গল্পঃ কিশোরী_বউ (সিজন_২)Part_3
#Writer_কাব্য_আহম্মেদ
. . . . . . .
– তিথি, এতে তো তোমার পড়াশুনোয় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমরা জাষ্ট প্লানিং করছি। (আমি)
– আহা! বিরক্ত করবে নাতো। দেখছো তো পড়ছি। তারপরও বিরক্ত করছো।(তিথি)
বিরক্ত নিয়ে বলল তিথি।
আমি তিথির দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝতে পারছি না কি বলব? তিথি এমন করছে কেনো? একটু আগেই তো সব স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে এখন কি হয়ে গেলো তিথির। তিথির কোনো দিকে মনযোগ নেই। পড়া করছে মন দিয়ে। সত্যি আমার বিরক্ত করাটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। বিছানা থেকে উঠে বারান্ধায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের বাম পাশটায় কেমন জানি চিন চিনে ব্যাথা হচ্ছে।
সব কিছু তো ঠিক ছিল তাহলে হঠাৎ করেই সবটা এভাবে অগোছালো হয়ে গেলো কেনো?
( তিথি)
উফ! এতো পড়া। পড়তে পড়তেই পাগল হয়ে যাবো দেখছি। আমার বোধ হয় আর সংসার করাই হবে না। আর বাচ্চাকাচ্চাও পালন করা হবে না।
ভাবতে ভাবতেই তিথির মনে পড়ল কাব্যের কথা। একটু আগে কি বলেছিলো কাব্য। ইয়েস, বাবুর কথা বলেছিল। কিন্তু, আমি কি বললাম? দূর মনেই পড়ছে না। এতো পড়াশোনা। এসব মনে রাখা যায় নাকি?
হ্যা, এইতো মনে পড়ছে।
কাব্য আমাকে বাবু কন্সিভ করার কথা বললে। আমি কাব্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।
দূর! কি করলাম এটা? আমি নিজেই তো একদিন কাব্যের কাছে বাবু চাইছিলাম তাহলে…।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল নাহ বিছানায় নেই। উঁকিঝুঁকি মেরে বারান্ধার দিকে তাকিয়ে দেখল কাব্য দাঁড়িয়ে আছে বারান্ধায়।
খুব খারাপ লাগল তিথির। কাব্য বোধ হয় কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু…
তিথি উঠে বারান্ধার দিকে এগিয়ে গেলো।
– তুমি এখাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? ঘুমাবে না?
তিথির কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম,
– ওও, হ্যা।
বলেই তিথিকে পাশ কাটিয়ে রুমে ডুকলাম। তিথি কিছু বলতে চাইছিল বলতে পারল না। মনে খারাপ করে তাকাল আমার দিকে।
– তোমার পড়া শেষ হলে শুয়ে পড়ো?
বলে আমি শুয়ে পড়লাম একদিকে।
( তিথি)
আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। আমার বরটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু, আমিই বা কি করব? এতো পড়াশোনা। মাঝে মাঝে কি যে করি? নিজেই বুঝিনা।
ধ্যাত, কষ্ট দিয়ে ফেললাম নিজের অজান্তে। যেহেতু কষ্ট আমি দিয়েছি। সেহেতু, কষ্টটা আমাকেই ভুলাতে হবে।
খাটে উঠলাম।
সাহেব অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে। বেশ বুঝতে পারছি উনি ঘুমুননি।
– আমি ভাবছি কি? একটা বেবি কেনো নিবো টুইন বেবিই নিই?
বলে মুচকি হাসল তিথি।
আমি তিথির কথা শুনে বড়সড় শক খেলাম। কিন্তু, চোখ খুললাম না। ঘুমিয়ে আছি এমন ভান করলাম।
( তিথি)
আচ্ছা, এখন ঘুমের এক্টিং করা হচ্ছে। দেখাচ্ছি মজা। কাছে ঘেসে শুয়ে পড়লাম। আলতো করে জরিয়ে ধরলাম। নিঃশ্বাস ঘাড়ে ফেলতে লাগলাম,
– আমি জানি। তুমি ঘুমওনি এখনো।
আমি কোনো কথা বললাম না।
– প্লিজ, তাকাও না আমার দিকে।
কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল তিথি। আমি বুঝতে পারছি তিথি এখন কেঁদেই ফেলবে। তাই মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম। তিথি আমার উপর ভর দিয়ে আমার উপর দিয়ে আমার সামনে চলে আসল। জরিয়ে ধরে বলল,
– সরি।
আমি না জানার ভান করে বললাম,
– কেনো?
– আহা! বুঝে না আমার বাবুটা।
বলে নাক টিপে ধরল।
– না, বললে বুঝব কি করে?
– সত্যি, বুঝতে পারছো না। আমি কেনো তোমাকে সরি বলেছি?
কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল।
– না তো।
– আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি না জেনেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
আমি কোনো কথা বললাম না। তিথি আমাকে জরিয়ে ধরল। আমার বুকে মাথা রাখল,
– প্লিজ, ক্ষমা করে দাও।
– কি জন্য ক্ষমা চাচ্ছো সেটাতো বলো।
বিরক্তি নিয়ে বললাম।
তিথি এখন কেঁদেই ফেলল।
– আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা কষ্ট পাবে। তুমি এতোটা কষ্ট পাবে জানলে তখন বেবি কন্সিভ করার কথায় তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম না।
– তুমি না চাইলে নাই।
– মানে!
– মানে! তুমি কন্সিভ করতে না চাইলে কন্সিভ করবে না। আমিও কোনো জোরজবরদস্তি করব না তোমার সাথে।
অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
তিথি এবার জোরে জোরে কেঁদে দিলো,
– প্লিজ, এভাবে বলো না।
আমি কোনো কথা বললাম না।
– সত্যিই যদি আমি মারা যাই তাহলে তোমার কি হবে? ( তিথি)
কান্না করতে করতে
হঠাৎ করেই কথাটা বলল তিথি।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালাম তিথির দিকে,
– কি সব আজেবাজে বকছো?
– আমি তখন তোমাকে কন্সিভ করতে মানা করেছিলাম কেনো জানো?
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম তিথির দিকে,
– কেনো?
প্রশ্ন করলাম।
– অনেকেতো বেবি হওয়ার সময় মারা যায়। আমিও যদি আমার বেবি হওয়ার সময় মারা যাই। তখন…
ফুফারে ফুফাতে বলল।
তিথির কথাত যেনো আমার বুকটা কেপে উঠল।
আমি জোরে জরিয়ে ধরলাম তিথিকে,
– চুপ, একদম মেরে ফেলবো বললাম।
ভাঙাভাঙা গলায় বললাম।
– বাচ্চা কন্সিভ করতে সবসময় স্বামীরাই বউকে মানা করে। বউ মারা যাওয়ার ভয়ে। কিন্তু, আমি মানা করেছি কেনো জানো? কারন যদি আমার কিছু হয়ে যায় তখন তোমার কি হবে? তোমাকে দেখবে কে? আমার মৃত্যুর প্রথম কয়েকমাস তো তুমি কষ্ট পাবেই। আর তোমার কষ্ট হওয়া দেখে দেখে আমিও কষ্ট পাবো।
আর তোমার কষ্টের সময় আমি তোমার পাশে থাকলাম না। তাহলে আমার কিসের ভালোবাসা ? আমি তোমার বউইইবা কেনো? এটাতেই ভয় পাই আমি।
তিথি কাঁদতে কাঁদতে বলল কথাগুলো। গলাধরে আসছিল কথাগুলো বলতে গিয়ে।
আমিও কান্না করে দিলাম। শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম তিথিকে। সত্যি এগুলো আমার ভাবার কথা ছিল আর ভাবছে তিথি।
তিথি কাঁদতে কাঁদতে আমার বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে।
– আমার বউটা এতো বড় হয়ে গেছে। আমিতো টেরই পেলাম না।
– তোমার বউ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে বুঝলে। কয়েকদিন পরতো বুড়িই হয়ে যাবো।
কান্নার মধ্যেও হেসে দিলো। দৃশ্যটা অপরুপ। আমি তাকিয়ে রইলাম অপলক।
সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে আমার পিচ্ছি বউটা। অনেক্ষণ বুকে শুয়ে রইল তিথি। তিথি নিশ্চুপ শুয়ে আছে। আমি তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,
– তিথি।
– হুম।
– এখনো জেগে আছো। ঘুমুবে না?
– ঘুমুলেতো আমার বুড়ো বরের আদর অনুভব করতে পারব না।
– পাগলি…
হেসে দিলাম।
– আপনিও? (তিথি)
– কি?
– পাগল।
,
( তিথি)
যাক আমার বরটা এখন আর কষ্ট পাচ্ছে না। কি যে করি না মাঝে মাঝে? এসব বলে দিয়েছি কাব্যকে। এখন তো পড়লাম ঝামেলায়। এখনতো কাব্য আমার বাবুই নিতে দিবে না।
আমিও না। কিচ্ছু মুখে আঠকায় না। ধ্যাত।
– আচ্ছা, এখন আমাকে আদর করুন।
মুখ তুলে বলল তিথি।
এই মেয়েটার কাণ্ডকারখানায় মাঝে মাঝে অবাকই হই। হঠাৎ, করেই আদর চাই তার। পাগলি…
একটু আগে কতো ইমোশনাল কথাই না বলল। সেগুলোই হজম করে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর উনি এখন আদর চাচ্ছেন।
– কি হলো?
– কি?
– আদর করছেন না কেনো?
মাথা উঁচু করে আমার ঠোঁটে চুমু একে দিলো।
– যদি, তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাও।
– কাব্যওওও।
চোখ রাঙিয়ে বলল তিথি।
– আরে বাবা, আমি তো সিয়াসলি বললাম।
– জানি না ওসব। হলে হবো।
– কিন্তু, আমি হতে দিবো না।
– কাব্যওও, এখন মাইর দিবো কিন্তু…
– আহা! আমার পিচ্ছি বউ আমাকে মাইর দিবে। দআও দাও।
– লাগবে তোমার আদর। আমি নিজেই পারি…
বলেই আমাকে ঠেলে চিৎ করে শুইয়ে দিলো। আমার বুকের উপর উঠে বসল,
– এই তুমি আমাকে ঘোড়া পাইছ। যখন তখন বুকে উঠে পড়ো।
– হ্যা, পাইছি। আর ঘোড়ার বুকে উঠে না মানুষ। পিঠে উঠে…
বলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট গুজে দিলো তিথি। আমি হারিয়ে গেলাম তিথিতে। হোক না আজ রাত তিথিময়।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আলতো পরশ একে দিলাম তিথি চুলে। তিথিকে বুক থেকে নামিয়ে দিলাম। হাত দুটো চেপে ধরলাম। তাকিয়ে রইলাম তিথির কাপা চোখ আর কেপে কেপে উঠা ঠোঁটের দিকে। তিথি চোখ বন্ধ করে আছে। আমি তাকিয়েই রইলাম। তিথিও চোখ খুলল। আমি তাকিয়ে রইলাম আর তিথিও।
মুখ গুঁজে দিলাম তিথির ঘাড়ে। তিথি প্রচন্ড ভাবে কেপে উঠল। আমার মাথায় আকড়ে ধরল। নখ বসিয়ে দিছে।
ঘাড়ে চুমু একে দিলাম। তিথি আরো শক্ত করে আমার মাথার পিছনে ঘাড়ে ধরল। আমি তিথি লম্বা কেশে মুখ ডুবিয়ে দিলাম।
নেশা করি না কখনো। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে প্রতিদিনই নেশায় পড়তে হবে আমাকে। কি অদ্ভুত! নেশা ধরানো ঘ্রান। মাতাল হয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে ফেলছি নিজেকে।
– আরেকটা কিস করো না ঘাড়ে।
আমার কানে আস্তে করে বলল তিথি। আমি হেসে দিলাম। এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে দিবে দেখছি।
ঘাড়ে নাক দিতেই আরো আকড়ে ধরল তিথি। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল।
হাত দিয়ে পেটে স্লাইড করতেই তিথি কেপে কেপে উঠল।
আমার হাত চেপে ধরল ওর হাত দিয়ে।
– আমি সত্যিই একদিন মরে যাবো তোমার ভালোবাসায়। সেই কবেই খুন হয়ে গেছি তোমার ভালোবাসায়।
কাঁপতে কাঁপতে বলল তিথি।
– খুন তো তুমি করেছো আমায়। তোমার হাত তো খুন হতে বারবার জন্ম নিতে পারি আমি।
,
অগোছালো হয়ে শুয়ে আছে আমার বুজে তিথি। চুলগুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আমি চুলগুলো হাতাচ্ছি।
ঠিক হাতাচ্ছি না স্লাইড করছি।
– তিথি…
তিথি কোনো কথা বলল না। নিরব…
– তিথিইই…
– উহুউউ, উহুউউ
ঘুম ঘুম কন্ঠে কেঁদে উঠল।
– কি হলো?
– প্লিজ, জ্বালিয়ো না আর। আমার অতিরিক্ত ঘুম পাচ্ছে।
আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল।
– কিন্তু, আমার তো তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।
– আমি পারবো না।
– কি?
– প্লিজ, ঘুমুতে দাও। প্লিজ…
– ওকে, ওকে..
হাসতে হাসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর আবার,
– তিথি,
– উফফ!তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো আজ।
– ওকে, ওকে বাবা। আর জ্বালাচ্ছি না তোমাকে।
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি আমি। তিথিকে জ্বালাতে ভালো লাগছে। ঘুম ঘুম চোখে তিথি যখন বিরক্ত হয় না অসম্ভব সুন্দর লাগে তখন তিথিকে।
– চুলে হাত বুলানো বন্ধ করে দিলে কেনো?
আমার ভাবনার ঘোর কাটল তিথির স্বর শুনে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলছে তিথি।
– ওহ, সরি।
তিথি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম পরম যত্নে। ঘুমাক আমার পিচ্ছি বউটা। আর আমি সেই দৃশ্য অবলোকন করি। ক্ষতি কি তাতে?
চোখে ঘুম ভর করল। ঘুমিয়েও পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখি তিথি এখনো ঘুমিয়ে আছে বুকে।
– তিথি..
তিথি কোনো কথা বলল না। নড়াচড়া ও করল না।
– তিথিইই…
– হু
– সকাল হয়ে গেছে উঠে পড়ো।
– না।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল।
– না, কি? কলেজে যাবে না।
– না।
ঘুমের ঘোরেই বলল তিথি।
– কেনো?
– আমি ঘুমুব।
– কলেজে যেতে হবে তো। উঠো..
– উফফ, যাবো না বললাম তো। আর আমাকে একটুও বিরক্ত করার চেষ্টা করবে না। আমি ঘুমুব।
– আচ্ছা, তাহলে আমাকে উঠতে দাও। আমি অফিসে যাবো তো…
– না।
– না, কি?
– মাথা মোটা। তোমার বুকে শুয়ে আছি বলেই তো আমার এতো আরামের ঘুম হচ্ছে। তুমি উঠে পড়লে তো আমি আর ঘুমুতে পারব না।
চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল তিথি।
– তাহলে, আমার অফিস।
– গোল্লায় যাক। আজ কোনো অফিসে টফিস নেই। আপনাকে অফিসে যেতে হবে না। বুঝলেন..
চোখ খুলল তিথি। আবার বন্ধ করে নিলো।
– আরে বাবা অফিসে তো…
বলার আগেই তিথি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
– উউউ, উউ।
হাত দিয়ে তিথির হাত সরিয়ে হাপাতে লাগলাম। মুখ সহ নাকেও ধরে নিয়েছিল। নিঃশ্বাস তো প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল।
– আরে আমার দম বন্ধ করে…
বলার আগেই তিথির ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো। বেশকিছুক্ষণ পর ছাড়ল,
– মাফ চাই ভাই, মুখ বন্ধ করে থাকো প্লিজ। আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমুতে দাও।
চোখ বন্ধ করে বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল তিথি। উফফ! এই মেয়েটার জ্বালায় আর পারি না। হঠাৎ করে ওর চোখে এতো ঘুম ভর করল কোত্থেকে কে জানে? আমিও চুপচাপ শুয়ে রইলাম।
,
( তিথি)
জম্পেশ একটা ঘুম হলো। কিন্তু, তাকিয়ে দেখি কাব্য নেই। কখন গেলো। আর গেলই বা কোথায়? ওকে তো অফিস যেতে মানা করেছিলাম। তাহলে…
অফিস ওর কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ। আমার থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একটা দিনই তো চেয়েছিলাম ওর কাছে। কি এমন চাইলাম? মন খারাপ করে রইল তিথি। কলেজেও তো গেলাম না ওকে কাছে পাওয়ার জন্য। কাব্যের মোবাইলে ফোন করলে রিয়া ফোন পিক করল। তিথি কেটে দিলো। আর ওও…
তিথি ফ্রেশ হয়ে বেরুলো রুম থেকে,
– কিরে তোর ঘুম ভাঙল? ( সামিরা)
– হুম।
– ইশ! তোকে দেখে আমার খুব হিংসে হয় রে?
তিথি ভ্রু কুচকালো,
– কেনো?
– কাব্য ভাইয়ার মতো একটা স্বামী পেয়েছিস। কি রোমান্টিক ভাইয়া? রাতে কেমন আদর করল রে?
ভ্রু নাচিয়ে হেসে প্রশ্ন করল তিথিকে।
– শুনবি।
হেসে উত্তর দিলো তিথি।
– হুম।
খুশি হয়ে বলল তিথি।
– তাহলে, গালটা এদিকে নিয়ে আয়।
সামিরা মুখ এগিয়ে নিতেই তিথি ঠাস করে একটা চড় মেরে গট গট করে চলে গেলো সেখান থেকে। সামিরা বুঝতে পারল না। কিছুই…
গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল তিথির যাওয়ার দিকে।
তিথি রান্নাঘরে গিয়ে ঠাস ঠাস করে বাসনাদি মাঠিতে ছুড়ে মারতে লাগল। সামিরা কানে হাত চেপে ধরে বসে রইল। তিথি সামিরার সামনে এলো,
– ঐ, ঐ ছেমড়ি। তোর কাছে গান আছে গান। গান বুঝিস তো। পিস্তল আছে পিস্তল…
রেগেমেঘে লাল হয়ে বলল তিথি।
– পিস্তল দিয়ে কি করবি তুই?
– কি করব জানিস? ঐ কাব্য কুত্তাটার মাথায় ঠেকিয়ে শুট করব। তারপর ঐ রিয়া না ফিয়া ঐ মেয়েটার মাথায়।
– আরে কাব্য ভাইয়া আবার কি করলেন?
– কি করেনি? জানিস ওকে বারণ করা সত্ত্বেও ওও অফিসে গিয়েছে। কি এমন চাইছিলাম ওর কাছে? একটা দিনই তো। আজ অফিস না গেলে হতো না ওর।
– সেটা বুঝলাম। হয়তো, অফিসে কোনো দরকারি কাজ ছিল তাই। কিন্তু, রিয়াটা কে? আর ওকে তুই মারবি কেনো?
– আরে কোন কাজ না। ওগুলো শুধু বাহানা। আমার কি মনে হয় জানিস? ঐ রিয়া মেয়েটা আমার কাব্যের উপর যাদু করেছে। আম যখনই ফোন করি কাব্যের ফোনটা ওর হাত থাকে। আর কুত্তাটাকেও বলেছি, ঐ মেয়েটাকে পি,এ থেকে চেঞ্জ করতে। কিন্তু, করে নি কেন জানিস?
– কেনো?
গালে হাত দিয়ে বলল সামিরা।
– আমার মনে হয়, ওদের দুজনার মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু একটা চলছে।
– ইউ মিন?
– আমি মিন, রিলেশন।
– পরকীয়া।
– ইইই, চুপপ। একদম চুপ। আর কখনো বলবি না ঐ খারাপ কথাটা। শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়।
– তো, এক কাজ কর। গোয়ান্দাগিরি শুরু করে দে না।
– হুম, সেটাই করব।
– তো যা। অফিসে গিয়ে দেখ। কি করছে ওরা? আমার মনে হয় তুই ভুল ভাবছিস। আসলে কাব্য ভাইয়ার মতো ভালো মানুষ।
মুচকি হেসে বলল সামিরা। রাগী চোখে তাকাল তিথি। যেন চোখ দিয়েই গুলি ছুড়বে,
– তোর সাথেও রিলেশন চলছে ঐ কুত্তার।
– এএ, ছিঃ কি বলিস এসব?
– তাহলে, ওর পক্ষ নিচ্ছিস কেনো?
– আরে আমি তো এমনিই বললাম। কাব্য ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে উনি এরকম খারাপ কাজ করতেই পারে না।
– হুম, তা ঠিক। কিন্তু, যদি কোনোরকমে ঐ শাঁকচুন্নি টা যাদু করে নেয় আমার কাব্যকে।
ঠোঁট ভেঙে বলল তিথি।
– হুম। তাও ঠিক।
দুজনে ভাবুক হয়ে বসে রইল।
,
( আমি)
রিয়া জানাল যে তিথির নাম্বার থেকে একটা কল এসেছিল। কিন্তু, কোন কথা না বলেই কল কেটে দিয়েছে। বউটাকে একা ফেলেই চলে এলাম অফিসে। আসলে আজ একটা কোম্পানির সাথে প্রেজেন্টেশন ছিল তাই…
মোবাইল হাত নিয়ে ভাবলাম কল করব। নাহ, কল করব না। আজ খুব বড় একটা সারপ্রাইজ দিবো পিচ্ছি বউটাকে।
তিথির জন্মদিন কাল।
প্রথম উইশটা আমিই করব। অবশ্য তিথির তো মনে হয় ওর জন্মদিনের কথা মনেই নেই।
থাকবে কি করে? পিচ্ছির আবার মনে থাকা।
অজান্তেই হেসে দিলাম,
– কিরে একা এলা হাসছিস যে? (রিয়া)
– নাহ, এমনি।
– এমনি কেউ হাসে? ব্যাপার কি?
দুষ্টুমি হেসে বলল রিয়া।
আমি চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
– না, হঠাৎ করেই তিথি কথা মনে পড়ে গেলো। তাই আর কি?
– মিষ্টি একটা বউ পেয়েছিস। যেমন সুন্দর তেমনি তার ভালোবাসা। তাই না?
– তা আর বলতে।
( তিথি)
– দেখেছিস সামিরা, এখনো একটা কলও করেনি। এই বুঝি তার ভালোবাসা?
ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো তিথি।
– আরে কাঁদছিস কেনো?
– কি করব বল ? আমি নিজে থেকে কাঁদছি নাকি?
– তো?
– আমার তো এমনি এমনিই কান্না পাচ্ছে।
– এমনি এমনিও কান্না পায় কারোর?
– জানি না। তবে আমার পায়। আচ্ছা, এখন তুই যা তো। আমার ভালো লাগতেছে না।
সারাদিন কাটল। একটা কলও করল না কাব্য। হুহ, বুঝিতো সব বুঝি। আমাকে আর ভালো লাগে না। ঐ শাঁকচুন্নিকেই ভালো লাগে।
আচ্ছা, আমি একটা কল করে দেখি।
কল করবে না করবে না করেও কল করল তিথি। আরে ফোনতো সুইচড অফ।
তাহলে, এই কান্ড! বাহ ভালো তো। একটা ফোনও করল না। আর এখন ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
তিথি প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।
,
( আমি)
ফোন সুইচড অফ করে রেখেছি। জানি, তিথি ফোন করছে। ফোন সুইচড অফ পেয়ে বোধ হয় রাগে কেঁদেও ফেলেছে।
কিন্তু, একটু পরই যে ওর জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে সেটা কি কখনো ভাবতে পারছে তিথি?
একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছি কাল সন্ধায়। আব্বু-আম্মুও জানে তিথি বার্থডে। বাসায়ই করেছি। তিথি নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। এখন একটা হাতে বস আছি। মুচকি হাসছি।
রাত ১২ঃ০০ টা বাজতে চলল। গাড়ি নিয়ে সোজা তিথির বাসার নিচে এসে পড়েছি। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন করলাম তিথিকে।
,
( তিথি)
সারারাত কান্না করেছে তিথি।
খুব কান্না পেয়েছে ওর।
কারন কাব্য তাকে কল করেনি। মাত্রই একটু একটু চোখ লেগেছে। খুব গাঢ় ঘুম এসে ভর করছে চোখে। একটু ঘুমুল।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
তখনই মোবাইলে কল আসল। প্রচন্ড শব্দে জেগে উঠল তিথি। বিরক্তি নিয়ে তাকাল ফোনের দিকে। রিসিভ করল,
– হ্যালো।
– তিথি।
– হ্যা।
– একটু নিচে আসবে প্লিজ।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। আসুক না নিচে তারপর না হয়…।
ঘুমে দুলতে দুলতে নিচে আসল তিথি। আমি দেখেই বুঝতে পারলাম তিথি ঘুমিয়ে ছিল। নিচে এসেই বড় করে হাই তুলল,
হাটু গেড়ে ফুলটা এগিয়ে দিলাম তিথির দিকে,
আমি খুব খুশি, কারন তুমি আজ জন্মগ্রহণ করেছিলে। তাইতো আমি তোমাকে আমার বউ হিসেবে পেয়েছি। ধন্যবাদ জানাই সৃষ্টিকর্তাকে। ধন্যবাদ জানাই আমার শশুড় -শাশুড়িকে। বলেই একটু মুচকি হাসলাম। একটু বিরতি নিলাম। তারপর শুরু করলাম,
তোমার জন্মটা বোধ এই বুড়োটার জন্যই হয়েছিল। অনেক তো হয়ে গেছিল বয়স। কিন্তু, বিয়েতে তেমন ইন্টেরেষ্ট ছিল না। কিন্তু, যখনই প্রথম দেখলাম তোমাকে। কেনো জানি? তখনই মনে হয়েছিল। এখনই বিয়ে করে নিই তোমাকে। সত্যি, খুব সৌভাগ্যবান আমি তাইতো পেয়েছি তোমাকে।
পরিশেষে, খুব ভালোবাসি তোমাকে। আই লাভ ইউ তিথি। এন্ড হ্যাপি বার্থডে…
হাসি মুখেই বললাম। তিথি ফুলটা হাতে নিলো। কেকটা বের করে হাতে উপর নিলাম,
– কিছুই বলছো না যে।
– এই কথাগুলো বলার জন্যই ডেকেছিলে।
– হুম।
– ফালতু এসব কথার জন্য তুমি আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলে। গেট লস্ট…
বলেই তিথি বাসার দিকে চলে গেলো। আমার হাত থেকে কেকটা পড়ে গেলো।
,
( তিথি)
এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। পরমুহূর্তেই হুড়মুড় করে উঠে বসলাম। সমস্ত ঘুম উদাও হয়ে গেলো।
– একটু আগে এটা কি হয়েছিল? স্বপ্ন নাকি সত্যি।
ভাবতে লাগল তিথি।
– নাহ, বাস্তবই তো ছিল। এই যে হাতে গোলাপ ফুল।
একটাই গোলাপ ফুল দিয়ে প্রপোজ করেছে কাব্য। কারন, আমি বলেছিলাম আমি অপচয় করা পছন্দ করি না।
তাহলে, বাস্তব ছিল। তিথির যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ফুলটা বুকে আকড়ে ধরল। এতো রাতে কাব্য আমার জন্মদিনের উইশ করতে এসেছে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি রমণী মনে হচ্ছে।
পরক্ষণেই,
তিথির মুখ মলিন হয়ে গেলো। কাব্য সত্যিই যদি প্রপোজ আর আমার বার্থডে উইশ করে থাকে। তাহলে, আমি এখানে কেনো? রুমে বিছানায় শুয়ে আছি কেনো? আমারতো…
সাথে সাথেই তিথি মনে পড়ল একটু আগের ঘটনার কথা।
ওয়াট!
কি করলাম এটা আমি? তিথি দৌড়ে রুম থেকে বেরুলো। সোজা নিচে গেলো। এতোটা রাবিশ, রাসকেল হলাম কি করে আমি? ভাবতে ভাবতেই নিচে আসল তিথি।
তিথি ভাবল হয়তো, কাব্য নিচেই রয়ে গেছে। কিন্তু, নিচে গিয়েই দেখল কাব্য নিচে নেই। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখল গেটের সামনে একটা কেক পড়ে আছে। তিথি বসে পড়ল। কেকটা নোংরা হয়ে গেছে। তবে লেখাটা দেখা যাচ্ছে,
” শুভ জন্মদিন পিচ্ছি বউটা ”
তিথির বুকটা ধক করে উঠল। কাব্য আমাকে জন্মদিন উইশ করতে এসেছিল। কিন্তু, আমি। আমি কি করলাম এটা?
বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তিথির। প্রচন্ড ঘুমের ঘোরে উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তিথি। কাব্যকে বিরক্তির স্বরে কথা বলে উপরে উঠে গেছে।
কি করে পারলাম এটা? তিথি ভাবছে। কি করলাম এটা? কাব্যকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। আমিতো নিজেই তো জানি না কি করে ফেলেছি। নিজের অজান্তেই করে ফেলেছি এটা।
কিন্তু, কাব্য!
কাব্যও চলে গেলো। একটু দাঁড়াতে পারল না।
হু হু করে কেঁদে উঠল তিথি,
– কাব্য, আই এম সরি। কাব্য…
চিৎকার করে উঠল।
– আমি সত্যিই জানি না। কি করে ফেলেছি এটা?
মাঠিতে বসেই কাঁদতে লাগল তিথি।
____চলবে_____
.