খেলাঘর,পর্বঃ১৮,১৯

0
2449

খেলাঘর,পর্বঃ১৮,১৯
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৮

সকাল সকাল ফারিদ তাকদিয়ার রাগে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলছে। ওনার চিৎকার এতটাই ভয়ংকর ছিলো যে বাড়ির সব গার্ড এক হয়ে গেল। মাহেরা তাকদিয়ার আর ফারাজ দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।ফারিদ তাকদিয়ার রাগে একের পর এক জিনিস ভেঙে যাচ্ছে। লাজ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,”জিনিস ভাঙ্গছেন? ভাঙ্গেন কিন্তু মনে রাখবেন ২০% কিন্তু আমাদের!”
ফারিদ তাকদিয়ার লাজকে একটানে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে জোরে হাত চেপে বলল,” তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে!”
-“আমাকে তো আপনি শাস্তি দেবার মতো কিছু বাকি রাখেননি। আপনি আমার থেকে আমার বাবা মাকে কেড়ে নিয়েছেন। এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে একটা মেয়ের কাছে বলতে পারেন?”
লাজ ছলছল চোখে কথাটা বলল। লাজকে জোরে ধাক্কা দিতেই ফারাজ ওকে ধরে ফেলে। ফারাজ জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে? সকাল সকাল এত চিৎকার করছো কেন?”
-“ওনাকে আর জিজ্ঞেস করে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিও না, আমিই বলছি!”
লাজ কথাটা বলে ফারিদ তাকদিয়ারের শয়তানি হাসি দিলো। সবার সামনে টিভি টা চালু করলো। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে….
-“বিগত কয়েকদিন ধরেই বার বার বিতর্কের সামনাসামনি হচ্ছেন এমপি ফারিদ তাকদিয়ার, আর ওনাকে বার বার বিতর্কের সম্মুখীন করছেন ওনার ই পুত্রবধূ, এবারের বিতর্কের উৎস হলো এই দুটো ছবি( একটা ছবিতে চন্দ্রা ফারিদ তাকদিয়ারের হাতে ধরে আছে আরেকটা ছবিতে ফারিদ তাকদিয়ার,চন্দ্রা আর তাদের মেয়ে ফারিন ফারিদ তাকদিয়ার কে জড়িয়ে আছে) এখন প্রশ্ন হলো কারা ওরা? কি ওদের পরিচয়? কেনই বা এতটা গভীর দেখাচ্ছে ওদের? সবার সামনে উত্তর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে জনগনের পক্ষ থেকে তার পুত্র বধূ লাজ, ওনার কাছে এসবের কারণ জানতে চায়লে ওনি বলেন, তিনি চান ওনার শ্বশুর মশাইয়ের কাছ থেকে সবটা জানতে।”
এতটুকু দেখানোর সাথে সাথে ফারিদ তাকদিয়ার রাগে টিভি তুলে আচার মারে। টিভি ভেঙে গুড়ো হয়ে যায়। লাজ শয়তানি হাসি দিয়ে ওনার সামনে গিয়ে বলে,” এভাবেই আপনাকেও ভেঙে যেতে হবে মিস্টার ফারিদ তাকদিয়ার! প্রস্তুত হোন!”
ফারিদ তাকদিয়ার কিছু বলার আগেই লাজ সেখান থেকে সরে যায়। সাথে সাথেই কতগুলো প্রেসের লোক বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরে। তারা এসে ফারিদ তাকদিয়ার কে প্রশ্ন করে,”আপনার সাথে ঐ মহিলা, মেয়ের সম্পর্ক কি? এতটা ক্লোজ হয়ে আছেন কেন? কি হয় ওরা আপনার?” এসব আরো প্রশ্ন ওনাকে করা হয় ওনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উপরে চলে যায়। গার্ড’রা প্রেসের লোকদের বাহিরে নিয়ে যায়।

লাজ এসে ফারাজকে ফিসফিস করে বলে,” আমাদের কে এখনই বের হতে হবে। নয়তো তোমার বাবা ঐ মহিলাকে আর মেয়েকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিবে।”
-“হুম তারাতাড়ি চলো!”
ফারাজ আর লাজ দৌড়ে বের হয়ে গেল। ঐ বাড়ির থেকে কিছু দূর থাকতেই দেখতে পেলো, চন্দ্রা আর ফারিন কে কতগুলো লোক গুলি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফারাজ জোরে গাড়ি টেনেও ওদের কে আটকাতে পারলো না। লাজ বলল,” ফারাজ ওদেরকে ফলো করে, ওদের কিছু হতে দেওয়া যাবে না। তুমি ওদের কে ফলো করো!”
ওদের কে ফলো করতে করতে ওরা একটা পুরনো বাড়িতে আসলো। বাড়িটা একটা ভাঙা বাড়ির মতো দেখা যাচ্ছে। ওরা ভিতরে গেলে ফারাজ বাড়ির পিছনে গাড়ি রেখে লাজ কে নিয়ে চুপিচুপি ভিতরে যায়। ফারিন ভয়ে কান্না করছে আর বলছে,” মা এরা কারা?আমাদের কে এখানে কেন নিয়ে এসেছে?”
ওর মা বলল,” এগুলো সব তোর বাবা-র কাজ। আজকের সকালের নিউজের জন্য ও এমন করছে।”
-“একদম ঠিক ধরেছো!আমি তোমাদেরকে এজন্যই এখানে এনেছি যাতে করে তোমাদের কে লাজ আর ফারাজ খুঁজে না পায়!”
ফারিদ তাকদিয়ার ভিতরে ঢুকে কথাটা বলল। ফারিন কান্না করে বলল,”বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিতে বলো।”
-“ওহ মাই ডেয়ার, তোমার কষ্ট হচ্ছে। এই তোরা একটু ওকে আদর করে দে তো!”
বলতেই কতগুলো লোক ওকে দরি দিয়ে উপরে তুলে ফেলল।তাতে ফারিন আরো ভয় পেয়ে চিৎকার করতে লাগলো। চন্দ্রা বলে,”প্লিজ ফারিদ,ওকে ছেড়ে দাও,তোমার যা করার আমাকে করো ওকে ছেড়ে দাও।”
-“ছেড়ে তো দিবোই কিন্তু এভাবে না মৃত্যু!”
বলে গুলি টা বের করতেই বাড়ির সমস্ত আলো নিভে যায়। তার কারণ লাজ মেইনসুইচ অফ করে দিয়েছে। ফারাজ পাশ থেকে একটা ছুড়ি নিয়ে দড়ির এক প্রান্ত কেটে ফেলে। ফারিন নিচে পরতেই লাজ ওর মুখ চেপে ধরে। চন্দ্রার হাত খুলতে যাবে তখনি একটা গুলি এসে চন্দ্রার বুকে লাগে আর বাড়িতে আলো চলে উঠে। ফারিদ তাকদিয়ারের সামনে ভেসে আসে লাজ আর ফারাজের মুখ। নিজের মা কে চোখের সামনে গুলি করতে দেখে লাজের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে উঠে ফারিন। ফারিদ তাকদিয়ার বলে,”তাহলে আজকে এক সাথে সবগুলো শয়তানের শেষ হবে!”
-“লাজ তুমি ফারিনকে নিয়ে বাহিরে যাও,আমি আসছি।”
লাজ বের হতে যাবে কিন্তু ফারিনকে বের করতে পারছে না। সে বার বার বলছে,”নাহ, আমি আমার মাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। কোথাও না!”
লাজ ওকে টেনে নিয়ে বের হতে যাবে তার আগেই কতগুলে লোক ওদের সামনে চলে আসে। লাজ নিজের সেফটির জন্য রাখা পেপার স্প্রে বের করে ওদের দিকে ছুড়ে মারে। ওরা আর কিছু দেখতে না পেলে লাজ ফারিনকে নিয়ে চলে বের হয়ে পরে। ফারিদ তাকদিয়ার ফারাজকে বলে,” এখনো সময় আছে তুই ওদের দল থেকে সরে আয়। তুই আমার ছেলে, আমার বিপক্ষে যেতে পারিস না। তুই তো জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি!”
ফারাজের মুখটা মলিন হয়ে গেল। সে ছলছল চোখে নিজের বাবা’র দিকে তাকালো। ফারিদ তাকদিয়ার দু হাত মেলিয়ে ওকে ইশারা করলে ফারাজ দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে।
বাপ ছেলের এমন মুহুর্তে ফারিদ তাকদিয়ারের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তার কারন ফারাজ নিজের হাতে থাকা ছুড়িটা ওনার পেটে বসিয়ে দিয়েছে। ফারিদ তাকদিয়ার কে এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়৷ তারপর বলে,” আমি কখনোই তোমার পক্ষে ছিলাম না ছিলাম ভালোর পক্ষে।তাই তোমার দলে ফিরে যাবার প্রশ্নই আসে না।”
-“তুই ছেলে হয়ে নিজের বাবা’র সাথে বেইমানি করলি?”
-“এটাকে যদি বেইমানি বলা হয় তাহলে তোমার প্রতিটা কাজ কি? আমার মা’র সাথে করা কাজ, ফারিন আর ফারিনের মা’র সাথে করা কাজ। জানি না আর কার কার সাথে বেইমানি করেছো। কিন্তু আমি বেইমানি করিনি, নিজ হাতে নিজের বাবা’র ভুলের শাস্তি দিলাম।”
ফারাজ এতটুকু বলে নিজের চোখের পানি মুছে সেখান থেকে বের হতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে গুলি করে ফারিদ তাকদিয়ার। কিন্তু গুলি টা ফারাজের গায়ে লাগার আগেই চন্দ্রা এসে তার সামনে দারায় যার ফলে গুলিটা ওনার গায়ে লাগে। ফারাজ দৌড়ে চন্দ্রা কে ধরলে আবারো গুলি করতে চায় ফারাজ কিন্তু কোনো বুলেট না থাকায় গুলি করতে পারেনি। ফারাজ ওনাকে কোলে নিয়ে বললেন,”এটা কি করলেন আপনি? আপনি আমার জন্য কেন এমন করলেন?”
-“আমি এমনিতেও মরে যেতাম তাই ভাবলাম মরার আগে নিজের কিছু পাপ কমিয়ে যায়। আমার শয়তানি প্লানের জন্য তোমার মা’র সাথে এমন খারাপ করছে। প্লিজ ওনাকে বলো আমাকে মাফ করে দিতে, ওনার সংসার নষ্ট করে আমি নিজেও করতে পারিনি। আমার সময় শেষ হয়ে আসছে, তুমি আমাকে কথা দাও, ফারিন কে তুমি তোমার নিজের বোনের মতো করে দেখবে, কখনো কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। কথা দাও ফারাজ! আমার ভুলপর শাস্তির কোনো আচড় ওকে দিবে না কথা দাও!”
-“কথা দিলাম, আমি কোনোদিন….”
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই চন্দ্রা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। নিথর দেহ হয়ে গেল তার, সে কি করবে কিছু বোঝতে না পেরে পুলিশকে কল করে এই জায়গার এড্রেস দিয়ে সে বেড়িয়ে পরে। বাহিরে আসতেই ফারাজের শরীরে রক্ত দেখে লাজ জিজ্ঞেস করে,”তোমার শরীরে রক্ত কেন? কি হয়েছে তোমার?”
-“কিছু হয়নি!”
-“আমার মা কোথায়? মা বের হচ্ছে না কেন?”
ফারিন কথার কোনো উত্তর ছিলো না ফারাজের কাছে। সে শুধু চুপচাপ ফারিন কে জড়িয়ে ধরে। ফারিন বোঝতে পারে এই জড়িয়ে ধরার মানে সে কান্নায় ভেঙে পরে। লাজ জিজ্ঞেস করলো,” তোমার বাবা কোথায়?”
-“মরে গেছে!”
-“মানে কি বলছো তুমি?”
-“ঠিকই বলছি, আমি নিজ হাতে ওনার পেটে ছু্রি বসিয়ে দিয়েছি!”
-“এটা কি করলে তুমি? এখন যদি এগুলো জানাজানি হয় তাহলে পুলিশ তোমাকে দরে নিয়ে যাবে।”
-“আমি নিজেই পুলিশকে এ বাড়ির এড্রেস দিয়ে দিছি!”
-“তুমি পাগল হয়ে গেছো? এখন ওরা তোমাকে ধরে নিবে।”
-“কে খুন করেছে তা এখনো জানাজানি হয়নি।এখন কথা না-বাড়িয়ে চলো এখান থেকে।”
লাজকে টেনে গাড়িতে তুলল।ফারিন কে চোখে ইশারা করলে সেও গাড়িতে উঠে বসে।

চলবে

খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৯

দুদিন হয়ে গেল, ফারিদ তাকদিয়ার মারা যায়নি। সেদিন পুলিশ যদি ঠিক সময় মতো না পৌঁছাতে পারতো তাহলে হয়তো মারায় যেত। আজকে ফারিদ তাকদিয়ার কে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। বাসায় এসেই লাজদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। কিছুক্ষণ পর কতগুলো প্রেসের লোক আসলো।সাথে একজন পুলিশ অফিসারও ছিলো।পুলিশ অফিসার একে একে সবকিছু জিজ্ঞেস করতে লাগলো ফারিদ তাকদিয়ার কে…….
-“স্যার,আপনি এখন কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু সুস্থ আছি।”
-“আচ্ছা, দুদিন আগে আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে আমাদের কিছু জানার ছিলোআপনার থেকে।”
-“হুম, কি জানতে চান বলুন!”
-“আপনি ঐখানে কি করছিলেন? তাও আবার ভাইরাল হওয়া সেই মহিলাটির সাথে? আর আপনাকে কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলে? কে ঐ মহিলাটিকে হত্যা করেছে।”
-“আসলে প্লান টা ঐ মহিলাকে মারার জন্য করা হয়নি করা হয়েছিল আমাকে মারার জন্য। ঐদিন সকালে আমার কাছে কল আসে, মহিলাটিকে কেউ দরে নিয়ে গেছে। আর আমি যদি ঐখানে না যায় তারা মহিলাটিকে মেরে দিবে। আমি আর কিছু না ভেবে মহিলাটির কথা ভেবে ছুটে গিয়েছিলাম।কিন্তু কি করে জানতাম গেলে এমন হবে। আমাকে মারার জন্য গুলি করলে ভুলবশত মহিলাটি সামনে চলে আসে। আর গুলি দুটো ওর গায়ে লাগে।”
-“তাহলে আপনার গায়ে ছুড়ি কে বসালো?”
-“আমি যখন মহিলাটিকে হসপিটালে নেবার জন্য চেষ্টা করছিলাম তখন ওরা আমাকে আগাত করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ওরা মনে করে আমি মারা গেছি। তাই তারা দ্রুত ঐখান থেকে বের হয়ে পরে।”
-“তাহলে আপনার ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার কি করে জানলো আপনি ঐখানে বিপদে আছেন?”
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে ফারাজ একটু ভয় পেয়ে যায়। শয়তানি হাসি দিয়ে ফারিদ তাকদিয়ার বলে,”আসলে আমিই ওকে স্পেশাল ডায়াল কলে রেখেছিলাম। যার ফলে জ্ঞান হারানোর আগে আমি সহজেই ওকে কল করতে পারি।”
-“কিন্তু একটা জিনিস কিন্তু এখনো খটকা খেয়ে আছে। ঐ মহিলার সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?”
-“আসলে মহিলাটি আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো করে দেখতো,মহিলাটির একটি মাত্র ভাই ছিল তাকে কতগুলো গুন্ডা মেরে ফেলে। এরপর বিচার চায়তেই আমার কাছে আসে, সেখান থেকেই ওনি আমাকে ভাইয়ের মর্যাদা দেয়। এজন্য ওর মেয়ে ফারিনকেও আমার দায়িত্বে রেখে গেছে মরতে মরতে। তাই না মা!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাটা বলে ফারিনের দিকে তাকালে ফারিন ভয়ে লাজের রুমে চলে যায়। লাজও ওর পিছু পিছু দৌড়ে যায়।
ফারিদ তাকদিয়ার কে আবারো প্রশ্ন করে,” তাহলে আমরা এই কেইস নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়?”
-“নাহ,এটা নিয়ে কোনো কাজ করার দরকার নেই। যা হবার হয়ে গেছে। কিন্তু আমি সরকারের কাছে এটাই অনুরোধ করবো আমার আর আমার আপন জনের সুরক্ষা’র কথা ভেবে হলেও নির্বাচন টা খুব তারাতাড়ি করা হোক!”
-“ওকে স্যার, তাহলে আমরা এ নিয়ে আর কোনো কাজ করছি না।”
তারপর প্রেসের লোকেরাও কতগুলো প্রশ্ন করলো ফারিদ তাকদিয়ার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলো আবার কতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো না।
ফারিন রুমে এসে কান্না করতে লাগলো,লাজ এসে তার কাঁধে হাত রাখলে ফারিন হাতটা সড়িয়ে দেয়। লাজ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,”তুমি কেন ওদের কে সবটা বললে না? কেন বললে না আমার মাকে ঐ ফারিদ তাকদিয়ার গুলি করেছে?”
-“সবসময় সবকিছু বলতে হয় না,কিছু কথা গোপন রাখতে হয়!”
-“তুমি!তুমি বলছো এ কথা? যে সবার সামনে এমপি কে প্রশ্ন করছিল সেই মেয়ে আজকে এই কথা বলছে? কেন বলছো? নিজের স্বামীকে বাঁচাতে?”
-“ফারিন!”
-“হুম, সেটাই! তুমি তোমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আজকে সবার সামনে মুখ খুলো নি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম।ভেবেছিলাম একমাত্র তুমিই আছো যে কিনা আমার মায়ের হত্যাকারীকে শাস্তি দিতে পারবে। কিন্তু এটা ভাবিনি নিজের স্বামীর জন্য এত সহজে সবটা মেনে নিবে।”
ফারিন কথাটা বলে কান্না করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো।ফারাজ এতক্ষণ সবটা দাঁড়িয়ে শুনছিলো,লাজ ফারিনের পিছু পিছু যেতে নিলে তার ধরে ফারাজ জিজ্ঞেস করে,” সত্যি কি তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য আজকে কিছু বলোনি?”
-“ফারাজ, এটা বিষয় না। কিন্তু তবুও এটাই এখন বিষয়!”
-“মানে?কি বোঝাতে চায়ছো?”
-“সবটা বোঝে যাবে,এখন আমাকে প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করো না!”
-“তুমি যদি আমার জন্য এসব করে থাকো,তাহলে তুমি ঠিক করোনি। ফারিন তোমাকে বিশ্বাস করেছিল তোমার ওর বিশ্বাস টা নষ্ট করা ঠিক হয়নি!”
-“ফারাজ আর যায়হোক তুমি অন্তত এসব বলো না, ফারিন ছোট এখন সে মনের অভিমানে এসব বলছে কিন্তু যখন সবটা বোঝতে পারবে তখন সে আবার আমাকে বিশ্বাস করবে। বোঝতে পারবে আমি কেন আজকে মুখ খুলিনি?কেন তার মায়ের হত্যার কথা বলিনি?”
-“তাই যেন হয়!”
-“তাই হবে,শুধুমাত্র তুমি আমার পাশে থেকো। এই খেলাঘরের সমাপ্তি খুব তারাতাড়ি হবে!”
লাজের কথা শেষ হলে ফারাজ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
রাতেরবেলা লাজ খাবার নিয়ে ফারিনের কাছে আসলো, কারণ সে আজকে সারাদিন না খেয়ে ছিল।লাজ’কে দেখতে পেয়ে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো ফারিন। লাজ খাবারটা নিয়ে ওর সামনে গিয়ে বলল,”অভিমান জমেছে আমার প্রতি?”
-“এটাকে অভিমান বলে না, এটাকে রাগ আর ঘৃনা বলে!”
-“ফারিন,তুমি আমাকে বিশ্বাস করতো? যদি করো তাহলে আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও আমি সবটা সবাইকে বলবো,শুধু মাত্র কিছু জিনিস গোছানো বাকি আছে!”
-“বিশ্বাস করি না,করতাম! এখন বিশ্বাস করতে পারছি না!”
-“ভাইকে তে বিশ্বাস করতে পারিস!”
ফারাজ কথাটা বলে রুমের ভিতরে ঢুকলো,ফারিন ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাজ ফারিনের সামনে গিয়ে বলল,”তোর মা তোকে আমার কাছে রেখে গেছে,আর বলেছে নিজের বোনের মতো করে দেখতে। আমারও কোনো বোন নেই তুই ই আমার বোন। আমি কথা দিচ্ছি তোর মাকে হত্যা করার শাস্তি লাজ ঠিকই দিবে।”
-“তুমি আমাকে এসব বলছো?”
-“হুম আমি বলছি,কারন আমি লাজ’কে ভালো করেই চিনি। ও যেহেতু কিছু একটা ভেবেছে তাহলে আমি বিশ্বাস করি ওর ভাবনা টা সঠিক!”
-“কিন্তু…”
-“ভাইয়া ডাকবি না?”
ফারাজের কথা শুনে ফারিন কান্না করে দেয়, দৌড়ে গিয়ে ফারাজ কে জড়িয়ে ধরে।ভাইয়া বলে ডাকে, ফারাজও ফারিনকে জড়িয়ে ধরে। লাজ একা একা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল, তারপর ওদের মাঝে গিয়ে বলে,”বাহ ভলো,ভাই বোন এক হয়ে এখন আমি লাজের কথা কারো মনেই নেই।”
লাজের কথা শুনে ফারাজ ওকে টান দিয়ে তাদের সাথে মিলিয়ে নেয়।লাজ শান্ত গলায় ফারিন কে বলল……
-“ফারিন,আমি তোমার বিশ্বাস আর তোমার ভাইয়া তোমাকে দেওয়া কথা কোনো টাই নষ্ট হতে দিবো না। সব সত্য আমি সবার সামনে আনবোই আনবো।”

সকালবেলা, লাজ গোসল করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল। ফারাজ তখনো ঘুমে, লাজের চুলের পানি ফারাজের মুখে পরলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়। হলুদ শাড়ির মাঝে লাজের সাদা পেট টা অনেকখানি দেখা যাচ্ছিল। ঘুম থেকে এমন একটা জিনিস দেখে ফারাজ কেমন একটা ঘুরে চলে গেল। সে বেড থেকে উঠে লাজের কাছে চলে গেল। পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো লাজকে, পেটের মাঝে আস্তে করে খামচে ধরে। লাজ বাঁধা দিতে নিবে তার আগেই ফারাজ ওকে কুলে তুলে নিলো।লাজ চোখ দিয়ে ইশারা করলো,”এসব কি হচ্ছে?”
ফারাজ একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে বেডে ফেলে দিলো, লাজ কি করবে বোঝতে পারছে না, ফারাজ ওর একদম কানের কাছে এসে বলল,” একটা কিস কি করা যাবে মিসেস চাশনি!”
লাজ কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল সে ভেবেছিল হয়তো অন্য কিছু হবে। সে লজ্জা পেয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল,ফারাজ এটা দেখে বোঝতে পারলো লাজের অনুমতি আছে। সে লাজ কে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর আস্তে আস্তে করে তার দিকে এগোতে লাগে, পিছন থেকে দুহাত দিয়ে চুলগুলো ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। লাজের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল,সে কিস ভেবেছিল কিন্তু এমন লিপ কিস নয়। ফারাজ পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে, লাজ প্রথম দিকে নড়াচড়া করলেও পরে আর করেনি। ফারাজ লাজের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া হালকা ভাবে দরলে লাজ এক ধাক্কা দিকে ফারাজ কে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল….
-“এটা কি হলো?কিস করবে বলেছিলে তাহলে?”
-“হুম,কিস ই করলাম!সকাল সকাল কি মিষ্টি টাই না পেলাম!”
-“ডং,এখন আমাকে আবার গোসল করতে হবে!”
-“গোসল করার কি হলো?”
-“আবার জিজ্ঞেস করে কি হলো?”
লাজ চলে যেতে নিলে শাড়ির আঁচল ধরে ফারাজ বলে,”গোসল যখন করবে তাহলে ফরজ গোসল ই করো,চলো তাহলে বাকি কাজটুকু…”
ফারাজ বাকি কথা না বলে একটা শয়তানি হাসির সাথে চোখ মারলো।
-“অসভ্য!”
লাজ শাড়ির আঁচল জোড়ে টেনে ওয়াশরুমে যেতে নিবে তার আগেই ফোন বেজে উঠে। ফোনের কাছে গিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার, রিসিভ করে কানে দেবার সাথে সাথে ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here