গল্পঃ কিশোরী_বউ (সিজন_২)Part_2
#Writer_কাব্য_আহম্মেদ
. . . . . . .
সারারাত একফোঁটাও ঘুমালাম না। তিথির অবহেলা যে আমি সহ্য করতে পারছি না। তিথি কি করে এতোটা পালটে যেতে পারে।
( তিথি)
উফফ! কি অসহ্য লাগছে? বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। গায়ে খুব ব্যাথা করছে। জ্বর ট্বর এলো নাকি। রাতে অনেক সময় নিয়ে গোসল করেছিলাম। সেটারই প্রতিদান পাচ্ছি।
– আরে, আরে উঠিছিস কেনো?
উঠতে গেলেই কথাটা বলল সামিরা।
– কেনো? কলেজে যাবো না নাকি? ( তিথি)
– কি বলিস? জ্বরে তোর গা পুড়ে যাচ্ছে। আর তুই বলছিস কলেজে যাবি?
– হ্যারে, ক্লাস মিস করা যাবে না।
– মাফ কর বইন। তুই আমার এই একটা কথা শুনে আমাকে ধন্য কর। আজ প্লিজ কলেজে যাস না। ( সামিরা)
কি আর করা? এতো করে বলল। তারপরও কি করে যাই?
– তুই যাবি না?
– তোকে এই অবস্থায় রেখে আমি যাবো। ইম্পসিবল…
– ওহ।
– ভালো কথা এখন শুয়ে পড়। আমি দেখছি কিছু করা যায় কি না?
সামিরা চলে গেলো।
তিথি মোবাইল হাতে নিলো। কি ব্যাপার? কাব্য আজ একবারও কল করল না। কালতো আমাকে আঘাত দিয়ে ফোন কেটে দিলো। অথচ আজ এখনো কল করেনি। ভালোতো। খুব ভালো।
– দিস না কল। তোর কলের জন্য কি টেকা পড়ছে আমার। ঘৃনা করি তোকে।
চিৎকার করে বলল তিথি। সামিরা রান্না ঘর থেকে দৌড়ে রুমে এলো,
– কিরে কি হলো তোর?
– যাই হোক। তকে বলব কেনো?
– আরে তুই…
– তুই যাবি এখান থেকে।
– তোর মাঝে মাঝে কি যে হয়?
– তুই আর এক মিনিট এখানে থাকলে। তোর ঘাড় মটকাতে একটুও দেরী করব না আমি।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল তিথি। সামিরা চলে গেলো।
তিথির রাগে দুঃখে প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। আবার কান্না মুছে নিলো।
– কাঁদছি কেনো আমি? একটুও কাঁদবি না তিথি। কার জন্য কাঁদছিস তুই? ঐ বুইড়াটার জন্য। ঐ গাধারামটার জন্য।
তিথি নিজেই নিজেকে বলল। বারবার চোখের পানি মুছতেছে। তবুও আবার জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে। চোখের জল যেন থামছেই না।
,
কাঁদতে কাঁদতে তিথির জ্বর আরো বেড়ে গেলো। সামিরা ডাক্তার ফোন করে আনল। ডাক্তার তিথিকে চেক করে কিছু ঔষধ দিয়ে গেলেন।
তিথি জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল বকছে। সামিরা ভাবল,
– কাব্যকে ফোন করে কি তিথির অবস্থার কথা বলল? নাহ, যদি অফিসে থাকে।
মোবাইল রেখে দিলো ফোন করল না।
(আমি)
অফিসে বসে আছি। কিন্তু, বসে থাকাতেও বিরক্তি এসে গেছে। ভালো লাগছে না কিছু। তিথি একবারও কল করল না। অবশ্য জানতাম কল করবে না। আর আমি!
আমি কল করলে তো তিথির বিরক্তির সীমা থাকে না। তার চেয়ে বরং কল না করাই ভালো। আমি চাই না তিথি বিরক্ত হোক। কিন্তু, একটাবারও কি কল করবে না?
কখনো এতো কান্না আসেনি আমার। যতটা এখন আসছে। তিথিকে আগের মতো হবে না কখনো। আগের মতো ভালোবাসবে না আমাকে।
(সামিরা)
তিথি জ্বরের ঘোরে কাব্য, কাব্য করছে। কি করব? বুঝতে পারছি না। মাথায় জ্বল পট্টি দিলাম। খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। জ্বর তো কমছেই না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কি করব বুঝতে পারছি না?
কাব্যকে একটা কল করে দেখি।
সামিরার নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করলাম,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। হঠাৎ কল করলে যে, কোনো দরকার?
– আসলে, ভাইয়া। সকাল থেকেই তিথির খুব জ্বর। আর জ্বরের ঘোরে বারবার আপনার নাম জপছে। কোনো কিছুতেই কমছে না।
– কি বলছ কি? সকাল থেকে জ্বর আর তুমি এখ জানাচ্ছো আমাকে?
– আসলে, আমি ভেবেছিলাম। আপনি হয়ত অফিসে থাকবেন। তাই আপনাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না।
– আচ্ছা, আমি এখনি আসছি।
ফোন কেটে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় গিয়ে সোজা তিথির রুমে গেলাম। সামিরা তিথির মাথায় জল পট্রি দিচ্ছিল। তিথি চোখ বন্ধ করে আছে,
– ডাক্তার দেখিছো?
– হুম, ঔষধও তো খাওয়ালাম কিন্তু, কমছেই না।
আমি তিথির শিয়রে বসলাম।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
কপালে হাত দিয়ে দেখলাম অনেক জ্বর। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আস্তে করে ডাকা দিলাম,
– তিথি, তিথি।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
তিথি আস্তে আস্তে করে চোখ খুলল। পিট পিট করে তাকাল আমার দিকে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল।
– তুমি এসেছো।
– হুম।
তিথি অতিরিক্ত বাচ্চার লাগছিল। বাচ্চাদের মতো কথা বলছিল,
– আমি তোমার উপর রেগে আছি।
– কেনো?
– আজ একবারও কল করোনি আমাকে। দেখতেও আসনি।
আমি হেসে দিলাম।
– সরি, ভুল হয়ে গেছে। আমিতো অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সময় পাইনি।
তিথি মুখ ফুলিয়ে রইল।
– সরি, বললাম তো। এবার একটু হাসো।
তিথি একটু জোর করেই হাসল।
– জ্বর বাধালে কি করে? নিশ্চয়ই রাতে গোসল করেছো অনেক সময় নিয়ে?
– হুম।
– কেনো?
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– তোমার উপর রাগ করে।
– আমি আবার কি করলাম?
– আমি তো তোমার বউ তাই না। তুমি যেকোনো সময় কল করবে। তাহলে, রাতে বললে কেনো আমি বিরক্ত হচ্ছি। আমি কি তোমার কথা শুনলে বিরক্ত হই? তুমি জানো আমি তোমার কলের জন্য সারাক্ষণ অপেক্ষা করি।
তিথি কেঁদে ফেলল।
– সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন ভুল হবে না। কান্না করো না প্লিজ।
– আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।
ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল তিথি।
– বাসি তো।
– তাহলে, আমাকে আদর করেন না কেনো? ভালোবাস না কেনো?
– তুমি তো এখন অসুস্থ। আগে সুস্থ হও। তারপর আদর করবে বেশী করে কেমন।
– না, আমাকে এখনি আদর করতে হবে।
তিথি হাত বাড়িয়ে হালকা করে আমার কলারে ধরে ঠান মারল। আমি একটু ঝুকে গেলাম। তিথি একটা চুমু দিলো আমার গালে।
– এখন উঠো কিছু খাবে।
– না,খাবো না।
– কেনো?
– আমার ঐসব খাবার ভালো লাগে না। একটুও মিষ্টি না ওগুলা।
– খেতে হবে তো।
– না, খাবো না। ওগুলো ভালো লাগে না আমার।
– তাহলে, কি খাবে?
– চুমু।
চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল। আমি হেসে দিলাম। তিথিকে এখন আগের সেই তিথি মনে হচ্ছে। ছোট্র তিথি মবে হচ্ছে। আমার দিকে তাকাল তিথি। পিট পিট করে তাকিয়ে রইল,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
– তোমাকে দেখছি।
– কেনো আগে দেখনি?
– হুম, দেখেছিলাম। কিন্তু, এখন বেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে।
আমি আধশোয়া হয়ে বসে ছিলাম। তিথি একটু কষ্ট করে উঠে বসল,
– আরে উঠছো কেনো?
তিথি ধরে উঠালাম। তিথিও আধশোয়া হয়ে বসল। আমার বুকে মাথা রেখে শুলো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
– আচ্ছা, তোমার শরীরে এটা কিসের ঘ্রাণ?
– কি জানি?মনে হয় পারফিউমের। কেনো?
– ঐ ঘ্রাণ টা না খুব হট।
– মান!
আমি হেসে উঠলাম।
– মানে, ঐ ঘ্রাণটা আমার খুব ভালো লাগে। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
– আর আমাকে?
– তোমাকে আরো বেশী ভালো লাগে। তোমাকেও আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
– তাহল, খাও।
– খাবো?
– হুম।
তিথি বুক থেকে মাথা তুলল। শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করল। শার্টের সব বোতাম খুলে ফেলা শেষ। তিথি বুজে হামলে পড়ল। চুমু দিতে লাগল। মাঝে মাঝে কামড়ও দিতে লাগল। নাক ডুবিয়ে দিলো বুকে।
– এবার আমাকে খাও। ( তিথি)
আমার গলা জরিয়ে ধরে বলল।
– মানে!
– মানে, আমাকে চুমু খাও।
আমি তিথির কপালে একটা চুমু খেলাম।
– উঁহু, ওখানে না।
– তাহলে?
– এটায়। ঠোঁটে। তুমি যখন আমার ঠোঁটে চুমু খাও না। আমার মনে হয় আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই। কি যেন হয়ে যায় আমার? আর তোমার ঠোঁট দেখলে না আমার মনে হয় কামড়ে দিই।
তিথি আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আমার মাথার পিছনে হাত রেখে চেপে ধরল ঠোঁট। ঠোঁট চুষতে লাগল। কামড়ে দিলো হালকা করে। আমিও তিথির মাথার পিছনে চুলের উপর হাত রাখলাম।
,
অনেক্ষণ পর ঠোঁট ছাড়ল তিথি। একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
– জানো, তুমি আমাকে আদর করলে না আমার একটুও মনে হয় না যে আমি অসুস্থ।
তিথি আমার বুকে শুয়ে পড়ল। আমাকে জরিয়ে ধরল আষ্টেপৃষ্ঠে।
আমি ভাবছি, তিথি যেন সবসময়ই এমন থাকে। বদলে যেন না যায়।
– আমাকে আরো একটু আদর করো না প্লিজ।
– আচ্ছা, করবনে। আগে তো একটু সুস্থ হও।
– না, আমার এখনি চাই।
– আচ্ছা, আগে খাবার খেয়ে ঔষধ খাও। তারপর আদর করব।
উঠিতে গেলেই তিথি পিছন থেকে শার্টের কলারে ধরল। টান মেরে বসিয়ে দিলো। আমার বুকে মাথা রাখল,
– তুমি এতো খারাপ কেনো? কেনো বুঝনা তুমি আদর করলে আমি আর অসুস্থ থাকে না। আমি সুস্থ হয়ে যাই।
ঠোঁট কামড়ে কেঁদে দিলো তিথি। আমি তিথির মাথায় হাতে বুলিয়ে দিলাম। তিথি আমাকে জোর করে শুইয়ে দিলো। আমার বুকে হামলে পড়ল। আমি বুঝি না জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরও এই মেয়ের শরীরে এতো শক্তি আসে কোথা থেকে? আমার গালে মুখে চুমু দিতে লাগল।
আমি আর পারলাম না। তিথিকে আবদ্ধ করে নিলাম বাহুডোরে। তিথি শুইয়ে দিলাম বিছানায়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম।
গলার পাশে চুমু দিতে লাগলাম। তিথি আমার মাথা আঁকড়ে ধরল। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। কেপে কেপে উঠল তিথি।
– তিথি
– হুম।
– আরো ভালোবাসতে হবে?
– হুম, অনেক!
– এখন যদি তুমি খাবার না খাও তাহলে আর আদর করব না।
তিথি আমার চুল আঁকড়ে ধরল। আমার মাথা চেপে ধরল।
– প্লিজ, এমন করো না।
– তাহলে, আগে খাবার খেয়ে ঔষধ খাবে তো?
– খাবার খেয়ে ঔষধ খেলে, ভালবাসবে তো?
– হুম।
– আচ্ছা, খাবো।
তিথিকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলাম।
– এখন আদর করো।
চোখ বন্ধ করে বসে রইল বিছানায়। আমি তিথির কপালে একটা চুমু দিলাম,
– আগে শুয়ে পড়ো। এখন ঘুমাতে হবে তোমাকে।
– না, ঘুমাবো না। আমাকে আগে আদর করো।
– করব তো। আগে ঘুমাও।
– তাহলে শুয়ে পড়ো। ( তিথি)
– আমি কেনো শুব?
– আমি তোমার বুকে ঘুমাবো।
আমি হেসে দিলাম। পাগলি। তিথি আমার বুজে শুয়ে পড়ল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। হঠাৎ করেই সামিরা রুমে ডুকল,
– তিথির জ্বর…
বলেই হা করে তাকিয়ে রইল। মুখ ঘুরিয়ে নিল,
– সরি, সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি রোমান্স করছিলে তোমরা।
আমি তিথিকে সরাতে চাইলে। তিথি উউ করে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরল,
– না, আসলে হয়েছে কি?তিথি…
– না, বুঝতে পেরেছি। তিথির জ্বর এখন কেমন আছে?
– একটু কমেছে মনে হয়।
– ওও, তাহলে আমি যাই।
রুম ত্যাগ করল সামিরা। তিথি ঘুমুচ্ছে বেঘোরে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,
– তিথি,
– হুম।
– তুমি না আদর চাইলে। করব?
– হুম।
ঘুমের মধ্যেই বলে উঠল। আমি হেসে দিলাম।
পাগলি ঘুমের মধ্যেও ভালোবাসা চাই তার।
রাতে কখন ঘুমিয়েছিলাম মনেই নেই। ঘুম ভেঙে গেলো। বুকের মধ্যে তিথি শুয়ে আছে। আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে ঘুমুচ্ছে। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর তেমন নেই। মনে হয় কমে গেছে। তিথিকে সরিয়ে উঠতে চাইলাম।
– উম্মম..
করে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরল। ৯ঃ০০টা বেজে গেছে। অফিসে যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আছে। কিন্তু, তিথিকে তো বুক থেকে নামাতেই পারছি না। সরাতে চাইলেই আরো জোরে জরিয়ে ধরে।
শেষে কোনোরকমে ছাড়িয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিলাম। ফ্রেশ হয়ে তিথির কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,
– একি আপনি কোথায় যাচ্ছেন? (সামিরা)
– অফিসে।
– ওও, কিছু খেয়ে যান। কফি?
– না, অফিসে গিয়ে খেয়ে নিবো।
– না, সেটা কি করে হয়? আপনি বরং দুই মিনিট বসুন। আমি কফি নিয়ে আসছি।
– হুম।
কফি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্যে। আম্মু কল করেছিল। রাতে ফিরিনি তাই বোধ হয়। আম্মুকে কল করে তিথির জ্বরের কথা বললাম।
( তিথি )
ঘুম থেকে উঠে বিছানার মাঝখানটায় ঝিম মেরে বসে আছে। আচ্ছা, ওর শরীরের স্মেলটা আমার নাকে আসছে কেনো? কাব্য তো এখানে নেই তাহলে…।
– সামিরা, সামিরা..
– হ্যা, বল। তোর ঘুম ভাঙল। জ্বর কমেছে নাকি?
তিথি কপালে হাত দিয়ে বলল।
– আচ্ছা, ও কি এখানে এসেছিল?
– মানে! ওও টা কে?
– আরে কাব্যের কথা বলছি। এখানে এসেছিল?
– হ্যা, এসেছিল তো। কেনো তোর মনে নেই?
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
– না তো।
– আহা! কি রোমান্টিক সিন!
পুলকিত হয়ে বলল সামিরা।
– মানে, এই এই কি বলছিস তুই এসব?
– মানে, দেখলাম তুই কাব্য ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে ঘুমুচ্ছিলি। কাব্য ভাইয়ের বুকে শুয়েছিলি। আর রোমান্স গুলোর কথাতো নাই বললাম।
– মানে! এই তুই কি কি দেখেছিস?
– অনেক কিছু। ইশ! উনার মতো আমারও যদি একটা বর থাকতো। কত্তো রোমান্টিক! কত্তো কেয়ার করে তোকে। কাল সন্ধ্যার সময় এসেছিল। সারারাত তোর পাশে থেকে জল পট্রি দিচ্ছিল কপালে। নিজের হাতে খাইয়ে দিলো। জ্বর কি এমনি এমনি কমে গেছে নাকি?
– হুহ, কেয়ার না ছাই!
মুখ ফুলিয়ে বলল তিথি।
– আচ্ছা, আমার জ্বরের কথা জানল কি করে ওও?
– আমি বলেছি।
– কেনো? তুই ওকে বলতে গেলি কেনো?
রাগ দেখিয়ে বলল তিথি।
– মানে, তোর কি জ্বরটাই না ছিল? জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছিল। তাই কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে উনাকে কল করে বললাম তোর কথা।
– পুড়ে গেলে পুড়ে যেতো। কাল সারাদিন একটা কলও করেনি আমাকে। কি ভাবে ওও নিজেকে? আচ্ছা, এখন কোথায় আছে কুত্তাটা?
– অফিসে গেছে।
– জাহান্নামে যাক। আমার কি তাতে?
রাগে গজ গজ করতে লাগল তিথি। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল বেলা অনেক হয়ে গেছে। আজও কলেজ মিস হয়ে গেলো। ধ্যাৎেরি……।
আর গাধাটা এখনো ফোন করেনি কেনো? এই ওর ভালোবাসা। আমি অসুস্থ দেখে গেলো। অফিসে গিয়ে একবারও কল করে জেনে নিলো না আমি কি করছি না করছি? যত সব আদিক্ষেতা!
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে তিথির। ঐ বুড়োটাকে না মাঝে মাঝে চুমু দিতে দিতে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে। দূর। কি সব বলছি? চুমু দিয়ে আবার মেরে ফেলা যায় নাকি?
অপেক্ষা করতে করতে আর পারছে না তিথি। ফোন করল। বেশ কিছুক্ষণ পর ফোন রিসিভ হল,
– হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। ( ওপাশ থেকে একটা মেয়ে)
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– কে বলছেন?
– আমি তিথি।
– ওও, তুমি। কেমন আছো তিথি? আমি রিয়া। চিনতে পেরেছো।
– হুম ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
– আচ্ছা, কাব্য কোথায়?
– কাব্য তো মিটিংয়ে। মিটিং শেষ হলে আমি বলে দিবো, তুমি কল করেছিলে।
– হুম।
ফোন রেখে মোবাইল বিছানায় ছুড়ে মারল। বিছানায় বসে জোরে জোরে পা নাচাতে লাগল।
– মিটিং করা হচ্ছে। বের করছি তোর মিটিং।
রাগে গজ গজ করতে করতে বলল তিথি।
( আমি)
মিটিং শেষ রুমে এসে বসলাম। রিয়া জানাল, তিথি কল করেছিল। মোবাইল হাতে নিয়ে কল ব্যাক করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর রিসিভ করল,
– হ্যালো, তিথি।
ওপাশে নিরবতা। কিছুই শুনতে পেলাম না।
– তিথি, আমার কথা শুনতে পারছো?
– হুম।
দাতে দাত চেপে ধরে বলল তিথি।
– ওও, কি করছো? তোমার জ্বর কমেছে?
– হুম।
– কল করেছিলে?
– হুম।
– তোমার কি হয়েছে বলতো? কখন থেকে হুম হুম করছো।
– অনেক কিছু হয়েছে। আমার না এই মুহূর্তে তোর মাথাটা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। তাই, তুই এক্ষুনি অফিস থেকে বেরুবি। গাড়ি চড়ে সোজা বাসায় আসবি বুঝলি।
– তিথি, কি আবোলতাবোল বকছো? নিশ্চয়ই তোমার জ্বরের ঘোর এখনো রয়ে গেছে।
আমি হেসে বললাম।
– বাল।
রেগে গিয়ে বলল তিথি।
– আরে এটা কি রকম ভাষা তিথি? এরকম করে কেউ বলে। আমি না তোমার স্বামী।
অবাক হয়ে বললাম তিথিকে।
– তোকে যা করতে বলেছি তুই তাই তাই করবি। তুই এক্ষুনি আমার বাসায় আসবি। না হয় তোর সাথে ব্রেকাপ।
– মানে! স্বামী স্ত্রীর আবার ব্রেকাপ হয় নাকি?
হেসে দিলাম আমি।
– হয়। সেটা জেনে নে তুই। আর ১০ মিনিটের মধ্যে যদি তুই না আসতে পারছিস। তাহলে তোর সাথে তিন ব্রেকাপ। ব্রেকাপ,ব্রেকাপ,ব্রেকাপ।
ফোন কেটে দিলো তিথি।
,
সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। কি বলল এসব তিথি? মনে হয় জ্বরের ঘোরে এসব বলছে। কিন্তু, জ্বরের ঘোরে তো এরকম বলার কথা না। জ্বর হলে তো তিথি ভালোভাবেই কথা বলে। শুধু,একটু বাচ্ছা হয়ে যায়। কিন্তু, একটু আগে এটা কি হলো? বাব্বা ১০ মিনিট তো হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। না হয় কি যে হবে? আল্লাহই জানে।
গাড়ি স্টার্ট করে সোজা বাসায় গেলাম। কলিং বেল টিপার কিছুক্ষণ পর দরজা খুলল সামিরা। কিছু বলতে চাইছিল আমি কিছু বলার সময় না দিয়ে সোজা তিথির রুমে গেলাম। গিয়ে হাপাতে লাগলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০ হতে ২/১ বাকি।
তিথির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বললাম,
– ১০ মিনিটের মধ্যেই এসেছি।
তিথি এসে সোজা আক্রমণ করল আমার মাথার উপর। চুলধরে টানতে লাগল। মাথা ঝাঁকাতে লাগল,
– আরে আরে করছো কি তিথি? কি হয়েছে তোমার?
– তুই একটা খারাপ, লুচ্চা, খবিশ।
বলে মারতে লাগল আমাকে।
– মানে, কি করলাম আমি?
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
– আর একটাও কথা বলেছিস না তোকে আমি খুন করে ফেলল।
রাগে গর গর করতে করতে বলল তিথি।
আমি চুপচাপ বসে রইলাম।
– কি ভাবিস তুই নিজেকে? অভারস্মার্ট। তুই তো একটা গাধারাম। জানিস সারাদিন ধরে তোর কলের অপেক্ষা করছি আর তুই। মিটিং করা হচ্ছে তাই না। মিটিং! তোকে তো আমি…
আমার দিকে এগিয়ে এলো। বুঝতে পারলাম তিথি অতিরিক্ত রেগে আছে। আমার কাছে আসতেই আমি শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম তিথি। ঠোঁটে আস্তে করে চুমু খেলাম,
– ছাড়,আমাকে। ছাড়, ছাড় বলছি।
– আচ্ছা, আচ্ছা। সরিরে বাবা।
– না, ছাড়। এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে তাই না। ছাড় বলছি…
কেঁদে দিলো তিথি।
আমি জরিয়ে ধরলাম তিথিকে।
– প্লিজ, ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে আছো। এমনিতেই তোমার জ্বর তাই আর ফোন করে ঘুম থেকে জাগানো ঠিক হবে না। তাই ফোন করিনি। রাগ করে না প্লিজ লক্ষিটি।
– বুঝি তো। সব বুঝি। একটুও ভালোবাসো না আমাকে।
কান্না করতে করতে বলল।
আমি তিথির চোখের পানি মুছে দিলাম।
– প্লিজ, কেদো না। এই যে কান ধরলাম আর ভুল হবে না।
– কাল কল করলে না কেনো?
– তোমার পড়ায় ডিস্টার্ব হবে। আর তুমিতো বিরক্ত হয়ে যায় আমার ফোনে।
– তোর মাথা।
– আরে আবার কি হলো?
– তুমি কেনো বুঝনা? আমি কি তোমার ফোনে বিরক্ত হই। আমার তো সারাক্ষণ ইচ্ছে করে তোমার সাথে কথা বলতে। সবসময় অপেক্ষায় থাকি কখন তুমি কল করবে।
– ওকে, আমি ভুল করে ফেলেছি। এমন ভুল আর হবে।
– সত্যি তো।
– হুম।
– আচ্ছা, ঐ মেয়েটার সাথে তোমার এতো গায়ে পড়া ভাব কেনো? তোমার ফোন ঐ মেয়েটার কাছে থাকবে কেনো?
ভ্রু কুঁচকে বলল।
– আরে। আমার পি,এ ওও আর ফ্রেন্ডও। আমি মিটিং গেলে ওর কাছেই ফোন রেখে যাই। মিটিংয়ে তো ফোন নেয়া যায় না। তাই বুঝেছো…
– হুম,এখন শুনো। আজ তুমি সারাক্ষণ এখানেই আমার সাথে থাকবে। বুঝলে..
– আর অফিস?
– আমার থেকে তোর অফিস বড়।
– ওকে, ওকে যাচ্ছি না।
এতো দেখি রেগে পুরো ফায়ার। এতো রাগ!। কথায় কথায় রেগে যায়। তিথির কপালে হাত বুলিয়ে দেখলাম। জ্বর কমে গেছে।
– আচ্ছা, তুমি তো সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি। তোমার জন্য কিছু রাধি?
– নাহ, তুমি অসুস্থ। তোমার রাধে লাগবে না।
– আমি এখন পুরো সুস্থ। তাই তোমার কথা আমি শুনছি না। আমি তোমার প্রিয়ে বিরিয়ানি রেডি করছি। ওকে…
– আরে তুমি তো…
তিথি কোনো কথা না শুনে রান্নাঘরে চলে গেলো। এই পিচ্ছিকে নিয়ে আর পারা যায় না।
ফেভারিট বিরিয়ানি দিয়ে জম্পেশ একটা খাওয়া দিলাম। তিথিকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাওয়ালাম। যদিও তিথি খেতে চাইছিল না।
,
রাতে তিথি পড়ছে। আমি ওর পাশে বসে আছি। আমি তিথিকে জরিয়ে ধরলাম,
– তিথি!
– হুম।
পড়ার দিকে মনযোগ দিয়ে বলল।
– আচ্ছা, তুমি একদিন বলেছিলে না তোমার একটা বাবু চাই?
– হুম।
– তাহলে, এখন সেটার ব্যবস্থা করে ফেলি।
– হুম।
– কি হুম, হুম করছো? আমার দিকে তাকাও..
তিথির মুখ আমার দিকে করলাম।
– উফ! ডিস্টার্ব করো নাতো। পড়ছি তো..
– আগে, আমার কথা শুনো। তোমার একটা বাবু চাই বলেছিলে না? এখন আমারও ইচ্ছে করছে একটা বাবু হবে আমার।
হাসিমুখে বললাম আমি।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,
– তুমি কি বলতে চাইছো?
– আমি বলতে চাইছি, এখন তো তুমি অনেকটাই বড় হয়ে গেছো। একটা মা হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তোমার মধ্যে তা গড়ে উঠেছে। আই মিন তুমি এখন মা হওয়ার জন্য সবদিকে পার্ফেক্ট। তাই…
– অসম্ভব!…
তিথি চোখ বড় বড় করে বলল। আমার মুখ মলিন হয়ে গেলো,
– মানে!
– মানে, আমি এখন বাবু নিতে চাই না। আমি পড়াশোনা করছি এখনো। আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাই।
____চলবে_____
.
#কোনো গল্পের পর্ব খুজে না পেলে সর্বশেষ পোস্ট কমেন্ট করে জানাবেন।
।
।
।
#আপনাদের উৎসাহ পেলে পরবর্তী পার্ট দিবো। আসা করি সবাই লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকবেন।