খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ৫
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
তামিমের হাতের চড় খেয়ে নীলার অবস্থা একদম বেহাল হয়েগেছে।। এতো জোরে চড় মারায় নীলার ফর্সা গালে তামিমের ৫ আঙুলের চাপ পরে গেছে।। ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।। তামিম এখনো নীলার চুলের মুটি ধরে আছে, এতে নীলার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।। এতো কষ্ট আর ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে নীলা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল।। নীলার কান্না দেখে আজকে আর তামিমের মন নরম হলো না, উলটা তার রাগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল।।
তামিমঃ এই চুপ, একদম কাদবি না কান্না থামা বলছি (জোরে ধমক দিয়ে)।।
তামিমের ধমক শুনে নীলা ভয় পেয়ে কান্না বন্ধ করে ছলছল চোখে তামিমের দিকে তাকালো।। নীলা যেন তামিমকে কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলতে পারছে না।।
এদিকে তামিমের চিৎকার শুনে তামিমের আম্মু আর নীলার আম্মু দুজন দুজনের রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসলেন।। দুজন ড্রয়িংরুমে এসেই দেখলেন তামিম নীলার চুলের মুটি ধরে আছে আর নীলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।। নীলার ঠোঁট ফেটে রক্ত পরছে এটা দেখার পর-ই তামিমের আম্মু দৌড়ে এসে তামিমের থেকে নীলাকে ছাড়িয়ে নিলেন আর তামিমের গালে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।। চড় খেয়েও তামিমের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটলো না, সে আগের ন্যায় অগ্নি দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।।
তামিমের আম্মুঃ এই তুই ওর সাথে কি করেছিস.? আর নীলার ঠোঁট ফেটে রক্ত পরছে কেন.? গালের মধ্যেও তো ৫ আঙুলের দাগ পরে আছে।। তুই ওকে চড় মেরেছিস.!
তামিমঃ আগে ওকে জিজ্ঞেস কর ও কি করেছে (রাগী গলায়)।।
তামিমের আম্মুঃ ও কি করেছে হে.? আর ওর এমন অবস্থা কেন.?
তামিমঃ ওকেই জিজ্ঞেস কর আমি কিছু বলতে পারবো না (কথাটা বলেই তামিম রাগে গজগজ করে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলো)।।
তামিম চলে যাওয়ার পরেই নীলা আবার ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিল।। নীলার চেহারার এমন অবস্থা দেখে তামিমের আম্মুর ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।। নীলার গায়ে তো তামিম আজ পর্যন্ত কখনো হাত তুলেনি, তাহলে আজ তামিম নীলার সাথে এমন করলো কেন.? তামিমের উপর এখন উনার ভিষণ রাগ হচ্ছে, কিন্তু এই মূহুর্তে তিনি আর কিছু না ভেবে নীলাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন আর উনার বিছানার মধ্যে বসিয়ে দিলেন।।
তারপর আলমারি থেকে একটু তুলা আর মলম বের করে এনে তুলা দিয়ে নীলার ঠোঁটের রক্ত মুছে মলমটা নীলার ঠোঁটে লাগিয়ে দিলেন।। নীলা এখন আর শব্দ করে কান্না করছে না, তবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।। তামিমের আম্মু এবার নীলাকে কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন আর নীলার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন…
তামিমের আম্মুঃ তামিম তোমার সাথে কি করেছে মামুনি.?
নীলাঃ নিশ্চুপ (শুধু কেঁদেই যাচ্ছে)।।
তামিমের আম্মুঃ কেঁদ না কান্না থামাও আর আমাকে বল ও তোমার সাথে কি করেছে.?
নীলাঃ উনি, উনি আমাকে চড় মেরেছেন (ভাঙা গলায়)।।
তামিমের আম্মুঃ চড় মেরেছে.! কিন্তু কেন কি করেছিলে তুমি যে ও তোমাকে চড় মেরেছে.?
নীলাঃ আমি জানি না ভাইয়া আমায় কেন মেরেছেন (বলেই আবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো)।।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা ও যখন তোমাকে মেরেছে তখন তুমি কি করছিলে মামুনি.?
নীলাঃ আমি তখন ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম।। এমন সময় উনি হুট করে আমার সামনে এসে দাড়ান আর আমার হাত থেকে টিভির রিমোটটা কেড়ে নিয়ে মেঝেতে আচার মেরে রিমোট ভেঙে ফেলেন।। তারপর আমার চুল চেপে ধরে আমার গালে ২টা চড় মারেন (বলেই আবার আগের ন্যায় কান্না করতে লাগলো)।।
তামিমের আম্মুঃ আজ ওর আব্বু বাসায় আসুক তখন ওকে বোঝাব মজা।। তুমি আর কেঁদ না মামনি, এবার কান্না থামাও।।
নীলাঃ তবুও হালকা হালকা কেঁদে যাচ্ছে।।
এদিকে নীলার আম্মু নীলার এমন অবস্থা দেখে তামিমের উপর একটুও রাগ করলেন না।। তিনি উলটা তামিমের রুমে চলে আসলেন এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে যে নীলা কি দোষ করেছে।। কারণ নীলার আম্মু ভালো করেই জানেন তামিম কখনো অকারণে নীলাকে বকে না কিন্তু আজ এইভাবে নীলাকে মারাতে তিনিও একটু অবাক হয়েছেন।। নীলার আম্মু তামিমের রুমের সামনে এসে দেখলেন ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করা তাই তিনি দরজায় টুকা দিতে লাগলেন।।
তামিমঃ কে.?
নীলার আম্মুঃ আমি তোমার চাচি, দরজাটা একটু খুল বাবা।।
তামিমঃ আমি এখন দরজা খুলতে পারবো না, আপনি প্লিজ এইখান থেকে চলে যান আর আমাকে একটু একা থাকতে দেন।।
নীলার আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি তুমি থাক বলেই উনি সেখান থেকে চলে আসলেন, কারণ উনি বুঝতে পেরেছেন এখন তামিম কিছুতেই দরজা খুলবে না।।
রাতেরবেলা…
তামিমের আম্মু-আব্বু আর নীলার আম্মু-আব্বু বসে আছেন ড্রয়িংরুমে।। তাদের একে অন্যের পাশে তামিম আর নীলাও রয়েছে।। নীলা তামিমের আম্মুর পাশে সোফায় বসে আছে আর তামিম তাদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।। দুপুরবেলা নীলাকে মারার কারণে তামিমের আব্বু এখন তামিমকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সবাইকে এইখানে ডেকেছেন।।
তামিমের আব্বুঃ শুনলাম দুপুরে নাকি তুমি নীলাকে চড় মেরেছ, কথা কি সত্যি.? (তামিমকে উদ্দেশ্য করে)
তামিমঃ হে (মাথা নিচু করে)।।
তামিমের আব্বুঃ কেন মেরেছ নীলা মামুনিকে.?
তামিমঃ নিশ্চুপ।।
তামিমের আব্বুঃ তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি কথা বলছ না কেন.? (ধমকের শুরে)
তামিমঃ নিশ্চুপ (আগের মতোই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)।।
তামিম মনে মনে ভাবছে আব্বুকে কীভাবে বলি যে নীলাকে আমি কেন মেরেছি।। এইসব কথা বলতেও তো আমার লজ্জা করছে।। উফফ চাচিও আজকে চুপ করে আছেন।। আব্বুর জায়গায় অন্যকেউ হলে তো চাচি নিজেই আমাকে বাঁচিয়ে দিতেন।। কিন্তু বাড়ির সবাই আব্বুকে ভিষণ ভয় পায় তাই আজকে চাচিও আব্বুর ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না।।
তামিমের আব্বুঃ এই তুই কথা বলছিস না কেন? (হঠাৎ আব্বু ভিষণ রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললেন কথাটা)।।
তামিমঃ তার আব্বুর এরকম ভয়ংকর চিৎকার শুনে সে ভয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো।। তবুও তামিম কিছু না বলে আগের মতোই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।।
তামিমকে চুপ করে থাকতে দেখে রফিক আহমেদের রাগ এখন চরম পর্যায়ে উঠে গেল।। তিনি এবার বসা থেকে উঠে দাড়ালেন আর সেখান থেকে সোজা নিজের রুমে চলে আসলেন।। রুমে এসে খাটের নিচ থেকে একটা ঝালি বেত বের করে তিনি আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসলেন।। ড্রয়িংরুমে এসে তিনি এবার তামিমের সামনে দাড়ালেন আর বললেন…
তামিমের আব্বুঃ কথা বলবি নাকি মাইর খাবি কোনটা.?
তামিমঃ মনে মনে ভাবলো, যদি বলে দেই আমি নীলাকে কেন মেরেছি তাহলে তো চাচ্চু নীলাকে আস্ত রাখবে না।। না আমি কিছু বলবো না, এতে আব্বু আমার সাথে যা করার করুক।।
তামিমকে চুপ করে থাকতে দেখে রফিক আহমেদ আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেন না, ঝালি বেতটা দিয়ে তামিমের গায়ে ঠাস, ঠাস করে মারতে শুরু করলেন।। ঝালি বেতের বারি খেয়ে তামিম নিজেকে শক্ত করে সেই আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো আর নিরব ভাবে মাইর খেয়ে যেতে লাগলো।।
ঝালি বেতের বারি খেয়ে তামিমের ফর্সা শরীরে ঝালি বেতের দাগ পরে যাচ্ছে, কোনো কোনো স্থানে রক্তেরও জমাট বেধে যাচ্ছে।।
তামিমের এমন করুণ অবস্থা দেখেও কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।। নীলাও তামিমের আব্বুর রাগ দেখে ভয়ে তামিমের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।। তামিমের আম্মুও কিছু না বলে নীলাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছেন।। এদিকে রফিক আহমেদ তামিমকে মেরেই চলছেন, থামার কোনো নাম-ই নিচ্ছেন না।। তামিমের শরীরের বিভিন্ন জায়গা এখন ফুলে লাল হয়ে গেছে।। তামিমের এমন অবস্থা দেখে নীলার আব্বু আর সহ্য করতে পারলেন না, তিনি তারাতাড়ি গিয়ে তামিমের আব্বুকে থামালেন আর অনুরোধের শুরে বললেন…
নীলার আব্বুঃ ভাইজান দয়া করে আর ওকে আর মারবেন না প্লিজ।। আমি জানি তামিম কখনো নীলাকে অকারণে মারবে না, নিশ্চয়ই নীলা কোনো ভুল করেছে যার কারণে তামিম ওকে মেরেছে।। এর জন্য তো আপনি ওকে শাস্তিও দিয়ে ফেলেছেন এবার বাদ দেন আর কতো মারবেন ওকে.?
নীলার আব্বুর কথাগুলো শুনে তামিমের আব্বু এবার কিছুটা শান্ত হলেন আর তামিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
তামিমের আব্বুঃ আর যদি কোনোদিন নীলা মামুনির গায়ে হাত তুলেছিস তাহলে তোকে আমি এই বাসা থেকেই বের করে দিব (কথাটা বলেই তিনি সেখান থেকে আবার নিজের রুমে চলে আসলেন)।।
তামিমের আব্বু চলে যাওয়ার পরেই নীলার আম্মু দৌড়ে উনার রুমে গিয়ে একটা মলম নিয়ে এসে তামিমকে সোফায় বসিয়ে ওর ফুলা জায়গায় মলমটা লাগিতে দিতে লাগলেন।। তামিমের আম্মু আর ওইখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নীলাকে নিজের সাথে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসলেন।। তারপর একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে নীলাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন।। খাওয়ানো শেষ হলে তিনি নীলাকে নিজের রুমে দিয়ে এসে ঘুমিয়ে যেতে বললেন।।
এদিকে নীলার আম্মুও তামিমের শরীরে মলম লাগিয়ে দিয়ে একটা প্লেটে করে কিছু খাবার এনে তামিমকে জোর করে খাইয়ে দিলেন।। তামিমের খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু নীলার আম্মুর জোরাজুরিতে তাকে খেতেই হলো।। খাবার খেয়ে তামিম নিজের রুমে চলে আসলো আর এসেই দরজাটা লাগিয়ে বিছানার উপর শুয়ে পরলো।।
ঘড়িতে যখন ১২টা বেজে উঠলো তখন তামিম নিজের রুমের দরজা খুলে রুম থেকে বের হলো।। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, এটাই সুযোগ তার নীলার কাছে যাওয়ার।। তামিম পা টিপে টিপে নীলার রুমের সামনে এসে দাড়ালো।। রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল।। নীলা তো প্রতিদিন দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে ঘুমায়, কিন্তু আজ মনে হয় নীলা দরজা লাগাতে ভুলে গেছে।।
তামিম এবার আস্তে আস্তে নীলার রুমে ঢুকে নীলার বিছানার সামনে এসে দাঁড়ায়।। হালকা ড্রিমলাইটের আলোতে ঘুমন্ত নীলাকে বড্ড মায়াবী লাগছে।। তামিম এবার হাটু গেড়ে নীলার বিছানার পাশে বসলো আর নীলার গালের দিকে তাকালো।। নীলার গালে তার ৫ আঙুলের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।। তামিমের এখন নিজেরই খারাপ লাগছে নীলার গালে তার হাতের আঙুলের চাপ দেখে।। তখন চড়টা এতো জোরে না মারলেও হতো।। কিন্তু তখন কি তামিমেএ সেই হুস ছিল.? সে তো রাগের মাথায় এইসব করেছে।।
তামিমঃ সরি নীলু, বিশ্বাস কর আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না।। রাগের মাথায় তোকে চড়টা মেরেছি।। তোর খুব লেগেছে তাইনা.? এই কথা দিলাম তোর গায়ে আর কখনো হাত তুলবো না।। তোকে মেরে যে এখন আমিও শান্তি পাচ্ছিনা রে।। খুব ভালোবাসি যে তোকে, নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি, প্লিজ আমাকে তুই মাফ করে দিস (কথাগুলো বলেই তামিম নীলার কপালে একটা চুমু খেয়ে নীলার রুম থেকে বেরিয়ে আবার নিজের রুমে চলে আসলো)।।
.
.
.
.
.
Loading…….
ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।। আর হে গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক সো গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না।। গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন তবুও কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না প্লিজ।। হেপি রিডিং ?
বিঃদ্রঃ অনেকেই আমায় বলছেন গল্পটা বড় করে দিতে, আমি যে গতকাল আমার সমস্যা গুলো বললাম তারপরও পাবলিকরা মনে হয় কিছু বুঝেনি।। শুনেন, গল্প লেখা কোনো আমার পেশা নয় যে নিজের কাজকর্ম ফেলে সারাক্ষণ গল্প নিয়ে বসে থাকবো।। পারসোনাল লাইফের কাজ শেষে যা টাইম মিলে তা দিয়েই গল্প লিখি।। এতে গল্প কোনোদিন বড় অথবা কোনোদিন ছোট হবেই।। আর আপনারা গল্প পড়ে উৎসাহ না দিয়েই চলে যান তাহলে গল্প বড় করবো কেন.? আগে গল্প লিখার উৎসাহ দেন তারপর এসে গল্প বড় করে দিতে বলিয়েন (কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছি তবে সবাইকে নয়)।।
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~