খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,চতুর্থ পর্ব
– যাবেদ খাঁন আবু বকর
বন্দুক তাক করে ওপাশের চারতলা বাড়ির দোতলায় থাকা অজ্ঞাত লোকটির দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল যাবেদ। অব্যর্থ নিশানা! লোকটি অপর পাশের বিল্ডিংয়ের বেলকনি থেকে নড়ে পেছন দিকে ঘুরতে নিলেই গুলিটি গিয়ে সোজা লোকটির বুকের বাম দিকে আঘাত হানে। যার ফলে লোকটি তৎক্ষণাৎ উক্ত স্থানে কিছুটা লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। এবং বেলকনির কিনারায় থাকা স্টিলের বেড়ায় ধাক্কা খায়। পরিত্যক্ত বড়ি হওয়ার ফলে স্টিলের বেড়াটি নড়বড়ে হয়ে ছিল। এর ফলে স্টিলের বেড়াটা একটু হেলে যায়। এবং যখনই অজ্ঞাত লোকটি সেখানে নিজের সম্পূর্ণ ভর প্রয়োগ করে। তখনই বেলকনির স্টিলের বেড়া ভেঙে সোজা পতিত হয় নিচে। এবং লোকটির হাতে থাকা স্নাইপার বন্দুকটি উপরেই রয়ে যায়। অজ্ঞাত লোকটির দেহ দোতলা থেকে নিচ তলায় উপুড় হয়ে পড়া মাত্রই সামান্য একটি ঝুপ করে শব্দ হয়। সেই শব্দে মিশে ছিল তার চাপা আর্তনাদ। অতঃপর নিস্তেজ হয়ে যায় লোকটির দেহ। ইতোমধ্যেই লোকটির পতিত হওয়া স্থানে লাল আভাস মিলেছে। এ দেখে যাবেদ নিজেও বোকা বনে যায়। কী থেকে কী হলো? এসেছিল লেখক রকিব হোসাইনের সাথে কিছু কথা বলতে! কিন্তু সেখানে কী হয়ে গেল?
বেশি কিছু চিন্তা না করে তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে ফোনটি হাতে নিয়ে ডায়েল প্যাডে একটি নাম্বার তুলল সে। অতঃপর কল দিয়ে কানে তুলে নিল। কল রিসিভ হতেই তৎক্ষণাৎ ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
-‘ হ্যালো, রাফিক স্পিকিং। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?’
-‘ হ্যালো আমি যাবেদ। প্রফেসর নিয়াক স্যারের কাছে কলটা দ্রুত ট্রান্সফার করো।’ এক দমে কথাগুলো বলল যাবেদ।
-‘ জি স্যার। একটু অপেক্ষা করুন। আমি এক্ষুণি কলটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।’ ধীর কণ্ঠে ওপাশ থেকে কথাগুলো ভেসে এলো।
কিছু সময় বাদে ওপাশ থেকে ভেসে এলো প্রফেসর নিয়াক স্যারের কণ্ঠস্বর,
-‘ হ্যাঁ যাবেদ বলো।’
-‘ স্যার, এখানেতো অনেক বড় একটি ঝামেলা হয়ে গেছে।’ একদমে কথাটি বলল যাবেদ।
-‘ কী হয়েছে তা বলো!’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ যে চিঠিগুলো আমরা পেয়েছি! উক্ত চিঠিগুলো গবেষণা করে তাতে লেখক রকিব হোসাইনের ফিঙ্গারপ্রিণ্ট পাওয়া যায়। আমরা তার সাথে কথা বলতেই এসেছি। কেবল সোফায় বসে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছিলাম। এমতাবস্থায় আচমকাই পাশের বিল্ডিং থেকে তার উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়ে। গুলিটা সোজা তার মাথায় আঘাত করার ফলে তৎক্ষণাৎ সে মারা যায়। অজ্ঞাত আক্রমণকারীকে পালটাভাবে আক্রমণ চালাতে গেলে লোকটি তার স্থান সরে যায়। যার ফলে অজ্ঞাত লোকটির বুক গুলিবিদ্ধ হয়। এবং বেলকনিতে থাকা স্টিলের বেড়া নড়বড়ে থাকায় উপর থেকে সে পড়ে যায়। এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।’ হতাশায় নিমজ্জিত কণ্ঠে বলল যাবেদ।
-‘ আচ্ছা সমস্যা নেই! আমি পুলিশ পাঠাচ্ছি। তোমরা সেখানে থাকতে পারো অথবা চলে আসতে পারো। তবে চলে আসাটাই হবে উত্তম কাজ। আর কোনো তথ্য পেলে নিয়ে এসো।’ স্বাভাবিক স্বরে কথাগুলো বললেন প্রফেসর নিয়াক।
-‘ না স্যার! আপাতত লেখক রকিব হোসাইনের ঘরটি তদন্ত করা বাকি। দেখা যাক সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় কি-না! যার দরুন উক্ত লোকগুলো পর্যন্ত পৌঁছাবার যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায়।’ উৎসুক হয়ে কথাগুলো বলল যাবেদ।
-‘ তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো। কারণ কেস এখন তোমার হাতে। এটা সমাপ্ত করার দায়িত্ব এখন তোমার। তাই যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই করো। তবে এভাবে যদি লোকজন মারা যায়! তবে কিন্তু চাপ বেড়ে যাবে।’ হাসিযুক্ত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন প্রফেসর নিয়াক।
অতঃপর কলটি কেটে গেল। তৎক্ষণাৎ যাবেদের পেছনে এসে উপস্থিত হয় এজেন্ট ফারহান। তার কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করে সে,
-‘ কী হলো? আর বাহিরেই গুলির আওয়াজ পাওয়া গেল কেন? আর কার সাথে ফোনে কথা বলছিলে?’ কিছুটা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল।
-‘ ওইদিকে দেখো! তবেই বুঝতে পারবে সব। তা ঘরটা তদন্ত করেছ? কিছু পেলে?” অপর পাশে থাকা বিল্ডিংয়ের মেঝের দিকে হাতের ইশারা করে দেখাল যাবেদ।
-‘ নাহ তেমন কিছুই পাইনি।’ কিছুটা হতাশ কণ্ঠে জবাব দিল সে।
অপর পাশে থাকা বিল্ডিংয়ের মঝেতে একটা লোকের মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা দেহ দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে যায় ফারহান। তবে দুইয়ে দুইয়ে মিলিয়ে চার করতে বেশি সময় লাগে না তার। পেছন দিকে ঘুরে যাবেদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবে সে, এমতাবস্থায় দেখতে পেল তার পেছনে যাবেদ নেই। বেশ অবাক হয়। ভাবতে লাগল সে, “এটা কি মানুষ না-কি রোবোট? এত দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় কীভাবে যায়?”। মাথায় একটি হালকা করে থাপ্পড় মেরে বলে উঠে,” ধুর, পাগল হয়ে গেলাম না-কি? কী আবোলতাবোল বকছি। ” দ্রুত যাবেদের খোঁজে বেলকনি ত্যাগ করে রুমে প্রবেশ করে সে।
রুমে প্রবেশ করতেই অবাক হয় সে! যাবেদের হাতে ট্রি-টেবিলের উপর পড়ে থাকা বইটি। এবং সে এটি মনোযোগ সহকারে পড়ছে। এ দেখে কিছুটা অবাক হয়ে ভ্রু কোঁচকে তাকায়। তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করে ফারহান,
-‘ এই ভরদুপুরে বেলা কি ভূতে ধরল না-কি? দু’দুটো খুন হলো আপনার সামনে! আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়ছেন।’ কিছুটা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠল সে।
-‘ জানো কি ফারহান? বই পড়ার শেষ নেই। সকল বইতেই নতুন করে কিছু না কিছু শেখা যায়। আর বই থেকে তুমি নিজের সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। তাই যে কোনো সময়েই বই পাঠ করা যায়।’ রহস্যময়ভাবে একটি হাসি দিয়ে কথাগুলো বলল যাবেদ।
-‘ মাফ চাই ভাই! আপনার রহস্যমাখা কথাগুলো আপনার কাছেই রাখুন। হাতের কাছে ক্লু পেয়েও তা আবার হাত ছাড়া করে ফেললাম। এবার তা নিয়ে ভাবুন।’ হতাশ হয়ে বলল ফারহান।
-‘ কোনো কিছুই ছুটেনি। আমার সাথেই থাকো আর দেখতে থাকো।’ পুনরায় একটি রহস্যময় ভাব নিয়ে কথাগুলো বলল যাবেদ।
-‘ তা আর বলতে। সাইকো এজেন্টের সাথে থেকে সাইকোলজিক্যাল কর্মকাণ্ডই তো শিখব।’ অন্য দিকে তাকিয়ে কথাটি বলল ফারহান।
-‘ সে যাইহোক। এখন কি এখান থেকে যাবে? না-কি এখানেই ঘুমাবে?’ তার কথা শুনে একটি হাসি দিয়ে প্রশ্ন করল যাবেদ।
-‘ আমার মোটেও ইচ্ছে নেই এখানে থেকে মরার। দাঁড়িয়ে আছি কেবল আপনার জন্যই। নয়তো কখন পালাতাম।’ ভয়ে ভয়ে প্রশ্নের জবাব দিল ফারহান।
এ শুনে পুনরায় হাসতে লাগল যাবেদ। তৎক্ষণাৎ বাহির থেকে অ্যাম্বুল্যান্স এবং পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পেল তারা। ফারহানের মুখখানা তখন দেখার মত ছিল। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করে বাহিরে বেরিয়ে এলো যাবেদ। তার পিছুপিছু হেঁটে এলো ফারহান। বাসা থেকে বাহিরে বের হতেই দশজন পুলিশ এবং সাদা এপ্রোন পরিধান করে চারজন লোক নজরে এলো যাবেদের। তারা সবাই এদিকেই আসছে। যাবেদকে দেখা মাত্রই উক্ত স্থানে থেমে গিয়ে সবাই স্যালুট জানায়। যাবেদেও তাদের স্যালুট জানায়। এবং হাতের ইশারায় নিজেদের কাজ করতে বলে। অতঃপর যাবেদ এবং ফারহান একত্রে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। গাড়ির কাছে এসে কী যেন মনে করে যাবেদ তার বিএমডব্লিউ গাড়ির পেছনে চলে যায়! এ দেখে ফারহানও তার পিছুপিছু হেঁটে যায়। যাবেদ তার গাড়ি থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ওপাশে থাকা বিল্ডিংয়ের মেঝে দেখতে থাকে। এদিকে বিরক্ত হয়ে গাড়ির পেছন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাবেদের কাজ দেখছে ফারহান। তবুও কিছু বলতে পারছেন না সে। ফারহানের দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে সে বিরক্তির চরম সীমা অতিক্রম করেছে। তা দেখে যাবেদ ফারহানের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বের বেশ অবাক হয়। দ্রুত ফারহানের কাছে হেঁটে আসতে থাকে। এ দেখে বেশ অবাক হয় ফারহান।
যাবেদের চোখে ভেসে আছে কৌতূহল। কিন্তু ফারহানকে অবাক করে দিয়ে তাকে দাঁড়িয়ে থাকা স্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে যায়। এ দেখে বেশ অবাক হয় সে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস করলা। কিন্তু যাবেদের এরকম কর্মকাণ্ড কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার। গাড়ির নিচ দিকে ঝুঁকতেই সাদা একটি কাগজ নজরে আসে যাবেদের। দ্রুত কাগজটি হাতে তুলে নেয় সে। কাগজ হাতে নিতেই পুনরায় অবাক হয়ে যায় সে। কিন্তু গাড়ির পেছনে থাকা নাম্বার প্লেটের উপর একটি ছোট্টো চিপ নজরে আসতেই আরো বড় একটি ধাক্কা খায়। ছোট্টো চিপ থেকে লাল আলো জ্বলছে আর নিভছে। তবে তা একেবেরেই ক্ষীণ আওয়াজ। দ্রুত খুঁটে খুঁটে ছোট্টো চিপটা হাতে তুলে নেয়। বসা থেকে দ্রুত দাঁড়িয়ে হাতে থাকা কাগজটি খুলে নেয়। কাগজের ভেতরে লেখা দেখে তৎকালীন সময়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। যাবেদের এরকম আচরণে অবাকের শেষ সীমায় উঠে গেছে ফারহান।
কাগজে রোমান সংখ্যায় সাত লেখা রয়েছে। এবং পূর্বের মত নিচে লেখা রয়েছে, ” ইলুমিনাতি”। যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করতে নেয় ফারহান, কিন্তু তার পূর্বেই থামিয়ে দিয়ে কাগজটি তার দিকে বাড়িয়ে দেয় যাবেদ। কাগজে লেখাগুলো পড়ে চমকে যায় ফারহান। তৎক্ষণাৎ যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সে,
-‘ তবে কি লেখক রকিব হোসাইনের জন্য এই নাম্বারিং করা? এরা তো দেখছি সিরিয়াল কিলিং শুরু করে দিয়েছে।’ অবাক হয়ে কথাগুলো বলল।
-‘ তা বলা যায়। কিন্তু এটা যদি সাত নাম্বার হয় তবে পাঁচ আর ছয় নাম্বার দেহগুলো কোথায়? আর এই চিঠির মানে হচ্ছে আরো দু’টি খুন হয়েছে, এবং সামনে আরো হবে। ব্যাপারটা রীতিমত গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। আর এই দেখো।’ কিছুটা অবাক স্বরে কথাগুলো বলে হাতের দিকে ইশারা করল যাবেদ।
-‘ এটা কী? আর এটা এমন নিম্ন আলোতে জ্বলছে-নিভছে কেন?’অবাক হয়ে যায় ফারহান।
-‘ এটা ট্রাকিং ডিভাইস। এটা যদি কোথায় লাগিয়ে দেয়, তুমি চাইলে তাকে ট্রেস করে দেখতে পারবে সে কোথায় কোথায় যাচ্ছে।’ গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল যাবেদ।
-‘ এতো দেখছি আমাদের পেছনেই উঠে পড়ে লেগেছে। আর তারা আমাদের ট্রাক করে বুঝে গেছে আমরা লেখক রকিব হোসাইনের বাড়ি আছি। আর তাদের গোপনীয় তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে লোক পাঠিয়ে তাকে মেরে ফেলে।’ অবাক হয়ে বলল ফারহান।
-‘ এক্স্যাক্টলি! এটাই ঘটেছে। আর তাদের চাল এটাই ছিল।’ হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল যাবেদ।
হাতের ইশারায় দ্রুত গাড়িতে উঠতে বলে যাবেদ। ফারহান দেরি না করে তৎক্ষণাৎ গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে যায়। তার পাশের আসনে উঠে বসে যাবেদ। এবং পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়েল প্যাডে পুনরায় একটি নাম্বার তুলে তৎক্ষণাৎ কল দিয়ে কানে তুলল ফোন। দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
-‘ হ্যাঁ যাবেদ, বলো।’
-‘ যে কাজটা দিয়েছিলাম, তা হয়েছে?’ উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল যাবেদ।
-‘ হ্যাঁ হয়েছে। পাঁচ কিলোমিটার এরিয়ার মাঝে নন-পলিকার্বনেট তথা অই রকম থাই কেবল চারটি দোকানে বিক্রি হয়েছে। আর এই চারটা দোকানে বিক্রি হলেও বেশ কয়েকটি পিস বিক্রি হয়েছে। কেবল একটা দোকানেই এক পিস বিক্রি হয়েছে।’ ওপাশ থেকে কথাগুলো ভেসে এলো।
-‘ আমাকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দে। আর অসংখ্য ধন্যবাদ তিয়াজ।’ হাসিমুখে কথাগুলো বলল যাবেদ।
,
,
— ” চলবে ” —
*ঠিকানাটা কীসের?
*ঠিকানায় গিয়ে কী হবে?
*কী হতে যাচ্ছে?