গল্পঃশিশিরের কহিনুর,০৪,০৫

0
1094

#গল্পঃশিশিরের কহিনুর,০৪,০৫
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ০৪

গিফ্ট বক্স আর বুকে টা রুমে নিয়ে গেলাম,তারপর বুকে টা বিছানায় রেখে গিফ্টবক্সটা খুলতে লাগলাম,গিফ্ট বক্সের ভিতর একটা নীল রঙের সুন্দর ডিজাইন করা শাড়ী,শাড়ীটা আমার খুব ভালো লাগলো,টেনে তুলেই গায়ে জরালাম তখনি চোখ পড়লো ওর নিচে থাকা চিরকুটের উপর,চিরকুুটটাও নীল কালারের ওটার গায়েও কিছু লিখা,লিখাগুলা আমি পড়তে লাগলাম

প্রিয়সী

তুমি জানো না তুমি কতো নেশাময়ী,তোমার ওই বৃষ্টিতে ভেজা মায়াভরা মুখখানি আমার সব নেশা কেরে নিয়েছে,তোমার ভয়ে অভাবে আমায় জড়িয়ে ধরা আমার মনে আলাদা এক অনুভুতির সৃষ্টি করেছে যা এর আগে কখনো অনুভব করি নি মায়াবতী,বুঝতেই পারি নি খনিকেই তোমার ভালোবাসার টানে কিভাবে হারালাম,তবে এটা বুঝতে পেরেছি এই মায়াজাল থেকে কখনো বেড়িয়ে আসতে পারবো না,কখনো না,ভালোবাসি তোমায় প্রিয়সী,এই নীল রংটা আমার অনেক পছন্দ তাই শাড়ীটা তোমায় গিফ্ট করলাম,আমার ভালোবাসার প্রথম উপহার আমার প্রিয়সীর জন্য,এই নীল শাড়ীতে যে তোমায় আরো মায়াবিনী লাগবে মায়াবতী,খুব জলদি তোমায় নিজের রঙে রাঙিয়ে নিয়ে আসবো নিজের জীবনে।তুমি শুধু আমার হবে প্রিয়সী,শুধুই আমার।

তোমার কুনোব্যাঙ।

চিরকুটটা পরে অনেক রাগ হলো বুঝতে পারলাম রাতের ওই কুনোব্যাঙটাই পাঠিয়েছে এসব,আসার আগে যে কুনোব্যাঙ বলে এসেছিলাম তাই ওটাই নিজের নাম বানিয়ে নিয়েছে,শয়তান বজ্জাত কুনোব্যাঙ সুন্দরী মেয়ে দেখলেই মেয়ে পটানোর ধান্দা মাথায় আসে,যত্তসব ভালোবাসার প্রথম গিফ্ট দেওয়া দাঁড়া বের করছি তোর গিফ্টের ১৪ টা,তারপর শাড়ীটা রুমের বারান্দা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলাম সাথে ফুলগুলোও,রাগটা এখনও যায় নি আমার,সাহস কি করে হয় আমাকে এসব দেওয়ার,আমাকে ভালোবাসার সাহস হলো কি করে ওই কুনোব্যাঙটার,এই আরোহী নুর কখনো কারো হবে না ওর জীবনে শুধু ওর নিজের অধিকার আছে আর কারো নেই,ও মুক্ত হয়ে ঘুড়বে কখনো কারো হাতে আসে নি আর আসবেও না,হুহ।

এদিকে শিশির ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো মুখে এক ফালি হাসি,দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ ও অনেক খুশি,মেইন ডোর এর সামনে যেতেই ধাক্কা খেলো কারো সাথে।

আরে আরে আমার ভাইটা এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছে?

আরে আপু তুই এখানে?

হ্যাঁ আমি,তুই তো আর আমাদের ওখানে ভুলেও যাস না এমনকি ফোনটাও ধরিস না তাই ভাবলাম আমিই এসে যাই।

জানিস তো আপু সারাদিন কতো কাজ থাকে আমার তাই ফোন ধরতে পারি না,তবে আজকে যখন এসেছিস আজকে তুই এখানেই থাকবি কেমন,এবার তুই ভিতরে যা আমি আসি অনেক ইমপোর্টেন্ট কাজে যাচ্ছি।গুড নিউজ আছে আপু তোর জন্য এসে বলবো কিন্তু।

কথাটা বলে শিশির আর ভোরের জবাবের অপেক্ষা করলো না চলে গেলো।

আমার ভাইটাকে আজকে বড্ড খুশি দেখাচ্ছে,না জানি কতো বছর পর আমার ভাইটাকে এমন খুশি হতে দেখলাম,আল্লাহ আমার ভাইটার এ খুশিটা যেনো হারিয়ে না যায়,ওর এই হাসিটা তুমি সবসময় ধরে রেখো,নিজের ভিতর যে পাহাড় সমান ব্যাথা অভিমান লুকিয়ে বসে আছে সব ভুলার তৌফিক তুমি ওকে দিও খোদা,যদি সেদিন মা চলে না যেতেন তবে হয়তো কখনোই আমার ভাইটা এমন হতো না,আমার ভাইয়ের জীবনে তুমি এমন কাউকে পাঠিয়ে দাও খোদা যে আমার ভাইটাকে নিজের ভালোবাসায় আগলে রাখবে সারাজীবন,ওর ক্ষতগুলোতে ওষুধের কাজ করবে।ওর রাগ অভিমান সব মেনে নিয়ে ওর সাথে জীবন সাজাবে।

যাক অনেক মিনতির পর আপি বেরুতে যাওয়ার জন্য মানলো,আজকে আমরা বেরুতে যাবো, অবশেষে জার্নির ক্লান্তি যে আমার আপির কাটলো এটাই অনেক,তো আমি আপি আর জেবিন দুলাভাই বেড়িয়ে পড়লাম বেরুতে।আপনাদের হয়তো হাসি পাচ্ছে জেবিন দুলাভাই বলায় বাট আমি কি করবো আমার অনেক বড় বোন আছে মানে চাচাতো ফুফুতো আর নিজেরও তো একটা আছে এখন সবার স্বামীকে শুধু দুলাভাই ডাকবো কি করে একজনকে ডাকলে যে অন্যজন জবাব দিবে তাই সব দুলাভাইয়ের আগে ওদের বউয়ের নাম লাগিয়ে ডাকি বুদ্ধিটা ভালো না,যাকগে আমি আপি দুজনই ফুসকা খাচ্ছিলাম তখনি আপির একটা ফোন আসলো ইমপোর্টেন্ট, আপুকে নাকি এখনই এমারজেন্সি কোথাও যেতে হবে আসলে আপু পড়ালেখার পাশাপাশি পার টাইম একটা জব করে আজকে ছুটি নিলেও হঠাৎ এমারজেন্সি পরলো ওর তাই আমাদের ওখানে রেখেই চলে গেলো,আমরা এতিমধ্যে অনেক ঘুরিয়ে নিয়েছে এবার ফুচকা খেয়েই বাড়ি যেতাম তাই আপুর যাওয়ায় আর এতো খারাপ লাগলো না আমার,আপু দুলাভাইকে বললো আমায় বাড়ি নিয়ে যেতে,তারপর আর কি পেট পুরে ফুচকা খেয়ে চেপে বসলাম দুলাভাইয়ের বাইকে আর চলে এলাম উনার সাথে বাসায়,আসলে দুলাভাই আমাকে নিজের ছোটবোনের মতোই দেখে অনেক আদর করে আমায়,আসার সময় অনেক চকলেটও কিনে দিলো আমায় আমার যে চকলেট অনেক পছন্দ।

এদিকে প্রায় সন্ধ্যার দিকে ঘরে ফিরলো শিশির,ভোর ওর অপেক্ষায় বসে ছিলো,ওর ভাইকে দেখতেই হাসি মুখে ওর দিকে যাচ্ছিলো কিন্তু ওর ভাইয়ের মুখটা দেখেই ঘাবড়ে গেলো,ওর ভাই এখন অনেক রেগে আছে ওর মুখ দেখেই স্পষ্ট তা বুঝতে পারছে ভোর,শিশিরের রাগ যে একদম ভালো না,রাগটা তো ওর নাকের ডগায় থাকে,নিজের রাগে যে ওর কোনো কন্ট্রোল নেই,একবার রাগ উঠলে ওকে কন্ট্রোল করা কোনো মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়,রাগের মাথায় কি করে নিজেও জানে না,শিশির তেড়ে গিয়েই রুমের সবকিছু ভাঙচুর করতে শুরু করলো,ভোরও পিছু গেলো,ওকে অনেক কিছু বলছে ওকে শান্ত করার জন্য কিন্তু পারছে না,শিশির তো ভেঙেই চলেছে,আর চিৎকার করে করে বলছে কেনো কহিনুর কেনো তুমি এমন করলে কেনো?তুমি শুধু আমার তুমি জানো না, তুমি কেনো এমন করলে,এর মাসুল দিতে হবে ওকে, ওই লোকটাকে,হ্যাঁ দিতে হবেই, কহিনুর শুধুই একান্ত আমার, শুধুই আমার।

ভাই আমার একটু শান্ত হ,প্লিজ বল আমায় কি হয়েছে এমন করছিস কেনো বল?আর এই কহিনুরটা কে?বলনা ভাই এই কহিনুরটা কে?কি হয়েছে বলবি তো?

বোনের কথায় ঝট করে ওকে জড়িয়ে ধরলো শিশির আর চিৎকার করে করে বলতে লাগলো।

কেনো আপু কেনো?কেনো আমার সাথেই এমন হয়,কেনো কেউ আমায় ভালোবাসে না,যাকেই আমি আপন করতে চাই সেই কেনো পর হয়ে যায়,কেনো কেউ আমার ভালোবাসার মর্ম দিতে চায় না,আমি কি এতো খারাপ আপু বল না আমি কি খারাপ,তারপর ওর বোনকে ছেড়ে শান্ত ভাবে বললো।

না আপু এখন আমি আর এমনটা হতে দিবো না,আমি হারাতে দিবো না আমার জীবন থেকে কহিনুরের ভালোবাসা,পৃথিবীর সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাক আমার তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু কহিনুর চলে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো আপু,মরে যাবো আমি,আমার ওকে চাই আপু,ও শুধুই আমার,এখন ও নিজের ইচ্ছেতে থাকুক নয়তো অনিচ্ছাতে,কথাটা বলে শিশির আবার হন হন করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।ভোর ভ্যাবাচেকার মতো তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে।

আল্লাহ আমার ভাইটার কপালে আর কতো যন্ত্রণা লিখা আছে,জানি না ওর কি হয়েছে কিন্তু এটা তো বুঝতেই পারছি ও অনেক আঘাত পেয়েছে,আর কহিনুর নামের কোনো মেয়েকে নিয়ে হয়তো, কিন্তু ভাই তো কখনো কোনো মেয়েকে নিয়ে এতোটা ভাবে না তবে এই মেয়েকে নিয়ে কেনো এমনটা করছে,আল্লাহ ভাইটা আমার ভালোবাসার কাঙাল,কিন্তু সবার কাছ থেকে যে তা আশা করে না,মা চলে যাবার পর থেকে আজ অব্দি আর কারো কাছে ভালোবাসার আশা করতে দেখি নি ওকে কিন্তু আজ যে আবার ওর চোখে ভালোবাসার কাঙালি টা দেখলাম,আমার যে ওকে নিয়ে ভয় হচ্ছে খোদা,দেখে রেখো আমার পাগল ভাইটাকে।

সারাদিন ঘুরে একদম ক্লান্ত হই নি আমি,বাড়িতে আসার পর কতো দৌঁড় ছুঁট করেছি আমি জানি,আসলে অলসতা নামক জিনিস আমার মাঝে নাই,সারাদিন ডেং ডেং করে ঘুরে বেড়ানো আমার কাজ,এতো এনার্জি আমার মাঝে কোথা থেকে আসে তা আমি নিজেও জানি না,যাকগে দৌঁড় ছুঁট করে এবার বিছানায় গা এলিয়ে ফোন ঘাটছি,ফেসবুকের নিউজ ফিডের উপর থেকে তল পর্যন্ত যেতেই আছি,হঠাৎ চোখে আটকা পড়লো কালকের ওই বজ্জাত দুইটাকে যারা আমায় নিয়ে পিছু পরেছিলো, দুইটা বজ্জাতের সে কি হাল,কেউ এমন ভাবে মেরেছে যে মুখগুলো চিনাই যাচ্ছে না,নিউজ অনুযায়ী ওদের রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পরে থাকতে দেখে কিছু লোক পুলিশকে ইনফোর্ম করলেন, পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে ওরা না কি নারী পাঁচার এর কাজ করতো ওদের পুলিশ অনেক দিন ধরে খুঁজছিলো,কিন্তু ওদের ওভাবে পাবে আশা করে নি পুলিশ,পুলিশেরা বলেছেন ওদের এমন অবস্থা যে বেঁচে গেলেও কোনোদিন হয়তো আর নিজের পায়ে খাঁড়া হতে পারবে না,ওদের ডিরেক্টর আইসিইউ তে নেওয়া হয়েছে,খবরটা পরে আর ওদের অবস্থা দেখে ভয় লাগলো আমার,ধপ করে ফোন রেখে দিলাম পাশে আর অনেক সূরা পরে বুকে ফুঁ দিলাম আর ভাবতে লাগলাম

সামান্য আমার পিছু নেওয়াতে কি কুনোব্যাঙটা ওদের এ হাল করলো,পুলিশ যে রাস্তার এড্রেস বলেছে সে রাস্তা দিয়ে তো কালকে আমি দৌঁড়াচ্ছিলাম,তবে কি ওই ব্যাঙটা এমন করলো কিন্তু কেনো,তখনি আমার রুমের বারান্দা দিয়ে কেউ প্রবেশ করলো,আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করবো এর আগেই আমার মুখ চেপে ধরলো বিছানার সাথে চেপে।

চুপ একদম চুপ,কোনো শব্দ করবি না বলে দিলাম,সাহস কি করে হলো তোর ওই নিরবের বাইকে উঠার,বলেছিলাম না তোকে ভালোবাসি,বুঝতে পারিস নি তোকে নিজের করে রাখতে চাই,শুধুই নিজের করে,তুই শুধুই আমার,কিন্তু বুঝলি না তো তুই আমার অনুভুতিটা, বাট কথা কি করে মানাতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি,তুই আমার হয়ে থাকবি এখন ইচ্ছেতে থাক নয়তো অনিচ্ছাতে,শাড়ীটা ছুঁড়ে ফেলেছিলি না,ফুলগুলোও, ওই শাড়ী আর ফুলগুলো যেখানে ফেলেছিলি সেখান থেকে আবার তুলে আনবি আর কালকে সকালে ওই শাড়ীটা পড়ে খোঁপায় ওই ফুলের বুকে থেকেই ফুল লাগিয়ে রেডি হয়ে বাড়ির রাস্তার পাশে থাকবি আর যদি তা না করিস তবে তোর জেবিন আপির লাশটাই আমি ওই শাড়ী দিয়ে গাছে ঝুলাবো,অনেক ভালোবাসিস না ওকে,বাট তুই যদি আমায় ভালো না বাসিস তবে তোর ভালোবাসার কাউকেই আমি বাঁচিয়ে রাখবো না,আই প্রমিজ,কথাটা মনে থাকে যেনো।আর নিরবেরও যোগ্য ব্যবস্থা আমি করবো,কালকের ওই দুইটাকেও ছাড়ি নি আমার মায়াবতীর ক্ষতি করতে চেয়েছিলো যে,শেষ করে দেবো আমি সবাইকে যারাই তোমাকে আমার কাছ থেকে দূর করতে আসবে,তুমি শুধু আমার,শুধুই আমার ,চুপচাপ সকালে কথামতো চলে এসো, আমার আবার অপেক্ষা ভালো লাগে না,নাও বাই সুইটহার্ট।

কথাটা বলে লোকটা আমার মুখ ছেড়ে বারান্দা দিয়ে ঝট করে চলে গেলো,আমি ভয়ে যথারীতি কাঁপছি,মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার,বেশি রাত হয়নি দেখে বারান্দার দরজা টা লাগাই নি প্রতিরাতে ঘুমোনোর একটু আগেই তো লাগাই তাই,কিন্তু এভাবে কেউ বারান্দা দিয়ে ঢুকে আসবে কে জানতো,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা কালকের ওই কুনোব্যাঙটাই ছিলো,কালকে কতো সুন্দর করেই না কথা বলছিলো,আর আজকে কেমন রুপ পাল্টে ফেললো,কালকে একে ঠান্ডা জলের মতো লাগলেও আজকে আগুনের মতো লাগলো,ওর চোখের দাবানলে যেনো পুরিয়ে দিতোই আমাকে,এখন বিশ্বাস হচ্ছে কালকের লোকদুটোকে ওই মেরেছে হয়তো,এমন হিংস্রতা যে ওর কাছ থেকেই আশা হচ্ছে এখন আমার,হবে না কেনো আমার মুখটা এমনভাবে চেঁপে ধরেছিলো যে এখনও ব্যাথা হচ্ছে, হয়তো গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিলো আর একটু হলে হয়তো আমি ধম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম,এতো হিংস্র মানুষ হয় কি করে ,আবার যে বলে গেলো নিরব মানে জেবিন দুলাভাইকে ছাড়বে না,উনার ক্ষতি করবে,উনার সাথে যদি সত্যিই কিছু করে বসে,আর আমাকেও তো বলে গিয়েছে নীল শাড়ীটা পরে কালকে রাস্তায় যেতে না হলে জেবিন আপিকে মেরে ফেলবে,কিন্তু আমি কি করবো লোকটার ভয়ে কি আমি ওর হাতে জিম্মি হয়ে যাবো।

না আমি জিম্মি হবো না,এই আরোহী কারো কাছেই কখনো জিম্মি হবে না,ও যা বললো তা যেনো করেই দিবো,হুহ, মানুষ কি আর ওতো পাগল হয়,খুন করলে থানা পুলিশের ভয় থাকবে না বুঝি,না না হয়তো ওই বদ্ধ উন্মাদ আমায় জিম্মি করার জন্য কথাগুলো বলেছে এমন কিছুই করবে না হয়তো, আমি না গেলে।

চলবে…..

#গল্পঃশিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ০৫

পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার,ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা কানে নিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এলো জেবিন আপির কান্নামিশ্রিত কন্ঠ।

আরু রে তোর দুলাভাইকে কারা যেনো অনেক মেরেছে,ওর মাথাটা ফেটে গেছে,সকালে জগিং এ বেরিয়েছিলো তখন নাকি মুখোশধারী কিছু লোক লাঠি দিয়ে ওর উপর হামলা করে,স্থানীয় কিছু লোক ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসলেন আর ওর ফোনে আমার নাম্বার সবার আগে দেখে ফোন করে আমাকে ডাকেন, তুই ঘুমিয়ে ছিলি আর খবরটা শুনে আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি তাই তড়িঘড়ি করে ছুটে আসি।আমার নিরবের কি হবে রে আরু।

আপি তুই কাদিস না দুলাভাইয়ের কিছুই হবে না,ডাক্তার কি বলেছেন উনার অবস্থা এখন কেমন।

ডাক্তার কি বলবে রে আরু উনারা ওর চিকিৎসাই শুরু করেন নি এখন অব্ধি, কেউই এগিয়ে আসছে না,প্রথমে একটা হাসপাতালে ছিলাম ওখানে না রাখলে অন্যখানে আনলাম এখানেও রাখছে না,কেউ সাহায্য করতে চাইছে না,কেনো সবাই এমন করছে জানিও না, ওর অনেক রক্ত যাচ্ছে কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।

কথাটা শুনে আমার অন্তর কেঁপে উঠলো,ডাক্তারেরা এমন করবেন কেনো,হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতে বলা ওই ব্যাঙটার কথাগুলো,আমি কিছু আন্দাজ করতে পারলাম,আর আপিকে শান্তনা দিয়ে বললাম আমি দেখছি আপি তুই কোনো চিন্তা করিস না দুলাভাইয়ের কিছুই হবে না।তুই শান্ত হ আমি আমি আসছি।

তারপর ফোন কেটে ভাবতে শুরু করেছি কি করা যায়,আমি বুঝতে পেরেছি এটার পিছনে নিশ্চয়ই ওই বজ্জাতটার হাত আছে বাট এখন আমি কি করতে পারি,ভাবলাম আগে আপির বলা হাসপাতালে যাই তারপর কিছু করবো তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠে,আননাউন নাম্বার, আমি ফোনটা ধরলাম।

কি মায়াবতী টেনশন হচ্ছে দুলাভাইয়ের জন্য,হুম টা তো হবারই কথা,বলেছিলাম না ছাড়বো না ওকে।

আপনি কেনো এমন করছেন বলেনতো,কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার,কেনো আমার আপনজনকে কষ্ট দিচ্ছেন,আমি যতোটুকু জানি আপনিই দুলাভাইয়ের চিকিৎসা হতে দিচ্ছেন না,প্লিজ এমনটা করবেন না আমার দুলাভাইয়ের কিছু হলে আমার আপি বাঁচবে না প্লিজ উনার চিকিৎসা হতে দিন।কাঁদতে কাঁদতে বললাম কথাগুলো আমি।

আরে আরে ময়নাপাখি আমার কাঁদছো কেনো? তোমার কান্না যে সইতে পারবো না আমি,ওই নিরব তো ওর সাজা পাইছে আমার মায়াবতীকে নিজের বাইকে নিজের সাথে চড়ানোর জন্য,তবে তুমি যদি ওর চিকিৎসা করাতে চাও তবে আমার দেওয়া শাড়ীটা পরে খোপায় ফুল গুঁজে বাড়ির বাইরের রাস্তায় চলো আসো,নইলে এবার দুলাভাইতো মরবেই সাথে হয়তো আপিও যাবে সোনা।আমি জানতাম তুমি হয়তো আসতে না,আমার প্রাণপাখিটা, আমার হবু বউটা আমার মতোই জেদি হওয়াটা স্বাভাবিক মনে হলো আমার কাছে তাই একটু ব্যবস্থা করলাম ডাক্তারদের বলিয়ে এবার তুমি না আসলে তোমার দুলাভাইয়ের চিকিৎসাও হবে না।

দেখেন আপনি কিন্তু এখন লিমিট ক্রস করছেন আমি কিন্তু পুলিশে যাবো।

তোমার কি মনে হয় প্রিয়সী পুলিশ আমার কিছু করতে পারবে,যে জায়গায় শহরের কোনো ডাক্তারই তোমার দুলাভাইয়ের চিকিৎসা করছে না শুধু আমার ভয়ে সেখানে পুলিশ আমার কি করবে,হা হা হা,হাসালে ময়না হাসালে।
চুপচাপ রেডি হয়ে চলে এসো শাড়ীর সাথে আমার দেওয়া মেচিং জুয়েলারিও পড়বে বলে দিলাম কিন্তু , নাও জলদি চলে আসো আমার আবার অপেক্ষা সহ্য হয় না,প্লিজ কাম সুন বেবি, আই এম ওয়েটিং ফোর ইউ।তোমায় আমি মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দিলাম,মাত্র আধা ঘন্টা, জলদি করো ময়না,হা হা হা।

কেটে দিলো ফোনটা এবার কি করি না যাওয়া ছাড়া যে কোনো উপায় নেই আমার, আপনজনের জন্য যে যেতেই হবে,তাই আর দেড়ি না করে ছুটে চলে গেলাম সেখানে যেখানে শাড়ীটা ছুঁড়ে ফেলেছিলাম শাড়ীটা ঠিকঠাক সেভাবেই আছে সেখানে পরে,এটার সাথে মেচিং জুয়েলারিও ছিলো ওগুলাও পড়ে আছে, নিয়ে এলাম শাড়ীটা আর জুয়েলারিগুলো সাথে বুকেটাও,চোখ দিয়ে জল পড়া এখন অব্দি থামে নি,কোনোমতে শাড়ীটা পরে,জুয়েলারি গুলো পড়ে, চুলগুলো খোপা করে বুকে থেকে দুটি ফুল লাগিয়ে নিলাম,যেহেতু এক দিন হয়ে গেছে ফুলগুলো একটু শুকিয়ে গেছে কোনোরকম সেগুলো ফোপায় গুজে বিনা সাজেই বেরুলাম,রাস্তার পাশে যেতেই দেখলাম বজ্জাতটা দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে ঠেস দিয়ে হাতগুলো ভাজ করে ঠোঁটের কোনে একটা ডেবিল হাসি ঝুলিয়ে ,বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে চোখ সরাচ্ছেই না,বজ্জাতটার দিকে তাকাতেই ঘৃণায় আর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার,আমি যটফট করে ওর পাশে গেলাম আর বললাম।

আমি চলে এসেছি এবার দুলাভাইয়ের চিকিৎসা চালু করিয়ে দিন প্লিজ।

কিন্তু আমার কোনো কথাই যেনো এই বজ্জাতের কানে গেলো না,উল্টো আরও কি না কি করতে লাগলো আমার খোপা থেকে ফুলগুলো টেনে নিয়ে হাত দিয়ে ছিঁড়ে পায়ের তলায় ফেলে পিষে দিলো।

খনিক রাগী ভাব নিয়ে বললো আমার মায়াবতীর চুলে এসব নেতিয়ে পড়া ফুল মানায় না।

তারপর গাড়ি থেকে আরও তিনটি গোলাপ ফুল বের করে আমার খোপায় গুঁজে দিলো।

এই তো আমায় মায়াবতীকে এখন পার্ফেক্ট দেখাচ্ছে।(এবার মুখে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বললো কথাটা,এক মুহুর্তে এই উল্লুকটা ঝট করে রুপ পাল্টায় কিভাবে তা শুধু এই উল্লুকটাই জানে। আমি আবার বললাম।

আপনি প্লিজ দেড়ি না করে আমার দুলাভাইয়ের চিকিৎসা শুরু করান প্লিজ।

ইশ এতো দরদ কেনো হচ্ছে ওই নিরবের জন্য,ভালো করে দেখতেও দিচ্ছো না আমার মায়াবতীকে ,ওই নিরবের জন্য বেশি দরদ দেখালে নিজে গিয়ে ওকে প্রাণে মেরে ফেলবো,আমি ছাড়া কোনো ছেলের প্রতি তোমায় দরদ দেখাতে দেখলে ওকে প্রাণে মেরে ফেলবো আমি,তুমি শুধুই আমার।

দেখেন উনি আমার বড় ভাইয়ের মতো,উনি আমাকে নিজের ছোট বোন মনে করেন,প্লিজ আপনি উনাকে ছেড়ে দিন।

ভাইয়ের মতো হয় ভাই তো নয়,আমি যেনো আর তোমার আশেপাশেও ওকে না দেখি,এবারের মতো ওকে ছেড়ে দিচ্ছি শুধুই তোমার চোখের পানির বদৌলতে।

কথাটা বলে উনি ফোনে কিছু ঘাটাঘাটি করে আমাকে বললেন।

নাও শুরু হয়ে গেছে তোমার ওই দুলাভাইয়ের চিকিৎসা, তোমার জেবিন আপিকে ফোন করে সিওর হয়ে নাও।

কথাটা শুনতেই আমি আপিকে ফোন করলাম,আপি বললো এই মাত্র ডাক্তার দুলাভাইকে ভিতরে নিয়ে গেলেন,আপি আরও বললো আমি যেনো বাড়িতেই থাকি কোথাও যেনো না যাই তারপর ফোনটা রেখে দিলো।

আমি আমার কথা রেখেছি এবার তুমি তোমার কথা রাখবে,চলো উঠো গাড়িতে।

গাড়িতে উঠবো মানে আপনি তো শুধু আমাকে শাড়ী পরে আসতে বললেন কোথাও যাওয়ার কথা তো ছিলো না।

ওফ এতো কথা বলো কেনো তুমি চুপচাপ গাড়িতে উঠো নয়তো ডাক্তার যেভাবে তোমার দুলাভাইকে ভিতরে নিয়ে গেছে সেভাবেই বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে।

কথাটা শুনে আমি আর কিছু বললাম না চোখের অবাধ্য জল ফেলে গিয়ে বসলাম গাড়িতে উনিও পাশের সিটে বসে ড্রাইব করা শুরু করলেন,আমি চোখের অবাধ্য জল ফেলে বাইরের দিকে তাকাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম,বজ্জাতটাকে যে আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না,জানি না কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তবে কেনো যেনো মনে হচ্ছে এ যাই করুক আমার সাথে খারাপ কিছু করবে না, এই বিশ্বাসটা আমার মনে কেনো ঘর বাঁধলো কে জানে,যাকগে অবশেষে পৌছালাম কোথাও,গাড়িটা থামলো সেই বাড়িটার ভিতরে গিয়ে যেখানে পরশু রাতে এই বজ্জাতটার সাথে ছিলাম আমি,বুঝলাম বজ্জাতটা আমায় নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে,বজ্জাতটা গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে আমায় নামতে বললো আমি নামলামও,তৎক্ষনাৎ বজ্জাতটা কালোকাপড়ে আমার চোখ বাঁধলো।

এই যে আপনি পাগল হলেন না কি আপনি এসব কি করছেন?

বজ্জাতটা কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো।

হুম আমি তো পাগল কহিনুর,তোমার প্রেমে পাগল।

বজ্জাতটা আমার এতো সুন্দর নামটাও পাল্টে দিলো না কি,আমাকে কহিনুর বলছে কেনো, তবে আর কিছু বললাম না ভুলভাল নামে ডাকছে তাই ডাকুক আসল পরিচয় হয়তো জানে না উল্লুকটা,না জানাই ভালো,এদিকে এসব ভাবনার মাঝে বুঝতে পারলাম আমি হাওয়ায় দুলছি, তবে ভাবনাটা ভুল আমায় কেউ কোলে নিয়েছে আর সেটা উল্লুকটা ছাড়া আর কেউই হবে না,সত্যিই বজ্জাত,এতো গার্ডের সামনে কি এর লজ্জা করে না একটি মেয়েকে কোলে নিতে,আমি যে এর আগে কোনো ছেলের ধারে কাছেও যাই নি কোলে উঠা তো দূর,তাই হাত পা ছুটোছুটি করছি কিন্তু এই বিশালদেহী দানবের সামনে আমি শুধু তুলোর ন্যায়,তাও হাল ছাড়ছি না,কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারলাম ব্যাঙটা আমায় নামিয়ে দিলো কোথাও,কিন্তু এখন অব্দি আমায় ছাড়ে নি,কানের কাছে এসে আলতো করে বললো,

কহিনুর মাই লাভ এখানে একটু দাঁড়াও আমি আসছি,তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে,চোখটা কিন্তু ঝটফট খুলবে না এই বলে দিলাম।

তারপর অনুভব করলাম আমার আশেপাশে কেউ নেই মানে ব্যাঙটা চলে গেছে আর কে শুনে কার কথা ঝট করে দিলাম চোখের কাপড় টা খুলে,কিন্তু এ কি চারিদিকেই যে খুঁটখুঁটে অন্ধকার, হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে একটা লাইট জ্বলে উঠলো, নিজেকে একটা বড় হার্টের মধ্যে আবিষ্কার করলাম,হার্টটার চারিদিকের ফুল,সামনে বড় করে ফুল দিয়ে লিখা শিশিরের কহিনুর,চারিদিকে এবার নাইট জ্বলে উঠেছে তবে তা নীল কালারের পুরো ডিমলাইটের আলোর মতো, তখনি আমার ঠিক সামনে সিঁড়ির উপরের দিকে একজনের উপর লাইট পড়লো,ওই লোকটা আর কেউ নয় সেই ব্যাঙটা, আমার আপনজনকে কষ্ট দিয়ে নিজে সেলিব্রেট করতে এসেছে শয়তান লোক,একটা সাউন্ড বক্সে লো সাউন্ডে রোমান্টিক মিউজিক বাজছে,লোকটা বলছে আর আমার দিকে এগোচ্ছে।

কহিনুর যখন থেকে তোমায় দেখেছি তোমার মায়ায় পড়ে গেছি,এমনটা যে এর আগে কভু অনুভব করি নি মায়াবতী যেমনটা তোমায় দেখার পর অনুভব হচ্ছে,কখনো কাউকে নিজের অনুভুতির অংশ করতে চাই নি, চাই নি কাউকে নিজের একাকিত্বের সাথী বানাতে,নিজের জীবনের দূর্বলতা বানাতে চাইনি কাউকে কিন্তু তোমায় দেখার পর যে আমি নিজের অজান্তেই তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছি,তুমি যে আমার মনটা চুরি করেছো হৃদহরনী,তুমি যে আমার নিশ্বাস আমার আত্নার সাথে মিশে গেছো,আমার যে তোমাকে বড্ড দরকার,হবে কি আমার,নিবে কি আমায় মেনে,করবে কি আমাকে নিজের জীবনের অংশ।

কথাগুলো বলতে বলতে উনির আমার একদম কাছে চলে এসেছেন,এবার উনি আমার ঠিক সামনে সেই হার্ট সেইপের ভিতরে হাটু গেঁড়ে বসলেন,হাতে একটা আংটি বক্স,সেটাতে ডায়মন্ডের একটা খুব সুন্দর ডিজাইন করা আংটি ঝলমল করছে,উনি ওটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন।

আমি তোমাকে আমার জীবনে ভরে নিতে চাই প্রিয়সী,ভালোবাসতে চাই আজীবন,কখনো এভাবে কাউকে বলবো ভাবিও নি কিন্তু আজ তা করেই দিলাম,আসবে কি কহিনুর তোমার এই কুনোব্যাঙটার জীবনে?দেবে কি তোমার আলোয় আমার অন্ধকার জীবনটা আলোকিত করে?আই নিড ইউ মাই লাভ,আই লাভ ইউ কহিনুর,উইল ইউ মেরি মি।

কথাটা শুনতেই আমার রাগ চেপে বসলো মাথায়,প্রথমতো আমি জীবনে কাউকে জড়াতে চাই না মুক্ত স্বাধীন থাকতে চাই,আর দ্বিতীয় আমি একে চিনি না জানি না। তাছাড়া যে লোকটা মানুষকে কষ্ট দেয় সে লোকটা কাউকে ভালোবাসতে পারে কি করে,আর যাই হোক ওর এসব আমার কাছে ভালোবাসা মনে হচ্ছে না বরং পাগলামি মনে হচ্ছে,আমার আপনজনকে কষ্ট দিয়ে এসেছে আমার ভালোবাসা আদায় করতে,তা কোনো সময় মেনে নিবো না আমি,তাই কড়া কন্ঠে বললাম।

কি মনে করেছেন আপনি জোর করে যা তা করবেন আর আমি তা মেনে নিবো,আপনি হুট করে এসে আমাকে প্রপোজ করলেন আর আমি মেনে নিলাম,আপনি একটা হিংস্র পশু,উন্মাদ পাগল যে নাকি কারন ওকারনে মানুষকে কষ্ট দেয়,যার কাছে মানুষের আবেগ অনুভুতির কোনো মুল্য নেই, যে শুধু নিজের টাই আগে চিন্তা করে,আপনার মতো মানুষ যা চায় তাই পাওয়ার চেষ্টা করে আর যদি তা না পায় তবে টাকার পাওয়ারে তা নিজের করে নিয়ে আসে তারপর তা ভোগ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়,বর্তমানে আপনার আমাকে ভালোলেগেছে তাই আমাকে পাওয়ার চেষ্টা করছেন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছেন,আমি আজ না মানলে হয়তো জোর করে আমাকে রাখার চেষ্টা করবেন নিজের কাছে, বাট কয়েকদিন পর যখন আপনার মন আমার উপর ভরে যাবে তখন ছুঁড়ে ফেলেদিবেন আমায়,আপনাদের মতো বড়লোকদের ভালো করেই চিনি আমি,আপনারা আর যাই হোক ভালোবাসতে জানেন না,আর আপনি যা করছেন তা আমার কাছে পাগলামি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না,কিছুই না।

আমার কথাগুলো শুনে খনিকে উনার চোখজুড়ো লাল হয়ে গেলো,হয়তো রাগে,ছুঁড়ে ফেলেদিলেন হাতের আংটি বক্সটা আর উঠে এসে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে,আমি এটার তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম ফ্লোরে,চোখ ফেটে কান্না নামছে আমার,আমি মা-বাবার খুবই আদরের মেয়ে, আজ পর্যন্ত কেউই আমার গায়ে হাত তুলে নি,সবার অনেক অনেক আদরের কারনেই আমি এতো দুষ্টু, কিন্তু লোকটা যে আমার গায়ে হাত তুললো,তাই অনেক কান্না পাচ্ছে,বজ্জাতটা সেখানের সবকিছু ভাঙতে শুরু করলো পাগলের ন্যায়,চারিদিকের সুন্দর সাজ খনিকে অসুন্দর করে দিলো,আমি এর আচরনে ভয়ে রিতীমত কেঁপে উঠছি,লোকটি ভাঙতে ভাঙতে আমার কাছে এসে আমার বাজুতে ধরে আমায় দাঁড় করালো আর বললো।

আমি পাগল,এসব কিছুই আমার পাগলামি মনে হচ্ছে তোর কাছে,মন থেকে ভালোবেসেছি তোকে আর তুই এটাকে বিলাসিতার নাম দিলি,আমার সত্য ভালোবাসাকে এভাবে অপমান করলি,জানিস তুই জানিস হাজার হাজার সুন্দরী মেয়ে আমার পিছন লাড্ডু হয়ে আছে আর আমি শুধু তোর পাগল,আর সেই তুই কি না আমাকে অগ্রাজ্য করলি,আমার ভালোবাসাকে অপমান করলি শুধু তোকে ভালোবাসি বলে।

হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি,অপমান করেছি,আরও করবো,হাজারটা মেয়ে যখন আপনার পিছন পাগল তবে যান না ওদের কাছে যান,আমার পিছন কেনো পরে আছেন?যেতে দিন আমায়,বাঁচতে দিন নিজের মতো করে।

কথাটা বলতেই আবারও ওপর গালে আরেকটা থাপ্পড় পড়লো আমার,আমি আবারও ফ্লোরে লুটে পরলাম,তারপর লোকটা আমায় আবারও বাজুতে ধরে উঠালো আর আমার গলায় চেপে ধরলো আর দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল।

তোর পিছন পরে আছি কারন তোকে ভালোবাসি, তোকে আমার চাই এট এনি কস্ট,তুই শুধুই আমার,শুধুই আমার বুঝলি,এখন তুই ইচ্ছেতে থাক নয়তো অনিচ্ছায় আই ডোন্ট কেয়ার।

লোকটা কথাগুলো বলছে এদিকে আমার গলাটা অনেক জোরে চেপে আছে আমি পারছি না নিজেকে ছাড়াতে অনেক চেষ্টা করেও,আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,অবশেষে আমার চোখে অন্ধকার নামলো,তারপর ডুব দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here