গজপ্রিয়া ~3
Chhamina Begam
-“এভাবে তাকাচ্ছিস কেন ? একদম ভূতনি লাগছে তোকে ?”
-“এই জন্য । ঠিক এই জন্যই তোকে আমি এভোয়েট করি । এই সিম্পল বিষয় টা তোর বোঝা উচিত ছিল সম্রাট। আর বললি না কেন ব্লক করেছি তোকে ? তবে শোন ,তোর সাথে কন্টাক্সে থাকা মানে যেচে অপমানিত হওয়া । আর আমার অপমানিত হওয়ার একদম ইচ্ছে করে না বুঝলি । হয়েছে । আশা করি তোর জবাবটা তুই পেয়ে গেছিস ।
-” ওহ , আমি কি তোকে সবসময় শুধু অপমানই করি !” মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল সম্রাট ।
-“এই বিষয়ে তোর সন্দেহ আছে নাকি এখনো ?”
-” আজব মেয়ে তো । শুধু আমার এই দিকটাই নজরে পড়েছে তোর । আর এই যে তোকে নিয়ে আমার এত এত চিন্তা হয় । সব সময় তোকে নিয়ে এতটা কনসার্ণ থাকি , এগুলো কি তোর নজরে পড়ে না । “… অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বিরবির করে কথা গুলো বলে সম্রাট । রানি কান খাড়া করে শোনে । বোঝার চেষ্টা করে । বলে,
-“কি বললি তুই? বুঝলাম না ।যা বলার পরিষ্কার করে বল ”
হঠাৎ করেই রাগ উঠে যায় সম্রাটের । ঝাঝিয়ে ওঠে । বলে,
-“বুঝবি কি করে ? তোর বোঝার কথাও নয় । ‘ম্যাচুরিটি ‘বলতে যে শব্দটা আছে, তোর ডিকশনারিতে তো ওটার অস্তিত্বই নেই । ”
-“দ্যাখ সম্রাট , এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে । তুই কিন্তু আবার আমাকে অপমান করছিস । ভুলে যাস না আমি কিন্তু তোর থেকে এক মাসের হলেও বড়ো । সো ,আমাকে রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি । ” রানি তেড়ে আসে সম্রাটের দিকে।
-” বড় ! আর তুই । শোন, তুই যেটাকে বড় বলছিস ।সেটা আসলে বড় নয় । ওটাকে প্রি-ম্যাচিয়র বলে । মানে বুঝিস তো ..প্রি-ম্যাচিয়র বেবী। সব সময় তোর এত তাড়া থাকে যে মায়ের পেটেও তুই ধৈর্য্য ধরে নয় মাস থাকতে পারলি না । সাত মাসের মধ্যেই রীতিমতো যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছিস । সঠিক সময়ে দুনিয়াতে আসলে আজ আমি তোর থেকে এক মাসের বড় হতাম । বুঝেছিস । হুহ …..আর এই জন্যই আজও তোর মধ্যে ম্যাচুরিটি আসল না ”
সম্রাটের কন্ঠে হতাশা ঝরে পড়ে ।রানি রাগে লাল হয়ে যায় । “আআআআ” বলে চাপা স্বরে চিৎকার করে ওঠে । সম্রাটের সামনে ডান হাতের তর্জনী ঝাকিয়ে বলে,
-“তুই…তুই আসলেই খুব বিরক্তিকর । তোর সঙ্গে কথা বলা ও বেকার । শুধু শুধু সময় নষ্ট । আমাকে সত্যি সত্যি পাগলা কুকুরে কামড়েছে মনে হয় যে আমি আমার কাজকর্ম বাদ দিয়ে তোর সঙ্গে লাগতে এসেছি ”
-“এই ,এই ,এই ,হচ্ছে টা কি এখানে ?তোরা এভাবে রাতের বেলায় মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে ঝগড়া করছিস কেন ? লোক জড়ো করার ইচ্ছে হয়েছে নাকি !”
ফাহিমকে দ্রুত পায়ে ছুটে আসতে দেখে সম্রাট রানি দুজনেই থেকে যায় । এক ঝটকায় দুজনে একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । তামিম বাড়ি ফিরছিল । একটু দুরে রাস্তায় দুজন ছেলেমেয়েকে তর্কাতর্কি করতে দেখে আগ্ৰহ ভরে এগিয়ে যায় । কি হয়েছে দেখার জন্য । কাছাকাছি যেতেই বুঝতে পারে এরা অন্য কেউ নয় , বরং সম্রাট আর রানি । বিস্মিত হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে । রানি আর সম্রাটের সাপে-নেউলে সম্পর্ক এপাড়ায় মোটামুটি সবাই জানে । কিন্তু তার পরেও, এই এত দিন পর , এত রাতে মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে দুজন যে এভাবে কোমর বেধে ঝগড়া করতে পারে সেটা এদের না দেখলে হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না । ফাহিম দুজনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে । সম্রাট রাগ করে বাড়ি ফিরে যায় । রানিও মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক আওয়াজ করে গটগট করে হেটে বাড়ির পথ ধরে । মাঝখান থেকে তামিম পালাক্রমে একবার রানির দিয়ে আর একবার সম্রাটের দিকে তাকায় । ওর হতভম্ব ভাবটা এখনো কাটে নি ।
“যাব্বাবাহ, মাঝখান থেকে কি আমি বিদুষক হয়ে গেলাম নাকি !”..বলে বিরবির করে স্বগোতক্তি করে ফাহিম ।
ঘরে ঢুকেই সম্রাট ধুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । আজ আবার রানীর সাথে ঝগড়া হয়ে গেল । বার বার ভাবে আর ঝগড়া করবে না ওর সাথে ।তবুও কিভাবে যেন ঝগড়া লেগেই যায় ? আচ্ছা ,রানি কি কখনো ওর অনুভূতি গুলো বুঝবে না ? নাকি সে নিজেই ব্যর্থ নিজের অনুভূতি গুলো বোঝাতে । ও তো অনেক চেষ্টাই করে । প্রতি বার ব্যর্থ হয় । আচ্ছা ,ভালো লাগার কথা বোঝানোর জন্য কি স্পেশাল কোনো ভাষা আছে ? থাকলে সেটা কি ? নাকি কবিদের মতো কবিতা লিখতে হবে । ‘ধুর ,অত ন্যাকামি আমার দ্বারা হবে না ‘ আনমনে বলে সম্রাট । অনেক ভাবার পরেও একটা উপায় খুঁজে পায়না।
উঠোনে এখনো সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে । রানি সেখানে না বসে সোজা ঘরে চলে যায় । মোস্তাফিনা বিছানায় শুয়ে শুয়ে জাহিদের সাথে চ্যাটিং করছিলো। রানি ফ্যান চালু করে মোস্তাফিনার পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। বালিশে চুল গুলো মেলে দেয়।
-” কিরে তোর কি গরম লাগছে নাকি ?আর এমন থম মেরে আছিস কেন ?”
-“চুল শুকায়নি এখনো ”
রানির মনখারাপ দেখে মোস্তাফিনা জাহিদকে বাই বলে ফোনটা পাশে রেখে দেয়।
-” কিরে রানি ,মন খারাপ কেন তোর ?”
-” এমনি । ভাল লাগছে না আপু । আচ্ছা , শাড়ি গহনা কোথা থেকে কিনেছিস ?”
-“কেনা হয়নি তো….”
-” কেনা হয়নি মানে! পরশু তোর বিয়ে আর আজ বলছিস কেনাকাটা হয়নি! কেন ?”
-“আমি তো তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । ”
-“আমার জন্য ….” রানির চোখেমুখে বিস্ময় ।
-“হ্যাঁ তোর জন্য । কারন তোর পছন্দ সবসময়ই বেস্ট হয় ।”
-“আহা… তোষামোদ করছিস। কিন্তু বিয়ের জন্য বর তো একা একাই চুস করে ফেলেছিস । ” রানি কপট অভিমান করে । মোস্তাফিনা মন খারাপ করে বলে,
-“আরে , আমি কোথায় চুস করলাম । আব্বু-চাচু ওরা পছন্দ করল । আর আমি শুধু হ্যা বলেছি ”
রানী অবাক হয়ে তাকায় মোস্তাফিনার দিকে । আজকের দিনেও এটা সম্ভব নাকি !
-” এসব তুই কি বলছিস আপু ? আগে থেকে চিনতিস না । ”
মোস্তাফিনা মাথা নাড়িয়ে না জানায়। রানি চোখ বড়ো বড়ো করে বলে,
-” আল্লাহ আপু , তার মানে তো তুই জাহিদ ভাইয়া সম্পর্কে ভালো করে কিছুই জানিস না । যেটুকু ওরা বলেছে শুধু সেটুকুই ”
-“হুম, ঠিক বলেছিস ” .. বিরস মুখে বলে মুস্তাফিনা।
-” আপু মন খারাপ করিস না । আমি এক্ষুনি জাহিদ ভাইয়াকে চেনার একটা ব্যবস্থা করছি । ”
-“কিভাবে ? ”
-” লয়ালিটি টেস্ট ….”
-“লয়ালিটি টেস্ট ? ”
-” হুম । লয়ালিটি টেস্ট । চল , জাহিদ ভাইয়ার একটা লয়ালিটি টেস্ট নিয়ে নিই । যদি রেসপন্স করে তাহলেই বোঝা যাবে ভাইয়া তোকে আর এই বিয়ে নিয়ে কতটা সিরিয়াস ? ”
মোস্তাফিনার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হয় । বিছানায় উঠে নড়ে চড়ে বসে । উচ্ছ্বসিত হয়ে জিজ্ঞেস করে ,
-“কিন্তু কিভাবে? মানে এই লয়ালিটি টেস্ট টা তুই কিভাবে নিবি ?”
মোস্তাফিনার দেখাদেখি রানীও বিছানায় উঠে বসে । বলে,
-” একটু অপেক্ষা কর । বলছি। ”
মোস্তাফিনা উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে রাণী কি করছে দেখার জন্য ।
-“রানী ফেসবুক খুললি যে !”
-“হুম । এখানেই তো হবে মেইন কাজ । জানিসই তো ফেসবুক হল কাউকে ধোকা দেওয়ার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। ”
মোস্তাফিনা হেসে ওঠে । বলে ,
-“কি যে আবোল তাবোল বলিস তুই ! কিন্তু এই আইডি টা কার ”
-“এই টা , আমারই ফেক অ্যাকাউন্ট। ”
-“আচ্ছা । আর এটা দিয়ে তুই কি করিস ? ”
-” এটা অনেক কাজে লাগে বুঝেছিস আপু ..” মুচকি হেসে বলে রানী।
-“যেমন …?”
-” যেমন , এই ধর , অনলাইন আর বাস্তবের আগ্রহী প্রেমিকদের লয়ালিটি টেস্টের দরকার পড়ল । তখন এটা খুবই হেল্পফুল …. আপু ভাইয়ার পুরো নাম বল । আর কোন স্কুলে -কলেজে পড়েছে , সাবজেক্ট কি ছিল সব বল । ”
মোস্তাফিনা একে একে সব বলে । রানি আইডি খুঁজে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় ।
-” আপু , হয়ে গেছে । টেস্টের জাল বিছিয়ে দিয়েছি। এবার শুধু তাতে পা দেওয়া বাকি । দেখতো ভাইয়া অনলাইনে আছে কিনা ?”
মোস্তাফিনা নিজের ফোন চেক বলে আছে । রানি একটা শয়তানী হাসি হেসে বলে,
-“এখন আমি ভাইয়ার সাথে একটু বদমাইশি করব ।তুই কিছু মনে করবি না কিন্তু । ”
-” সে তো ঠিক আছে । কিন্তু রানি , আমার না ভয় লাগছে । যদি ও ওই টাইপের ছেলে হয় তাহলে …!”
-“তাহলে , তোর কাছে দুটো রাস্তা খোলা থাকবে । এক , তুই জেনে গেলি ভাইয়া কেমন ? সেই হিসেবে তুই এখন থেকে ওনার ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে পারবি । তার সব দোষ গুন জেনে তাকে লাইফ পার্টনার বানাতে পারিস আর দুই হল এখনো তোদের বিয়ে হয়নি । সেই হিসেবে তুই স্টেপ ও নিতে পারবি ।ক্লিয়ার …হয়েছে ”
-” হুম । ওকেএএ…. আজকের জন্য সব মাফ করে দিলাম । তাই যত বদমাইশি করতে পারিস কর । পরে কিন্তু এমন চান্স পাবি না । ” হাসি মুখে বলে মোস্তাফিনা ।
-” উমমম হুহ …সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস লাগে না আমার .…”
মোস্তাফিনা আর রানি দুজনেই একচোট হেসে নেয় ।
“তাহলে শুরু করি ”
-“হুম । কর ”
—” হাই জাহিদ , রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করো প্লিজ “—- মেসেজটা লিখে সেন্ড অপশনে ক্লিক করে রানি মোস্তাফিনার দিকে তাকায় । মোস্তাফিনা চোখ বড়ো বড়ো করে রানির ক্রিয়াকলাপ গিলছিল । রানি বাঁ চোখটা টিপে ফিচেল হাসে ।
দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় না। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট হয়ে যায় । রানী আর মোস্তাফিনার মুখের হাসিটা আরেকটু চওড়া হয় । রানী বলে ,
-“আপু , শিকার ফাঁদে পা ফেলেছে । এবার আমার খেলা দেখ । ”
মোস্তাফিনা এতক্ষণ জাহিদের সঙ্গে চ্যাটিং করছিল । রানীর কথায় ভয় মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকায় । এদিকে জাহিদ ‘কাজ আছে..পরে কথা বলছি ‘বলে চ্যাটিং বন্ধ করে । মোস্তাফিনার মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে । না জানি জাহিদ কেমন ছেলে হবে ? যদি সত্যি সত্যি ওইসব ক্যারেক্টার লেস ছেলেদের দলে পড়ে তাহলে । তাহলে ওর কি হবে ? ও তো জাহিদকে পছন্দ করতে শুরু করেছে । ওর কথার মায়ার জড়িয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । হয়তো ভালোবাসতেও শুরু করেছে …..একবার মনে হয় এমনটা করা ঠিক হব না । তারপরেই ভাবছে আমি কতটুকুই বা চিনি জাহিদকে । আর বিয়েটা তো কোনো পুতুল খেলা নয় । যে ওয়ার্ক আউট হচ্ছে না বা খেলতে ইচ্ছে করছে না , ভেঙে দিলাম বা চলে এলাম । না । অন্ধবিশ্বাস না করে আগে যাচাই করাই যাক না বিশ্বাসের খুটিটা নড়বড়ে নাকি মজবুত । রানির ডাকে মোস্তাফিনা ভাবনার জাল ছিড়ে বেড়িয়ে আসে ।
-“আপু রিপ্লে দিয়েছে ..”
দুরুদুরু বুকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকায় মোস্তাফিনা । জাহিদের নামটা জ্বলজ্বল করছে স্ক্রিনে । রিপ্লেতে লিখেছে ,
–কে আপনি ? আপনাকে তো চিনলাম না । কাইন্ডলি নিজের পরিচয় যদি দিতেন ।
–জাহিদ তুমি আমাকে চিনতে পারছ না । আমি সেই যাকে তুমি স্কুল জীবনে একবার দেখার জন্য আমাদের গালস্ স্কুলের সামনে এসে দাড়াতে । মনে পড়েছে ? ”
–(চিন্তিত হয়ে ভাবার ইমোজি )
–মনে পড়ছে না জাহিদ ?
একমিনিট পর রিপ্লে আসে ,
–পড়েছে । তুমি কি শেফালি ? কিন্তু এটা কার নাম দিয়ে আইডি খুলেছ ? ”
এই পর্যন্ত দেখার পরেই মোস্তাফিনার হাত পা কাঁপতে থাকে । চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে । চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায় । রানি মোস্তাফিনার হাত চেপে ধরে ভরসা দেয় । বলে ,
-“আপু এখনি এতটা ভেঙে পড়ছিস কেন ? পুরো কনভারসেশন টা তো দেখ আগে । তার পর নাহয় ডিসিশন নিস ।”
মোস্তাফিনা ওরনা দিয়ে চোখ মুখে বলে ,
-“ওকে । চালিয়ে যা ”
—(স্মাইলি ইমোজি ) চিনতে পেরেছ তাহলে । যাক ভালো হল । না হলছ আমাকে পুরো ডিটেইলস দিতে হত । আর এটা আমার বোনের একাউন্ট ।
—ওহ আচ্ছা । তা এতদিন পর কি মনে করে ? তুমি তো এখন এখানে থাক না । মাধ্যমিকের পরেই তো সিফ্ট হয়ে গিয়েছিলে অন্য কোথাও । ”
—- হ্যাঁ । ….শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করছ ?
—কার কাছে শুনেছ ?
—শুনেছি এক বান্ধবীর মুখে …বল না সত্যি কি না ?
—হ্যাঁ । কি করব বলো তখন তো তুমি জবাবই দাও নি । তাই আমাদের স্টোরিটাও আর এগোয়নি। (দুঃখের ইমোজি )
— জাহিদ । একটা কথা বলি ….আচ্ছা , আমি যদি এখন হ্যাঁ বলি তাহলে কি কিছু বদলাবে ?
বেশ কিছুক্ষণ পর পর আবার রিপ্লে আসে । রানি আর মোস্তাফিনা দুজনেই হুমরি খেয়ে পড়ে জাহিদ কি লিখেছে দেখার জন্য । জবাব দেখে দুজনেই পিলে চমকে যায় । একে অপরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে হতাশ হয়ে । তার পরই হো হো হেসে ওঠে । রানি মোস্তাফিনা দুজনেই বার কয়েকবার মেসেজটা পড়ে । সেখানে লেখা ছিল ,
—“কে তুমি উর্বষী? এভাবে আমার ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা করছ । তবে তুমি যেই হওনা কেন ? প্রয়াসটা কিন্তু খুব ভাল ছিল । কিন্তু এখানে তোমার ডাল গলবে না । বুঝেছ । তুমি যে আমার সাথে মজা করতে এসেছ সেটা প্রথমেই ধরা খেয়ে গেছ । যখন থেকে আমার প্রতিটা কথায় হ্যাঁ তে হ্যা মেলাচ্ছিলে । জানোই তো আমি বিয়ে করছি । তুমি বরং দাওয়াত নাও । আমার সাথে বরযাত্রী হয়ে যেতে হবে কিন্তু । বুধবার মনে করে আমাদের বাড়ি চলে আসবে । ঠিকানা জানো তো । নাকি আমি পাঠিয়ে দেব ? ”
মেসেজ টা পড়ে মোস্তাফিনা স্বস্থির শ্বাস ফেলে । এতক্ষণ ওর দমবন্ধ লাগছিল । কিন্তু এখন প্রশান্তিতে মনটা ছেয়ে গেছে । জাহিদ যে ওকে নিয়ে সিরিয়াস এটা এই মেসেস টা পড়েই বোঝা যাচ্ছে।
একটু পর আবার টুং করে আওয়াজ হওয়ায় দুজনেই চকিতে তাকায় মেসেজ বক্সের দিকে । জাহিদ আবার মেসেজ পাঠিয়েছে ।
—আচ্ছা , আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে চিনি । আমার হবু শালিকা রানি নও তো ? আ’ম শিয়র তুমিই রানি । আমার উট’বি এর মুখে তোমার অনেক গুনগান শুনেছি । তুমি যে কি পরিমাণ দুষ্টু তার ধারনা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছি আমি । বাই দা ওয়ে , তোমার ট্রিক টা কিন্তু খুব ভালো ছিল শালিসাহেবা ….
রানি বিস্ময়ের ভাব কাটছে না । বলে ,
-“আপু , এতো দেখছি ‘সেই চিজ ‘। কেমন ধরে ফেলল ? জানিস , আজ পর্যন্ত কেউ ধরতে পারেনি আমাকে । ধ্যাত; সব তোর জন্য হয়েছে । কেন যে আগ বাড়িয়ে আমার কথা বলেছিস ? না হলে কি সুন্দর জমে যেত ব্যাপার খানা । তবে একটা কথা কিন্তু মানতে হবে, একদম পিয়র জিনিস পেয়েছিস তুই। আই হোপ, তোদের দাম্পত্য জীবন যেন অনেক সুখের হয় । ”
To be continue…