খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২২

0
1331

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২২
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
–তুমি আমাকে ততদিন পর্যন্ত ছোঁবে না যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে।। তারপরও যদি তুমি আমাকে ছুঁয়েছ তো খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।।

নীলার মুখ থেকে এমন কথা শুনে তামিম অবাক না হয়ে পারলো না।। যেই নীলা একটু আগেই বাসায় থাকতে তার রুমে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল সেই নীলা ই এখন তাকে বলছে সে যেন তাকে না ছোঁয়।। তার উপর আজ তাদের বিয়ের প্রথম রাত মানে বাসর রাত, আর এই রাতেই নীলা তামিমকে নিষেধ করে দিয়েছে সে যেন তাকে না ছোঁয়।। তামিম বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন সে কি করবে ঠিক তখনই নীলা আবার বলে উঠলো…

নীলাঃ কি হলো সারা রাত এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ঘুমাবেও.?

তামিমঃ এই তুমি এইসব কি বলছ আজ আমাদের বাসর রাত আর তুমি আমাকে বলছ আমি যেন তোমাকে না ছুঁই এটা কেমন কথা.? বলেছ ঠিক আছে কিন্তু এখন আবার ঘুমানোর কথাও বলছ.! বাসর রাতে কি কেউ ঘুমায় নাকি.?

নীলাঃ কেও না ঘুমালেও আমি ঘুমাব কারণ আমার এখন ভিষণ ঘুম পাচ্ছে।। আর আমাকে ছুঁতে তোমাকে এমনি এমনি না করি নি, এর আরও একটা কারণ আছে।।

তামিমঃ সেটা কি.?

নীলাঃ ১ম কারণ তো একটু আগেই বললাম আর ২য় কারণ হলো আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও তুমি বিয়ে ভাঙার কোনো চেষ্টাই কর নি।। এই ২ কারণে তুমি আমাকে ছুঁতে পারবে না।।

তামিমঃ ১ম কারণ নাহয় বুঝলাম কিন্তু ২য় কারণ টাতে তো আমি আছিই মানে বিয়ে ভাঙার চেষ্টা না করলেও তোমাকে নিয়ে এতো দূর পর্যন্ত পালিয়ে তো এসেছি।।

নীলাঃ উঁহু তুমি নিজ থেকে আসনি তোমাকে জোর করে পাঠানো হয়েছে।। কারণ আম্মু যদি ওইসময় তোমায় এসে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি না দিতেন তাহলে এতক্ষণে আমরা বাসাতেই থাকতাম আর সকাল হলেই রাফি ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত।।

তামিমঃ হ্যাঁ মানলাম যে চাচি যদি তখন আমাকে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধিটা না দিতেন তাহলে আমরা এতক্ষণে বাসাতেই থাকতাম।। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নিয়ে এইখানে পালিয়ে না আসতাম তাহলে কি তুমি এখন এইখানে থাকতে বল.?

নীলাঃ তুমি তো আমাকে একা পালিয়ে নিয়ে আসনি, এতে তোমার বন্ধুরা তোমায় হেল্প করেছে।। তারা যদি ওইসময় গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসার নিচে না আসতো তাহলে আমরা এতো রাতে গাড়ি কীভাবে পেতাম.? আর এই সবকিছুর পিছনে কাজ করেছেন আমার আম্মু।। তুমি এইখানে ঘোড়ার ডিমও কর নি (মুখ ভেংচি কেটে)।।

তামিমঃ হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই সবকিছুর পিছনে চাচি কাজ করেছেন কিন্তু শেষমেশ আমার আর তোমার বিয়েটা তো হয়েই গেল তাইনা.? (নীলার হাত ধরে)

নীলাঃ সাথে সাথে জাটকা মেরে তামিমের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল আর বললো, এই তোমাকে না বললাম আমায় না ছুঁতে তারপরও তুমি আমায় ছুঁয়েছ.! ছুঁয়েছ যেহেতু এখন এর জন্য তোমায় শাস্তি পেতে হবে।।

তামিমঃ কি শাস্তি.?

নীলাঃ তুমি আজ আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবে না এটাই তোমার শাস্তি।।

তামিমঃ কিহহ.! এটা কেমন শাস্তি.? বিছানায় ঘুমাতে পারবো না তো আমি কোথায় ঘুমাব.? রুমে তো আর কোনো বিছানা বা সোফাও নেই।।

নীলাঃ কেন মেঝে আছে না মেঝেতে ঘুমাবে।।

তামিমঃ মেঝেতে ঘুমাতে গেলেও তো একটা কাঁথা আর বালিশের প্রয়োজন, এখন কাঁথা কোথায় পাব.?

নীলাঃ উমম ঠিকই তো এখন কাঁথা কোথায় পাবে।। বিছানায় একটাই কাঁথা রয়েছে আর সেটা যদি তোমাকে দিয়ে দেই তাহলে আমি কীভাবে থাকবো.? রাতে যদি আমার ঠান্ডা লেগে যায়।।

তামিমঃ দেখ কারবার, মেঝেতে ঘুমালে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে এটা নিয়ে উনার মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু বিছানায় কাঁথা ছাড়া ঘুমালে উনার ঠান্ডা লেগে যাবে এটা নিয়ে উনার কতো চিন্তা (মনে মনে)।।

নীলাঃ কি হলো এইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছ.?

তামিমঃ কই কি ভাবছি কিছুই না।।

নীলাঃ তো ঘুমাবে কোথায়.?

তামিমঃ কেন মেঝেতে, কাঁথাটা আমায় দিয়ে দাও আমি এডজাস্ট করে নিব (দিবে না তো জানিই তারপরও বললাম)।।

নীলাঃ কিছুক্ষণ ভেবে, নাহ থাক মেঝেতে ঘুমালে তোমার আবার ঠান্ডা লেগে যাবে, এর চেয়ে ভালো তুমি বিছানায় এসে ঘুমাও আমি মাঝখানে কুল বালিশ দিয়ে রাখছি।। যদি ভুলেও কুল বালিশ টপকে আমার কাছে আসার বা আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছ তো খুব খারাপ হবে।।

তামিমঃ নিজের বউকে ছোঁব না তো কাকে ছোঁব.? (আস্তে আস্তে)

নীলাঃ কি বললে আবার বল.?

তামিমঃ আরে কই বললাম কিছুই তো বলি নি।।

নীলাঃ কিন্তু আমি তো শুনলাম তুমি কি যেন বলেছ।।

তামিমঃ আরে নাহ কিছুই বলি নি।।

নীলাঃ আচ্ছা তোমার কাছে কি আর কোনো সিম নেই.? যেটার নাম্বার তুমি ছাড়া অন্যকেউ জানে না মানে আমাদের বাসার কেউ জানে না।।

তামিমঃ হে একটা সিম আছে মেবি, দাড়াও দেখি মানিব্যাগে আছে কি না (বলেই মানিব্যাগটা বের করে সেই সিম খুজতে লাগলো) কিছুক্ষণ খোজার পর, হ্যাঁ আছে এইতো পেয়ে গেছি।।

নীলাঃ আচ্ছা তাহলে এবার তোমার মোবাইলের সিমটা খুলে ফেল আর এই সিমটা মোবাইলে লাগিয়ে নাও।।

তামিমঃ এটা কেন করবো.?

নীলাঃ আরে তা না হলে তো বাসার লোকজন আমাদের খুজে বের করে ফেলবে।। দেখ আমরা যে পালিয়ে এসেছি এটা কিন্তু আম্মু ছাড়া আর কেউ জানে না।। কিন্তু সকাল হলে যখন বাসার লোকেরা আমরা দুজনকে বাসায় দেখবে না তখন তারা আমাদেরকে খুজতে থাকতে আর একসময় বুঝে যাবে যে আমরা দুজন বাসা থেকে পালিয়েছি।। এরপর আব্বু পুলিশে গিয়ে আমাদের নামে মিসিং ডাইরি লিখাবেন আর পুলিশেরা তখন আমাদের ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন নাম্বারের মাধ্যমে আমাদের খুজে বের করে ফেলবে।। তাই তুমি তোমার আগের সিম খুলে এই সিমটা মোবাইলে ঢুকিয়ে নাও তাহলে আমাদের আর কেউ খুজে পাবে না।। আমি কিন্তু এর জন্য আমার মোবাইলও নিয়ে আসি নি কারণ তোমার কাছে তো একটা মোবাইল আছেই।।

তামিমঃ বাহ্ আমার জানপাখিটার তো অনেক বুদ্ধি আছে।। তুমি ঠিক বলেছ আমার সিমটা খুলে ফেলা উচিত তা না হলে পুলিশ আমাদেরকে সিম নাম্বারের সাহায্যে খুজে বের করে ফেলতে পারে।। দাড়াও নতুন সিমটা মোবাইলে লাগিয়ে নেই (বলেই আগের সিমটা খুলে নতুন সিম ফোনে লাগাতে লাগলো)।।

নীলাঃ আচ্ছা আর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসি (বলেই নীলা ওয়াশরুমে চলে গেল)।।

কিছুক্ষণ পর নীলা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এর মধ্যে তামিমও তার মোবাইলে সিমটা লাগিয়ে ফেলেছে।।তারপর তামিমও ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিল।। এরপর নীলা বিছানায় উঠে মাঝকানে একটা কুল বালিশ রেখে একপাশে ফিরে শুয়ে পরলো।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো নীলা শুয়ে পরেছে তাই সেও বিছানায় গিয়ে কুল বালিশের অন্যপাশে শুয়ে পরলো।।

তামিম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাবছে সে হয়তো প্রথম পুরুষ যে নিজের বাসর রাতে নিজের বউকে একটা বারের জন্যও জড়িয়ে ধরতে পারলো না।। জড়িয়ে ধরা তো দূরে থাক নিজের বউকে একটা বারের জন্য ছুঁতেও পারলো না।। তার মতো পুরা কপাল আর কোন ছেলের আছে।। তার এমন পুরা কপালের জন্য সে নিজেই দ্বায়ী তার উপর আবার পালিয়ে বিয়ে।। তার পুরা কপাল কি এমনি এমনি হয়েছে.? দুর ভাল্লাগেনা কিছু।। কতো ইচ্ছা ছিল বাসর রাতে নীলাকে নিয়ে এই করবো সেই করবো কিন্তু সব ইচ্ছা মাটি হয়ে গেল।। এখন আর জেগে থেকে কি লাভ আমিও ঘুমিয়ে পরি, রাত তো অনেক হয়েছে।। এরপর তামিমও সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।।

সকালবেলা…

জানালার পর্দা বেধ করে সকালের হালকা সূর্যের আলো এসে তামিমের মুখে পরতেই তামিমের ঘুম ভেঙে গেল।। ঘুম ভাঙতেই তামিম নীলাকে তার বুকের মধ্যে দেখে অনেকটাই চমকে উঠলো।। যেই মেয়ে রাতেই তাকে নিষেধ করলো সে যেন তাকে না ছোঁয় এখন সেই মেয়ে কি সুন্দর করে বাচ্চাদের মতো তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের উপর শুয়ে আছে.! ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ লাগছে নীলাকে।। তামিম এবার নীলাকে হালকা কাছে টেনে নিয়ে নীলার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বসলো।। ঠিক তখনই নীলার ঘুম ভেঙে যায় তারপর…
.
.
.
.
.
Loading…….

শুক্রবার হওয়াতে আজ একটু বিজি ছিলাম (আপুরা না বুঝলেও ভাইয়ারা ঠিক বুঝবে বিজির কারণটা) তাই গল্পটা বড় করে লিখতে পারিনি।। ইনশাআল্লাহ আগামী পর্ব বড় করে দিব।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here