খেলাঘর,পর্বঃ০৬

0
2692

খেলাঘর,পর্বঃ০৬
লেখকঃ শাওন

লাজ ব্যর্থ হয়ে বসে পরলো।তখনই তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।সে তার পিছনের মেয়েটিকে বলল,”তুমি আমার দিকে পিঠ ঘুড়িয়ে বসো!”
-“কেন?”
-“উল্টা প্রশ্ন করো না,সময় খুবই কম।যা বলছি তা করো।”
লাজের কথা মতো মেয়েটি পিঠ ঘুড়িয়ে বসলো। লাজ নিজের বাঁধা হাত দিয়ে খুব কষ্ট করে মেয়েটির হাত খুলে দিলো। তারপর বলল,”এখন আমার হাত খুলো!”
মেয়েটি লাজের হাত খুলে দেওয়ার সাথে একে একে সব মেয়েদের বাঁধ খুলে দিলো।তারপর লাজ বলল,” তোমাদের এখানে এরা কি করে আনলো?”
-“সে অনেক কাহিনী আপা, আমগো রে এহন এইহান থাইক্কা তারাতারি বাইর করেন!”
লাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু ভাবার পর তাদের সাথে একট প্লান করলো। সবাইকে ঠিক আগের মতো করে বসে পরতে বলল চোখে কাপড় বেঁধে আর পিছনে হাত দিয়ে যেন কেউ বোঝতে না পারে ওদের হাত খুলা। শুধু মাত্র একটা মেয়ের হাত চোখ বাঁধা।
হঠাৎ করে সবাই মিলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। তাদের চিল্লাচিল্লি শুনে দুটা লোক ভিতরে আসে একটার হাতে গুলি আরেকটার হাতে মদের বোতল। এসেই ধমক দিয়ে বলে,”শালী!তোরা এভাবে চিৎকার করছিস কেন?”
মদের বোতল হাতের লোকটা বলল,”দেখ এক শালী অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
লোকটার কথা শুনে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,” দেখ তো মরে গেছে কিনা?”
চেক করে বলল,”নাহ এখনো শ্বাস আছে।তারাতাড়ি বাহিরে নিয়ে চল!”
বলেই ঐ লোকটা মদ খেতে খেতে বাহিরে চলে গেল।ঐ লোকটা গুলি টা রেখে যেই মেয়েটিকে ধরতে যাবে তখনই লাজ গুলিটা ছু মেরে নিয়ে নিলো। লোকটির মাথা’র দিকে গুলি ধরে বলল,”খবরদার যদি একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করিস তো তাহলে গুলি টা তোর মাথায় চলে যাবে।”
লোকটা ভয়ে হাত দুটো উপরে করে ফেলে।একে একে সব মেয়েগুলো বেড়িয়ে আসলে পাশে থাকা একটা ইট মেরে ফাটিয়ে দেয় লাজ। লোকটি সেন্সলেস হয়ে নিচে পরে যায়।লাজ তারাতাড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে দরজা লক করে দেয়।
মেয়েগুলোকে নিয়ে কারখানা থেকে বাহির হতে যাবে তখন কতগুলো লোক ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। লাজ ওদের সামনে গুলি ধরে ভয় দেখালেও কোনো লাভ হয়নি লোকগুলো ওদের দিকে এগোতে লাগে। এমন সময় লাজের পিছন থেকে মেয়েগুলো ছোট ছোট ইটের কাঁকর আর বালু ছুড়ে মারে লোকগুলোর দিকে। তারা চোখে আর কিছু দেখতে পেল না,লাজ মেয়ে গুলোকে নিয়ে পালিয়ে গেল। তার আগে ভালো করে কারখানা টা দেখে গেল। কারখানা টা একটা নেশা জাতীয় দ্রব্যের কারখানা, লাজ মেয়েগুলোকে নিয়ে একটা সুরক্ষিত জায়গায় এসে দাড়িয়ে বলে,”এখন তোমরা তোমাদের বাড়ি যেত পারো, এখন কোনো বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা কম কিন্তু সাবধান এখন থেকে একটু বোঝে শুনে বাসা থেকে বের হবা!”
লাজের কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েগুলো ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। তাদের মাঝে একটা মেয়ে বলল,”আজকে যদি তুমি না থাকতে তাহলে আমরা হয়তো আর কখনো বাড়ি ফিরতে পারতাম না।তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করবো না।”
-” এসব কিছু একটা মানুষ হয়ে আরেকটা মানুষের জন্য কর্তব্য! আর কালকে একটু সময় করে থানায় এসো তোমরা।”
-“থানায়!কিন্তু কেন?
-“তোমরা কি চাও ওদের মতে খারাপ লোকদের বিচার হোক?ওরা শাস্তি পাক!”
-“আমরা চায় ওদের শাস্তি হোক কিন্তু আমাদের কথা কি কানে নিবে?”
-“তা আমি দেখবো,তোমরা কাল সকালে থানায় চলে এসো সময় মতো।”
লাজ ওদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরে এলো। ফারিদ তাকদিয়ার ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছিলেন লাজ কে দেখতে পেয়ে চায়ের কাপ টা নিচে পরে গেল।লাজ ওনার সামনে দাড়িয়ে বলল,” কিহ ভয় পাচ্ছেন আমাকে দেখে?ভাবছেন আমি কি করে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসলাম!”
লাজ আরো কিছু বলার আগেই ফারিদ তাকদিয়ার ওকে একটা রুমে নিয়ে গেল। তারপর দরজা লাগিয়ে লাজ কে জিজ্ঞেস করলো….
-“তুমি কি এখানে ফিরে এলে?”
-“সে গল্প না হয় আপনার লোকদের কাছেই জেনে নিবেন। আপাতত এটা জেনে নেন খুব তারাতাড়ি এই ভালো মানুষির মুখোশ আমি খুলতে যাচ্ছি,কাল সকালেই আমি থানায় যাচ্ছি আপনার নামে ফাইল করতে। কোথায় লুকাবেন এই মুখ তা ভালো ভাবে ভেবে নিন।”
লাজ কথাগুলো বলে হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।নিজের রুমে এসে দেখে ফারাজ কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল কান থেকে ফোনটা নিয়ে নিচে ছুড়ে মারে লাজ।ফোনটা ভেঙে যায়, ফারাজ রেগে গিয়ে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হয় আমার ফোন ভাঙ্গার?”
-“তোমার সাহস কি করে হয় এতগুলো মেয়েকে পাচার করে তাদের জীবন নষ্ট করার!”
-“হুয়াট!তুমি কিসের মেয়ে পাচারের কথা বলছো?”
-“আর ভালো সাজার নাটক করতে হবে না,আমি তোমাদের সমস্ত কালো বাজারের ব্যবসা আর কারখানার কথা জেনে গেছি।আর খুব তারাতাড়ি আমি এগুলো জনসম্মুখে আনতে যাচ্ছি।”
-“তোমার কথা আমি কিচ্ছু বোঝতে পারছি না।”
-“বোঝবে বোঝবে সময় হলে সবই বোঝতে পারবে।”

লাজ কথাটা বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল। এতটাই ক্লান্ত ছিল যে বিছানায় এসে গা লাগাতে লাগাতেই ঘুমিয়ে গেল।সকালে ফারাজ তাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে পাশে থাকা জগের পানি সবটা লাজের মুখে ছুড়ে মারে। লাজ এক লাফাতে উঠে বসে, ফারাজ লাজের এমন ভয়ানক ফেইস দেখে জোরে হেঁসে দেয়। লাজ বোজতে পারে এটা কে করছে। সে দাঁড়িয়ে ফারাজকে বলে,” এসব অসভ্যতামির মানে কি?”
-“তোমার কাজ কর্মের কোনো কৈফিয়ত যেমন আমাকে দাও না,আমিও আমার কোনো কাজের কৈফিয়ত তোমাকে দিবো না।”
ফারাজ কথাটা বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল ঠিক করছিল,পিছন থেকে লাজ এক বালতি পানি এনে ফারাজের মাথায় ঠেলে দেয়। ফারাজ চিল্লিয়ে বলে,”হুয়াট দ্যা ফ্যাচ!”
-“ইট টি মারলে পাটকেল তো খেতেই হয়।”
লাজ এই কথা বলতেই ফারাজ তাকে দৌড়াতে শুরু করে। পুরো ঘর জুড়ে তারা দৌড়াতে লাগলো। এক পর্যায়ে লাজকে ধরে ফেলল, ছুটার চেষ্টা করছে লাজ।কিন্তু কোনো লাভ হলো না উল্টো ফারাজকে নিয়ে একদম ফ্লোরে পরে গেল। ফারাজের বুকের উপর পরেছে লাজ,লাজের ভেজা চুল আর হাঁপানো গরম শ্বাস ফারাজের মুখে পরছে। মুহুর্তের মাঝেই কোন এক অজানা নেশায় মাতাল হয়ে গেল ফারাজ, লাজের চুলে ধরে তার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে এগোতে লাগল। লাজ সজোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,” নেক্সট টাইম এমন দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টাও করবে না, এর ফল ভালো হবে না।”
লাজ কথাটা বলে ওয়াশরুমে গিয়ে জোরে দরজা লাগিয়ে দিলো। ফারাজ ফ্লোরে শুয়া অবস্থাতেই রাগে নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো।

প্রায় আধ ঘন্টা ধরে থানার ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে লাজ,কিন্তু মেয়েগুলো আসার কোনো নাম গন্ধ ই নেই। আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন থানা থেকে বেড়িয়ে আসলো। বেড়োতেই এম পি সাহেবের গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে ফারিদ তাকদিয়ার নেমে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে শয়তনি হাসি দিয়ে বলল….
-“কি?আসলো না তোমার প্রানপ্রিয় মেয়েগুলো?”
-“তারমানে আপনি ওদের সাথে কিছু একটা করেছেন?”
-“আমার লোক থাকতে আমি কেন কিছু করতে যাবো?যা করেছে আমার লোকেরা করেছে?”
-“কিন্তু করতে আপনিই তো বলেছেন!কি করছেন ওদের সাথে?”
-“বেশী কিছু করিনি,শুধু জানে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে এই শহর থেকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যেগুলো বাড়াবাড়ি করছিল সেগুলোর বাপ-মা কে একটু মালিশ করিছি!”
-“ছিহ,আপনার এসব করতে একটুও লজ্জা করে না!”
-“টাকা’র সামনে এসব লজ্জা সরম কিছু নেই, লজ্জা সরম থাকলে এত এত টাকা কি করে বানাতাম?”
-“আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃনা করছে।”
লাজ কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল। ফারিদ তাকদিয়ার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
ফারাজ কি যেন একটা খুঁজতে ছিল তার আলমারিতে সেই মুহুর্তে লাজ রুমে আসলো। আর পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো,”কোনো নতুন মেয়ে পাচারকারীর সাথে কন্ট্রাক করতে চাচ্ছো নাকি কোনো কালো ব্যবসা করার কাগজ খুঁজছো?
লাজের এমন প্রশ্নে পিছন ফিরে তাকালে ফারাজ। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কাল থেকে এসব কি আজে বাজে বকে যাচ্ছো?কিসের কালে ব্যবসা আর কিসের মেয়ে পাচার?”
-“কোনো নাটক করতে আসবে না আমার সাথে।আমি তোমাদের এসব কিছু জেনে গেছি, তোমরা মেয়ে পাচার করো,নেশা জাতীয় জিনিসের ব্যবসা করো।কালকে সন্ধ্যায় ৪০ জন মেয়ে পাচার করার কথা ছিল সেখানে একজন মেয়ে কম পরায় আমাকেও সেখানে দিয়ে দেয়।”
-“হুয়াট!”
-“আমি নিজ চোখে দেখেছি সবকিছু,তোমার বাবা-র গাড়ির ডিকিতে করে আমি গিয়ে ছিলাম, তারপর ভিডিও করেছিলাম কিন্তু তোমার বাবা আমার ফোন ভেঙে ফেলে আর আমাকে ঐমেয়েদের সাথে দিয়ে দেয়। ভাগ্য ভালো ছিলো বলে আমরা বেঁচে গেছি। কিন্তু তোমাদের ভাগ্য কিন্তু একদমই ভালো হবে না, আমি যখন তোমার আর তোমার বাবার মুখোশ সবার সামনে খুলতে শুরু করবো তখন তোমরা কেউ বাঁচতে পারবে না।”
লাজ কথা গুলো বলে রাগে আলমারি থেকে কাপড় টান দিয়ে ফেলে দিতেই একটা ছবি ছিটকে পরে যায়। ফ্লোর থেকে লাজ ছবিটা তুলতে নিবে তার আগেই ফারাজ খপ করে তুলে নেয়। তারপর একটা ডায়েরীর ভিতরে রেখে দেয়।লাজের কিছুটা অবাক লাগলো বিষয়টা তাই সে একবার ফারাজের দিকে তাকালো,ফারাজ অন্যদিকে ফিরে গেলে লাজ কিছু না বলে সোজা বারান্দায় চলে গেল।লাজ চলে যাওয়ার পর আলমারিতে কাপড়গুলো রেখে ফারাজ ভাবতে লাগলো….
-“লাজ যা বলছে তা কি সত্যি? বাবা কি এসবের সাথে জড়িত আছে নাকি লাজ আমাকে মিথ্যা বলছে? কিন্তু লাজ যেভাবে বলল তাতে মনে হয় না লাজ মিথ্যে বলছে!আমি বুঝতে পারছি না আমি কি বিশ্বাস করবো। আমাকে আজকেই বাবার সাথে কথা বলতে হবে।”
ফারাজ তার বাবার রুমে এসে দেখে তার বাবা মাত্র বাহির থেকে এসেছে। ফারাজ বলল,”আচ্ছা রেস্ট নাও,আমি পরে এসে তোমার সাথে কথা বলছি?”
-“নাহ সমস্যা নেই,বল তুই কি বলবি?”
-” আসলে বাবা,লাজ যা বলছে তা কি সত্যি?”
ফারাজের এমন কথায় চমকে উঠলো ফারিদ তাকদিয়ার।কারন সে মনে মনে এই ভয়েই পাচ্ছিলেন, লাজ ফারাজকে না এসব বিষয়ে বলে দেয়। ফারিদ তাকদিয়ার চুপ হয়ে গেলেন,ফারাজ বলল,”কি হলো বাবা,তুমি চুপ করে আছে কেন? আমার কথার উত্তর দাও!শুনো বাবা আমি তোমার সাথে ততক্ষণ আছি যতক্ষণ তুমি ভালোর সাথে আছো।তুমি যদি কোনো খারাপ কাজ করো আর অন্যায় পথে যাও তাহলে আমি কিন্তু তোমার সাথে নেই। কখনোই পাবা তুমি আমাকে! এর থেকে আমি কিছু বলবো না,আর তোমার উত্তরের আশা আমি করছি না,আমি জানি তুমি এসব করবে না।তোমার প্রতি আমার এতটুকু বিশ্বাস আছে।আসি,তুমি রেস্ট নাও!”
ফারাজ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল, ফারিদ তাকদিয়ার রাগে কটমট করতে লাগলো।লাজের প্রতি রাগ টা দিন দিন বাড়তেই লাগলো।

বিঃদ্রঃ বলুন তো ছবি টা কার হতে পারে?

চলবে!!!”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here