খেলাঘর,পর্বঃ০৭

0
2276

খেলাঘর,পর্বঃ০৭
লেখকঃ শাওন

লাজ রান্না করছিলো।তখন ফারাজ রান্নাঘরে এসে রান্না করতে দেখে বলে,”বাহ,আজকে তুমি রান্না করছো?তো মুখে দেওয়ার মতো হবে তো?”
-“রান্না টা যেহেতু আমি আমার নিজের জন্য করেছি তাহলে নিশ্চয়ই খাওয়া যাবে।”
-“মানে?আমরা কি খাবো তাহলে? টুনি কি রান্না করেনি।”
-“টুনি’র শরীর খারাপ তাই আমি ওকে ঘুমিয়ে পরতে বলেছি।”
-“তাহলে আমরা কি খাবো?”
-“আমি কি জানি?”
লাজ প্লেট আনতে টেবিলের কাছে যেতেই,ফারাজ লাল মরিচ গুঁড়ো সবটা ঢেলে দেয় তরকারি তে। তার মনে মনে বলে,” একা খাবার ধান্ধা,নাও এখন একা খাও, এমন খাওয়া খাবেই একদম চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে।”
ফারাজ শয়তানি হাসি দিতে লাগলে। লাজ ওর দিকে তাকালে সে অন্যদিকে ফিরে যায়।
রান্না শেষে একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে টেবিলে বসলো।ফারাজও লাজের ঝালের পুড়ে যাওয়া মুখটা দেখার জন্য আপেল নিয়ে তার সামনে বসে পরলো। লাজ খাবার মুখে দিতে যাবে তখন দেখতে পেল ফারাজ অধীর হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের লোকমা টা রেখে দিয়ে,আরেক প্লেটে খাবার দিয়ে ফারাজের দিকে বাড়িয়ে বলে।
-“এভাবে নজর দিলে আমি নিশ্চিত আমার পেট ব্যাথা করবে। নাও খেয়ে নাও, এভাবে নজর না দিয়ে।”
-“আব না না,আমি রাতে এসব খাবো না। আপেল খেলেই আমার চলে যাবে।”
-“নাহ,তা বললে হবে না।আমি জানি তোমার নজর অনেক খারাপ যেভাবে তাকিয়ে ছিলে আমার পেট এক্ষুনি ব্যাথা শুরু করছে।চুপচাপ খেয়ে নাও!”
লাজ কথাটা বলেি এক লোকমা তাকে জোর করে খায়ইয়ে দিলো। ফারাজের মুখে খাবার দেওয়ার সাথে সাথে ওর মনে হলো কেউ যেন ওর মুখে আগুন লাগিয়ে দিলো। ঝালে চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।চোখে পানি টপটপ করতে লাগলো। পানির গ্লাস নিতে যাবে তখনই লাজ গ্লাস নিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেলল,তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,” নিজেকে খুব বেশী চালাক মনে করো তাই না! আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল যখন তুমি আমার সাথে রাগ না দেখিয়ে চুপচাপ মেনে নিলে। আর সন্দেহটা আরো গভীর হলো তখন যখন আমি তরকারির রং দেখি।কথায় আছে না পরের জন্য কুয়া করলে সে কুয়াতে নিজেকেই পরতে হয় তোমার সাথেও এটাই হয়েছে। এখন সহ্য করো এই ঝাল কোনো পানি পাবে না।”
লাজ এই বলে পানির জগ নিয়ে চলে যেতে নিলে তার আগেই ফারাজ ওর হাত ধরে ফেলে। তারপর একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। লাজের দু কানে হাত রেখে ফারাজ ওর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে দেয়। অনাবরত চুষতে থাকে লাজের ঠোঁট জোড়া, যতক্ষণ পর্যন্ত না ফারাজের ঝাল কমলো ততক্ষণ ফারাজ চুষতেই থাকলো। লাজ ছুটার জন্য লাফালাফি করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। অবশেষে ঝাল কমে গেলে ফারাজ ওকে ছেড়ে দেয়। তারপর বলে,” এমন মিষ্টি থাকলে পানির কি প্রয়োজন?”
ফারাজ চোখ মেরে সেখান থেকে চলে যায়। লাজ নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে ঘষতে লাগলো আর ন্যাকা কান্না করতে লাগলো। লাজ রাগে কটমট করতে লাগলো আর মনে মনে ঠিক করলো এর একটা শোধ ওকে নিতেই হবে।

সকালবেলা লাজের ঘুম ভেঙে গেলে বারান্দায় গেল একটু বাতাস খেতে।বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতো পেল ফারাজ দুটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো মারছে। লাজ দৌড়ে নিচে গেল ফারাজ কে কোনো ভাবেই থামাতে পারছেনা লাজ। অবশেষে ফারাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ফারাজ রাগে বলে,” সামনে থেকে সরে যাও, আমি ওদের চোখ তুলে নিবো!”
-“কি করেছে ওরা?এভাবে মারছো কেন?”
-“ওরা টুনির সাথে বেয়াদবি করেছে,কুনজরে দেখেছে?”
-“তো এতে কি হয়েছে?তোমার মতো তো…..”
-“আমি বাহিরের লোকদের সামনে কোনো কথা বলছি না।”
-“ওহ আচ্ছা ওয়েট! ঐ তোমরা চলে যাও,আজকের জন্য মাফ করে দিলাম।পরেরবার কোনো মেয়েদের দিকে তাকালে আমি নিজেই তোমাদের চোখ তুলে নিবো।”
লাজ ছেলেদের কথাগুলো বললে ছেলেগুলো কোনো মতে দাঁড়িয়ে পালায়। ফারাজের দিকে ফিরতেই ফারাজ রাগে হন হন করে ভিতরে চলে গেল।লাজ দেখলো ফারাজের হাত কেটে গেছে রক্ত পরছে। লাজ পিছন পিছন আসলো এসে দেখে ফারাজ সোফায় বসে আছে। এখনো রেগে আছে কপাল কুঁচকে আছে,হাত শক্ত করে মুষ্টি দিয়ে আছে। যার ফলে রক্ত আরো বেশী বের হচ্ছে, লাজের এবার কেন জানি রাগ উঠে গেল। সে জোরে বলল,” এতে এত রাগার কি আছে?ওরা তো শুধু মাত্র কুনজরে তাকিয়েছে তোমার মতো তো আর রুমে নিয়ে গিয়ে…”
লাজের কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে ফারাজ দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করে বলল,” জাস্ট শাট আপ! তুমি কি বলে যাচ্ছো,আমার মতো কি? আমি কখনো কোনো মেয়েকে জোর করে কিচ্ছু করিনি প্রতিটা মেয়েই আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছে। তাদের মাঝে যাদের কে আমার ভালো লাগতো তাদের সাথে হয়েছে।এছাড়া একটা কোনো মেয়ের দিকে আমি খারাপ ভাবে তাকায়নি?”
-“ওহহ তাই!তাহলে আমার সাথে কেন এমন করতে চেয়েছিলে? আমি কি তোমাকে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম নাকি জোর করে ছিলাম?”
-“ওদের ব্যাপার আর তোমার ব্যাপার আলাদা। তোমার থেকে আমি আমার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম আমার বাবা-র অপমানের!”
-“কোনটা অপমান ছিল? ওনি যা করেছেন আমি তারই কথা বলেছিলাম শুধু!”
-“ওনি কোনো খারাপ কাজ করেননা, আমি আমার বাবাকে খুব ভালো করে চিনি!”
-“হুম,যেমন বাবা তেমনই সন্তান আরেকটা কথা কি জানো এতগুলো পাপ আর ভুল করেছো যে তোমার চোখে এখন কোনো ভুলই ভুল মনে হয় না। কিন্তু টেনশন করো না আমি এখন থেকে সবগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো।”
লাজ কথাটা বলে বেডের পাশে থাকা টেবিল টা খুলে ফাস্ট এইড বক্স নিতে নিবে তখনই চোখে পরলো সকালের সেই ডায়েরী আর ডায়েরীর ভিতরে থাকা একটা ছবির কিছু অংশ, দেখে মনে হলো অনেক আগের একটা ছবি। একটা বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু পাশে কে তা বোঝা যাচ্ছে না। ডায়েরী ফারাজের পার্সোনাল ভেবে আর ধরার ইচ্ছে হয়নি লাজের। ফাস্ট এইট বক্সটা নিয়ে ফারাজের সামনে গেল। ফারাজ ওর দিকে তাকালে সে চোখ দিয়ে ইশারা করে বসার জন্য কিন্তু ফারাজ চলে যেতে নিলে লাজ ওর হাত ধরে।তারপর বলে,” এত রাগ না দেখিয়ে চুপচাপ এখানে বসো, তোমাকে আমি তিলে তিলে শেষ করবো। আমি চায় না তোমাকে অন্যকেও আঘাত করুক, আমি নিজে তোমাকে আস্তে আস্তে করে বরবাদ করে দিবো।”
লাজ ফারাজ কে বসিয়ে দিলো,তারপর একটু সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর ব্যান্ডেজ করতে লাগলো। সেভলন দেওয়ার একটু জ্বালা করলে ফারাজ চোখ বন্ধ করে ফেলে একটু পর কারো ফু এর অনুভূতি পেয়ে চোখ খুলে দেখে লাজ ফু দিচ্ছে আর খুব মনোযোগ দিয়ে ব্যান্ডেজ করছে। ফারাজ লাজের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে, এক অদ্ভুত মায়া লাগছে আজকে তার লাজের প্রতি। ব্যান্ডেজ শেষে লাজ ফারাজের দিকে তাকালে দেখতে পায় ফারাজের মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা চাহনি,দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মুহুর্তে দরজায় কারো নক করার শব্দে দুজনের চোখাচোখি শেষ হয়। টুনি রুমের ভিতরে এসে কান্না করতে করতে বলে,” ছোট সাহেব আপনি যদি ঠিক সময় আমার সামনে না আসতেন তাহলে ওরা আমার সাথে না জানি কি হতো?”
বলেই আরো জোরে কান্না করে দিল, ফারাজ একবার লাজের দিকে তাকিয়ে উঠে টুনির চোখ মুছে দিয়ে বলল,” আরে পাগলী তুই কান্না করছিস কেন? বলেছিলাম না তোর এই ভাই থাকতে তোকে কেউ কোনোদিন কিছু করতে পারবে না। এখন যা কান্না রেখে গিয়ে আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়!”
টুনি নিচে কিচেনে চা বানাতে আসলে পিছন থেকে লাজ বলে,”তুমি গিয়ে রেস্ট নাও,আমি চা বানিয়ে নিচ্ছি!”
-“না না,আমিই বানিয়ে নিচ্ছি।”
-“তোমাকে যা বলছি তাই করো,আমার মুখের উপর তর্ক করতে আসবে না।”
লাজ ইচ্ছে করেই টুনিকে ভয় দেখানোর জন্য ধমক দিয়ে কথাটা বলল,এতে টুনি একটু ভয় পেয়ে কিচেন থেকে চলে গেল। লাজ নিজ হাতে দু কাপ চা বানিয়ে নিয়ে গেল। ফারাজের সামনে গিয়ে চায়ের কাপ রাখতেই ফারাজ বলল,” তুমি বানিয়েছো চা?”
-“হুম,আমি বানিয়েছি।”
-“তাহলে আমি খাচ্ছি না,না জানি এতে কি মেশানো আছে।”
-“এতে কিছু মেশানো নেই,আচ্ছা বিশ্বাস না হলে এই দেখো আমি দুটো কাপই চুমুক দিয়ে দিলাম।”
বলেই নাজ দুটো কাপে এক চুমুক করে খেয়ে দিলো। ফারাজ এবার নিশ্চিত হয়ে চায়ের কাপ টা হাতে নিলো। লাজ কেন জানি ফারাজের প্রতি একটু ভালো ভালো ফিল হলো সে ফারাজ কে বলল,” তুমি কি সত্যি তোমার বাবার ব্যবসাগুলো জানো না?”
-“জানবো না কেন? আমি নিজেই প্রতিটা ব্যবসায় চোখ রাখি।”
-“ওহহ,আচ্ছা। একটা জায়গায় যাবে?”
-“কোথায়?”
-“গেলেই দেখতে পারবে।”
ফারাজ রাজি হলে ওরা দুজন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। লাজ তাকে সেই কারখানায় নিয়ে আসে যেখানে মেয়ে পাচারের কাজ চলে। ভিতরে অন্ধকার দেখে ফারাজ জিজ্ঞেস করলো,”তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?কোথাও আমাকে মেরে ফেলার প্লান তো করছো না!”
-“আমি তোমাকে বলেছি এত সহজে তোমার মরণ আমি দিবো না আর আমি তোমাকে একেবারে জানে মারবো না।অসহায় করে দিবো,বরবাদ করে দিবো।”
বলেই লাজ এগোতে লাগলো,ফারাজও লাজের পিছু পিছু যেতে লাগলো। ভিতরে গিয়ে লাজ পুরাই অবাক হয়ে গেল।এটা কি করে সম্ভব? এখন কি হবে?

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here