খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,তৃতীয় পর্ব

0
463

খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,তৃতীয় পর্ব
যাবেদ খাঁন আবু বকর

তৎক্ষণাৎ উপস্থিত সকলে রুম ত্যাগ করলেও যাবেদ এবং এজেন্ট ফারহান কনফারেন্স রুমেই রয়ে যায়। যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখে এজেন্ট ফারহান,
-‘ কোথা থেকে শুরু করবেন বলে ভাবছেন? ‘
-‘ এখনো শুরুর চিন্তা মাথায় আসেনি। আগে ভালো করে গেড়ে বসতে হবে। এরপর না-হয় ছুটব। ‘ গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-‘ আপনার রহস্য মাখা কথা আপনার কাছেই রাখুন। সোজা কথাকেও প্যাচিয়ে গোল করে দেন। সোজাসাপটা বললেই তো হয়, আমি এখনো ভাবিনি। কী দরকার রহস্য যুক্ত করার?’ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কথাগুলো বলল এজেন্ট ফারহান।
-‘ কিছু কিছু সময় বলতে হয়। আমাদের এখনো উদ্দেশ্যই জানা নেই। আগে খুঁজতে হবে আমাদের উদ্দেশ্য। এরপর খুঁজতে হবে কোন দিকে ছুটব। আর আপাতত সেটাই নথিপত্র করা নেই। এমতাবস্থায় অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে কি ঝাটার বাড়ি খাবার ইচ্ছে হয়েছে?’ কিঞ্চিৎ হেসে প্রথমের কথাগুলো বললেও শেষ কথাটা আগের মত গম্ভীর স্বরে বলে উঠল যাবেদ।
-‘ না বাবা! কোনো ইচ্ছা নেই ঝাটার বাড়ি খাবার। বরং আপনি খান। অন্তত এখন কী করতে হবে তা তো বলবেন? এরকম হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর হবে না সব।’ কিঞ্চিৎ রাগী কণ্ঠে বলল এজেন্ট ফারহান।
-‘ তাদের পর্যন্ত পৌঁছাবার জন্য আমাদের হাতে কেবল দুটি রাস্তা খোলা আছে। ১. সাইন্টিস্ট। ২. কোথা থেকে এই কাচ ক্রয় করা হয়েছে।
কিন্তু আমি তিন নাম্বার খুঁজতে চাচ্ছি। আর তা নিশ্চয়ই হাতের নাগালেই।’ কঠিন স্বরে বলল যাবেদ।
-‘ এখানে তৃতীয় রাস্তা কোথায় পেলেন? আর তৃতীয় রাস্তা খোঁজ করার কী দরকার? দৃশ্যমান পথ দুটির দিকে ছুটলেও তো লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে।’ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখল ফারহান।
-‘ মোটেও না। যারা খুনগুলো করছে তারা কখনো একজন নয়। তারা কয়েকহন মিলে একটি দল গঠন করেছে। আর যদি তারা একটুও আওয়াজ পেয়ে যায়, তাদেরকে টার্গেট করে আমরা এগুচ্ছি। তবে সকল খেল খতম। ভিক্টিম দুজনকে মেরে দিয়ে কেচ্ছা খাল্লাস করে দেবে।
অবশ্য এতক্ষণে রিপোর্ট এসে যাবার কথা! চলো যাওয়া যাক।” চেয়ার ছেড়ে একটি ফাইল হাতে নিয়ে বলল যাবেদ।
-” আরে কীসের রিপোর্ট কীসের কী? আপনার মাথার তারগুলো আসলেও নড়ে গেছে! নয়তো এরকম আজগুবি কথাবার্তা কেউ বলে?” হতাশ হয়ে বলল ফারহান।

যাবেদ সেদিকে ধ্যান না দিয়ে তার মত সে হাঁটতে লাগল। অতঃপর কোনো উপায় না পেয়ে তার পিছুপিছু মাথানিচু করে হাঁটছে ফারহান। উক্ত কনফারেন্স রুম ত্যাগ করে কিছু দূর আগাতেই সামনে একটি রুমের কাছে এসে দাঁড়াল যাবেদ। রুমের দরজার উপরে একটি ছোট্টো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ” গবেষণাগার”। দরজায় করাঘাত করতেই ভেতর থেকে পূর্বের মত ভেসে এলো ” ভেতরে এসো”। তৎক্ষণাৎ আকস্মিকভাবে দরজাটি খুলে যায়। এ দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে যায় ফারহান। কিন্তু কিছুই বলে না সে। ভেতরে প্রবেশ করতেই যাবেদের উদ্দেশ্য করে চল্লিশ বছরে একজন লোক বলে উঠলেন,
-‘ শুভ সকাল মিস্টার যাবেদ।’
-‘ এই ভরদুপুরে শুভ সকাল জানাচ্ছেন। আমি তো ভাবছি মাথার দু-একটা তারটার ছিঁড়ছে। ‘ হাসিমুখে কথাটি বলল যাবেদ।
-‘ তা আর বলো না। সকাল সকাল তোমার আন্টি মাথা খারাপ করে দেয়। এর কী আর করা? এতটুকু গোলমেলে তো হতেই পারে! ‘হাস্যজ্বল মুখে বললেন অজ্ঞাত লোক।
-‘ এখন সব দোষ আমার আন্টির একার। আপনি যে কত ভালো তাও আমার জানা আছে! যাক সে সব কথাবার্তা, যার জন্য এসেছিলাম।’ পুনরায় হাসিমুখে বলল যাবেদ। এদিকে তাদের এরূও খুনসুটি আলাপন দেখে কিঞ্চিৎ ভড়কে যায় ফারহান।
-‘ হ্যাঁ বলে ফেলো!’ উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলেন অজ্ঞাত লোক।
-‘ তো মিস্টার তুষার, যেই কাজটি দিয়েছিলাম তা কি হয়েছে?’ চেহারায় কিছুটা ভাবনাময়ী ভাব ফুটিয়ে প্রশ্ন করল যাবেদ।
-‘ ওহ্ হ্যাঁ! তোমার কাজ কমপ্লিট। ‘ হাসিমুখে জবাব দিলেন গবেষক তুষার।
-‘ তো চিঠিতে কী কী পেলেন? সেখান কার কার ফিঙ্গারপ্রিণ্ট পাওয়া গেল?’ উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল যবেদ।
-‘ চিঠিতে ফিঙ্গার প্রিণ্ট বলতে? তার মানে তুমি আগে থেকেই এই চিঠির ব্যাপারে অবগত ছিলে?’ গম্ভীর কণ্ঠে যাবেদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল ফারহান।
-‘ হ্যাঁ জানতাম। কিছুকিছু সময় জেনেও চুপ করে যেতে হয়। তুষার সাহেব আপনি বলুন, এরপরে কী পেলেন?’ গবেষক তুষারের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে পরবর্তী কথাটি বলল যাবেদ।
-‘ সবগুলো চিঠিতে কেবল একজনের ফিঙ্গারপ্রিণ্ট পেয়েছি!
অবশ্য তার সকল ডেটাবেজ ইতোমধ্যেই কালেক্ট করেও রেখেছি। এই নাও। ‘ একটি ফাইল যাবেদের দিকে এগিয়ে দিয়ে কথাগুলো বললেন গবেষক তুষার।
-‘ ধন্যবাদ গবেষক। আজ তাহলে আসি। ‘ করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে কথাটি বলল যাবেদ।
-‘ ইয়াহ মাই বয়। এণ্ড আই ওয়ান্ট ইউ টু বি সাকসেস ইন দিস মিশন। ‘ করমর্দন করতে করতে কথাটি বললেন গবেষক তুষার।

আর এক মুহূর্তে সেখান অপেক্ষা না করে গবেষণাগার থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে প্রস্থান করল তারা দুজন। অতঃপর দোতলার বারান্দা দিয়ে হেঁটে লিফটে চড়ল তারা। পূর্বের মত একই সিস্টেমে লিফট লক করল। অতঃপর গ্রাউণ্ড ফ্লর তথা 0 বাটনে প্রেস করল যাবেদ। একটি ঝাঁকুনি দিয়ে নীচের দিকে যেতে লাগল লিফট। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই লিফট একেবারব নিচ তলায় এসে থামল। টিং করে একটি শব্দ তুলে তৎক্ষণাৎ খুলে গেল। পিন কোড ব্যতীত লিফট না উপরে যাবে না নিচে। অতঃপর লিফট ত্যাগ করে গ্রাউণ্ড ফ্লরে এসে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল যাবেদ। তার সামান্য পেছনে তাকে অনুসরণ করে হেঁটে চলেছে ফারহান। মাঠ দিয়ে হেঁটে কিছুদূর আগাতেই নজরে এলো তার কালো বিএমডব্লিউ গাড়িটা। দ্রুত গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে চাবি বের করে গাড়ির লক মুক্ত করে। হাতের ইশারায় ফারহানকে গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে বলে সে। অতঃপর গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল যাবেদ। দু’জনেই ভেতরে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতেই সিট বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল যাবেদ। অতঃপর গেটের কাছে আসতেই পকেট থেকে ফোন বের পূর্বের মত একটি ফাংশনে ঢুকল।

অতঃপর তাতে অপশন এলো ফিঙ্গারপ্রিণ্ট প্রদান করার। বেশি দেরি না করে তাতে নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলটি রাখে। নিভু নিভু প্রকৃতির একটি সবুজ আলো তার সম্পূর্ণ আঙুলটি ঘিরে নেয়। কিছু সময় বাদে আচমকাই সবুজ রশ্মিগুলো উধাও হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ সামনে থাকা সচ্ছ কাচের দেয়ালটি মধ্যভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। অতঃপর গাড়ির গতিবেগ আগেত তুলনায় বেশ বাড়িয়ে দিয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগল যাবেদ। টানেলের ভেতরে হরেক রকমের আলোর ফলে আলোকিত হয়ে যাচ্ছে গাড়ির ভেতর। আর তা অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে ফারহান। যেন সে এই পরিবেশ উপভোগ করে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। এমনিতেও বিভিন্ন রকমের আলো একটা মানুষের ভালোলাগায় পরিনত হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। আচমকাই গাড়ির ব্রেক কষলো যাবেদ। তৎক্ষণাৎ ধ্যান ভাঙে ফারহানের। সে যেন একটি ঘোরের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও আচমকা গাড়ির ব্রেক কষে ধরায় উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে যাবেদের দিকে তাকালো সে। কিন্তু যাবেদ সেদিকে ধ্যান না দিয়ে হাতে থাকা ফোনটি আলতো আঙুলের পরশ দিয়ে চাপতে লাগলো। কিছু সময় বাদে পূর্বের মত আরেকটি ফাংশনে প্রবেশ করল সে। স্ক্রিনে দুটি বাটন নজরে আসছে তার। একটি অফ অপরটি অন। বেশি কিছু না ভেবে স্ক্রিনে অন বাটনে হাত রাখল যাবেদ। তৎক্ষণাৎ তাদের গাড়িটি উপর দিকে উঠতে আরম্ভ করল, এবং খুলতে লাগল টানেলের মুখ।

কিছু সময় বাদে আপনা-আপনিভাবে গাড়িসহ নিচে থাকা গোল এরিয়া করা লোহার মেঝে উপর দিকে উঠতে লাগল। এক পর্যায় টানেল থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের দৃশ্য নজরে এলো। তৎক্ষণাৎ গাড়ি স্টার্ট করে কিছুটা সামনের দিকে অগ্রসর হয় যাবেদ। অতঃপর হাতে থাক ফোনের স্ক্রিনে ভেসে থাকা অফ বাটনে চাপ প্রয়োগ করে সে। আকস্মিকভাবে এক স্তুপ মাটি এসে টানেলের উপর দিকটা ভরাট হয়ে যায়। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে সামনের দিকে ছুটতে লাগল। গাড়িতে নিস্তব্ধতার বিরাজমান। শুধু গাড়ি চলনের ফলে ইঞ্জিনের কম্পিত শব্দ কানে ভেসে আসছে। আচমকাই ফারহানের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দিল যাবেদ,
-‘ তুমি কি গাড়ি চালাতে পারো?’ উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল।
-‘ হ্যাঁ পারি। কিন্তু কেন?’ অবাক হয়ে জবাব দিল ফারহান।

কোনোরূপ জবাব না দিয়ে তৎক্ষণাৎ গাড়ির ব্রেক কষে ধরল যাবেদ। তার এরকম কাণ্ড দেখে ভড়কে যায় ফারহান। কিন্তু কিছু বলার মত সময় না দিয়েই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে সে। এবং অপর পাশ দিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে ফেলল। এ দেখে পূর্বের মত এবারেও বেশ অবাক হয় ফারহান। কিছু বলতে যাবে সে তার পূর্বেই বলে উঠল যাবেদ,
-‘ ড্রাইভিং সিটে যাও। এবং গাড়ি চালাও। ‘ কণ্ঠে কিছুটা গম্ভীর ভাব এনে কথাটি বলল সে।

যাবেদের কথা শুনে কিছুটা হলেও ভয় পেয়েছে ফারহান। তাই কোনোরূপ কিছু না বলেই পাশের আসনে চলে গেল সে। ফারহানের পূর্বে যে সিটে বসেছিল, সেই সিটে আসন গ্রহণ করল যাবেদ। কোনো কিছু না বলে কেবল হাতের ইশারায় সামনের দিকে যেতে বলল সে। দ্বিতীয় কোনো কথা না বাড়িয়ে আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে ফারহান। নীরব পরিবেশে হাতে থাকা ফাইলে চোখ বুলাচ্ছে যাবেদ। ফারহানকে চমকে দিয়ে আকস্মিকভাবে তার উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল যাবেদ,
-‘ গাড়ি মীরপুর স্টেডিয়ামের কাছে আফসার মঞ্জিলের উদ্দেশ্য করে রওনা দাও। ‘

অতঃপর পুনরায় নিস্তব্ধতা। দ্বিতীয় একটা প্রশ্ন করেনি ফারহান। সে এতটুকু সময়ে অন্তত এতটুকু বুঝে গেছে, আর যাইহোক! যাবেদ তার সিদ্ধান্তে অটল। এবং সে যেটা বলতেছে সেটাই করবে। তবুও কৌতূহল আর চেপে রাখতে না পারার ফলে উৎসুক হয়ে যাবেদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল সে,
-‘ আচ্ছা তুমি ডিডো সংস্থার সাথে যুক্ত হলে কী করে? আমার জানা মতে তুমি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলে! তবে এই সংস্থার সাথে যুক্তই বা হলে কী করে? এবং এই পর্যন্তই-বা কীভাবে?’
-‘ সে অনেক বড় লম্বা ইতিহাস। বলতে গেলে অন্তত কয়েক ঘন্টা সময় লাগবে। এবং এই মুহূর্তে হাতে এত সময় নেই। মাত্র কয়েক মিনিটের মঝেই গন্তব্যে পৌঁছে যাব। তাই তোমার কৌতূহল বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছি না আমি। তবে কথা দিচ্ছি, কোনো একদিন সেই করুণ ইতিহাস শোনাবো তোমায়। ‘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলল যাবেদ।

কথা বলতে বলতেই গাড়ি মঞ্জিলের বাড়ির গেটের কাছে এসে উপস্থিত। তৎক্ষণাৎ ইশারায় গাড়ি থামাতে বলল যাবেদ। প্রশ্ন না করেই গাড়ির ব্রেক কষে ধরল ফারহান।দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়ল যাবেদ। হাতের ইশারায় ফারহানকে তার পিছুপিছু আসতে বলল। কিছুদূরেই আফসার মঞ্জিল নাম লেখা দোতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি নজরে এলো তাদের। অবশ্য আফসার মঞ্জিল থেকে কিছুটা দূরেই পরিত্যক্ত একটি চার তলা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে ধ্যান দিল না তারা। তবে এই দুটি বাড়ি ব্যতীত চারপাশে আর কোনো ঘর-বাড়ি দেখা যাচ্ছে না। বাড়ির গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়াল দুজন। অতঃপর দরজার পাশে দেয়ালে থাকা কলিং বেল সুইচে চাপ প্রয়োগ করল যাবেদ। কিছু সময় বাদে দরজা খুললেন সাতাশ-আটাশ বছর বয়সের একজন যুবক। উচ্চতার দিক থেকে ততটা না হলেও, মোটামুটি ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি বলা যায়। গায়ের রঙ বেশ সুন্দর। দেহের গঠন সুঠাম। সব মিলিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ বলে প্রশংসা পাবার পাত্র। কিছু বলতে যাবেন যুবক, তার পূর্বেই পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে যুবকের দিকে তুলে ধরল যাবেদ। গার্ড দেখে কিছু বললেন না তিনি। কেবল একটি হাসি ইশারায় ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই ড্রয়িং রুমে সোফায় বসার জন্য বললেন যুবক। অতঃপর যাবেদ এবং ফারহানের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন তিনি,
-‘ হঠাৎ কী মনে করে আজ এই অধমের বাড়িতে? কোনো বিশেষ কারণ?’ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন।
-‘ হ্যাঁ বিশেষ কিছুই বলতে পারেন লেখক রকিব হোসাইন। ‘ গম্ভীর কণ্ঠে বলল যাবেদ।
-‘ জি বলুন কী জন্য আসা? আমি যদি কোনোভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি, তবে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ থাকব।’ নরম সুরে কথাগুলো বললেন লেখক রকিব হোসাইন।

বাংলাদেশে বিখ্যাত নাম্বার ওয়ান লেখক তিনি। চারদিকে তার লেখার বেশ সুনাম রয়েছে। যদিও সে এখনো বিয়ে করেনি। তবে আলিসান বাড়ি গড়ে তুলে একা-একাই দিন কাটাচ্ছেন। লেখক রকিব হোসাইনকে অবাক করে দিয়ে বলল যাবেদ,
-‘ গত কয়েকদিন আগে চারটি খুন হয়। এবং তাদের পাশে একটি করে চিঠি পাওয়া যায়। কিন্তু অবাক বিষয় হলো উক্ত চিঠিগুলো গবেষণা করে আপনার ফিঙ্গারপ্রিণ্টের ছাপ এবং আপনার ডিএনএ পাওয়া যায়। ” গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল যাবেদ।
-‘ খুনগুলোর সাথে যদিও আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আমি হতাশ, কেননা আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে আপনাদের ভড়কে দিয়েছে।’ হতাশ জড়িত কণ্ঠে জবাব দিলেন লেখক রকিব হোসাইন।

তৎক্ষনাৎ টি-টেবিলের উপর রাখা একটি বইয়ের উপর চোখ যায় যাবেদের। বইটির অভার চারদিকে সম্পূর্ণ কালো। তার মধ্যস্থানে একটি ত্রিকোণ আকৃতির ত্রিভুজ। এবং উক্ত ত্রিভুজের মধ্যস্থানে একটি অর্ধ মেলিত চোখের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বইটি দেখে তৎকালীন সময়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ অবাক হয় সে। কিছু বলতে যাবে যাবেদ। এমতাবস্থায় একটি টং করে শব্দ হলো। অতঃপর সোফায় ঢলে পড়লেন লেখক রকিব হোসাইন। ঘটনাক্রমে অবাক হয়ে যায় তারা দুজন। কী হলো তার? এ নিয়ে উৎসুক হয়ে যায় তারা। লেখক রকিব হোসাইনের মাথার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখতে পেল যাবেদ, লাল-লাল তরল পদার্থ মাথা থেকে গড়িয়ে মেঝেতে পতিত হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না যাবেদ। একটু আগে একটি গুলি ডান দিকের থাই গ্লাস ভেদ করে এসে লেখক রকিব হোসাইনের মাথার ডান পাশে আঘাত হানে। যার ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। কিছু সময়ের জন্য ঘোরের মাঝে আটকে গিয়েছিল যাবেফ। যখন বাস্তবে ফিরল হুশ হলো গুলিটি কা করছে? দ্রুত কোমড়ে গুজে রাখা বন্দুকটি হাতে তুলে নিয়ে রুমের বেলকনিতে চলে গেল সে। তৎক্ষণাৎ বন্দুকটি উপরে তুলে গুলি ছুঁড়ল ডান পাশের পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে থাকা অজ্ঞাত লোকটির দিকে।
,
,
,
— ” চলবে ” —

*গুলি করল কে?
*কেন গুলি করা হলো?
*আগামীতে কী হতে যাচ্ছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here