গল্পঃ দেনাপাওনা পর্বঃ ৪র্থ

0
2627

গল্পঃ দেনাপাওনা
পর্বঃ ৪র্থ
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

রাহুল খুন হয়েছে!

সংবাদ পত্রে জানা গেছে রাহুল খুন হওয়ার ঠিক ত্রিশ মিনিট আগে রাহুলের ফেইসবুক আইডি থেকে একটা নগ্ন ছবি ভাইরাল হয়েছে।রাহুলকে স্পট ভাবে দেখা গেলেও রাহুলের সাথে যে মেয়েটি নগ্ন অবস্থায় আছে তাকে চেনা যায় নি।

পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে সকাল সাতটার দিকে।যখন আমি নিলাদের এলাকায় গেছিলাম তখন।সকাল বেলা নিলার সাথে দেখা করতে নিলার শ্বশুরবাড়িতেই যাওয়ার জন্য সেই দিকে গিয়েছিলাম।আমাকে গ্রেফতার করার পরেই আমি রাহুলের খুনের কথা জানতে পারি।রাহুল খুন হয়েছে রাত এগারোটার দিকে।রাহুল অফিস থেকে বের হয়েছিলো তখন নাকি রাত ৯ টা বাজে।

নিলা এবং নিলার বাবা জবানবন্দিতে আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।নিলার ধারনা আমিই রাহুলকে খুন করেছি।আর গতকাল রাহুলের অফিসে গেছিলাম,সেই অফিসের কর্মচারীদের সন্দেহ আমার দিকে।

অথচ আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।আমি গতকাল একটা হোটেলেই ছিলাম।পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে গেলো,প্রচুর পরিমানে টর্চার করেছে।পুলিশ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও তার সঠিক এন্সার আমি দিতে পারলাম না।কারন ওই যে কাল নিলাকে বলেছিলাম রাহুলকে খুন করবো।

অন্য দিকে আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে।রাহুলকে কেনো আমি নিজ হাতে খুন করতে পারলাম না।রাহুলকে খুন করে রাহুলে লিঙ্গ কুকুর দিয়ে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলাম।রাহুলের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতে পারলে আমার মনটাকে শান্তি দিতে পারতাম।ইচ্ছা ছিলো যখন রাহুলকে আমি খুন করবো যখন তখন ভিডিও করে সমস্ত দেশবাসীকে দেখাবো একটা রাহুলের মত জানোয়ারকে কিভাবে হত্যা করতে হয়।সেই সুযোগ আসার আগেই রাহুলকে খুন করে দিয়েছে।পারলাম না আমার ইচ্ছা পূরন করতে।

পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে জানা গেছে রাহুলকে মদ খাওয়ানোর সাথে বিষাক্ত ইনসুলিন রাহুলের শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে।ইনসুলিনের বিষ শরীরে প্রবেশ করতে সময় লাগে পঞ্চাশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা।অথচ ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করার ঠিক সাতত্রিশ মিনিট পরে রাহুলের হাতের এবং পায়ের সমস্ত রগ কেটে দেওয়া হয়।

ড্রিমলাইট বারের এক কর্মী স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের ফোন দিয়ে এই লাশের কথা যানায়।সেই কর্মীর জবানবন্দিতে পুলিশ জানতে পারে রাহুলের লাশ ড্রেনের মধ্যে পরে আছে।সেই কর্মী যখন কাজ শেষে বাসায় সাইকেলে করে যাচ্ছিলো তখন ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে রাহুলের বডি দেখতে পায়।তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ওই এলাকার কেউ রাহুলকে আগে কখনো দেখে নি বা কেউ চিনেও না।আর তাছাড়া রাহুলের কোনো আত্বীয় নেই ওই এলাকায়।আর রাহুল যে গাড়িতে চলাচল করতো সেই গাড়িটা একটা গ্যারেজে পাওয়া গেছে।গ্যারেজটি ছিলো রাহুলে ইন্ডাস্ট্রির অপর পাশে ছিলো। গ্যারেজ মালিক জানায় রাহুল এই গ্যারেজে গাড়ি মাঝে মাঝে দুই তিন ঘন্টার জন্য রেখে কোথায় যেনো যায়।গতকাল যখন রাহুল গাড়িটি সেই গ্যারেজে রেখে যায় তখন রাহুল কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলেছিলো।খুব ব্যাস্ততার সাথে রাহুল সেখান থেকে বেড়িয়ে পরে।

রাহুলের লাশ যখন পুলিশ উদ্ধার করে তখন রাহুলের সাথে কোনো মোবাইল পাওয়া যায়নি।সাথে ছিলো একটা মানিব্যাগ।

আরেকটা ভাবার বিষয় হলো রাহুল গতকাল দুপুরে ম্যানেজারকে ব্যাংকে পাঠিয়ে সাত লাখের মত টাকা তোলে।রাহুল চার লাখ টাকা সেই ম্যানেজারে কাছে দিয়ে অন্য একটা প্রজেক্টে পাঠিয়েছে।আর তিনলাখ টাকা রাহুলের সাথেই ছিলো।

পুলিশ তদন্ত করতে শুরু করলো।জানা গেছে রাহুল দুইটা ফোন ব্যাবহার করতো।রাহুলের ফোন নাম্বার ট্রেকিং করে কোনো তথ্য জানা যায় নি।তবে রাহুলের ফোন থেকে লাষ্ট কল ছিলো সাড়ে আটটার দিকে।এবং কথা হয়েছে রাহুলের স্ত্রী নিলার সাথে।কথা হয়েছে মাত্র এক মিনিট তেরো সেকেন্ড।

অন্য দিকে পুলিশ আমাকে রিমান্ডের পরে রিমান্ডে নিচ্ছে।পুলিশের কাছে যতই বলিনা কেনো যে আমি রাহুলকে খুন করিনি,তা বিশ্বাসই করছে না।

টানা এগারোদিন আমি জেলে কাটাচ্ছি।অথচ পুলিশ কোনো হদিশ খুজে পায়নি।আমি যে হোটেলে রাত কাটাচ্ছিলাম সেই হোটেলে পুলিশ তদন্ত করে কিছুই পায়নি।সিসি ক্যামেরা ফুটেজে পুলিশ জানতে পারলো আমি সেদিন হোটেলে রাত নয়টা সময় ঢুকার পরে আর বাহিরে বের হইনি।আর রাহুল যেখানে খুন হয়েছে সেখান থেকে ওই হোটেলে যেতে টানা দেড় ঘন্টা সময় লাগে প্লাস রাহুলের অফিস থেকেও এক ঘন্টা দুরের পথ।রাহুলের অফিস আর যেখানে খুন হয়েছে তার মাঝামাঝি একটা হোটেলে ছিলাম আমি।

তারপরেও পুলিশ আমাকে সন্দেহজনক গ্রেফতার করে রেখেছে। নিলা পনেরো দিন পরে আসামি কাস্টমারিতে আসলো,জেলা পুলিশের অনুমতিতে নিলা আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলো…

– সুখ পেয়েছো তো আমার স্বামীকে খুন করে?

-নিলা প্লিজ বিশ্বাস করো আমি আমি এই খুনের ব্যাপারে কিছুই জানি না।

– তোমার মত নিকৃষ্ঠ’ই রাহুকলে খুন করে অস্বীকার করবে।এই ছিলো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা?ছেড়ে তো গিয়েছিলেই এতো কিছু কেন করলে নিলয়?আমাকে কষ্ট দিয়ে কি তোমার কোনো তৃপ্তি মিটেনি?তার চেয়ে আমাকে খুন করে দিতে!

– নিলা আসলে তুমি আমাকে বুঝবে না আর বুঝাতেও পারবো না।তবে হ্যা এখন আমার নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে।আমি যেভাবে খুন করতে চেয়েছিলাম রাহুল জানোয়ারের বাচ্ছা সেভাবে খুন হলো না।আরে আমি খুন করলে তো আরো জঘন্য ভাবে খুন করতাম।রাহুলের কোনো অস্তিত্ব থাকতো না।কুকুরকে দিয়ে খাওয়াইতাম রাহুলকে।

– তুমি এর শাস্তি পাবে নিলয়?আমি যতটা ভালোবাসতাম তার চাইতেও বেশী তোমাকে আমি ঘৃনা করি।এখন তোমার ফাঁসি হলেই আমি একটু শান্তি পাবো।

-হাহাহা!নিলা ঠিক আছে!আমার মরন হওয়াটাই বেটার হবে।কারন কারো চোখে ঘৃনার পাত্র হয়ে বেচে থাকতে চাই না নিলা।আর আমি যদি শাস্তি পাই তাহলে ভালোবাসার শাস্তি পাবো,এই খুনের নয়।আরে আমি তো বেচে থেকেই অনেক আগে খুন হয়েছি।আমাকে খুন করেছে তোমার বাবা।তার সন্মানের আর পাওনায় খুন হয়েছি আমি।

– আর কত মিথ্যা বলবে নিলয়?সবাই জেনে গেছে এই খুন তুমিই করেছো।তোমার শাস্তি পাওয়ার জন্য যা করা লাগে তা আমি করবো।

-প্লিজ নিলা চলে যাও এখান থেকে।আর কখনো আমার সামনে এসো না প্লিজ!খুব তারাতারি শুনতে পারবে আমার ফাঁশি হয়েছে।তখন আমার লাশের উপরে দুইটা লাত্থি দিয়ে তোমার রাগটা মিটিয়ে নিও।

নিলা চলে গেলো।সাদা ফ্রেমের চশমার মাঝ দিয়েও দেখা যাচ্ছিলো নিলার চোখ চিকচিক করছে।তবে নিলার চোখ দেখে বোঝা যায় ওর চোখে প্রতিশোধের আগুল জ্বলছে।

আমার আপনজন বলতে আছে শুধু আমার বড় ভাইয়া আর ভাবি।হয়তো তারা এখনো যানে না আমি কিসের মধ্যে আছি।যখন যানতে পারবে তখন ছুটে চলে আসবে।কেনো যেনো ভাইয়াকে দেখতে দেখতে ইচ্ছা করতেছে।হয়তো আমার ভাইয়া আমাকে বুঝবে।কেউ না বুঝলেও আমার ভাই বুঝবে আমি অপরাধী নয়।

পুলিশকে জানিয়ে আমার ভাইয়াকে আসতে বললাম।আমার ভাই ভাবী ছুটে চলে এসেছে।কারাগারের অপর পাশ থেকে আমার ভাই আমার হাতটা ধরে কেদে দিয়েছেন।আমাকে শুধু বললো এই কারাগার থেকে আমাকে নিরাপরাধ বানিয়েই এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে।

আমার ভাইয়া নিলাকে অনেক বুঝিয়েছে যে আমি এই খুন করতে পারি না।আমার উপরে তাদের অঘাত বিশ্বাস আছে।কিন্তু নিলা কিছুতেই মানতে চাইলো না।আমার ভাই ভাবিতে নিলাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলো।

আমাকে যখন এই কারাগার থেকে ঢাকা কারাগারে নিয়ে যাবে তার একদিন আগে নিলা আবারও আমার সাথে দেখা করতে আসলো..

-তোমার শাস্তি তুমি পেয়ে যাবে,কিন্তু আমার এই পেটের সন্তানকে এতিম বানিয়ে দিলে তুমি!

-মানে?

-আমার গর্ভে বাচ্চা বড় হতে চলছে।কিছুদিন আগেই ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট পেলাম।কি ক্ষতি করেছিলো তোমার?আজ কেনো রাহুল খুন হবে আর আমার বাচ্চাটা কেনো পাপের শাস্তি বহন করবে?

– আমি বাহিরে থাকলে তোর বাচ্চাটাকেও মেরে ফেলতাম পৃথিবীর আলো দেখার আগে।কোনো জানোরারের বাচ্চা এই পৃথিবীতে আসতে পারে না।গলাটিপে হত্যা করতাম।অবশ্য তোর বাচ্চাকেও মেরে ফেলতো রাহুলকে যেভাবে খুন করেছে!

-তোর কপালে আমার থু থু ফেলতে ইচ্ছা করছে।অবশ্য দুইদিন পরে তোর ফাঁসি। তোর শাস্তি পেয়ে যাবি নিলয়,অপেক্ষা কর।

নিলা চলে গেলো।পরেরদিন আমাকে ঢাকা কারাগারে নিয়ে গেলো।আমি নিরাপরাধ তার প্রমান কেউ দিতে পারলো না।আর কেউ দিতেও পারবে না।আমার পক্ষ হয়ে যে উকিলই আসুক না কেনো সেই উকিলকে টাকা খাইয়ে রাহুলের বাবা বুঝ করে নেয়।

অন্যদিকে আমার ভাইয়ার কাছে জানতে পারলাম,রাহুলের ছোট ভাইয়ের সাথেই নিলাকে আবার বিয়ে দিবে রাহুলের বাবা…….

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here