খেসারত,পর্ব ০৫ এবং শেষ পর্ব

1
1805

#খেসারত
পর্ব০৫ এবং শেষ পর্ব
#Yasira_Abisha #Fatha

নতুন বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছি স্বামীর অপেক্ষায় কিন্তু তার আসার নাম নেই
কারণ কি বুঝতে পারলাম না,
তবে ওর কাছে আমার শরীরটা পুরনো হয়ে গেছে বলেই কি ও আসতে দেরী করছে?
আজকের রাতটা নতুন দম্পত্তিদের জন্য কত বিশেষ, এগুলো কিছুই কি ইরাদ বুঝেনা?
কথা গুলো রুহি ভাবছে,,

রাত ১০ঃ৩০ টা বেজে যাওয়াতেও সে আমাদের এই নতুন জীবনের সূচনায় আমার সাথে একটা বারের জন্যেও দেখা দিতে আসেনি।
অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ১১ঃ২০ এর দিকে বিছানা ছেড়ে উঠে চেঞ্জ করে আসলাম,,
এসে দেখি ইরাদ ইজি চেয়ারে বসে আছে,
– এত দেরি হলো কেন কোথায় ছিলে?
– একটু বাইরে ছিলাম বন্ধুদের সাথে শরীরটা ভালো লাগছেনা আর পা ব্যাথা করছে।
-ফ্রেশ হবে না?
– হ্যাঁ যাচ্ছি
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুহি দাড়িয়েই আছে খাটের পাশে।
-ঘুমাও রুহি আমিও ঘুমাই।
এই বলেই ইরাদ বিছানায় এসে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরলো, রুহিকে বউ করে তো ও এনেছে কিন্তু মনে তেমন অনুভূতি কাজ করছে না আর ওর জন্য।
আর সত্যি বলতে মেয়েটা শুধু ওকেই চেয়ে এসেছে সব সময় কিন্তু ও তো ওর শরীরটাকে পাওয়ার পর ওর থেকে অনুভুতি গুলো হারিয়ে ফেলেছিলো বলে কতজনের সাথে কত কি না করলো আপাতত ওসব করার ইচ্ছাও হচ্ছেনা তাই চুপচাপ শুয়ে থাকাই ইরাদের ভালো মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর ইরাদ অনুভব করতে পারলো ওর পায়ে নরম কিছুর স্পর্শ।
তাকিয়ে দেখে রুহি ওর পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
-আরে কি করছো এগুলো?
– তোমার পায়ে ব্যাথা তাই মালিশ করছি
একটু আরাম পাবে দেখো,,
-দরকার নেই এভাবেই ঠিক হয়ে যাবে।
-উফ তুমি ঘুমাও আমি দিচ্ছি
এই বলে রুহি মালিশ করে দিলো, পায়ে পাতা এত আরাম দিয়ে টিপে দিলো যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরাদ ঘুমিয়ে পরলো।
মাঝ রাতের দিকে ইরাদের ঘুম ভাংলো,
চোখ ডলে উঠে বসতে নিবে তখন ও তাকিয়ে দেখে ওর পায়ের মধ্যে রুহির হাত, বুঝতে বাকি রইলো না পায়ে মালিশ করতে করতে এখানেই মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে।
ইরাদ ঘড়িতে দেখে ৪টা বাজে,, সারাটা রাত রুহি এভাবে ওকে তেল দিয়েছে,, মনের ভেতরটা কেমন যেন করতে শুরু করলো,
আজকে অনেক দিন পরে রুহির জন্য ইরাদের মনটা ঘামলো, মেয়েটা আসলেই ওকে যত্ন করতে চায়, ইরাদের প্রতি রুহির অসম্ভব ভালোবাসা আছে আজও।
আগের মতই ভালোবাসে ওকে।
নিজেকে অপরাধী লাগছে ইরাদের, মেয়েটার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে নিষ্পাপ লাগছে।

রুহিকে কোলে তুলে ইরাদ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাথরুমে গেলো।
এসে দেখে রুহি উঠে গেছে,,
– এত তাড়াতাড়ি উঠলে কেন? আর রাতে ঘুমাও নাই কেন?
– এমনিতেই
– আচ্ছা এখন ঘুমাও
-আচ্ছা
এটা বলে রুহি পাশ ফিরে শোয়ার পরে ইরাদ বুঝতে পারলো রুহি ওকে কাছে চাইছে,
এটা বুঝে ইরাদ আজকে ওকে আবার আপন করে নিলো। ইরাদ ভাবছে নতুন জীবনের সাথে পুরোনো সব খারাপ কাজ ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া যায়। সব ভুলে নতুন করে তো সব শুরু করাই যায়।
কিন্তু পুরোনো কাজের হিসেব না দিয়ে তো নতুন কাজে হাত দেওয়া যায়না,, বিধির বিধান যে এর অনুমতি দেয় না।

ইরাদ নিজের স্বভাব পরিবর্তন করে ফেললো ধীরে ধীরে। রুহিও স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছে,,
ইরাদের মা জামিলা বেগম প্রায়ই বাচ্চার কথা বলে রুহি লজ্জা পেলেও ইরাদ কেমন যেন কথা ঘুরিয়ে ফেলে,,
এভাবে প্রায় তিন বছর কেটে গেলো
রুহিকে এখন ইরাদ ভালোবাসে একজন সৎ পুরুষ যেমন হয় তেমনটাই হয়ে গেছে ইরাদ। রুহি একজন স্ত্রী হিসেবে ভালো, বাড়ির বউ হিসেবেও ভালো কিন্তু বাচ্চা হয়নি দেখে আজকাল শশুর শাশুড়ী কিছুটা মন খারাপ করে।
এতে রুহি কষ্ট পায়, কিন্তু বলার তো কেউ নেই।
ইরাদ কে বাচ্চার কথা বললেই কথা এড়িয়ে যায়,
গত দুইটা দিন ধরে ইরাদের মা রুহির সাথে রাগ করে কথা বলে না, ইরাদ অফিসিয়াল কাজে ঢাকা গিয়েছে ফিরবে বিকেলে,
আজকে ইরাদকে উত্তর দিতেই হবে রুহির সব প্রশ্নের। রুহি মনের সব গুলো কথা আজকে ইরাদকে জিজ্ঞেস করবে,,
বিকেলের দিকে ফোন আসলো রুহির মোবাইলে ইরাদের নাম্বার থেকে
রুহি রিসিভ করতেই পাশ থেকে এক অচেনা লোক ফোন রিসিভ করে বললেন
ইরাদ মাথা ঘুরে পরে গেছে তাই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ওকে।
রুহি আর ইরাদের মা বাবা সবাই মিলে সাথে সাথেই হাসপাতালে গেলো,
ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট দিয়েছে, ইরাদের চোখ মুখ দেখে খুব অসুস্থ লাগছে।
রুহি, জামিলা সবাই কাদছে অঝোরে।
একদিন হাসপাতালে থাকার পরে সেই সকল টেস্টে ডাক্তার কিছুই পায়নি দেখে বললো অন্য ডাক্তার দেখাতে
বাসায় আসার কিছুদিন পরে ইরাদের মাজায় ব্যাথা বেড়ে গেলো।
প্রায় ৬ মাসের মত হবে ওর কোমড় ব্যাথা কিন্তু এটায় তেমন গুরুত্ব ও দেয়নি ভেবেছিলো হয়তো সারাদিন অফিসে বসে কাজ করার জন্য এমন হচ্ছে,,
তবে রুহি জোর করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলো ইরাদকে এবং মেডিসিন ডাক্তার দেখালো। এবং একটা টেস্ট দিয়েছেন,, যার রিপোর্ট আজকে দিবে,,
সেখানে রুহি দেখলো ডাক্তার নাজিফা ও বসেন, যিনি ওর এবোরশনে করেছিলেন,
রুহি ভেবে নিয়েছে আজকে ইরাদকে দেখানোর সাথে উনাকেও দেখাবে তাই সিরিয়াল নিয়ে রেখেছে।
রুহি সেই ডাক্তারকে দেখাবে এটা ইরাদ জানতো না,
রিপোর্ট নিয়ে রুহি ইরাদ বাইরে বসে আছে,,
রুহি ইরাদকে বললো
-শোনো পেটে কিছুদিন ধরে ব্যাথা তাই ডাক্তার দেখাই আমিও আজকে?
– হ্যাঁ কিন্তু আমাকে বলো নি কেন?
– এমনিতেই তুমি বসো আমি দেখিয়ে আসি।
– না আমিও আসবো
– উহুম আমি যাই একাই।

রুহি ডাক্তারের রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো ওকে বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ইরাদ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন ইরাদের সিরিয়াল এসে গেছে,,
ডাক্তার কাছে গিয়ে ইরাদ জানতে পারলো
ওর ক্যান্সার হয়েছে,, ফাইনাল স্টেজ।

ইরাদ রুহি বাসায় ফিরে কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা,
রাত হয়ে গেলো কেউ কিছু খেলো না,,
বাইরে বাতাস বইছে হিয়তো ঝড় হবে
একটা সময় ইরাদ বলে উঠলো
-এমন কেন হলো আমার সাথে রুহি?
আমি কি এমন পাপ করেছি?
রুহি বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
-পাপ করেছি ইরাদ, আমরা অনেক বড় পাপ করেছি যার খেসারত এভাবে দিতে হচ্ছে।
ইরাদ খানিকটা চমকে উঠে রুহির কথায়।
– কেন এমন বলছো?
– বিয়ের আগে আমরা যা করেছিলাম তার সাজা হিসেবে আল্লাহ পাক আমাকে আর কখনো মা হওয়ার সুখ দিবেন না।
আমরা বিবাহ ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করেছিলাম, একটা শিশু এই দুনিয়া দেখার আগেই তার প্রাণ ছিনিয়ে নিয়েছি। তখন ওকে আমার অনেক লজ্জার
আর বোঝা মনে হচ্ছিলো, আজ দেখো একটা বাচ্চার জন্য কত শত চেষ্টা করেও আমি ব্যার্থ। ডাক্তার আজকেই আমাকে বলেছে তখন এবোরশন করার ফলে মা হওয়ার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছি ন
তখনই ইরাদের মনে পরলো কত মেয়েদের সাথে ও অবাধ মেলামেশা করেছে একটা সময়।
কারো মন বড় লাগেনি ওর শুধুই নিজের কথা ভেবেছিলো ও।
যত রকম নোংরামি আছে সবই তো করেছিলো ইরাদ৷তাই হয়তো সাজা স্বরূপ এই রোগটা এসেছে আজকে এত বছর পরে।
এবং এই রোগটা শেষ সময় ধরা পরেছে।
দুইজন অনেক কাদে সেদিন রাতে।
আল্লাহার কাছে মাফ চায় অনেক করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় আজকের পর থেকে যতদিনই বাঁচে তত দিন আল্লাহকে স্মরণ করবে কারণ সব কিছুর পরে ওই একজনের কাছেই তো যেতে হবে, এবং তার কথার অমান্য করলে দুনিয়া আখিরাত কোথাও কিছুই পাওয়া যাবেনা।

ঠিক ৪ মাস পরে ইরাদ মারা যায়,, নিজের যত সম্পদ ছিলো তা সবই সে দান করে দেয় বাড়িটা ছাড়া মারা যাওয়ার আগে। বাড়িটা ৫তলা হওয়ায় ৪
তলার ভাড়া দিয়ে রুহি আর ইরাদের মা বাবা চলতে পারবে এই ব্যাবস্থা ইরাদ করে রেখে গেছে। মারা যাওয়ার আগে ইরাদ অনেক ভালোবাসতো রুহিকে ওর মা বাবা কে। দুনিয়া টা কতই না সুন্দর ছিলো এগুলো শেষ সময় ইরাদ বুঝতে পারতো,, কেনই বা ওইসব করে নিজেকে ও শেষ করেছিলো এগুলো ভাবতো আর আল্লাহর কাছে কাদতো, তাওবা করতো।
রুহি অনেকটা ভেতর থেকে ভেংগে পরেছে এখন ও শুধু আল্লাহ কে ডাকে, কোনো রকমে বেচে থাকে। যেই ইরাদের জন্য এগুলো করেছিলো ও, সেই ইরাদের সাথে থাকাটাই কত ক্ষনিকের ছিলো,, সুখের স্মৃতি খুব কম,
ওর করা দুইটা পাপ ওর জীবন টাকে শেষ করে দিয়েছে। আত্নপীড়নে হয়তো বাকি জীবন টা কেটে যাবে। আপাতত জীবনের লক্ষ্য একটাই আল্লাহ পাক যদি তাদের মাফ করে দেয় তাহলেই হয়তো রুহি শান্তি পাবে। যিনার খেসারত, একটা শিশুকে দুনিয়ায় আসতে না দেওয়ার খেসারত, ভয়াবহ ভাবে ইরাদ আর রুহির দিতে হলো।

(সমাপ্ত)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here