খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ৬

0
4993

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ৬
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
(একটা বিশেষ কারণে নীলাকে ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস এইটে নেওয়া হয়েছে)।।
নীলা বিছানার উপর শুয়ে শুয়ে ভাবছে, তামিম ভাইয়া একটু আগে এইসব কি বলে গেলেন আমায়.? উনি নিজেই আমায় মারলেন আর এখন উনি নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন.! আর উনি আমায় ভালোবাসেন মানে.? এই “ভালোবাসা” আবার কি.? উফফ কিছুই তো বুঝতে পারছি না।। আর ওইদিন আমি উনার ঠোঁটে চুমু খাওয়াতে আমায় কি ব্যাথাটাই না দিলেন।। আর আজকে উনি নিজেই আমার কপালে চুমু খেলেন.! আচ্ছা আমি কি সপ্নের মধ্যে আছি নাকি জেগে আছি.? নাহ আমি তো এখনো ঘুমাইনি তাহলে সপ্নে থাকবো কি করে।।

নীলার মাথায় এখন হাজারো প্রশ্ন + চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে।। তামিমের বলা কথাগুলোর মানে সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।। তামিম তাকে ভালোবাসে এটার মানে কি.? আর তামিম চলে যাওয়ার সময় তার কপালে চুমু দিয়ে গেল কেন.? নীলার মন চাচ্ছে এক্ষুণি তামিমের কাছে গিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে আসতে।। কিন্তু না, এটা করা যাবে না নাহলে তামিম ভাইয়া বুঝে ফেলবে যে আমি তখন জেগে ছিলাম।।

ভাইয়া ও আপুরা কি ভাবছেন, তামিমের কথাগুলো নীলা শুনলো কি করে তাইতো.?
তামিম যখন নীলার রুমের দরজা খুলে আস্তে আস্তে নীলার পাশে এসে দাঁড়ায় তখন নীলা জেগেই ছিল আর তামিমের কথাই ভাবছিল।। তামিম কেন তখন নিরবে মাইর খেয়ে গেল, কেন সবাইকে বললো না যে সে নীলাকে কি কারণে মেরেছিল।। এইসব কথাই নীলা শুয়ে শুয়ে ভাবছিল ঠিক তখনই সে খেয়াল করলো কে যেন তার রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেছে।। অন্ধকারের মধ্যে নীলা প্রথমে একটা ছায়ামূর্তিকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।। কিন্তু পরক্ষণেই সে দেখলো ওই ছায়ামূর্তিটা আর কেউ না ওইটা তামিম।।

এতো রাতে নীলা তামিমকে নিজের রুমে দেখে অনেকটাই ভয় পেয়ে যায়।। নীলা মনে মনে ভাবলো, হয়তো তখনকার মাইর খাওয়ার জন্য সে এখন নীলার থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।। নীলা তখন কি করবে ভেবে না পেয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে ঘুমিয়ে থাকে আর বোঝার চেষ্টা করে তামিম এতো রাতে তার রুমে কি করতে এসেছে।। তার পরের কাহিনি তো আপনারা জানেনই, এবার গল্পতে আসি।।

নীলা অনেক ভাবার পরেও যখন সে তার প্রশ্নের কোনো উত্তর খুজে পেল না তখন সে নিজেই নিজেকে বললো, অনেক রাত হয়েছে নীলা এখন ঘুমিয়ে পর, সকালে আবার স্কুলেও যেতে হবে।। এইসব নিয়ে নাহয় কাল মিতুর সাথেই কথা বলে দেখবনে মিতু কি বলে।। তারপর নীলা আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পরে।।

সকালবেলা…

ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই যার যার মতো নাস্তা খাচ্ছে।। তামিম আর নীলা একে অপরের বিপরীত সাইটে বসেছে।। নাস্তা খেতে খেতে নীলা বার বার তামিমের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু তামিমের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, সে তার মতো মাথা নিচু করে নাস্তা খেয়ে যাচ্ছে।। তামিমের শরীরে এখনো ঝালি বেতের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।। নীলার বড্ড খারাপ লাগছে তামিমের শরীরের দাগ গুলো দেখে।। ভুলটা তারই ছিল তখন সে যদি চ্যানেল না পালটাত তাহলে তামিম এসে তাকে মারতো না আর এর জন্য তামিমকেও মাইর খেতে হতো না।।

নীলা গতকাল স্কুল থেকে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে ড্রয়িংরুমে বসে কার্টুন দেখছিল।। এক কার্টুন দেখতে দেখতে তার ভিষণ বিরক্ত লাগছিল তাই সে রিমোট দিয়ে অন্য কার্টুনের চ্যানেল বের করছিল, ঠিক তখনই একটা হিন্দি মুভি চলে আসে।। প্রথমে মুভিতে ফাইট চলছিল তাই নীলা আর চ্যানেল পালটায় নি, কারণ নীলার ফাইট দেখতে অনেক ভালো লাগে।। ফাইট শেষ হওয়ার পরেই মুভির নাইকা গিয়ে নায়ককে জড়িয়ে ধরে, ঠিক সেই মূহুর্তেই তামিম ড্রয়িংরুমের সামনে এসে দাঁড়ায় আর টিভিতে এমন দৃশ্য দেখে তার মাথা গরম হয়ে যায়।। তারপর কি হলো তা গতকালের পর্বতেই তো জানলেন।।

নাস্তা খাওয়া শেষ করে তামিম সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলো।। আর কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো।। তামিম রেডি হচ্ছে এমন সময় তার চাচি মানে নীলার আম্মু এসে তার রুমে ঢুকলেন।। তামিমকে রেডি হতে দেখে তিনি বললেন…

নীলার আম্মুঃ আরে আব্বু কোথাও বের হচ্ছ নাকি.?

তামিমঃ হে চাচি কলেজে যাব তো তাই রেডি হচ্ছি।।

নীলার আম্মুঃ সে কি শরীরের এই অবস্থা নিয়ে তুমি কলেজে যাবে.! না না আজ তোমার কলেজে যেতে হবে না তুমি বাসায় ই থাক।।

তামিমঃ কিন্তু চাচি বাসায় বসে থাকতে যে আমার ভালো লাগে না।।

নীলার আম্মুঃ তবুও আজ তুমি কলেজে যাবা না, বাসায় ই থাক।।

তামিমঃ কিন্তু

নীলার আম্মুঃ বলেছি না আজ তুমি কলেজে যাবা না (একটু রাগী গলায়)।।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাব না (তামিম আবার নীলার আম্মুর কোনো কথা ফেলতে পারে না)।।

নীলার আম্মুঃ এই তো আমার লক্ষি আব্বুটা।। দেখি এখন বিছানায় এসে বস আমি তোমার গায়ে এই মলমটা লাগিয়ে দেই তাহলে শরীরের দাগ আর ব্যাথা কমে যাবে।।

তামিমঃ কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসে পরলো।।

তারপর নীলার আম্মু তামিমের শরীরের দাগ গুলোর মধ্যে মলম লাগিয়ে দিয়ে সেখান থেকে নীলার রুমে চলে আসলেন।। নীলার রুমে ঢুকতেই তিনি দেখলেন তামিমের আম্মুও নীলার রুমে রয়েছেন।।

নীলার আম্মুঃ আরে ভাবি আপনি এইখানে.!

তামিমের আম্মুঃ হুম নীলাকে বলে যেতে আসলাম সে যেন আজ স্কুলে না যায়।। তুমি মনে হয় তামিমকেও বলেছ কলেজে না যেতে।।

নীলার আম্মুঃ হে ওর শরীরে মলম লাগাতে গিয়ে দেখলাম ও কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।। তখন ওকে না করে আসলাম কলেজে না যাওয়ার জন্য।।

তামিমের আম্মুঃ হুম ভালোই করেছ, আচ্ছা এবার চল রান্নার কাজে লেগে পরি।।

নীলার আম্মুঃ হে চলেন।।

তারপর তারা দুজন সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে আসলো আর রান্নার কাজে লেগে পরলো।।

বিকালবেলা…

রুমে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না তামিমের, তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে আসলো একটু সময় কাটানোর জন্য।। তামিম ছাদে এসে পা রাখতেই দেখে নীলাও এইখানে রয়েছে।। নীলাকে ছাদে দেখে তামিম আর ছাদে গেল না, আবার নিচে চলে আসতে লাগলো ঠিক তখনই পিছন থেকে নীলা তামিমকে দাড়াতে বলে।।

নীলাঃ ভাইয়া দাড়াও, কোথায় যাচ্ছ.? (দৌড়ে তামিমের কাছে এসে)

তামিমঃ রুমে যাচ্ছি।।

নীলাঃ এখনই তো তুমি ছাদে আসলে তাহলে এখন আবার রুমে চলে যাচ্ছ কেন.?

তামিমঃ এমনিই ভালো লাগছে না তাই।।

নীলাঃ ভাইয়া আমি সরি, গতকাল আমার জন্য তোমাকে বড় চাচ্চুর থেকে মাইর খেতে হয়েছে।। তোমার খুব লেগেছে তাইনা.?

তামিমঃ আরে না তেমন বেশি লাগেনি আর ভুল আমারও ছিল, তোকে ওইসময় ওইভাবে না মারলেও হতো।।

নীলাঃ না ভাইয়া ভুল আমারই ছিল আসলে তখন (নীলাকে থামিয়ে দিয়ে)

তামিমঃ থাক বাদ দে এইসব, থাক তুই আমি গেলাম এখন (কথাটা বলেই তামিম ওইখান থেকে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো)।।

নীলাঃ মন খারাপ করে সেও ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে আসলো।।

এইভাবেই দিনটা কেটে গেল, তামিম আর নীলার মধ্যে ওইদিন আর কোনো কথা হলো না।।

পরেরদিন সকালবেলা নাস্তা খেয়ে তামিম নিজের কলেজে আর নীলা নিজের স্কুলে চলে গেল।। স্কুলে এসেই নীলা মিতুকে স্কুলের গেইটের সামনে পেয়ে গেল।। নীলা সোজা মিতুর কাছে গিয়ে দাড়ালো।।

নীলাঃ মিতু তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।।

মিতুঃ কথা পরে জিজ্ঞেস করবি আগে বল তুই গতকাল স্কুলে এলি না কেন.?

নীলাঃ গতকাল এক জায়গায় গেছিলাম তাই আসতে পারি নি।।

মিতুঃ ওহহ আচ্ছা কি কথা বলবি বল.?

নীলাঃ এইখানে না স্কুলের ভিতরে চল।।

মিতুঃ ওকে চল।।

তারপর দুজন স্কুলের ভিতরে ঢুকে একটা আমগাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো।।

মিতুঃ বল এবার কি বলবি.?

নীলাঃ আচ্ছা এই “ভালোবাসা” টা কি.?

মিতুঃ তুই বুঝিস না এটা কি.?

নীলাঃ বুঝিনা দেখেই তো তোকে জিজ্ঞেস করলাম।।

মিতুঃ আসলে আমি নিজেও জানি না এটা কি।। তবে এটার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না কি কি শুনেছি।।

নীলাঃ দুর এখন তাহলে আমি জানবো কি করে এই “ভালোবাসা” টা কি (হতাশ হয়ে)।।

মিতুঃ তুই এইটার বিষয়ে জেনে কি করবি.? আর হঠাৎ তুই এইটার বিষয়ে জানতে চাচ্ছিস কেন.?

নীলাঃ হয়েছে কি গতকালের আগের রাতে তামিম ভাইয়া আমার রুমে এসে আমাকে বললেন, উনি নাকি আমায় ভালোবাসেন।। তাই আমি জানতে চাচ্ছি এই “ভালোবাসা” টা কি।।

মিতুঃ বলিস কি.! রাফিও তো আমায় যেদিন প্রপোজ করেছিল সেদিন আমায় বলেছিল, “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মিতু”।। নিশ্চয়ই এইখানে একটা রহস্য আছে।। তুই বরং তামিম ভাইয়ার থেকে জেনে নে এই “ভালোবাসা” টা কি।।

নীলাঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।। এবার ক্লাসে চল একটু পর বেল দিয়ে দিবে।।

মিতুঃ হুম চল।।

তারপর নীলা আর মিতু দুজন ক্লাসে চলে আসলো আর দুজনেই একটা বেঞ্চে বসে পরলো।।

এদিকে তামিম কলেজে যাওয়ার পর তার বন্ধুরাও তাকে বার বার জিজ্ঞেস করছে সে গতকাল কলেজে আসেনি কেন।। তখন তামিমও সবাইকে একটা মিথ্যা বলে সবাইকে শান্ত করে।।

এইভাবেই কেটে গেল ২ দিন।। এই ২ দিনে নীলা অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে তামিমকেই জিজ্ঞেস করে দেখবে এই “ভালোবাসা” টা কি।। কিন্তু সে তামিমকে কখনো একা পাচ্ছেনা এই কথাটা জিজ্ঞেস করার জন্য।।
অবশেষে নীলা আজ সন্ধ্যার সময় তামিমকে ছাদের মধ্যে একা পেয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করেই ফেললো।।

–আচ্ছা ভাইয়া “ভালোবাসা” কি.?

তামিম ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখছিল, ঠিক তখন-ই সে পিছন থেকে কারও উপরের কথাটা শুনে অনেকটাই চমকে উঠলো আর কৌতুহল নিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখলো নীলা দাঁড়িয়ে আছে।। নীলার প্রশ্নের জবাবে তার এখন কি বলা উচিত সে যেন বুঝে উঠতে পারছে না।।

এদিকে নীলা তামিমকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলে উঠলো…

নীলাঃ কি হলো ভাইয়া চুপ করে আছ কেন, বল.?

তামিমঃ কি বলবো, আর এইসব আবার তুই কোথা থেকে শিখেছিস.? (একটু রাগ নিয়ে)

নীলাঃ তোমার থেকে (স্বাভাবিক ভাবে)।।

তামিমঃ আমার থেকে মানে.! (অবাক হয়ে)

নীলাঃ তুমি যে ওইদিন মাইর খেয়ে রাতে চুপিচুপি আমার রুমে এসেছিলে তখন আমি জেগেই ছিলাম আর তোমার সব কথা শুনেছিলাম।।

তামিমঃ তো অবাক নীলার কথা শুনে।। নীলা তাহলে ওই রাতে আমার সব কথা শুনে ফেলেছে.! আমি যে তার কপালে চুমু খেয়েছি এটাও নিশ্চয়ই নীলা বুঝে গেছে।। এখন আমি নীলাকে কি বলবো.? আর এইসব কথা যদি নীলা বাড়ির কাউকে বলে দেয় তাহলে তো কেলেংকারি লেগে যাবে।।

নীলাঃ তুমি কি বলবে এই “ভালোবাসা” টা কি.? নাহলে কিন্তু আমি ওই রাতের সব ঘটনা বাড়ির সবাইকে বলে দিব।।

তামিমঃ এই যাহ যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো।। না যে করেই হোক নীলাকে আটকাতে হবে নাহলে বাড়ির সবাই আমাকে খারাপ ভাববে।। কিন্তু কীভাবে কি করবো, কিছুই তো মাথায় আসছে না।।

নীলাঃ বুঝেছি তুমি বলবে না, আচ্ছা থাক তুমি আমি গেলাম বাড়ির সবাইকে ওই রাতের ঘটনাটা বলতে (বলেই নীলা উলটো দিকে ঘুরে হাটা শুরু করলো)।।

নীলা যখন ছাদের দরজার কাছে এসে পরে ঠিক তখনই তামিম দৌড়ে এসে নীলার পথ আটকে দাঁড়ায়।। তারপর নীলাকে ছাদের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে নীলার মুখের কাছে তার মুখ নিয়ে এসে বলে…
.
.
.
.
.
Loading…….

ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।। আর হে গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক সো গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না।। গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন তবুও কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না প্লিজ।। হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here