গল্পঃডাবর,পর্বঃদুই

0
1474

গল্পঃডাবর,পর্বঃদুই
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

ইরফান ওর মায়ের রুম থেকে চলে আসবে আর তখন ওর মা পিছন থেকে,
->বাবা আর একটা কথা?
->হ্যাঁ বলো।
->তোর সন্তান জন্মের আগ পর্যন্ত আমাদের ওপর আরো বিপদ আসবে শুধু মাত্র ওই সন্তানের ক্ষতি করার জন্য।
এবার ইরফান আরেকটু অবাক হয়ে গিয়ে বলল
->তুমি তো বললে এই সন্তান ওদের দিতে হবে তাহলে আবার বিপদ আসবে কি করে?
->যারা এই সন্তান গ্রহণ করবে তারা ছাড়াও আরো অন্য কেউ আছে যে ওদের সন্তান দিতে বাধা দিবে।
->বুঝতে পারছিনা আমি এখন কি করবো মা।তবে যা হবে দেখা যাবে।

ইরা শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো।বেশ ঘুম এসেছে ওর চোখে।মনে মনে ভাবছে ইরফান এখনো আসছে না কেন?কোন সমস্যা হলো না তো আবার?ইরা এসব ভাবছিলো তখন সে ওর সামনের দেয়ালের দিকে তাকালো,সেখানে দেখলো এক বিশাল টিকটিকি।ইরা হাতের বই পাশে রেখে ভালোভাবে উঠে বসলো সেই টিকটিকি দেখার জন্য।ইরা আনমনে বলে উঠলো,টিকটিকি এত বড় কি করে হতে পারে?টিকটিকিটি প্রায় এক ফুটের মতো লম্বা।ইরা দেখলো সেই টিকটিকি ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছে।ইরা ভয়ে চোখ বড় বড় করলো।মুহুর্তে সেই টিকটিকি আস্ত একটা মানুষের মতো বড় হয়ে গেলো।চার হাত পায়ে ভর দিয়ে সেটি দেয়ালের সাথে আটকে আছে।সে মাথা তুলে ইরার দিকে তাকালো।শরীর তার টিকটিকির মাথা হলো মানুষের।ইরা দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।ইরার চিৎকার শুনে ইরফান দৌড়ে আসতে লাগলো।ইরা ঘর থেকে বের হতে যাবে আর তখনই সে ইরফানের সাথে ধাক্কা খেলো।ইরা ইরফানকে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।ইরফান আলতো করে ইরার মাথা হাত বুলিয়ে বলল
->কি হয়েছে ইরা?
ইরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাতের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বলল
->ওই দেয়ালে এক ভয়ংকর বড় টিকটিকি আছে।
ইরফান দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে শুধু একটা ছোট টিকটিকি।সে ভাবলো এটা দেখে বোধ হয় ইরা ভয় পেয়েছে।ইরফান ইরাকে বলল
->দেখো ওখানে একটা ছোট টিকটিকি।আর কিছু নেই সেখানে।
->না ওখানে ওই টিকটিকি আছে।
->আহা একবার দেখো তো?
ইরা আস্তে আস্তে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো সেখানে যে সত্যি সেখানে সেই ছোট টিকটিকি ছাড়া আর কিছু নেই।তখন ইরা একটু স্বস্তি পেলো।ইরফান ওর মায়ের দিকে তাকালো।ইরফানের মা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।

পরেরদিন সকালবেলা ঘুম হতে উঠার পর থেকে ইরা বেশ চিন্তিত আছে রাতের ওই দুই ঘটনা নিয়ে।চায়ের কাপ হাতে চুপ করে বসে আছে।তা দেখে ইরফান বলল
->কি ভাবছো ইরা?
ইরফানের কথায় ইরার ভাবনায় ছেদ পড়ে।ইরা ওর দিকে তাকিয়ে বলল
->কাল রাতের ঘটনা গুলো নিয়ে ভাবছি।এসব কিছু আবার আমাদের বাবুর ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না তো?
ইরফান ইরার কাধে হাত রেখে বলল
->এমন কিছু হবে না।আমি আছি তো তোমার পাশে।আমাদের বাবু ভালো ভাবে আসবে দেখো।
->আমার বাবুর যদি কিছু হয় তাহলে আমি শেষ।
এই কথা শোনার পর ইরফান একটু চিন্তিত হলো কিন্তু ইরাকে বুঝতে দিলো না।তখন ইরা প্রশ্ন করলো
->রাতে মা কি কথা বলছিলো জানতে পারি?
ইরফান ভাবলো সত্যিটা জানানো যাবে না ওকে।তাই সে বলল
->তেমন কিছু না।আমাদের গ্রামের ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলো।ওখানে নাকি আমার বাবা-দাদার অনেক স্মৃতি আছে+আমাদের সন্তানকে নিয়ে বাবা কি স্বপ্ন দেখতো এসবই বললো আর কি?
->ও আচ্ছা।তবে বাবা বেঁচে থাকলে কিন্তু খুব ভালো হতো।নাতি-নাতনির সাথে আনন্দে মেতে থাকতেন।
->হুমম।
ইরফান ইরার সাথে কথা বলে সে অফিসে চলে গেলো।
ইরফান অফিসে বসে থেকে কাল রাতের ওর মায়ের কথা গুলো ভাবছে।ওর মা যেগুলো বললো সব সত্যি কি না?কিন্তু ওর মা মিথ্যা কেনই বা বলবে।আবার ইরার দেয়ালে কি যেন দেখেছে তার মানে সত্যিই কি এমন কেউ আছে যে তাদের বাচ্চান ক্ষতি করতে চায়?ইরফানকে ওর মা যে কলসের কথা বলেছিলো সেটা দেখতে হবে তাহলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।এমন সময় অফিসের পিয়ন রমিজ মিয়া আসলো চা হাতে,এসে বলল
->আসবো স্যার?
->হ্যাঁ আসুন।
রমিজ মিয়া এসে ইরফানের হাতে চায়ের কাপ দিলো।রমিজ মিয়া ইরফানের বাবার সময় হতে এখানে কাজ করছে।ইরফান বলল
->আপনাকে আমি একটা কথা বলবো?
->জ্বি বলুন?
->তার আগে চেয়ারে বসুন।
রমিজ মিয়া একটু ভীত হয়ে চেয়ারে বসলো।মনে মনে ভাবছে না জানি কি বলে।ইরফান বলল
->আপনি তো গ্রামে থাকেন?আর যতদুর জানি গ্রামের মানুষ ভুত প্রেত বিশ্বাস করে তাই তো?
->হ্যাঁ।কিন্তু স্যার আজ হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করলেন কেন?
->বলছি।আপনি এমন কি কোনো কাহিনি জানেন যে মানুষকে স্বপ্নে কলস ভর্তি টাকা দেয়।কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পর সত্যি সত্যি সে টাকা পায়।আর এই টাকার বিনিময়ে মানুষের প্রথম সন্তানকে বলি দিতে হয়?
কথাটা শুনে রমিজ মিয়া একটু চমকে গেলো।তারপর বলল
->হুম এরকম কাহিনি সত্যি।কলস ভর্তি যে টাকা মাটির নিচে থেকে উঠে আসে সেটাকে বলে ডাবর।এই টাকা গুলো ভালো টাকা না।এগুলো সাধারনত খারাপ কোন পিশাচদের টাকা।তারা এই টাকার বিনিময়ে সন্তান চায় নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।
->ও আচ্ছা আচ্ছা।তবে এটা থেকে বাঁচার উপায় নেই কি?
->আমি সঠিক জানিনা।তবে তাদের চাওয়া পূরন না করলে তারা যাদের ওই টাকা পয়সা দেয় তাদের সবাইকে মেরে ফেলে।
->বুঝলাম।আপনি এখন আসতে পারেন।
রমিজ মিয়া ইরফানের সামনে থেকে চলে গেলো।ইরফান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চিন্তা করছে সে ইরা যদি এটা জানতে পারে তাহলে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে।এদিকে ওর মা আর যাইহোক মিথ্যা বলবে না।আজ রাতে বাসায় গিয়ে সে কলসটা দেখবে।
ইরা বিকেলবেলা ছাদে আসলো।সে ছাদের আসার পর ওর লাগানো ফুল গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।সব গুলো গাছ মরে একদম কালো হয়ে গেছে অথচ কালই সব গুলো গাছ একদম ভালো ছিলো।কাল বিকেলের পর আর ছাদে আসা হয়নি আর এইসময়ের মধ্যে এমনটা কি করে সম্ভব?ইরা ওর শাশুড়ি রাহেলা বেগমকে ডাকলেন।রাহেলা বেগম ছাদে আসতে ইরাকে জিজ্ঞেস করল
->মা দেখুন না গাছ গুলো কেমন যেন কালো হয়ে গেছে।এটা কি করে হলো?
রাহেলা এমনটা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন গাছ গুলোর দিকে।তার মানে নিশ্চয় এবার এই বাড়ির দিকে অশুভ ছায়া পড়েছে।রাহেলাকে চুপ থাকতে দেখে ইরা বলল
->কি হলো মা চুপ করে আছেন কেন?
->ইরা তুমি আজকের পর থেকে আর ছাদে আসবে না।
->কেন মা?
->কারন তোমার এই অবস্থায় সিড়ি দিয়ে উঠানামা করা ঠিক হবে না বুঝতে পেরেছো তুমি।চলে এসো।
ইরা আর কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো রাহেলার সাথে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো।ঠিত সেই মুহূর্তে ওই কালো হয়ে যাওয়া গাছ গুলো থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে লাগলো।আর মূহুর্তে সব গুলো গাছ হাওয়ায় মিশে গেলো।একটু বাদে একটা ছায়া ছাদের সিড়ি ঘরে প্রবেশ করলো।
ইরা ফুলের গাছ গুলোর কথা ভাবছে,হঠাৎ এগুলোর অবস্থা এমন কি করে হলো?ভালো লাগছে না ব্যাপারটা।ইরফানকে ইরা ফোন দিলো।ইরফান একটু বাদে বাড়ি আসছে বলে জানিয়ে দিলো।

ইরফানের মা রাহেলা বাড়ির গুপ্ত ঘরে প্রবেশ করলেন,এই ঘর সম্পর্কে ইরফান বা ইরা কেউ জানেনা।সেখানে একটা টিলার ওপর স্বর্নের কলস রাখা।কলসের ভিতর অসংখ্য টাকা পয়সা।সোনা হিরা রয়েছে।আর সেসবের ওপর বসে আছে এক কালো সাপ।হঠাৎ অদৃশ্য অবস্থায় কেউ বলল
->তোদের বাড়িতে সেই অশুভ শক্তির প্রবেশ ঘটেছে।তোরা যেভাবে পারিস ওই সন্তানকে রক্ষা কর।নয়তো তোরা সবাই মরবি।
রাহেলা কথাটি শুনে ভয় পেয়ে গেলো।ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে।তখন আবার সেই আওয়াজ এলো আর বললো
->তোর ছেলের বউয়ের জীবন নাশের আশংকা রয়েছে তাকে গিয়ে রক্ষা কর।
রাহেলা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি গুপ্তঘর ত্যাগ করলেন।
ইরা বিছানায় শুয়ে আছে এমন সময় ছাদের দিকে চোখ পড়তে ভয়ে আৎকে উঠলো সে।ফ্যানের ওপর এক ভয়ংকর জন্তু ঝুলছে।যার সাথে রয়েছে সাপের মতো অসংখ্যা সুড়।ইরা উঠে চিৎকার দিতে যাবে অমনি সেটি ইরার গায়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো আর ইরার হাত পা পেট বুক সবকিছু বিছানার সাথে চেপে ধরলো।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here