খেলাঘর,পর্বঃ০২
লেখকঃ শাওন
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিতেই সে অবাক হয়ে গেল। তার ছোট্ট আইডি থেকে লাইভ এত শেয়ার হবে সে কখনো ভাবতেই পারেনি। প্রতিটা পেইজ, গ্রুপ আর বিভিন্ন মানুষের প্রোফাইলে তার লাইভ শেয়ার হয়েছে। দরজার নক করার শব্দ পেয়ে দরজা খুলতেই তার মা অস্থির হয়ে বলল,” তোকে কতগুলো লোক খুঁজতে এসেছে!”
-“কিন্তু মা, কারা এসেছে?”
-“গেলেই দেখতে পারবি!”
বলেই তার মা চলে গেল, লাজ বোঝতে পারলো তার মাও সবকিছু জেনে গেছে। সে বিছানা থেকে ওড়নাটা নিয়ে বাহিরে যেতেই এক সাথে অনেকগুলো প্রেসের লোক তার সামনে ক্যামেরা আর মাইক ধরে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো।
-“ম্যাম, আপনার লাইভে বলা কথাগুলো কি সত্যি?”
-“আপনাকে কি ওনারা সত্যি অপহরণ করার চেষ্টা করেছে?”
-“আপনি তাদের হাত থেকে বাঁচলেন কি করে?”
লাজ হতভম্ব হয়ে গেল একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করায়।সে একটু শান্ত হয়ে উত্তর দিলো,” আপনারা জানতে চেয়েছিলেন না আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কতটুকু সত্য, দেখুন। ওনারা আমার হাত এতটা জোরেই চেপে ধরেছিল যে একদম দাগ হয়ে গেছে আর একটু অপেক্ষা করুন।”
লাজ নিজের ট্রান্সফার সার্টিফিকেটগুলো এনে প্রেসের লোকদের সামনে ধরলো। সাথে সাথে কয়েক ক্যামেরা থেকে ছবি তুলে ফেলল,আর ভিডিও করে ফেলল।তার মধ্যে আরেকজন বলল,” আরেকটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়, আপনাকে ওদের হাত থেকে বাঁচালো কে?”
-“সে আমার জন্য এক ফেরেশতা হয়ে এসেছিল। জানি না সে কে ছিলো কিন্তু নামটা জানা হয়েছিল। আর আমি আপনাদের সামনে নাম বা পরিচয় বলবো না কারন আমি চায় না আপনারা তাকেও জ্বালাতন করেন।ধন্যবাদ।”
তাকদিয়ার ম্যানশনে দাঁড়িয়ে নিজের গুন্ডাদের ইচ্ছে মতো ঝাড়ছেন ফারিদ তাকদিয়ার।
-“একটা মেয়েকে মাত্র তুলে আনতে পাঠিয়েছিলাম তাও পারলি না তোরা!তোদের দাঁড়া কিচ্ছু হবে না।”
-“আমরা কি করবো স্যার, কোথা থেকে ছোট সাহেব চলে এলেন আমরা বোঝতেই পারলাম না।”
-“হুয়াট! ফারাজ!”
-“হুম বাবা, আমি। আমি ওদের ঐমেয়ে টাকে বাঁচিয়ে ছিলাম তোমার ঐ গুন্ডাদের হাত থেকে। একটা মেয়েকে রাস্তায় একা পেয়ে ওরা…”
পিছন থেকে ফারাজ কথাগুলো বলে গুন্ডাটার সামনে গেল। চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে আছে গুন্ডাটার দিকে। তার বাবার ইশারা পেয়ে গুন্ডা টা চলে গেল। ফারিদ তাকদিয়ার বললেন,” দেখ বাবা, তুই কিছু জানিস না। তাই তুই এসবে ঢুকিস না। ওরা যা করবে সব আমার কথা মতোই করবে,তুই ওদের বাঁধা দিস না।”
-“কিন্তু বাবা…”
-“মিস্টার ফারিদ তাকদিয়ার, আপনাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে।”
ফারাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ অফিসার তাদের সামনে এসে এসব কথা বলে। ফারাজ জিজ্ঞেস করে,” কেন? কি হয়েছে?”
-“উপর থেকে নোটিশ এসেছে, কালকের ঘটনা টা প্রায় সবাই জেনে গেছে।আর অপহরণের চেষ্টা করায় আপনার বিরোধে মামলা করা হয়েছে, তাই আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।”
ফারিদ তাকদিয়ার রেগে বলল,” তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে থানায় নিয়ে যাবার!”
-“আইনের হাত অনেক লম্বা, আর আপনি যা করেছেন তারজন্য আপনাকে যেতেই হবে। নয়তো কোমড়ে দড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হবো।”
এম পি সাহেব বোঝতে পারলেন এখন কিছু করলে জল উল্টো ভাবে গড়াতে পারে তাই ওনি কিছু বললেন না চুপচাপ পুলিশ অফিসারের যেতে লাগলেন। ফারাজ আটকাতে চায়লেও পারলো না। বাড়ির বাইরে আসতেই মিডিয়া আর প্রেসের লোক তাদের দিকে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে ধরে। কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসেন এমপি সাহেব।
দুদিন হয়ে গেল, এই দুদিনে অনেককিছুই হয়ে গেছে। লাজ’কে তার কলেজে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হলো, এম পি সাহেবও জেল থেকে ফিরে আসলো।কিন্তু তার সম্মান একদম মাটিতে ধূলোই মিশে গেল। লাজকে ওনি কিছুতেই ছাড়বেন না, ওর একটা না একটা ব্যবস্থা ওনি ঠিকই করবেন ভাবছেন।কিন্তু কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না, নিজের রুমে পায়চারি করে যাচ্ছেন।হটাৎ করে রুমে কারো আগমন ঘটলো তাকিয়ে দেখলো নিজের ছেলে ফারাজ।তার সামনে গিয়ে বলল,” বাবা, আমি কলেজে যাচ্ছি কিন্তু আমি তো কিছুই বোঝতে পারছি না আমাকে লন্ডন থেকে কেন এই বাংলাদেশে নিয়ে আসলে?”
-“তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল? শুধু মাত্র তুইই আছিস,তোকে এত দূরে কি করে রাখবো বল! তাই নিয়ে এসেছি কেন কোনো সমস্যা?”
-“নাহ,বাবা!”
ফারাজ বোঝতে পারলো তার বাবা-র মনের অবস্থা এখন কেমন যাচ্ছে তাই সে সবকিছু নীরবে মেনে নিলো।গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্য কানে ইয়ার পডের সাহায্যে তার বাংলাদেশের বন্ধুদের সাথে কথা বলছে,” তো আসছিস তো কলেজে?দেখ আমি কিন্তু কিছু চিনি ন।তোদের কেই কিন্তু আমাকে কলেজের ভিতরে নিয়ে যেতে হবে।আচ্ছা রাখলাম বাই!”
ফারাজ কলেজের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তার বন্ধুদের কোনো খবরই নেই। রাগে পাশে থাকা ফুলের টবে লাথি মারতেই কোনো এক মেয়ের কপালে গিয়ে লাগলো ভাঙা টবের টুকরো। মেয়েটা কপালে ধরে চারপাশ দেখতে লাগলো, দুজনের চোখ দুজনের দিকে পরতেই ওরা চিনতে পারলো। ফারাজ দৌড়ে গিয়ে বলল,” আই এম সরি আসলে আমি বোঝতে পারিনি।”
লাজ বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে।”
লাজ চলে যেতে নিলে ফারাজ তার পাশে হেঁটে বলে,”একটা সাহায্য করতে পারবে?আসলে আমি কলেজে নতুন কিছু চিনি না,তুমি আমাকে চতুর্থ বর্ষের ক্লাসটা দেখিয়ে দিতে পারবে।”
-“চলুন আমার সাথে।”
লাজ আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে গেল। একটা বার তাকালো না ফারাজের দিকে,অন্যদিকে বাকি সব মেয়েরা ফারাজ কে দেখে চোখ সরাচ্ছে না। ক্লাসরুমে দিয়ে লাজ চলে যাবার পর ফারাজের বন্ধু তাফসিন এসে বলল,” তুই এই মেয়ের সাথে?”
-“হুম, তোদের মতো বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকায় ভালো,ও না থাকলে আজকে হয়তো এখনো দাড়িয়ে থাকতে হতো!”
-“তুই কি চিনিস ওকে?কি করেছিল সে?”
-“ও কোন মাহাত্ম্য গান্ধী যে আমাকে চিনতে হবে আর কি এমন করেছেই যে ওকে চিনতে হবে?”
-“তোর বাবা’কে জেলে নিয়েছে, তোর বাবার মান সম্মান সব ধূলোই মিশিয়ে দিয়েছে।”
তাফসিনের কথা শুনে ফারাজের চোখ লাল হয়ে গেল। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছিল, তার মানে এই মেয়েই সেই অসভ্য টা!”
ফারাজ চুপ হয়ে গেল,তাফসিন বলল,” তুই কি সত্যি সত্যি ওকে চিনতি না!”
-“চিনলে কি এভাবে ছেড়ে দিতাম!”
-“তুই ওর কিছু করতে পারবি না।ওকে এখন সবাই চিনে আর যথেষ্ট সম্মান ও করে।”
-“ওর সম্মান আর তেজ আমি যদি শেষ না করেছি তাহলে আমার নামও ফারাজ তাকদিয়ার না!”
-“তুই কি চ্যালেন্জ নিচ্ছিস?”
-“তুই কি চ্যালেন্জ দিচ্ছিস?”
-“ওকে দিলাম,কিন্তু এত ইজি না ওকে আগে তোর প্রেমে ফেলতে হবে তারপর একরাত ভোগ করতে হবে!”
-“হুয়াট!”
-“এত অবাক হওয়ার কি হলো?তুই তো আগেও আরো অনেক মেয়ের সাথেই করেছিস তাহলে এখানে সমস্যা কি?নাকি ভয় পাচ্ছিস এটা ভেবে যে আবার কোনো সম্মানহানি হবে তোদের!”
-“চ্যালেন্জ একসেপ্টেড!”
কলিংবেলের শব্দে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলো সে। তারাতারি কাপড় চেন্জ করে এসে দরজা খুলল।দরজা খুলে দেখল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধবী আয়েরা।নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে জড়িয়ে ধরলো লাজ।আয়েরা’র বোঝতে বাকি রইলো না ঠিক কি হয়েছে,আয়েরা বলল,” চল রুমে চল!”
রুমে এসে আয়েরা’র সামনে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,”তোকে আমি আগেই বলেছিলাম এই এম পি এর ছেলের কোনো না কোনো মতলব ঠিকই আছে তা না হলে নিজের বাবা-র বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যেত না।”
-“এটা ওর প্লান ছিলো আমার বিশ্বাস জিতার,আর আমিও বোকার মতো বিশ্বাস করে ফেলি ওকে।”
লাজ এতটুকু বলে আবার কান্না শুরু করে দিল। আয়েরা বলল,”দেখ,কান্না করে কিছু হবে না।তুই এসব ভুলে যা,নতুন করে সব ভাব!”
লাজ নিজের চোখের পানি মুছে আয়েরা’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তোকে যা আনতে বলেছিলাম ওগুলো এনেছিস?”
-“হ্যা,এনেছি!কিন্তু তুই এগুলো দিয়ে কি করবি?”
-“তোকে সব বলবো আগে তুই আমাকে দে!”
আয়েরা ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে দিল, লাজ খামটা হাতে নিয়ে ফারাজের নাম্বারে কল দিল। তিনবার কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ বার কল রিসিভ করে ধমকের সুরে বলল,” সমস্যা কি তোমার? কেটে দেওয়ার পর আবার কেন বার বার কল করছো?”
-“কাল একবার শেষবারের মতো দেখা করবে প্লিজ!আর কখনো তোমাকে বলবো দেখা করতে,কল দিবো না মেসেজ ও করবো না।কাল শুধু একবার দেখা করো বিকালে প্লিজ!”
-“নাহ,আমি আসতে পারবো না!”
-“তাহলে আমিও আমার সুইসাইড নোটে তোমার নাম আর তোমার বাবা-র নাম লিখে যাবো। তাতে ঠিক কি হবে তুমি ভালোই বোঝতে পারছো?”
-“তুমি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছো?”
-“নাহ, শুধু একবার দেখা করতে বলছি!”
-“ওকে,কিন্তু মাত্র দশমিনিটের জন্য! সকাল দশটায়!”
লাজ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিল। লাজ নিজের চোখের পানি মুছে একটা শয়তানি হাসি দিলো। আয়েরা তার সামনে জিজ্ঞেস করে,”তোর মাথায় কি চলছে আমাকেও একটু বলবি?”
-“কি ভেবেছে ও?এত সহজে আমি হার মেনে নিবো?কখনোই না!তাহলে শোন কি হতে যাচ্ছে….”
আয়েরা’কে লাজ তার সম্পূর্ণ প্লান খুলে বলল, আয়েরা অবাক হয়ে বলল,”তুই!তুই এসব করবি?”
-“এসব কি,ওকে আর ওর বাপ কে শায়েস্তা করতে আমাকে যা করতে হয় আমি করবো।”
চলবে!