খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,নবম পর্ব

0
290

খুন সিরিজ দ্বিতীয় সিকুয়েন্স,নবম পর্ব
যাবেদ খাঁন আবু বকর

ঘটনার একটু পেছন থেকে দেখলে বুঝা যাবে এজেন্ট ফারহানের উপস্থিতি কীভাবে শুরু হলো। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক!

গাড়িতে বসে আছে যাবেদ এবং এজেন্ট ফারহান। একটু আগে যাবেদের ফোনে লোকেশন শেয়ার করা একটা মেসেজ এসেছে। গন্তব্যে অনুযায়ী সেই লোকেশন দেখে তারা ছুটে চলল সামনের দিকে। তৎক্ষণাৎ এজেন্ট ফারহানের উদ্দেশ্য করে যাবেদ বলতে লাগল,
-‘ ফারহান, পূর্বের চাইতে আজকের কাজ হবে আরো ঝুঁকিপূর্ণ। আগের ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলেই দেখা যাহ, তাদের পর্যন্ত পৌঁছাবার মত যাদের কাছে ক্লু ছিল, তাদেরকে আমাদের সামনেই যে কোনোভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই সূত্র অনুসারে আজকেও সাইন্টিস্ট রিজওয়ানের মৃত্যু হবে। এবার আমরা তাকে যতটাই সেইফটি দেই না কেন, যে কোনোভাবেই মেরে দেবে। কিন্তু আমাদেরকে এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে। আর সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হলে, তাদের পর্যন্ত আমরা খুব সহজেই পৌঁছে যেহেত পারব। তবে এর জন্য তোমার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য প্রয়োজন পড়বে।’
-‘ আমি সদা প্রস্তুত আছি। আপনি যেমনভাবে বলবেন তেমনভাবেই করব।’
-‘ আমাদের প্রথম ক্লু ছিল তিনটা। সেখান থেকে দুইটা নিয়ে কাজ করতেই আরো নতুন করে ক্লু পাই। কিন্তু প্রথমের ক্লু দুইটা খুইয়ে ফেলি। এবং পরবর্তীতে যেই ক্লু দুটি পেয়েছিলাম, তাও অকৃতকার্য। এখন সর্ব দিক থেকে একটাই ক্লু আছে। এটাকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবে তারা।

পূর্বের ঘটনা অনুসারে আমাকেও ইতিপূর্বে শেষ করে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার তৃতীয় নাম্বার ক্লুর সাথে আমাকেও শেষ জরে দেওয়ার প্লান তাদের। অবশ্য তাদের এই প্লানিং আগে থেকেই করা ছিল। আমাদেরকে শুধু শুধু খাটাবার জন্য এত কিছু। কিন্তু এবার তাদের টোপ তারাই গিলবে যাতে সেই ব্যবস্থা করব। তবে আমি ড্যাম শিওর। আমাকে তাদের আস্তানায় নিয়ে মারা হবে। কেননা তাদের জন্য আমি বেশ বড় একটি স্পেশাল সারপ্রাইজ। আর এই সারপ্রাইজকেই ধামাকেদার সারপ্রাইজ বানাতে হবে। কী বলেছি বুঝতে পারছো?’
-‘ তা বুঝলাম। কিন্তু ধামাকেদার সারপ্রাইজ করবে কীভাবে?’
-‘ আমি আগেই আমার সাথে ট্রাকিং ডিভাইস বসিয়ে নেবো। আমাকে উঠিয়ে নিলেই তাদের পেছন ধরা শুরু করবে। তবে যেখানেই থামুক, ভেতর থেকে একসাথে ছড়াগুলির মত আওয়াজ না হলে ঘুনাক্ষরেও ভুল করে একটি গুলি চালাবা না। মনে রাখবে তবেই খেল খতম। আশা করি বুঝে গেছ!’
-‘ জি বুঝেছি।

কিছু সময় গাড়ি চালানোর পরেই উপস্থিত হয় সাইন্টিস্ট রিজওয়ানের বাড়িতে। অবিলম্বেই যাবেদ দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। ফারহান তার পিছুপিছু নামল গাড়ি থেকে। দ্রুত পা চালিয়ে তারা বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছাল। টানা কয়েকবার কলিংবেল বাজাতেই মধ্যবয়সী এক লোক চোখে মোটা একটি ফ্রেমের চশমা। দরজা খুলে দিলেন তিনি। দ্রুত পায়ে তারা দুজন ভেতরে প্রবেশ করল। তাদের দুজনের এরকম আচরণে লোকটি বেশ অবাক হয়। সোফায় বসে যাবেদ লোকটির উদ্দেশ্য করে বলল,
-” মিস্টার রিজওয়ান, ওয়ান গ্রেট সাইন্টিস্ট! ”

সাইন্টিস্ট রিজওয়ান তাদের কথা শুনে বেশ অবাক হন। দ্রুত তাদের সামনে থাকা সোফায় তিনি বসে পড়লেন। যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন,
-‘ কে আপনি? আমায় চিনেন কী করে?’

তৎক্ষণাৎ ট্রি-টেবিলের উপর থাকা ডাইরির দিকে যাবেদের নজর যায়। দ্রুত হাতে তুলে নেয়। এ দেখে মিস্টার রিজওয়ান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। ডাইরি দেখতে দেখতে তার প্রশ্নের প্রতিত্তোরে যাবেদ জবাব দিল,
-‘ ইলুমিনাতি সংগঠনের সাথে যুক্ত সাইন্টিস্টকে না চেনার কোনো হেতু খুঁজে পাচ্ছি না। ”

এ কথা শুনে রিজওয়ান সাহেব বিষম খান। থতমত খেয়ে তিনি বলতে লাগলেন,
-‘ আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?’
-‘ আরে আরে! হাইপার হচ্ছেন কেন! সঠিক উত্তর দিলে বেঁচে যাবেন,নয়তো ভুবনের মায়া হারাবেন।’
একটি মুচকি হাসি দিয়ে যাবেদ তার কোমড়ে গুজে রাখা বন্দুকটি হাতে তুলে নেয়। তা দেখে রিজওয়ান সাহেব রীতিমত ভড়কে যান।
হাত দিয়ে কপালে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বললেন,
-‘ কী..কী..কী.. বলতে চাচ্ছেন?’
-‘ আপনি বিষাক্ত পয়জন এনেছেন কার কথায়? তথা কার জন্য এনেছেন?’

জনাব রিজওয়ান সাহেব তার ডান হাত উঁচু করে ডাইরির দিকে দেখালেন। ঠিক তখনই একটি বন্দুকের গুলি এসে আঘাত হানে জনাব রিজওয়ান সাহেবের মাথায়। বন্দুকের গুলি দিয়ে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হতেই সেখানেই তিনি মারা যান। তৎক্ষণাৎ যাবেদ ফারহানের উদ্দেশ্য করে বলতে আরম্ভ করে,
-‘ ফারহান প্লান অনুযায়ী সব হচ্ছে। ডাইরিটা হাতে নিয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ো। দ্রুত!’
আচমকাই পুনরায় আরও একটি বন্দুকের গুলি এসে রুমের ভেতর আঘাত হানে। কিন্তু অবাক বিষয় হলো, বন্দুকের গুলিটি শেষ স্থানে থামতেই ছোটোখাটো একটি বিস্ফোরণের ঘটল। যার থেকে চারদিকে সাদা ধোঁয়া ছড়াতে লাগল। এক পর্যায়ে ধোঁয়াগুলো রুমে থাকা সমস্ত বায়ুগুলোকে গ্রাস করে নেয়। সাদা ধোঁয়ার কবলে যাবেদ পড়তেই তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। মুহূর্তেই মাথা চক্কর কেটে উঠল। চোখ মেলে রাখতে পারছে না আর। আচমকাই ঢলে পড়ল মেঝেতে। চোখ মেলে রাখাটা বড্ড দায়। ধীরে ধীরে দুচোখের পাতা একে অপরের সাথে পরস্পরভাবে মিলিত হয়ে যায়।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দুজন লোক। তবে নাকে-মুখে মাস্ক পরিধান করা। অজ্ঞান হয়ে থাকা যাবেদকে কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। কিছু সময় বাদে তাদেরকে অনুসরণ করতে আরম্ভ করে ফারহান।

অতিত থেকে দুজন ফিরে এলো। তৎক্ষণাৎ যাবেদের উদ্দেশ্য করে ফারহান প্রশ্ন রাখল,
-‘ আচ্ছা আসল ইলুমিনাতি কি সত্যি এইসকল কাজগুলো করে থাকতে পারে? যদি নাই-বা পারে তবে তারা কীসের জন্য কাজ করে?’
-‘ মূলত ইলুমিনাতি শব্দের অর্থ হচ্ছে “যারা কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকিত বা জ্ঞানার্জনের দাবী করে” অথবা “বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ অত্যাধিক জ্ঞান সম্পন্ন।” এবং তাদের কাজ হচ্ছে ” শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করে খ্রিস্টান ও মুসলিম ষড়যন্ত্র করা। এছাড়াও তত্ত্বমতে, ইলুমিনাতির এক চোখা প্রতীক প্রমাণ করে যে, ইলুমিনাতি হলো সেই সংঘ যারা একচোখা দাজ্জাল (কিংবা বাইবেল মতে ৬৬৬ বা অ্যান্টিক্রাইস্ট )-এর আগমনের পথ সুগম করছে। কিন্তু আমরা এটাকে নিয়ে যে হারে বাড়াবাড়ি আর উপস্থাপন করতেছি, একটু এঙ্গেল থেকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় আমরা ইলুমিনাতিকে সাপোর্ট করতেছি।’
অবাক হয়ে যাবেদের দিকে ফারহান প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
-‘ আমরা ইলুমিনাতিকে সাপোর্ট করছি বলতে?’
-” একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়, তারা মূলত ইসলাম এবং খৃষ্টীয় ধর্মকে ধ্বংস করতে চায়। আর তাদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, আমরাও তাদের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি। আমরা একেকটা সিম্বল দেখা মাত্রই শুরু করি এটা ইলুমিনাতির সাইন। আবার খাবার নিয়েও আজকাল শুরু হয়েছে ইলুমিনাতির ট্রেণ্ড। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় বস্তু হচ্ছে, ইলুমিনাতির মূল সোসাইটি ঠিক এরকমটাই চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে, আমরা যেন ইলুমিনাতি নিয়ে একে-অপরের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করি। এবং এতে যেন তারা ফায়দা লুটতে পারে। আর আমরা এটা নিয়ে যত তর্কে জড়াব, এতে তাদের মুনাফাটা ততটাই বেশি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা নিজদের ধর্মের প্রচার ভুলে গিয়ে, এখন ইলুমিনাতির প্রচার করি। আমার মতে তোমার যদি ইমান দুর্বল হয়, তবেই তুমি ইলুমিনাতিকে ভয়ের চোখে দেখবে। তবেই তুমি ইলুমিনাতিকে আতঙ্ক অথবা সকল ক্ষেত্রে ইলুমিনাতির রেশ টানবে। আর এতে করে তারা লাভজনক হচ্ছে। আর এই জিনিসটাকেই কিছু লোক নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। তারা ইলুমিনাতির সাইন ব্যবহার করে নিজেদেরকে ইলুমিনাতির সদস্য পরিচয় দিয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ কাজকর্ম করে যাচ্ছে। এটার অবশ্য দুই দিক থেকেই বেনিফিট আছে। আসল ইলুমিনাতিও তাদের কার্যসিদ্ধি করতে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। এবং নকল ইলুমিনাতিরাও খুব সুন্দর করে একেকটা অন্যায় করে যাচ্ছে। আজকালকার সমাজের লোকগুলো নিজের ইমান ঠিক না এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, আর ভয় পাচ্ছে।’
-‘ তো এবার মিস্টার নিককে একটু শক্ত হাতে ধরা যাক! ‘
-‘ তা আর বলতে। তবে শুরু করা যাক!’

দ্রুত পায়ে যাবেদ চেয়ার ছড়ে দাঁড়িয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে নিকের পেছন দিক দিয়ে গিয়ে মাথার চুলগুলো শক্ত করে টেনে ধরল। কণ্ঠে কিঞ্চিৎ রাগচটা ভাবের পাশাপাশি গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করল,
-‘ তোদের এই নকল সংসার প্রধান কে? কোথায় আছে এখন? জলদি জবাব দিস। নয়তো দেরি হলেই টর্চার বাড়বে। ‘
-‘ আমি জানি না। কে সে! আর কোথায় থাকে!’
-‘ ফারহান। এর হাত বাঁধো। আর আমার আস্তানায় নিয়ে চলো। বুঝেছি, এ ব্যাটা এত সহজেই মুখ খুলবে না। ‘
-‘ জি স্যার। আপনি বাহিরে থাকা গাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমি আর আমার টিম তাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।’

যাবেদ দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজা দিয়ে বাহিরে চলতে লাগল। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
মিস্টার নিকের হাত দুটি পেছন দিকে নিয়ে একটি হাতকড়া দিয়ে আটকে দিল। এবং মৃত দেহগুলোর মধ্য থেকে একহনের দেহের পরনে জামা ছিঁড়ে তার চোখ বেঁধে দিল। দুজন কমান্ডো মিস্টার নিকের দুই হাত ধরে হাঁটতে লাগল সামনের দিকে। বিল্ডিংয়ের থেকে বের হতেই যাবেদের নজরে এলো দুটি গাড়ি। একটি সাদা মাইক্রোবাস। অপরটি কালো, তবে তা প্রাইভেট কার। কালো প্রাইভেট কারটি নির্বাচন করে তাতে চড়ে গেল। ফারহান বাহিরে বের হয়ে কালো প্রাইভেট কারের পেছন দিকে মিস্টার নিককে শোয়াইয়ে দিল। গাড়ির পেছনের সিটে যাবেদ এবং ফারহান বসল। অবশ্য সামনের ড্রাইভিং সিটে একজন লোক দেখা যাচ্ছে। ফারহান বাকি ছয়জনকে হাতের ইশারায় বিদায় জানিয়ে ড্রাইভারকে বলে ছুটতে লাগল সামনের দিকে। অবশ্য যাবেদ ইতোমধ্যেই তার নিজস্ব আস্তানার লোকেশন বলে দিয়েছে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা লোকটির কাছে। আচমকাই ফারহানের উদ্দেশ্য করে যাবেদ বলল,
-‘ তো ধামাকা করার জন্য প্রস্তুর?’
-‘ জি স্যার।’

তৎক্ষণাৎ যাবেদ তার হাতে থাকা ছোট্টো রিমোটটির লাল বাটনে চাপ প্রয়োগ করে। বাটনে চাপ প্রয়োগ করা মাত্রই ভুমম করে তুখোড় এক শব্দ ভেসে আসে। রাস্তার বা দিকে মোড় নিতেই দেখা যায়, একটি বাড়ি হাওয়ায় বাজি খাচ্ছে। তার উপরে লাল এবং কালো ধোঁয়ার সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে।

কিছু সময় গাড়ি চলতেই আচমকা যাবেদ গাড়ির ড্রাইভারের উদ্দেশ্য করে গাড়ি থামাতে বলল। ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই যাবেদ তার কোমড়ে গুজে রাখা বন্দুকটি হাতে তুলে নেয়। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা লোকটির মাথার পেছন দিকে বন্দুক তাক করে ট্রিগার চালায়। ঠং করে একটি শব্দ হলো গাড়ির ভেতরে। কিছুটা রক্ত ছিটেছে গাড়িতে। তবে ততটাও নয়। এর হেতু অবশ্য বন্দুকের নলে সাইলেন্সার লাগানো। তবে সেদিকে তোয়াক্কা না করে যাবেদ তার পাশে থাকা গাড়ির দরজাটি খুলে ড্রাইভিং সিটের কাছে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলে লোকটির ঘাড় ধরে টেনে বাহিরে বের করে দেয়। কিছু না বলেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করে। যাবেদের এরকম কাণ্ড দেখে ফারহান যেন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটু পরেই আজেবাজে চিন্তা করতে শুরু করল। কিন্তু যাবেদ তাকে চমকে দিয়ে বলতে আরম্ভ করে,
-‘ তুমি যা ভাবছ তা মোটেও নয়। লোকটির ঘাড়ে নজর দাও। তবেই বুঝতে পারবে, কেন তাকে মেরেছি!’ গম্ভীর কণ্ঠে যাবেদ এতটুকু বলে হাতে তাকা ট্যাবটি ফারহানের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

লোকটার ঘাড় তার পরিহিত ব্লেজারের কারণে ঢেকে আছে। ব্লেজারের কলারের দিকে একটু জুম করতেই চমকে যায়। লোকটির ঘাড়ে ত্রিকোণ একটি পিরামিডের মত। এবং এর মধ্যস্থানে একটি খোলা চোখ আঁকা। যা দেহে ট্যাটু আকৃতির। দুই দুই মিলিয়ে চার বানাতে ফারহানের বেশি সময় লাগে না। সে বুঝে যায় লোকটিকে মারার কারণ। তবে কিছুটা অবাক হয়েছে সে। যেই জিনিস তার নজরে আসে না, তা কী করে যাবেদের নজরে আসে?

৪০ মিনিট হাইওয়ে রোড দিয়ে গাড়ি চলতেই একটি ঘন জঙ্গলের কাছে এসে তারা উপস্থিত হয়। কিছু সময় অপেক্ষা করে গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলতে লাগল। এক পর্যায় ঘন জঙ্গলের কাছে এসে উপস্থিত হয়। চারদিক লতাপাতায় ছেয়ে আছে। তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে গাড়িতে থাকা সুইচ বোর্ডের মধ্য হতে একটি সুইচ চাপ প্রয়োগ করে যাবেদ। ফারহানকে পূর্বের মত এবারও অবাক করে দিয়ে লতা-পাতাগুলো দুদিকে চেপে যায়। এবং আরও ভেতরে যাবার জন্য একটি পিচঢালা রাস্তা তৈরি হয়ে গেল। এরকম দৃশ্য দেখে ফারহান অবাক হলেও যাবেদের মুখের ভাব
পূর্বের মতই আছে। তবে ব্যাপারটি নিয়ে বেশি ভাবছে না ফারহান। পুনরায় গাড়ির গতিপথ বৃদ্ধি করে দিয়ে ভেতর পথ প্রবেশ করল তারা। ভেতরে গাড়ির অবস্থান টের পেতেই আপনা-আপনিভাবে আগের মত হয়ে গেল জঙ্গলের দেয়াল। এবারও এই দৃশ্য দেখে অবাকতার শীর্ষে অবস্থান করেছে ফারহান। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলল না। কিন্তু তার দিকে একবার তাকিয়েও কিছু বলল না যাবেদ। গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর আগাতেই নজরে এলো একটি ছোট্টো কুটির।

ছোট্টটো কুটিরের কাছে এসে যাবেদ গাড়ির গতি থামালো। নিজে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছন দরজা খুলে তৎক্ষণাৎ মিস্টার নিকের কলার ধরে গাড়ি থেকে নামায়। ফারহানকে হাতের ইশারা তাকে অনুসরণ করতে বলে কুটিরের দিকে হাঁটতে লাগল।

তৎক্ষনাৎ গাড়ি থেকে বেনে যাবেদকে অনুসরণ করতে লাগল এজেন্ট ফারহান।

পূর্বদিনের মত আজকেও মিস্টার নিককে কুটিরের ভেতরে নিয়ে চেয়ার উপর বসিয়ে রেখে রশি দিয়া শক্ত করে হাত- বাঁধল। চেয়ারের পাশেই আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে ভরপুর টেবিলটা রয়েছে। একটি টান দিয়ে যাবেদ নিকের বাঁধা চোখের কাপড় ছিঁড়ে ফেলল। টেবিলের উপর একটি ক্লিপ প্লাগ রয়েছে। নেড়েচেড়ে দেখে আকস্মিকভাবে হাতে তুলে নেয়। পাশে থাকা প্লাগ বোর্ডে ক্লিপ প্লাগটি প্রবেশ করাল। ক্লিপ প্লাগের উন্মুক্ত দুই তারের মাথা হাতে তুলে নিয়ে নিকের কাছে এসে দাঁড়ায়। পাশে থাকা চেয়ারটি পা দ্বারা টান দিয়ে কাছে এনে তাতে যাবেদ বসে পড়ে। তার হাতে থাকা তার দুটির একটির রঙ লাল অপরটির রঙ নীল। তারের উন্মুক্ত মাথায় বেরিয়ে থাকা লম্বাটে তামা অংশ দেখলেই যে কারো মনে ভয় বিরাজ করার উপক্রম। চেয়ারে বসে দুই তারের উন্মুক্ত তামাগুলো একত্র করতেই একটা মোটামুটি ধাচের বিদ্যুৎ চমকের বিস্ফোরণ ঘটে। ইতোমধ্যেই নিকের দুই চোখে ভেসে উঠেছে স্পষ্ট ভয়ের রেখা। শান্ত গলায় নিকের উদ্দেশ্য করে যাবেদ তার প্রথম প্রশ্ন পুনরায় উপস্থাপন করল,
-‘ নকল ইলুমিনাতির প্রধান কে? কার আদেশে এতগুলো খুন আর এতগুলো মেয়ের সতিত্ব হরণ করছিস?’
-‘ আমি কিছু জানি না ।’

“আমি কিছু জানি না” শব্দটি নিকের মুখ থেকে বের হওয়া মাত্রই তার দুই হাঁটুতে যাবেদ তার হাতে থাকা তার দুটো চেপে ধরল। ইলেকট্রিক সকের হেতু নিকের দেহ কাঁপতে লাগল। বেশ কিছু সময় ধরে এরকম চলার পর যাবেদ তার হাতে থাকা তার দুটো নিকের দেহ থেকে সরিয়ে নেয়। কাঁপুনি থেমে কিছু সময়ের জন্য নিকের দেহ থম ধরে যায়। খুব ধীর গতিতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। কিছু সময় এভাবে চলতে থাকার পর সে কিছুটা উন্নতি তথা সুস্থবোধ করে। কিন্তু পুনরায় তার উদ্দেশ্য করে যাবেদ গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
-‘ শেষবারের মত ভালোভাবে বলছি, এই নকল ইলুমিনাতির প্রধান কে? স্বীকার কর, নয়তো পরবর্তীতে যা যা করব, জীবনেও ভাবতে পারবি না এমনটা হবার কথা ছিল! তাই বারবার বলছি ভালোয় ভালোয় সব স্বীকার কর। এতে করে তুই বেঁচে থাকার একটা সুযোগ পাবি। দরকার হলে তোকে একটা ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো। সেখানে চাকরি করে নিজের সংসার চালাবি!’

যাবেদের মুখে এরকম কথা শুনে নিক কিছুটা ভড়কে যায়। তবুও তার কথায় কিছুটা আস্বস্ত হয়। যার ফলে বলতে আরম্ভ করে,
-” আসল সকল কিছু মূল হচ্ছে ডেভিড। বর্তমানে সিলেটের পাহাড়ের ধারে ক্যাম্প করে আছে। মেয়ে কিডনাপ ইত্যাদি সব সে এবং তার লোক করে। কেবল মৃত দেহগুলো আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর জানিয়ে দেওয়া হয় কোথায় কোথায় লাশগুলো রেখে আসতে হবে!’ এইটুকু বলেই নিক থেমে গেল। একটু শ্বাস নিয়ে আবার বলতে আরম্ভ করল,
-‘ আমি মৃত দেহগুলো তাদের বলা স্থানে রেখে আসি। আর এর বিনিময়ে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আমি এতটুকুই জানি, আর কিছু জানি না স্যার। ‘

আকস্মিকভাবে তৎক্ষণাৎ রুমের ভেতরে একটি ঠং করে শব্দ হয়। অতঃপর নিস্তব্ধতা। আওয়াজের উৎস যাবেদের হাতে থাকা বন্দুক। আর বন্দুকের আওয়াজের হেতু গুলি। যাবেদের হাতে থাকা বন্দুকটি এখনো নিকের কপাল বরাবর তাক করে আছে। ইতোমধ্যেই একটি গুলি নিকের কপালকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে। এ রকম ঘটনায় পূর্বের মত এবারেও ফারহান বেশ অবাক হয়েছে। কিন্তু এবার আর থেমে না থেকে, তৎক্ষনণাৎ যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
-‘ আপনি তো বললেন একে চাকরি দেবেন। তবে মেরে দিলেন কেন?ঃ
-‘ কিছু সময় শিকারের উদ্দেশ্য করে তার প্রিয় খাবারটা টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। যেখানে আমার সহধর্মিণী বেঁচে থাকতে পারেনি এ সকল নরক কীটদের জন্য, সেখানে এদেরকে ছাড় দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসছে না।’

পুরোনো দিনের মত আজকেও যাবেদ নিকের মৃত দেহটি চেয়ার বাঁধন মুক্ত করে টেনে – হিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে গেল। আজকে অবশ্য পূর্বদিনের মত শিস দিতে হয়নি। এর পূর্বেই নজরে এলো কয়েকটা নেকড়ে সামনে বসে আছে। বেশি দেরি না করে নিকের মৃত দেহটি যাবেদ তাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়। শুরু হলো এক উত্তম পর্যায়ের যুদ্ধ। কে কার আগে খুবলে খাবে নিকের মৃত দেহটি, এ নিয়ে যেন চলছে তুমুল যুদ্ধ। তবে সেটা নিজেদের মধ্যে নয়, নিকের মৃত দেহের উপর। এ দেখে ঠোঁটের কোণে একটি মুচকি হাসি তুলে যাবেদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগল। কিন্তু কৌতুহলতা যেন ফারহানের পিছুই ছাড়ে না। যার ফলে দুই ঠোঁট একত্রে সংস্পর্শ ঘটে বাকযন্ত্রের মাধ্যমে কিছুটা অস্পষ্ট শব্দে বেরিয়ে এলো,
-‘ এগুলো কেমন নেকড়ে? মৃত দেহগুলো খাবলে খাচ্ছে! কিন্তু সামনে থাকা দু’জনের লোকের দিকে মুখ তুলেও তাকাচ্ছে না।’
-‘ ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। আমি তোমার পাশে সুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি বিধায়, এগুলো এখনো শান্ত সুলভ আচরণ করছে। নয়তো এতক্ষণে পরবর্তী মৃত দেহটা থাকত তোমার। ‘

[– চলবে –]

*কী থেকে কী ঘটছে বুঝতে পারছেন?
*এবার কী হতে যাচ্ছে?
* নেকড়েগুলো আসলেই ভয়ানক!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here