খেলাঘর,পর্বঃ১০,১১
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১০
লাজ খেয়াল করলো রুমে একটা জানালা,সে দৌড়ে জানালার কাছে গেল। জানালার পাশের কারখানা থেকে বের হওয়ার গেইট। কিন্তু এখন এত অল্প সময়ের মাঝে কি করে বের হবে ওরা? সে পিছনে ফিরতেই মহিলাটি চেয়ার দিয়ে বারি মেরে জানলার কাচ একদম গুড়ো গুড়ো করে ফেলে,তারপর বলে…
-“আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার এটাই একমাত্র রাস্তা তাই আর কিছু না ভেবে চুপচাপ বের হয়ে যাও!”
বলেই মহিলাটি লাজকে জানালার পাশে নিয়ে গেল। লাজ বের হয়ে গেল কিন্তু যেই মহিলাটি বের হতে নিবে তখনই রুমের দরজা খুলার আওয়াজ হয়। মহিলাটি তারাহুরো করে বের হতে নিলে কাঁচের সাথে পা লেগে অনেকটা জায়গা কেটে যায়।
এদিকে ফারিদ তাকদিয়ার রুমের ভিতরে এসে মহিলাটি কে না দেখেতে পেয়ে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। সে আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে জানালা ভাঙা,জানালার পাশে রক্ত লেগে থাকতে দেখে বোঝতে পারে এই জানলা দিয়েই ওনি পালিয়েছেন। ওনি রাগে কটমট করতে থাকেন একাই একটা চিৎকার দিয়ে উঠে।তারপর বলে,” এটা কি করে সম্ভব ও একা কি করে এখান থেকে পালাতে পারে? নাহ ও একা পালায়নি কেউ না কেউ তো ওকে সাহায্য করেছে কিন্তু কে সে? আর কিভাবে করলো?”
লাজ মহিলা টিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসলো, মহিলাটি সোপায় বসিয়ে দিয়ে নিজ হাতে ওনার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। মহিলাকে বলল,” আপনি বসুন আমি আপনার জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে আসি।”
-“না,মা।এসবের কোনো দরকার নেই।আমাকে ঐ নরক থেকে বের করেছো এটাই অনেক এখন আমি নিজেই কিছু করে নিবো।”
-“কিন্তু আপনাকে ওরা এভাবে বেঁধে রেখেছিল কেন? আপনার সাথে ওনার কিসের শত্রুতা!”
-“সে মা,অনেক লম্বা কাহিনী। তোমার শুনে তাতে কোনো লাভ হবে না।”
-“কিন্তু…”
-“আমি আসি, ভালো থেকো!”
-“এক মিনিট, আপনি এই দুর্বল শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?আপনি কোথাও যাবেন না, এই বাড়িতেই থাকবেন!”
-“এটা হয় না, তোমার বাবা মা কি মনে করবে?”
-“বাবা মা থাকলে তো মনে করবে,কিছুদিন আগেই ওদের খুন হয়েছে এই বাড়ি এখন ফাঁকা থাকে।”
-“খুন! কিভাবে আর কে করেছে?”
-“সে জানি না, আর আপনার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী না বলতে চায়লে আমি জানতেও চায়বো না কিন্তু আপনাকে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও যেতে দিবো না।”
মহিলাটি লাজ’কে জড়িয়ে ধরলো, লাজও মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর কিছু রান্না করে চেন্জ হয়ে লাজ ফারাজের বাড়ি চলে আসলো। রুমে ঢুকতেই ফারাজ ওকে টেনে দেওয়ালের মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করলো,” কি মনে করে তুমি নিজেকে?তুমি তোমার ইচ্ছে মতো যা ইচ্ছে করবে আর আমি খুজও পাবো না!”
ফারাজের কথায় সে ভয় পেয়ে গেল,তাহলে কি ফারাজ সবটা জেনে গেছে। মহিলাটিকে ও নিয়ে পালিয়েছে সেটা কি জেনে গেছে।সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি করেছি আমি?”
-“কি করেছে তুমি?”
ফারাজ লাজকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটা রিং এনে ওর সামনে দরে বলল,” এটা কি?এটা কোথায় থেকে এসেছে? এর রক্ত দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা তোমার বাবা মায়ের খুনের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে।নয়তো তুমি এটাকে এত যত্ন করে রাখতে না তাও আবার কোনো পুরুষের আংটি।”
লাজ একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,” জেনেই যখন গেছো তাহলে এত রাগ দেখানোর কি আছে?”
-“তোমাকে আমি বলেছিলাম না তোমার সাথে আমিও তোমার বাবা মা’র খুনীকে খুঁজে বের করবো তাহলে কেন একা একা গেলে। তোমার মাথায় কি এতটা কমন সেন্স নেই, ওরা তোমার ক্ষতি ও করতে পারে।তোমারও রিস্ক আছে এতে!”
-” আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে, যেখানে আমি তোমাদের মতো মানুষদের বাসায় থাকতে পারছি সেখানে ওদের ভয় পেয়ে লাভ কি।আর তাছাড়া আমি তোমার কোনো হেল্প চায় না কারন আমি তোমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না।”
লাজ কথাটা বলে ফারাজের থেকে আংটি টা নিয়ে নিলো। ফারাজ বলল,” আংটি টা আমার খুব চেনা চেনা লাগছে!কোথাও দেখেছি লাগছে!”
লাজ চমকে উঠলো,সে অধীর আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়লো,”কোথায় দেখেছো?”
-“আমার মনে পরছে না ঠিক,কিন্তু তোমাকে বলে লাভ কি তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করো না!”
-“প্লিজ ফারাজ, এমন নাটক আমার সাথে করো না। আমি আমার বাবা মা’র খুনীকে খুজে পেতে চায়। প্লিজ একটু মনে করার চেষ্টা করো প্লিজ!”
-“আমি সত্যি তোমার সাহায্য করতে চায় কিন্তু এটা মনে পরছে না আমি কোথায় দেখেছি, যখন মনে পরবে তখন বলে দিবো।”
লাজ ফারাজের কথা শুনে হতাশ হয়ে গেল।সে মুখ মলিন করে সামনে থেকে চলে গেল।
ফারিদ তাকদিয়ার নিজের রুমে পায়চারি করছিল আর ভাবছিলো,”যদি ও সবার সামনে এসে মুখ খুলে তাহলে সবশেষ হয়ে যাবে। ও মুখ খুলার আগেই ওকে আমার খুঁজে বের করতেই হবে।”
-“কার মুখ খুলার কথা বলছেন শ্বশুর মশাই?”
লাজের কথা শুনে চমকে উঠেন তিনি, পিছনে ফিরে দেখে লাজ শয়তানি হাসি দিয়ে রুমে ঢুকলো।
-“তুমি!তুমি এখানে কি করছো?”
-“আসলে আপনাকে মিস করছিলাম, অনেকক্ষণ দেখতে পায়নি তো তাই। শত্রুদের চোখে চোখে রাখতে না জানি কখন কোন নতুন চাল চেলে দেয়। কিন্তু এখানে এসে দেখি আপনি যেভাবে একা একা ভনভন করছেন মনে হচ্ছে কেউ আপনার গুপ্তকুঠির থেকে গুপ্ত রাখা কিছু নিয়ে গেছে।”
-“আব কি বলতে চায়ছো তুমি?”
-” আমি কি বলতে চায়ছি তা আমি নিজেও জানি না, কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি খুব ভয়ে আছেন। আমাকে বলতে পারেন, আপনার ভয়টা দ্বীগুন করে দিতে পারি।”
-“তুমি আমার রুম থেকে যাবে নাকি দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো।”
-“চেষ্টা তো করেছেন কিন্তু পারেননি আর কখনো পারবেন ও না। তাই এখন থেকে আপনার গা ঢাকার ব্যবস্থা করেন কারণ আপনার দিন ফুড়িয়ে আসছে।”
শেষের কথাটা চোখ গরম করে বলল লাজ, তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো। সে মনে মনে বলছে,” ওনি কার কথা বলছিলেন? কে মুখ খুললে সব শেষ হয়ে যাবে। বাই এনি চান্স ঐ মহিলাটি নয়তো? নাহ, আমাকে জানতেই হবে ঐ মহিলা টির পরিচয়।”
লাজ এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে ঢুকছিলো তখনই ফারাজের সাথে ধাক্কা লাগে। ফারাজের হাতে যত কাগজ ছিলো সব নিচে পরে যায়। ফারাজ কোনো কিছু না বলে কাগজ তুলতে লাগলো, লাজও কাগজ তুলে হেল্প করতে চায়লে। দুজনের মাথা টক্কর লাগে, লাজ আহ করে উঠে। ফারাজ রেগে বলে,”এই তোমার সমস্যা টা কি আমাকে বলবে? যখন তখন এভাবে ধাক্কা আর টক্কর মারো কেন?”
-“ওহ হ্যালো, আমার কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তোমার আছে,নয়তে কেউ কি না দেখে বসা থেকে এভাবে উঠে্”
-“আমি কি করে জানবো তুমি বসতে যাচ্ছো!”
-” সেজন্যই তো দেখে উঠবে।”
-“ধূর তোমার সাথে কথা বলায় বেকার।”
ফারাজ কাগজগুলো নিয়ে চলে গেল। লাজের চোখে একটা কাগজ পরলে,সে সেটা তুলে দেখতে পেল কোনো এক ডায়েরীর পাতা। সে সেটা না পড়ে রুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে টেবিলের উপরে রাখলো।
লাজ কাগজ রেখে আসতে যাবে তখনই টেবিলের উপর ডায়েরী টার দিকে চোখ গেল। যে ডায়েরী টা ফারাজ লুকিয়ে রাখতো।মনে হয় ফারাজ ডায়েরী টা লিখছিল তাই খুলা আর কলম রাখা। লাজ না চায়তেও চোখ গেল লেখাটার উপর। লেখা গুলো এমন ছিলো,” আজকে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম।তুমি আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছো। কিন্তু এই স্বপ্নটা কি কখনো সত্যি হবে? তুমি তো আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলে, কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে যেজন্য আমাকে এত বড় একটা শাস্তি দিলে। কেন এভাবে চলে গেলে আমাকে রেখে? আমার কথা কি তোমার একটু মনে পড়ে না মা? কেন এভাবে…..”
আর কিছু পড়ার আগেই খপ করে কেউ ওর হাত থেকে ডায়েরি টা কেড়ে নেয়। তাকিয়ে দেখে ফারাজ ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। ফারাজ শান্ত গলায় বলল,” তুমি কি জানো না, না বলে কারো ডায়েরীতে হাত দিতে নেয়।তাহলে কেন তুমি আমার ডায়েরীতে হাত দিলে।”
-“আসলে…”
-“নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল আর না হয়।”
ফারাজ ডায়েরী আলমারিতে রাখতে নিলে লাজ পিছন থেকে বলে,” তোমার মা মারা যায়নি?”
ফারাজ পিছন ফিরে বলে,” তুমি এসব জেনে কি করবে? আমি এসব কথা কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না।”
-“কিন্তু…”
-“আমি বলেছিনা এবিষয়ে আমি কিছু শুনতে চায় না।”
ফারাজ ধমকটা দিয়ে ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে চলে যায়। লাজ বোঝতে পারলো না, ওর এমন অদ্ভুত ব্যবহারের কারন কি? ওর মা মারা যায়নি তাহলে ওর মা কোথায়? আর ও ওর ডায়েরীতে ধরলে এতটা রাগ কেন হয়? কিছুতো একটা আছে কিন্তু সেটা কি?
লাজ এসব ভাবতে ভাবতে শুয়ে পরলো।
চলবে
খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১১
কয়েকটা দিন কেটে গেল, এই কয়েকদিনে লাজ ব্যাশ কয়েকবার ঐ মহিলাটির পরিচয় জানতে চেয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।মহিলাটি বার বার পরিচয় দিতে না করছে। আজকেও লাজ চেষ্টা করছে পরিচয় জানার জন্য…..
-“আন্টি প্লিজ, আপনার পরিচয় টুকু দেন আমাকে।নয়তো আমি কিছু করতে পারবো না।”
-“মানে?তুমি কি করতে চাচ্ছো?”
লাজ মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলল,যখন বোঝতে পারলো কি বলেছে তখন জিভে কামড় দিয়ে ধরলো।মহিলাটি সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,” চুপ করে আছো কেন? বলো একটু আগে তুমি কি করার কথা বলছিলে?”
-“ওহহ কিছু না।”
-“তুমি যদি আমার পরিচয় জানতে চাও,তাহলে তোমাকে সবকিছু খুলে বলতেই হবে।তা না হলে তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না।”
-“আপনি এতদিন বন্ধি ছিলেন বলেই আমাকে চিনতে পারছেন না নয়তো এই শহরের প্রায় সবাই আমাকে চিনে।লাজ,নাম টা ভদ্র শোনালেও আমি ততক্ষণ ভদ্র যতক্ষণ সামনের মানুষ ভদ্রতা পাওয়ার যোগ্য, আমাকে সবাই চিনে কারণ আমিই সেই মেয়ে যে কিনা ফারিদ তাকদিয়ার কে সবার সমানে কতগুলো চিরন্তন সত্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি সেই মেয়ে যাকে ফারিদ তাকদিয়ার অপহরণ করতে চেয়েছিল, আমি ই সেই মেয়ে যার সাথে বাবা-র অসম্মানের প্রতিশোধ নেবার জন্য মিথ্যা প্রেমের নাটক করেছিল ফারিদ তাকদিয়ারের ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার। আর আমিই সেই মেয়ে যে কিনা প্রতিশোধ আর সত্যের মুখোশ উম্মচনের জন্য ব্যাল্কমেইল করে বিয়ে করেছিল ফারিদ তাকদিয়ারের ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার’কে।”
লাজের প্রতিটা কথা শুনে ঐ মহিলাটা চমকে উঠলো।ওনি ছলছল চোখে লাজের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”তুমি..তুমি ফারাজের স্ত্রী!”
-“হুম,আমি ফারাজের স্ত্রী। স্ত্রী কম শত্রু বেশী, কারণ ওর বাবা আর ও কালো ব্যবসা থেকে শুরু মেয়ে পাচার পর্যন্ত করে, তারচেয়ে বড় কথা সে আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে।”
-“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে, ফারাজ এসব করতে পারে না। ও ওর বাবা-র মতো না!”
-” ও ঠিক কেমন তা আমি জানি, তাই আমি জেনে বোঝেই সবকিছু করবো।কিন্তু আমি এটা বোঝতে পারছি না ফারাজ কি সত্যি মেয়ে পাচার নিয়ে কিছু জানে না, নাকি ওর আমার সাথে নাটক করছে।”
-“ও নাটক করছে না, ও এসব কিছুই জানে না।”
-“আপনি এতটা বড় গলায় কি করে বলছেন? আপনি কি ওকে চিনেন নাকি!”
লাজের প্রশ্নের কি উত্তর দিবে মহিলাটি ভেবে পাচ্ছে না। লাজ মহিলাটিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবার প্রশ্ন করলো,”কি হলো?বলুন আপনি কি করে ওদের চিনেন আর আপনার পরিচয় টা কি?”
-“এসব জানতে হলে তোমাকে অনেক আগে থেকে বলতে হবে, এত সময় হবে কি তোমার?”
-“আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে, আপনি দয়া করে সবকিছু বলুন আমাকে।”
-“তাহলে শোনো, আমার নাম মাহেরা….
লাজের ফোন বাজতে শুরু করলো, তাকিয়ে দেখে আয়েরা’র কল কিন্তু এই সময় আয়েরা কেন কল দিলো বোঝতে পারলো না লাজ। সে একটু দূরে সরে কলটা রিসিভ করতেই। আয়েরা’র আতংকিত কন্ঠ ভেসে আসে,”হ্যালো, লাজ! কোথায় তুই?”
-“আমি বাসায়, তোর কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?”
-“আমার কিচ্ছু হয়নি,তুই একটু প্লিজ তারাতাড়ি আমার বাসায় আয়, আমার তোকে কিছু কথা বলার আছে।প্লিজ তারাতাড়ি আয় নয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে।”
-“আমি এক্ষুনি আসছি!”
লাজ ফোনটা রেখে ব্যাগটা হাতে নিয়ে মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,” আমার একটা জরুরি কল এসেছে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। আপনি প্লিজ সাবধানে থাকবেন, কেউ কলিংবেল চাপলে দরজা খুলবেন না। আমি আসি!”
-“সাবধানে যেও!”
লাজ আয়েরা’র বাসায় কলিংবেল চাপার সাথে সাথে আয়েরা দরজা খুলে দেয়।লাজ বলে,” কি এমন হয়েছে যে তুই আমাকে এত জরুরি ভাবে আসতে বললি?”
-“সবই বোঝতে পারবি।তার আগে তুই পানিটা খা।”
আয়েরা লাজের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।লাজ হালকা পানি খেয়ে বলল,” আমি ঠিক আছি তুই বল কি হয়েছে?”
-“তুই জানতে চেয়েছিলি না তোর বাবা মার খুনী কে?”
-“হুম,এখনো জানতে চায় আমি সেই খুনী কে?”
-“আমি জানি সেই খুনী কে?”
-“হুয়াট!তুই জানিস তাহলে আমাকে এতদিন বলিস নি কেন?”
-“আমাকে না করেছিল!”
-“কে?কে তোকে না করেছে আর কে খুনী!চুপ করে থাকবি না, বল আমাকে!”
-“ফারাজ!”
লাজ থমকে দাঁড়ায়,সে এটা কি শুনলো?ফারাজ তার বাবা মায়ের খুনী!ফারাজ তার বাবা মাকে মেরেছে তারপর তার সামনে ভালো মানুষের নাটক করছে!লাজ জিজ্ঞেস করলো,”তুই কি করে জানলি ফারাজ খুনী?”
-“আমি নিজের চোখে ওর হাতে পিস্তল দেখেছিলাম, আন্টি আমাকে ফোন করে বাসায় ডেকেছিল আমি গেইটের সামনে থাকতে গুলির আওয়াজ আসে, দৌড়ে ভিতরে এসে দেখি আঙ্কেল আন্টি নিচে পরে আছে আর ফারাজ পিস্তল হাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।”
-“তাহলে তুই আমাকে সেদিন কেন এই কথা বলিস নি?”
-“ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ফারাজ আমাকে বলেছিল এসব কথা যেন কেউ জানতে না পারে। সময় হলে সবটা নাকি খুলে বলবে।”
-“আর কি খুলে বলার বাকি আছে ওর? মেরে ফেলল তো বাবা মাকে,আর কি করবে ও বল আমাকে!”
বলেই লাজ কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরলো। আয়েরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনই জরিয়ে ধরে কান্না করছে। লাজের ফোন কল আসলো তাকিয়ে দেখে ফারাজের কল।সে প্রথমবার কল না ধরলেও ২য় বার কল রিসিভ করে শান্ত গলায় বলে,” হ্যালো!”
-“লাজ কোথায় তুমি?তোমাকে অনেককিছু বলার আচে।”
-“আমারো তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে!”
-“আচ্ছা তুমি কোথায় বলো,আমি আসছি।”
-“আসবে? আচ্ছা আসো,আমাদের বাড়িতে”
-“আমি খুব তারাতাড়ি আসছি!”
ফারাজ কল কেটে দিলে আয়েরা জিজ্ঞেস করে,” কিরে কি বলল ফারাজ?”
-“আমাকে নাকি তার অনেককিছু বলার আছে!”
-“তুই যাবি?”
-“হুম,আমি যাবো।ওর পাপের ফল আমি দিবো আর তা আজকেই!”
-“কিন্তু লাজ!”
-“ভয় পাস না,তোর কথা আসবে না এখানে, আর হ্যা আজকে আমার কিছু হয়ে গেলে তুই প্লিজ ঐ মহিলাটাকে দেখিস!”
লাজ আর কোনো কথা না বলে সোজা চলে গেল।
ফারাজ লাজদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেল লাজ উল্টো দিক হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারাজ এসেই বলতে লাগলো,”লাজ, আমি জানি না কথাটা শোনার পর তোমার কি করতে ইচ্ছে হবে কিন্তু আমি আজকে আর কোনো কিছু লুকাবো না।আজকে সব সত্য আমি তোমাকে বলবো! তোমার বাবা মা’র খুনীকে আমি খুঁজে পেয়েছি, আর সেই খুনী হলো…”
-“তুমি নিজেই!”
বলেই লাজ ঘুড়ে ফিরলো,চোখগুলো লাল লাল হয়ে আছে আর ছলছল করছে।হাতে পিস্তল দেখে ফারাজ অবাক হয়ে যায় তারচেয়েও অবাক হয়ে যায় লাজের কথাটা শুনে।সে অবাক হয়ে বলে…
-“হুয়াট!তুমি এসব কি বলছো?”
-“আমি যা সত্যি তাই বলছি,তুমি নিজ হাতে মেরেছো আমার বাবা মাকে! কি ক্ষতি করেছিল ওরা তোমার? কেন মারলে তুমি ওদের? তোমার আর তোমার বাবা-র ব্যবসার মাঝখানে কাটা হয়ে তো আমি এসেছিলাম তাহলে কেন তুমি ওদের মারলে?”
বলেই লাজ কেঁদে দিলো, ফারাজ ওর সামনে এগোতে নিলে লাজ গুলি সামনে ধরে বলে,”খবরদার তুমি যদি এক পা সামনে আগাও তলো আমি গুলি চালিয়ে দিবো!”
-“ওকে ওকে, কিন্তু লাজ একটু শান্ত হও,তোমার ভুল হচ্ছে, আমি খুনী নয়!”
-“আমি আর কোনো মিথ্যা শুনতে চায় না, আমি আর কোনে নাটক দেখতে চায় না।ভুল যখন তুমি করেছো তাহলে তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ”
লাজ গুলিটা ফারাজের সামনে ধরলো, ফারাজ বার বার বলছে তার কথাগুলো একবার শুনতে।কিন্তু লাজ কোনো কথায় কানে নিচ্ছে না,সে কাঁপা কাঁপা হাতে শুট করে নিলো। বিকট আওয়াজ করে গুলি বের হলো, লাজ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। ফারাজ বোঝতে পারলো লাজ গুলিটা করেই দিয়েছে তাই সেও চোখ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু সে কোনো কিছু অনুভব করতে না পেরে চোখ খুলে দেখে গুলি তার শরীরে লাগেনি, লাজ চোখ খুলে তাকালো।
চলবে