খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ১০
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
নীলা চোখ বন্ধ করে ভয়ে কাঁপছে আর তামিম মুচকি হাসি দিয়ে এক পলকে নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।। তামিম নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবে, নাহ এখন নীলুর সাথে এইসব করা ঠিক হবে না।। আগে নীলুর অভিমান ভাঙাই, তারপর তাকে যাচাই করে দেখি আমার প্রতি তার কোনো ফিলিংস আছে কি না।।
এদিকে নীলা অনেক্ষণ ধরে চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু তার সাথে কিছু ঘটছে না দেখে নীলা এবার আস্তে আস্তে তার চোখ খুললো।। চোখ খুলেই নীলা দেখলো তামিম তার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে কি যেন ভাবছে।। নীলা এবার তামিমের থেকে ছুটার জন্য নিজের হাত নাড়াতে লাগলো।। ঠিক তখনই তামিমেরও ধ্যান ভেঙে যায়।।
নীলাঃ আহ্ (হাতে ব্যাথা পেয়ে)।।
তামিমঃ কি হয়েছে নীলু.?
নীলাঃ হাতে ব্যাথা পাচ্ছি, প্লিজ ছাড়েন আমায় (বলতে বলতে চোখে হালকা জল চলে আসলো)।।
তামিমঃ কিহ, কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস দেখি (বলেই নীলুর হাত ছেড়ে দিয়ে হাতের দিকে তাকালো)।।
নীলুঃ দেখতে হবে না দেখি এবার আমায় যেতে দিন।।
তামিমঃ চুপ আরেকবার যদি যাওয়ার কথা মুখে এনেছিস তো খবর আছে, আয় এইখানে বস এসে (বলেই নীলার হাত ধরে তার বিছানায় নিয়ে বসালো)।।
নীলাকে বিছানায় বসিয়ে রেখে তামিম তার আলমারি থেকে একটা মলম বের করে এনে নীলার পাশে বসে পরলো।। এরপর সেই মলমটা থেকে একটু মলম নিয়ে নীলার হাতে লাগিয়ে দিতে লাগলো।। তামিম যে নীলার হাত চেপে ধরেছিল সেইখানে হালকা রক্ত জমাট হয়ে গেছে আর এতক্ষণ ধরে নীলা ব্যাথা পেলেও বলতে পারছিল না কিন্তু হঠাৎ ব্যাথাটা তীব্র হয়ে উঠলো তাই নীলা আহ্ করে উঠলো।।
তামিমঃ সরি নীলু আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে তুই এতোটা ব্যাথা পাবি।। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।।
নীলাঃ নিশ্চুপ।।
তামিমঃ এই নীলু প্লিজ কথা বল আর কতো অভিমান করে থাকবি আমার সাথে.?
নীলাঃ নিশ্চুপ (অন্যদিকে মুখ করে আছে)।।
তামিমঃ বুঝেছি তোর অভিমান কীভাবে ভাঙতে হবে বলেই তামিম উঠে তার লাগেজ খুলে কি যেন খুজতে লাগলো।। কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর একটা কিটক্যাটের পেকেট বের করে নীলার পাশে এসে বসলো আর বললো…
নীলু এই দেখ আমেরিকা থেকে তোর জন্য কিটক্যাট চকলেট এনেছি।। কিটক্যাট না তোর পছন্দের চকলেট, এই দেখ কতো চকলেট এনেছি তোর জন্য (নীলার সামনে কিটক্যাটের প্যাকেটটা ধরে)।।
নীলাঃ একবার কিটক্যাটের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল।।
তামিমঃ কি হলো চকলেট নিবি না.? তোর জন্যই তো এনেছি এইগুলা।।
নীলাঃ এবার বসা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।।
তামিমঃ আচ্ছা যা তোর নিতে হবে না, সবগুলো চকলেট আমিই খেয়ে নিচ্ছি (বলেই প্যাকেটটা ছিড়ে ভিতর থেকে একটা চকলেট বের করলো)।।
নীলা এবার পিছনে ফিরে দৌড়ে এসে তামিমের হাত থেকে কিটক্যাটের প্যাকেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল।।
নীলাঃ খবরদার যদি আমার একটাও চকলেট খেয়েছ তো তোমার খবর আছে হু।।
তামিমঃ এতক্ষণে তাহলে মহারানীর অভিমান ভাঙলো।।
নীলাঃ উঁহু ভাঙেনি।।
তামিমঃ তো আরও চকলেট লাগবে নাকি.?
নীলাঃ হুম আরও দাও, যতগুলো আছে সব দাও।।
তামিমঃ আচ্ছা দাড়া দিচ্ছি বলেই লাগেজ থেকে আরও একটা কিটক্যাটের প্যাকেট বের করে নীলার হাতে দিলাম।।
নীলাঃ এই ২টায় হবে না আরও দাও।।
তামিমঃ আর তো নাই?।।
নীলাঃ নাই মানে না থাকলে এনে দাও নাহলে তোমার সাথে আর কথা নাই।।
তামিমঃ এখন কোথা থেকে এনে দিব.?
নীলাঃ দোকান থেকে।।
তামিমঃ দোকান তো এখন বন্ধ করে ফেলেছে, কাল সকালে এনে দেই।।
নীলাঃ নাহ আমার এক্ষুণি চাই।।
তামিমঃ আরে এই ২ প্যাকেটই তো খেতে পারবি না।। আগে এই ২ প্যাকেট খেয়ে শেষ কর তারপর আরও এনে দিব নে।।
নীলাঃ সত্যি এনে দিবে তো.?
তামিমঃ হুম ৩ সত্যি।।
নীলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে এবার তাহলে কান ধরে ৫০ বার ওঠবস কর।।
তামিমঃ কিহহ.! কিন্তু কেন.?
নীলাঃ এই যে ৫ বছর আমায় ছেড়ে আমেরিকায় থেকেছ সেইজন্য।।
তামিমঃ তাই বলে ৫০ বার.!
নীলাঃ হুম, ১ বছরের শাস্তি ১০ বার করে আর তুমি ৫ বছর থেকেছ তাই ৫০ বার।।
তামিমঃ একটু কমানো যায়না.?
নীলাঃ নাহ, এখন তারাতাড়ি ওঠবস শুরু কর আর নাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে আর কথা বলবো না।।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে করতেছি (বলেই ওঠবস শুরু করে দিল।। কি করবো ভাই এতো বছর ভালোবাসার মানুষটার থেকে দূরে দূরে থেকেছি।। একবারের জন্যও ফোনে কথা বলতে পারি নি।। এখন যদি তার এইটুকু শাস্তি মেনে না নেই তাহলে সত্যি সত্যি আর আমার সাথে কথা নাও বলতে পারে।। এমনিতেই নীলু খুব জেদি মেয়ে, একবার যা বলে তা করেই ছাড়ে)।।
তামিম কান ধরে ওঠবস করা শুরু করলো আর নীলা তামিমের বিছানার উপর পা তুলে বসে কিটক্যাটের প্যাকেট থেকে একটা চকলেট বের করে খেতে লাগলো।। তামিম কান ধরে ওঠবস করছে আর নীলা চকলেট খেতে খেতে তামিমের ওঠবস গুণে যাচ্ছে।। এমন সময় হঠাৎ করে তামিমের আম্মু আর নীলার আম্মু এসে রুমে ঢুকলেন।। তাদেরকে রুমে ঢুকতে দেখেই তামিম থেমে গেল।।
নীলাঃ কি হলো থামলা কেন ওঠবস কর, আরও ২০ টা বাকি রয়েছে শেষ কর।।
তামিমঃ নীলাকে ইশারায় বললো দেখ রুমে কে এসেছে।।
তামিমের ইশারায় নীলা রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার আম্মু আর তামিমের আম্মু রুমে এসেছেন।।
তামিমের আম্মুঃ কিরে তুই এইভাবে কান ধরে ওঠবস করছিস কেন.?
তামিমঃ আর বল না নীলু বললো ৫০ বার ওঠবস না করলে নাকি সে আমার সাথে কথা বলবে না।। তাই এখন ওঠবস করতে হচ্ছে।।
তামিমের আম্মুঃ ভালোই তো, তা থেমে গেলি কেন ওঠবস কর।।
তামিমঃ বাহ্ নিজের ছেলের প্রতি তোমার এই ভালোবাসা.!
নীলাঃ তুমি ওঠবস করবে নাকি আমি চলে যাব.?
নীলার আম্মুঃ নীলা এইসব কি হচ্ছে.? নিজের বড় ভাইয়াকে কেউ এইভাবে কান ধরে ওঠবস করায় নাকি.?
নীলাঃ কেউ না করালেও আমি করাই হুহ্, চাচি তুমি আম্মুকে নিয়ে রুম থেকে যাও তো নাহলে উনি শুধু শুধু প্যাঁচাল করবেন।।
নীলার আম্মুঃ কিহহ আমি শুধু শুধু প্যাঁচাল করি (হালকা রেগে)।।
নীলাঃ চাচি দেখ না আম্মু কীভাবে আমায় বকছে (কাদো কাদো কন্ঠে)।।
তামিমের আম্মুঃ নীলার আম্মু চল তো এইখান থেকে আর ওদেরকে ওদের কাজ করতে দাও।।
নীলার আম্মুঃ ওর রাগ ভাঙাতে গিয়ে আমার আব্বুটা এইভাবে কান ধরে ওঠবস করবে আর আমি কিছু বলবো না.?
তামিমঃ চাচি আপনি যান তো আর মাত্র ২০ টাই তো বাকি আছে।।
তামিমের আম্মুঃ নীলার আম্মু চল এখন (বলেই উনি নীলার আম্মুকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।।
নীলাঃ কি হলো দাঁড়িয়ে আছ কেন ওঠবস করবে না নাকি.?
তামিমঃ হুম করতেছি তো (বলেই আবার ওঠবস করতে লাগলো)।।
তারপর বাকি ২০টা ওঠবস করে তামিম মেঝেতে ধপাস করে বসে পরলো।।
নীলাঃ কি মিস্টার হাঁপিয়ে গেলা.? চকলেট খাবা.?
তামিমঃ না তোর চকলেট তুই ই খা (বলেই মেঝে থেকে উঠে লাগেজ থেকে কি যেন একটা বের করে নীলার সামনে এসে দাড়ালো)।। আচ্ছা এবার তোর অভিমান ভেঙেছে তো, নাকি আরও কিছু করতে হবে.?
নীলাঃ না আর কিছু করতে হবে না।। তোমার হাতে ওইটা কি.?
তামিমঃ এই নে তোর জন্য আমেরিকা থেকে একটা সোনার রিং এনেছি (বলেই প্যাকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে রিংটা বের করে দেখালো)।।
নীলাঃ ওয়াও সত্যি এইটা তুমি আমার জন্য এনেছ.? (রিংটা হাতে নিয়ে)
তামিমঃ হুম, তোর পছন্দ হয়েছে.?
নীলাঃ হুম খুব পছন্দ হয়েছে, Thank You ভাইয়া তুমি অনেক ভালো উম্মাহ (বলেই বসা থেকে উঠে খুশিতে তামিমকে জড়িয়ে ধরে তার গালে একটা চুমু এঁকে দিল)।।
তামিম তো নীলার এমন কাজে একটা বড় শক খেয়ে উঠলো।। তামিম চোখ বড় বড় করে নীলার দিকে তাকালো।। নীলাও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে লজ্জায় দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।।
নীলা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার তামিমের রুমে এসে ঢুকলো আর বিছানা থেকে কিটক্যাটের প্যাকেট ২টা নিয়ে আবার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।। নীলার এমন কাজে তামিম এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, তুই সেই ৫ বছর আগের নীলু ই রয়ে গেলি।।
ওইদিনের মতো তামিম আনন্দ মনে ঘুমিয়ে পরলো।। আনন্দে ঘুমটাও বেশিক্ষণ হয়েছে তার।। একেবারে এক ঘুমে সকাল ১০ টা বেজে গেছে।। ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে টাইম দেখেই তামিম তারাতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।। ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে নাস্তা করে আবার রুমে চলে আসলো।। রুমে এসে তারাতাড়ি করে রেডি হয়ে তার আম্মুকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।। বাসা থেকে বেরিয়েই একটা রিক্সা নিয়ে সোজা তাদের ছোটবেলার আড্ডার জায়গায় চলে আসলো বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য।। এসে দেখে তার সব বন্ধুরা আগে থেকেই ওইখানে এসে বসে আছে।।
তারপর তামিম তাদের কাছে গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো তারপর কিছুক্ষণ ওইখানে বসে আড্ডা দিয়ে সবাই একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেল।। তামিম এতো বছর পর দেশে ফিরেছে সেই উপলক্ষে সে সবাইকে আজ খাওয়াবে।। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাই যার যার মতো খাবার অর্ডার দিল।। কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এসে সবাইকে খাবার দিয়ে গেল, খেতে খেতে সবাই আরও কিছুক্ষণ ওইখানে বসে আড্ডা দিল।। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে আসলো তাই তামিম সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওইখান থেকে চলে আসলো।।
তামিম হেটে হেটে বাসায় ফিরছে হঠাৎ তার মাথায় আসলো এখন তো নীলার ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে নিশ্চয়ই, তাহলে একেবারে নীলাকে সাথে নিয়েই বাসায় চলে যাই।। যেই ভাবা সেই কাজ, তারপর তামিম সোজা নীলার ভার্সিটিতে চলে আসলো (তামিম আগে থেকেই জানে নীলাকে কোন ভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়েছে)।। কিন্তু নীলার ভার্সিটিতে এসে তামিম এমন কিছু দেখবে তা কল্পনাও করতে পারেনি।। কারণ তামিম দেখলো যে নীলা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলে ভার্সিটি থেকে বেরুচ্ছে।।
.
.
.
.
.
Loading…….
ছেলেটা কে হতে পারে.? নীলার বয়ফ্রেন্ড না তো?
ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।। আর দয়া করে কেউ স্টিকার কমেন্ট করবেন না প্লিজ এতে আমার কমেন্ট চেক করতে অসুবিধা হয়।। আর গল্প প্রতিদিন বিকাল ৪ঃ৩০ এর পর পাবেন।। হেপি রিডিং ?
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~