খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ৭
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
নীলা যখন ছাদের দরজার কাছে এসে পরে ঠিক তখনই তামিম দৌড়ে এসে নীলার পথ আটকে দাঁড়ায়।। তারপর নীলাকে ছাদের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে নীলার মুখের কাছে তার মুখ নিয়ে এসে বলে…
তামিমঃ ওই রাতের ঘটনাটা যদি বাড়ির কাউকে বলেছিস তো আমিও সবাইকে বলে দিব যে তুই আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিস।।
তামিমের এমন কথা শুনে এবার নীলা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।। কারণ সে জানে তামিমের কথা বাড়ির প্রত্যেকেই বিশ্বাস করে।। এই কথা যদি তামিমের আম্মু-আব্বু বিশ্বাস নাই করেন তবুও নীলার আম্মু-আব্বু অবশ্যই এই কথাটা চোখ বুঝে বিশ্বাস করে নিবেন।। নীলা এখন এটাই চিন্তা করছে যে কীভাবে তামিমের থেকে বাঁচা যায়।।
তামিমঃ কি হলো এখন কি ভাবছিস.? বলবি না যা বল গিয়ে।। ওহহ সরি তোকে তো আবার আমি ধরে রেখেছি তাহলে তুই যাবি কি করে।। আচ্ছা এবার যা তোকে ছেড়ে দিলাম (নীলাকে ছেড়ে দিয়ে)।।
ছাড়া পেয়েও নীলা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো, তার এখন কি করা উচিত।। সে কি নিচে যাবে আর ওই রাতের ঘটনাটা সবাইকে বলবে।। তাহলে তো তামিম ভাইয়াও সবাইকে বলে দিবেন যে আমি উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম।। উফফ আমি কি করবো.?
তামিমঃ কি হলো তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন.? যা না আর গিয়ে সবাইকে বল ওই রাতের ঘটনাটা।। নাকি আমিই যাব আর সবাইকে গিয়ে বলবো যে তুই
নীলাঃ না ভাইয়া প্লিজ এমন কর না।। আমি কাউকে কিছু বলবো না, তুমিও কাউকে কিছু বলিও না প্লিজ (মিনতির শুরে)।।
তামিমঃ কেন এখন কেন না করছিস.? একটু আগেই তো খুব করে বললি যে তোকে “ভালোবাসা” কি এটা না বললে তুই গিয়ে সবাইকে ওই রাতের ঘটনাটা বলে দিবি।।
নীলাঃ আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি কাউকে কিছু বলবো না সত্যি।। প্লিজ তুমিও কাউকে কিছু বলিও না।।
তামিমঃ উমম ওকে বলবো না তবে তুই আর কোনোদিন আমার থেকে বা অন্য কারও থেকে এই “ভালোবাসা” কি তা জানতে চাইবি না, কথা দে।।
নীলাঃ আচ্ছা কথা দিলাম আমি আর কখনো জানতে চাইবো না যে এই “ভালোবাসা” কি।।
তামিমঃ এইতো গুড গার্ল, এবার চুপচাপ নিজের রুমে যা আর গিয়ে পড়তে বস।।
নীলাঃ আচ্ছা বলে সেখান থেকে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।।
নীলা চলে যাওয়ার পর তামিম একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিল।। একটু আগেও তামিমের মনে হচ্ছিল তার নিশ্বাস চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।। কিন্তু এখন নীলাকে শান্ত করতে পেয়ে সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।। তারপর তামিম আরও কিছুক্ষণ ছাদে সময় কাটিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।।
রুমে এসে তামিম কিছুক্ষণ পড়তে বসে পরলো।। পড়াশোনার এক পর্যায়ে তার আম্মু এসে তাকে খাবারের জন্য ডাক দিয়ে গেলেন।। তামিম আর দেড়ি না করে নিচে চলে আসলো আর একটা চেয়ার টেনে ডাইনিং টেবিলে বসে পরলো।। নীলাও সবার সাথে বসে খাবার খাচ্ছে কিন্তু তামিম তার দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো খেতে লাগলো।। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তামিম আবার নিজের রুমে চলে আসলো।। তামিম রুমে এসে কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করে ঘুমিয়ে পরে।।
পরেরদিন সকালবেলা তামিম নিজের কলেজে আর নীলা নিজের স্কুলে চলে গেল।। স্কুলে এসেই নীলা প্রথমে মিতুকে খুজে বের করলো।।
নীলাঃ মিতু, ভাইয়া তো আমায় কিছু বললেন না।।
মিতুঃ মানে.?
নীলাঃ আরে তোর কথামতো আমি ভাইয়াকে গতকাল জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এই “ভালোবাসা” টা কি।।
মিতুঃ তা ভাইয়া কি বললেন.?
নীলাঃ ভাইয়া কিছুই বলেন নি (মন খারাপ করে)।।
মিতুঃ তা তুই উনাকে আর কিছু বলিস নি.?
নীলাঃ হুম, বলেছিলাম তুমি যদি আমাকে “ভালোবাসা” কি এটার মানে না বল তাহলে আমি বাড়ির সবাইকে বলে দিব যে তুমি ওইদিন আমার রুমে এসে আমায় কি কি বলেছিলে।।
মিতুঃ তো এই কথা শুনে উনি কি বললেন.?
নীলাঃ ভাইয়া বললেন আমি যদি এইসব বাড়ির কাউকে বলি তো উনিও সবাইকে বলে দিবেন যে আমি উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম।।
মিতুঃ তুই যে উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলি এটা উনি জানলেন কি করে.?
নীলাঃ ওইদিন উনার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময় উনি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ আমায় জড়িয়ে ধরেন তারপর আমি উনার থেকে ছুটার জন্য উনার ঘাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দৌড়ে উনার রুম থেকে পালিয়ে আসি।। তার পরেরদিনই উনি বুঝে ফেলেন যে আমি উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম।।
মিতুঃ তামিম ভাইয়া তো বড় চালাক মানুষ দেখছি।।
নীলাঃ হুম অনেক।।
মিতুঃ আচ্ছা তো এইটা তুই অন্য কারও থেকে জেনে নিস তাহলেই তো হয়ে যায়।।
নীলাঃ নাহ আমি আর এটার সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবো না।।
মিতুঃ কেন.?
নীলাঃ ভাইয়া আমায় জোর করে বলিয়েছেন যে এটার বিষয়ে আমি কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবো না।। নাহলে ভাইয়া বাড়ির সবাইকে বলে দিবেন যে আমি উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম।।
মিতুঃ আচ্ছা তাহলে বাদ দে এইসব আর এখন ক্লাসে চল।।
নীলাঃ হুম চল।।
তারপর নীলা আর মিতু দুজন ক্লাসে চলে আসলো।। কিছুক্ষণ পর স্যারও ক্লাস করানোর জন্য ক্লাসে চলে আসলেন।। নীলা সব চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ক্লাসে মনোযোগ দিল।।
–এই যে আপনার কাছে ICT বই আছে কি.?
তামিম আর ওর বন্ধুরা কলেজের বটগাছের নিচে বসে গল্প করছিল ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা মেয়ে ওদের কাছে এসে কথাটা বললো।। মেয়েদের কন্ঠ শুনেই সবাই পিছনে ফিরে তাকালো আর দেখলো একটা বোরকা পরিহিত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।
শুভঃ জি আপু আমাদেরকে কিছু বলছেন.?
–জি তবে আপনাদেরকে নয়, উনাকে (তামিমকে দেখিয়ে) বলছি।।
শুভঃ মেয়েটা কে রে আর তোকে কি বলছে দেখ তো (তামিমের কানে কানে)।।
তামিমঃ জি বলেন কি বলবেন.?
–বলছি আপনার কাছে এখন ICT বই আছে কি.?
তামিমঃ হে আছে কেন.?
–না মানে আমার একটু বইটা লাগবে, যদি দিতেন তো খুশি হতাম।।
তামিমঃ কিছুক্ষণ ভেবে ব্যাগ থেকে ITC বইটা বের করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, এই নেন তবে কলেজ ছুটি হওয়ার আগে দিয়ে দিয়েন আমার আবার বাসায় গিয়ে পড়তে হবে।।
–আচ্ছা দিয়ে যাব, বাই দ্যা ওয়েহ আপনার নাম কি.?
তামিমঃ নাম দিয়ে কাম কি.?
–না মানে এমনিই জানতে চাচ্ছি আর কি।।
তামিমঃ তামিম
–ওহহ আর আমি রিয়া।। আচ্ছা তাহলে এখন আমি যাই (বলেই মেয়েটা সেখান থেকে চলে গেল)।।
হাসিবঃ বন্ধু ব্যাপার কি, আমাদেরকে রেখে মেয়েটা তোর থেকে বই নিল কেন.? নিশ্চয়ই মেয়েটা তোকে লাইক করে, কি বলিস শুভ.?
শুভঃ হে আমারও তাই মনে হচ্ছে, কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন.?
তামিমঃ কি বলবো.? আর মেয়েটাকে তো আমি চিনিই না আর তোরা কই থেকে কই নিয়ে যাচ্ছিস ব্যাপারটা।।
হাসিবঃ কিন্তু একটা অচেনা মেয়ে কেন তোর কাছ থেকে বই নিবে.? আমরাও তো এইখানে ছিলাম, কই মেয়েটা তো আমাদের থেকে বই নিল না।।
তামিমঃ আরে ভাই আমার প্রতি এতোই যখন সন্দেহ হচ্ছে তোদের তাহলে এইসব আমায় জিজ্ঞেস না করে ওই মেয়েটাকে গিয়েই জিজ্ঞেস কর না (হালকা রেগে)।।
শুভঃ আরে ভাই তুই রেগে যাচ্ছিস কেন.?
তামিমঃ দেখ ভাই আমি আর এই বিষয়ে কিছু শুনতে চাইনা।। ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না আর ওই মেয়েটা আমার কাছ থেকে কেন বই নিয়ে গেল এটাও আমি জানি না।।
হাসিবঃ আচ্ছা এখন বাদ দে এইসব কথা আর চল ক্লাসে যাই।।
শুভঃ হুম চল।।
তারপর তামিম আর তার বন্ধুরা সবাই ক্লাসে চলে গেল।। একটু পর স্যার ক্লাসে চলে আসলেন আর ক্লাস করাতে লাগলেন।। সবকটা ক্লাস করিয়ে ওইদিনের মতো কলেজ ছুটি হয়ে গেল।।
তামিম তার বন্ধুদেরকে বিদায় করে বাসায় চলে আসলো।। তামিম বাসায় এসে দেখলো নীলাও বাসায় চলে এসেছে।। তামিম নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে খাবার খেয়ে আবার রুমে চলে গেল।।
ওইদিন তামিম আর নীলার মধ্যে আর কথা হলো না।।
পরেরদিন সকালবেলা প্রতিদিনের মতো তামিম নিজের কলেজে আর নীলা নিজের স্কুলে চলে গেল।। নীলা স্কুলে এসে দেখলো আজ মিতু আসেনি তাই সে একাই ক্লাসে গিয়ে একটা ব্রেঞ্চে বসে রইলো কারণ মিতু ছাড়া তার আর কোনো বান্ধবী নেই।।
স্কুল শেষ করে নীলা একা একা বাসায় ফিরছিল ঠিক তখনই সে দেখলো তার স্কুলের কয়েকটা ছেলে মিলে তাকে ফলো করছে।। ছেলেগুলো নীলার বড় তারা সবাই ক্লাস টেনে পড়ে।। নীলা প্রথমে বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে হেটে হেটে বাসায় আসতে লাগলো।। কিন্তু এক পর্যায়ে নীলা এমন একটা জায়গায় আসলো যেখানে আজ কোনো মানুষের চলাফেরা চলছে না।। রাস্তায় একটা গাড়িও দেখা যাচ্ছে না।।
এমন সময় হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ একজন নীলার ওড়না ধরে টান দেয়।। নীলা পিছনে ফিরতেই দেখলো তার স্কুলের ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে তার ওড়না টেনে নিয়েছে।। এবার ছেলেগুলো নীলাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো।। আর তাকে নিয়ে বিশ্রী বিশ্রী কথা বলতে লাগলো আর মাঝেমধ্যে তার গায়ে হাত দিতে লাগলো।। নীলা এবার বুঝতে পারলো যে ছেলেগুলো তাকে টিজ করতে এসেছে ঠিক যেভাবে মুভিতে গুন্ডারা নাইকাদের করে।। নীলা মনে মনে ভাবলো, গুন্ডারা যখন নাইয়াদের টিজ করে তখন তো কোথা জানি একটা নায়ক এসে গুন্ডাদেরকে মেরে নাইকাকে বাঁচিয়ে দেয়।। কিন্তু তাকে বাঁচাতে এখনো কেউ আসছে না কেন.?
হঠাৎ নীলা খেয়াল করলো পাশের একটা রাস্তা দিয়ে তামিম যাচ্ছে।। তামিমকে দেখে নীলার চেহারায় এবার হাসি ফুটে উঠলো।। নীলা আর ওইখানে না দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দৌড়ে তামিমের কাছে এসে তামিমকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।।
.
.
.
.
.
Loading…….
বিঃদ্রঃ একটা মানুষ কখনো সবার জন্য পারফেক্ট হয়না।। ঠিক তেমনি আমার গল্পও সবার জন্য পারফেক্ট নয়।। আই মিন আমার গল্প কারও কাছে ভালো লাগে আবার কাছে খারাপ।। তো এই গল্পতে অনেকেই গল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমায় খুটা দিচ্ছেন আবার অনেকে হাসি-তামাশাও করছেন।। কেন ভাই এমন করছেন কেন আপনারা.? আমি যে প্রতিটা গল্পের শেষে বলে রাখি “গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না”।। তারপরও আপনারা কাল্পনিক গল্পকে বাস্তবতায় নেন কেন বুঝিনা।। এতোই যখন বাস্তবতার গল্প চান তাহলে বাস্তবতা বাদি লেখক খুজে উনার গল্প পড়েন, আমার গল্প আপনাদের পড়তে না।।
গল্প যেহেতু আমি লিখি তাহলে আমিই ভালো জানি গল্প কীভাবে লিখলে ভালো হবে আর কীভাবে লিখলে খারাপ হবে।।
আরেকটা কথা মিতু আর রাফির সম্পর্ক হলো প্রেমের সম্পর্ক।। তারা একে অন্যের সাথে প্রেম করে ঠিকই কিন্তু “ভালোবাসা” কি সেটা জানে না।। প্রেম আর “ভালোবাসা” তো আর এক নয় তাইনা.? তাই মিতুর এই সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই।।
যাইহোক আবারও বলছি গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না নাহলে গল্পের মজা খুজে পাবেন না।। আর আজকে গল্পের কোনো থিম মাথায় আসছিল না তাই আজকের পর্বটা হয়তো বেশি ভালো হয়নি।। তারপরও সবাই কমেন্টের মাধ্যমে বলে যাবেন যে আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে ?
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~