গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৪

0
2431

গল্পঃ পরিণতি,পর্বঃ ৪
লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

সে দিনের ধর্ষীতা মেয়েটা আর কেউ না, প্রাচী ভাবীই ছিল। সুমনের এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম! সুমন আবার বলতে শুরু করে,
– সেদিন আমি যখন তোর বাসায় গেলাম ভাবিকে দেখে তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল, এই কারণেই তোর বাড়ি থেকে চলে আসছিলাম। কিন্তু এখন নিজেকে ভর অপরাধী মনে হচ্ছে, সত্য কথাগুলো অনেক আগেই তোকে বলা উচিত ছিল তাহলে হয়তো আজ তোদের ডিভোর্স হতো না।

সুমনের কথা শুনে, লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লাম আর বললাম,
– এই কথাগুলো তুই আমাকে আগে কেন বললি না!
– কি করে বলবো, সেদিন তো ভাবীর গায়ে আমিও হাত দিয়ে ছিলাম! ভাবীর গায়ে আমি স্পর্শ করছি এটা ভাবলেই হয়তো তুই কষ্ট পেতি তাই বলেনি।

আমি আর কিছু না বলেই কলটা কেটে দিলাম। আগে যদি এই কথাগুলো জানতাম, তাহলে হয়তো বিয়ের আগে করা পাপের পাশ্চিত্ব করতে পারতাম। যে করেই হউক প্রাচীকে সত্যটা বলে আবার বিয়ে করতে হবে, প্রাচীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

এই সব ভাবতে ভাবতে কাপড় পরে চললাম প্রাচীর বাসায়, যেখানে প্রাচীর পরিবার থাকে। ইশ! কেনো যে সুমন আরো দুদিন আগে বললো না। আমার সব ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সিমা কল দিল, সিমা আমার কলেজ লাইফের একমাত্র মেয়ে ফ্রেন্ড! কল রিসিভ করতেই সিমা বলে,

– ইথান, ভূলে গেলি নাকি? আর শুনলাম প্রাচী ভাবীর সাথে নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে?
সিমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম, ডিভোর্সের কথা জানলো কি করে।
– যা শুনলি সব সত্য, এবার প্রাচীকে আবার বিয়ে করবো।
– কি এমন হলো? যে, সকালে ডিভোর্স দিয়ে বিকালে আবার বিয়ে করতে হবে!
– এ কথা বলা যাবে না!
– আচ্ছ থাক বলতে হবে না।

আমি আর কথা বাড়াইনি, কল কেটে চললাম প্রাচীর খুঁজে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর চলে আসলাম প্রাচীর বাবার বাসায়। প্রাচীর মা আমাকে একা দেখে অবাক, প্রাচী কই জানতে চাইলো! আমি নিজেও অবাক হলাম তাদের কথা শুনে।

আমি বললাম, সকালে ডিভোর্স হওয়ার পর প্রাচী এখানে আসেনি? প্রাচীর মা অবাক হয়ে বলে, প্রাচী এখানে আসে নাই। এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, প্রাচী কোথায় যেতে পারে। সবাই প্রাচীকে এখানে সেখানে কল দিয়ে খুঁজতে শুরু করলাম।

অন্যদিকে প্রাচীর দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই প্রাচীকে নিয়ে তার বাসায় রাখলো। প্রাচীর চাচাতো ভাই প্রাচীকে কাজ দিবে বলে আর কোথাও যেতে দেয় না। কয়েকদিন পরই প্রাচীর চাচাতো ভাই প্রাচীকে বলে,

– প্রাচী, তোর কুলে এই ছেলে থাকলে কোন কাজ করতে পারবি না। ছেলেটাকে আগে কোথাও রাখার জায়গা করতে হবে।
প্রাচী এমন কথা শুনে বিচলিত হয়ে গেল,
– এতটুকু বাচ্চা কোথায় রাখবো?
– এতিমখানায় দিয়ে দিলে তারাই দায়িত্ব নেবে!
– যদি কিছু হয়ে যায়।
– আমার পরিচিত একজন আছে কিছু হবে না, আর তুই চাইলে প্রতি শুক্রবারে নিয়ে আসতে পারবি।
– আচ্ছা, তুমি রাখার ব্যবস্থা করো।

কয়েকদিন পরই বাচ্চাটা একটা এতিমখানায় দিয়ে আসলো প্রাচী আর প্রাচীর চাচাতো ভাই। প্রাচীর বাচ্চা রেখে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তবুও জীবিকার জন্য রেখে আসতেই হলো। প্রাচী বাচ্চাটাকে এতিমখানায় রেখে অনেক কষ্টে থাকতে শুরু করে।

এদিকে আমি আর প্রাচীর পরিবার অনেক খুঁজেও প্রাচীকে কোথাও পেলাম না। একদিন সিমা আসলো আমাদের বাসায়, আমাকে অনেক বুঝায় নতুন বিয়ে করতে। সিমা দেখতে খারাপ না তাই হয়তো মা সিমাকে পছন্দ করে ফেললো।

মা সিমাকে বিয়ে করতে বলে, কিন্তু আমি না দেয়। মা তারপরও সিমার পরিবারের সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে পেলে। শেষ মেষ বাধ্য হয়ে সিমাকে বিয়ে করি। বাসর রাতে সিমা বলে, আমি সেই কলেজ থেকেই তোমায় পছন্দ করি।

আমার বিয়ে হয়ে গেছে এটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমার একটাই চিন্তা প্রাচীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সিমা আর আমি ভালোই আছি, জীবনও ভালো চলছে।

অন্যদিকে প্রাচীকে তার চাচাতো ভাই কাজের কথা বলে নিয়ে গেলো একটা লোকের কাছে আর বলল,
– এই নেন, যার কথা বলেছিলাম!
লোকটা প্রাচীকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,
– হুম, এই নাও টাকা গুনে দেখো!
প্রাচী ওদের কথা শুনে অবাক কন্ঠে বলল,
– কিসের টাকা?
– কিছু না! পুরো ১ লাখ আছে, গেলাম সাহেব।

প্রাচীর চাচাতো ভাই চলে গেলো টাকা নিয়ে। প্রাচী জানতে চাইলো কেনো টাকা নিচ্ছে কিন্তু কিছু না বলেই প্রাচীর চাচাতো ভাই চলে গেলো। যখনি প্রাচী আসতে চাইলো তখনি লোকটা জোর করে ধরে, প্রাচীকে একটা রুমে আটকে দিলো। প্রাচীর বুঝতে আর বাকি রইল না যে, তাকে বিক্রি করে দিছে।

প্রাচীকে একটা রুমে আটকিয়ে রাখার পর রাতে প্রাচীর রুমে একটা লোক আসলো।
– কে আপনি? আমাকে ছেড়ে দেন।
প্রাচীর কথা শুনে লোকটা বলে,
– আজ সারা রাতের জন্য তুমি আমার!
– কি?

লোকটা প্রাচীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলো। সারারাত লোকটা বাধ্য করে প্রাচীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে। সকাল হতেই লোকটা চলে গেলো কিন্তু প্রাচী ওই রুমেই বন্ধী। প্রাচীর রুমে সকল কিছুই আছে।

প্রাচীকে সময় মতো খাবার দিলো, সারাদিন বিরতি দিলো, রাতে হয়তো আবার কোন জানোয়ার আসবে। সন্ধ্যা হতেই প্রাচী বুঝলো দরজায় কেউ আসছে। প্রাচীর আর বুঝতে বাকি নেই, আজ সারা রাত নতুন কেউ ভোগ করবে তার শরীর। ভিতরে একটা লোক ঢুকলো, প্রাচী লোকটাকে দেখে থমকে গেলো! লোকটা প্রাচীকে দেখে বলল,

– শেষ পর্যন্ত পতিতা?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here