুমিনাতি মূলত ধর্মীয় বিষগুলোর উপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে নেওয়ার জন্য এবং দাজ্জালকে পৃথিবীতে আনার জন্য কাজ করে। কিন্তু তারা যে এরকম ভাবে খুন করে তা জানা ছিল না।’ হতাশায় নিমজ্জিত কণ্ঠে বলে উঠল যাবেদ।
-” এগুলো ইলুমিনাতির কাজ নয়। কেউ ইলুমিনাতির হুবহু সাইন ব্যবহার করে খুনগুলো করছে। যাতে করে সকল দোষ ইলুমিনাতির উপর চাপে। এর ফলে করে এ ব্যাপারে খুব কম মানুষেই ইনভেস্টিগেট করবে। আর এই সুযোগটাই তারা ব্যবহার করে আরো ভয়ানক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাবে। যার ফলে এই রাস্তাটি বেছে নিয়েছে। এছাড়াও আরো একটি চমকপ্রদ খবর হচ্ছে, মেয়ে তিনটিকে মারা হয়েছে অত্যাচার করে। এছাড়াও গ্রুপিং করে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর তিনটা মেয়ে একদিনেই মারা যায়নি। একদিন পর পর একজন করে মারা হয়েছে। যেমন, আজকে একজন তো কাল একজন। এরকম ক্রমানুসারে মারা হয়েছে তাদের।” কিছুটা রাগ মিশ্রিত স্বরে কথাগুলো বললেন প্রফেসর।
-‘ ইলুমিনাতির লোকজন আবার ধর্ষণের কাজেও লিপ্ত হয়েছে! এর মানে দাঁড়ায়, সাধারণ লোকদেরকে ভড়কে দেওয়া। এবং সকল ক্ষেত্রেই কাজেই ইলুমিনাতির ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া।’ হাসিযুক্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলল যাবেদের পাশে বসে থাকা এজেন্ট ফারহান।

পুনরায় স্ক্রিনে একটি ছবি চালু করে বলতে লাগলেন প্রফেসর নিয়াক,
-‘ এছাড়াও লাশ তিনটির পাশে একটি চিঠি পাওয়া যায়। যেখানে রয়েছে রোমান সংখ্যায় এক,দুই এবং তিন। এবং তার নিচে লেখা রয়েছে ” Gift from Illuminati “। বললেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ কিন্তু এগুলো তো মনে হচ্ছে হাতে লেখা! আজকাল ইলুমিনাতির লোকজন হাতে লেখা ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছে?’ হাসতে হাসতে বলল উপস্থিত থাকা এজেন্ট ইয়াফ।

স্ক্রিনে নতুন একটি ছবি উপস্থাপন করলেন প্রফেসর নিয়াক। অতঃপর বলতে আরম্ভ করলেন তিনি,
-‘ গতদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেছে আমাদের তরুণ এজেন্ট যাবেদ। তবে বাঁচতে পারেনি তার স্ত্রী। ‘

এ কথাটি শুনে তৎক্ষণাৎ চোখ দু’টি বড়বড় করে প্রফেসরের দিকে তাকাল যাবেদ। যেন কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। তাকে অবাক করে দিয়ে পুনরায় বলতে লাগলেন প্রফেসর,
-‘ হ্যাঁ যাবেদ, হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না কথাগুলো। কিন্তু এটাই সত্য। তোমার বাড়িতে ব্যবহার করা থাই গ্লাসগুলো থেকে আঘাত প্রাপ্ত থাই গ্লাসটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। মানে, যে থাই গ্লাস ভেদ করে গুলি ভেতরে প্রবেশ করেছে, সেই থাই গ্লাসটি বুলেট প্রুফ পলি কার্বনেট গ্লাস ছিল না। আর থাই গ্লাসটা লাগানো হয়েছিল গত পরশু দিন। অর্থা গতকাল সকালে তোমার উপর হামলা করার ঠিক আগের দিন। তাদের টার্গেট তুমি ছিলে। তোমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল অলিন। গুলি ছোড়া মাত্রই তুমি জুতার ফিতা বাঁধার জন্য নিচু হও। যার ফলে গুলিটি উপর দিক দিয়ে চলে যায়। এবং আঘাত হানে তোমার স্ত্রী অলিনের কপাল বরাবর। ‘ একদমে কথাগুলো বললেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ কিন্তু আমার এগুলো অজানা ছিল। ‘ হতাশ কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-‘ তুমি তোমার বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করোনি। এছাড়াও তুমি নিশ্চয় জানো, গুলির পেছনেও সেই একই সাইন পাওয়া গেছে। এটা দেখে আমিও অত্যাধিক পরিমাণে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে যখন গভীরভাবে পরীক্ষা চালানো হলো গুলিটির উপর। তখন এক নতুন সুত্র এসে আমাদের হাতে ধরা দেয়। মূলত বন্দুকের গুলির পেছনে ইলুমিনাতির সাইনটি নকল ভাবে বানানো। মেশিনে ডাইশ করে অতঃপর কারুকার্য সম্পাদনা করা হয়েছে। কিন্তু বেড়ালকে যদি বাঘের বাচ্চা সাজানো হয়। কেউ যদি সেই বিড়ালকে একটু গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। তবে বুঝাই যাবে এটি বিড়াল। ঠিক তেমনটাই এই বন্দুকের গুলির ক্ষেত্রে। ‘ ধীর কণ্ঠে বললেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ এটা আমার জানা ছিল। কিন্তু বাকিগুলো নয়।’ হতাশায় নিমজ্জিত কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-‘ তোমার জন্য আরো একটি চমক রয়েছে যাবেদ।তোমার বাড়ির কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে আরো একটি চিঠি। এবং সেখানে পূর্বের চিঠির মতই লেখা হয়েছে। তবে এবারের ক্রমিক নম্বরটা একটু বদল ছিল। আগে রোমান সংখ্যায় এক, দুই এবং তিন ছিল। এবার ক্রমিক নম্বর বদল হয়ে চার হয়েছে। এছাড়াও আরো একটি চমক রয়েছে।’ কিছুটা হাসি নিয়ে বললেন প্রফেসর।
-‘ এত চমক? আর এত রহস্য? আমার তো মাথাই গুলিয়ে যাচ্ছে।’ হতাশ কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-‘ এই সময়টাতে গুলিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একটা মানুষ উপর থেকে যতটাই ফিট দেখায় না কেন! ভেতর থেকে ঠিক তরটাই ভাঙা। আপাতত উপর নিজের আত্মবিশ্বাস জাগাও। তোমার সহধর্মিণীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে তোমার। এছাড়াও দেশের পরিস্থিতি তোমাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই নিজেকে পুনরায় গড়ে তুলো। তুমি আগে যেমন ছিলে ঠিক তেমনটাই হয়ে যাল। ভাবো কিছুই হয়নি। আগে কেউ ছিল না, আর এখনো কেউ নেই। ‘ গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বললেন প্রফেসর নিয়াক।

-‘ জি স্যার। পরবর্তী চমক কী ছিল? তা বলুন! ” উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল যাবেদ।

-‘ বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলিতে লেগে ছিল বিষাক্ত বিষ। যা বাংলাদেশের কোথাও এই বিষের দেখা পাওয়া যায়নি বা তৈরি করা হয়নি। আর এই বিষটি আমাদের বাংলাদেশি বিষ নয়। এগুলো অন্যান্য দেশে তৈরি হওয়া বিষ। এছাড়াও এরকম বিষাক্ত ধরণের বিষগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আর এই বিষটা যে সাধারণ মানুষ বাহির থেকে আমদানি করবে এমনটাও নয়। বিষটা কেবল মাত্র মালয়েশিয়াতেই পাওয়া যায়। সেখানেই আবিষ্কার করা হয়েছে এই বিষ। এবং তা সম্পূর্ণ গবেষণার জন্য। এছাড়া কোনো দেশেই অনুমোদিত নয়। এবং এই বিষ কোনো সাইন্টিস্ট ব্যতীত অন্য কাউকে দেওয়া হয় না। তবে তার সার্টিফিকেট এবং ডকুমেন্ট জমা দিয়ে আনতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই তার সম্পূর্ণ ডেটা কালেকশন করা হবে। আমি কী বলতে চাচ্ছি আশা করি বুঝেছ!’ গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বললেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ মানে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো সাইন্টিস্টেরও অবদান রয়েছে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল এজেন্ট ফারহান।
-‘ সঠিক বলতে পারছি না। তবে ধারণা করা যায় মিস্টার ফারহান। ‘ ধীর কণ্ঠে জবাব দিলেন প্রফেসর নিয়াক।

রুমে নিস্তব্ধতার রাজ। যেন কোনো জনমানবের উপস্থিতি নেই। নিস্তব্ধতা ভেঙে যাবেদ এবং এজেন্ট ফারহানের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন প্রফেসর নিয়াক,
-‘ তোমাদের দু’জনের উপর এই কেসের সমস্ত দায়-দায়িত্ব দেওয়া হলো। এবং এখানে উপস্থিত বাকিরা তাদের সাহায্য করবে। ‘

এই বলে কনফারেন্স রুম ত্যাগ করলেন তিনি। ধীরে ধীরে সবাই রুম ত্যাগ করতে লাগল।
,
,
,
— ” চলবে ” —

* কী হতে যাচ্ছে?
* এখানে ডিডো দ্বারা কী বুঝানো হচ্ছে?
* এই ডিডো সংস্থা কি পারবে খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here