খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ১২

0
1805

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ১২
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
নীলার কথা শেষ হতেই তামিম নীলার রুমে ঢুকে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালো।। তামিমের চেহারায় হালকা রাগের চাপ, আর সেই চেহারা নিয়ে সে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।। এদিকে নীলা তামিমকে হঠাৎ তার রুমের মধ্যে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়।। আর তামিমের চেহারায় রাগের চাপ দেখে হালকা ভয় পেয়ে যায়।। নীলা মনে মনে ভাবে, আমি তো কোনো ভুল করি নি তাহলে তামিম ভাইয়া আমার দিকে এইভাবে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন কেন.?

তামিমঃ একটু আগে তুই ফোনে কার সাথে কথা বলছিলি.? (গম্ভীর শুরে)

নীলাঃ কেন.?

তামিমঃ পালটা প্রশ্ন করবি না, যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে (কিছুটা রাগী শুরে)।।

নীলাঃ আমার এক বান্ধবীর সাথে (হালকা ভয় পেয়ে)।।

তামিমঃ দেখি তোর ফোনটা দে তো।।

নীলাঃ ফোন দিয়ে কি করবা.?

তামিমঃ আবার কথা বলিস, দিতে বলছি দে (ধমক দিয়ে)।।

নীলাঃ ভয়ে ভয়ে তার ফোনটা তামিমের দিকে এগিয়ে দিল।।

তামিমঃ নীলার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল লিস্টে ঢুকে কল লিস্টগুলো চেক করতে লাগলো।। কিন্তু কল লিস্টে ঢুকেই তামিম অবাক হয়ে গেল।। কারণ নীলা একটু আগে যার সাথে কথা বলছিল সেই নাম্বারটা মিতু নামে সেইভ করা।।

তামিম এবার একবার নীলার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ফোনের কল লিস্টের দিকে তাকাচ্ছে।। তামিমের মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।। এইখানে তো মিতুর নাম ছাড়া অন্য কারও নামও দেখা যাচ্ছে না তাহলে নীলা জানু বললো কাকে.?

তামিমঃ একটু আগে যার সাথে কথা বলছিলি তার নাম কি.?

নীলাঃ মিতু, কেন তুমি মিতুকে চিন না.?

তামিমঃ কোন মিতু, সেই মিতু নাকি যে ছোটবেলায় তোর সাথে পড়তো।।

নীলাঃ হুম

তামিমঃ তা তুই মিতুকে ফোনে জানু বললি কেন.? আর সে তো তোর সমবয়সী তাহলে তুমি করে বললি কেন.?

নীলাঃ আমি তো আমার সব মেয়ে বন্ধুদেরকেই জানু বলে ডাকি, ওরাও আমায় জানু বলে ডাকে।। মিতু আমার উপর রাগ করলে আমি তাকে তুমি বলি নাহলে তো অন্যসময় তুই করেই বলি।।

তামিমঃ একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে জানু বলে ডাকিস.! এইসব বলে কেউ কাউকে ডাকে নাকি.?

নীলাঃ কেউ না ডাকলেও আমরা একে অন্যকে ডাকি।।

তামিমঃ তা মিতু এখন কোথায় থাকে রে.? পড়াশোনা করে না নাকি.?

নীলাঃ পড়াশোনা তো করেই তবে সে অন্য ভার্সিটিতে পড়ে।। আর মিতুরা আগে যেখানে থাকতো এখনো সেইখানেই থাকে।।

তামিমঃ তা মিতুর বয়ফ্রেন্ডের কি খবর.? এখন মনে হয় ওর মেলা মেলা বয়ফ্রেন্ড আছে তাইনা.?

নীলাঃ না এখন আর ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।।

তামিমঃ কেন ওর না একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল নাম যেন কি রাফি না টাফি।।

নীলাঃ হুম ক্লাস এইটে থাকতে ছিল কিন্তু এখন আর নেই।। মিতু ক্লাস এইটে অনেক খারাপ রেজাল্ট করেছিল।। তাই তার আব্বু আম্মু তাকে অনেক বকেছিল।। তারপর থেকে সে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে থাকে আর রাফির সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়।। কারণ মিতু তখন বুঝতে পারে যে তার এই খারাপ রেজাল্টের পিছনে সে নিজেই দ্বায়ী।। কারণ সে যদি সারাদিন রাফির সাথে ফোনে কথা না বলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতো তাহলে তার রেজাল্টও ভালো হতো।। আর সে তখন সবসময় টিভিতে হিন্দি মুভি দেখতো আর সেখানে নায়ক-নায়িকারা যে প্রেম করতো সেগুলো দেখে মিতুরও প্রেম করতে মন চাইতো তাই সে রাফির সাথে সম্পর্ক করেছিল।। কিন্তু পরে মিতু বুঝতে পারে যে এগুলো করা ঠিক নয় আর এতে নিজের ই ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে।।

তামিমঃ তো এতে রাফি মিতুকে কিছু বলেনি, মানে তাদের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলার জন্য।।

নীলাঃ না বরং মিতু রাফির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়াতে রাফি উলটা খুশি হয়েছিল।। কারণ রাফির মিতুর কাজকর্ম গুলো ভালো লাগতো না কিন্তু মিতু সবসময় রাফির উপর জোর খাটাতো তাই রাফি বাধ্য হয়ে এতদিন মিতুর সঙ দিয়েছিল।।

তামিমঃ ওহ আচ্ছা তো এখন কি পড়তে বসেছিস.?

নীলাঃ হুম এতক্ষণ ধরে তো পড়ছিলামই কিন্তু হঠাৎ মিতু ফোন দেওয়াতে তার সাথে একটু কথা বললাম।।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুই তাহলে পড় আমি গেলাম।।

নীলাঃ তুমি হঠাৎ আমার রুমে এলে যে কোনো দরকারে এসেছিলে নাকি.?

তামিমঃ নাহ দুপুরে খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম, একটু আগেই ঘুম থেকে উঠলাম।। তো রুমে একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই ভাবলাম দেখি তুই কি করিস।।

নীলাঃ ওহহ তো বস দাঁড়িয়ে আছ কেন.?

তামিমঃ নাহ বসবো না, তুই পড় আমি গেলাম।।

তারপর তামিম নীলাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নীলার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।। রুমে এসে তামিম নিজেই নিজেকে বললো, যাক নীলা তাহলে কারও সাথে প্রেমে জড়ায়নি এটা শিওর হলাম।। কিন্তু পুরোপুরি শিওর হতে পারছি না।। হতেও তো পারে নীলা কারও সাথে প্রেমে জড়িয়েছে।। দেখি এখন থেকে নীলার উপর সবসময় নজর রাখতে হবে তাহলেই জানতে পারবো সে কারও প্রেমে জড়িয়েছে কি না।। কিন্তু নীলা ভার্সিটিতে থাকলে কীভাবে তার উপর নজর রাখবো.? উমম, হে একটা আইডিয়া পেয়েছি, এটাই কাজে লাগাতে হবে তাহলে ভার্সিটিতেও নীলার উপর নজর রাখতে পারবো।।

তারপর তামিম নিজের মোবাইলটা নিয়ে ফেবুতে ঢুকে একটু সময় কাটাতে লাগলো।। দেখতে দেখতে রাত হয়ে আসলো, এর মধ্যে রাতের খাবার খাওয়ার সময়ও হলে এলো।। কিছুক্ষণ পরেই নীলার আম্মু এসে তামিমকে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেলেন।। তামিমও আর দেড়ি না করে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে চলে আসলো।। নিচে এসে একটা চেয়ার টেনে ডাইনিং টেবিলে বসে পরলো।। এর মধ্যে বাড়ির সবাইও ডাইনিং টেবিলে চলে আসলো।। সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে যার যার মতো খাবার খাচ্ছে ঠিক তখনই তামিম তার ছোট চাচ্চুকে মানে নীলার আব্বুকে বললো…

তামিমঃ চাচ্চু তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।।

নীলার আব্বুঃ হে কি বলবি বল।।

তামিমঃ বলছিলাম কি আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে নীলুর ভার্সিটির পাশ দিয়েই আসছিলাম।। তো ভাবলাম নীলুকেও সাথে নিয়ে আসি, তাই নীলুকেও সাথে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।। তো আসার সময় রাস্তায় কি দেখলাম জান.?

নীলার আব্বুঃ কি দেখছিস.?

তামিমঃ দেখলাম যে কয়েকটা ছেলে মিলে একটা মেয়েকে টিজ করছে।। তো আমি ওদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছে তখন ওরা কিছু না বলে ওইখান থেকে পালিয়ে যায়।। বুঝলে চাচ্চু এই হলো আমাদের শহরের অবস্থা।।

নীলার আব্বুঃ হুম বুঝলাম তো পরে কি হলো.?

তামিমঃ কি আর হবে পরে মেয়েটাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম আর আমরা দুজনও বাসায় চলে আসলাম।।

নীলার আব্বুঃ তো এইসব এখন আমায় বলছিস কেন.?

তামিমঃ তোমাকে বলবো না তো আর কাকে বলবো.? দেখ এখন নীলুও অনেক বড় হয়েছে।। আর ওই ছেলেগুলো নীলুর ভার্সিটিতেই পড়ে।। তো হঠাৎ কোনোদিন যদি ওরা ওই মেয়েটার মতো নীলুকেও টিজ করে তো.?

নীলার আব্বুঃ তামিমের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন আর কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলেন আর বললেন, তো এখন কি করা যায়.?

তামিমঃ বলছিলাম কি আমি তো এখন সবসময় ফ্রি থাকি।। তো আমি যদি এখন থেকে প্রতিদিন নীলুকে নিয়ে ওর ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করি, আই মিন ওকে ভার্সিটিতে দিয়েও আসবো আবার নিয়েও আসবো।। তাহলে তো আর ওই মেয়েটার মতো নীলুকে কেউ টিজ করতে পারবে না তাইনা।।

নীলার আব্বুঃ হুম তুই তো ঠিকই বলেছিস, তুই যখন এখন ফ্রি আছিস তাহলে তুই ই প্রতিদিন নীলাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া আসা কর, তাহলে রাস্তার বখাটে ছেলেরা নীলাকে কখনো টিজ করবে না।। আর একটা মেয়ের জন্য তো এইটুকু সেইফটি প্রযোজনই।। ভাইজান আপনি কি বলেন।।

তামিমের আব্বুঃ তামিম যখন চাচ্ছে নীলাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করতে তাহলে যাক, আমি আর কি বলবো।। আর এখন রাস্তাঘাটে একটা মেয়ের একা চলাফেরা করা মোটেও নিরাপদ নয়।।

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা তাহলে তুই (তামিমকে) কাল থেকে নীলাকে তার ভার্সিটিতে দিয়ে আসবি আবার নিয়েও আসবি।। আর হে আমাদের গাড়িটাও সাথে নিয়ে যাস।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচ্চু।।

এদিকে নীলা এতক্ষণ ধরে তামিমের কথাগুলো শুনে হা করে তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।। নীলা এবার মনে মনে ভাবতে লাগলো, রাস্তার মধ্যে কোথায় আজ একটা মেয়েকে কিছু ছেলে মিলে টিজ করলো.? তামিম ভাইয়া তো সব বানিয়ে বানিয়ে বলেছেন।। কিন্তু উনি বানিয়ে বানিয়ে এইসব বললেন কেন.? আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসার আর নিয়ে আসার জন্য নাকি.? কিন্তু এর জন্য আব্বুর কাছে বানিয়ে বানিয়ে এইসব বলার মানে কি.?

নীলা কিছু বুঝতে না পেরে এবার তামিমের দিকে তাকালো।। তামিমও এবার নীলার দিকে তাকালো আর সবার চোখ এড়িয়ে নীলাকে একটা চোখ টিপ মেরে বসলো।। তামিমের এমন কাজে নীলা পুরোপুরি ভেবাচেকা খেয়ে যায়।। তামিমও একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের প্লেটের খাবার শেষ করে উঠে রুমে চলে আসে।।
.
.
.
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ (এখন থেকে শুরু হবে গল্পের আসল মজা, আপনারা শুধু দেখে যান আগে কি কি হয়।। আর নীলা যাকে জানু বলেছিল সে কে তা তো আপনারা জানলেনই।। আরেকটা বিষয় জানিনা কতটুকু শিক্ষণীয়, মিতুর চরিত্রটা খারাপ দিয়েছিলাম এখন আবার মিতুর চরিত্রটা ভালো করে দিলাম।। ভাইয়া ও আপুরা, মিতুর মতো ছোট বয়সী ছেলে-মেয়েদের অল্প বয়সে মোবাইল দিবেন না, টিভিতে হিন্দি মুভি দেখতে দিবেন না।। নাহলে তাদের উপর কেমন প্রভাব পরবে বুঝতেই তো পারছেন।। ছোট বাচ্চাদের যা শিখাবেন আর যা করাবেন তারা তাই শিখবে আর তাই অন্যদের সাথে গিয়ে তাই করবে।। সো তাদেরকে সবসময় ভালো কিছু শিখানোর চেষ্টা করবেন।। মিতুর বিষয়টা থেকে কি আপনাদের কিছু শিখার আছে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।। আর আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে সেটাও কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন, ধন্যবাদ ?)

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here