খেলাঘর,পর্বঃ ০৩
লেখকঃ শাওন
লাল বেনারসি পড়ে নববধূর সাজে কাজী অফিসের সামনে বসে আছে লাজ। ফারাজকে এখানেই ডেকেছে কিন্তু কাজী অফিসের কথা বলেনি, বলেছে কাজী অফিসের সামনের কফিশপের কথা। আয়েরা তার পাশে এসে বলল,”লাজ, আরেকটা বার ভেবে দেখ,তুই যা করছিস তা ঠিক হবে কি?”
-“আমার সব ভাবা শেষ, এখন আর আমি পিছু পা হবো না।”
-“কিন্তু তোর বাবা-মাকে কি জবাব দিবি?কি বলবি তুই ওদের?”
-“তা আমি নিজেও জানি না।কিন্তু আমার বিশ্বাস ওরা ঠিকই সবটা বোঝতে পারবে।এখন তুই যা নয়তো ফারাজ এসে তোকে দেখে ফেলবে। তারপর যখন সবকিছু জানতে পারবে তখন তোরও কোনো ক্ষতি করতে চায়বে,আর আমি চায় না তোর কোনো ক্ষতি হোক।তুই যা আমি সময় হলে তোকে কল করবো।”
আয়েরা লাজ’কে জরিয়ে ধরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা লাল প্রাইভেট কার এসে তার সামনে দাঁড়ালো। লাজ বোঝতে পারলো ফারাজ এসে গেছে তাই সে মুখে হাসি ফুটিয়ে গাড়ির কাছে গেল।ফারাজ বেশ অবাক হলো লাজ’কে এমন সাজে দেখে। সে চোখ থেকে গ্লাস খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলো,”এমন ভাবে সেজে আছো কেন?আজকে তোমার বিয়ে নাকি!বাহ তাহলে তোমার পাপের ফল অন্যজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছো? ওয়েট ওয়েট এত সহজে কি করে পেয়ে গেলে তাকে? কোথায় সে আমিও দেখি তাকে!”
-“আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে!”
ফারাজ অবাক হয়ে বলল,”হুয়াট! কি বলছো তুমি?”
-“যা সত্যি তাই বলছি, আজ এই কাজী অফিসে তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে!”
-“প্রেমের শোকে পাগল তো হয়ে যাওনি!আমি তোমাকে বিয়ে করবো, হাউ ফানি!”
ফারাজ কথাটা বলে হেঁসে দিল, লাজ খাম বের করে কতগুলো ছবি ফারাজের সামনে তুলে ধরে বলল,” পাগল তো তুমি হবে যখন এই ছবি গুলো আমি ফাঁস করে দিবো।”
ছবিগুলো দেখে ফারাজের কপালে ঘাম জমতে লাগলো। ছবিগুলো হলো ফারাজ আর লাজের। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ফারজের খালি গা নিচের টুকু বিছানার চাদর দেওয়া, লাজের বুক থেকে চাদর দেওয়া।আবার কতগুলোতে লাজ মুচকি হাসি দিচ্ছে!কিন্তু এগুলো লাজের ছবি তা বোঝা যাচ্ছে না কারন ছবি গুলোতে মেয়েটার মুখ ভাসেনি। ফারাজ কে বাকরুদ্ধ দেখে লাজ বলে,” এই ছবিগুলো তোমার আর আমার সেটা আমরা জানি কিন্তু পাবলিক তো জানে না! আর এখানে শুধু তোমার মুখ এসেছে, সামনে তোমার বাবা-র নির্বাচন এখন যদি এই ছবিগুলো ভাইরাল হয় আর আমিও তোমার কুকর্ম নিয়ে লাইভে যায় তাহলে তোমার বাবা-র কি অবস্থা হবে আর তোমার স্ট্যাটাস এর কি হাল হবে তা আর আমি বলতে পারবো না।”
-” তুমি কি আমাকে…”
-“হুম,আমি আপনাকে ব্যাল্কমেইল করছি! আর এখন তোমার কাছে মাত্র দুটা পথ খোলা আছে, এক আমাকে এখন বিয়ে করতে হবে দুই নয়তো সামনে আসতে যাওয়া কঠিন ঝড় সামলাতে হবে।”
-“অসম্ভব!আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা!”
-“ওকে তাহলে আজকেই ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করো, আর দেখো আমি তোমাদের কি হাল করি!”
লাজ কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে পিছন ঘুড়ে ফেলল তখনই পিছন থেকে ফারাজ বলল,” চলো!”
লাজ পিছন ঘুরে বলল,”কোথায়?”
-“কাজী অফিসের ভিতরে!”
-“বাহ, তাহলে একটু সুবুদ্ধিসম্পন্ন হলো!”
লাজ কথাটা বলে শয়তানি হাসি দিলো, ফারাজ রাগে কটমট করতে করতে ভিতরে চলে গেল।
বিয়ের শেষ করে বাহিরে আসতেই প্রেসের লোকেরা ওদের ঘিড়ে ফেলল।এটা লাজের প্লান ছিলো, আয়েরা’কে আগেই বলে রেখেছিল ওরা কাজী অফিসের ভিতরে যাবার সাথে সাথে যেন প্রেসের লোকদের ডেকে নেওয়া হয়। প্রেসের লোকেরা এক এক করে প্রশ্ন করতে লাগলো…
-“এভাবে হুটহাট করে বিয়ে করে নিবার কারণ কি?”
-“দুজনের পরিবার কি মেনে নিবে, ফারিদ তাকদিয়ার কি এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও আপনাদের এই বিয়ে মেনে নিবে?”
-“আপনার দুজন কি রিলেশনে ছিলেন? না এমন অনেক কথায় আমাদের কানে এসেছিল!”
প্রেসের লোকদের দেখে ফারাজ হতভম্ব হয়ে গেল। সে চেয়েছিল বিয়েটা গোপন রাখতে কিন্তু পারলো না, লাজের দিকে তাকাতেই লাজ একটা শয়তানি হাসি দিলো। ফারাজ ভালো করেই বোঝতে পারলো এটা ঠিক কার কাজ। লাজ প্রেসের লোকদের উত্তর দিলো,” আসলে আমাদের সম্পর্ক অনেকদিনের, আমাদের সম্পর্ক গোপন ছিল, আর এই আচানক বিয়ের কারণ কোনো কিছু না, কালরাতে ফারাজ বিয়ের প্রোপোজাল দিল আর আমি রাজি হয়ে গেলাম। আর আশা করি শ্বশুর মশাই আমাকে খুব ভালো করে মেনে নিবেন!”
-” এতকিছুর পরও কি মেনে নিবে বলে আপনার মনে হয়? আর এখন আপনি কি তাকদিয়ার ম্যানসন এ যাবেন?”
-“বিয়ের পর প্রতিটা মেয়ে সংসার সাজায়, আমিও আমার স্বামী আর শ্বশুর নিয়ে সংসার সাজাবো, হোক বা সে খেলাঘর!”
কথাটা বলেই লাজ ফারাজের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর ফারাজের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। প্রেসের লোকেরা জানতে চেয়েছিল এই খেলাঘর জিনিস টা কি?কিন্তু লাজ আর কোনো উত্তর না দিয়ে ওদের উপেক্ষা করে ফারাজের সাথে চলে গেল।
তাকদিয়ার ম্যানসনের ভিতরে ঢুকার আগেই ফারিদ তাকদিয়ার তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। লাজ বলল,” একি শ্বশুর মশাই আপনি খালি হাতে কেন? ছেলের বউকে বরণ করে ঘরে তুলবেন না?”
এম পি সাহেব ধমক দিয়ে বলল,” চুপ একদম চুপ। কিসের ছেলের বউ, আমি এই বিয়ে মানি না!”
-“আপনি এই বিয়ে না মানলেও কিচ্ছু আসে যায় না, আমরা আইনগত জামাই-বউ। আর সেটা আপনি যত তারাতাড়ি মেনে নিতে পারবেন ততই ভালো। তাই না ফারাজ!”
লাজ কথাটা শেষ করে ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে তার বাবা-র কাছে গিয়ে বলে,” দেখো বাবা, এই মেয়ে চালাকি করে এই বিয়ে করছে, আমি এই বিয়ে করতে চায়নি!”
ফারিদ তাকদিয়ার বলল,” তোর মুখ থেকে আমি আর একটা কথাও শুনতে চায়নি, তোর ঐ প্লানের জন্য আমাকে ঐদিন আরো অসম্মানিত হতে হলো আর আজকে তুই এই মেয়েকে বাড়ির বউ বানিয়ে এনেছিস?”
-“বাবা,আমার কথা টা তো শুনো!”
লাজ বলল,” এসব কথাবার্তা পরেও করতেন পারবেন শ্বশুর মশাই আমি অনেক ক্লান্ত বরন করে ঘরে তুলুন ফ্রেশ হবো আমি!”
-“কিসের বরণ, বেড়িয়ে যাও এই বাড়ি থেকে নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো!”
-“আচ্ছা তারপর ঘরে বসে বড় বড় করে ব্রেকিং নিউজ দেখবেন ‘নিজের পুত্র বধূকে বরণ না করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল এমপি ফারিদ তাকদিয়ার!কি তখন সহ্য হবে তো? তাই বলছি বারাবাড়ি না করে আগে বরণ শেষ করুন!”
ফারিদ তাকদিয়ার ঘাবড়ে গেল, লাজ ঠিক মতোই জানে এই বাপ ছেলে কে কোন দিক দিয়ে আঘাত করলে গায়ে লাগবে তাই সে সেটাই করে। ফারিদ তাকদিয়ার নিজে বরণ করলো লাজ’কে। তখন লাজের কি একটা অনুভূতি হচ্ছিল সে নিজেও জানে না।”
রাতে ফারাজের রুমে খাটের সবটা জুড়ে শাড়ি মেলিয়ে বসে আছে লাজ। ফারাজ দরজা খুলে রুমে ঢুকেই রাগে কটমট করে বলতে লাগলো,” তুমি এখানে কি করছো?খাটের মাঝে এভাবে মশারি মেলিয়ে বসে আছো কেন?”
-“এটা এখন থেকে আমারও রুম আর এটা শাড়ি, মশারী না!”
-“তো তুমি এখানে কি করছো?বাসর করতে এসেছো তাই না,দাঁড়াও বাসরের মজা বোঝাচ্ছি!”
ফারাজ নিজের শার্ট ফ্লোরে ফেলে দিয়ে খাটে আসতেই লাজ ফারাজের চোখে সেনিট্যাজার দিয়ে দেয়।ফারাজ চিৎকার করে উঠে,
-“আহ,তুমি এটা কি করলে?আমার চোখ জ্বালা করছে!”
-“এটাতো জ্বালার শুরু আরো কত জ্বালা ভোগ করতে হবে তার হিসেব নেই!কিন্তু হা ভয় পাবেন না এতে পানি দেওয়া আছে সেনিট্যাজারের পরিমান খুবই কম।”
বলেই লাজ ফারাজ কে ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। চেয়ারের নিচে থাকা দড়ি দিয়ে ফারাজ কে বেঁধে দিলো। লাজ আগের থেকেই দড়ির ব্যবস্থা করে রেখেছিল।ফারাজ বলল…
-“কি করছো কি তুমি?ছাড়ো আমাকে নয়তো কুব খারাপ হবে!”
-“যা হবে তা দেখা যাবে, খুব ইচ্ছে হচ্ছিল না বাসর করার এখন করো বাসর চেয়ারের সাথে।”
-“তোমার প্রতি তো ঐ পার্টির রাতের পর থেকেই ইচ্ছে চলে গিয়েছিল, আমি যাকে একবার কাছে তাই তাকে সেকেন্ড টাইম কাছেও আনি না।”
ফারাজের কথা শুনে লাজ অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। তারপর অনেক কষ্ট করে হাসি থামিয়ে বলল,” তোমার কি মনে হয়? ঐদিন তুমি আমাকে ভোগ করতে পেয়েছিলে?”
-“পেয়েছিলাম বলেই তো ছবিগুলো উঠলো!”
-“বোকা! একটাবার মাথায় আসলো না, রুমে যদি আমি আর তুমি ই থাকতাম তাহলে ৩য় ব্যাক্তিটা কে যে ছবি তুলেছে? আর তাকে কেই বা রুমে এনেছে!”
-“মানে!!!কি বলতে চাচ্ছো তুমি?”
-“আমার মনে হয় তোমাকে এখন সবটা বলে দেওয়ায় উচিত!তাহলে শোনো….
চলবে!