খেলাঘর,পর্বঃ ০৪
লেখকঃ শাওন
লাজ রেডী হচ্ছে, আজকে একটা পার্টি আছে। আর তাকে ইনভাইট করেছে তার বয়ফ্রেন্ড ফারাজ তাকদিয়ার। আয়েরা লাজের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি কি আগেও বলেছি এখনো বলছি এই ফারাজ কে আমার একদমই সুবিধা’র মনে হচ্ছে না!”
-“তোর সমস্যা টা কি বলবি আমাকে? তুই দেখিস নি ও ঐদিন সবার সামনে ওর বাবা-র ভুল কাজের জন্য প্রতিবাদ করেছে তার বাবাও ছিলো প্রেসের সামনে।”
-“এটাই তো সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে আমার! এমনও হতে পারে তোর বিশ্বাস পাওয়ার জন্য এমন করছে। পরবর্তী তে তোর বড় কোনো ক্ষতি করার পরিকল্পনা আছে!”
-“তুই সবসময় আজে বাজে বলিস নাতো, আমি ওকে বিশ্বাস অনেক আগে থেকেই করি তেমন কিছু পরিকল্পনা করলে অনেক আগেই করে ফেলতে। কম সময় কাটিয়েছি ওর সাথে!”
-“হয়তো তেমন সুযোগ পায়নি!”
-“আর পাবেও না,এখন এসব কথা রেখে চল দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
ফারাজের দেওয়া এড্রেসে এসে পৌচ্ছাল আয়েরা আর লাজ। পার্টিতে ঢুকে দেখতে পেল বেশ কতগুলো প্রিয়মুখ, সবাই যে যার মতো ইনজয় করছে। কেউ ড্রিংক করছে কেউ বা ডান্স করছে। লাজকে দেখতে পেয়ে ফারাজ এসে টান দিয়ে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ ডান্স করার পর একটা ফোন আসায় লাজ সাইডে চলে আসে। কল শেষ করে ফেরার সময় ফারাজের কিছু কথা ওর কানে এসে বাজে,” আজকেই হবে আমার আর লাজের সেই মধুর মিলন যেখানে আমরা দুজন মেতে উঠবো স্বর্গ সুখে।”
ফারাজ একটা গ্লাসে কি যেন একটা মিশালো তারপর লাজ’কে খুঁজতে লাগলো। লাজও নিজের চোখ সরিয়ে নিলো,ফারাজ এসে লাজকে বলল,” ড্রিংক?”
-“আব!”
-“কোনো কথা শুনবো না,আজকে তোমাকে খেতেই হবে!আরেকটা কথা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর তোমাকে অনেক ভালোবাসতে চায়।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ!”
-“তুমি হঠাৎ করে এসব কেন বলছো?”
-“ভয় হচ্ছে তাই বলছি।”
-“হটাৎ করে এমন ভয় কেন হলো? আর তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো?”
-“আমি জানি না, কিন্তু প্লিজ তোমাকে হারানোর ভয়টা আমাকে দিনদিন শেষ করে দিচ্ছে কিছু একটা উপায় বের করো যাতে এই ভয় শেষ হয়!”
-“কি উপায় বের করবো?”
-“তুমি আমার হয়ে যাও প্লিজ! শুধু মাত্র একবার কাছে আসো তারপর বিয়ের আগে কক্ষণো বলবো না!”
ফারাজের বলা কথাগুলো যেন লাজের কানে বার বার বাজছিল। ইচ্ছে করছিল কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে কিন্তু না সে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো। সে আয়েরা’র কথা গুলো ভেবে ভয় পেল তাহলে কি সত্যি কোনো পরিকল্পনা আছে তার মনে? সে শিউর হওয়ার জন্য আজকে কোনো না কোনো উপায় বের করবেই! সে ইচ্ছে করে নিজের হাতের ব্রেসলেট টা খুলে নিচে পরে গেল, সেটা ফারাজ তুলতে নিলেই লাজ গ্লাস দুটা উল্ট পাল্ট করে দেয়। ফারাজের গ্লাস চলে আসে লাজের কাছে, লাজের গ্লাস চলে যায় ফারাজের কাছে। ফারাজ ব্রেসলেট তুলে দিতেই লাজ হাতে গ্লাস নিয়ে বলে..
-“ড্রিংকস?”
-“ইয়াহ শিউর!”
ড্রিংকস শেষ করে লাজ একটু মাতাল মাতাল ভাবের অভিনয় করলো।ফারাজ লাজ’কে একটা রুমে নিয়ে যেতে লাগলো, লাজ যাবার আগে আয়েরা’কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো তাদের পিছু পিছু আসতেই। রুমের ভিতরে ঢুকে দরজা লক করে আয়েরা’কে বেডে ফেলে দিল, লাজের শরীর থেকে ওড়না সরিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলে নিচে ফেলতেই মাথা ঘুড়িয়ে ধপ করে বিছানায় পরে যায় সে। লাজ আস্তে করে চোখ খুলে দেখে ফারাজ বেহুশ হয়ে গেছে। তাই সে উঠে দরজা খুলে সাথে সাথে আয়েরা ভিতরে ঢুকে বলে…
-“তুই ঠিক আছিস?তোর কিছু হয়নি তো?ও তোকে কিছু..”
-“আরে না, আমি একদম ঠিক আছি। নিজের শার্ট খুলেই বেহুশ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ড্রিংকস এ ঘুমের কিছু ছিলো!”
-“আমি বলেছিলাম না ওর মনে নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা আছে!বের হলো তো ওর পরিকল্পনা!”
-“ও এগুলো আমাকে জিজ্ঞেস করেই করতে চেয়েছিল আমার মনে হয় না এটা আমাকে ছোট করার জন্য কিছু করছে।”
-“তুই এখনো ওকে বিশ্বাস করছিস?”
-“ভালোবাসি ওকে বিশ্বাস না করে ভালোবাসবো কি করে? এখন এক কাজ কর আমাদের কতগুলো ছবি তুল!”
-“ছবি তুলে কি হবে?”
-“তোকে যা করতে বলছি তাই কর, পরে আমি সবটা বলবো!”
লাজ বিছানার চাদর নিজের শরীরে ভালো করে পেঁচিয়ে নিজের কাপড়গুলো বুক সমান খুলে নিলো যাতে করে বোঝাতে পারে সে কাপড় ছাড়া, আর ফারাজের উপর বিছানার চাদর দিয়ে প্যান্ট একটানে খুলে ফেলে। তারপর তারাতাড়ি করে আয়েরা কতগুলো ছবি তুলে নেয়। লাজ নিজের কাপড় ঠিক করে বলে,” এখন তুই চলে যা, আর হ্যা এসব কেউ যেন জানতে না পারে এখানে কি হয়েছে?”
-“তুই কি করবি?যাবি না!”
-“নাহ, আমার আরো একটা কাজ বাকি আছে, তুই যা!সাবধানে যাবি, আর আমি আম্মু কে ফোন করে বলে দিবো আমি তোর বাসায় আছি তোকে ফোন করলে তুইও তাই বলবি!”
-“আচ্ছা! কিন্তু যা করবি একদম সাবধানে,আসি!”
আয়েরা চলে গেল,লাজ দরজা লাগিয়ে সোফায় এসে বসে পরলো। আর ভাবতে লাগলো,”কোনটা ঠিক কোনটা ভুল আমি কিছুই বোঝতে পারছি না।আমি আর এই কনফিউশান এর মাঝে থাকবো না, আমাকেই কিছু না কিছু করতে হবে, যে প্লান টা করেছি ঐটা দিয়েই দেখতে হবে আমাকে!” প্রায় তিন ঘন্টা পর, ফারাজের একটু নড়াচড়া শুরু হলো। লাজ তারাতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে গেল, শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখে ফারাজ এখনো ঘুমে আছে। তাই সে চুল মুছতে মুছতে বেডের কাছে গেল তারপর চুলের পানি একটা ফোঁটা দিয়ে দিল ফারাজের কানের ভেতর, ফারাজ থর করে কেঁপে ঘুম থেকে উঠে গেল। লাজের দিকে তাকিয়ে দেখে লাজ গোসল করে এসেছে, আর সে লজ্জামাখা হাসি দিচ্ছে।
ফারাজ জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে এভাবে লজ্জা পাচ্ছো কেন?”
-“যা করেছো তাতে কি লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক না!”
-“ওহ তাই বুঝি?”
ফারাজ টান দিয়ে লাজকে বেডে শুয়ে দেয় তারপর জড়িয়ে ধরে বলে,” তাহলে আমার লজা বেবীর লাজ ভাঙ্গতে আরেকবার করা দরকার!”
-“নাহ নাহ, আর না!”
ফারাজের কথা শুনে ভয়ে লাজের কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল, সে ফারাজকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে উঠে যায়।ফারাজ বলল,” তো আমরা কি এখনই বের হয়ে যাবো?”
-“হুম, ফ্রেশ হয়ে আসো, আমরা এখনই বের হবো আর আমাকে আয়েরা’র বাসায় ড্রপ করে দিয়ে যাবা।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে!”
ফারাজ ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলে,
-“আই লাভ ইউ লাজ!”
-“হুম, আই লাভ ইউ টু!”
………………..”এই ছিলো সেদিন পার্টির কাহিনী!”
-“তারমানে ঐদিন আমাদের মাঝে কিছু হয়নি?”
-“একদমই কিছু হয়নি!”
-“তাহলে কালকের প্রেগন্যান্সির কথাগুলো কি ছিলো তাহলে?”
-“ঐ টা তোমার আর তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা ছিলো। আমি তোমাকে আর আমার ভালোবাসাকে এতটাই বিশ্বাস করতাম যে ঐদিনের পরও তোমাকে বিশ্বাস করেছি কিন্তু কেমন জানি লাগছিল আয়েরাকে ভুল প্রমান করতেই তোমাকে কাল এসব বলেছিলাম। কিন্তু কে জানতো?আয়েরা’কে ভুল প্রমান করতে এসে নিজেই ভুল প্রমান হয়ে যাবো!”
শেষ কথাটা লাজ একটু নিচু স্বরেই বলল, তাতেই বোঝা গেল লাজ ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে।ফারাজ রাগে কিটিমিটি করতে বলল,”তারমানে তুমি আমার সাথে প্রতারনা করেছো?”
-“কি বললে? আমি তোমার সাথে প্রতারনা করেছি? নিজে আমার সাথে এত বড় একটা প্রতারানা করার পর এই কথা বলতে লজ্জা করে না! যায়হোক প্রতারনা যখন করেছো তখন তার শাস্তি তো পেতেই হবে, শাস্তি’র শুরু হলো আজকের এই বিয়ে দিয়ে!”
-“কিসের বিয়ে মানি না আমি এই বিয়ে! আমি কালকেই তোমাকে ডির্বোস দিবো।”
-“মিস্টার ফারাজ তাকদিয়ার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত ডির্বোস দেওয়া যায় না। আর ছয় মাস পরেও তুমি আমাকে ডির্বোস দিতে পারবে না কারন আমাদের বিয়ের কাগজে এটা উল্লেখ ছিলো ১০ বছরের ভিতরে আমাদের সম্পর্কে কোনো ডির্বোস গ্রহনযোগ্য হবে না।”
-“হুয়াট!”
-“আস্তে আস্তে এত উত্তেজনা ভালো না, তুমি এতটাই ট্রেসে ছিলে যে বিয়ের কাগজে সাইন দিয়েছো ঠিকই কিন্তু একটা বার নিচের লেখা গুলো পরে দেখো নি!”
-“একটাবার আমাকে খুলো, আমি তোমার কি হাল করি তা দেখবে পরে।”
-“একটা কথা মনে রাখবে, আমি বিয়ের আগেই থানা থেকে এসেছি আর একটা ডায়েরি করে এসেছি যদি আমার কিছু হয় বা আমি অপহরন হয় তাহলে সবার আগে তোমাকে আর তোমার বাবা’কে যেন জেলে নেয়।তাই যা করবে একটু ভেবে চিন্তা করে করো কেমন?”
লাজ কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফারাজ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নড়াচড়া করতে লাগলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না। লাজ ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলো আর লাইট অফ করার আগে বলল….
-“ওহহ সরি, তোমাকে তো মোবারক জানতেই ভুলে গেছি। বরবাদ মোবারক!!”
লাজ কথাটা চোখগুলো বড় বড় আর লাল করে বলেছে,তারপর লাইট অফ করে শুয়ে পরলো।
পরদিন সকালবেলা, লাজ ঘুম থেকে উঠে দেখে ফারাজ চেয়ারে হেলে ঘুমিয়ে আছে।লাজের বড্ড মায়া লাগলো।সে একা একাই বলতে লাগলো….
-“ঘুমিয়ে থাকার অবস্থায় তোমাকে কতটা নিষ্পাপ লাগছে।একদম নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো লাগছে। কেউ কি বোঝতে পারবে তোমার এই নিষ্পাপ মুখের পিছনে একটা কতবড় খারাপ মানুষ লুকিয়ে আছে। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু তুমি?তুমি আমাকে শুধু মাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নাটক করেছো! আমি তোমার আর তোমার বাবা-র প্রতিটা পাপ কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো আর সবকাজের শাস্তি আমি দিবো! এতদিন তুমি আমার ভালোবাসা দেখেছো এখন আমার প্রতিবাদ দেখবে!’
লাজ চোখ গরম করে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়েরা’কে একটা কল করলো।আয়েরা ফোন ধরেই বলল,”তুই ঠিক আছিস তো?”
-“তুই কি সারারাত আমার টেনশনে ঘুমাসনি?”
-“বাজে কথা রেখে বল কি করলো ও তোকে?”
-“ও কি করবে আমাকে? আমিই তাকে চেয়ারে বেঁধে রেখেছি সারারাত।”
-“কিহ! ও কিছু করতে চায়নি?”
-“চোখে সেনিট্যাজার মেরে দিয়েছিলাম তারপর আর কিছু করতে পারেনি।এখন চেয়ারে হেলে ঘুমাচ্ছে।”
-“যা করবি সাবধানে করিস,তোর জন্য অনেক টেনশন হয়””
-“এখন আমার জন্য না এখন ওদের জন্য টেনচন কর।ওদের কি হাল করবো তা চিন্তা কর! আচ্ছা যায় গিয়ে শ্বশুর মশাই কে একটু টুইস্ট দিয়ে আসি।”
লাজ কথা বলা শেষ করে ফারাজ কে খুলে দিলো। তারপর এক কাপ চা বানিয়ে ফারিদ তাকদিয়ারের রুমে নিয়ে গেল।রুমের বাহিরে থেকে ডাকতে ডাকতে রুমের ভিতরে গেল…..
-“শ্বশুর মশাই শ্বশুর মশাই!”
-“কি হলো টাকি?এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?”
-“আসলে আপনার জন্য চা বানিয়ে এনেছিলাম!”
-“আমি সাত সকালে চা খায় না,নিয়ে যাও”
-“খেতে তো আপনাকে হবেই, আমি নিজ হাতে বানিয়েছি দেখেন কত টেস্ট!”
চায়ের কাপ টা ওনার সামনে ধরে নিজের দাঁতগুলো মেলিয়ে দিলো।ফারিদ তাকদিয়ার চায়ের কাপ টা নিয়ে চুমুক দিতেই থু থু করতে লাগলো। লাজ নিজের মুখ চেপে হাসছে।ফারিদ তাকদিয়ার রেগে বলল,” এটা চা বানিয়েছো নাকি লবনের সমুদ্র!”
-“আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার জন্য এই সাত সকালে মিষ্টি করে চা বানিয়ে আনবো?”
-“সেটাই তো,তোমার সাথে দেখ হওয়ার পর থেকে তুমি আমার জন্য ভালো কিছু করেছো? ধ্যাত সকালে মুখের স্বাদ টাই নষ্ট করে দিলে!”
-“এখন তো শুধু মুখের স্বাদ নষ্ট করেছি আস্তে আস্তে আপনার জীবনের স্বাদ টাও নষ্ট করে দিবো!”
লাজ কথাটা বলে ফারিদ তাকদিয়ার একদম সামনপ দাঁড়ালো।দুজন ই দুজনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে দুজন দুজনকে চোখের আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে।
চলবে!