খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২৬
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
–আমি তোমার বউ, আমাকে চিনতে পারছ না.?
মেয়েটার এমন কথা শুনে তামিম অবাক না হয়ে পারলো না।। চিনা নেই জানা নেই একটা অচেনা মেয়ে এসে যদি কাউকে এমন কথা বলে তাহলে যে কেউ-ই অবাক হয়ে যাবে।। মেয়েটার কণ্ঠ শুনে মেয়েটাকে চেনার উপায় নেই, চিনতে হলে মেয়েটার ফেস দেখতে হবে।। কিন্তু মেয়েটার পুরো বডি ই তো বোরকা দিয়ে ঢাকা, এমতাবস্থায় মেয়েটা কে তা চিনা বড় মুশকিল।। তামিম মনে মনে ভাবতে লাগলো, মেয়েটা কি আমার সাথে ফাজলামি করছে.? কিন্তু একটা অচেনা মেয়ে কেন আমার সাথে ফাজলামি করবে.?
এদিকে তামিমকে কি যেন ভাবতে দেখে মেয়েটা আবার বলে উঠলো…
–কি গো কি ভাবছ তুমি.? (আদুরে গলায়)
তামিমঃ আরে আপনি এইসব কি পাগলের মতো কথা বলছেন.? চেনা নেই জানা নেই হুট করে এসে রুমে ঢুকে গেলেন আর এখন আবার বলছেন আপনি আমার বউ।। আপনি আমার বউ মানে.? আপনাকে তো আমি চিনিই না তাহলে (তামিমকে থামিয়ে)
–এখন তো চিনবেই না কারণ আমি তো এখন তোমার পর হয়ে গেছি (কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)।।
তামিমঃ আজব তো, আরে আমি সত্যি আপনাকে চিনি না, কে আপনি আপনার পরিচয় দেন।।
–বললাম তো আমি তোমার বউ।।
তামিমঃ আপনাকে আমি চিনিই না তাহলে আপনি আমার বউ কীভাবে হলেন.? আর আমি অলরেডি একটা মেয়েকে অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছি।। এই যে বিছানার মধ্যে যে মেয়েটা শুয়ে আছে সেই মেয়েটাই আমার বউ (নীলাকে দেখিয়ে)।।
–কিহ.! তার মানে তুমি আরেকটা বিয়ে করে ফেলেছ.! ওকে ঠিক আছে সতিন নিয়ে সংসার করতে আমার কোনো সমস্যা নেই।।
তামিমঃ সতিন নিয়ে সংসার মানে.? কে সতিন আর কীসের সংসার.?
–এই যে বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটা আমার সতিন এন্ড আমার আর তোমার সংসারের কথা বলছি।।
তামিমঃ আমার মনে হয় আপনার মাথা পুরাই গেছে নাহলে পাগলের মতো এইসব কথা বলতেন না।। আপনি এক্ষুণি আমাদের রুম থেকে বের হোন নাহলে কিন্তু (তামিমকে থামিয়ে)
–নাহলে কিন্তু কি.? আমাকে রুম থেকে বের করে দিবেন নাকি আমায় মারবেন কোনটা.? যাই করেন না কেন এটা কিন্তু আমারও রুম সো আমি এইখান থেকে কোথাও যাব না।। এই যে আমি আমার সতিনের পাশে বসে পরলাম (বলেই বিছানার গিয়ে নীলার পাশে বসে পরলো)।।
তামিমঃ আরে কি করছেন নীলুর ঘুম ভেঙে যাবে তো।। আপনি ওইখান থেকে উঠে আসেন বলছি।।
–ওহ তাহলে আমার সতিনের নাম নীলু, খুব সুন্দর নাম তো আমার সতিনের।। দাড়াও ওর সাথে একটু কথা বলে নেই, নীলু এই নীলু উঠ বলছি (নীলাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে)।।
তামিমঃ এই মেয়ে আপনি কিন্তু
–উফ তুমি একটু চুপ থাক তো।।
তারপর মেয়েটা তামিমকে চুপ করিয়ে নীলাকে ডাকতে লাগলো।। তামিম কিছু বলেও মেয়েটাকে থামাতে পারছে না।। মেয়েটা যদি ছেলে হতো তাহলে সে এতক্ষণে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিত।। কিন্তু মেয়ে হওয়াতে তামিম ওকে কিছু করতে পারছে না। ছেলে হয়ে কীভাবে একটা অপরিচিত মেয়ের গায়ে হাত দিবে সে.?
এদিকে মেয়েটা নীলাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে ঘুম থেকে তুলেই ফেলেছে।। নীলা ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে আশেপাশে তাকাতে লাগলো ঠিক তখনই তার চোখ পরলো তার পাশে থাকা মেয়েটার দিকে।। তার পাশে একটা মেয়েকে দেখে নীলা অনেকটাই ভয় পেয়ে গেল আর সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।। রুমে তো তারা দুজন ছাড়া আর কোনো মানুষ নেই তাহলে এই মেয়ে তাদের রুমে আসলো কোথা থেকে.?
–কি হলো তুমি এইভাবে উঠে পরলে কেন, ভয় পেলে নাকি আমাকে দেখে.?
নীলাঃ ককে আপনি আর আমাদের রুমেই বা কি করছেন.?
–আরে আমি তোমার স্বামীর ১ম বউ মানে আমি তোমার সতিন।।
নীলাঃ আমার স্বামীর ১ম বউ মানে.! কি পাগলের মতো কথা বলছেন আপনি.? আমার স্বামী একটাই বিয়ে করেছে আর আমিই তার ১ম বউ (কিছুটা রাগ নিয়ে বললো)।।
–উঁহু আমি তোমার স্বামীর ১ম বউ আর সে আমার স্বামী।। তুমি হলে আমার স্বামীর ২য় বউ বুঝলে.?
নীলাঃ মেয়েটার এমন কথা শুনে নীলা তামিমকে খুজতে লাগলো আর দেখলো তামিম তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।। নীলা তাড়াতাড়ি করে তামিমের কাছে গিয়ে দাড়ালো আর বললো, এই মেয়ে এইসব কি বলছে আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।। ১ম বউ ২য় বউ এইসব কি.?
তামিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা বলে উঠলো…
–মানেটা খুব সোজা, আমি হলাম তামিমের ১ম স্ত্রী মানে তামিম তোমাকে বিয়ে করার ২ মাস আগে আমাকে বিয়ে করেছে।। বিয়ে করে আমরা দুজন যার যার বাসায় ই থাকতাম কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার আর ওর মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধে এরপর তামিম আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।। এর ঠিক ২ মাস পর হঠাৎ জানতে পারলাম তামিম নাকি একটা মেয়েকে বিয়ে করে তাকে নিয়ে কক্সবাজার পালিয়ে এসেছে।। তাই আমিও তামিমকে খুজতে কক্সবাজার চলে আসলাম আর তামিমের দেখা পেয়েই গেলাম।।
মেয়েটার কথা শুনে নীলা যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তামিম।। তামিম নিজেই জানে না যে সে ২ মাস আগে কাউকে বিয়ে করেছিল আর এই মেয়েটাই নাকি তার বউ।। নীলাও মনে মনে ভাবছে মেয়েটা কি সত্যি বলছে নাকি আমাদেরকে আলাদা করার জন্য বানিয়ে বানিয়ে এইসব কথা বলছে.?
নীলাঃ আপনি যে উনার স্ত্রী তার প্রমাণ কি.? এর কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে.?
–হ্যাঁ অবশ্যই আছে, থাকবে না কেন প্রমাণ সাথে নিয়েই তো এইখানে আসলাম।। দাড়াও দেখাচ্ছি প্রমাণ (বলেই মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে নীলার হাতে দিল)।।
মেয়েটার থেকে চিঠিটা নিয়ে নীলা চিঠিটা পড়তে লাগলো।।
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মুন, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না”।। আমরা কালকেই কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করবো তুমি রেডি থাক।। আর হে বিয়ের পর কিন্তু আমরা কিছুদিন আলাদা থাকবো।। তারপর আমাদের পরিবার আমাদেরকে মেনে নিলে নাহয় আমরা আবার এক হব।। কাল তাহলে দুপুর ৩টায় —- এই কাজি অফিসে চলে এস কেমন.?
ইতি তোমার তামিম….
চিঠিটার মধ্যে এইসব লিখা পড়ে নীলার চোখ মূহুর্তের মধ্যেই জলে ভরে গেল।। নীলার চোখে পানি টলমল করছে যেন সে এক্ষুণি কেঁদে দিবে।। নীলা এবার ছলছল চোখে তামিমের দিকে তাকালো আর বললো…
নীলাঃ তুমি আমার সাথে এমন প্রতারণা করতে পারলে.? কি দোষ করেছিলাম আমি.? ভালোই তো বেসে ছিলাম তোমায়।। তুমি তো নিজ থেকে এসেই আমাকে তোমার ভালোবাসার কথা বলেছিলে।। তারপরও তুমি আমাকে এইভাবে ঠকালে.? নাহ আমি আর থাকবো না তোমার সাথে, চলে যাব আমি বাসায় আর আব্বু যার সাথে আমার বিয়ে দিবেন তাকেই আমি বিয়ে করবো (বলেই নীলা নিজের জামাকাপড় গুছানো শুরু করে দিল)।।
তামিমঃ আরে নীলা এইসব তুমি কি বলছ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।। প্রতারণা, ঠকানো এইসবের মানে কি.?
নীলাঃ চিঠিটেই সব লিখা আছে চিঠিটা পড় তাহলে সব বুঝতে পারবে।।
নীলার কথায় তামিম চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।। চিঠিটা পড়া শেষ করে তামিম নীলার দিকে তাকিয়ে দেখলো নীলা তার সব জামাকাপড় ঘুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।। তামিম নীলাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওই বোরকা পরা মেয়েটা হো হো করে হেসে উঠলো।। মেয়েটার হাসি শুনে নীলা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল আর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটার হাসির কারণ খুজতে লাগলো।। তামিমও মেয়েটার হাসি দেখে অবাক হয়ে গেছে।। মেয়েটা এইভাবে হাসছে কেন তামিম বুঝে উঠতে পারছে না।।
.
.
.
.
.
Loading…….
আচ্ছা গল্পটা দুপুরে দেওয়াতে কি আপনাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে.? (মানে রোজার কোনো সমস্যা) সমস্যা হলে বলতে পারেন গল্পটা নাহয় এখন থেকে রাতে দিব।। আর গল্পটা ছোট হওয়ার জন্য সরি, আগামী পর্ব বড় করে দিব ইনশাআল্লাহ, হেপি রিডিং ?
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~