খেলাঘর,পর্বঃ ০৫
লেখকঃ শাওন
ফারাজের ঘুম ভাঙ্গলো, সে নিজেকে চেয়ারে দেখতে পেয়ে মনে হলো কালরাতের ঘটনা। মুহুর্তেই রাগে ফাটতে লাগলো সে, এক লাথি দিয়ে চেয়ারকে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগে লাজ’কে খুঁজতে লাগলো, সবশেষে যখন কিচেনে লাজ’কে পেয়ে গেল তখন লাজের সামনে থাকা খাবারের প্লেট টা নিচে ফেলে দিলো।ফারাজ বলল,”এ বাড়ির খাবার তোমার পেটে এত সহজে তো আমি যেতে দিবো না!”
-“তা আমি ভালো করেই জানি।”
লাজ এই বলে আরেক প্লেট নিতে যাবে তখনই ওর হাত ধরে ফেলে ফারাজ।টানতে টানতে রুমে নিতে লাগলো হটাৎ করে সামনে ফারিদ তাকদিয়ার চলে আসলে লাজ উল্টো চাল চেলে দেয়। সে ডং করে বলে,” আহ ফারাজ, রাতেই তো হলো এখন আবার এভাবে টেনে কেন নিয়ে যাচ্ছো? শ্বশুর মশাই সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একটু তো লজ্জা করো।”
বলতেই ফারাজ হাত ছেড়ে দেয়।নিজের হাত টা ভালো করে দেখে লাজ বলল,”শ্বশুর মশাই এসব কিছু মনে করবেন না!নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই আর কি একটু…আচ্ছা তা যায়হোক এখন বলুন রিসিপশন কবে রাখছেন?”
লাজের এই কথায় ফারাজ আর ফারিদ তাকদিয়ার দুজনেই চমকে উঠে। ফারিদ তাকদিয়ার জিজ্ঞেস করে,” কিসের রিসিপশন? আর এই বিয়ের কোনো রিসিপশন করবো না।”
লাজ বলল,” ওহহ আচ্ছা।আমি এই বিষয়ে কিছু বলবো না কিন্তু হ্যা রিসিপশনের টাকা টা আমাকে দিয়ে দিতে হবে।”
ফারাজ জিজ্ঞেস করলো,” এই টাকার জন্যই আমাকে বিয়ে করেছো? এত টাকায় যখন প্রয়োজন তাহলে বলতেই পারতে আমি দিয়ে দিতাম অযথা এসব নাটক করে কি হবে?”
লাজের রাগ উঠে গেল, সে ফারাজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,” টাকার জন্য নয় তোমাদের মতো বাপ ছেলেদের শিক্ষা দিতে এসেছি।”
-“শিক্ষা দিতে এসে নিজেই শিক্ষা পেয়ে যেও না!”
ফারিদ তাকদিয়ার এতটুকু বলে সেখান থেকে চলে গেল।ফারাজ আবারো লাজের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রুমে। রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো, লাজকে বিছানাা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল,” কালরাতে না হয় চালাকি করে বেঁচে গেলে আজকে কি করবে শুনি? আজকে তো আমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। আজ আমি তোমাকে বোঝাবো কত ধানে কত চাল!”
ফারাজ কথাগুলো বলে বলে শার্ট খুলতে লাগলো আর লাজের দিকে এগোতে লাগলো। লাজ ভয় পেয়ে গেল সে কি করবে বোঝতে পারছে না। ফারাজ লাজের উপর ঝাপ দিতে যাবে তার আগেই লাজ বিছানা থেকে সরে যায়। লাজ বলল,” তোমার কি একটুও লজ্জা নেই?একটা একা মেয়েকে এভাবে ছিহ!”
-“সে আমার বিয়ে করা বউ, আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করতে পারি ওর সাথে!”
-“ওহ আচ্ছা! তাহলে বোঝা গেল তোমার যদি বোন থাকতে তাহলে তার হাসবেন্ড ওর সাথে জোর করে এসব করলে ভালো হতো? তোমার মা বেঁচে থাকলে তোমার মা’র সাথে এসব হলে ভালো হতো!”
-“জাস্ট শাট আপ!”
-“নিজের পরিবারের কথা উঠলে চুপ করতে বলবে আর আমার সাথে হলে ঠিক! কি বলবো তোমাকে হয়তো তোমার মা ছোট বেলায় ঠিক মতে শিক্ষা দিতে পারেনি যার ফলে আজকে তোমার এই অবস্থা। একটা অমানুষ হয়েছে তুমি, শুধু মাত্র তোমার মায়ের জন্য।তোমার মা যদি…..”
লাজ আর কিছু বলার আগেই ফারাজ দেয়ালে ঘুষি মারে। লাজ অবাক হয়ে যায় এমন কান্ড দেখে, ফারাজের চোখ লাল হয়ে আছে। হাত থেকে রক্ত পরছে। লাজ ফারাজের দিকে এগোতে নিবে তার আগেই ফারাজ হাত সামনে ইশারা করে না করে।
-” তোমার যা বলার আমাকে বলবে কিন্তু আমার মায়ের নামে কোনো একটা কথাও বলবে না!”
ফারাজ শুধু এতটুকু বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। লাজ কিছু বোঝতে পারলো না এত রেগে যাওয়ার কারন কী? শুধু মাত্র মাকে টানার জন্য নাকি এর পিছনেও কোনো না কোনো কাহিনী লুকিয়ে আছে।
লাজ রেডী হয়ে বের হতে যাবে তখনি পিছন থেকে ফারাজ বলে,” এই বাড়ির বউ, বিয়ের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত বাড়ির বাহিরে যায় না। এটা এ বাড়ির নিয়ম!”
লাজ পিছন ফিরে বলে,” আমি কেন মানতে যাবো এই নিয়ম? আমি তো এই বাড়িতে সংসার করতে আসিনি এসেছি এই বাড়িতে তোমাদের মান সম্মান নিয়ে ফুটবল খেলতে। আর এখন থেকে আমি ঐসব করবো যেগুলো তোমার বাড়ির নিয়মের একদম বাহিরে। আশা করি আমাকে আটকাতে আসবে না কারণ ভালো করেই জানো আটকাতে আসলেও কোনো লাভ হবে না।”
লাজ চুলগুলো ফারাজের মুখের সামনে ঘুড়িয়ে বেড়িয়ে আসলো।নিজের বাসায় এসে কলিংবেল চাপার কিছুক্ষণ পর তার মা এসে দরজা খুলে দেয়।লাজ’কে দেখতে পেয়ে ওনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। লাজ দরজায় নক করে বলতে লাগলো…
-“মা,প্লিজ দরজা খুলো, তোমাদের আমার কিছু বলার আছে।”
দরজার ওপার থেকে মা বলল,
-“খবরদার তোর ঐ মুখ দিয়ে আমাকে মা ডাকবি না।তোর মা তখন মরে গেছে যখন তুই একা বিয়ে করছিস! তোর বাবা মা দুজনই মরে গেছে আমরা কেউই তোর মুখ দেখতে চায় না!”
-“মা এভাবে বলো না!আমাকে আগে সবটা বলতে দাও,সবটা শোনার পর তোমরাও বোঝতে পারবে আমি কেন এসব করেছি! প্লিজ মা একটাবার দরজা খুলো!”
-“তোর কোনো কথায় শুনতে চায় না,যদি তুই না যাস তাহলে আমি আর তোর বাপ গলায় দড়ি দিবো।”
এই কথা শুনার পর লাজ এক পা পিছিয়ে গেল, চোখের মাঝে জমা পানি টপ করে পরে গেল। সে বলল,” নাহ মা, আমি চলে যাচ্ছি এই মুখ আর দেখতে হবে না!”
লাজ কান্না করতে করতে চলে গেল, দরজার ওপারে লাজের মা ও কান্না করতে লাগলো। লাজ সারাটা রাস্তা কান্না করে এসেছে বাসায় এসেও বিছানায় শুয়ে কান্না করছিল। তখনই পিছন থেকে ফারাজ শিস দিয়ে বলল,”খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না!নিজের মা সবটা না শোনেও দরজা লাগিয়ে দিলো মুখটাও দেখতে পারলে না ভালো করে।”
লাজ নিজের চোখের পানি মুছে বসল।ফারাজ আবার বলল,” নিজেকে খুব বড় চালাক মনে করো তাই আজ এই অবস্থা। তুমি আমার জীবন নরক বানাতে এসে নিজের জীবনই নরক বানিয়ে দিবে। আমি তোমাকে তিলে তিলে শেষ করবো,আমার প্রতিশোধ এখন আরো বেশী ভয়ংকর হবে।”
-“আর আমার প্রতিশোধ তোমার থেকেও বেশী ভয়ংকর হবে!তোমাদের মান সম্মান দিয়ে আমি সাপ লুডু খেলবো। আর বেশীদিন নেই,আর মাত্র দুমাস পরেই নির্বাচন, এই সময়টা আমাকে কাজে লাগাতে হবে।”
-“কি করবে তুমি?”
-“তা সময় হলেই দেখতে পারবে।”
লাজ এতটুকু বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।ফারিদ তাকদিয়ারের রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখনই তার কানে আসলো ফারিদ তাকদিয়ার কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন….
-“মেয়ে গুলোর ব্যবস্থা হয়েছে? তারাতাড়ি কর আজকে রাতেই ওদের পাঠাতে হবে নয়তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।কিন্তু হ্যা, খুব সাবধান কেউ যেন জানতে না পারে।আমি আসছি!”
লাজ কথাটা শুনে চমকে গেল।সে তাদের যতটা খারাপ ভেবেছিল তারচেয়েও বেশী খারাপ এরা, সে মনে মনে বলল,”আস্তে আস্তে তোমাদের সব পাকা ধানে আমি মই দিবো। আমাকে যে করেই হোক এই মেয়েগুলো কে বাঁচাতেই হবে, সবার সামনে এদের মুখ আমাকে খুলতেই হবে! কিন্তু কি করে?আমি তো জানিই না মেয়ে প্রচারের কারখানা ওদের কোথায়?আর সময়ও কম আজকে রাতেই ওদের প্রাচার করে দিবে।”
লাজ এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখনই ফারিদ তাকদিয়ার ড্রাইভারকে ডাক দিয়ে বলল,”ড্রাইভার গাড়ি বের কর, আমাকে বের হতে হবে!”
ফারাজ তার বাবা’কে বলল,” বাবা প্লিজ কিছু কথা ছিল রুমে চলো!খুবই দরকারী!”
ফারিদ তাকদিয়ার ফারাজের সাথে চলে গেল।লাজের মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এলো,সে গ্যারেজে চলে গেল।গাড়ির পিছনের ডিকির ভিতরে শুয়ে পরলো। গরমে একদম অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, ঘামছে, মাথা ঘুরাচ্ছে।কিন্তু এছাড়া লাজের কাছে আর কোনো উপায় নেই। কষ্ট সহ্য করে হলেও ঐ মেয়েদের ওকে বাঁচাতেই হবে।
ফারাজ নিজের বাবা’কে সবকিছু খুলে বলল। সবটা জানার পর তার বাবা বলল,,,
-“তার মানে এই বিয়েটা তুই ইচ্ছে করে করিস নি?”
-“না বাবা কিন্তু ঐদিন প্রেসের সামনে চুপ ছিলি কেন?”
-“ও আমাকে কিছু জিনিস দিয়ে ব্যাকমেইল করেছিল।আর এখন ডির্বোস ও দিতে পারছি না।”
-“এই মেয়ে নিশ্চয়ই বড় কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করছে! আচ্ছা এসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে এখন আমি একটা কাজে বের হবো।”
-“আচ্ছা!”
ফারিদ তাকদিয়ার গাড়িতে উঠার সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করলো। কারখানায় গাড়ি থামলে ফারিদ তাকদিয়ার নেমে যায়। আস্তে আস্তে ডিকি উচু করে চারপাশ দেখে লাজ ও নেমে যায়। এম পি সাহেব কে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করতে থাকে। যতটা ভিতরে যাচ্ছে চারপাশ টা ততটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে এসে পৌঁছালো সেই জায়গায় যেখানে অনেক গুলো মেয়েকে হাত পা চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে। লাজ নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিও করতে লাগলো।কিন্তু কোনো ভাবেই এমপি সাহেবের মুখ ভাসাতে পারছে না।এমপি সাহেব রাগ দেখিয়ে চিল্লাতে লাগলো….
-“একটা মেয়ে পাসনি মানে? কি করিস তোরা?এত বড় একটা শহরে একটা মেয়ে খুঁজে পাস না তোরা!তোদের কে দিয়ে একটা কাজও ঠিক মতো হবে না!”
লাজ সবগুলো ভিডিও করছিল হটাৎ করে ফোন বেজে উঠলো। রবি সেবা থেকে কল এসেছে, হটাৎ করে কল বেজে উঠায় আশে পাশের সবাই চমকে উঠে। লাজ নিজের ফোন কেটে এইখান থেকে বের হতে নিবে তার আগেই কেউ একজন ওর হাত ধরে ফেলে।তাকিয়ে দেখে ফারিদ তাকদিয়ার।চোখ রাঙিয়ে বলল….
-” তুই এখানেও চলে এসেছিস?এসেছিস যখন ভালোই হলো। এমনিতেই একজন কম ছিলো তোকে দিয়ে হয়ে যাবে।একসাথে দুইটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কে কোথায় আছিস রে একেও নিয়ে যা!!”
বলেই লাজকে আরেকজনের হাতে তুলে দেয়।সাথে সাথে ওর হাত পা চোখ বেঁধে দিয়ে ঐ মেয়েগুলোর সাথে ফেলে দেয়। লাজের ফোনটা ফারিদ তাকদিয়ার এক আচার দিয়ে ভেঙে ফেলে। যাবার আগে বলে যায়,” সন্ধ্যায় ওদের কে গাড়িতে তুলে চালান দিয়ে দিবি। আর দেখবি কেউ যেন একদিকে না আসে।”
লাজ ছুটার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, অনেক টাইট করে বেঁধেছে।লাজ ব্যর্থ হয়ে বসে পরলো।
চলবে!