খেলাঘর,পর্বঃ০৮,৯
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ০৮
কারখানার ভিতরের চেহারা পুরো পাল্টে গেল।যেখানে বড় বড় ড্রাম রাখা ছিলো এখানে এখন বড় বড় বইয়ের থাক। এদিকে কতগুলো মেয়ে পরছে অন্যদিকে কতগুলো মধ্য বয়সী নারী হস্তশিল্প বানাচ্ছে। লাজ অবাক হয়ে বলল,”এটা কি করে সম্ভব? আমি তো কালকেই এখানে অন্যকিছু দেখে গিয়েছিলাম তাহলে আজকেই কি করে এত পরিবর্তন হলো?”
এটা বলার সাথে সাথেই পিছন থেকে ফারিদ তাকদিয়ার বলে,”আরে ফারাজ বাবা,তুই এখানে?”
ফারাজ বলল,” এইতো লাজ নিয়ে আসলো কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?”
-“তোকে বলেছিলাম না,আমি নতুন একটা কাজ করছি।এটাই হলো সেই নতুন কাজ,এখানে মেয়ে আর মহিলাদের পড়ালেখা শিখানোর পাশাপাশি হস্তশিল্প ও বানানো শিখায়,যাতে করে ওদের সংসার খুব ভালো করে চলে।”
-“ওহহ বাবা,গ্রেট! কিন্তু লাজ তুমি কি করে জানলে আমাদের নতুন কাজ এখানে শুরু হয়েছে?”
ফারাজ লাজের দিকে তাকিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করলো।লাজ ফারাজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফারিদ তাকদিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,” আমি অনেককিছু জানি যা তুমি হয়তো জানো না। তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি তোমাকে কেন নিয়ে এসেছিলাম? তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম কারণ তোমাকে তোমার বাবা-র কালো ব্যবসার সম্পর্কে জানাতে,তিনি কতটা নিচ তা প্রমান করতে।”
-“মুখ সামলে কথা বলো,ওনি আমার বাবা হয়।আর তুমি জানো আমি আমার বাবা-র জন্য ঠিক কি করতে পারি।”
-” বিশ্বাস করো ফারাজ,তুমি এখানে যা দেখছো সব সাজানো আমি কালকে এখানে এসেছিলাম। এখানে এসব কিছু ছিলো না,ছিলো শুধু নেশা করার জিনিস আর এইদিকটাই মেয়েদের বেঁধে রাখা হয়েছিল পাচার করার জন্য। আচ্ছা বিশ্বাস হচ্ছে না তো তাহলে ওয়েট।”
লাজ এই কথাটা বলে এক কোনায় পরে থাকা ফোনের ভাঙা অংশ দেখিয়ে বলল,”এই দেখো, আমি ওনার সব কুকর্ম ভিডিও করেছিলাম বলে ওনি আমার ফোন ভেঙে দেয়।”
ফারিদ তাকদিয়ার বলল,”তুমি কি বললে?কালকে তুমি এখানে এসেছিলে আর এসব কিছু দেখতে পাও নি,ওয়েট! এই মেয়েরা তোমরা এখানে কতদিন ধরে কাজ করছো?”
মেয়েরা উত্তর দিলো,”পাঁচ দিন!”
-“আর এই মোবাইল টা কার ছিলো আর কি করে ভাঙ্গলো?”
একটা মেয়ে বলল,”মোবাইল টা আমার ছিলো,অসাবধানতায় দৌড় দেওয়ার ফোনটা ভেঙে যায়। ”
উত্তর টা পেয়ে লাজ চমকে উঠলো তারমানে ফারিদ তাকদিয়ার সবকিছু তার প্লান মতো করছে, আর ফারাজ এসবের কিচ্ছু জানে না!কিন্তু ফারাজের কাছে সবকিছু বললেও এসব কেন বলেনা?লাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাজ চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,” তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম আমার বাবা-র নামে তুমি অযথা মিথ্যা কথা বলবে না,কিন্তু তুমি তাও শুনো নি।তোমার এত কিসের শত্রুতা আমার বাবা-র সাথে বলবে আমাকে?”
-“বিশ্বাস করো ফারাজ,আমি মিথ্যা বলছি না!”
-“চুপ,আর একটা কথাও বলবে না তুমি!”
ফারাজ ধমক দিয়ে কথাটা বলে চলে গেল। আজকে লাজের খারাপ লাগছে,সে মিথ্যা না বলেও মিথ্যাবাদী সাজতে হলো!ফারিদ তাকদিয়ার অট্ট হাসি দিয়ে বলল,” আমার পিছনল লাগতে নিষেধ করেছিলাম,কিন্তু তুই কথা শুনিস নি।এখন তো টের পাবি এই ফারিদ তাকদিয়ার কি কি করতে পারে। এই কারখানা কে আমাকে উল্টা পাল্টা করতে একরাতের ও প্রয়োজন হয় না।”
-“আর আপনিও জেনে রাখুন এক মাঘে যেমন শীত চায় না ঠিক তেমন সত্য কে হাজার চেষ্টা করলেও চাপা দেয়া যায় না,একদিন না একদিন ঠিকই সবার সামনে চলে আসে।”
এম পি সাহেব চলে যেতে নিলে লাজ পিছন থেকে এই কথাটা বলে।এমপি সাহেব পিছন ফিরে বলে,” যা হবে দেখা যাবে কিন্তু আমার সাথে লাগতে আসার ফল মোটেও কিন্তু ভালো হবে না!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাটা বলে চলে গেলেন। লাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পুরো কারখানা দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।তারপর বের হতে যাবে তখনই একটা রুম থেকে কারো কান্নার আওয়াজ আসে।লাজ থমকে দাঁড়ায় সে বোঝতে চেষ্টা করে ঠিক কোন জায়গা থেকে আসছে এই কান্নার আওয়াজ? আওয়াজ ফলো করে আসতে আসতে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়, রুমটা বাহির থেকে খিল দেয়া। লাজ খিলটা খুলতে নিবে তার আগেই কেউ একজন ওর হাত ধরে ফেলে। তাকিয়ে দেখে ফারাজ,
-“তারাতাড়ি চলো,এখুনি হসপিটালে যেতে হবে।”
লাজ’কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো। লাজ ঐ রুমটার দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আয়েরা,লাজ আর ফারাজ। একটু আগেই লাজের বাবা মাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। দুজনেরই অবস্থা খুবই খারাপ।লাজের অবস্থা কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ, আয়েরা ফারাজের দিকে ফারাজ চোখ রাঙ্গিয়ে কিছু একটা ইশারা করে না বলে। অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো।লাজ দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে ওদের? ওরা এখন কেমন আছে?কিছু হয়নি তে ওদের?”
ডক্টর কোনো জবাব দিলো না, মাস্কটা খুলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,” সরি, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু গুলি গুলো একদম হার্টে গিয়ে লেগেছে।তাই আমরা শত চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলাম না!”
এই কথা শুনে লাজ মাথা চক্কর দিয়ে পরে যেতে নিলে ফারাজ ধরে ফেলে। লাজ বোঝতে পারছে না,ওদের গুলি কি করে লাগলো? কে ই বা ওদের গুলি করবে? তার বাবা মায়ের তেমন কোনো খারাপ শত্রু নেই,তাহলে কে?”
আয়েরা কান্না করতে করতে বলল,”লাজ নিজেকে সামলা, এভাবে কেমন ভেঙে পরছিস?”
লাজ বলল,” আমি কি করবো বল, আমি ওদের কে সত্যি টাও বলতে পারলাম না,আমাকে এতটুকু সময় না দিয়েই ওরা চলে গেল।”
আয়েরা বলল,” শক্ত হো,তোকে জানতেই হবে কে আর কেন আঙ্কেল আন্টিকে মেরেছে। আর তাদেরকে শাস্তি দিতেই হবে!”
লাজ নিজের চোখের পানি মুছে বলল,” হুম, আমি আমার বাবা মা’র খুনি কে খুঁজে বের করবোই আর তাকে শাস্তি আমি দিবো।”
-“আর এতে আমি নিজে তোমার পাশে থাকবো,তোমাকে সাহায্য করবো।”
ফারাজের কথাটা শুনে লাজ কান্নারত ছলছল চোখে ওর দিকে তাকালো,ফারাজ লাজের চোখের পানি মুছে দিলো। আয়েরা ফারাজ কে এসব করতে দেখে অনেকটা অবাক হলো।
দুদিন চলে গেল, এই দুদিন লাজ নিজের রুম থেকে একটাবারের জন্য বের হয়নি। খাওয়া দাওয়া একদম বন্ধ করে দিয়েছে ফারাজ বিষয়টা লক্ষ্য করলো কিন্তু লাজের মনের অবস্থা টা বোঝতে পেরে কিছু বলল না৷ লাজ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিল তখন পিছন থেকে ফারাজ বলল,” এসব কি শুরু করছো? এভাবে না খেয়ে থাকতে থাকতে তো মরে যাবে!”
-“সেটা তো তোমার আর তোমার বাবা-র জন্য ভালোই হবে, তোমাদের পথের কাটা দূর হয়ে যাবে।”
-“জাস্ট শাট আপ, আর একটা কথা না বলে চুপ চাপ এখানে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
-“আমি কিছু খাবো না, আর এসব কিছু করতে হবে না আমার জন্য। দরকার নেই কারো দয়ার এসব দয়া আমি বিশ্বাস করে অনেক বড় ভুল করে ছিলাম।আজকের এইদিনগুলোর জন্য আমি শুধু মাত্র তোমাকে আর তোমার বাবা’কে দায়ী করি। তুমি যদি আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক না করতে আর তোমার বাবা কালো ব্যবসা না করতো তাহলে কখনো তোমাকে বিয়ে করতাম না আর বাবা মাকে ছেড়ে আসতাম না।আমি না আসলে ওরা হয়তো আজকে বেঁচে যেত!”
বলে লাজ আবার কান্না করতে লাগলো,ফারাজ লাজকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর লাজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,”আচ্ছা মানলাম এসব আমাদের জন্যই হয়েছে আর তা শোধরাবার জন্য তোমার পাশে থাকবো। তোমার বাবা মা’র খুনী কে আমি খুঁজে বের করবো।খুব বেশি দিন হয়তো লাগবে না। আর তাই বলছি তুমি এভাবে ভেঙে পরো না শক্ত হতে হবে আরো, খাবারগুলো খেয়ে নাও!”
ফারাজ এখন ইচ্ছে করেই লাজের কথাগুলো মেনে নিলো কারন সে জানে লাজ এখন কতটা ভেঙে পরেছে এজন্য সে আর কিছু না বলে চুপচাপ মেনে নিয়েছে।কথাগুলো বলে ফারাজ লাজের সামনে লোকমা তুলে ধরলো, লাজ ওর দিকে তাকালে ইশারা করে হা করতে বলল।লাজকে ফারাজ নিজ হাতে খাইয়ে দিলো।
ফারাজ তার বাবা-র রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন শুনতে পেল ফারিদ তাকদিয়ার কারো সাথে ফোনে কথা বলছে…..
-“তোদের কে বলেছিলাম একটু ভয় দেখাতি যাতে করে ঐ আপত টা একটু ভয় পায় কিন্তু তোরা তো ওদের কে….”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাগুলো বলে পিছনে ঘুরতেই ফারাজ কে দেখে চমকে উঠে,ফোনটা রেখে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,”কিরে তুই এখানে!কোনো দরকার?”
-“নাহ এমনি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?কাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলে?”
-“আর বলিস না,একটা লোক আমাদের কারখানায় এসে ঝামেলা করছিল তাকেই ভয় দেখানোর কথা বলছিলাম।”
-“ওহহ, লোকটার নাম বলো আমিই দেখে আসছি।”
-” নানা,তোর এসব ঝামেলা যাওয়ার দরকার নেই। দরকার হলে আমিই বলবো।”
-“আচ্ছা, তাহলে আমি একটু লাজ কে নিয়ে বাহির থেকে আসছি!”
-“ওয়েট, তোর কি মনে হয় না তুই এখন ঐ লাজের জন্য একটু বেশীই করছিস? আমার মনে হয় তুই হয়তো আমার অপমানের কথা ভুলে যাচ্ছিস!”
-” আমি কিছু ভুলিনি, কিন্তু এখন লাজের পাশে থাকা দরকার। ওর বাবা মা এই মৃত্যু সে মেনে নিতে পারছে এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ডিপ্রেশনে চলে যাবে।তারপর একদিন আত্মহত্যা করে ফেলবে!”
-“তো করতে দে।”
-“বাবা,তুমি কি বলছো এসব? তুমি এগুলো কি করে বলতে পারো? সে আমাদের বিরোধিতা করেছে বলে আমরা ওকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না। আর আমি ওর পাশে থাকবো।ওর বাবা মার মৃত্যুর খুনিকে আমি খুঁজে বের করবো।”
এই বলে ফারাজ ঐরুম থেকে বেড়িয়ে গেল। নিচে এসে দেখে লাজ সাধারণ ভাবে রেডী হয়ে আছে। ফারাজ লাজের সামনে গিয়ে বলল,” চলো তাহলে যাওয়া যাক!”
-“হুম!”
লাজ গাড়িতে উঠে বসতেই ফারাজ গাড়িয়ে স্টার্ট দিলো।
চলবে
খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ০৯
ফারাজ গাড়ি থেকে নেমে লাজের দরজা খুলে দিলো। লাজ নেমে অনেকটা অবাক হয়ে গেল কারন ফারাজ তাকে তার বাবা মায়ের কবর স্থানে নিয়ে এসেছে। লাজ ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ লাজের মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে ইশারা করলো কবরের কাছে যেতে।
লাজ কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ থেকে একফোঁটা পানি পরলো। ফারাজ তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,”এখানে তোমাকে কান্না করার জন্য আনেনি, এখানে এনেছি তুমি তোমার বাবা-র জন্য দোয়া করতে আর নিজের মনটাকে ভালো করতে।”
লাজ ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ একটা হাসি দেয় তারপর দোয়া করার জন্য দুহাত উঠিয়ে দেয়।
লাজ দোয়া করার সময় মনে মনে বলল,”আমি তোমাদের খুনীকে খুঁজে বের করবো, আর তাদের এমন শাস্তি দিবো যাতে করে আর কারো কোনোদিন হত্যা করতে না পারে। আর আমি খুব তারাতাড়ি ফারাজকে তার বাবার সব সত্য সামনে নিয়ে আসবো। তার আগে শিউর হতে হবে সত্যি ই কি ফারাজ এগুলো সম্পর্কে কিছু জানে না!”
দোয়া শেষ করে লাজ নিজের চোখের পানি মুছে বলল,” আমাকে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দাও!”
-“কিন্তু এসময় তোমাকে আমার একা ছারতে মন করছে না।”
-“আর আমিও তোমাকে আমার সাথে নিতে ছারছি না। কেন বোঝতে পারছে না আমি তোমাদেরকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আর করবোই কি করে তোমাদের প্রতিটা কাজই আমার কাছে বিশ্বাসের অযোগ্য লাগে। সো প্লিজ লিভ মি এলন!”
লাজ কথাটা বলে চোখ রাঙ্গিয়ে চলে গেল, ফারাজ বোঝতে পারলো না লাজের হঠাৎ করে কি হলো? সে এমন ব্যবহার করলো? তাহলে কি লাজ এখনো ফারাজ কে ভুল চোখে দেখছে?
লাজ নিজের বাড়িতে আসলো। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই মনে পরতে লাগলো তাদের সেই সোনালী দিন গুলোর কথা। বাবা মায়ের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। তার কাছে মনে হলো তাদের বাবা মা তাকে ডাকছে কিন্তু ধরতে গেলেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। লাজ কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরলো, তখনই ওর হাঁটুতে কি একটা যেন অনুভব হলো। হাত দিয়ে দেখে একটা আংটি পরে আছে,কিন্তু এই আংটি টা সে চিনে না। লাজ একা একা বলতে লাগলো,”এটা কার আংটি? দেখে তো মনে হচ্ছে পুরুষের আংটি কিন্তু বাবা তো এসব আংটি পরতো না। তাহলে এটা কার?”
বলে সাইডে ফিরতেই দেখতে পেল রক্তে মাখা ফ্লোর, সে বোঝতে পারলো এখানেই তার বাবা মাকে মারা হয়েছিল। লাজ বলল,” তারমানে এটা ঐ খুনী’র আংটি! এই আংটি কি আমাকে খুনী পর্যন্ত পৌঁছে দিবে কিন্তু এই একটা আংটিতে আমি কি করে খুনী কে খুঁজে বের করবো। আমি কি করবো?ফারাজ কে এটা দেখাবো? নাহ, আমি এতটা বোকা কি করে হলাম,ওকে বিশ্বাস করতে যাচ্ছি। যা করতে হবে আমাকেই করতে হবে।”
লাজ ছদ্মবেশ নিলো, ঘাগড়া পরে ঘোমটা দিয়ে নিলো। তারপর ফারিদ তাকদিয়ারের কালো কারখানার ভিতর ঢুকলো। ঢুকে দেখে ফারাজ সেখানে চেয়ারে বসে আছে। ফারিদ তাকদিয়ারের সাথে কথা বলছে, লাজ দৌড়ে গিয়ে ফারিদ তাকদিয়ারের পায়ে পরলো। তারপর কান্না করতে করতে বলল,”স্যার,আই এক গরীব মানুষ, জামাই আইয়ের মরে গেছি। দুই পুলা মাইয়া লইয়া পথে পথে ঘুড়ি। দয়া করে আপনার মিলে কাজ দেইন।!”
ফারিদ তাকদিয়ার রাগ হলেও ফারাজের সামনে তা প্রকাশ করলো না। রাগ সহ্য করে বলল,” দেখো এখানে তোমাদের জন্য কোনো কাজ নেই আর তাছাড়া যতজন নেবার ছিলো আমাদের লোক নিয়েছে। তুমি অন্য কোথাও দেখো।”
লাজ আরেকটু বেশী কান্নার অভিনয় করে শক্ত করে পা জড়িয়ে বলল,” বাবু স্যার, এমন কইরেন না। আমি তাইলে মইরা যামু সাথে আমার পোলা মাইয়া গুলা। আমনে চাইলে সব পারেন দয়া করে একটা কাম দেন আমারে।”
ফারিদ তাকদিয়ার কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফারাজ বলল,”তুমি ঐ মহিলাদের সাথে গিয়ে কাজ করো, আমি বাবা-র সাথে কথা বলছি। আর হ্যা,তোমার কোনো টেনশন করতে হবে না। তুমি এখানে আজকে থেকে কাজ করবে।”
-“শুকরিয়া সাহেব!”
লাজ এই বলে ঘোমটার নিচে শয়তানি হাসি দিয়ে কাজ করতে বসে গেল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে ফারাজ বার বার বাসায় কল করে খবর নিচ্ছে লাজ বাসায় ফিরেছে কিন্তু না বাসায় যায়নি। ফারাজের টেনশন হচ্ছে লাজের জন্য, ওর একটা ফোনও নেয় যে সে কল দিবে।
এদিকে লাজ কাজের এখান থেকে সুযোগ মতো সরে পরলো। তারপর পুরো টা কারখানা আবার ঘুরে দেখতে লাগলো কোথাও কোনো কিছু পাওয়া যায় কি না।কিন্তু না,কোথাও কিছু পেল না হটাৎ করে তার চোখ গেল সেদিনের সেই রুম টার দিকে। কি অদ্ভুত প্রতিটারুমের দরজা খোলা কিন্তু এই একটা মাত্র রুমেই তালা দেওয়া। কি এমন আছে এই রুমে যার জন্য তালা দিয়ে রাখতে হবে বর তাছাড়া সেদিন কারো আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল লাজ। তারমানে কি এর ভিতরে এমন কিছু লুকানো আছে যা ফারিদ তাকদিয়ার লুকিয়ে রাখতে চায়। লাজ নিজের ঘোমটা টা দিয়ে ঐরুমের দিকে যেতে নিবে তখনই পিছন থেকে বলে,” হেই,তুমি এখানে কি করছো?”
লাজ হতমত খেয়ে গেল সে বলল,” আব স্যার,আসলে একটু হিসু দিতে জায়গা খুজছিলাম।”
ফারাজ একটু লজ্জায় পরে গেল সে বলল,” ওয়াশরুম এদিকে না, বাম দিকের রাস্তা দিয়ে সোজা যাবে তাহলেই পাবে।”
-“শুকরিয়া!”
ফারাজ চলে গেল, লাজ একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে ঐরুমের সামনে চলে এলো। কিন্তু রুমে তো তালা লাগানো ভিতরে যাবে কি করে? লাজ টানাটানি করেও কোনো লাভ হয়নি, মাথা চুলকিয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে? তখনই হাত গেল তার ক্লিপে আর তার একটা বুদ্ধি চলে আসলো। সে ক্লিপটা নিয়ে তালা খুলার চেষ্টা করে। অনেকবার চেষ্টা করে যখন ফেল হয়ে আশা ছিড়ে দিলো তখন সে কারো আসার শব্দ পেল। সে ভয় পেয়ে ক্লিপটা নিয়ে কোনো মতো ভাঙা চুড়া জিনিসের পিছনে লুকিয়ে পরে।
ফারিদ তাকদিয়ার এক প্লেট খাবার নিয়ে এদিকে আসছে। রুমের সামনে এসে খাবারটা টেবিলের উপর রেখে রুমের তালা খুলল। তারপর খাবারটা নিয়ে ভিতরে চলে গেল। লাজও দৌড়ে রুমের সামনে চলে আসলো কিন্তু ভেতরে অন্ধকার বেশী হওয়ায় কিছু দেখতে পেল না।তাই সে চুপি চুপি ভিতরে ঢুকে গেল। রুমের ভিতরে বড় বড় ড্রামের পিছনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলে ফারিদ তাকদিয়ার কি করে? লাজ তার পিছন পিছন যেতে লাগলো।
ফারিদ তাকদিয়ার একটা চেয়ারে খাবার টা রেখে টেবিলের মোমবাতি টা জ্বালিয়ে দিলো। আলো জ্বালানোর ফলে লাজের চোখের সামনে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল। সে যা দেখলো তা সে মোটেও কল্পনা করতে পারেনি।
একটা মধ্যবয়সী মহিলা’কে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মহিলাটির শরীর ঠিক কতটা দুর্বল হয়ে আছে। চুলগুলো রুমের ধুলোয় সাদা হয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো কালো দাগ। হাত বাঁধা থাকতে থাকতে একদম দাগ হয়ে গেছে। মহিলাটি বসে বসে ঘুমাচ্ছিল ফারিদ তাকদিয়ার এক গ্লাস পানি নিয়ে ওনার মুখে ছুড়ে মারলো। ওনি ছটফটিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল, ফারিদ তাকদিয়ার কে দেখে ভয় পেল ওনি ছুটার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ফারিদ তাকদিয়ার অট্ট হাসি দিতে লাগলো, হাসি নিয়েই বলল,”কেন অযথা চেষ্টা করছো বলো তো? গত ১৯ বছর ধরে তো তাই করে আসলে কিন্তু কোনো লাভ হলো? হলো নাতো!তাহলে কেন করছো এমন।যেদিন আমার ছাড়তে ইচ্ছে হয় সেদিন তো ছাড়ি মাত্র পাঁচ সাত মিনিটের জন্য।”
বলেই খপ করে চুলের মুঠি ধরে ফেলল, মহিলাটি কুকড়িয়ে উঠলো লাজ সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে ফেলল।ফারিদ তাকদিয়ার চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,”চুপ চাপ ভালোই ভালোই হা করো, দেখেছো তোমার প্রতি আমার এখনো কতটা মায়া? আর যদি এই মায়াতে ভালোই ভালোই না খাও তাহলে কি ব্যবস্থা আমি করতে পারি তাও তুমি ভালো করে জানো।”
কথাগুলো সামনের চেয়ারে বসে লোকমা মুখের সামনে তুলে দিলো। মহিলাটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হা করলো। কয়েক লোকমা খাইয়ে দেবার পর ফারিদ তাকদিয়ার ফোনে কল আসে। ফোনটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ছিল তাই সে খাবারগুলো এভাবে রেখেই চলে যায়। রুম থেকে বেরিয়ে দরজায় তালাও দিয়ে দেয়।
লাজ দৌড়ে দরজার কাছে গেল, কয়েকবার টানলেও দরজা খুলতে পারেনি। সে ভয়ে আর টেনশনে ঘামতে শুরু করলো। এখন যদি সে ধরা পরে তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবে ফারিদ তাকদিয়ার। সে কি করবে কিছুই বোঝতে পারছে না।তখনি ঐ মহিলাটা কাশতে শুরু করলো,হয়তো বিষম খেয়েছে।লাজ বোঝতে পারছে না কি করবে, মহিলাটির সামনে যাবে কি যাবে না।পরক্ষণেই তার বিবেক বলল,”যা হয় হোক, আমার সামনে একটা মানুষ কে এবাবে কষ্ট পেতে আমি দেখতে পারবো।”
লাজ মহিলাটির কাছে গেল,তারপর এক গ্লাস পানি ওনার মুখের সামনে ধরতেই ওনি গপগপ করে পান করে নিলো। মহিলাটি বোঝতে পারলো না পানিটা হটাৎ দিলো কে?উপরে তাকাতেই সে দেখতে পায় এক হাসি মাখা পদ্মমুখ। লাজ ওনার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।মহিলাটি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কে?কে তুমি?”
-“আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি কোনো এক হতভাগী।”
-“এখানে কেন এসেছো?কি চাও তুমি?”
-“আমি কিচ্ছু চায়না, শুধুমাত্র এই বন্ধ রুমের ইতিহাস জানতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনি কে? আপনাকে এভাবে কেন বেঁধে রাখা হয়েছে?”
-“আমার বাঁধন গুলো একটু খুলে দিবে, ওরা আমাকে এখানে রাখতে রাখতে মেরে ফেলবে। তোমার পায়ে পরি দয়া করে আমাকে একটু খুলে দাও।”
মহিলাটি কান্না শুরু করে দিল,লাজের বড্ড মায়া হলো মহিলাটি কে দেখে। তার মনে পরে গেল তার মায়ের কথা হয়তো তারাও এভাবেই বাঁচার জন্য মিনতি করেছিল কিন্তু ওরা মানে নি। লাজের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো, সে তা মুছে মহিলাটির বাধন খুলে দিলো। মহিলাটি কিছু না বলেই লাজকে জড়িয়ে দরলো, লাজ কিছু বোঝতে পারলো না। লাজ কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই দরজার তালা খুলার শব্দ হতে লাগলো। লাজ আর ঐ মহিলা ভয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো।কি হবে এবার তাদের? তারা কি তাহলে দুজন একসাথে ধরা খাবে? ধরা খেলে কি হবে তাদের পরিনাম?
চলবে!