খেলাঘর,পর্বঃ১৬,১৭

0
2274

খেলাঘর,পর্বঃ১৬,১৭
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৬

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ফারাজের বুকে আবিষ্কার করলো লাজ। ফারাজের বুকের স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে লাজ, ইচ্ছে করছিল না উঠতে। ফারাজ লাজের চুলের সুরসুরিতে চোখ খুলে তাকালো। লাজকে নিজের বুকে দেখে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কপালের চুলগুলো সরিয়ে ভালোবাসার চুম্বন একে দিতেই লাজ চোখ খুলে তাকালো।ফারাজ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল…
-“ঘুম ভাঙ্গলো তবে?”
-“হুম!”
লাজ উঠতে নিলে ফারাজ টান দিয়ে আবার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে…
-“আরেকটু থাকোনা। খুব ভালো লাগছে আমার, মনে হচ্ছে এতদিনে কাছের মানুষ টাকে নিজের করেই পেলাম। কথা দিলাম আমাদের প্রতিটা সকাল এমন সুন্দর হবে!”
লাজ কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকলো, কিছুক্ষণ পর ফারাজ আবার ঘুমিয়ে গেল।লাজ উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ফারাজ তখনো ঘুমাচ্ছিল দেখে লাজ নিজের ভেজা টাওয়ালটা ফারাজ মুখে ছুড়ে মারলো।ফারাজ মাথা তুলে বলে….
-“এটা কি হলো?”
-“এতক্ষণ পর্যন্ত পরে পরে ঘুমালে এমনই হবে।”
-“আজকে প্রথমদিন অন্তত আজকে একটু কাছে এসে কিস করে একটু রোমান্টিক ভাবে উঠাতে পারতে তাই না!”
-“হয়ছে,এত ডং না করে সোজা উঠো।আজকে আমাদের কে একটা জায়গায় বের হতে হবে।”
-“কিন্তু কোথায়?”
-“তা আমিও জানি না,কিন্তু জানি যে করেই হোক ঐ মেয়েগুলোর খোঁজ আমাকে বের করতেই হবে?”
-“কোন মেয়েগুলো? পাচার করতে চাওয়া মেয়েগুলো কে?”
-“হুম,এখন উঠে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেন!”
ফারাজ উঠে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে লাজের দিকে এগোতে লাগে, লাজ সোফা থেকে একটা বালিশ নিয়ে ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে দৌড় দেয়৷ লাজের এমন কান্ড দেখে ফারাজ হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
লাজও মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে কিচেনের দিকে যেতে নিবে তার আগেই কলিং বেলের শব্দ হয়। দরজা খুলতেই দেখলো একজন লোক হাতে একটা পার্সেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।লাজ কে দেখে জিজ্ঞেস করলো….
-“ফারিদ তাকদিয়ার আছেন বাড়িতে?”
-“নাহ,ওনি তো মনে হয় এখন মর্নিং ওয়াকে গিয়েছেন।”
-“ওহ, ওনার নামে একটা পার্সেল ছিলো। আপনি কি হোন ওনার?”
-“ওনার ছেলের বউ।”
-“তাহলে আপনি ই ওনার পার্সেল টা রেখে দিন,ওনি আসলে দিয়ে দিবেন। নিন এখানে সাইন করে দিন!”
লাজ সাইন করে দিলে লোকটি পার্সেলটা দিয়ে চলে যাচ্ছিল তখনই লাজ দেখতে পেল পার্সেলে প্রেরকের নাম নেই।সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে…
-“এক্সকিউজ মি! এখানে তো কে পাঠিয়েছে তা লেখা নেই!”
-” যিনি পাঠিয়েছেন ওনি প্রতিবার এভাবেই পাঠায়, ফারিদ তাকদিয়ার জানে কে পাঠায় তাই নাম লেখার প্রয়োজন হয় না!”
লাজ ওনার কথা শুনে কিছুটা অদ্ভুত মনে করলো।লোকটি চলে গেলে। সে পার্সেল টা খুলে, একটা চিঠি আছে। চিঠিতে লেখা,
ফারিদ তাকদিয়ার, খুব তো সুখে শান্তি তে আছেন। ভুলে যাচ্ছেন যে আপনার কেউ একজন আছে যে কিনা আপনার সমস্ত সুখ শান্তি একদম ধূলোই মিশে দিতে পারবে। পাঁচ মাস হয়ে গেল এর মধ্যে একবার খোঁজ খবর নাও নি, দেখা করার কথা বললাম ই না। তাই বলছি যত তারাতাড়ি সম্ভব এসে দেখা করে যাও নয়তো আমি চলে আসবো তাকদিয়ার ম্যানসনে। আর আমি আসলে ঠিক কি পরিমান ঝড় উঠবে তা তুমি খুব ভালো করেই জানো।
ইতি…..”
নিচের লাইন টুকু পড়ার আগেই কেউ একজন টান মেরে চিঠিটা নিয়ে যায়। সে আর কেউ না ফারিদ তাকদিয়ার, রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে আছে লাজের দিকে। ধমকের সুরে বলল,” তোমার সাহস কি করে হয় আমার পার্সেল খুলে দেখার,!”
-“আমি সাইন করে রেখেছি তো আমার দেখার রাইট তো হবেই!”
-“সাইন করলেই কোনো রাইট হয়ে যায় না, নেক্সট টাইম থেকে আমার কোনো জিনিসে তুমি হাত দিবে না!”
একথা বলে চলে যেতে নিলেন ফারিদ তাকদিয়ার কিন্তু তার আগেই লাজ ওনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে…
-“কে পাঠিয়েছে পার্সেল টা?”
ফারিদ তাকদিয়ার থমকে দাঁড়ায়, কি জবাব দিবে মাথায় আসছে না,তাহলে কি লাজ চিঠি টা পরেছে, যদি পরে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এসব মনে মনে ভাবতে লাগলো ফারিদ তাকদিয়ার। লাজ কোনো উত্তর না পেয়ে ওনার সামনে গিয়ে বলল….
-“কি হলো?চুপ করে আছেন কেন?”
-“আমি তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়!”
ফারিদ তাকদিয়ার এতটুকু বলে চিঠিটা নিয়ে উপরে চলে গেল।লাজ মনে মনে বলতে লাগল….
-“কে পাঠালো এই পার্সেল? আর কার সাথেই বা এতট গভীর সম্পর্ক? ওনার পুরনো কোনো শত্রু নাকি বন্ধু?যেই হোক না কেন,আমাকে জানতেই হবে কে সে? আর কি তার পরিচয়?কি এমন জানে যার জন্য এভাবে ব্লাকমেইল করছে?”
পিছন থেকে মাহেরা তাকদিয়ার বলল,” কি হলো লাজ? তুমি কি এত ভাবছো?”
-“আব, না মা কিছু না। আপনি রুমে যান আমি নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আসবো।”
-” নাস্তা বানানো হয়ে গেছে,তুমি ফারাজ কে নিয়ে আসো আমি খাবার রেডী করে রাখছি!”
-“কিন্তু মা,কে বানালো খাবার? আপনি নয়তো?”
-“কেন? আমি বানালে কোনো সমস্যা নাকি? নাকি খাবারে কিছু মিশাবো ভাবছো?”
-“নাহ মা, আচ্ছা আপনি যান আমি ফারাজকে নিয়ে আসছি।”
লাজ ফারাজ কে ডাকতে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে ফারিদ তাকদিয়ারের রুম থেকে আওয়াজ আসে। গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে রেগে কথা বলছে কিন্তু কাউকে সে ঐ রুমে যেতে না দেখে লাজের একটু সন্দেহ হলো তাই সে রুমের সামনে গেল। ফারিদ তাকদিয়ার ফোনে কথা বলছে….
-“তোমাকে আমি না করেছিলাম না এভাবে হুটহাট কোনো পার্সেল না পাঠাতে!… আমি কল করি না বলে তুমি এমন করবে? তুমি জানো আজকে লাজের সামনে পরে গেছে চিঠি টা। যদি ও পড়তো তাহলে কি হতো একবার ভেবে দেখেছো।….আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আমি তোমার সাথে খুব শীগ্রই দেখা করবো।…আর হ্যা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে করে তোমাকে,আমাকে আর ফারিন কে সমস্যায় পরতে হয়।….নিজেকে খুব বেশি চালাক মনে করলে ফল কেমন হয় তা তুমি ভালোই জানো।রাখি বাই!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথা বলা শেষ করে ফোন কেটে দিলো। পিছন ঘুরার আগেই লাজ ঐখান থেকে সরে যায়। নিজের রুমে এসে ভাবতে লাগলো….
-“এটা কোন নতুন রহস্য আমার সামনে আসছে। আর যায় হোক এটা স্পষ্ট ঐ ব্যাক্তিটা ওনার কোনো শত্রু না আবার মিত্র ওনা। কারন শত্রু হলে ফারিদ তাকদিয়ারের কথা মানতো না, মিত্র হলে এভাবে ব্লাকমেইলও করতো না।আমাকে এই বিষয়টা মাথায় রাখতেই হবে,ফারিদ তাকদিয়ারকে চোখে রাখতে হবে।”
লাজ কথাগুলো চুপচাপ দাড়িয়ে ভাবছিলো তখনই ফারাজ একটানে দেয়ালে মিশিয়ে ফেলল। মুখটা লাজের মুখের সামনে নিয়ে বলল….
-“কি এত ভাবছো মিস চাশনি, ওহ সরি মিসেস চাশনি?”
-“ফারাজ, আমাকে ছাড়ো,আমার তোমাকে কিছু বলার আছে!”
-“হুম বলো শুনতেছি তো!”
ফারাজ লাজকে ঘুড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে পেটে হাত দিয়ে কথাটা বলল।লাজ একটু কেঁপে উঠলো, ফারাজ লাজের পেটে হাত দিয়ে ঘষতে লাগলো আর ঘাড়ে একটা কিস করে দিলো। লাজ চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে নিলো। লাজকে সামনে ঘুড়িয়ে ঠোঁটের দিকে এগোতে নিলে লাজ বলে….
-“ফারাজ!প্লিজ আমার কথাটা শুনো!”
লাজের কথাতে ফারাজের ধ্যান ভেঙে গেল। মুখটা মলিন হয়ে গেল।লাজ বোঝতে পারলো ফারাজ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না,মনের আশাটা নষ্ট হয়ে গেল। লাজ ফারাজের সামনে গিয়ে বলল…
-“ফারাজ,আমি জানি তোমার এখন খুব কষ্ট লাগছে কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় নেই। আমাকে আগে তোমার বাবার কাজের ফল দিতে হবে তারপর এসব সংসার নিয়ে ভাববো।”
-“হুম,বলো কি বলতে চায়ছিলে?”
লাজ একটা শ্বাস ফেলে পার্সেলের ঘটনাগুলো আর ফারিদ তাকদিয়ারের ফোনে বলা কথাগুলো বলল। সবটা শুনে ফারাজ বলল,”তারমানে এখন থেকে বাবার দিকে নজর রাখতে হবে।”
-“হুম,কিন্তু তার আগে আমােরকে আমার বাবা মা’র খুনীর কাছে যেতে হবে। ও যদি একবার হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলে অনেক মুশকিল হয়ে যাবে।”
-“তাহলে আজকে আর ঐ মেয়েদের খুঁজে যাবে না!”
-“যাবো,কিন্তু আগে খুনীর কাছে যেতে হবে। আচ্ছা চলো মা ডাকছে, খাবার খেতে।”
-“হুম, এই খাবারইতো খেতে হবে এখন ঐ খাবার তো আর পাবো না।”
ফারাজ শয়তানি করে এই কথাটা বলে একটা শ্বাস ফেলল। লাজ চুপিচুপি ফারাজের সামনে গিয়ে তার গালে হুট করে কিস করে বসলো। ফারাজ অবাক হয়ে তাকালে লাজ বলে…..
-“এখন এতটুকুই, সময় হলে সব পেয়ে যাবেন!”
-“তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি।”
-“আচ্ছা, আগে যা হয়েছে তা বাদ দাও, এখন থেকে আর কোনো মেয়েকে চোখেও তুলে তাকাবে না।”
-“আচ্ছা!”
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে হাতে হাত ধরে খেতে গেল।

চলবে

খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৭

লাজ আর ফারাজ বের হলো লাজের বাবা মা’র খুনীর উদ্দেশ্যে,ফারাজ ঐ লোকটার বাড়ি চিনে। ফারাজ ড্রাইভ করছে লাজ তার পাশে বসে। সারাটা রাস্তা টুকটাক কথা বলেই গেল। লোকটির বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেল অনেক লোক। এত ভীড় কেন কিছুই বোঝতে পারলো না। ভীড় ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে ওরা যা দেখলো তাতে তারা চমকে উঠলো।
যে লোকটি লাজের বাবা মা কে মেরেছিল সেই লোকটিই লাশ হয়ে শুয়ে আছে। পাশে অল্প বয়সী মহিলা কান্না করছে। ফারাজ তার পাশে দাড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ লোককে জিজ্ঞেস করলো….
-“ওনি কিভাবে মারা গেলেন?”
-“গতকাল রাতে কতগুলো লোক এসে কাজের কথা বলে নিয়ে যায়,মাঝরাতে একটা গাড়ি থেকে ওর মৃত্যু দেহ ফেলে রেখে চলে যায়।”
লোকটির কথা শুনে ফারাজ আর লাজ একজন আরেকজনের দিকে তাকায়, বোঝতে পারে এটা কার কাজ। তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, লাজ বলল….
-“নিজের আসল চেহারা বেড়িয়ে আসার ভয়ে মেরে ফেলল লোকটিকে!”
-“হুম,কিন্তু আমি একটা জিনিস বোঝতে পারছি না লোকটি তো বাবার অনেক কাছের ছিলো তাহলে কেন মারলো?”
-“তুমিও তো ওনার কাছের ছিলে, ওনার রক্তের ছিলে, তাহলে তোমাকে কেন ব্যবহার করলো?”
লাজের কথা শুনে ফারাজ চুপ হয়ে লাজের দিকে তাকায় লাজ আবার বলতে শুরু করে…
-“আসলে তোমার বাবার কাছে আপন-পর,রক্তের কাছের-দূরের এসবের কোনো মানে নেই। ওনি যখন যাকে যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন সেটাই মানে,যখন ব্যবহার শেষ তখন তাকেও শেষ করে দেয়।যায় হোক, চলো বাসায় যাওয়া যাক।”
-“হুম!”
ফারাজ গাড়ি ঘুড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হবে ঠিক তখনই লাজ দেখলো ফারিদ তাকদিয়ার নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে কোথায় যাচ্ছে।লাজ বলল…
-“তোমার বাবা নিজে গাড়ি চালিয়ে কোথায় যাচ্ছে?”
লাজের কথা শুনে ফারাজ তাকিয়ে দেখে সত্যি তার বাবা নিজে ড্রাইভ করছে। সে অবাক হয়ে বলে..
-“বাবা এই সময় বাহিরে? ওনি তো এইসময় ইউগা করেন তাহলে?”
-“কিছু তো একটা আছেই,নাহলে ওনি তো নিজে ড্রাইভ করতেন না। ফারাজ ওনাকে ফলো করো!”
লাজের কথা মতো ফারাজ গাড়ি ঘুড়িয়ে নিলো, ফারিদ তাকদিয়ার কে ফলো করতে লাগলো। প্রায় ১ ঘন্টা ফলো করার পরও যখন ফারিদ তাকদিয়ার কোথাও থামছেন না তখন ফারাজ জিজ্ঞেস করলো…
-“কোথায় যাচ্ছে বাবা? এতদূরে আসলো তাও কোনো ড্রাইভার আনলো না!”
-“যেখানেই যাচ্ছে, আমার কাছে কেন জানি লাগছে ঐ লোকটার কাছে গেছে।”
-“কোন লোকটা?”
-“আরে বাবা,সকাল বলছিলাম না!”
ফারাজ কিছু প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই সামনে তার বাবার গাড়ি থেমে গেল। ফারাজ একটু দূরে থেকেই ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেল। একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল ফারিদ তাকদিয়ার, লাজ আর ফারাজ গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে ভালো করে দেখলো। ফারাজ বলল,”ভিতরে যাবে?”
-“ভিতরে যাবো তো অবশ্যই কিন্তু তার আগে দেখো কোথাও কোনো সিকিউরিটি গার্ড আছে কিনা?”
-“নাহ,এখানে কোথাও কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই।”
-“তাহলে চলো যাওয়া যাক!”
ফারাজ আর লাজ চুপিচুপি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। খুব সর্তকতার সহকারে দুজন দুই সাইড হয়ে লুকিয়ে পরলো। কারন ড্রয়িং রুমেই ফারিদ তাকদিয়ার বসে আছে।
-“তো তুমি তাহলে আজকেই চলে এসেছো?”
একজন মহিলা কথাটা বলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো। ফারিদ তাকদিয়ার বসা থেকে উঠে বলল,”তুমি এমন এমন কান্ড করো যার জন্য আমাকে আসতেই হয়!”
-“আর তোমাকে আনার জন্যই আমাকে এমন এমন কান্ড করতে হয়!”
-“এত কথা বলার সময় আমার কাছে নেই, কি জন্য ডেকেছো বলো?”
-“এত তারা কিসের? শুনেছি মাহেরা নাকি ফিরে এসেছে তাহলে তারজন্য কি প্রেম জেগে উঠেছে?”
-“চন্দ্রা! তুমি ঠিক ভালো করেই জানো ও কে আমি ভালোবাসি কি না!”
-“হুম, তাহলে কেন আমাকে তুমি তোমার ২য় স্ত্রী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছো না? কেন এতদিনের সম্পর্ক সবার সামনে আনছো না? কেন ফারিন কে তোমার মেয়ে হিসাবে সবার সামনে পরিচয় দিচ্ছো না!”
মহিলা’র কথাতে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় ফারাজ আর লাজ। তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি শুনছে এরা? ওরা এসব কল্পনাও করতে পারেনি, ওরা অন্যকিছু আইডিয়া করেছিল। ফারিদ তাকদিয়ার বলে,” এর জবাব তোমাকে আমি আগে আরো বহুবার দিয়েছি!”
-“আমি হিন্দু বলে? আমি হিন্দু হওয়ায় যদি এতটাই সমস্যা থাকতো তাহলে সম্পর্ক কিভাবে করে ছিলে? রাতের পর রাত কাটানোর সময় মনে ছিলো না এই কথা? ফারিন যখন পেটে ছিলো তখন মনে পরেনি এই কথা!”
-“তখন মনে করেছিলাম মাহেরা কে মেরে তোমাকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিবো কিন্তু মাহেরা যে তলে তলে জল খেয়েছে সেটা কি করে জানতাম?”
-“হুম কিন্তু এখন কি সমস্যা? মেনে নাও আমাকে!পরিচয় দাও তোমার স্ত্রী হিসেবে!”
-“অসম্ভব, সামনে নির্বাচন আর মাত্র কয়েকদিন পর মনোনয়ন দিবে আর এখন যদি এসব হয় তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে!”
লাজ ফারাজকে ইশারা করে ফারাজের ফোন দিতে কারন লাজ আজকে তারাহুড়া করে নিজের ফোন রেখে এসেছে।ফারাজ ফোন ফ্লোরে মিশিয়ে লাজের দিকে ধাক্কা মারে। লাজ ফোনটা নিয়ে কতগুলো ছবি তুলে ফেলে ফারিদ তাকদিয়ার আর চন্দ্রা মহিলার।চন্দ্রা বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ফারিন তোমাকে কিছু বলতে চায়,ফারিন ফারিন, তোমার বাবা এসেছে।”
মহিলার ডাক শুনে একটা ১৭-১৮ বছর বয়সী মেয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নাম তারপর ফারিদ তাকদিয়ার’কে জড়িয়ে ধরে,” বাবা, তুমি এতদিন আসোনি কেন?”
-“এখন তো অনেক কাজের ঝামেলা তাই আসতে পারিনি!”
-“বাবা, আমাকে কবে তোমার মেয়ে বলে পরিচয় করাবে,আমার বান্ধবীরা সবাই অনেক কথা বলে। প্লিজ বাবা তারাতাড়ি আমাদেরকে সবার সামনে আনো”
-“আব, আনবো আনবো। এখন বলো কি লাগবে তোমার?”
এমন আরো অনেক কথায় হলো তাদের মাঝে। লাজ আর ফারাজ আগের মতো চুপিচুপি বের হয়ে আসলো বাড়ি থেকে। ফারিদ তাকদিয়ার বের হওয়ার আগে আগেই ওরা সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। বাসায় এসে ফারাজ সোজা নিজের রুমে চলে গেল, লাজও তার পিছু পিছু আসলো। লাজ বোঝতে পারলো ফারাজের কি হয়েছে সে তার সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাজ বলল,”প্লিজ লাজ, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!”
-“ফারাজ, তুমি যদি এটা ভেবে কষ্ট পাও, তোমার বাবা এতটা নিচ কি করে? তাহলে তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছো, কারন ওনি এর থেকেও আরো নিচু।”
-” আমি সেটা ভাবছি না, ভাবছি ঐ মেয়েটার কথা। যে মেয়েটা বাবার পরিচয় কোনোদিনও পাবে না। আমি আমার বাবা’কে এতটুকু চিনে গেছি। ওনি কখনোই সবার সামনে ওদের আনবে না।”
-” কিন্তু তোমার বাবা তাহলে ওদের এভাবে রেখেছে কেন? ইচ্ছে করলেই তো ওদের মেরে ফেলতে পারতো!”
-“কারন ওদের মারলে, ফারিদ নিজের ক্ষতি নিজেই করবে।”
পিছন থেকে মাহেরা তাকদিয়ার কথাটা বলল। লাজ কিছুটা চমকে গেল ওনাকে দেখে কারন ওনি কি করে জানলেন এসব কথা। মাহেরা তাকদিয়ার তাদের সামনে এসে বলল,” আমি জানি তোমরা চন্দ্রা এর কথা বলছো? চন্দ্রাই হলো সেই মহিলা যার সম্পত্তির প্রতিও লোভ ছিলো ফারিদের, লিখেও নিয়ে ছিলো। কিন্তু চন্দ্রা ও খুব চালাক, সে তাদের কিছু ক্লোজ ছবি তার কিছু ফ্রেন্ড আর রিলেটিভস দের কাছে পাঠায় আর তাদের বলে রাখে ওর যদি কিছু হয় তাহলে যেন সবকিছু ফাঁস করে দেয়। সেই ভয়েই ফারিদ কিছু করছে না।”
-“কিন্তু এখন আমি তো করবো!”
লাজ কথাটা বলে একটা শয়তানি হাসি দেয়।ফারাজ জিজ্ঞেস করে,”কি করবে তুমি?”
-“তোমার বাবা-র নতুন ব্যান্ড বাজাবো আমি!”
-“মানে?”
-“মানে হলো, কিছু একটা ধামাকা হতে যাচ্ছে!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here