গজপ্রিয়া-8
Chhamina Begam
রাত তখন দশটা হবে । ছাদে সব কাজিনরা মিলে আড্ডার আসর বসিয়েছে । স্টেজ টার সামনে অর্ধবৃত্তের মতো সারি সারি করে চেয়ার বসিয়ে রাখা । উদ্দেশ্য মোস্তাফিনার বিয়ের জন্য ব্যাচেলর পার্টি । বিলকিস মৌনিকে নিয়ে অনেক গুলো চিরকুট বানিয়েছে , লাল আর হলুদ রঙের । লাল চিরকুটে সব কাজিনদের নাম আর হলুদ চিরকুটে কতগুলো টাস্ক লেখা আছে । হোস্টিং করবে বিলকিস । আইডিয়া টাও ওর, শুধু পেপার গুলো সম্রাট জোগাড় করে দিয়েছে । স্টেজের উপর উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বিলকিস বলতে শুরু করল,
-” হ্যালো এভরিওয়ান , প্রথমেই আমি মুসু আপুকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানাই । ওর জন্যই আমাদের রি-ইউনিয়নটা সম্ভব হল । আমরা সবাই জানি আমরা আজ এখানে কেন একত্রিত হয়েছি ? আজ আমরা এখানে একটা খেলা খেলব । তোমরা সবাই দেখতে পাচ্ছ এখানে দুটো জারে লাল আর হলুদ রঙের অনেক গুলো চিরকুট রাখা আছে । লাল চিরকুটে এখানে যারা আছে সবার নাম লেখা আছে আর হলুদ চিরকুটে কতকগুলো টাস্ক দেওয়া আছে । এবার আমি তোমাদের খেলার নিয়ম বলে দিই । লাল চিরকুট গুলো আমি তুলব । তাতে যার নাম লেখা থাকবে তাকে স্টেজে আসতে হবে । এসে হলুদ চিরকুটের জার থেকে একটা চিরকুট তুলবে । তাতে যা লেখা থাকবে তাকে সেটাই করতে হবে । আর হ্যাঁ একজন একটাই চিরকুট তুলবে । আর আমরা কত গুলো টাস্ক রেখেছি যেখানে পার্টনার প্রয়োজন হবে । তো কনটেস্টটেন্ট অডিয়েন্স থেকে তার ইচ্ছে মতো কাউকে পার্টনার চুজ করতে পারে । কারো কোনো প্রশ্ন আছে ? ”
বিলকিস সবার দিকে একঝলক তাকিয়ে নেয় ।
-“নেই তো । ওকে , তাহলে শুরু করা যাক । ”
বিলকিস লাল জার থেকে একটা চিরকুট তুলে কি লেখা আছে দেখে নেয় । মুখে হাসি ধরে রেখেই সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নেই । সবার মধ্যে এক চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে । সবাই উৎকন্ঠিত হয়ে চেয়ে আছে বিলকিসের দিকে । যেন এখনি বিলকিস এখানে একটা বিস্ফোরণ ঘটাবে । সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিলকিস নাম ঘোষণা করল । প্রথমেই নাম উঠেছে তাতিমের । তামিম উঠে দাড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে একবার কেবলাকান্তের মতো হাসি দিল । তারপর এগিয়ে গেল স্টেজের দিকে । জার থেকে একটা হলুদ চিরকুট তুলে চোখের সামনে ধরতেই ঠোঁট টিপে হাসি আটকায় । বিলকিসের দিকে তাকিয়ে একটা রাগি লুক দেয় । বলে,
-” আর কিছু পাসনি লেখার জন্য ? ”
-” পড়ে শোনাও ভাইয়া কি এসেছে ?” বিলকিস হেসে জবাব দিল ।
-” বাংলা কমেডিয়ান গানে নাচতে হবে । আমি পারব না এসব করতে …” মুখ গোমরা করে বলল তামিম ।
-” এসব বললে তো চলবে না ভাইয়া । যেটা লেখা আছে তা করতেই হবে । ” বলল মৌনি।
অডিয়েন্স থেকেও সবাই একবাক্যে সায় দিল । তামিম বলল ,
-“ঠিক আছে । তাহলে পার্টনার কে হবি ?…. বিলকিস, তুইইইই আয় । তুই তো ভালো নাচতে পারিস । ”
তামিম ইউটিউব ঘেটে একটা গান ডাইনলোড করে ব্লুটুথ স্পিকারে চালিয়ে দিল … তার সাথে তাল মিলিয়ে চলল বিলকিস আর তামিমের অঙ্গভঙ্গি …
মনটা করে উরু উরু ,বুকটা করে দুরু দুরু (২)
পরানের বন্ধু যখন যায় রে,
আকাশে উড়াল দিয়া, যামু রে অরে লইয়া ,
কলিজায় বাজে বল তাকদু নাদুম দুম রে ।
আজ আমার মনটা যে তাই পেখম তুইলা নাচে রে (২)
ওদের পারফরম্যান্স শেষে ছাদে হাসির ফোয়ারা ছুটেছে । ভীরের মধ্য থেকে কে যেন আবার সিটিও মারল । এর পরের চিরকুটে নাম আসল মিলির । তাকে মুখভঙ্গি করে দেখাতে হবে । সেখানেও এক প্রস্থ হাসাহাসি হয়ে গেল । এভাবে পরপর লাবিবের আসল মিমিক্র , বানি আর মৌসুমীকে মিলে দজ্জাল শাশুড়ি আর নিরীহ পূত্রবধূর অভিনয় করতে হল । ওয়াহিদকে শাহরুখ খানের একটা বিখ্যাত পোজে দাড়িয়ে তার ডায়ালোগ বলতে হল । এরপরেই নাম আসল মোস্তাফিনার । ওকে শায়েরি বলতে হবে । স্টেজে উঠে লজ্জাবনত হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল ও ।
-” আপু , অল দা বেস্ট ” থামস্ আপ দেখিয়ে বলল রানি । ওর সাথেই ওয়াহিদ, বিলকিসসহ আরো কয়েকজন “আপুউ,আপুউ ,” বলে উৎসাহিত করার চেষ্টা করল । চোখ বন্ধ করে একবার দীর্ঘশ্বাস নিল মোস্তাফিনা । তারপর বলতে শুরু করল ,
“বো ক্যাহতা হে….,
বো ক্যাহতা হে কি মেরি আখো মে উসে আপনে লিয়ে পেয়ার দিখতা হে ।
পার বো ইয়ে নেহি জানতা কি …. উসকি আখো মে মুঝে আপনি পুরি দুনিয়া দিখতি হে । । ”
-“ওহ হো… , কেয়া বাত হ্যায় ! ” মৌসুমী রসিকতা করে । মোস্তাফিনায় লজ্জায় কুকড়ে যায় । দ্রুত পায়ে নিজের জায়গায় ফিরে আসে ।
-“ওয়াও আপু, পুরো ফাটিয়ে দিয়েছ “..চিৎকার করে বলে উঠল বিলকিস । রানি পাশে বসে ছিল । বিলকিসের পিঠে আলতো করে একটা চাপড় মেরে চাপা স্বরে বলল ,
-“ছিঃ বিলকিস, এসব কি ভাষা ?”
-“উহ, আপু । ওভার এক্সাটমেন্টে বেরিয়ে গেছে ।আর হবে না । পাক্কা প্রমিশ ” বলেই সে স্টেজে চলে গেল ।
চিরকুট তুলে দুষ্টুমি হাসল । একটু দম নিয়ে চিৎকার করে বলল ,
-“রানি আপু , ইট’স ইউ…..”
সম্রাট স্টেজের পাশে দাড়িয়ে এতক্ষণ সবকিছু ভিডিও করছিল । রানির নাম শুনতেই চকিতে তাকাল রানির দিকে । একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে দৃষ্টি চলে গেল রানি পেছনের সারিতে দুই চেয়ার বাদে বসা লোকটির মুখে । লোকটির মুগ্ধ দৃষ্টিতে রানিকে দেখাটা একদম সহ্য হল না । সেই দৃষ্টি চোখের পলকেই যেন শরীর ও মনে অদৃশ্য অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দিয়ে গেল ।
রানি মোস্তাফিনার সাথে বসে নিচু স্বরে হাসাহাসি করছিল । এত জোরে নিজের নাম শুনে চমকে উঠল রাণী । পরক্ষণেই নিজেকে সামলে চলে এল স্টেজে , চিরকুট তুলে হাসি মুখটা চুপসে গেল নিমেষেই । মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,
-” কাপল ডান্স ! কিন্তু আমি তো ডান্স করতেই পারি না । পাস করে দিই ?”
-“না আপু , কোনো পাসটাস চলবে না । যেমনি হোক করতেই হবে । তাড়াতাড়ি পার্টনার চুজ করে ফেল । “…
উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল মৌনি ।
-” কিন্তু….”
-“কোনো কিন্তু নয় । করে ফেল রানি । আজ আমরাও দেখি তোমার কাপল ডান্স … নাও নাও জলদি পার্টনার সিলেক্ট কর …এখানে কে ভালো ডান্স করতে পারে ….? ” এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল মৌসুমি ।
-“তামিম , তুই যা “…মিলির কথায় অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকাল সম্রাট ।
-“আ …আমি ! না বাবা, আমি আর যাচ্ছি না । এমনিতেই ‘উরু উরু’ করতে গিয়ে কতকগুলো ক্যালোরি ঝরে গেছে কে জানি? আমি আর ক্যালোরি লস করতে পারব না । তার থেকে বরং সম্রাট যাক ..। ওর যেমন গানের গলা ভালো তেমনি ভালো ডান্স ও করতে পারে ।”
তামিমের কথায় বাকি সবাই ও একবাক্যে সায় দিল । সম্রাটের খুশিতে উরাধুরা ডান্স করতে ইচ্ছে । কিন্তু মুখে মিন মিন করে বলল,
-“কিন্তু আমি তো ব্যস্ত আছি… ” ক্যামেরাটা দেখিয়ে বলল সম্রাট ।
-” তুই ক্যামেরাটা আমাকে দে …. এখন যাহ ” এগিয়ে গিয়ে বলল তামিম ।
-“কিন্তু আমি ওর সাথে ডান্স করব না ..”মুখ গোমরা করে বলল রানি । কিন্তু ওর কথাটা ধোপে টিকল না । সবার জোরাজুরিতে মুখ ভার করে স্টেজে দাড়িয়ে রইল । এদিকে স্পিকারে বেজে উঠল …
“তু জান হ্যায় , আরমান হ্যায় ,
মেরে পেয়ার কি প্যাহেচান হ্যায় ,
পর থোরি থোরি তু নাদান হ্যায় ”
বিশেষ অঙ্গভঙ্গি করে রানির আশেপাশে ঘুরে ঘুরে গাইল সম্রাট । তারপর রানির ডান হাত ধরে একবার ঘুরিয়ে দিয়ে গেয়ে উঠল ,
তু যো ক্যাহেগি , মে ব্যায়সা কারুঙ্গা
তেরি হার জিদ কো পুরা কারুংগা ।
রানিও অল্প হেসে সম্রাটের সাথে সাথে রেসপন্স করল । কিন্তু মুখের কঠিন ভাবটা বজায় রাখল । এরপর সম্রাট কানে ধরে আবার গাইল,
চালো বাবা মাফ কারো , হাস ভি দো ,
ম্যায়নে দিল সাফ কিয়া ,ক্যাহ ভি দো ।
রুঠনা মানা-না হ্যায় পেয়ার কি আদা ,
ক্যায়সে জিয়ুংগা মে তুমসে হোকে জুদা ।।
গানের সাথে সাথে দুজনের এক্সপ্রেশন এত সুন্দর মিলে গেল যে সবাই এতক্ষন তন্ময় হয়ে দেখল । কিন্তু গান শেষ হতেই কেউ তালি দিয়ে উঠল আর
মৌসুমী, মিলিরা , ” হবে না, হবে না , এই গান চলবে না । ”
বলে বিরোধিতা করল । রানি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ,
-“কেন হবে না ? কি খারাপ আছে এই গানে ?”
মৌসুমী বলল,
-“কাপল ডান্স এ রোমান্টিক সং এ নাচতে হয় । তোদের টা রোমান্টিক ছিল না । ”
-“ভাবি ,এটা কিন্তু চিটিং হয়ে যাচ্ছে । চিরকুটে কোথাও কিন্তু লেখা ছিলনা কেমন গান থাকবে ? তাই এখন আর কোনো বাহানা দেখাবা না । আমি আর পারব না ”
– ” উম হু , আমরাও কোনো এক্সকিউজ শুনছি না । বিলকিস , একটা রোমান্টিক গান লাগা তো । ”
বিলকিস যেন এতক্ষণ এই আদেশ টুকুর জন্যই অপেক্ষা করছিল । নিজের বোন হলেও রানিকে সে খুব ভয় পায় । হুট হাট রেগে যায় কিনা । তাই একটু সমঝে চলে সবসময় । মৌসুমীর কথায় রানির দিকে একবার তাকিয়ে ব্লটুথে অরিজিৎ সিংয়ের একটা রোমান্টিক গান চালিয়ে দিল ।
স্টেজের ওপর মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে রানি আর সম্রাট । বিলকিস বুদ্ধি করে এল.ই.ডি লাইটটা অফ করে দিয়ে একটা কালারিং বালভ জ্বালিয়ে দিল । অন্ধকারে নানা রঙের আলোর খেলায় দুটো মানব মানবী একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে । চারটি চোখ আটকা পড়েছে একই সরলরেখায় । আলোআধারিতে বাকি সবার উপস্থিতি যেন উহ্য হয়ে গেছে । শুধু কানের কাছে বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আছে দুটি শব্দ “রানি-সম্রাট ,রানি-সম্রাট ” । মুগ্ধ হয়ে সম্রাট দেখছে রানিকে । এই রঙের খেলায় তার প্রেয়সীকে কি দারুণ চমৎকার দেখাছে । মোহাবিষ্টের ন্যায় সম্রাট নিজের ডান হাতটা রানির বাঁ হাতের পাতায় রাখল । বাঁ হাত দিয়ে রানির ডান হাতটা নিজের বাম কাধে রাখল । রানি অবাক চোখে দেখছে শুধু । শ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে । সম্রাট বাঁ হাতটা রানির কোমড়ে রাখতেই কেঁপে উঠল রানি । এক অজানা,অচেনা শিহরণে দুজনেই শিহরিত হয়ে উঠল। গানের তালে ছন্দে-ছন্দে শরীর দোলালো দুজনে । ধীরে ধীরে লজ্জায় আরষ্ঠতায় ডুবে যেতে লাগল রানি । তবুও সরে এল না । পারল না খুব করে বকে দিতে সম্রাটকে । ভালো লাগছিল সময়টা । মনে ডায়েরীতে গোটা গোটা অক্ষরে মনটা যেন কি সব লিখে যাচ্ছিল ! রানি প্রান পণ চেষ্টা করল সেই শব্দ গুলোকে উদ্ধার করার । কিন্তু আজ মনে হয় মনকন্যাটা বেজায় ব্যস্ত । রানির দেওয়া কাজটা তো করলই না বরং এক অদ্ভুত ভালোলাগায় বুদ হয়ে রইল ।
-” শুনতে পাচ্ছিস ?” নাচতে নাচতেই ফিসফিস করে বলল সম্রাট । রানি চোখের চোখের ইশারায় কি জিজ্ঞেস করল । সম্রাট আবার ফিসফিস করে বলল,
-“আমাদের নামেতেও কত্তো মিল ? …রানী-সম্রাট । পারফেক্ট কম্বিনেশন । তাই না । আমি এতদিন ঠিক মতো খেয়ালই করিনি। মনে হচ্ছে আম্মু ,খালামনি প্ল্যান করে আমাদের নাম রেখেছে । ওরাও মনে হয় জানত ভবিষ্যতে আমিই তোর ভাগ্যে আছি । তাই বোধ হয় মিলিয়ে রেখেছে …”
কথা শেষ হয় না সম্রাটের । তাতেই রানি সম্রাটের পায়ে পাড়া দেয় । দাঁত কিড়মিড় করে চাপা স্বরে বলে,
-“এসব খায়ালি পুলাও পাকানো বন্ধ করবি । যত্তসব।”
ব্লুটুথ স্পিকারে তখন গান বদলে গিয়ে শ্রেয়া ঘোষাল গাইছে ..
চল চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন
আর কবিতায় শুয়ে কাপ্লেট,
আহা উত্তাপ, কত সুন্দর
তুই থার্মোমিটারে মাপলে ।
হিয়া টুপটাপ ,জিয়া নস্টাল
মিঠে কুয়াশায় ভেজা আস্তিন,
আমি ভুলে যাই ,কাকে চাইতাম
আর তুই কাকে ভালোবাসতিস।।
গান শেষ হলেও সবাই ঘোর লাগা চোখে চেয়ে আছে স্টেজের দিকে । আলো জ্বলে উঠতেই সবাই হ হই করে ওঠে । মৌসুমি তো মুখ ফসলে বলেই ফেলল,
-“বাপরে , তোদের কেমিস্ট্রি তো শাহরুখ আর কাজলকেও হার মানিয়ে দেবে । কি পারফরম্যান্স করলি তোরা ! জাস্ট ওয়াওও ”
-“যা বলেছ, ভাবি । এদের দেখে এখন কেউ বলবে যে এরা সারাদিন টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করে ”
তামিমের কথায় সম্রাট রানি দুজনেই লাজুক হাসল । সবাই আলো আধারিতে কি দেখল কে জানে কিন্তু তামিম ক্যামেরায় প্রতিটা মুহূর্ত দেখেছিল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে । ক্যামেরার সাথে সাথে ওর চোখেও ধরা পড়ল দুজনের চোখের ভাষা । তাই সে শুধু মুখ টিপে হাসল ।
সেই সাথে আর একজন ভীড়ের মাঝে বসে পুরো দৃশ্য টা অবলোকন করল ঠিকই । কিন্তু ঠিক খুশি হতে পারল না । সে ভাবতে লাগল তার ছাত্রীটি আর সেই বছর সতেরোর কিশোরি নেই । সময়ের সাথে সাথে সেও অনেক বদলেছে ।কিশোরী থেকে তারুণ্যে পড়েছে । বদলে যাচ্ছে তার অনুভুতি গুলো । আজ যার কথা মনে করে এত দুর এল সেই কারণটা কেমন ধোয়াশা লাগছে আশিকের ।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সাড়ে বারোটা বাজল । রানি বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে । ঘুমকুমারী আজ শত্রুতা করেছে ওর সাথে সাথে । চোখ বন্ধ করতেই ওর আর সম্রাটের নাচের দৃশ্য গুলো চোখে ভাসছে । একি বিছানায় চাপাচাপি করে চার জন শুয়েছে । মিলি ,মোস্তাফিনা আর বাণি বেঘোরে ঘুমুচ্ছে । নড়াচড়া করতেই বাণী হাতের বেড়ি দিয়ে জাপটে ধরল রানিকে।
রাত কটা কে জানে ? মেসেজের টুংটাং আওয়াজে সদ্য আসা ঘুমটা ভেঙে গেল রানির । ফোন হাতে নিয়েই চক্ষু চড়কগাছ । আবার পরপর চারবার টুংটাং করে উঠল । সম্রাট লিখেছে ,
-” ওই রাণী , ঘুমিয়ে পড়েছিস ?”
-“জানি ঘুমাসনি ..”
-” রিপ্লে দিচ্ছিস না কেন ?”
-“আচ্ছা , থাক । দিতে হবে না । শুধু আমার কথা গুলো শুনলেও হবে ….”
মেসেজ গুলো দেখে রানি থম মেরে রইল । একে আনব্লক কে করেছে ? আবার টুং করে রিংটোন বাজল ফোনটা ,
-” দেখেছিস, আজ ভাবিও সার্টিফিকেট দিয়ে দিল আমাদের । শাহরুখ -কাজলের থেকেও আমাদের জোরি নাকি বেস্ট ! আহা , শুনেও শান্তি জানিস তো। তাহলে ভাব সত্যি সত্যি হলে কেমন হবে ? আচ্ছা, তোর কি মনে হয় ? ”
-“তুই এসব ফালতু প্যাচাল পাড়ার জন্য এই রাত দেড়টায় মেসেজ দিয়েছিস ?”
-” প্যাচাল কোথায় পারছি ? ঘুম আসছে না আমার । খালি তোর কথা মনে পড়ছে । আর তুইও তো জেগেই আছিস । তাহলে কথা বললে দোষ কোথায় ?”
-” জেগে নেই । ফোনের ভাইব্রেশন শুনে ঘুম ভেঙেছে । এমন প্যাচাল পাড়বি তো আবার ব্লক করে রাখব কিন্তু । ”
-” এমন ভাবার চেষ্টাও করবি না । নাহলে কাল তোর ফোন আস্ত থাকবে না । ”
মেসেজেও সম্রাটের ধমকি দেখে মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দিল রানি । রিপ্লে না দিয়ে ডাটা কফ করে রাখল ।
মেসেজ সিন অথচ রিপ্লে নেই দেখে দুই মিনিটের মতো অপেক্ষা করল সম্রাট । আবার ব্লক করে দিয়েছে কিনা চেক করে দেখল । না করে নি । ধমকে কাজ হয়েছে । মুচকি হাসল সম্রাট । আজ বিলকিসকে দিয়ে রানির ফোনে নিজের নাম্বার আনব্লক করেছে ও । কাল মেয়েটাকে চকলেট খাওয়াতে হবে পুরষ্কার স্বরূপ । ডিপিতে রাখা রাণীর ছবিটায় স্ক্রিনশট নিল । জুম করে দেখল কিছুক্ষণ । হাসলে রানির গজদন্তটা ঝিলিক দেয় । অপূর্ব লাগে তখন । ওই হাসি দেখেই এডগার অ্যালান পো এর একটু উক্তি মনে পড়ল সম্রাটের ,
There is no exquisite beauty… without some strangeness in the propotion
To be continue……