খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২১-২২-২৩

0
4159

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২১ (পালিয়ে বিয়ে)
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
–তুমি যদি সত্যিই নীলাকে ভালোবেসে থাক তাহলে তুমি নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যাও আর কোনো একটা কাজি অফিসে গিয়ে দুজন বিয়ে করে নাও।।

নীলার আম্মুর এমন কথা শুনে তামিম নিজের কানকেই বিশ্বাস করাতে পারছে না যে সে কি শুনেছে।। চাচি আমায় কীভাবে এই কথাটা বলতে পারলেন।। উনাদের ছাড়া আমরা একা একা থাকবো কি করে.? আর নীলুকে নিয়ে পালিয়ে গেলে তো আব্বুর মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।। ফুপি আর চাচ্চুর কাছে তো আব্বু ছোট হয়ে যাবেন (তামিম মনে মনে কথাগুলো ভাবছে)।।

নীলার আম্মুঃ কি হলো আব্বু এতো কি ভাবছ.? আমার কথাটা কি তুমি রাখবে না.?

তামিমঃ চাচি এইসব আপনি কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।।

নীলার আম্মুঃ না বোঝার মতো তো কিছু বলি নি আব্বু, শুধু বলেছি তুমি যদি সত্যিই নীলাকে ভালোবেসে থাক তাহলে নীলাকে নিয়ে এক্ষুণি কোথাও পালিয়ে যাও, আর একটা কাজি অফিসে গিয়ে দুজন বিয়ে করে নাও।।

তামিমঃ আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন চাচি.? একটু আগেই তো আপনি (তামিমকে থামিয়ে)

নীলার আম্মুঃ ওইসময় মজা করছিলাম কিন্তু এখন আমি মজা করছি না।। কারণ আমি জানি যে তোমরা একে অপরকে ভালোবাস।। আর প্রতিটা মা-বাবাই চায় তার মেয়ে যেন জীবনে সুখী হয়, আমিও চাই কিন্তু তোমার চাচ্চু তোমার ফুপির কথায় বাধ্য হয়ে রাফির সাথে নীলার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন।। রাফির সাথে নীলা সুখী থাকবে না, সুখী থাকবে তোমার সাথে।। তাই আমি তোমায় নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলছি।।

তামিম তো তার চাচির কথা শুনে অবাক।। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, চাচি কীভাবে জানলেন যে আমি আর নীলা একে অপরকে ভালোবাসি.? তামিমের মাথায় যেন এই প্রশ্নের উত্তরটা কিছুতেই ঢুকছে না।।

নীলার আম্মুঃ তোমরা যে একে অপরকে ভালোবাস এটা আমি জানলাম কি করে তা শুনে অবাক হচ্ছ তাইনা.? এই বিষয়টা আমি জেনেছিলাম ৫ বছর আগেই।। কীভাবে শুন তাহলে…
তোমার কি মনে হয় তোমার আব্বু তোমাকে শুধু পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন.? না উনি তোমাকে পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাঠান নি।। উনি তোমাকে নীলার থেকে দূরে রাখার জন্যই আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন।।

তামিমঃ চাচি এইসব আপনি কি বলছেন আব্বু কেন আমাকে নীলার থেকে দূরে রাখবেন.?

নীলার আম্মুঃ আগে আমার পুরো কথা শুন তারপর বুঝতে পারবে।। তোমাকে যেদিন আমেরিকার ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয় সেদিন রাতে তোমার আব্বু আর আম্মু একে অপরের সাথে তোমায় নিয়ে কথা বলছিলেন।। তখন আমি তাদের রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম, আর ভিতরে তোমার নিয়ে কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম তারা কি বলে শোনার জন্য।। তোমার আম্মু তোমার আব্বুকে জিজ্ঞেস করলেন উনি কেন হঠাৎ করে তোমায় আমেরিকায় পাঠালেন।। তোমার আম্মুর জবাবে তখন তোমার আব্বু যা বললেন তা শুনে সেদিন আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছিলাম।। কারণ তোমার আব্বু বললেন উনি নাকি একদিন অফিসের একটা কাজে যাওয়ার সময় তোমাকে আর নীলাকে রাস্তার মধ্যে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় দেখেছিলেন।। এই দৃশ্যটা দেখে তোমার আব্বু ভেবে নিলেন যে তোমাদের মধ্যে হয়তো প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।। তোমার আব্বু চান না নিজেদের মধ্যে এইসব প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক হোক, তাই তিনি সেদিনই তোমার ফুপির সাথে কথা বলে তোমাকে আমেরিকায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন।।

নীলার আম্মুর কথাগুলো শুনে তামিম এবার আরও অবাক হয়ে যায়।। তামিম ভাবতে থাকে সে কবে নীলাকে রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিল আর তার আব্বু ই বা কবে তাদেরকে ওই অবস্থায় দেখলেন।। কিছুক্ষণ ভাবার পর হঠাৎ তামিমের মনে পরলো ৫ বছর আগের ঘটনা।। একদিন সে কলেজ শেষে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল আর ওইসময় পাশের রাস্তায় কিছু ছেলে মিলে নীলাকে টিজ করছিল।। এরপর নীলা তামিমকে পাশের রাস্তায় দেখে দৌড়ে গিয়ে তামিমকে জড়িয়ে ধরে, তখন হয়তো তার আব্বু কোথাও যাচ্ছিলেন আর তাদেরকে ওই অবস্থায় দেখে ফেলেন।।

তামিমঃ কিন্তু চাচি বিশ্বাস করেন তখন আমার আর নীলার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।। ওইসময় নীলাকে কিছু ছেলে মিলে টিজ করছিল আর নীলা তাদের হাত থেকে বাঁচতে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে।। তবে তখন আমি নীলাকে মনে মনে ভালোবাসতাম (নিচু গলায়)।।

নীলার আম্মুঃ তো এখন ভালোবাস না.?

তামিমঃ হ্যাঁ বাসি তো।।

নীলার আম্মুঃ তাহলে নীলাকে নিয়ে এক্ষুণি পালিয়ে যাও নাহলে সকাল হলেই রাফির সাথে নীলার বিয়ে হয়ে যাবে।। এরপর তুমি নীলাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।।

তামিমঃ কিন্তু চাচি আমি যদি নীলুকে নিয়ে পালিয়ে যাই তো এতে আব্বু তো ফুপি আর চাচ্চুর কাছে ছোট হয়ে যাবেন।। বিয়েতে যারা আসবে তারা যদি জানতে পারে আমি নীলাকে নিয়ে পালিয়ে গেছি তাহলে তাদের কাছেও তো আব্বু ছোট হয়ে যাবেন।।

নীলার আম্মুঃ তার মানে তুমি তোমার আব্বুর সম্মান বাঁচাতে তোমার ভালোবাসাকে কুরবানি দিয়ে দিবে.?

তামিমঃ নিশ্চুপ।।

নীলার আম্মুঃ চুপ করে থাকলে হবে না যা করার এক্ষুণি করতে হবে।। হয় তোমার আব্বুকে গিয়ে বল যে তুমি আর নীলা একে অপরকে ভালোবাস আর নাহয় নীলাকে নিয়ে এক্ষুণি পালিয়ে যাও।। তোমার আব্বুকে গিয়ে নীলার কথা বলতে পারবে.?

তামিমঃ বললেও তো আব্বু আমাদের মেনে নিবেন না কারণ নীলুর বিয়ে অলরেডি রাফি ভাইয়ার সাথে ঠিক হয়ে গেছে।।

নীলার আম্মুঃ তাহলে এখন তোমার কাছে ২টা রাস্তা আছে।।
১, নীলাকে নিয়ে এইখান থেকে পালিয়ে যাওয়া।।
২, নিজের আব্বুর সম্মান রক্ষা করার ইচ্ছা থাকলে নিজের ভালোবাসার কুরবানি দিয়ে দেওয়া।।
বল এখন তুমি কি করবে.?

তামিমঃ নিশ্চুপ (মনে মনে ভাবছে কি করবে)।।

নীলার আম্মুঃ আরে যেই বাবা তার ছেলেকে তার ভালোবাসার কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য বাহিরের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে সেই বাবার সম্মান রক্ষা করবে কি না ভাবছ তুমি.? ওকে তাহলে তুমি তাই কর, নিজের ভালোবাসার কুরবানি দিয়ে দাও।। আমি গেলাম সকালে আবার তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে (বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলেন)।।

তামিমঃ কিন্তু এতো রাতে নীলুকে নিয়ে আমি কোথায় যাব.? এখন তো রাস্তায় কোনো গাড়িও পাব না।।

নীলার আম্মুঃ গাড়ি আগে থেকেই নিচে রেডি করে রাখা হয়েছে তোমাদের জন্য।।

তামিমঃ মানে.!

নীলার আম্মুঃ বারান্দায় গিয়ে একবার বাড়ির গেইটের বাহিরে তাকাও তাহলে সব বুঝতে পারবে।।

তামিম আর কিছু না বলে তার বারান্দায় গিয়ে বাড়ির গেইটের বাহিরে তাকালো আর ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।। কারণ গেইটের বাহিরে তার সকল বন্ধুরা একটা গাড়িতে বসে আছে।। তামিমকে তারা বারান্দায় দেখেই হাত দিয়ে ইশারায় হাই বললো।। তামিম এবার বারান্দা থেকে আবার রুমে এসে তার চাচির সামনে দাড়ালো আর বললো…

তামিমঃ চাচি বাহিরে আমার বন্ধুরা (তামিমকে থামিয়ে)

নীলার আম্মুঃ ওদেরকে আমিই এখানে আসতে বলেছি।।

তামিমঃ আপনি বলেছেন.! কিন্তু কেন, আর আপনি ওদের সাথে যোগাযোগ করলেন কীভাবে.? (অনেকটাই অবাক হয়ে)

নীলার আম্মুঃ গতকাল সন্ধ্যার সময় নাকি তোমার এক বন্ধু আমাদের বাসার নিচ দিয়ে কোথায় যাচ্ছিল আর তখনই সে দেখলো বাড়িটা বিয়ের সাজে সাজানো।। এরপর সে তার বাসায় গিয়ে তোমার ফোনে কল দেয়।। তখন আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলার জন্য তোমার রুমে এসেছিলাম।। তোমার রুমে এসে দেখি তুমি রুমে নেই আর তোমার ফোনটা বাজছে।। তাই আমি তোমার ফোনটা নিয়ে কল রিছিভ করলাম।। এরপর তোমার ওই বন্ধু জিজ্ঞেস করলো আমাদের বাসাটা বিয়ের সাজে সাজানো কেন।। তখন আমি তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলতে লাগলাম।। এরপর আমি আর তোমার বন্ধু মিলে এই প্লেন করলাম যে আজ রাতে যে করেই হোক তোমাদেরকে পালাতে হেল্প করবো।। আর তাই ওরা একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে তোমাদেরকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।।

তামিমঃ কিন্তু আমরা পালিয়ে যাব কোথায়.? আর যেখানেই যাই না কেন সেখানে গিয়ে খাব কি, পরব কি.?

নীলার আম্মুঃ এই নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, আমি এর ব্যাবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি (বলেই উনার শাড়ির আঁচলের ভিতর থেকে একটা টাকার বান্ডিল বের করে তামিমের হাতে দিলেন)।। এই নাও এইখানে ২০ হাজার টাকা রয়েছে, এইগুলা তোমার কাছে রাখ প্রযোজনে কাজে লাগবে।।

তামিমঃ কিন্তু চাচি এতো টাকা

নীলার আম্মুঃ রাখতে বলছি না তোমায় (রাগী শুরে)।।

তামিমঃ আচ্ছা বলে টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিল।।

নীলার আম্মুঃ তোমরা একটু দাড়াও আমি এক্ষুণি আসছি (বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।।

কিছুক্ষণ পর নীলার আম্মু আবার তামিমের রুমে এসে ঢুকলেন, এক হাতে বোরকা আর অন্য হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে।।

নীলার আম্মুঃ নীলা এই বোরকাটা পরে নে মা, আর এই ব্যাগে তোমার আর নীলার কয়েকটা কাপড় আছে।।

তামিমঃ আমার কাপড় আপনি কোথায় পেলেন.?

নীলার আম্মুঃ তোমার আলমারি থেকে নিয়েছিলাম।।

তারপর নীলা তার আম্মুর থেকে বোরকাটা নিয়ে পরে নিল।। এরপর তার আম্মু তাদেরকে উনার সাথে আসতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।। তামিম আর নীলাও উনার পিছনে পিছনে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। নীলার আম্মু তাদেরকে নিয়ে বাসার বড় দরজার কাছে এসে দাড়ালেন আর আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে তাদেরকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।। এরপর তিনি বাসার গেইটটা খুলে তাদেরকে নিয়ে রাস্তার কাছে চলে আসলেন।।

নীলার আম্মুঃ যাও আব্বু নীলাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাও।। আর হে যেখানেই যাও সেখান থেকে আর ফিরে এস না তাড়াতাড়ি।। বাসার সবাই যদি তোমাদেরকে মেনে নেয় তাহলেই তোমরা আবার বাসায় ফিরবে, তার আগে নয়।। আর আমার মেয়েটাকে কোনো কষ্ট দিও না প্লিজ, তোমাকে আমি নিজের ছেলের মতো ভাবি তাই তোমার সাথে আমার মেয়েটাকে তুলে দিলাম (বলেই উনি নীলার হাত তামিমের হাতে ধরিয়ে দিলেন)।।

তামিমঃ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না চাচি, কথা দিচ্ছি আমি নীলুকে কখনো কষ্ট দিব না।।

এরই মধ্যে নীলা হঠাৎ করে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল।। তার আম্মুও তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন আর নীলার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নীলাকে শান্তনা দিতে লাগলেন।।

নীলার আম্মুঃ কাদিস না মা, কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।। যা এবার গাড়িতে গিয়ে উঠে বস।।

এরপর অনেক কষ্টে উনি নীলাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেন আর তামিমকেও গাড়িতে উঠে বসতে বললেন।। তামিমও এবার গাড়িতে উঠে বসলো আর নীলার আম্মুকে বিদায় জানিয়ে গাড়ির দরজাটা বন্ধ করে তার বন্ধুকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো।। তামিমের কথায় তার বন্ধু গাড়ি স্টার্ট দিল।। নীলা এবার তামিমকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে লাগলো।। তামিমও নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।।

প্রায় কিছুক্ষণ পর তাদের গাড়ি এসে একটা কাজি অফিসের সামনে থামলো।। এরপর সবাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে ঢুকলো।।

তামিমঃ কিরে এতো রাতে কাজি কীভাবে পেলি.? (শুভর কানে কানে)

শুভঃ আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম।।

তামিমঃ তো বিয়ে করবো যে সাক্ষী পাব কোথায়.?

শুভঃ কেন আমরা এইখানে ৪ জন আছি না।। তোর পক্ষে ২ জন আর ভাবির পক্ষে ২ জন করে সাক্ষী দিব।।

তামিমঃ বিয়েই হলো না আর ভাবি বানিয়ে ফেললি.!

শুভঃ হুম এবার চুপ থাক তো।।

এরপর শুভ গিয়ে কাজিকে বলে বিয়ের কাজ শুরু করতে বললো।। কাজিও শুভর কথায় বিয়ের কাজ শুরু করলো।। এরপর তারা তামিম আর নীলার পক্ষে ২ জন করে সাক্ষী দিয়ে তাদের বিয়েটা সম্পন্ন করে ফেললো।। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে তারা আবার গাড়িতে এসে উঠে বসলো।।

তামিমঃ বিয়ে তো করে ফেললাম এবার যাব কোথায়.?

শুভঃ নো চিন্তা তোদের জন্য কক্সবাজারের একটা হোটেলের রুম আজকেই বুকিং করেছি।।

তামিমঃ কিন্তু ওইখানে যাব কীভাবে.?

শুভঃ কেন গাড়ি আছে না গাড়ি দিয়ে তোদেরকে দিয়ে আসবো এতে মিনিমাম ৪ ঘন্টা লাগবে।।

তামিমঃ তাহলে আর বসে আছিস কেন গাড়ি স্টার্ট দে।।

তারপর শুভ আর কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।। দেখতে দেখতে কেটে গেল ৪ ঘন্টা।। এর মধ্যে তারা কক্সবাজারও এসে পরেছে।। এরপর তারা গাড়ি নিয়ে ওই হোটেলে চলে আসলো যেখানে তামিম আর নীলার জন্য রুম বুকিং করা হয়েছে।। হোটেলে এসে হোটেলের স্টাফদের থেকে রুমের চাবি নিয়ে তারা রুম এসে ঢুকলো।। রুমটা তাদের হালকা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।। এরপর শুভ তামিমের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললো, প্রযোজনে খরচ করিস আমরা তাহলে এখন যাই।।

তামিম কিছু বলতে গিয়েও পারলো না তার আগেই তারা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।। এরপর নীলা নিজের বোরকাটা খুলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিছানায় গিয়ে উঠে বসলো।। তামিম এবার রুমের দরজাটা লাগিয়ে আস্তে আস্তে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালো।। তামিমের এখন কেন জানি অনেক নার্ভাস ফিল হচ্ছে।। তারপরও সে বুকে একটু সাহস নিয়ে নীলার মাথার ঘোমটা তোলার জন্য যেই হাত বাড়াবে তখনই নীলা তামিমকে এমন একটা কথা বললো যা শুনে তামিম অবাক না হয়ে পারলো না।। তামিম কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে নীলা তাকে এই কথাটা বলেছে।। নীলার হঠাৎ কি হলো তামিম কিছুই বুঝতে পারলো না।।
.
.
.
.
.
Loading…….

ধামাকাটা কেমন হয়েছে ভাইয়া ও আপুরা.? তামিম আর নীলার বিয়েটা তো হয়েই গেল এবার শুরু হবে গল্পের আসল মজা।। আর ওদের মিল করিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে সবাই কিছু একটা গিফট দিয়ে যান, নাহলে ওদের বিচ্ছেদ করে দিব হু?।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২২
,,
,,
,,
,,
–তুমি আমাকে ততদিন পর্যন্ত ছোঁবে না যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে।। তারপরও যদি তুমি আমাকে ছুঁয়েছ তো খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।।

নীলার মুখ থেকে এমন কথা শুনে তামিম অবাক না হয়ে পারলো না।। যেই নীলা একটু আগেই বাসায় থাকতে তার রুমে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল সেই নীলা ই এখন তাকে বলছে সে যেন তাকে না ছোঁয়।। তার উপর আজ তাদের বিয়ের প্রথম রাত মানে বাসর রাত, আর এই রাতেই নীলা তামিমকে নিষেধ করে দিয়েছে সে যেন তাকে না ছোঁয়।। তামিম বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন সে কি করবে ঠিক তখনই নীলা আবার বলে উঠলো…

নীলাঃ কি হলো সারা রাত এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ঘুমাবেও.?

তামিমঃ এই তুমি এইসব কি বলছ আজ আমাদের বাসর রাত আর তুমি আমাকে বলছ আমি যেন তোমাকে না ছুঁই এটা কেমন কথা.? বলেছ ঠিক আছে কিন্তু এখন আবার ঘুমানোর কথাও বলছ.! বাসর রাতে কি কেউ ঘুমায় নাকি.?

নীলাঃ কেও না ঘুমালেও আমি ঘুমাব কারণ আমার এখন ভিষণ ঘুম পাচ্ছে।। আর আমাকে ছুঁতে তোমাকে এমনি এমনি না করি নি, এর আরও একটা কারণ আছে।।

তামিমঃ সেটা কি.?

নীলাঃ ১ম কারণ তো একটু আগেই বললাম আর ২য় কারণ হলো আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও তুমি বিয়ে ভাঙার কোনো চেষ্টাই কর নি।। এই ২ কারণে তুমি আমাকে ছুঁতে পারবে না।।

তামিমঃ ১ম কারণ নাহয় বুঝলাম কিন্তু ২য় কারণ টাতে তো আমি আছিই মানে বিয়ে ভাঙার চেষ্টা না করলেও তোমাকে নিয়ে এতো দূর পর্যন্ত পালিয়ে তো এসেছি।।

নীলাঃ উঁহু তুমি নিজ থেকে আসনি তোমাকে জোর করে পাঠানো হয়েছে।। কারণ আম্মু যদি ওইসময় তোমায় এসে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি না দিতেন তাহলে এতক্ষণে আমরা বাসাতেই থাকতাম আর সকাল হলেই রাফি ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত।।

তামিমঃ হ্যাঁ মানলাম যে চাচি যদি তখন আমাকে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধিটা না দিতেন তাহলে আমরা এতক্ষণে বাসাতেই থাকতাম।। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নিয়ে এইখানে পালিয়ে না আসতাম তাহলে কি তুমি এখন এইখানে থাকতে বল.?

নীলাঃ তুমি তো আমাকে একা পালিয়ে নিয়ে আসনি, এতে তোমার বন্ধুরা তোমায় হেল্প করেছে।। তারা যদি ওইসময় গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসার নিচে না আসতো তাহলে আমরা এতো রাতে গাড়ি কীভাবে পেতাম.? আর এই সবকিছুর পিছনে কাজ করেছেন আমার আম্মু।। তুমি এইখানে ঘোড়ার ডিমও কর নি (মুখ ভেংচি কেটে)।।

তামিমঃ হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই সবকিছুর পিছনে চাচি কাজ করেছেন কিন্তু শেষমেশ আমার আর তোমার বিয়েটা তো হয়েই গেল তাইনা.? (নীলার হাত ধরে)

নীলাঃ সাথে সাথে জাটকা মেরে তামিমের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল আর বললো, এই তোমাকে না বললাম আমায় না ছুঁতে তারপরও তুমি আমায় ছুঁয়েছ.! ছুঁয়েছ যেহেতু এখন এর জন্য তোমায় শাস্তি পেতে হবে।।

তামিমঃ কি শাস্তি.?

নীলাঃ তুমি আজ আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবে না এটাই তোমার শাস্তি।।

তামিমঃ কিহহ.! এটা কেমন শাস্তি.? বিছানায় ঘুমাতে পারবো না তো আমি কোথায় ঘুমাব.? রুমে তো আর কোনো বিছানা বা সোফাও নেই।।

নীলাঃ কেন মেঝে আছে না মেঝেতে ঘুমাবে।।

তামিমঃ মেঝেতে ঘুমাতে গেলেও তো একটা কাঁথা আর বালিশের প্রয়োজন, এখন কাঁথা কোথায় পাব.?

নীলাঃ উমম ঠিকই তো এখন কাঁথা কোথায় পাবে।। বিছানায় একটাই কাঁথা রয়েছে আর সেটা যদি তোমাকে দিয়ে দেই তাহলে আমি কীভাবে থাকবো.? রাতে যদি আমার ঠান্ডা লেগে যায়।।

তামিমঃ দেখ কারবার, মেঝেতে ঘুমালে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে এটা নিয়ে উনার মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু বিছানায় কাঁথা ছাড়া ঘুমালে উনার ঠান্ডা লেগে যাবে এটা নিয়ে উনার কতো চিন্তা (মনে মনে)।।

নীলাঃ কি হলো এইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছ.?

তামিমঃ কই কি ভাবছি কিছুই না।।

নীলাঃ তো ঘুমাবে কোথায়.?

তামিমঃ কেন মেঝেতে, কাঁথাটা আমায় দিয়ে দাও আমি এডজাস্ট করে নিব (দিবে না তো জানিই তারপরও বললাম)।।

নীলাঃ কিছুক্ষণ ভেবে, নাহ থাক মেঝেতে ঘুমালে তোমার আবার ঠান্ডা লেগে যাবে, এর চেয়ে ভালো তুমি বিছানায় এসে ঘুমাও আমি মাঝখানে কুল বালিশ দিয়ে রাখছি।। যদি ভুলেও কুল বালিশ টপকে আমার কাছে আসার বা আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছ তো খুব খারাপ হবে।।

তামিমঃ নিজের বউকে ছোঁব না তো কাকে ছোঁব.? (আস্তে আস্তে)

নীলাঃ কি বললে আবার বল.?

তামিমঃ আরে কই বললাম কিছুই তো বলি নি।।

নীলাঃ কিন্তু আমি তো শুনলাম তুমি কি যেন বলেছ।।

তামিমঃ আরে নাহ কিছুই বলি নি।।

নীলাঃ আচ্ছা তোমার কাছে কি আর কোনো সিম নেই.? যেটার নাম্বার তুমি ছাড়া অন্যকেউ জানে না মানে আমাদের বাসার কেউ জানে না।।

তামিমঃ হে একটা সিম আছে মেবি, দাড়াও দেখি মানিব্যাগে আছে কি না (বলেই মানিব্যাগটা বের করে সেই সিম খুজতে লাগলো) কিছুক্ষণ খোজার পর, হ্যাঁ আছে এইতো পেয়ে গেছি।।

নীলাঃ আচ্ছা তাহলে এবার তোমার মোবাইলের সিমটা খুলে ফেল আর এই সিমটা মোবাইলে লাগিয়ে নাও।।

তামিমঃ এটা কেন করবো.?

নীলাঃ আরে তা না হলে তো বাসার লোকজন আমাদের খুজে বের করে ফেলবে।। দেখ আমরা যে পালিয়ে এসেছি এটা কিন্তু আম্মু ছাড়া আর কেউ জানে না।। কিন্তু সকাল হলে যখন বাসার লোকেরা আমরা দুজনকে বাসায় দেখবে না তখন তারা আমাদেরকে খুজতে থাকতে আর একসময় বুঝে যাবে যে আমরা দুজন বাসা থেকে পালিয়েছি।। এরপর আব্বু পুলিশে গিয়ে আমাদের নামে মিসিং ডাইরি লিখাবেন আর পুলিশেরা তখন আমাদের ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন নাম্বারের মাধ্যমে আমাদের খুজে বের করে ফেলবে।। তাই তুমি তোমার আগের সিম খুলে এই সিমটা মোবাইলে ঢুকিয়ে নাও তাহলে আমাদের আর কেউ খুজে পাবে না।। আমি কিন্তু এর জন্য আমার মোবাইলও নিয়ে আসি নি কারণ তোমার কাছে তো একটা মোবাইল আছেই।।

তামিমঃ বাহ্ আমার জানপাখিটার তো অনেক বুদ্ধি আছে।। তুমি ঠিক বলেছ আমার সিমটা খুলে ফেলা উচিত তা না হলে পুলিশ আমাদেরকে সিম নাম্বারের সাহায্যে খুজে বের করে ফেলতে পারে।। দাড়াও নতুন সিমটা মোবাইলে লাগিয়ে নেই (বলেই আগের সিমটা খুলে নতুন সিম ফোনে লাগাতে লাগলো)।।

নীলাঃ আচ্ছা আর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসি (বলেই নীলা ওয়াশরুমে চলে গেল)।।

কিছুক্ষণ পর নীলা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এর মধ্যে তামিমও তার মোবাইলে সিমটা লাগিয়ে ফেলেছে।।তারপর তামিমও ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিল।। এরপর নীলা বিছানায় উঠে মাঝকানে একটা কুল বালিশ রেখে একপাশে ফিরে শুয়ে পরলো।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো নীলা শুয়ে পরেছে তাই সেও বিছানায় গিয়ে কুল বালিশের অন্যপাশে শুয়ে পরলো।।

তামিম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাবছে সে হয়তো প্রথম পুরুষ যে নিজের বাসর রাতে নিজের বউকে একটা বারের জন্যও জড়িয়ে ধরতে পারলো না।। জড়িয়ে ধরা তো দূরে থাক নিজের বউকে একটা বারের জন্য ছুঁতেও পারলো না।। তার মতো পুরা কপাল আর কোন ছেলের আছে।। তার এমন পুরা কপালের জন্য সে নিজেই দ্বায়ী তার উপর আবার পালিয়ে বিয়ে।। তার পুরা কপাল কি এমনি এমনি হয়েছে.? দুর ভাল্লাগেনা কিছু।। কতো ইচ্ছা ছিল বাসর রাতে নীলাকে নিয়ে এই করবো সেই করবো কিন্তু সব ইচ্ছা মাটি হয়ে গেল।। এখন আর জেগে থেকে কি লাভ আমিও ঘুমিয়ে পরি, রাত তো অনেক হয়েছে।। এরপর তামিমও সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।।

সকালবেলা…

জানালার পর্দা বেধ করে সকালের হালকা সূর্যের আলো এসে তামিমের মুখে পরতেই তামিমের ঘুম ভেঙে গেল।। ঘুম ভাঙতেই তামিম নীলাকে তার বুকের মধ্যে দেখে অনেকটাই চমকে উঠলো।। যেই মেয়ে রাতেই তাকে নিষেধ করলো সে যেন তাকে না ছোঁয় এখন সেই মেয়ে কি সুন্দর করে বাচ্চাদের মতো তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের উপর শুয়ে আছে.! ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ লাগছে নীলাকে।। তামিম এবার নীলাকে হালকা কাছে টেনে নিয়ে নীলার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বসলো।। ঠিক তখনই নীলার ঘুম ভেঙে যায় তারপর…
.
.
.
.
.
Loading…….

শুক্রবার হওয়াতে আজ একটু বিজি ছিলাম (আপুরা না বুঝলেও ভাইয়ারা ঠিক বুঝবে বিজির কারণটা) তাই গল্পটা বড় করে লিখতে পারিনি।। ইনশাআল্লাহ আগামী পর্ব বড় করে দিব।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৩
,,
,,
,,
,,
তামিম নীলার কপালে চুমু খেতেই নীলার ঘুম ভেঙে যায় তারপর সে ম্যাথা তুলে চারদিকে তাকাতেই হঠাৎ সে নিজেকে তামিমের বুকের উপর দেখে কিছুটা চমকে যায়।। রাতে তো সে তাদের মাঝখানে একটা কুল বালিশ দিয়ে রাখলো সেটা কোথায়.? তামিম কি তাহলে কুল বালিশটা সরিয়ে দিয়ে তার কাছে চলে এসেছে নাকি সে নিজেই তামিমের কাছে এসেছে.? নীলা এবার মাথাটা তুলে দেখলো সে তামিমের জায়গায় এসে পরেছে, পরক্ষণেই তার মনে পরলো রাতের ঘটনা।। রাতে তার কেন জানি একটু একটু ভয় করছিল আর তখন তামিমও ঘুমের মধ্যে ছিল তাই সে তাদের মাঝখানের কুল বালিশটা সরিয়ে তামিমের কাছে এসে তামিমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।।

নীলাঃ ইশ কি লজ্জা.! এখন যদি উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি উনার জায়গায় কি করছি তাহলে আমি উনাকে কি জবাব দিব.? দুর উনি ঘুম থেকে উঠার আগেই যদি আমি উনার কাছ থেকে সরে যেতাম তাহলে তো আর উনি জানতেন না যে আমি উনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম (মনে মনে)।।

তামিমঃ কি গো জানপাখি রাতে খুব তো বলেছিলে আমি যেন তোমায় না ছুঁই, আমি যেন তোমার কাছে না যাই আর এখন তুমি নিজেই আমার কাছে চলে এসেছ।। এসেছ তো এসেছ তাও আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছ.!

নীলাঃ ইয়ে মানে আসলে রাতে আমার একটু ভয় করছিল তাই তোমার কাছে এসে শুয়ে পরেছি।। আর আমি তো এটা বলি নাই যে আমি তোমার কাছে আসতে পারবো না।।

তামিমঃ হুম ঠিকই বলেছ তুমি তো এই কথাটা বলনি (নীলাকে হালকা জড়িয়ে ধরে)।।

নীলাঃ এই কি করছ হে, আমাকে জড়িয়ে ধরেছ কেন ছাড় আমায়, রাতে কি বলেছিলাম মনে নাই.?

তামিমঃ ছাড়বো না আর কি বলেছিলে এটা আমার মনে আছে কিন্তু ওটা তো রাতের জন্য বলেছিলে, সকালের জন্য নয়।।

নীলাঃ মানে.?

তামিমঃ মানে হলো রাতে তুমি বলেছিলে তোমাকে যেন আমি না ছুঁই, কিন্তু তুমি এটা তো বলনি যে সকালেও তোমাকে ছোঁব না।। তাই এখন তোমাকে ছাড়ছি না (বলেই নীলাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)।।

নীলাঃ আমি কিন্তু প্রথমেই বলেছিলাম যে “তুমি আমাকে ততদিন পর্যন্ত ছোঁবে না যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে” কি মনে নেই কথাটা.?

তামিমঃ ওহহ হে এই কথাটা তো ভুলেই গেছিলাম।। যাইহোক তুমি অনেক্ষণ আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলে তাই এখন আমিও তোমায় কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকবো।।

নীলাঃ তাই তা শুধু কি জড়িয়ে ধরেই থাকবে নাকি আর কিছুও করবে.? (কিছুটা রোমান্টিক হয়ে)

তামিমঃ আর কিছু মানে.? (কিছু বুঝতে না পেরে)

নীলাঃ বুঝ না তাইনা.? আচ্ছা তোমার চোখটা বন্ধ কর আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।।

তামিমঃ এ তো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি, বাহ্ নীলার আজ হঠাৎ কি হলো এতো রোমান্টিক হয়ে কথা বলছে কেন সে.? (মনে মনে)

নীলাঃ কি হলো চোখ বন্ধ করছ না কেন.? চোখ বন্ধ কর।।

তামিমঃ হে জানপাখি এইতো চোখ বন্ধ করলাম এবার কি করবে কর (চোখ বন্ধ করে)।।

নীলাঃ হে সোনা করছি, তুমি কিন্তু ভুলেও চোখ খুলবে না আমি না বলা পর্যন্ত ওকে।।

তামিমঃ আচ্ছা সোনা।।

তারপর তামিম চোখ বন্ধ করে নীলাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো আর নীলা আস্তে আস্তে তামিমের একদম কাছে চলে আসলো।। এরপর নীলা একসময় তামিমের পেটের মধ্যে জোরে একটা চিমটি কাটলো।। চিমটি খেয়ে তামিম সাথে সাথে নীলাকে ছেড়ে দিল আর এই সুযোগে নীলা নিজেকে তামিমের থেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজার কাছে চলে আসলো।।

তামিমঃ এই তুমি আমায় চিমটি দিলে কেন.?

নীলাঃ চিমটি না দিলে কি নিজেকে তোমার থেকে ছাড়াতে পারতাম.?

তামিমঃ কাজটা কিন্তু তুমি ঠিক কর নি।।

নীলাঃ কেন বাবু ভালো লাগে নি বুঝি.?

তামিমঃ দাড়াও দেখাচ্ছি ভালো লেগেছে কি না (বলেই তামিম যেই বিছানা থেকে উঠে নীলাকে ধরতে যাবে ওমনি নীলা তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেল)।। ওয়াশরুম থেকে আর বের হবে না, তখন বোঝাব মজা।।

নীলাঃ আচ্ছা বাবু (ভিতর থেকে)।।

তামিমঃ দুর সকাল সকাল মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল।।

তারপর তামিম আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো আর নীলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।। বেশ কিছুক্ষণ পর নীলা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এরপর সে তামিমের কাছে এসে তাকে ফ্রেশ হতে বললো।। তামিম বিছানা থেকে উঠে নীলাকে ধরতে যাবে ওমনি নীলা তামিমের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।। বেচারা তামিম নীলার রাগ দেখে মন খারাপ করে ওয়াশরুমে চলে গেল।। কিছুক্ষণ পর তামিম ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এর মধ্যে হোটেলের একটা স্টাফ এসে তাদেরকে সকালের নাস্তা দিয়ে গেল।। তারপর তারা দুজনেই সেই নাস্তাটা ভাগ করে খেয়ে নিল।।

এদিকে সকাল হয়ে গেছে অথচ নীলা তার রুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে নীলার আব্বু এসে নীলার রুমে ঢুকলেন আর দেখলেন ঘরে কেউ নেই।। তিনি এবার ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলেন নীলা আছে কি না।। কিন্তু সেখানে নীলা নেই তাই তিনি রুমের বারান্দায় গিয়ে দেখলেন নীলা আছে কি না।। কিন্তু তিনি সেখানেও নীলাকে খুজে পেলেন না।। তিনি এবার ভাবলেন নীলা হয়তো ছাদে আছে তাই তিনি সেখান থেকে ছাদে চলে আসলেন, কিন্তু তিনি নীলাকে সেখানেও খুজে পেলেন না।। এবার তিনি এই বিষয়টা গিয়ে নীলার আম্মুকে জানালেন।। সব শুনে নীলার আম্মু শান্ত গলায় বললেন, দেখ আর কোথাও আছে কি না।।

নীলার আব্বুঃ আর কোথাও মানে.! এই বাড়ি ছাড়া নীলা আর কোথায় থাকবে.?

নীলার আম্মুঃ কি জানি, হতেও তো পারে ওর কোনো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছে।।

নীলার আব্বুঃ বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছে মানে.! আজ ওর বিয়ে আর সে এখন তার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে

নীলার আম্মুঃ আরে আমি তো শিওর হয়ে বলি নাই যে নীলা তার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছে।। তুমি বলছ নীলাকে বাসায় খুজে পাচ্ছ না তাই ভাবলাম হয়তো ও ওর কোনো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছে।।

নীলার আব্বুঃ নীলা কোথায় গিয়েছে এটা এক্ষুণি জেনে নিচ্ছি দাড়াও (বলেই উনি নিজের ফোনটা বের করে নীলার নাম্বারে কল দিলেন)।।

নীলার নাম্বারে কল যাওয়ার সাথে সাথেই নীলার রুম থেকে তার ফোনের রিংটোন বাজতে শুরু করলো।। নীলার রুম থেকে ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনে নীলার আব্বু কৌতুহল নিয়ে নীলার রুমে আসলেন।। নীলার রুমে এসে দেখলেন নীলার বিছানার মধ্যে একটা ফোন পরে আছে আর সেইটার থেকেই রিংটোন বাজছে।। নীলার আব্বু গিয়ে ফোনটা হাতে নিলেন আর দেখলেন এটা নীলার ই ফোন।। এর মধ্যে নীলার আম্মুও নীলার রুমে চলে আসলেন।।

নীলার আব্বুঃ আরে এইটা তো নীলার ফোন, তাহলে নীলা নিশ্চয়ই বাসার মধ্যেই আছে।।

তারপর নীলার আব্বু সারা বাসায় নীলাকে খুজলেন কিন্তু নীলাকে কোথাও পেলেন না।। নীলাকে খুজতে গিয়ে উনি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন যে বাসায় তামিমও নেই।। নীলার আব্বু এবার বিষয়টা পুরোপুরি ভাবে বুঝে ফেললেন আর সারা বাড়িতে জানিয়ে দিলেন যে নীলা আর তামিম বাসা থেকে পালিয়েছে।। “নীলা আর তামিম বাসা থেকে পালিয়েছে” এটা শোনার পর তামিমের আব্বু অনেকটাই অবাক হয়ে গেলেন।। তামিমের আব্বু এবার উনার রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন আর উনার বড় বোনকে আর নীলার আব্বুকে ড্রয়িংরুমে ডাকলেন।।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা দুজন ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হলেন।। রাহিমা বেগমের সাথে উনার ছেলে রাফিও ড্রয়িংরুমে এসেছে।। তার কিছুক্ষণ পর তামিমের আম্মু আর নীলার আম্মুও ড্রয়িংরুমে এসে ঢুকলেন।। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত কারও মুখেই এখন কথা নেই, যেন সবাই এখন নিরবতা পালন করছে।। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর তামিমের আব্বু বলে উঠলেন…

তামিমের আব্বুঃ শফিক, পুরো বিষয়টা আমাকে খুলে বলতো।।

নীলার আব্বুঃ ভাইজান, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যখন আমি দেখলাম নীলা এখনো তার রুম থেকে বের হয়নি তাই আমি নীলাকে ডাকতে তার রুমে গেলাম।। কিন্তু রুমে গিয়ে দেখি নীলা তার রুমে নেই।। তারপর আমি নীলাকে তার রুমের বারান্দায় গিয়ে খুজলাম কিন্তু পেলাম না।। এরপর নীলাকে ছাদে গিয়ে খুজলাম সেখানেও পেলাম না।। সবশেষে পুরো বাসা জুড়ে নীলাকে খুজলাম, তারপরও নীলাকে কোথাও পেলাম না।। নীলাকে খুজতে গিয়ে আমি দেখলাম তামিমও বাসায় নেই।। এখন আপনিই বলেন ওরা দুজন বাসায় নেই এর মানে কি।।

তামিমের আব্বুঃ এর মানে তো আমিও বুঝতে পারছি না।।

রাফিঃ মামা Don’t Mind But I Think তামিম নীলাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে গেছে।।

তামিমের আম্মুঃ তামিম নীলাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে মানে.! তামিম কেন নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে.?

রাফিঃ I Don’t Know But I Think Maybe তামিম আর নীলাকে একে অপরকে

নীলার আম্মুঃ হতেও তো পারে নীলা অন্য কাউকে ভালোবাসে আর তাই তামিম নীলাকে নিয়ে ওই মানুষটার কাছে চলে গেছে।। আর নীলার কিন্তু এই বিয়েতে একদমই মত ছিল না তুমি (নীলার আব্বুকে) কিন্তু জোর করে আমার মেয়েটাকে (নীলার আম্মুকে থামিয়ে)

নীলার আব্বুঃ আহা তুমি চুপ থাক তো।। নীলা এখন কোথায় আছে, কার সাথে আছে, আর কি করছে, আগে আমাদের এইসব জানা জরুরী।।

নীলার আম্মুঃ এখন কেন চুপ করবো.? তুমি যদি নীলাকে বিয়ের জন্য জোর না করতে তাহলে আজ আমার মেয়েটা এইভাবে বাসা থেকে পালাতো না (হালকা কান্নার ভান করে)।।

নীলার আব্বুঃ আহা তুমি কান্না করছ কেন, আচ্ছা তুমি শান্ত হও আমি দেখছি কি করা যায়।।

ফুপিঃ শফিক তুই একটা কাজ কর তুই বরং পুলিশে ফোন করে নীলার মিসিং হওয়ার ডাইরি লিখা তাহলে নীলাকে খুজে পেতে আমাদের বেশি সমস্যা হবে না।।

নীলার আব্বুঃ হে আফা তুমি ঠিক বলেছ দাড়াও আমি নীলার বিষয়টা পুলিশকে জানাই (বলেই উনি ফোনটা বের করে পুলিশ স্টেশনে ফোন দিলেন।। নীলার আব্বুর এক বন্ধু পুলিশে চাকরি করে তিনি তাকেই ফোন দিয়েছেন)।।

কয়েকবার রিং হওয়ার পর নীলার আব্বুর বন্ধু ফোন রিছিভ করলো।। তারপর নীলার আব্বু তার বন্ধুকে নীলার বিষয়টা জানালেন আর নীলার খুজ লাগাতে বললেন।।

দুপুরবেলা…

তামিম বাহির থেকে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে হোটেলে এসে তাদের রুমে ঢুকে নীলাকে দেখেই অবাক হয়ে গেল।। কেননা নীলা আজ একটা নীল শাড়ি পরেছে যেটা তামিম তার জন্য পছন্দ করেছিল ওইদিন তার ফুপির সাথে মার্কেটে গিয়ে।। নীলার চুল বেয়ে মাঝেমধ্যে দুই একটা পানির ফোটাও পরছে মনে হয় সে এক্ষুণি গোসল করে বেরিয়েছে।। নীলা তার ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেছে।।

তামিম এক নজরে নীলার দিকে অপরূপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হঠাৎ তার চোখ পরলো নীলার পেটের দিকে।। শাড়ির আঁচলটা হালকা সরে যাওয়াতে নীলার তল পেট টাও হালকা বেরিয়ে পরেছে।। তামিম এবার নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে না পেরে নীলার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে নীলার পেটের মধ্যে হাত রেখে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নীলার ঘাড়ে তার মুখ গুজে দাড়ালো।। হঠাৎ কারও এমন স্পর্শ পেয়ে নীলা অনেকটাই চমকে উঠলো সাথে তার পুরো শরীরটাও কেঁপে উঠলো।।
.
.
.
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ (প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই সবসময় একটা না একটা সমস্যা লেগেই থাকে (হোক সেটা বড় বা ছোট)।। তেমনি আমারও মাঝেমধ্যে একটা না একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়।। গতকাল বলেছিলাম যে ফোন বার বার অটো বেক করছে যার কারণে গল্প লিখতে পারি নি।। এই সমস্যাটা এখনো মাঝেমধ্যে করছে তারপরও আজ গল্প লিখেছি আপনাদের জন্য।। বাট আমার এই সমস্যাটা অনেকেই বিশ্বাস করছে না, অনেকেই বলছে আমি গল্প না দেওয়ার জন্য এই সমস্যার কথা বলেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।। আরে আমি তো আর মেশিন নয় যে আমার সমস্যা থাকবে না, আর সমস্যা তো আমি ডেকে আনি না।। সমস্যার মধ্যে যে পরে সেই বুঝে সে কোন পরিস্থিতিতে আছে।। আপনারা তো আমার সমস্যাটা বুঝতে চান না।। আমি যেই অবস্থাতেই থাকি না কেন আপনাদের কথা হলো প্রতিদিন গল্প দিতেই হবে ব্যস।। যাইহোক অনেক কথা বলে ফেলেছি কিছু ভুল বলে থাকলে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)।।
ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here