গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ২

0
2849

গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ২
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

প্রাচী অন্য কারো সন্তান নিয়ে আসেনি তো! আমি কিছু না বলেই চুপ করে রইলাম। প্রাচীর কুমারীত্ব কে নষ্ট করছে? মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ে দুই মাস পরে একদিন রাতে প্রাচীকে জিগ্যেস করলাম,

– প্রাচী, তুমি কি বিয়ের আগে ভার্জিন ছিলে?
আমার কথা শুনে প্রাচী চুপ করে রইল তাই আবার বললাম,
– তুমি কি ভার্জিন ছিলা?
– হ্যাঁ, এতদিন পর একথা কেনো?
– ভার্জিনের কোনো প্রমাণ তো আমি পাইনি!
– আমি ভার্জিন!

আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম কারণ প্রাচী মিথ্যা বলছে এটা তার মুখেই বুঝা যাচ্ছে। প্রাচী হয়তো ভাবছে তার বলা মিথ্যে আমি বুঝতেই পারবোনা।

দেখতে দেখতে আরো একমাস কেটে গেলো। আমি এবার সিদ্ধান্ত নিলাম এই ভার্জিনহীনকে তালাক দিব। মা, ছোট বোন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমার এক কথা এই বাড়িতে প্রাচী থাকলে আমি থাকবো না আর আমি থাকলে প্রাচী থাকতে পারবে না। মা আর কি করবে বাধ্য হয়ে আমার কথা মেনে নিল।

প্রাচীকে নিয়ে আমি কোর্টে হাজির হলাম। বিচারককে প্রাচী বলে, সে সন্তানসম্ভবা। আমি বলেছিলাম, এই সন্তান আমার চাই না এটা ও মেরে ফেললেও আমার কিছু যায় আসে না আমার শুধু ডিভোর্স চায়।

বিচারক বলে, এই সন্তান দুনিয়ায় আসার আগ পর্যন্ত ডিভোর্স হবে না। তারপর আর কি বাধ্য হয়ে প্রাচীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হলো। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, ভার্জিনহীন মেয়ের সাথে কি করে থাকবো।

আমার মা কিছুই জানে না, কেনো প্রাচীকে আমি ডিভোর্স দিতে চায়। মা শুধু এটাই জানে প্রাচীকে আমার ভালো লাগে না। আমার চিন্তা ভাবনা একটাই বাচ্চা যতো তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় আসবে তত তাড়াতাড়ি ডিভোর্স। আজ কয়েকদিন অফিসেও যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম তখন প্রাচী এসে বলে,

– তোমাকে কি নাস্তা দেবো?
– কোন অসতী নারীর হাতের খাবার খেতে চাই না।
আমার কথা শুনেই প্রাচীর মুখটা মলিন হয়ে গেল,
– আচ্ছা, তোমার বোনই দিয়ে যাবে খেয়ে নিও।

প্রাচী চলে গেল, আমি বসে অফিসের কাজ করছি তখনই ছোট বোন তানহা আসলো নাস্তা নিয়ে। আমার সামনে এসেই বলল,

– ভাইয়া, নাস্তা খাও আর ভাবি কাঁদছে কেন?
– জানি না! এবার এখান থেকে যা।

তানহা চুপচাপ চলে গেলো। আমি নাস্তা করে, বাসা থেকে বের হয়ে চললাম বাসস্টপে। আজ আমার পুরনো দুই বন্ধু আসছে ঢাকা থেকে। গত বছরই পড়াশোনা শেষ করে তারা ঢাকায় চাকরী নেয়। বাসস্টপে দুই বন্ধু সুমন, রানা তাদের সাথে দেখা করলাম,

– ভাবিকে আনলি না যে?
রানার কথা শেষ হতেই সুমন বলল,
– আরে বউকে লুকিয়ে রাখবে তাই হয়তো আনেনি!
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
– এই সব বাদ দে, বিকালে আমাদের বাসায় আসলেই দেখতে পাবি।

আমি সুমন, রানা কে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় ফিরতে দুপুর হয়ে গেলো। বাসায় আসার সময় ভালো করে বাজার করে আনলাম। আজ যে, এতদিন পর বন্ধুরা আসতেছে আমাদের বাসায়।

মা ভালো করে রান্না করলো সুমন, রানার জন্য। মায়ের হাতের রান্না অনেক পছন্দ ওই দুটার। ছোটবেলা থেকে আসা যাওয়া আমাদের বাড়িতে আর তিনজন একসাথে খাওয়া ঘুরা তাই আমাদের এতোমিল।

বিকাল হতেই রানা, সুমন চলে আসলো আমাদের বাসায়। দুজনেই আমার রুমে গিয়ে বসলো,

– কই রে ভাবিকে তো দেখছি না?
রানার কথা শুনে, আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সুমন বলে,
– এতদিন একটা পিকও দিলি না বললি সামনে এসে দেখতে এখন ভাবী কই।
আমি দুজনকে শান্ত করতে বললাম,
– এখনই আসবে তোদের খাবার দিতে।

কিছুক্ষণ তিনজন বসে গল্প করলাম। হঠাৎ প্রাচী আসলো খাবার দিতে, প্রাচী অনেক পরিপাটি করে সাঁজ করে আসছে। যদিও প্রাচী এমনেই অনেক সুন্দর। প্রাচীকে দেখে দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সুমন প্রশ্নচোখে তাকিয়ে আছে আমার মুখে, যেনো সে ভূত দেখছে।

– ভাইয়া, আপনারা কেমন আছেন?
প্রাচীর কথা শুনে সুমন ঘাবড়ে গেল! আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমরা ভালো আপনি?

সুমনের মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হচ্ছে না। সুমন, রানাকে ইশারা করে বলে,
– ইথান আমরা আজ যাই!
আমি ওদের এমন ব্যবহার দেখে অবাক চোখে বললাম,
– কিরে খাবি না?
– এখন খিদে নাই, অন্য একদিন আসবো।
প্রাচী আমাদের কথা শুনে বলল,
– এত কষ্ট করে মা রান্না করলো আর আপনারা না খেয়েই চলে যাবেন!

সুমন রানাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন নিরব হয়ে হাটছে কোনো কথা নেই তা দেখে রানা বলল,

– কিরে, আমাকে নিয়ে চলে আসলি যে?
– এমনি!
– এমনি কোনো? কি হইছে আমাকে বল?
– ইথানের বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে পাশের এলাকায় গিয়েছিলাম ইথানের সাথে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম একটা মেয়ে আসছে। অন্ধকার আর মানুষের চলাচল একদম কম। দুজনে মুখ ঢেকে এগিয়ে গেলাম, দেখলাম মেয়েটা একা দেখতেও অনেক সুন্দর। সেদিন ইথান মেয়েটাকে ধর্ষন করে ছিল আর আমি ধর্ষণ করতে ইথানকে সাহায্য করেছিলাম।

সুমনের সব কথা শুনে রানা বলল,
– তো, কি হইছে এখন? এই ঘটনা বলার জন্য নিয়ে চলে আসলি আমাকে?
– সে দিনের মেয়েটা আর কেউ না, ইথানের বউ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here