গল্পঃ ডাবর,পর্বঃ চার অন্তিম পর্ব

0
2489

গল্পঃ ডাবর,পর্বঃ চার অন্তিম পর্ব
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

ইরাকে বাসায় রেখে ওর মা-বাবা মার্কেটে গেছে।এমনকি ওর ছোট ভাই রিফাত এখন পর্যন্ত বাসায় আসেনি।হয়তো বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় ব্যস্ত।ইরা রিফাত কে ফোন দিলো।রিফাত বলল
->আপু চিন্তা করিস না আমি এখনি আসছি।
->সেই তখন খেকে বলছিস আসছি আসছি,এখনো আসার নাম নেই।
->রাগ করিস না আপু।আর দশ মিনিট।
->আচ্ছা ঠিক আছে।
ইরা ফোন রেখে টয়লেটে গেলো।টয়লেট থেকে বের হয়ে ইরা ওর রুমে এসে যা দেখলো সেটা দেখে ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো।ইরা দেখলো হুবহু তার মতো চেহারার একজন ওর বিছানার ওপর শুয়ে আছে।ইরা এটা দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো।এমনটা কি করে সম্ভব সে ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ সে বিছানা থেকে উঠে বসলো।ইরা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো
->কে তুমি?
->আমি তোর আর তোর বাচ্চার জম।
ইরা কথাটা শুনে ওর পেটে হাত রেখে ভয়ে আৎকে উঠে বলল
->না আমার বাচ্চার কোন ক্ষতি তুমি করো না।
সে বিছানা থেকে উঠে ইরার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।তার চেহারা বদলে কালো কুচকুচে হয়ে গেলো চোখ গুলো একদম লাল টকটক করছে।ইরা বলতে লাগলো
->আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি যে আমার বাচ্চাকে মারতে চাইছো?
->কারন তোর বাচ্চা না মরলে আমরা মরে যাবো।

এদিকে ইরফান ইরার বাসায় এসে দেখলো দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া।মনে মনে ভাবছে ইরা আবার কোথায় গেলো?এমন সময় ভিতর থেকে ইরার চিৎকার ভেসে এলো।ইরার চিৎকার শুনে ইরফান জোরে জোরে ইরার নাম ধরে ডাকতে লাগলো।দেয়াল টপকে যে বাড়ির ভিতর যাবে তারও কোনো উপায় নেই।ইরা একের পর এক চিৎকার করে যাচ্ছে।এমন সময় দেখলো রিফাত দৌড়ে আসছে।রিফাত আসতে ইরফান বলল
->তাড়াতাড়ি দরজা খুল।
রিফাত ভয়ে বলল
->আপু চিৎকার করছে কেন ভাইয়া,কি হয়েছে?
->আরে এখান থেকে আমি কি করে বলবো?
রিফাত কাঁপা কাঁপা হাতে তালা খুলতে লাগলো কিন্তু চাবি বার বার পড়ে যাচ্ছে দেখে ইরফান নিজে তালা ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে আসতে দেখলো ইরা ড্রয়িং রুমের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে আর ওর সামনে দাড়িয়ে আছে এক কালো কুচকুচে লোক।হাতে একটা ছুরি।ইরফান চিৎকার করে বলল
->এই কে তুমি?
তখন সে ইরফানের দিকে তাকালো।ইরফান কি যেন ভেবে ওই দুটো তাবিজ বের করা মাত্র সেটা দেখে ওই কালো কুচকুচে প্রাণী উধাও হয়ে গেলো।ইরা দৌড়ে এসে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।ইরফান ইরাকে শান্তনা দিয়ে বলল
->ভয় নেই আমি এসে গেছি এখন।
ইরা কাঁদতে কাঁদতে বলল
->ওরা কারা আর আমাদের ক্ষতি করতে চায় কেন?
->সব বলছি এসো আমার সাথে।
রিফাত এমন কিছু দেখে বেশ অবাক হয়ে গেছে।এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার জন্য ইরফান রিফাতকে বেশ কয়েকটা ঝাড়ি মারলো।ইরফান সেই তাবিজ দুটো ইরার গলায় পড়িয়ে দিলো।আর ইরাকে সব ঘটনা খুলে বললো।ইরা সব শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো আর বলল
->আমি আমার বাচ্চাদের কাউকে দিবো না।
->আমি দিতে দিলে তো?সেই সাথে বাচ্চার কোন ক্ষতিও হতে দিবো না।

আজ ইরার ডেলিভারির ডেট।ইরফানের মায়ের কানে বার বার সে গায়েবি আওয়াজ ভেসে আসছে,আজ থেকে চল্লিশ দিন পার হওয়ার পর এই সন্তানকে দিতে হবে’।রাহেলা বেগম বেশ চিন্তায় আছেন।ইরফান আর ইরার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন।একটু বাদে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে ইরফানকে হাসি মুখে বললেন
->কংগ্রাচুলেশনস,আপনি জমজ সন্তানের বাবা হয়েছেন।মা সন্তান তিন জনে সুস্থ আছেন।এবার আমাদের মিষ্টি মুখ করুন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেলো।ইরফান দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখলো তার সদ্য জন্ম নেওয়া দুই সন্তানকে।একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।খুশিতে কখন ইরফানের চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারেনি।ইরার এখনো জ্ঞান ফিরেনি।ইরফান ইরার সামনে গিয়ে বসলো।ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে ওর কপালে চুমু দিলো।ইরফান ইরার গলা থেকে তাবিজ দুটো খুলে বাচ্চা দুটোর গলায় পড়িয়ে দিলো।
আজ বাচ্চা জন্ম নেওয়ার চল্লিশ দিন পুরন হয়েছে।তাবিজ দেওয়া লোকটির কথা মতো ইরফান ইরা আর তার দুই সন্তানকে নিয়ে সেই নদীর ঘাটে এসে দাড়ালো।কিন্তু ওই লোককে দেখতে পেলো না।ইরা বলল
->সত্যি ওই লোক এখানে আসবে বলেছিলো?
->হ্যাঁ এখানেই তো আসার কথা উনার।
->আচ্ছা ওয়েট করি আমরা।
->তুমি গাড়িতে গিয়ে বসে থাকো।
->সমস্যা নেই ঠিক আছি।
আধঘন্টা হয়ে গেলো তারপরেও লোকটির দেখা পাওয়া গেলো না।এমন সময় পিছন থেকে বলল
->এসেছো তোমরা?
ইরফান আর ইরা পিছনে তাকালো।দেখলো সেই লোক দাড়িয়ে আছে।ইরফান বলল
->আপনি আজই তো আসতে বলেছিলেন?
->হুম
তখন লোকটি এগিয়ে এসে বাচ্চা দুটোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর বলল
->অনেক সুন্দর বাচ্চা দুটো।এদের আমি কিছু হতে দিবো না।
->এখন উপায় কি?
তখন লোকটি একটা কাচের বোতল বের করলো তাতে লাল পানির মতো কিছু তরল।সেটা বের করে বলল
->এটা এমন একটা জিনিস যেটা পিশাচদের মেরে ফেলে।কাল তোমার ছেলেকে ওদের দিতে হবে।যেখানে ওই কলস আছে সেখানে ওই কলসের ভিতর কাল টাকার পরিবর্তে তিনটা সাপ থাকবে।তুমি বাচ্চা সেখানে রেখে চলে আসলেই ওরা বাচ্চা হতে রক্ত পান করে শক্তি শালী হয়ে উঠবে কিন্তু তার আগেই তুমি এটা ওই কলসের মধ্যে ঢেলে দিবে তাহলে সাথে সাথে ওদের মৃত্যু ঘটবে।আর কলস ধ্বংস হয়ে যাবে।তবে ওই কলস আর থাকবে না তাছাড়া তোমাদের সব ঠিক থাকবে।
ইরফান লোকটির হাত থেকে সেই বোতল নিলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো
->আপনি যে আমায় এটা দিলেন যদি এটা ওরা জেনে যায় তাহলে?
->চিন্তা নেই।এক গোত্রের পিশাচ আর গোত্রের পিশাচদের খবর পায়না কখনো?
এই বলে সে ইরফান আর ইরার চোখের সামনে উধাও হয়ে গেলো।দুইজনে এটা দেখে চমকে উঠলো।তার মানে এই লোক আসলে একজন পিশাচ ছিলো?

পরেরদিন ওই পিশাচ লোকটির কথা মতো ইরফান ইরা আর তাদের ছেলেকে নিয়ে সেই গুপ্ত রুমে আসলো।ইরা এই প্রথম সেই কলস দেখলো।ইরফান কলসের সামনে গিয়ে দেখলো তিনটা কুচকুচে কালো সাপ কলসের ভিতরে।ইরফান দেরি না করে সেই কাঁচের বোতল খুলে সবটুকু লাল পদার্থ কলসের মধ্যে ফেলে দিলো।একটু বাদে কলসের ভিতর থেকে আর্তচিৎকার ভেসে আসলো।সে সাথে সাদা আলো বের হতে লাগলো,আলোর ভিতর ভয়ানক তিনটা চেহারা দেখা যাচ্ছে।ওরা হাত বাড়িয়ে আসতে চাইছে কিন্তু আসতে পারছে না।ইরা তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।আলো ক্রমশ বেড়ে চলেছে।হঠাৎ একটা আওয়াজ হয়ে কলস ভেঙ্গে গেলো।কলসের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।আস্তে আস্তে সেগুলো ধোয়ার মতো উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলো।ইরফান তার সন্তানকে বাঁচাতে পেরে অনেক খুশি।কোটি টাকার চেয়ে প্রতিটি বাবার কাছে তার সন্তান অনেক প্রিয়।ইরফান আর ইরা তাদের দুই সন্তান নিয়ে সুখে আছে।সন্তান দুটোর নাম রাইসা ও রাফসান।
কিন্তু কলস নষ্ট হওয়ার কিছুদিন বাদে ইরফানের মা রাহেলা রহস্যজনক ভাবে মারা যায়।তার শরীরে কোন রক্তই ছিলো না।তবে রাহেলার লাশের পাশে চিরকুট পড়ে ছিলো,যেটাতে লেখা ছিলো,,”ওয়াদা ভঙ্গ করায় হলো ওর মৃত্যুর কারন”

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here