গল্পঃ দেনাপাওনা ১ম_পর্ব

0
4090

“একটা ন্যুডস ভিডিও দাও তো”

কথাটা শুনে আমার গার্লফ্রেন্ড অবাক হয়ে গেলো।সে আবার পুনরায় জিজ্ঞেস করলো..

-হোয়াট?কি বললে তুমি?

-কি বলেছি শুনো নাই?তোমার একটা ন্যুড পিক বা ন্যুড ভিডিও দাও।

_এই কি হইছে তোমার বলো তো?কি সব আজে বাজে বকতেছো?

-কোনো কিছুই আজে বাজে না।তোমার সাথে পাঁচটা বছর ধরে রিলেশন করতেছি।আমাকে তুমি কি দিয়েছো বলো তো।ঠিক মত তো আমাকে একটা বার লিপ কিস দিতে দিলা না।অথচ আমার ফ্রেন্ডরা রিলেশন করে ডেটে যায়।আরো কতো কিছুই না করে।

আমি তোমার কাছে সামান্য ন্যুড পিক বা ভিডিও চেয়েছি।

-আচ্ছা নিলয় রাখছি।কালকে আমার সাথে দেখা করবে।

-তুমি যদি আমাকে ম্যাসেঞ্জারে ন্যুড পিক বা ন্যুড ভিডিও না দেও তাহলে তোমার সাথে এই পর্যন্তই সমাপ্তি।আমি চাই না এমন রিলেশন করতে।

-কালকে দেখা করো যা চাইবে ঠিক তাই পাবে।

নিলা ফোন কেটে দিলো।আমি আর আগ বাড়িয়ে ফোন দিলাম না।নিলা তো বলেই দিলো কালকে আমি যা চাইবো তাই দিবে।

জানি নিলা সারাটা রাত কাঁদবে।একটুও ঘুমাতে পারবে না।হয়তো নিলা আমাকে নিয়ে ভেবেছে আমি অন্য দশজন ছেলেদের মত না।এইসব ন্যুড বা রুমডেট নিয়ে কোনো চাওয়া পাওয়া নাই।কিন্তু সমস্ত ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে কিসব বলতেছি।

নিলা যা ভাবে ভাবুক তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নাই।

নিলাকেও আমি কম ভালোবাসি না।প্রতিটা মুহুর্তে নিলাকে নিয়েই ভাবি।চোখের সামনে নিলার প্রতিটি কথা আচরন ভেসে থাকে।
নিজেকে বা অন্য কাউকে সুখি রাখতে হলে বিপরীতের মানুষটার কষ্ট বইতে হবেই।

নিলা আমাকে ভালোবেসেছিলো আচরণ আর ব্যাবহারেই কারনেই।কলেজ লাইফে বেশ অগোছালো ছিলাম।বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেই থাকতো।আমিও ছ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে ওদের সাথেই থাকতাম।তারমাঝেও আমি ক্লাসে পড়াশুনার দিক থেকে টপে ছিলাম।স্যারেররা আমাকে ভালোবাসতো।একদিন স্যার আমাকে ক্লাসে অনেক বড় ধরনের অপমান করেছিলো।অপমান করার কারন হলো।স্যার বায়োলজি ক্লাসে একটা প্রাকটিক্যাল শিখাচ্ছিলেন।আমি স্যারের কথা শুনে হাহা শব্দ করে গালের বত্রিশ দাঁত বের করলাম।স্যার এমন একটা কথা বললো সাথে সাথে দুই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো।আর স্যারও আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিলো।মন খারাপ করে একটা গাছের নিচে বসে ছিলাম।তার কিছুক্ষন পরে নিলা আমার পাশে এসে বসলো।ও হ্যা নিলা ছিলো আমার ক্লাস মেট।নিলা আমাকে বিভিন্ন কথা বললো।সেই দিন থেকে নিলা আমার ফ্রেন্ড হয়ে গেলো।

যাইহোক পরের দিন সকাল ১০ টায় নিলা আমাকে ফোন দিলো।ফোন দিয়ে আমাদের সেই চিরচেনা স্থানে যেতে বললো।আমি রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম।নিলা আমাকে একটা ফারফিউম দিয়েছিলো সেই পারফিউম ব্যাবহার করে রওনা দিলাম।নিলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই বললো..

-চলো!

-কোথায়?

-আমার বান্ধবীর বাসায়।অনেক ম্যানেজ করে ওর বাসা ফাকা করেছি।তবে হ্যা আজকের পরে আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখবে না।আমাকে আজ তোমার কাছে বিলীন করে দিবো আমার শরীর।তোমার ইচ্ছা মত শখ মেটাবে।খুব নিঁখুত ভাবে আজকে গননা করবে আমার শরীরে কত গুলো তিল আছে।

-কিন্তু…

-কোনো কিন্তু নয়।যা লাগবে সব আমি ফার্মেসি থেকে নিয়েছি।

নিলা একটা রিক্সা ডাক দিয়ে আমাকে বসতে বললো।দুজনে পাশাপাশি বসে আছি কিন্তু নিলার শরীর আমার শরীরে স্পর্শ লাগলো না।রিক্সার এক কোনে চুপচাপ বসে আছে আর চোখ দিয়ে অঝোরে কান্না করতেছে।

আমিও চুপচাপ বসে আছি।নিলার হাত ছুতে যাবো অমনি নিলা হাত ছিটকে নিলো।নিজেকে কেনো যেনো অমানুষ মনে হলো।নিজেকে ঘৃনা লাগতে শুরু করবে।ধুর,কি ভাবতেছি আমি তো বীরপুরুষ।রিলেশন করে যদি সেক্স না করতে পারি তাহলে আমি কেমন মানুষ।আহ আজকে ফেইসবুকে স্টাটাস দিবো ব্রেকিং নিউজ ঘোষনা করে লিখবো।রুমডেটের মানেটা আজকে বুঝতে পারলাম।

আহ্!নিলার নষ্ট দেহ আমার গ্যালারিতে ভর্তী থাকবে।ন্যুড ভিডিও আর ন্যুড পিক ভাইরাল হবে ফেইসবুকে।

এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে রিক্সা ব্রেক করলো।নিলা আমাকে নামতে বললো।রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে আমাকে তার পিছন পিছন যেতে বললো।

আমি নিলার পিছন পিছন হাটা শুরু করলাম।ওর বান্ধুবীর বাসায় গিয়ে আমাকে বসতে বললো।ওর বান্ধুবীদের বাসায় কেউ নাই।নিলার কাছেই তাদের বাসার চাবি ছিলো।নিলা আমাকে বললো…

-দুই মিনিট ওয়েট করো।আমি ঔষধ খেয়ে আসি।তুমি চাইলে শার্ট প্যান্ট খুলে রেডি থাকতে পারো।আর হ্যা কনডম আমার ব্যাগে রাখাই আছে ওটা নিয়ে নাও।

আমি নিলাকে থামিয়ে বললাম..

-হাহাহা! তুই কি ভেবেছিস?তোর মত নষ্ট মেয়ের সাথে মেলামেশা করবো আমি?আরে ধুর তোর চাইতে অনেক সুন্দরী মেয়েদের সাথে মেলামেশা আমি করি।রাতেরপর রাত সুন্দরী মেয়ে নিয়ে হোটেলে রাত কাটাই।আমি কি না তোরে????থু!

নিলা শোন,তুই কি যেনো বলেছিলি আজ থেকে তোর সাথে আমি আর যোগাযোগ করবো না?আরে তুই করিস না আমার সাথে যোগাযোগ।

আমার কথা শুনে নিলা মেঝেতে বসে পরলো।নিলাকে এইসব বলে আমি ওর বান্ধুবীর বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।

আমি নিলাকে যখন এই সব বলেছিলাম,তখন আমার বুকটা খন্ডবিখন্ড হয়ে গেছিলো।দুচোখ মুছতে মুছতে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলাম।

পিছনে ফিরে নিলার দিকে তাকানো রাইট আমার নাই।নিলা আমাকে ভালোবাসে,আজ ভালোবাসাকে জয়ী করতেই নিলার শরীর বিলীন করতে আমার কু প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলো।আমিও নিলাকে আমার চাইতেও অনেক বেশী ভালোবাসি,অস্তিত্বে মিশে আছে নিলা।

তাপরেও কিছু করার নাই।কারন পরিস্থিতি বাধ্য করেছে আমাকে এইসব ব্যবহার করতে।এর মুল কারন নিলার বাবা।নিলার বাবা আমাকে হাত জোর করে বলেছে নিলাকে ভুলে যেতে।নিলার বাবা আমাকে যেভাবে অনুনয় অনুরোধ করেছে তাতে তার কথার অমান্য আমি করতে পারবো না যদি আমার শরীরে মানুষত্য বোধ থাকে।আর আমি যদি এমন বিহ্যাভ না করতাম।তাহলে আমাকে কখনোই নিলা ভুলে যাবে না।আর যদি হঠাৎ করেই ব্রেকাপের কথা বলতাম তাহলে নিলা কিছুতেই মেনে নিতে পারতো না।কষ্ট পেয়ে অন্য পথ বেছে নিতো।হয়তো সুইসাইড করতো।আর নিলার পরিবার নিলাকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসে।তারা চায় না নিলার অমতে কিছু করতে।তারপরেও কিছু করার নাই ওইযে বললাম পরিস্থিতির স্বীকার।আর আজ যদি আমি এমনটা না করতাম তাহলে নিলা আমাকে ভুলে যেতে পারতো না।আজ থেকে আমি নিলার কাছে ঘৃনার পাত্র।যতদিন বেচে থাকবে নিলা আমাকে ঘৃনার চোখেই দেখবে।হাহাহা!কি অদ্ভুত। ভালোবাসার মানুষটিকে ঘৃনার চোখেই দেখবে।

আমি এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাবো তা অনেক আগেই ঠিক ঠাক করে রেখেছি।হঠাৎ করে অন্য শহরে গেলে নিলা আমাকে পাগলের মত খুজতো।আজ থেকে আর খুজবে না নিলা।আজ থেকে আমাকে ঘৃনার চোখেই দেখবে।

বাসায় গিয়ে সব কিছু গুচগাছ করে অন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।মাঝ পরে যাওয়ার সময় নিলা বান্ধুবী আমাকে ফোন দিয়ে বললো নিলা সুইসাইড করেছে……….

চলবে?

গল্পঃ দেনাপাওনা
১ম_পর্ব
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

বিদ্রঃপ্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি খারাপ ভাষা ব্যাবহার করার জন্য।ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।পরবর্তী পর্বের জন্য সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here